২৫ বৈশাখ (প্রবন্ধ)
২৫ বৈশাখ (প্রবন্ধ)
শাহানাজ সুলতানা
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো , প্রভু ,
পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র । বাংলা সাহিত্যে তার মহৎ, সৃষ্টি , বাংলা সাহিত্যকে করেছে ধন্য । তাকে ধন্যবাদ দিলে শুধু ছোটই করা হবে। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে কবির হাতের ছোঁয়া পড়েনি । তিনি এ সাহিত্য প্রতিভা নিজ পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন ।
আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন-ভরা।
আলো নয়ন-ধোওয়া আমার, আলো হৃদয়-হরা॥
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৮ই মে (বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে । পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর । এই বংশ সাহিত্যের উন্নতি সাধন ছাড়াও ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লালিত এবং আত্মপ্রতিষ্ঠিত ব্যাবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জন সেবামুলক কাজেও সাফল্য অর্জন করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্দশ সন্তান । কবি মাতা সারদা দেবী সম্বন্ধে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায়নি । রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি , মেজো ভ্রাতা সত্তেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই.সি.এস ; অন্য ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার এবং বোনদের মধ্যে স্বর্ণকুমারী দেবী ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন ।
ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ ছিল সঙ্গীত , সাহিত্য ও নাট্যঅভিনয়ে মুখোর । শুধু তাই নয় , বাইরের জগতের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল নিবিড় ।
আনন্দ, বেদনা, কিংবা বিরহ, ভালোবাসা প্রতিটি প্রকাশেই বাংলা ভাষাভাষির প্রাণের আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ।
প্রকাশ ঘটে, কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ কবি কাহিনীতে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত গেলেও গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক গন্ডীর বাইরে অনন্য এক উচ্চতা ছুঁতে চেয়েছিলেন রবি ঠাকুর।
সকল ক্ষেত্রেই স্পষ্ট উচ্চারণ বারবার ধ্বনিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য সৃষ্টি কর্মে। সত্য, সুন্দর আর প্রেমের সাধনা হয়ে ওঠে তার সমগ্র কাব্য সাহিত্যের প্রয়াস। আধুনিকতা আর উৎকর্ষকতায় মানুষ অনেক বেশি যান্ত্রিক হলেও আবেগ অনুভুতি প্রকাশে এখনো ফিরে আসতেই হয় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি সম্ভারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে একজন কবি , সঙ্গীতজ্ঞ , কথাসাহিত্তিক । নাট্যকার , চিত্রশিল্পী , প্রাবন্ধিক , দার্শনিক , শিক্ষাবিদ ও সমাজ-সংস্কারক । মূলত কবি হিসেবেই তাঁর প্রতিভা বিশ্বময় স্বীকৃত । ১৯১৩ সালে তাঁকে সর্বপ্রথম একজন নন-ইউরোপিয়ান হিসেবে "গীতাঞ্জলী" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্তে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় । এশিয়ার বিদগ্ধ ও বরেণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেন । তাঁর সাহিত্তের প্রধান ছদ্মনাম ছিল "ভানুসিংহ।
পউষের পাতা-ঝরা তপোবনে আজি কী কারণে
তলিয়া পড়িল আসে বসন্তের মাতাল বাতাস
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগন্থের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল জেতেন রবীন্দ্রনাথ। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের অত্যাচার এবং নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ত্যাগ করেন ব্রিটিশ সরকারের দেয়া নাইট উপাধি।
আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ-দহন লাগে
তবুও শান্তি তবুও আনন্দ তবুও অনন্ত জাগে ।
বিশ্ব কবি মৃত্যুর পূর্বে প্রত্যক্ষ করেছেন মানব সভ্যতার গভীর সঙ্কট। তথাপি তিনি মানুষের মহত্বে চির আস্তাবান ছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্ত জীবন , মানবাত্মা ও প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের কবি । মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন মহাজীবনের যতি হিসেবে । জীবন-মৃত্যু ও জগৎ-সংসার তার নিকট প্রতিভাত হয়েছে এক অখণ্ড রূপে ।
লেখনি দিয়ে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনে জর্জরিত উপমহাদেশের মানুষের মনে জুগিয়েছেন শক্তি ও সাহস। সমগ্র জীবনে অসংখ্য কাব্যগ্রন্থ, গান, নাটক আর উপন্যাস রচনা করেন। জীবন সায়াহ্নে, সত্তর বছর বয়সে শুরু করেন ছবি আঁকা। দুই হাজারের মত ছবিও এঁকেছেন তিনি।
১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট; বাংলা ২২শে শ্রাবণ ৮০ বছর বয়সে চীর বিদায় নেন কবি গুরু। তবে কাব্য ও গানে আজও বেঁচে আছেন বাঙালির অপরিহার্য রবীন্দ্রনাথ।
তোমার এ জন্মদিনে কি বা দিবো আর
বিশ্বকবি তুমি , তোমার জুড়িমেলা ভার।
আমি যে পথিক এক,পথ ভোলা বড়
নিতে তোমারি পায়ের ধুলা, হলাম জড়।
হৃদয়ের অসীমে আছে অসীম ভালোবাসা
দিলাম কবি তোমায় সেই সে শুভেচ্ছা।।
- শাহানাজ সুলতানা
রবীন্দ্রনাথ কেবল তাঁর কালেরই কবি নন , তিনি কালজয়ী । বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে কবির আবির্ভাবে ছিল এক যুগান্তর । আজ এই মহান মানুষটির জন্মদিন । সকল বাঙালির পক্ষ থেকে জানাই জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ।
শাহানাজ সুলতানা
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো , প্রভু ,
পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র । বাংলা সাহিত্যে তার মহৎ, সৃষ্টি , বাংলা সাহিত্যকে করেছে ধন্য । তাকে ধন্যবাদ দিলে শুধু ছোটই করা হবে। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে কবির হাতের ছোঁয়া পড়েনি । তিনি এ সাহিত্য প্রতিভা নিজ পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন ।
আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন-ভরা।
আলো নয়ন-ধোওয়া আমার, আলো হৃদয়-হরা॥
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৮ই মে (বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে । পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর । এই বংশ সাহিত্যের উন্নতি সাধন ছাড়াও ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লালিত এবং আত্মপ্রতিষ্ঠিত ব্যাবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জন সেবামুলক কাজেও সাফল্য অর্জন করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্দশ সন্তান । কবি মাতা সারদা দেবী সম্বন্ধে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায়নি । রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি , মেজো ভ্রাতা সত্তেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই.সি.এস ; অন্য ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার এবং বোনদের মধ্যে স্বর্ণকুমারী দেবী ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন ।
ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ ছিল সঙ্গীত , সাহিত্য ও নাট্যঅভিনয়ে মুখোর । শুধু তাই নয় , বাইরের জগতের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল নিবিড় ।
আনন্দ, বেদনা, কিংবা বিরহ, ভালোবাসা প্রতিটি প্রকাশেই বাংলা ভাষাভাষির প্রাণের আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ।
প্রকাশ ঘটে, কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ কবি কাহিনীতে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত গেলেও গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক গন্ডীর বাইরে অনন্য এক উচ্চতা ছুঁতে চেয়েছিলেন রবি ঠাকুর।
সকল ক্ষেত্রেই স্পষ্ট উচ্চারণ বারবার ধ্বনিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য সৃষ্টি কর্মে। সত্য, সুন্দর আর প্রেমের সাধনা হয়ে ওঠে তার সমগ্র কাব্য সাহিত্যের প্রয়াস। আধুনিকতা আর উৎকর্ষকতায় মানুষ অনেক বেশি যান্ত্রিক হলেও আবেগ অনুভুতি প্রকাশে এখনো ফিরে আসতেই হয় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি সম্ভারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে একজন কবি , সঙ্গীতজ্ঞ , কথাসাহিত্তিক । নাট্যকার , চিত্রশিল্পী , প্রাবন্ধিক , দার্শনিক , শিক্ষাবিদ ও সমাজ-সংস্কারক । মূলত কবি হিসেবেই তাঁর প্রতিভা বিশ্বময় স্বীকৃত । ১৯১৩ সালে তাঁকে সর্বপ্রথম একজন নন-ইউরোপিয়ান হিসেবে "গীতাঞ্জলী" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্তে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় । এশিয়ার বিদগ্ধ ও বরেণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেন । তাঁর সাহিত্তের প্রধান ছদ্মনাম ছিল "ভানুসিংহ।
পউষের পাতা-ঝরা তপোবনে আজি কী কারণে
তলিয়া পড়িল আসে বসন্তের মাতাল বাতাস
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগন্থের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল জেতেন রবীন্দ্রনাথ। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের অত্যাচার এবং নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ত্যাগ করেন ব্রিটিশ সরকারের দেয়া নাইট উপাধি।
আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ-দহন লাগে
তবুও শান্তি তবুও আনন্দ তবুও অনন্ত জাগে ।
বিশ্ব কবি মৃত্যুর পূর্বে প্রত্যক্ষ করেছেন মানব সভ্যতার গভীর সঙ্কট। তথাপি তিনি মানুষের মহত্বে চির আস্তাবান ছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্ত জীবন , মানবাত্মা ও প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের কবি । মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন মহাজীবনের যতি হিসেবে । জীবন-মৃত্যু ও জগৎ-সংসার তার নিকট প্রতিভাত হয়েছে এক অখণ্ড রূপে ।
লেখনি দিয়ে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনে জর্জরিত উপমহাদেশের মানুষের মনে জুগিয়েছেন শক্তি ও সাহস। সমগ্র জীবনে অসংখ্য কাব্যগ্রন্থ, গান, নাটক আর উপন্যাস রচনা করেন। জীবন সায়াহ্নে, সত্তর বছর বয়সে শুরু করেন ছবি আঁকা। দুই হাজারের মত ছবিও এঁকেছেন তিনি।
১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট; বাংলা ২২শে শ্রাবণ ৮০ বছর বয়সে চীর বিদায় নেন কবি গুরু। তবে কাব্য ও গানে আজও বেঁচে আছেন বাঙালির অপরিহার্য রবীন্দ্রনাথ।
তোমার এ জন্মদিনে কি বা দিবো আর
বিশ্বকবি তুমি , তোমার জুড়িমেলা ভার।
আমি যে পথিক এক,পথ ভোলা বড়
নিতে তোমারি পায়ের ধুলা, হলাম জড়।
হৃদয়ের অসীমে আছে অসীম ভালোবাসা
দিলাম কবি তোমায় সেই সে শুভেচ্ছা।।
- শাহানাজ সুলতানা
রবীন্দ্রনাথ কেবল তাঁর কালেরই কবি নন , তিনি কালজয়ী । বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে কবির আবির্ভাবে ছিল এক যুগান্তর । আজ এই মহান মানুষটির জন্মদিন । সকল বাঙালির পক্ষ থেকে জানাই জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সেলিম রেজা সাগর ২০/০৫/২০১৮অসাধারণ
-
পি পি আলী আকবর ১০/০৫/২০১৮অসাধারণ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৯/০৫/২০১৮রবীন্দ্রনাথ আমাদের গর্ব।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৯/০৫/২০১৮অসাধারন কথামালা।
অনেক ভাল লাগল।
শুভকামনা রইল অনাগত আগামির।