www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বপ্ন গবেষণা

এক.
উদাস দুপুর, সূর্যটাকে মাথায় করে, কাশফুলের এক বনে এসে লুকিয়ে হিরোন।মাথায় পাক খাচ্ছে

স্বপ্ন এই জিনিসটা কি? আগডুম বাঘডুম ঘোড়াডুমের মত কোন কাব্য, নাকি পদ্য, নাকি ছড়া? অনেকক্ষন ধরে ঝোপের আড়ালে বসে কাশফুলের-ঘাস চিবালে এমন ভাবনা মনে আসতেই পারে, তাই হয়তো স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে হিরোন। স্বপ্ন, নিঃসঙ্গতা, ভালোবাসা, কাব্য, পদ্য সবই মিশে আছে অস্তিত্ব জুড়ে তাই কি এই শব্দগুলোকে হিরোনের এখন এতো অসহ্য লাগছে?! সুন্দর সব কিছুই অসহ্য লাগছে। কাশফুল চিবানোয় মনোযোগ দিলো হিরোন...

- এই হিরোন!
~হুমম
- হিরোন!
~ হুমম তো!
-'এইহুমম তো' টা আবার কি? তোমাকে এত বার ডাকছি তোমার কানে যাচ্ছে না?
~ যাচ্ছে তো!

-চুপি চুপি এই ঝোপের মধ্যে বসে আছো কেন? আর অমন চোখ মুখ কুচকিয়ে ঘাসই বা কেন চিবাচ্ছো? আমি যে আসলাম তোমার কোন মাথা ব্যথা নাই, ঘটনা কি?
~ঘটনা ইচিং বি্চিং চিচিং স্বপ্ন নিয়া গবেষণা করছি, কোথায় ছিলা এতক্ষন?
-ওরে বাবা! এযে দেখছি বিশাল গবেষক! পুকুরের ওই পদ্ম পাতার উপর বসা একটা প্রজাপতির সাথে ভাব জমাচ্ছিলাম। জানো প্রজাপতিটার না অনেক দুঃখ, ওর সঙ্গীটাকে ও হারিয়ে ফেলেছে। এত সুন্দর একটা প্রজাপতি তোমাকে কি বলবো হিরোন! আমার সাথে অনেক গল্প করলো! শেষে কোথায় যে উড়ে গেল, আর খুঁজে পেলাম না, ওকে খুঁজতে খুঁজতে তোমার কাছে চলে এলাম। তুমি আমার দিকে একটু তাকাচ্ছো ও না!
~ তোমার টিপ কই চন্দ্রা? টিপ পর নাই কেন?
- ওহ! পানিতে নেমেছিলাম তো তাই টিপটা পুকুরে পড়ে গেছে। জানো, তোমার কথা ভেবে একটা সবুজ টিপ পরেছিলাম আজ, আমার এই কচি কলাপাতা রঙের শাড়িটার সাথে মিলিয়ে। ইস, হারিয়ে ফেলছি, দাঁড়াও খুঁজে নিয়ে আসি, তুমি থাকবা তো ততক্ষন?
~হুমম...
-আবার হুমম? বলো হ্যা!
~হু!

চন্দ্রা উঠে দাঁড়াতেই ওর দিকে আড়চোখে তাকালো হিরোন। মনে মনে ভাবতে লাগলো, এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমার আনমনা ভাব দেখে, মনে মনে রেগে ঢোল হয়েছে, বেচারী এখন আমার জন্য টিপ খুঁজতে যাবে, হঠাৎ করে আবার হাজির হবে কিছুক্ষণ পর, একটা টিপ ঠিকই কপালে পড়ে আসবে, আনন্দে আটখানা হয়ে মুখে অনেক হাসি নিয়ে। এই আনন্দ দেখার জন্যই তো এতো আয়োজন। আমি যেখানেই থাকি না কেন আমাকে ঠিক ও খুঁজে নেবে, কারন সেতো আমার সাথেই আছে সব সময়।

ততক্ষণে শিশিরকে একটা চিঠি লিখতে শুরু করে দিলে, চিঠিটা কেমন হবে?

প্রিয় শিশির
আশা করি ভাল আছিস, আমিও শুভং! তোর সাথে যোগাযোগটা অনিয়মিত হয়ে গেছে।, ব্যাস্ততা আর বাস্তবতা আমরা কিছুতেই এড়াতে পারছি না! না তুই না আমি, আমি দিনকে দিন প্রায় গুহা বাসিন্দা হতে চলেছি। চন্দ্রাটার কথা তো তোকে বলেছিই, ও যখন তখন আমার সাথে গল্প করতে চলে আসে। অনেক গল্প করে ও আমার সাথে!জানিস তোর গল্প শুনে ও তোর কথা অনেক জিজ্ঞেস কর।, তোর সাথে কথা বলতে চায়, কেমন করে তোর সাথে কথা বলাই বল তো? ওকে তো শুধু আমিই দেখি! একটা পথ বাতলিয়ে ফেলতে হবে তোর সাথে চন্দ্রার আলাপ করিয়ে দেবার, আমি আর চন্দ্রা মিলে ঠিকঠাক একটা বুদ্ধি বের করে ফেলবো।

এখন বল তুই কেমন আছিস দোস্ত! অনেক দিন হয় তোর কবিতা শুনি না, সেই সব স্বপ্ন জড়ানো কবিতা! যা শুনে শুনে আমি স্বপ্নের ক্ষেত্রে পুরোটাই স্ট্যান্টবাজ হয়ে গেলাম। তোর সেই সব কবিতার কথা ভাবে আজ স্বপ্ন নিয়ে অনেক গবেষণা করলাম।, পরে তোকে গবেষণাপত্র দেয়া হবে দোস্ত আমার বিশ্বাস তুই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বি আমার রিসার্চ পেপার দেখে। পাগল হয়ে যাচ্ছি কিনা কে জানে! তবে পাগল হলেও আমি যে মানুষ টা তো তুই ভালো করেই জানিস।(হাসবি না)

যাই হোক চন্দ্রার ব্যাপারে তোকে জানাতে এই চিঠির অবতারনা। চন্দ্রাটা অনেক হাসি-খুশি, আর সারাদিন কবুতরের মত বাকুম বাকুম করায় ব্যাস্ত। জানিস ওকে বকা দিয়ে আমি চুপ রাখতে পারি না। চেঁচামেচি শুরু করে শেষে বকা কেন দিলাম তার শাস্তি আমার কাছ থেকে আদায় করে নেবে। সেদিন কোথা থেকে এক ছাগ শিশু গায় কাদা জড়িয়ে এসেছে ওর গা ঘেসে খেলা-ধূলা করে! আমাকেও গায় কাদা জড়াতে বলে, বকা দিতেই চুপ করে গেল, তারপর সেকি অভিমান! কেন বকা দিলাম এটা বারবার জিজ্ঞেস করে আমাকে অস্থির করে তুলল, শেষে বাধ্য হয়ে একটা ইয়া বড় ফড়িং ধরে ওকে দিলাম, ও সেটা আমার বুক পকেটে ভরে দিয়ে মহাখুশি।
জানিস আমার শাস্তি হলো সেই ফড়িংটা পকেটে নিয়ে ঘুড়ে বেরাতে হবে। ওটা নিয়েই গেলাম, ক্লাস করতে ক্লাসের কোন ফাঁকে ফড়িংটা পকেট থেকে বের হয়ে উড়তে উড়তে ম্যাডামের চুলে গিয়ে বসলো শুরু করলো, ক্লাসে সে এক হুড়মুড় অবস্থা।
ফড়িংটা উড়ে উড়ে এর গায় ওর গায় বস্তে থাকে, যার গায়ে পড়ে সেই একটা চিৎকার করে ওঠে।, ও দিকে ক্লাস নিতে এসে ম্যাডাম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলেন। চন্দ্রা আমার পাশেই বসা ছিল, ও এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে শেষ।, আমি তো হাসতেও পারছি না চুপ ও থাকতে পারছি একটা যা তা দশা। ফড়িংটা কোথা থেকে এল সেটা অবশ্য এখনও অনাবিস্কৃত।

ভাল থাকিস দোস্ত, পরে তোকে আরো জানাবো...

--"হিরোন "

চিঠিটা বাতাসে উড়িয়ে দিলো হিরোন। উঠে পড়ি, চন্দ্রার সাথে কিছু লুকোচুরি খেলা চলুক এখন, ও টিপ প্রে এসে আমাকে খুঁজে বের করুক..

দুই.

হিরোন একটা গুহার ভিতরে ঢোকে। মনে মনে বলে এই গুহাটা একান্তই আমার। নিজের আঁকা প্রাচীন সব শিলালিপি দেখছে।, যখন ও একা হয়ে যায় তখন টুপ্পুস করে গুহার ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারপর শুরু হয় শিলালিপি অংকন পর্ব অথবা সব অংকিত শিলালিপি দর্শন পর্ব। অবাক হবার মতো কিছু নেই, এটা একই সাথে আমার গুহা আর এটা আমার কম্বল! এই কম্বলের ভিতর পুরোটা আমি ঠিকমতো ঢুকে যেতে পারি।এর ভিতর ঢুকলেই অন্ধকার আর অন্ধকার মানে গুহা গুহা মনে হয়।মনে হয় যেন পাহাড়ের কোন এক অন্ধকার উষ্ণ-গুহায় ঢুকে পড়েছি। অনেক ক্লান্তির পরে এই গুহাটিই আমার উত্তম আশ্রয়।

তিন.

শরৎ, হেমন্ত, শীত, বিদায় নিয়ে বসন্ত এসেছে বেশ কিছু দিন হলো কিন্তু ভাব দেখে মনে হচ্ছে বসন্তটা এবার লুকোচুরি খেলছে প্রকৃতির সাথে।, আসি আসি বলেও নিজের রুপ প্রকাশ করছে না সে। অবাক করা ব্যাপার হলো চলছে বসন্তে তবু একটা কোকিলের ডাকও শুনতে পেলাম না! বুঝতে পারছি না দেশে কি কোকিল-নিধন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে? ভাবছি কোকিল খুঁজতে বেরুবো কিনা। মজার ব্যাপার হলো পাখিটা যে দেখতে কেমন তা বেমালুম ভুলে গেছি। কালো এটা মনে আছে, যাই হোক পাখিই তো!ও খুঁজে বের করা যাবে, একটা পাখি খুঁজে পেলেই ওকে রিমান্ডে নেয়া হবে। কেন সে 'কুহু, কুহু’ ডাক দিচ্ছে না, কিসের অনশন এতো? প্রয়োজনে সরকারের কাছে তাদের আবদার পৌঁছে দেয়া হবে একটি 'কুহু' ডাকের জন্য। কোকিল খুঁজতে নেমে পড়ার একটা উত্তম সুযোগ খোঁজার তালে আছি।
চন্দ্রাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে খুব খুশি হবে আর ও কোকিলটার সাথে ভাব জমিয়ে যদি একটা কুহু ডাক দেয়াতে পারে তাহলেই কেল্লা ফতে।

-এই হিরোন! একটা পাখির বাসা ওই যে দেখো! ওটা কি কোকিলের বাসা?
~ ওই,ওই বোকা! কোকিলের কি বাসা থাকে? কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ে জানো না?
- ওহ ভুলে গেছিলাম, যাই হোক ওটা তো বেশি উপরে নয় চলো দেখি পাখির বাসায় কি আছে?
~ ওই বাসার মালিক হলো ওইই বুলবুলি পাখিটা, তোমার মাথায় ঠোকর বসিয়ে দিবে।
-চুপ! চলো দেখি ওদের সংসারটা, বাচ্চা আছে কিনা!
বাধ্য হয়ে গাছের উপর উঠলাম, বুলবুলি পাখিটা অস্থির হয়ে উঠলো, এবং চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।, আমি পাত্তা না দিয়ে ওর বাসার দিকে আগালাম।

~ চন্দ্রা!!
-হুমমম!
~ কয়েকটা ডিম আছে অনেক সুন্দর! হিজিবিজি আঁকা উপরে, দেখবা তুমি ??
-দেখবো!! আমিও গাছে উঠতে পারি, এই তুমি আমার হাত ধরে উঠাও!
~ তুমি কি গাছে উঠবা নাকি!! আরে আমি এখান থেকে দেখাচ্ছি!
-না, না, না! আমি গাছে উঠে দেখবো! উঠবোই!
~(দীর্ঘশ্বাস) নাছর বান্দা উঠো তাইলে! এই যে পা ধরো!
-ওই পা ধরবো কেন? হাত দিতে পারছো না?
~ হাত অতদূর যাবে না তো! আচ্ছা দাঁড়াও আমি আসছি, তোমায় তুলতে।
(বুলবুলিটা তার কর্তা মশাই কে নিয়ে সমান তালে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন)

কোকিল আজ আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে, পাইছে কি সে! বসন্ত আসছে অথচ ডাকাডাকির নাম গন্ধ নাই! কিন্তু কুহু ডাক না দিলে তো বুঝতেও পারবো না কোনটা কোকিল, এখন কাকের বাসায় ডিম পাড়ে কোকিল, নাকি কোকিলের বাসায় ডিম পাড়ে কাক সেটাই গুলিয়ে ফেলছি! ছোট-খাটো কাক দেখলেই এখন কোকিল কোকিল মনে হয়!

চার.

সেদিন এক চড়ুইয়ের ঠোঁটে একটা খড় দেখে শান্ত বলে বসলো, "ওই যে দেখ সংসার ঠোঁটে নিয়ে উড়ে বেরায় চড়ূই দেখ হিরোন কত্ত মজা, তুই এরকম সংসার ঠোঁটে নিয়ে ঘুড়ে বেরাতে পারবি?" আমি বললাম "এইটা কোন ব্যাপার হলো? ঐ চড়ুই নিছে একটা খড় আমি তো মিনিমাম এক মুঠো খড় মুখে নিয়ে হেঁটে বেরাতে পারবো!" শান্ত আমার দিকে চোখ গোল করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, তারপর বললো, " তুই কি গাছের মগডালে বাসা বানাবি নাকি? তুই মুখে ইট নিয়ে ঘু্রে বেরাবি! গাধা কোথাকার" এই কথা শুনে আমরা দু'জনে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়েছিলাম।

আজ আমি সংসার নিয়েই ঘুরে বেরাচ্ছি, শান্তটা সামনে থাকলে ঠিকই দেখিয়ে দিতাম, চড়ুইরা সংসার নেয় ঠোঁটে আমাকে সংসার বয়ে নিয়ে বেরাতে হচ্ছে চোখে...
একটা ছড়া লিখেছিলাম, সেখানে একটি বক তার চোখ দুটি হারিয়ে শুধু স্মৃতিতেই সব কিছু খুঁজে দেখেছে, সেই বকটার জন্য চন্দ্রার সেকি মায়া! কান্নাকাটি অবস্থা! ওকে থামানোর জন্য আমাকে কয়েকটি সংসারের লাইন পরবর্তীতে যোগ করতে হয়েছে।

লাল নীল রঙ স্বপ্ন আঁকা একটি আকাশ
ঝিরি ঝিরি ঢেউ দোলানো মহুয়া বাতাস।

পথ খুঁজে ফেরে হাজার মনের নিজুত শখ
তারই মাঝে কোথাও, একটি শুভ্র-অন্ধ-বক।

কিণার ধরে গুটি গুটি পায় আনমনে হাঁটে
লিকোচুরি মন হারানো স্মৃতির জাবর কাটে।

চন্দ্রার সাথে কেটে যায় সুখেই দিন তবু স্বপ্ননিয়ে গবেষণার আজও হলো না শেষ।

২০ আগস্ট ২০১৬
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৮৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৮/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সোলাইমান ১৭/০৯/২০১৬
    বেশ ভাল।
  • ফয়জুল মহী ১১/০৯/২০১৬
    সন্দেহাতীতভাবে অভিজাত লেখা
  • সোলাইমান ০৪/০৯/২০১৬
    সুন্দর।
  • স্বপ্নময় স্বপন ২৮/০৮/২০১৬
    ভালো লেগেছে!
  • এমরান হোসেন ২৫/০৮/২০১৬
    অসাধারণ লেখনী
 
Quantcast