www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রুম্মান ও অচলআনী (গল্প)

সেদিন ছিল মঙ্গলনার চৈত্রের বিদায়ী প্রহর। খুব ভোরে বাসা থেকে বেরিয়েছে শানু। কিছুটা পথ হেঁটে এসে মাহেন্দ্রায় ওঠে নিজ বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। স্নিগ্ধ ভোরের ফুরফুরে বাতাসে চুলগুলো উড়ে উড়ে মুখের উপর এসে পড়ছিল। অন্য রকম একটি সকাল, মাত্র দু'দিন পর ১লা বৈশাখ। ধরনীর বুক থেকে বিদায় নিবে আরো একটি বছর। থেকে থেকে মনটা হুহু করে উঠছে জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে আরো একটি বছর। এই একটা বছরে জমা হয়েছে কতই না স্মৃতি। কোনোটা সুখের কোনোটা দুঃখের, কোনোটা আজীবন দাগ কেটে যাবে হৃদয়ের মাঝে, কোনোটা বা স্মৃতির পাতা থেকে চির তরে বিস্মৃতি হয়ে যাবে। নতুন বছরের আনন্দে মন চঞ্চলও কম হচ্ছে না। লাল সাদা পোশাকে সাঝবে সবাই। এক নবআনন্দে উতলা হবে ধরনী। সাজ সাজ রব চার দিকে বৈশাখের শুরুতেই শুরু হবে বৈশাখী মেলা। মেলায় আসবে মাটির পুতুল, নকশা আঁকা হাড়ি, মাটির টাট্টু ঘোড়া, কাচের চূড়ী, রেশমী ফিতা, তাল পাতার পাখা, নাগর দোলা মন্ডা মিঠাই আরো কত কী। বৈশাখী ভোরে পান্তার সাথে ইলিশ ভাজা খেয়ে পালন করা হবে ১লা বৈশাখ। হায়রে বাঙালী সারা বছর খোঁজ থাকে না, গরীব দুঃখী অনাহারী মানুষের দিন কি ভাবে কাটছে। ওরা খেয়ে থাকে, না, না খেয়ে থাকে, সে খোঁজ কেউ রাখে না।অথচ কি অসাধারণ ভাবে ধুমধাম করে পান্তা ইলিশে পালন করা হয় এক দিনের বাঙালী আনা।
এক সময় বৈশাখ পালন করা হত কিছু চাল আর আম পাতা রাতে একটা মাটির হাড়িতে ভিজিয়ে রাখা হত ভোরে সেই ভেজানো চালের পানি আম পাতায় মাখিয়ে মাখিয়ে কৃষাণী ছিটিয়ে দিত বাড়ির সবার শরীরে, চাল ভিজানো পানি গায়ে মেখে গরম ভাত খেয়ে কৃষক লাঙ্গল কাঁধে কৃষক যেত মাঠে। আম পাতা ভেজানো চাল দিয়ে ভাত রান্না করে তাতে পানি ঢেলে দেওয়া হতো তার সাথে থাকতো আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা এধরণের কয়েক পদের ভর্তা রাখা হতো পান্তার সাথে।কৃষক মাঠে কাজ সেরে দুপুরে বাড়ি ফিরে পরিবারের সবাই এক সাথে বসে সেই পান্তা আর ভর্তা খেয়ে পালন করত বছরের প্রথম দিন। তবে বিশেষ কোনো কাপড় পরিধানের চলিত তখন ছিল না। যারা একটু অবস্থা সম্পণ্ন ছিল তারা নতুন কাপড় পরত কিন্তু রং নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা ছিলো না।আর এখন পান্তা ইলিশ, লাল সাদা পোশাক এ না হলে ১লা বৈশাখ হয়ই না।
হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে এক সময় বাড়িতে এসে পৌঁছয় শানু। শানু যখন আমার বড়ি পৌঁছয় তখন ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা। তখনও শানুর বাড়ির ভাড়াটিয়া বনী ঘুম থেকে ওঠেনি। ও ডাকার পর ঘুম জড়ানো চোখে গেট খুলে ভিতরে নেয় শানুকে।

-'কিরে এখনও ঘুম কেন'?
-বনী বলল 'রাতে বাসায় ছিলাম না আপা 'মা'র বাসায় ছিলাম, আপনি আসবেন তাই ভোরে চলে এসেছি, এসে শুতেই আবার ঘুম'।

-হুম,'ছেলে মেয়ে কই'? '
-ওরা 'মা'র বাসাতেই আছে'।
কিছুক্ষনের মধ্যে বনীর সাড়ে তিন বছরের ছেলে রুম্মান এসে পাশে দাঁড়ায়। হাতে কয়েকটা টাকা। আধো আধো ভাষায় বলে
-'খালামুনী ককন এছেছেন'?
-'এই তো বাবা কিছুক্ষন তুমি কোথায় ছিলে? তোমার হাতে ওটা কি গো'? ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষায় জবাব
-'এ তাকা'।
-'আমাকে দেও টাকাগুলো'।
ও না সূচক মাথা নাড়ে।
-'দাও না বাবা আমি চকলেট কিনে খাব'।
রুম্মান টাকাগুলো খুব শক্ত করে মুঠোয় ধরে। ওর মা বলে
-ব্রাস করে নাও রুম্মান।
টাকাগুলো ডান হাতের মুঠোয় ধরে বা হাতে টুত পাওডার ঢালে।টাকাগুলো ডান হাতে থাকায় ব্রাস করতে পারছেনা।বনী বলে
-'রুম্মান কি হলো ব্রাস শেষ করো'।
রুম্মান একবার শানুর দিকে তাকায় আর একবার নিজের হাতের দিকে। বনী মোটা করে বলে
-'রুম্মান কথা শুনছ না কেন'?
ও তখন বলে
-'আম্মু আমার তাকাতা ধলবা'?
বনী বলে '
-আমার হাতে কাজ তুমি ওখানে রেখে ব্রাস করো'।
-'না আম্মু বাতাছে উরে দাবে'।
বনী বলে '
-আরে বাবা বাতাস কোথা দেখছ তুমি রাখো ওখানে'।
রুম্মান বলে '
-যদি তলে আছে'।
বনী বলে 'না আসবে না তুমি তাড়াতাড়ি করো নাস্তা খেতে হবে'।
রুম্মান শানুর মুখের দিকে তাকি বলে 'না আম্মু বাতাস আছবে'।শানু বলে -'তুমি ওখানে টাকা রাখ বাবু আমি তোমার টাকা নিব না'।
হেসে উঠে বলে
-'ছত্যি নিবানা তো'?
-'না বাবা নিব না তুমি তাড়াতাড়ি ব্রাস শেষ করো। ওখানে কত টাকা তুমি আছে তুমি জানো'?
-'ব্লাচ কলে এছে গুনবানে থিক আছে'?
-'আচ্ছা'।
তড়িঘড়ি করে ব্রাস শেষ করল । ব্রাস করতে করতে দুবার তাকালো টাকার দিকে।ব্রাস সেরে টাকা গুনে একটা একটা করে।
-'পাত তাকা আল দুই তাকা সাত তাকা আল এক তাকা, কয় তাকা হয়'?
-'তুমি বলো'।
টাকা গোনা শেষে একটা সিকি থেকে যায় হাতে। সিকিটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে হাত টেনে ধরে শানুর।
-'কি বাবা'?
ও হেসে উঠে বলে '
-এতা তোমাল' । '
-ওরে দুষ্টু ছেলে এটা তো অচল পয়সা'? হেসে উঠে 'এটা দিয়ে কি করব'? 'এতা তুমি নিয়ে দাও এতা চলে না।
-তুমি এতা দিয়ে তকলেত খাবা'।
'-তবে রে দুষ্টু এটাতে চকলেট দেবে কে আমাকে'?
ও খিলখিল করে হেসে উঠে বলে
-'তা তো দানিনা'।
ওর মা ধমক দিয়ে বলে '
-এই ছেলে যেটা চলে না সেটা কেন খালামনীকে দিচ্ছিস। ভালো টাকা দে'।
শানু বলে
-'আহ বনী বাচ্ছাদের এভাবে ধমকাতে হয় না'।
দৌড়ে ঘরে যায় রুম্মান। ফিরে এসে বলে
-'আমাল তাকা ফিলায় দাও'।
হেসে উঠে শানু বললাম '
-কেন বাবা'? '
-ওতা তলে না'। '
-তো কি হয়েছে ?আচ্ছা তো তুমি এটা কি করবে'? '
-ফেলে দিব'।
ছেলেটিকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে বলল
-'ঠিক আছে বাবা আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি কিন্তু ওটা তো দেওয়া যাবে না'।
মুখের দিকে তাকিয়ে হা থেকে কিছুক্ষন তারপর আবার বলে
-'খামামুনী দাও'।
ব্যাগ থেলে একটা কয়েন বের করে 'শানু
-এই নাও বাবু এটা তোমার'।
কয়েনটা নিয়েই খুশি হয় আবার দৌড় দেয় ঘরে। চলে আশার জন্য উঠে দাঁড়ায় শানু। রুম্মান তখন ঘরে টাকাগুলো নিয়েই খেলছে।
বনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শানু পা বাড়ায় রাস্তায়। রুম্মান দৌড়ে এসে পেছন থেকে ডাক দেয়
-'খালামুনী ও খালামুনী এতা তো আমাল তাকা না তুমি ভুল কলে এতা আমাকে দিছ'।
রুম্মানের কথায় পেছনে ফিরে শানু। ও গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফিরে এসে ওর মুখে মাথায় আদর করে আবার সামনে পা বাড়ায় । রুম্মান মাকে বলে
-'আম্মু আম্মু আমি ভুল কলেছি? খালামুনী তো আমাকে বেছি তাকা দিলো'।
ওর মা হেসে বলে
-হ্যাঁ করেছ তো।
শানু বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিয়েছে রুম্মান চেচিয়ে বলে
-'খালামুনী ও খালামুনী এতা তোমাল তাকা অচল আনীতা আমাল'।
ঘুরে দাঁড়িয়ে শানু বলে '
-বাবু ওটা এখন থেকে তোমার আর তোমার অচল আনীটা আমার'। তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে শানু, রুম্মান হাতের টাকাটার দিকে এক নজর তাকিয়ে শানুর যাওয়ার পথে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

২১ এপ্রিল ২০১৬
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯২০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৪/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শাওন মুহাম্মদ ১৭/০৫/২০১৬
    খুব ভাল লেগেছে
  • গল্পের থিমটা ঠিক পরিস্কার নয় । পরিবেশন করার গুণগত মান আরও উৎকৃষ্ট করার দিকে নজর দিতে হবে । আগামীতে নিশ্চয়ই ভালো লেখা পাব । শুভেচ্ছা রইল ।
  • পরশ ০৪/০৫/২০১৬
    ভাল লাগলো
  • swapon Rozario ০২/০৫/২০১৬
    good
  • পরশ ০১/০৫/২০১৬
    খুব সুন্দর
  • সুন্দর হয়েছে বন্ধু!! তুমি চেষ্টা করো ভাল করবে-
  • ফয়জুল মহী ২৫/০৪/২০১৬
    সর্বাগ্রবর্তী লেখা
  • ২৩/০৪/২০১৬
    বেশ ভালো হয়েছে ।
    শুভেচ্ছা রইল ।
  • পরশ ২৩/০৪/২০১৬
    ভাল হয়েছে
  • প্রদীপ চৌধুরী. ২৩/০৪/২০১৬
    বেশ ভাল
 
Quantcast