www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দুই টাকার জন্য

রনি কাওরানবাজারের
বস্তিতে থাকে। আর দশ টা ছেলের মত
তার জীবন না।
তবে হ্যা বস্তি এলাকার অন্যান্য
ছেলেদের মতই তার জীবন। অনেক সপ্ন
ছিল রনির
স্কুলে পড়া লেখা করবে কিন্তু
তা আর কারা হয়নি।
বাবা ছেড়ে চলে যাবার পর
সংসারে খালি অভাব অনটন। হয়ত
নিয়তিই বলে দিয়েছে বস্তির ছেলের
আবার পড়া লেখা মানায়!!
সংসারে তারা তিন জন। রনি, তার
অসুস্থ মা এবং তার ছোট বোন রিনি।
মা অসুস্থ হবার ফলে রনি কে কাজ
করেতে হয়। রাস্তায় ফুল
বিক্রি করে রনি। ছোট বোন
রিনি কে ও
স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি।
তবে ইচ্ছা আছে রিনি কে পড়া লেখা করাবে।
এদিকে আসুস্থ মায়ের চিকিতসা খরচ
ও বহন করতে হয় রনি কে। থাইর্যেডস
রোগে ভুগছেন রনির মা।চিকিতসা খরচ
খুব ব্যায়বহুল। প্রতিদিন
সকালে বের হয় কাজের জন্য আর রাত
১০-১১ টায় বাড়ি ফিরে।
মালা বিক্রি করে যে টাকা আয় হয়
তা দিয়েই দিন চালাতে হয় তার।
কিছু টাকা জমিয়ে রাখতে হয়
তা মাস শেষে বস্তির মহাজন
কে দিতে হয়। পুরো প্রিবার রনির এই
সামান্য আয়ের উপর নির্ভশীল।

প্রতিদিনের মত আজও
মালা বিক্রি করতে বের হবে রনি।
এমন সময় রিনি এসে উপস্তিত
-ভাইজান কই যাও?
-কই আর যামু! কামে যাই
-আমারে আজকে একটু
ঘুরতে নিয়া যাইবা? সারাদিন
বস্তিতে থাক্তে ভালা লাগেনা
-তোরে নিয়া গেলে আমি কাম করমু
কেমনে? মালা তো বেচতে হইব
-আমি তোমার কামে সাহায্য করমু
-আজকে না আরেকদিন নিমুবে।তুই
মায়ের লগে থাক
শুয়ে থাকা মায়ের গললার আওয়াজ
শোনা গেল
-যা না একটু ঘুরতে নিয়া। সারাদিন
তো ঘড়েই পইইড়া থাকে
-কিন্তু তোমারে দেখব কেডা?
-আমি থাকতে পারমু।
-ঠিক আছে তাইলে নিয়া যাইতাছি
আনন্দে চিতকার করে উঠল রিনি।
কি করবে বুঝতে পারছে না। নতুন
কোন।জামা নেই। তাই একটা পছন্দের
পুরানো জামা পড়েই বের হয়ে গেল।

সারাদিন রনির সাথে ঘুরছে রিনি।
ঘুরছে ঠিক বলআ যাবেনা। রনি মালা।
বিক্রি করছে আর তার
স্থে হাটছে রিনি।
হাটতে হাটতে শাহবাগ শিশু
পার্কের সামনে চলে এল। শিশু
পার্কের গেইটের বাহির থেকে এক
দৃষ্টিতে ভেতরের রাইদের
দিকে তাকিয়ে থাকল রিনি।
রনি ঠিকই সব বুঝতে পারল। রিনির
মাথায় হাত দিয়ে রনি বললল
-পার্কে ডুকতে ইচ্ছা করতাছে?
-হুম
-অহন তো বেশি টেকা নাই তয় ঈদের দিন
তোরে নিয়া পার্কে আমুনে
রিনি জবাবে কিছু বলল না কেবল
একটা ছোট হাসি দিল। তারা আবার
হাটা শুরু করল। দুপুর হয়ে গেছে।
খাওয়ার সময় হয়েছে। রোযার মাস
কিন্তু গরিবের আবার
রোযা কিসের!! একটা টিভির
দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে দুই
ভাই বোন। সনি শোরুমের বিশাল
টিভির স্ক্রিনে রবির ঈদের পোশাক
দেওয়ার এড টা দেখল রিনি।
জামাটা তার খুবই পছন্দ হল।
-ভাইজান এমন
একটা জামা আমারে কিনা দিবা?
কয়দিন পরে তো ঈদ
-জামার তো অনেক দাম। আমার
কাছে তো এত টাকা নাই
-দাও না ভাইজান আমার পার্কে যাওন
লাগব না। তুমি জামাটা কিনা দিও
-আছা তুই যখন কইতাছস তাইলে দিমুনে
বিজয়ের হাসি হাসল রিনি। সামান্য
খেয়ে আবার মালা বিক্রি শুরু করল
রনি। তবে রিনি কে নিয়ে বেশিক্ষন
বাহিরে থাকলনা। আজ
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গেল।

রনির মাথায় এখন নতুন চিন্তা। ছোট
বোন জামা চেয়েছে কিন্তু জামার
তো অনেক দাম। এত টাকা তার
কাছে নেই আর জমাতেও অনেক সময়
লাগবে। তবুও বোনের আবদার
ফেলে দেয়া যায়না। তাই আগের
চেয়ে বেশি কাজ শুরু
করে টাকা জমানোর জন্য। প্রতিদিন
খাওয়া ও অন্যান্য খরচ মেটানোর পর
বাকি টাকা জমাতে শুরু করে।
সাথে সাথে কম দামে ভালা মানের
ওই এড আরর মত জামা খুজতে থাকে।
অবশেষে গুলিস্তানের
ফুটপাতে তেমনন একটই
জামা খুজে পায়। জামার এদিক ওদিক
হাতিয়ে রনি দোকানদার কে জিগাস
করল
-ভাই জামাটার দাম কত?
-৫০০ টাকা
-ভাই আমমি গ্রিব মানুষ একটু কম
রাখতে পারবেন?
-একদাম ৪৫০ টাকা রাখা যাবে এর এক
টাকাও কম দিবনা
-ভাই জামাটা কয়েকদিন রাখবেন
আমমি কিনমু।এখন
তো হাতে টাকা নাই নাইলে এখনই
নিয়া যাইতাম
-না রাখা যাবেনা।
তুমি যে নিবা তার গ্যারান্টি কই?
-ঠিক আছে ভাই আমি এখন ১০০
টেকা দিয়া যাই
বাকি টেকা পরে দিয়া লইয়া যামু
-তাইলে ঠিক আছে রাখা যাবে
-নেন ভাই টেকা নেন
এই বলে ১০০ টাকার নোট পকেট
থেকে বের করে দোকানদার কে দিল
রনি। প্রমান হিসাবে দোকানদারের
সাইন করা একটা কার্ড রাখল।
বাড়ি ফিরে রিনি কে খুশির খবর
টা জনাল রনি।

দোকানদার আরো ৩৫০ টাকা পায়।
জমানো হয়েছে ২৫০ টাকা আরো ১০০
টাকা জমাতে হবে।
হাতে আছে একদিন। আগামীকাল ঈদ।
মরিয়া ভাবে মালা বিক্রি করছে রনি।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা তারপর রাত।
বাকি ১০০ টাকার মধ্যা প্রায় সব
টাকা জমানো হয়েছে। মালাও প্রায়
সব শেষ
খালি একটি মালা বাকি আছে।
মালাটার ফুল গুলো একটু
শুকিয়ে গেছে তাই কেউ
কিনতে চাছে না। রাত বাজে ২ টা। রনি ভাবল প্রায় সব টাকা জমানো শেষ আর কাজ করার দরকার নেই। তাই
দোকানে গেল। দোকানদার কে কার্ড
দেখাল আর বলল
-ভাই বাকি ৩৫০ টেকার মধ্যে দুই
টাকা কম আছে
-না এক টাকাও কমে দিবনা। এর
চেয়ে বেশি দামে আমি কাস্টমার
পেয়েছি
-ভাই দেননা কালকে ইদের দিন। বইন টায়
চাইছে তাই কিনতাছি। গরিব মানুষ
আমি..
-না আগে দুই
টাকা নিয়া আসো তারপরর নিও।
দেরি হইলে আমি বেচে দিব
রনি পাগলের মত ছুটতে লাগল। দুই
টাকা কোথায় পাবে!!
মালা টা যেভাবেই হোক বেচতে হবে।
হাটতে হাটতে রাস্তার
জ্যামে আটকে থাকা একটি গাড়ির
কাছে গেল
-আফা একটা মালা নিবেন?
-না লাগবেনা যা
-নেন না আফা বেশি দাম লাগব
না দুইটা টেকা দিয়েন
-আছা ঠিক আছে দে
রনি মালা টা গাড়িতে দিল। দুই
টাকা বের করে দেবার সময় হঠাত
বাতাসে উড়ে গিয়ে তা রাস্তার
মাঝখানে পড়ল।
রনি খুজতে খুজতে রাস্তা মাঝখানে গেল
এমন সময় জ্যাম ছেড়ে দিল।
রনি টাকা তুলতে যাবে ঠিক
তখনি একটি বাস
এসে রনি কে ছিন্নভিন্ন করে দিল।
দুই টাকার জন্য রনির জামাকেনা হলল
না।

রিনি সারাদিন বসে বসসে ভাইয়ের
জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু ভাই আর
বাড়ি ফিরেনা। রিনি জানেনা তার
ভাই আর কোনদিন বাড়ি ফিরবেনা। দুই
টাকার জন্য অভিমান করে দুনিয়ার
মায়া ছেড়ে আজ সে পরপারে।
রিনি অভিমানে বুক ভাসায় কিন্তু
যদি সে জানত তবে হয়ত এই অভিমান
অনুতাপে পরিনত হত।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৯২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জাহিদুর রহমান ১১/০২/২০১৫
    বেশ লিখেছেন।
  • ০৯/০২/২০১৫
    খুবই হৃদয়বিদারক ।
    সুন্দর লেখা ।
  • ধন্যবাদ শ্রাবনের মেঘ, আফ্রিদি&সাদ্দাম ভাই
  • শ্রাবনের মেঘ ০৯/০২/২০১৫
    বেশ ভাল।
  • আফ্রিদী ০৯/০২/২০১৫
    সুন্দর
  • অত্যন্ত করুন লেখা।। যথেষ্ঠ সুন্দর থীম।।
    প্রকাশভঙি দারুন......

    প্রথম লেখাটাতেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম.......আপনার তারছেড়া প্রত্যাশাটাও বেড়ে গেল.......

    সুন্দর সুন্দর আরও লেখা দেখার অপেক্ষায়........... শুভ কামনা রইল।।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ০৯/০২/২০১৫
    আসরে স্বাগতম .....................।ভালো লিখা
  • খুবই ভালো লাগলো :) শাহাদাত ভাই
  • মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। হায়রে নিঠুর দুনিয়া........
    আসরে প্রথম লেখা। চমৎকার লিখেছেন। আসরে আপনাকে স্বাগতম। চালিয়ে যান।
 
Quantcast