www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জেদ

তিনার মন আজ খুব খুশী । যাকে চেয়েছিল তার সাথেই শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হচ্ছে। এক পর্যায়ে আশাই ছেড়ে দিয়েছিল তিনা । কি ঝড়টাই না গেল এই ক্ষুদ্র জীবনে! মা তো রাজীই ছিলনা।বাধা দিয়েছিলেন সব শক্তি দিয়ে। তিনার নানা ছিলেন কেতাদুরস্ত আমলা। মা ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন।মায়ের অহংকার আছে পুরোমাত্রায় । তার মেয়ে কিনা পছন্দ করল স্কুল শিক্ষকের ছেলেকে ? তিনার মা ভেবে পায়না তিনা কি এমন পেল ছেলেটার মধ্যে। ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কম্পিউটার সায়েন্সে। আজকাল কতজনই না পড়ে কম্পিউটার সায়েন্সে। সরকারীতে চান্স না পেলে বেসরকারি তে পড়ে । পাশ করে ভাল চাকুরি পাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। একদিন ছেলেটা এসেও ছিল বাসায়। উস্কখুস্ক চুল। শুধু উচ্চতাই দৃষ্টি কেড়েছিল আর কিছু নয়। সেদিনই চিন্তা করেছিলেন আর যাই হোক এই ছেলের সাথে কোনদিন বিয়ে দিবেন না। স্বামীর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনার বাবা সহজ সরল মানুষ । তিনি সরকারী ব্যাংকে চাকুরি করেন। পরিবারের কোন বিষয়েই সিদ্ধান্ত দেবার ক্ষমতা তার নেই। তিনার মায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় তাকে সব মেনে নিতেই হয়। তিনার দাদা ছিলেন স্কুল শিক্ষক । ভাল ছাত্র ছিলেন বলেই তিনার নানা বিয়েটা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনার বাবা কোনদিনই সুখী হতে পারেন নি। তিনার মা কোনদিনই তাকে বোঝেননি বা বোঝার চেষ্টা করেননি । তিনি তার মতো চলেছেন। তিনা অবশ্য বাবা কে অনেক ভালবাসে । একটু বেশীই ভালবাসে । মা বাবার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করে বলেই বাবাকে বেশী ভালবাসে তিনা। সব শুনে তিনার বাবা বলেছিলেন, “ তিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । ও যদি পছন্দ করে তাহলে আমাদের আর কি বলার আছে? আর ছেলেটাও মেধাবী । আমার মনে হয় আমার মেয়ে কোন ভুল করবেনা”। তিনার মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন । বলেছিলেন , “ এইজন্যে তোমার সাথে কোন বিষয়ে পরামর্শ করিনা। সবসময় মেয়ের পক্ষে। ওরকম মেধাবী হাজার হাজার আছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে । বাবা স্কুল মাষ্টার । টাকা পয়সা কিছু নেই। আমার মেয়ের হাতখরচই তো ঐ ছেলে দিতে পারবেনা। সারাজীবন কষ্টের মধ্যে থাকবে। আমি কোনভাবেই রাজী না । তুমি পারলে মেয়েকে বোঝাও”। তিনার বাবা জানেন তার স্ত্রীর সাথে তর্ক করা বৃথা । যেটা একবার বলে সেটা করেই ছাড়বে । ৩০ বছর ধরে এটাই দেখে আসছেন। পরেরদিন তিনার সাথে এই বিষয়ে কথা বলেন। তিনা বাবাকে অনেক বেশী ভালবাসে তাই চুপ করে থাকে। তিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় । সাকিবের সাথে দেখা করে। সাকিবকে সে খুব ভালবাসে । তিনাকে সুন্দরী বলা চলে। কিন্তু সাকিবের সাথে পরিচয়ের আগে কাউকে তেমন ভাল লাগেনি। দুই একজন যে প্রপোজাল দেয়নি তা নয়। তিনা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু যেদিন প্রথম সাকিবকে দেখে সেদিন তার জগতটা কেমন উলটপালট হয়ে গিয়েছিল । সারারাত ঘুমাতে পারেনি। প্রথম বসন্ত ভালই অনুভব করছিল তিনা। মায়ের অহংকারের কিছুটা সে পেয়েছিল। অন্তত যারা তাকে দেখতে পারতোনা তারা এই কথাই বলত। তিনা কাউকে পাত্তা দিত না । ছোটবেলা থেকেই একটু একরোখা টাইপের । তবে কিছু বন্ধু তার ছিল। বলা বাহুল্য সবাই ছিল সমাজের উঁচু শ্রেণীর । এদিক দিয়ে তিনার মন ছিল টনটনে । কিন্তু সাকিবের সাথে প্রথম দেখা পরিচয়ের পর উঁচু নিচু মেধাবী মেধাহীন সব বাধা ব্যবধান তিনার মন থেকে দূর হয়ে গেল। একেই কি তবে বলে ভালবাসা ? তিনার জগতটা এখন সাকিবময়। তাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনা। বান্ধবীদেরও সে সাকিবের কথা বলে। বান্ধবীরাও তিনাকে চেনে। তারা কিছু বলার সাহস পায়না। বরং উৎসাহ দেয় । এদিকে তিনাকেও সাকিবের ভাল লাগে। তিনার মধ্যে একটা আকর্ষণ ছিল। সে কথা বলত খুব সুন্দর করে। তাছাড়া অনেক বই তিনা পড়ত । তাই তার মধ্যে রোম্যান্টিক ভাবটা ছিল। সাকিবও অনেক ভাল বেসে ফেলে নিজের অজান্তেই । কিন্তু তিনাদের পরিবারের পরিচয় পেয়ে একটু পিছিয়ে আসে। তার ভয় করতে থাকে। সে ভাল ছাত্র কিন্তু ভিতু টাইপের । তিনা উৎসাহ দেয়। সাকিবকে সবসময় ভাল কিছু করার জন্যে বলে। একদিন বাসাতেও নিয়ে যায় । তিনার মা বুদ্ধিমতী । সাকিবকে দেখেই সব বুঝে ফেলে। সাকিবকেও আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় তার বাসায় স্থান সাকিবের হবেনা। তিনা খুব ভেঙ্গে পড়ে । খালাত বোনকে সব খুলে বলে মা কে ম্যনেজ করতে বলে। খালাত বোন ও সাহায্যে এগিয়ে আসে। তিনার বলার মধ্যে একটা আকুলতা ছিল খালাত বোন না এগিয়ে এসে পারেনা। একদিন রাতে বাসায় তুমুল ঝগড়া হয়। তিনা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ সাকিবকে ছাড়া আমি কাউকে কোনদিনই বিয়ে করতে পারবোনা । এটাই আমার শেষ কথা। না হলে...” । মা বাবাও বুঝতে পারে আর কিছু করার নেই। তিনার মায়ের অহঙ্কার চূর্ণ হতে বাধ্য হয়। মেয়ের জেদের কাছে তার অহংকার লুটিয়ে পড়ে । অসহায় ভাবে শূন্যে তাকিয়ে থাকেন তিনি। মেয়ের কাছে হারতে শেষপর্যন্ত তার খারাপ লাগেনা। ছেলেমেয়ের কাছে হেরে গেলে কোন বাবা মাই বোধহয় মন খারাপ করেনা।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১০০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মিন্টু শাহজাদা ২৬/০৫/২০১৭
    মা-বাবা বড় মূল্যবান এই পৃথিবীতে। জীবনের বহবিধ অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকে তাঁরা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত দেন। অামরা তা বুঝি না। আমরা তা মানি না। অামরা কেবল জিতেই যাই, তাঁরা কেবল হেরেই চলেন। একসময় হয়ত জীবন যুদ্ধে হারতে হারতে নিঃশেষ হয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। পৃথিবীর সকল মা-বাবার জয় হোক।
  • মধু মঙ্গল সিনহা ১৫/০৫/২০১৭
    খুব ভালো।
  • ভালো তো।
 
Quantcast