ফাঁদ
ফাঁদ
আশিক সাহসী । মোটামুটি এই বিষয়ে বন্ধুমহলে তার নাম আছে। মেডিকেল কলেজে পড়ে । শফির সাথে ভারী বন্ধুত্ব । শফি কলেজে পড়ে । দুজন মিলে দেশের অনেক জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছে । মেডিকেলে পড়ার অনেক চাপ। ছুটি পায়না বললেই চলে। শুক্রবার ছুটি থাকে। সেদিন এদিক সেদিক বেরিয়ে পড়ে । আশেপাশের অনেক জায়গা দেখা হয়ে গেছে। শফি কলেজে পড়ার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে টুকটাক । প্রতিদিন একটু দেখা না হলে যেন ভালই লাগেনা দুজনের। আবার তর্কও হয় তুমুল। আশিক ভূত প্রেতে বিশ্বাস করেনা। শফি করে। এই নিয়ে মাঝে মাঝে তুমুল ঝগড়া হয়। তারপর আবার চলে যায় মান্দুর দোকানে । কিমার চপ আর গরম চা খেতে খেতে অন্য আলাপে মেতে উঠে । শফির বাসার পাশ দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে। রাস্তাটা বেশ নির্জন । গাড়ী ঘোড়া তেমন একটা চলেনা। রাস্তায় শেষ মাথায় গোরস্থান । সেজন্যেই মনে হয় কেউ সহজে রাস্তাটা মাড়ায় না। শীতকাল চলছে। তীব্র শীত পড়েছে শহরে। জবুথুবু অবস্থা। শফি একদিন আশিককে সেই রাস্তার কথা বলে। আশিক হেসেই উড়িয়ে দেয়। সেদিন মেনু ছিল বট পরাটা । ভালই টানছিল দুজন। খেয়ে দিয়ে সেই রাস্তার কথা বলল শফি। আশিক বলল , “ চল যাই ।তোর ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে আসি। যাতে আর কোনদিন এসব ভূত প্রেত নিয়ে কথা না বলিস। আমি জানি তারপরেও তুই এসব বলবি। মানুষের মনের মধ্যে কুসংস্কার ঢুকে গেলে বের হওয়া বেশ কঠিন । বিংশ শতাব্দীতে মানুষ চাঁদে যাচ্ছে । তৈরি করছে সুপার কম্পিউটার । আর তুই আছিস ভূত প্রেত নিয়ে। এসব তোর উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা”। শফিও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। সেও বলে, “ তাহলে সেদিন যে আজম সাহেব মারা গেলেন ঐ রাস্তায় সেটা কি বলবি? সারা শরীরে কোথাও কোন আঘাত নেই। মরে পড়ে আছে রাস্তার পাশে ড্রেনে । রিক্সা যে চালাচ্ছিল তারও কোন হদিস পাওয়া যায়নি । ছিনতাইও ছিলনা সেটা । মোবাইল মানিব্যগ পকেটে ছিল । এটাকে কি বলবি”? আশিক হাসতে হাসতে বলে , “ চল আজ তোকে দেখিয়ে দি। আর কোনদিন কানের কাছে ঘ্যনঘ্যন করবিনা”। দুজন রিকশায় চেপে বসে। শীত খুব বেশী । মনে হয় চামড়া ভেদ করে ঢুকে যাবে । শফি পড়েছিল মোটা সোয়েটার । সাথে মাফলার । আর আশিকের পরনে ছিল লেদারের জ্যকেট । তাও ঠাণ্ডা লাগছিল দুইজনেরই । ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে হুড তুলে দিল। রিকশা যেতে লাগল সেই রাস্তায়। শফির গা ছমছম করছিল। একবার আশিক কে বললও সেকথা। ধমক খেল। চারিদিক কেমন অন্ধকার। মানুষজনও নেই। ল্যম্প পোস্টের মৃদু আলো তীব্র কুয়াশার কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করছিল। অবশেষে সেই রাস্তা পেয়ে গেল। শফিকে সাহস দিতে আশিক হালকা রসিকতার চেষ্টা করল। খুব একটা লাভ হলোনা । শফি খালি চিন্তা করছিল আজম সাহেবের কথা। কি হয়েছিল তার? কেন মারা গেলেন? কিভাবে মারা গেলেন? শীত আর নির্জনতা ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছিল শফির। আশিক ছিল নির্বিকার । রিকশা অনেকদূর চলে এল। কোন বিপত্তিই ঘটল না। হঠা ৎ আশিকের একটা ব্যপারে খটকা লাগল । রিকশাওয়ালা কে বলার সাথে সাথেই এই রাস্তায় আসতে চাইল কেন? এই রাস্তার যে দুর্নাম আছে তা শহরের সবাই জানে। আশিকও জানত কিন্তু বিশ্বাস করতো না। এই তীব্র শীতে এই নির্জন রাস্তায় কেন আসতে চাইল। মেডিকেলে শব ব্যবচ্ছেদ সে করেছে। কোনদিন কিছুই মনে হয়নি। আজ তবে কেন এমন ভয় লাগল ? নাকি তীব্র শীত তার সাথে এই রহস্যময় অন্ধকার তাকে তার নার্ভকে দুর্বল করে দিচ্ছে? রিকশার গতিটাও সন্দেহজনক। এই রাস্তায় আসার পর মনে হয় অনেক বেড়ে গেছে। আশিক বুদ্ধিমান। রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে একটু হালকা হতে চাইল।“ নাম কি” ? “দুলাল”।কথাটা মনে হয় অনেক অনেক দূর থেকে ভেসে এল। শীতের কারণে একবার ভাবল । মন থেকে কথাটা হায় দিলনা। আশিক ততক্ষণে ভয় পেতে শুরু করেছে। কোন বিষয়ে একবার ভয় পাওয়া শুরু হলে সেটা কমতে চায়না। বরং বাড়তেই থাকে। আশিকেরও একই অবস্থা হলো । শফি জবুথুবু হয়ে বসে ছিল। ভয়ে সে আড়ষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ মাঝ রাস্তায় রিকশার চেইন পড়ে গেল। রিকশাওয়ালা নামলেন চেইন ঠিক করতে। চেইন ঠিক করে উঠার সময় আশিকের চোখ গেল রিকশাওয়ালার দিকে। উঠার সময় খেয়াল করেনি। বুকটা ধক করে উঠল । মাথাটা গুলিয়ে গেল। এমন ভয়ংকর চেহারা আগে কখনই দেখেনি। চোখ থেকে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। জিঘাংসা সেই চোখে । “রিকশা থামান। আর যেতে হবেনা”। জোরে বলার চেষ্টা করেছিল আশিক । লাভ হলোনা । কোন আওয়াজই বের হলোনা । রিকশা আবার চলতে শুরু করল। প্রথমে আস্তে। তারপর ঝড়ের বেগে। শফির ততক্ষণে মূর্ছা যাবার মতো অবস্থা। শফিক প্রাণপণ চেষ্টা করছে রিকশা থেকে ঝাপ দিতে। সেই রিকশাওয়ালা ,তীব্র শীত আর অন্ধকারের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারলনা কেউ। অসহায়ভাবে আত্ম সমর্পণ করল ভয়াল রহস্যের কাছে। ঠিক সেই মুহূর্তেই কারেন্ট চলে গেল। পরদিন সকালে দুজনের লাশই উদ্ধার করা হল। কারো গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। কিছুই খোয়া যায়নি কারো । সেই রিকশাওয়ালারও কোন হদিস পাওয়া যায়নি ।
আশিক সাহসী । মোটামুটি এই বিষয়ে বন্ধুমহলে তার নাম আছে। মেডিকেল কলেজে পড়ে । শফির সাথে ভারী বন্ধুত্ব । শফি কলেজে পড়ে । দুজন মিলে দেশের অনেক জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছে । মেডিকেলে পড়ার অনেক চাপ। ছুটি পায়না বললেই চলে। শুক্রবার ছুটি থাকে। সেদিন এদিক সেদিক বেরিয়ে পড়ে । আশেপাশের অনেক জায়গা দেখা হয়ে গেছে। শফি কলেজে পড়ার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে টুকটাক । প্রতিদিন একটু দেখা না হলে যেন ভালই লাগেনা দুজনের। আবার তর্কও হয় তুমুল। আশিক ভূত প্রেতে বিশ্বাস করেনা। শফি করে। এই নিয়ে মাঝে মাঝে তুমুল ঝগড়া হয়। তারপর আবার চলে যায় মান্দুর দোকানে । কিমার চপ আর গরম চা খেতে খেতে অন্য আলাপে মেতে উঠে । শফির বাসার পাশ দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে। রাস্তাটা বেশ নির্জন । গাড়ী ঘোড়া তেমন একটা চলেনা। রাস্তায় শেষ মাথায় গোরস্থান । সেজন্যেই মনে হয় কেউ সহজে রাস্তাটা মাড়ায় না। শীতকাল চলছে। তীব্র শীত পড়েছে শহরে। জবুথুবু অবস্থা। শফি একদিন আশিককে সেই রাস্তার কথা বলে। আশিক হেসেই উড়িয়ে দেয়। সেদিন মেনু ছিল বট পরাটা । ভালই টানছিল দুজন। খেয়ে দিয়ে সেই রাস্তার কথা বলল শফি। আশিক বলল , “ চল যাই ।তোর ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে আসি। যাতে আর কোনদিন এসব ভূত প্রেত নিয়ে কথা না বলিস। আমি জানি তারপরেও তুই এসব বলবি। মানুষের মনের মধ্যে কুসংস্কার ঢুকে গেলে বের হওয়া বেশ কঠিন । বিংশ শতাব্দীতে মানুষ চাঁদে যাচ্ছে । তৈরি করছে সুপার কম্পিউটার । আর তুই আছিস ভূত প্রেত নিয়ে। এসব তোর উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা”। শফিও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। সেও বলে, “ তাহলে সেদিন যে আজম সাহেব মারা গেলেন ঐ রাস্তায় সেটা কি বলবি? সারা শরীরে কোথাও কোন আঘাত নেই। মরে পড়ে আছে রাস্তার পাশে ড্রেনে । রিক্সা যে চালাচ্ছিল তারও কোন হদিস পাওয়া যায়নি । ছিনতাইও ছিলনা সেটা । মোবাইল মানিব্যগ পকেটে ছিল । এটাকে কি বলবি”? আশিক হাসতে হাসতে বলে , “ চল আজ তোকে দেখিয়ে দি। আর কোনদিন কানের কাছে ঘ্যনঘ্যন করবিনা”। দুজন রিকশায় চেপে বসে। শীত খুব বেশী । মনে হয় চামড়া ভেদ করে ঢুকে যাবে । শফি পড়েছিল মোটা সোয়েটার । সাথে মাফলার । আর আশিকের পরনে ছিল লেদারের জ্যকেট । তাও ঠাণ্ডা লাগছিল দুইজনেরই । ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে হুড তুলে দিল। রিকশা যেতে লাগল সেই রাস্তায়। শফির গা ছমছম করছিল। একবার আশিক কে বললও সেকথা। ধমক খেল। চারিদিক কেমন অন্ধকার। মানুষজনও নেই। ল্যম্প পোস্টের মৃদু আলো তীব্র কুয়াশার কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করছিল। অবশেষে সেই রাস্তা পেয়ে গেল। শফিকে সাহস দিতে আশিক হালকা রসিকতার চেষ্টা করল। খুব একটা লাভ হলোনা । শফি খালি চিন্তা করছিল আজম সাহেবের কথা। কি হয়েছিল তার? কেন মারা গেলেন? কিভাবে মারা গেলেন? শীত আর নির্জনতা ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছিল শফির। আশিক ছিল নির্বিকার । রিকশা অনেকদূর চলে এল। কোন বিপত্তিই ঘটল না। হঠা ৎ আশিকের একটা ব্যপারে খটকা লাগল । রিকশাওয়ালা কে বলার সাথে সাথেই এই রাস্তায় আসতে চাইল কেন? এই রাস্তার যে দুর্নাম আছে তা শহরের সবাই জানে। আশিকও জানত কিন্তু বিশ্বাস করতো না। এই তীব্র শীতে এই নির্জন রাস্তায় কেন আসতে চাইল। মেডিকেলে শব ব্যবচ্ছেদ সে করেছে। কোনদিন কিছুই মনে হয়নি। আজ তবে কেন এমন ভয় লাগল ? নাকি তীব্র শীত তার সাথে এই রহস্যময় অন্ধকার তাকে তার নার্ভকে দুর্বল করে দিচ্ছে? রিকশার গতিটাও সন্দেহজনক। এই রাস্তায় আসার পর মনে হয় অনেক বেড়ে গেছে। আশিক বুদ্ধিমান। রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে একটু হালকা হতে চাইল।“ নাম কি” ? “দুলাল”।কথাটা মনে হয় অনেক অনেক দূর থেকে ভেসে এল। শীতের কারণে একবার ভাবল । মন থেকে কথাটা হায় দিলনা। আশিক ততক্ষণে ভয় পেতে শুরু করেছে। কোন বিষয়ে একবার ভয় পাওয়া শুরু হলে সেটা কমতে চায়না। বরং বাড়তেই থাকে। আশিকেরও একই অবস্থা হলো । শফি জবুথুবু হয়ে বসে ছিল। ভয়ে সে আড়ষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ মাঝ রাস্তায় রিকশার চেইন পড়ে গেল। রিকশাওয়ালা নামলেন চেইন ঠিক করতে। চেইন ঠিক করে উঠার সময় আশিকের চোখ গেল রিকশাওয়ালার দিকে। উঠার সময় খেয়াল করেনি। বুকটা ধক করে উঠল । মাথাটা গুলিয়ে গেল। এমন ভয়ংকর চেহারা আগে কখনই দেখেনি। চোখ থেকে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। জিঘাংসা সেই চোখে । “রিকশা থামান। আর যেতে হবেনা”। জোরে বলার চেষ্টা করেছিল আশিক । লাভ হলোনা । কোন আওয়াজই বের হলোনা । রিকশা আবার চলতে শুরু করল। প্রথমে আস্তে। তারপর ঝড়ের বেগে। শফির ততক্ষণে মূর্ছা যাবার মতো অবস্থা। শফিক প্রাণপণ চেষ্টা করছে রিকশা থেকে ঝাপ দিতে। সেই রিকশাওয়ালা ,তীব্র শীত আর অন্ধকারের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারলনা কেউ। অসহায়ভাবে আত্ম সমর্পণ করল ভয়াল রহস্যের কাছে। ঠিক সেই মুহূর্তেই কারেন্ট চলে গেল। পরদিন সকালে দুজনের লাশই উদ্ধার করা হল। কারো গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। কিছুই খোয়া যায়নি কারো । সেই রিকশাওয়ালারও কোন হদিস পাওয়া যায়নি ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শামসুজ্জামান স্বপ্ন ১৪/০৫/২০১৭অসাধারণ হয়েছে।
-
মো: রিদওয়ানুল ইসলাম রিফাত ০৬/০৫/২০১৭চমৎকার গল্প
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ০৪/০৫/২০১৭বাঃ ... দারুণ । ভাল লাগলো ।
-
মুহাম্মাদ রাসেল উদ্দীন ০৪/০৫/২০১৭চমৎকার লেখনী
-
আব্দুল হক ০৪/০৫/২০১৭সুন্দর লিখার জন্য অভিনন্দন!!
-
মধু মঙ্গল সিনহা ০৩/০৫/২০১৭ভালো লাগলো।