জহির সাহেবের দিনকাল
জহির সাহেবের মন ভাল নেই।বিকেলে নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে কত কথা মনে পড়ে যায় । দ্বিতীয় শ্রেণীর অসৎ সরকারী কর্মচারী ছিলেন তিনি। ঘুষখোর হিসেবে তার সুনাম ছিল। অনেক জায়গায় তিনি কাজ করেছেন। সব জায়গাতেই তিনি দুর্নাম কামিয়েছেন। বিদায় উত্তর সম্বর্ধনা পাওয়ার কথা ছিল অফিস থেকে । কিন্তু কোন এক ঝামেলায় সেটিও হয়নি। অফিসের শেষদিনে ভেবেছিলেন অনেকেই আবেগাপ্লুত হবে। জড়িয়ে ধরে কেউ কেউ কান্নাকাটি করবে। সেরকম কিছু হয়নি। বরং তিনি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন তার বিদায়ে সবাই খুশী । সবার মধ্যে খুশীর উত্তেজনা বিরাজ করছিল সেদিন । এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসেন। বাসায় এসেও শান্তি পান না তিনি। । বউ গত বছরেই চলে গেছেন। ক্যন্সার ছিল। অনেক চিকিৎসা করেছেন। লাভ হয়নি। ঘুষের অনেক টাকা এভাবেই চলে গেছে। ছেলেমেয়ে সবাই সবার ধান্ধায় ব্যস্ত। সবাই দূরে দূরে চলে গেছে। একজনকেও তিনি মানুষের মত মানুষ করতে পারেননি। কেউ খোঁজও নেয়না। সাথে থাকতেও কেউ বলেনা। অথচ কত কষ্ট করে ঘুষের টাকা দিয়ে তিনি সন্তানদের মানুষ করেছেন। কোন সখই তাদের অপূর্ণ রাখেননি।কিছুদিন আগে তার বড় নাতির জন্মদিনেও তাকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। অথচ বড় ছেলেকে বড় অঙ্কের ঘুষ দিয়ে তিনি চাকুরীতে ঢুকিয়েছিলেন । কিছুই হিসাব মেলেনা তার। অঙ্কে বড্ড কাঁচা ছিলেন ছোটবেলা থেকেই । এজন্যেই বোধহয় হিসাব মেলাতে পারেন না। প্রতিদিন নদীর ধারে যান । নদীর শান্ত জলও তাকে আর স্পর্শ করেনা। চেনা নদীর ঢেউ চিনতে তার ভুল হয়। নদীর ধারে একা হাঁটতে থাকেন। ইদানিং আরেক সমস্যা এসে জুটেছে । কিছুদূর হাঁটলেই বুক ব্যথা করে । শ্বাসকষ্ট হয়। নিজে নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। ইসিজি করে ডাক্তার বলেছেন হার্টের অসুখ আছে। আগে থেকেই প্রেসার ডায়াবেটিস ছিল। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত এসে জুটেছে রাজরোগ হৃদরোগ । ডায়াবেটিসের জন্যে ভাল কিছুই খেতে পারেন না। একটু ভাল খেলেই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে। জহির সাহেব আজকাল আর বেঁচে থাকার কোন মানে খুঁজে পান না। মাঝে মাঝে রাতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় । খুব অসহায় লাগে । ছোটবেলার কথা মনে পড়ে । স্কুলের কথা স্কুলের শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে । ছোটবেলার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে । বৃষ্টিতে ভেজা নদীতে সাঁতার কাটার কথা মনে পড়ে । চোখের কোণে পানি চলে আসে। একবার ভাবেন গ্রামে চলে যাবেন । সেখানেই বাকী জীবন কাটিয়ে দিবেন। কিন্তু সেখানেও তার আপন কেউ নেই। একবার গ্রামের এক লোক তার অফিসে সাহায্যের জন্যে এসেছিল। যেহেতু ঘুষ নিতে পারবেন না তাই বেশ খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। কাজটা করে দেননি । সেই লোক গ্রামে যেয়ে মাইক নিয়ে তার বিরুদ্ধে বদনাম করেছে। সুতরাং সেদিকে যেয়েও লাভ হবেনা তিনি জানেন । দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে তাঁর । ঘুমের আর গ্যাসের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ।ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যায় তার। বহুদিন সকালের স্নিগ্ধ আকাশ দেখা হয়না। মাঝে একদিন দেখেছিলেন। আনন্দ পাননি । প্রতিবেশীরাও তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। এড়িয়ে চলে। এত কম বেতন পেয়েও কিভাবে এমন বাসা করেছেন কেউ ভেবে পায়না। এই বিরাট বাসায় তিনি একা। আসলে এই বিরাট পৃথিবীতেই তিনি একা। আশেপাশের সবাই সবাই খারাপ মানুষ হিসেবেই তাকে জানে এটা তিনি জানেন। বিকেলে আবার হাঁটতে বের হন নিত্যদিনের মত। । নদীর ধারে যান । একটু হাঁটতেই সেদিন বুকে ব্যথা হয়। চোখ কেমন অন্ধকার হয়ে আসে। মৃত্যু , কবরের আজাব,হাশরের ময়দান , জাহান্নাম এসব মনে পড়ে। তিনি হাঁটতেই থাকেন। বুকের ব্যথা আরও বাড়তে থাকে। সাথে এসে যোগ হয় শ্বাসকষ্ট ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জয় নারায়ণ ভট্টাচার্য্য ২১/০৪/২০১৭সবাই জানি,মনি না
-
ফয়জুল মহী ২০/০৪/২০১৭অতুলনীয় উপস্থাপনায় সম্পূর্ণ আবিষ্ট হলাম
-
ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস ২০/০৪/২০১৭বেশ ভালো।
-
সাঁঝের তারা ১৯/০৪/২০১৭সুন্দর! কিন্তু অধিকাংশ ঘুষখোরেরা তো বেশ ভাল থাকে। আজকাল ঘুষ খায় না এমন লোক কমই আছে। যাহোক ঘুষখোরদের শেখার জন্য একটা ভাল গল্প...
-
ঐশিকা বসু ১৮/০৪/২০১৭পাপিষ্ঠদের এমনই সাজা হওয়া উচিত। আইনি সাজার চাইতে এ অনেক বেশি কার্যকরী। অনেক শুভেচ্ছা লেখককে।
-
খায়রুল আহসান ১৮/০৪/২০১৭ঘুষখোরদের শেষ দিনকাল তো এমনই হবার কথা। একেবারে ছকে বাঁধা!
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৮/০৪/২০১৭সমসাময়িক বাস্তবতার এক করুণ চিত্র!
এইসব ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজদের জন্যই আজ দেশ, মানবতা রসাতলে।
ধন্যবাদ গল্পকারকে -
মধু মঙ্গল সিনহা ১৭/০৪/২০১৭অসাধারণ গল্প ।
-
০।।০ ১৭/০৪/২০১৭অসাধারণ অনুভূতির গল্প ।। অনেক অনেক ভালো লাগা
সুস্থ থাকুন সর্বদা ।। শুভ কামনা নিরন্তর...