www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এবার তাজ মহল-এ পৃষ্টা এক

তখন মলিকুলার বায়োলজি-তে এমফিল করছিলাম দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা বলেছিলেন, 'তাজ মহল-কে সপ্তম আশ্চর্য বলা হয়, না দেখলে জীবন বৃথা'। মা সাথে সাথে বলেন, 'যদিও মমতাজ-এর প্রাণ তাজ মহল-এর ভারে চাপা পড়ে আছে, তবুও শাহজাহান-এর অমর কীর্তি না দেখলে সত্যি জীবন বৃথা'। দিল্লি থেকে আগ্রা বেশি দূর নয়- মাত্র চার ঘন্টার রাস্তা। দিল্লির মাতৃমন্দির থেকে বাস ছাড়ে- আগ্রা ফোর্ট, তাজ মহল, মথুরা ও বৃন্দাবন ঘোরায়। দিল্লিতে এলে মা বাবা মাতৃমন্দিরে এসে উঠতেন। মা বাবার আলোচনা শুনে আমি টিকিট বুক করে ফেলেছিলাম।
দিনটা ছিল পঁচিশে ডিসেম্বর। ভোর পাঁচটায় বাস ছেড়েছিল। ঘন কুয়াশার কারণে পাঁচ ঘন্টা সময় লেগেছিল গন্তব্যে পৌঁছতে। মাঝে একবার বাস থেমেছিল একটা ধাবায়। তখন সাড়ে আটটা হবে। উত্তর প্রদেশের কনকনে ঠাণ্ডা। গাইড বলেন, 'এখানে যা খাবার খেয়ে নিন। মাঝে আর কোনো ধাবায় বাস থামবে না। ফেরার পথে আবার এই ধাবাতেই বাস থামবে'। আমরা আলুর পরোটা অর্ডার দিয়েছিলাম। বাবা কেক, ফ্রুট ব্রেড ও ক্রিম বিসকুট কিনে নিয়েছিলেন। আলুর পরোটার সাথে জোর করে আমাদের ডালের তিনটে ছোট ছোট বালতি গছিয়ে দিয়ে মাথায় টুপি পরিয়ে দাম নিয়ে নিয়েছিল। দুশো সত্তর টাকা আমাদের বেশি দিতে হয়েছিল। বাবা কেবল দোকানদারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'পরোটার সাথে কী ডাল পাওয়া যাবে'? মা দুজনের ওপর গজগজ করছিলেন।
আগ্রা ফোর্টে কতকিছু দেখার। ওখানে মোট তিনটে দুর্গ- একটা সম্রাট আকবরের, আরেকটা সম্রাট জাহাঙ্গীরের ও অপরটা শাহজাহানের। আমরা শাহজাহানের দুর্গই দেখেছিলাম। বাকি দুটো বন্ধ ছিল। দুর্গে ঢুকে গাইড বলা শুরু করেন, 'ওই যে দেখছেন জানলার খোপ, শত্রুর আক্রমণ হলে ওখান দিয়ে শত্রুর ওপর গরম তেল ঢেলে দেওয়া হতো। এই যে দেখছেন বড় গামলাটা, ওটা শাহজাহানের বাথটব। এই এখানে আঙুরের চাষ হতো। এই যে দেখছেন জেল খানা, এখানে অপরাধ করলে প্রজাদের বন্দি করে রাখা হতো। ওদিকে মুমতাজের বাথটব'।
জেল খানায় যেতে গেলে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে হতো, গাইড আমাদের নিয়ে গেলেন ওপরে যেখানে শেষ বয়সে শাহজাহানকে আওরঙ্গজেব বন্দি করে রেখেছিলেন কারণ তিঁনি আরেকটা তাজ মহল বানাতে চেয়েছিলেন কালো মার্বেল দিয়ে, তখন ভারতে দুর্ভিক্ষ চলছিল। আওরঙ্গজেব আমার চোখে সঠিক কাজই করেছিলেন। ওখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সপ্তম আশ্চর্য। তখন কুয়াশা কেটে গেছিলো। তাজ মহল ঝলমল করছিল। তাজ মহল যাওয়ার গোপন পথ দেখালেন গাইড। দেখেছিলাম মীনা বাজার। গাইড বলেন, 'এই বাজারে মেয়েদের জিনিসপত্র কেনাবেচা হতো'। আমি শুনেছি মেয়েও কেনাবেচা হতো। তবে সঠিক কিনা জানি না। গাইড-এর সাথে আমি মুখ লাগাইনি। শিবাজীকে যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জায়গাটা দেখিয়ে গাইড বলেন, 'শিবাজী আওরঙ্গজেবের চোখে ধুলো দিয়ে ফল মিষ্টির ঝুড়িতে করে গোপনে পালিয়ে গেছিলেন'। দুর্গের স্তম্ভ গুলো দারুণ আশ্চর্যের- একটার পিছনে দাঁড়ালে অন্য গুলো সব ঢাকা পড়ে যায়।
আগ্রা ফোর্ট দেখে আমরা তাজ মহলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। পথে যেতে যেতে গাইড দুটো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। 'যে জায়গায় তাজ মহল দাঁড়িয়ে, সেখানে একটা শিব মন্দির ছিল'। তিনি আরো বলেন, 'তাজ মহল এক ধরণের কাঠের স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে। যমুনা নদীর জল সেই কাঠ গুলোকে ভিজিয়ে রেখেছে, তাই সেই কাঠ আজও পোক্ত'। সম্ভবত আবলুস এবং মেহগনি কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। বাবা বলেন, 'মুঘলদের কত ইতিহাস! ওরা লুট করতে এসে দেশটাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছিলো'।

চলবে
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/১২/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast