www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঋষিকেশ হরিদ্বার ভ্রমণ ১

দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন পিএইচডি করি। পুজোতে আমাদের কোনো ছুটি থাকতো না। দশেরাতে কেবল একদিন ছুটি থাকতো। আমাদের বাঙালিদের কাছে যেটা বিজয়া দশমী, হিন্দুস্থানিদের কাছে সেটা দশেরা- এই দিনে প্রভু রাম অসুর রাবণের সাথে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন। আমি অষ্টমী ও নবমী, এই দু দিন, স্যারের কাছ থেকে ছুটি চেয়ে নিয়েছিলাম। এর একটা বিশেষ কারণ ছিল। মা বাবা প্রত্যেক বার দূর্গা পুজোর সময় দিল্লির মাতৃমন্দিরে এসে উঠতেন ছেলেকে কাছে পাবেন বলে কারণ পুজোর কটা দিন আমি কলকাতায় যেতে পারতাম না। মা বহুদিন ধরে বায়না ধরেছিলেন, 'আমার হরিদ্বারটা দেখার খুব ইচ্ছে'।

মাতৃমন্দির থেকে বাস ছাড়ে। টুরিস্ট বাস। ঋষিকেশ হরিদ্বার ঘোরায়। মাথাপিছু হাজার টাকা। দু রাত এক দিনের টুর। রাতে দিল্লি থেকে বাস ছাড়ে। পরের দিন ভোরে পৌঁছায় ঋষিকেশ। ঋষিকেশ-এ দেখার জিনিস বলতে রামঝুলা ও লক্ষ্মণঝুলা। সাথে মা গঙ্গা তো আছেনই। তারপর বাস পৌঁছায় হরিদ্বারে। সেখানে আগে গঙ্গায় প্রদীপ ভাসাতে হয়। কেউ কেউ গঙ্গা স্নানও করেন পাপ ধুয়ে পুণ্য লাভ করার জন্য। সেখানে গাইড কেবল দুটি স্থান দর্শন করান- চণ্ডী পাহাড় ও মনসা পাহাড়। সেই দুটি পাহাড়ের মাথায় মন্দির- রোপওয়ে বা রজ্জুপথে যেতে হয়।

ভোর বেলা আমরা ঋষিকেশ-এ নেমেছিলাম। সেবার সেপ্টেম্বর মাসে পুজো ছিল। দিল্লিতে তখন গরম। তাই আমরা শীতের জামাকাপড় নিই নি। ঋষিকেশ-এ সে কি ঠাণ্ডা! পাহাড়ের উচ্চতার জন্য। বাবা বলেন, 'আমার দাঁতকপাটি ধরে যাচ্ছে'। মা তখন কাঁপছেন, কথা বলবেন কি। আমি বলেছিলাম, 'আমার হাত পা চলছেনা। জোর করে চালাচ্ছি'।

প্রথমে গাইড তিনটি মন্দির দেখান। তিনি হিন্দিতে কথা বলছিলেন। আমি ও বাবা হিন্দি বুঝি, হিন্দি সিনেমা দেখে শেখা। মা হিন্দি জানেন না কারণ তিনি বাংলা সিনেমা দেখতেই অভ্যস্ত। প্রথম মন্দিরটি সম্পর্কে গাইড বলেন, 'শীতকালে যখন বদ্রীনাথ বন্ধ থাকে, তখন এখানেই পুজো হয়'। দ্বিতীয় মন্দিরে দেখেছিলাম পনেরো ফিট লম্বা শিব লিঙ্গ। তাতে পুরোহিত তেল মাখাচ্ছিলেন।তৃতীয় মন্দিরে কত মূর্তি, গুণেই শেষ করা যায় না। সব মূর্তির নাম আমি জানতেই পারিনি। সেখানে দেখেছিলাম রুদ্রাক্ষ-এর গাছ। প্রথম বার সেই গাছ দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম।

লক্ষ্মণঝুলা আমরা হেঁটেই পার হয়েছিলাম। পাঁচ সাত মিনিটের রাস্তা। নীচে দিয়ে মা গঙ্গা বয়ে চলেছেন। সে কি স্রোত! গেলো বছর এখানে বন্যা হয়েছিল। ঝুলা জলে তলায় চলে গেছিলো। মাঝ গঙ্গায় যে শিবের মূর্তিটি ছিল, সেটা জলের স্রোতে টুকরো হয়ে ভেসে গেছিলো। প্রকৃতির রোষ থেকে ভগবান নিজেই নিজেকে বাঁচাতে পারেন নি। অনেকে খচ্চরের পিঠে চেপেও ঝুলা পার হচ্ছিলেন। লক্ষ্মণঝুলা পার করে আমরা ট্রেকার-এ চেপে রামঝুলায় গেছিলাম। রামঝুলা আর হেঁটে পার হই নি। নৌকায় চেপে গঙ্গা পার হয়েছিলাম। এক টাকার মুদ্রা মা গঙ্গায় ফেলে প্রণাম করেছিলেন। গাইড বলে দিয়েছিলেন, 'ট্রেকার-এর ভাড়া ও নৌকার ভাড়া নিজেদের দিতে হবে। সেগুলো হাজার টাকার মধ্যে নয়'। নৌকায় ওঠার আগে আমি গঙ্গা মায়ের মন্দিরে প্রণাম ঠুকেছিলাম। মকরের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন মা। মকর কুমিরের মতো জীব।

কুয়াশা কাটতে ভালোই রোদ উঠেছিল। সূর্যের আলো গঙ্গায় পড়ায় স্রোতের ঢেউ চিকচিক করছিলো। ঠাণ্ডা ভাব বেশ কেটে গেছিলো। গাইড বলেন, 'এখানে গঙ্গা আট ফিট গভীর। জল কনকনে ঠাণ্ডা'। জলের তাপমাত্রা কত সেটা তার জানা ছিল না। গঙ্গার দু ধারে প্রচুর বাগান বাড়ি। কলকাতার বহু বড়লোক এখানে ছুটি কাটাতে আসেন।

জলখাবার খেয়ে সবে চায়ের কাগজের কাপ মুখে তুলেছি, বাস হর্ন মারতে শুরু করেছিল। চায়ের কাপ ফেলে বাস-এ উঠে বসেছিলাম।

ঋষিকেশ থেকে হরিদ্বার পৌঁছতে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় লেগেছিলো। বাস গঙ্গার অন্য ঘাটে এসে দাঁড়িয়েছিল। সেখানেই প্রদীপ ভাসাতে হয়েছিল। বহু যাত্রী পুণ্যস্নানও করেন। মা প্রদীপ ভাসিয়েছিলেন। বাবা বলেছিলেন, 'এই জলে স্নান করলে নিউমোনিয়া নিশ্চিত'। আমি মাথায় সামান্য একটু জল ছিটিয়ে নিয়েছিলাম।

চলবে
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/১০/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast