www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিমুলতলা ভ্রমণ ১

বেণু দাদু ও বেবি দিদা, সম্পর্কে মায়ের মাসি মেসো। ওনারা প্রতি বছর শীতে শিমুলতলা বেড়াতে যান, স্বাস্হ্য উন্নতির জন্য। আমার দিদা দাদু, অর্থাৎ মায়ের মা বাবাকে সেইবারে ওনারা সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলেন, যত দলবল বাড়বে, ততই ভ্রমণের মজা বাড়বে। দিদা ফোনে বলেছিলেন, 'আমি আমার মেয়ে, জামাই ও নাতিকেও নিয়ে যেতে চাই'। ওপার থেকে বেবি দিদা বলেন, 'তাহলে আমিও আমার দেওরের মেয়ে, তুলিকে নিয়ে যাবো'। এই বেণু দাদুর কাছে আমি বাংলা পড়তে যেতাম মাঝে মাঝে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মাস্টার বলে দারুণ রেলা। আর বাংলা পড়ালে সেই রেলা আরো চারগুণ বেড়ে যায়!

সকাল নয়টায় ট্রেন। আমরা হাওড়া পৌঁছেছিলাম ভোর পাঁচটায়। রাত তিনটের সময় নরেন্দ্রপুরের আবাসন থেকে আমরা বেরিয়েছিলাম। বেণু দাদুর কথা মতোই সকলকে চলতে হচ্ছিল কারণ তিনি সকলকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশ্য খরচ সমান ভাগেই ভাগ হয়েছিল। সকলের খরচ বহন করার মতো ক্ষমতা কোনো বাংলার শিক্ষকের নেই। আগের দিন রাতে তিনি আমাকে জ্ঞান দিয়েছিলেন, 'সকালে ওঠার উপকারিতা জানো বালক'। তখন আমি ছয় ক্লাসে পড়ি। কিন্তু সব থেকে দেরি করেছিলেন তিনি। আমি নিতান্তই বালক, কি আর প্রতিবাদ করবো? হাতে সময় নিয়ে বেরোনো ভালো কিন্তু আগে গেলে বাঘে খায়। মিনি বাস তিনি বলেই রেখেছিলেন - আট জনের জন্য মিনি বাস, ভাবা যায়, ওনার কোন ছাত্রের বাস! ওনার তো ছাত্রের অভাব নেই, শুনছি বিদ্যাসাগর মহাশয় নাকি ওনার কাছে ব্যাকরণের পাঠ নিতেন!

অত সকালে কেবল চা বিস্কুট খেয়ে বেরিয়েছিলাম। জলখাবার হাওড়া স্টেশনে বসেই খেয়েছিলাম। তখন সকাল সাতটা। আমি, বাবা ও মা তিনজন মিলে দু প্লেট কচুরি খেয়েছিলাম। বেণু দাদু একাই দু প্লেট কচুরি খেয়েছিলেন। কুবেরের পেট। তিনি বলেন, 'শিমুলতলায় গেলে স্বাস্থ্য উদ্ধার হয়'। বলেই হজমের ওষুধ খেলেন ফেস্টাল এন।
আমি মনে মনে ভেবেছিলাম - এবার থেকে বেণু স্যার না বলে, ফেস্টাল এন স্যার বলবো।

সারা রাস্তা ট্রেনে বেণু স্যার বলতে বলতে এসেছিলেন, 'আমার ছাত্রের বাগান বাড়ি আছে ওখানে, কোনো অসুবিধে হবে না'। সারা রাত ঘুমাই নি, ট্রেনে ঘুমাবো কি, বাগান বাড়ি থেকে স্বাস্থ্য উদ্ধার, কানে একেবারে বিনা চাবিতেই তলা ধরে গেছিলো। ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছেছিল তখন বেলা চারটে, দেড় ঘণ্টা লেট। বেবি দিদা বলেন, 'পূর্বা কখনো লেট করে না'। আমি বলতে যাচ্ছিলাম, 'অহেতুক বক্তৃতা শুনে ট্রেন চালক ঝিমিয়ে গেছিলেন তাই', মুখ চেপে নিয়েছিলাম, ছোটদের বড়দের মুখের ওপর কথা বলা নিষেধ।

ট্রেন শিমুলতলা স্টেশনে মাত্র দুই মিনিট দাঁড়াতো। এর মধ্যে নামতে হয়েছিল আটজনকে। ভুল বললাম, চব্বিশজনকে। কিভাবে? মাথাপিছু তিনটে করে লাগেজ। তিনটে বেডিং, দুটো স্নান করার বালতি, সাথে চারটে মগ - দুটো স্নানের আর দুটো বিশেষ কারণের, জামা কাপড়ের ব্যাগ ত আছেই, সাথে বেণু দাদুর ক্যামেরার ব্যাগ - আমার ক্যামেরা আমার হাতেই, বসার টুল দুটো, আরো অনেক কিছু, স্টোভটা ট্রেনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যেত না, এখনও যায় না।

স্টেশনে নেমে আমরা অপেক্ষা গৃহে বসেছিলাম আর বেণু দাদু ও ছানু দাদু, মানে আমার মায়ের বাবা, রিক্সা চেপে গেছিলেন সেই বাগান বাড়ির খোঁজে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা 'নয়নতারা' নামে কোনো বাগান বাড়ি খুঁজে পেলেন না। ওনারা যে বাড়িতে উঠতেন, তার বাড়িওয়ালা তিন মাস আগে মারা গেছিলেন, তার ছেলে বেণু দাদুকে ফোনে সোজা না বলে দিয়েছিল। রিক্সা করে তারা আবার স্টেশনে ফিরে এসেছিলেন। তখন স্টেশনের ওপারে বিদ্যুৎ ছিল কিন্তু এপারে ছিল না।

সবার যখন মাথায় হাত, তখন ছানু দাদুর সাথে তার চেনা জানা লোকের দেখা হয়ে গেছিলো। তারও বাড়ি দমদমের সিঁথিতে, নাম সুদর্শন, স্টেশনের এপারে ওর মামার বাড়ি। ছানু দাদু বলেন, 'ভাই আজ রাতটা আমাদের কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারো'। সে এক গাল হেসে বলেছিল, 'এক রাত কেন, এক মাস আমি আপনার থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। আমার মামাদের হোটেলের ব্যবসা'। সেই রাতে কোনো ঘর খালি ছিল না, তাই ওনাদের নিজেদের দুটো ঘর ওনারা আমাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। রাতে খাবারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন - ভাত, ডাল, আলু ভাজা ও ওমলেটের ঝাল। সেই রাতটা আমাদের গাছের তলায় কাটাতে হয়নি। বিহারের শীতে হয়তো পাথর হয়ে যেতাম। পরদিন সকালে আমরা ঘর পেয়ে গেছিলাম ওদেরই হোটেলে।

দিনের বেলা ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতাম আর রাতে পেতাম জেনারেটরের আলো, ফলে দিনকে রাত মনে হতো আর রাতকে দিন। শীত কাল বলে পাখা লাগেনি, নইলে দিনের বেলা টিকটেই পারতাম না।

(ক্রমশ)
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ২৪২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৪/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast