দীঘা ভ্রমণ
আমার প্রথম সমুদ্র দেখা দীঘাতে। তখন আমার বয়স মাত্র ছয়। 'সমুদ্র' শব্দটা শুনলে মনে হতো কোনো একটা উঁচু বাড়ি। দীঘা যেতে যেতে মা আমাকে বলেছিলেন, 'সমুদ্রে প্রচুর ঢেউ'। 'উঁচু বাড়ির ছাদের মতো'! যখন প্রথম সমুদ্র দেখলাম মা বাবার হাত ধরে, তখন বুঝলাম জল কত গভীর। বাবা বোঝালেন, 'ওই যে জল উঠছে নামছে, ওগুলো ঢেউ'। সমুদ্রের গর্জন শুনে আমি কিছুটা দমে গেছিলাম।
পরের দিন সকালে সমুদ্রের পাড়ে বসে স্নান করছিলাম। একটা ঢেউ সামনে থেকে উঠলো, কাছে এসে এমন ধাক্কা দিলো যে আমি বোল্ডারের ওপর ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে গেলাম, হাত পায়ে আঘাত লাগলো দারুণ। মা বাবা দুজনেই ছুটে এসে আমাকে ধরলেন। মা এক হাত দূরে ছিলেন, আর বাবা দশ হাত।
দীঘা থেকে তালসারি যাওয়া যায়। তালসারি ওড়িশায়। ভ্যানে দু ঘন্টা সময় লাগে যেতে, দু ঘন্টা লাগে আসতে। পথে পড়ে চন্দনেশ্বর মন্দির। শিব এখানে পনেরো ফিট নীচে থাকেন। যে সব দম্পতিদের বাচ্চা হয় না, তারা এসে এখানে মহাদেবের কাছে প্রার্থনা জানায়। তালসারিতে আছে সুবর্ণরেখা নদী। আমরা বালির ওপর দাঁড়িয়ে নদী দেখলাম শান্ত বিকেলে। মাঝিরা আমাদের বলে দিয়েছিলো, 'নদীতে চোরাবালি, দয়া করে নামবেন না'। তাই মাঝিরা যখন পায়ে হেঁটে নদী পারাপার করে, তারা দল বেঁধে করে ও একে অপরের সাথে তাদের কোমর দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা থাকে, পাছে একজন চোরাবালিতে পা দিলে, বাকিরা তাকে বাঁচিয়ে দেবে। তাদের মানা করা সত্ত্বেও একটা ছেলে জলে নেমেছিল। সেই কারণে মাঝিরা খুব রাগ করছিলো। ছেলেটার কোনো ক্ষতি হয়নি। সমুদ্র আরো দূরে। নদী পেরিয়ে দু মাইল। জোয়ারের সময় নদী ও সমুদ্র মিশে একাকার হয়ে যায়, তখন মাঝিরা বড় বড় নৌকায় চেপে মাছ ধরতে বেরোয়। নদীর পাড়ে একটু দূরে একটা বিশাল ঝাউ বন আছে, সেখানে সিনেমার শুটিং হয়। আমরা আর যাই নি।
তিন দিন থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। বাবা অডিটের কাজে গিয়েছিলেন। যে হোটেলের অডিট করেন, সেখানে পরিবার নিয়ে থাকা ও খাওয়া ফ্রি। হোটেলের নাম ব্লু বার্ড। আমরা এসি রুমে থেকেছি, রোজ দুবেলা মুরগি খেয়েছি।
পরের বারে যখন আবার দীঘায় গেছিলাম, তখন আমার আট বছর বয়স। সেবারে আর তালসারিতে বেড়াতে যায়নি। দীঘাতে কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরেছিলাম। সেখানে একটা হ্রদ-এ প্যাডেল বোটিং করেছিলাম। দীঘাতেও চিড়িয়াখানা আছে। হরিণ ও ভাল্লুকের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। ভাল্লুক আমাকে বলেছিলো, 'বাবু, আর দুষ্টুমি করবে'? আমি কোনো জবাব দিইনি। দেখেছিলাম বহু প্রজাতির সাপও। ব্যাঙ খেয়ে সাপ গুলোর পেট ফুলে ঢোল হয়েগেছিলো। সাপ গুলো রাখা ছিল বড় একটা চৌবাচ্চার ভিতর। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বললেন, 'এটা ওদের আড্ডা মারার জায়গা'।
বিকেলে মার্কেটে বেড়াতে গিয়ে বিপদ ঘটলো। একটা নর্দমার ভিতর আমি পড়ে গিয়েছিলাম। আমার যা উচ্চতা, নর্দমার উচ্চতাও তাই। ফলে এক নিমেষের মধ্যে আমি মা বাবার চোখ থেকে হারিয়ে গেলাম। মা কেঁদেই ফেললেন, 'বাবাই, কোথায় হারিয়ে গেলো'! এক মিনিটের মধ্যে আমার চিৎকার শুনে বাবা আমাকে আবিষ্কার করলেন। তিনি আমার গলা টিপে, চুলের মুঠি ধরে, নর্দমা থেকে আমায় টেনে তুললেন। আমার কোমর অবধি তখন কাদা লেগে। সাথে সাথে মা বাবা আমাকে হোটেলে নিয়ে এলেন। ডেটল জলে স্নান করালেন। আর মার্কেট ঘোরা হলো না। বাবা পরে একাই মর্কেটে গিয়ে ঝিনুকের একটা জাহাজ কিনে নিয়ে এসেছিলেন মায়ের জন্য। ফিরে এসে বললেন, 'ভাগ্য ভাল যে ছেলেটা চোরাবালিতে ডুবে যায়নি'। তিন দিন বাদে, তখন আমরা বাড়ি ফিরে এসেছি, আমার দারুণ চর্মরোগ হলো। ল্যাকটো ক্যালামাইন লোশন মেখে রোগ সারলো।
এরপরেও বহুবার আমরা দীঘায় বেড়াতে গেছি, মার্কেটে আর কখনো ঘুরতে যাইনি। দূরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউ গুণেছি, জলে নামিনি।
পরের দিন সকালে সমুদ্রের পাড়ে বসে স্নান করছিলাম। একটা ঢেউ সামনে থেকে উঠলো, কাছে এসে এমন ধাক্কা দিলো যে আমি বোল্ডারের ওপর ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে গেলাম, হাত পায়ে আঘাত লাগলো দারুণ। মা বাবা দুজনেই ছুটে এসে আমাকে ধরলেন। মা এক হাত দূরে ছিলেন, আর বাবা দশ হাত।
দীঘা থেকে তালসারি যাওয়া যায়। তালসারি ওড়িশায়। ভ্যানে দু ঘন্টা সময় লাগে যেতে, দু ঘন্টা লাগে আসতে। পথে পড়ে চন্দনেশ্বর মন্দির। শিব এখানে পনেরো ফিট নীচে থাকেন। যে সব দম্পতিদের বাচ্চা হয় না, তারা এসে এখানে মহাদেবের কাছে প্রার্থনা জানায়। তালসারিতে আছে সুবর্ণরেখা নদী। আমরা বালির ওপর দাঁড়িয়ে নদী দেখলাম শান্ত বিকেলে। মাঝিরা আমাদের বলে দিয়েছিলো, 'নদীতে চোরাবালি, দয়া করে নামবেন না'। তাই মাঝিরা যখন পায়ে হেঁটে নদী পারাপার করে, তারা দল বেঁধে করে ও একে অপরের সাথে তাদের কোমর দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা থাকে, পাছে একজন চোরাবালিতে পা দিলে, বাকিরা তাকে বাঁচিয়ে দেবে। তাদের মানা করা সত্ত্বেও একটা ছেলে জলে নেমেছিল। সেই কারণে মাঝিরা খুব রাগ করছিলো। ছেলেটার কোনো ক্ষতি হয়নি। সমুদ্র আরো দূরে। নদী পেরিয়ে দু মাইল। জোয়ারের সময় নদী ও সমুদ্র মিশে একাকার হয়ে যায়, তখন মাঝিরা বড় বড় নৌকায় চেপে মাছ ধরতে বেরোয়। নদীর পাড়ে একটু দূরে একটা বিশাল ঝাউ বন আছে, সেখানে সিনেমার শুটিং হয়। আমরা আর যাই নি।
তিন দিন থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। বাবা অডিটের কাজে গিয়েছিলেন। যে হোটেলের অডিট করেন, সেখানে পরিবার নিয়ে থাকা ও খাওয়া ফ্রি। হোটেলের নাম ব্লু বার্ড। আমরা এসি রুমে থেকেছি, রোজ দুবেলা মুরগি খেয়েছি।
পরের বারে যখন আবার দীঘায় গেছিলাম, তখন আমার আট বছর বয়স। সেবারে আর তালসারিতে বেড়াতে যায়নি। দীঘাতে কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরেছিলাম। সেখানে একটা হ্রদ-এ প্যাডেল বোটিং করেছিলাম। দীঘাতেও চিড়িয়াখানা আছে। হরিণ ও ভাল্লুকের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। ভাল্লুক আমাকে বলেছিলো, 'বাবু, আর দুষ্টুমি করবে'? আমি কোনো জবাব দিইনি। দেখেছিলাম বহু প্রজাতির সাপও। ব্যাঙ খেয়ে সাপ গুলোর পেট ফুলে ঢোল হয়েগেছিলো। সাপ গুলো রাখা ছিল বড় একটা চৌবাচ্চার ভিতর। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বললেন, 'এটা ওদের আড্ডা মারার জায়গা'।
বিকেলে মার্কেটে বেড়াতে গিয়ে বিপদ ঘটলো। একটা নর্দমার ভিতর আমি পড়ে গিয়েছিলাম। আমার যা উচ্চতা, নর্দমার উচ্চতাও তাই। ফলে এক নিমেষের মধ্যে আমি মা বাবার চোখ থেকে হারিয়ে গেলাম। মা কেঁদেই ফেললেন, 'বাবাই, কোথায় হারিয়ে গেলো'! এক মিনিটের মধ্যে আমার চিৎকার শুনে বাবা আমাকে আবিষ্কার করলেন। তিনি আমার গলা টিপে, চুলের মুঠি ধরে, নর্দমা থেকে আমায় টেনে তুললেন। আমার কোমর অবধি তখন কাদা লেগে। সাথে সাথে মা বাবা আমাকে হোটেলে নিয়ে এলেন। ডেটল জলে স্নান করালেন। আর মার্কেট ঘোরা হলো না। বাবা পরে একাই মর্কেটে গিয়ে ঝিনুকের একটা জাহাজ কিনে নিয়ে এসেছিলেন মায়ের জন্য। ফিরে এসে বললেন, 'ভাগ্য ভাল যে ছেলেটা চোরাবালিতে ডুবে যায়নি'। তিন দিন বাদে, তখন আমরা বাড়ি ফিরে এসেছি, আমার দারুণ চর্মরোগ হলো। ল্যাকটো ক্যালামাইন লোশন মেখে রোগ সারলো।
এরপরেও বহুবার আমরা দীঘায় বেড়াতে গেছি, মার্কেটে আর কখনো ঘুরতে যাইনি। দূরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউ গুণেছি, জলে নামিনি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ০৭/১০/২০২৩
-
অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী ০৫/১০/২০২৩❤️
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৫/১০/২০২৩অনুপম উপস্থাপনা
অতি চমৎকার!