চুরির গল্প
চুরির গল্প বলি। সব গুলোই মায়ের অভিজ্ঞতা।
তখন আমি ছোট। কত বয়স মনে নেই। তবে এইটুকু বলতে পারি যে তখনও বোধশক্তি জন্মায়নি। দেওঘরে বেড়াতে গেছিলাম। মা দারুণ শিব ভক্ত। মন্দিরে পুজো দেবেন। পান্ডা বললো, 'এই জলের নীচে মহাদেব আছেন, হাত দিন'। মা ওর কথা মতো জলের ভিতরে ডান হাত ডোবালেন। তখন ওর হাতটা জলের ভিতরেই ছিল। মায়ের দু হাতেই একটা করে সোনার চুড়। যেই না জলে হাত দেওয়া পান্ডা মায়ের চুড় ধরে এক টান দিলো। 'কী করছেন', চিৎকার করে উঠলেন মা। ততক্ষণে মা জল থেকে হাত বার করে নিয়েছেন। পান্ডাটা বিরাট মোটা, চোখ দুটো টকটকে লাল, শান্ত হয়ে বললো, 'আপনার হাতটা ঠিক জায়গায় পৌঁছায়নি, তাই টানছিলাম'। মা আর জলে হাত দেন নি। সে যাত্রায় মা বেঁচে গেলেন। শিব দেখার সাধ মিটলো!
তখন আমি ক্লাস টেন-এ পড়ি। মাইথনে মাসির বাড়ি বেড়াতে গেছিলাম তিনজনে। যাওয়ার আগের দিন বাবা মাকে বললেন, 'বাড়ি খালি থাকলে যে কেউ তালা ভেঙে ঢুকতে পারে, তাই যা টাকা পয়সা সোনা দানা আছে ঘরের আলমারিতে না রেখে সাথে করে নিয়ে চলো'। বলে রাখি, যাওয়ার আগের সপ্তাহে পাড়ায় দু জনের বাড়িতে দিনে ডাকাতি হয়েছে। কেউ বাড়ি ছিল না। কেমিকাল দিয়ে তালা ভেঙে, ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে লকার খুলে, টাকা গহনা নিয়ে গেছে ডাকাতের দল, কাক পক্ষীতেও টের পায়নি। ঘটনাটা ঘটেছে ফেরার পথে। কুমারডুবি স্টেশনে। হতে পারে বাড়ির কাজের লোক বা অটোওয়ালার কানে এমন কোনো কথা গেছে যা খাস খবর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহিলা ডাকাত দলের ডেরায়! সব কাজ সেরে মেয়েটা যখন ব্যাগের চেন আটকাচ্ছিলো, মা ওর হাত চেপে ধরেন। ও এক নিমেষে ট্রেন থেকে নেমে যায়, সাথে আরো চারজন। সকলে মাকে ঘিরে ছিল। মাও ট্রেন থেকে নামতে যান। একজন ভদ্রলোক মায়ের হাত চেপে ধরেন, 'এ কী করছেন! ওরা কী সাংঘাতিক জানেন? আপনাকে ছুরি মেরে দেবে'? মা ব্যাগের চেন খুলে দেখেন যে টাকা পয়সা সোনা দানা কিছুই ব্যাগে নেই। হিসাবটা দিতে এখানে আমি অনিচ্ছুক। ব্যাগে জামাকাপড় ছিল, তার নীচে ঘরে পরার চপ্পল গুলো ছিল, তার নীচে দু কেজি তেঁতুল ছিল, তার নীচে ছিল সেই সব মূল্যবান দ্রব্য। বাবা আবিষ্কার করলেন যে তার প্যান্টের পিছনের পকেটে ওয়ালেটটাও নেই। ওরা প্রথমে আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে, তারপরে কামরার ভিতর মাকে ঘিরেছে আর বাবাকে ট্রেনের দরজা দিয়ে উঠতে বাঁধা দিয়েছে। আমরা পরে বুঝলাম। ওদের দলে মোট দশ থেকে বারো জন মহিলা ছিল। বাবার বুক পকেটে কিছু টাকা ছিল। তাই দিয়ে হাওড়া থেকে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরেছি। আমরা ভাগ্যিস ভোর বেলায় ভাত খেয়ে বেরিয়েছিলাম! বাড়ি ফিরে আমরা চা বিস্কুট আর মুড়ি খেয়েছি। ছয় ঘন্টা যে আমাদের কিভাবে কেটেছে কে জানে! বাড়ি এসে মা মাসিকে ফোন করে সব বলেছেন আর হাপুস নয়নে কেঁদেছেন। 'যদি সব কিছু বাড়িতে রেখে যেতাম, তাহলে এতো বড় ক্ষতি কখনোই হতো না'। পুলিশকে জানাবার কোনো সুযোগই আমরা পাইনি।
এই ঘটনাটা ঘটেছে হাইল্যান্ড পার্কের বিগ বাজারে। মা আমাদের ইন্দু এপার্টমেন্টের মহিলা সমিতির সাথে শপিং করতে গেছিলেন। ওনার ঝোলা ব্যাগের মধ্যে পার্সটা ছিল। শপিং করতে করতে হঠাৎ দেখলেন যে পার্সটা নেই। ঝোলা ব্যাগ খালি। সমিতির একজন বললেন, 'রিসেপশন-এ গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজটা দেখলেই জানা যাবে যে কে পার্সটা তুলেছে। এখানে চার দিকে ক্যামেরা'। সকলে মিলে যথা স্থানে হাজির হন। কিন্তু ফুটেজ-এ বারবার একই জায়গার ছবি দেখালো। বোঝাই গেল যে ভিতরের লোকই নিয়েছে। মায়ের আর শপিং করা হল না। চোখের জল মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরে এলেন। টাকার অঙ্কটা আমার জানা নেই।
তখন আমি ছোট। কত বয়স মনে নেই। তবে এইটুকু বলতে পারি যে তখনও বোধশক্তি জন্মায়নি। দেওঘরে বেড়াতে গেছিলাম। মা দারুণ শিব ভক্ত। মন্দিরে পুজো দেবেন। পান্ডা বললো, 'এই জলের নীচে মহাদেব আছেন, হাত দিন'। মা ওর কথা মতো জলের ভিতরে ডান হাত ডোবালেন। তখন ওর হাতটা জলের ভিতরেই ছিল। মায়ের দু হাতেই একটা করে সোনার চুড়। যেই না জলে হাত দেওয়া পান্ডা মায়ের চুড় ধরে এক টান দিলো। 'কী করছেন', চিৎকার করে উঠলেন মা। ততক্ষণে মা জল থেকে হাত বার করে নিয়েছেন। পান্ডাটা বিরাট মোটা, চোখ দুটো টকটকে লাল, শান্ত হয়ে বললো, 'আপনার হাতটা ঠিক জায়গায় পৌঁছায়নি, তাই টানছিলাম'। মা আর জলে হাত দেন নি। সে যাত্রায় মা বেঁচে গেলেন। শিব দেখার সাধ মিটলো!
তখন আমি ক্লাস টেন-এ পড়ি। মাইথনে মাসির বাড়ি বেড়াতে গেছিলাম তিনজনে। যাওয়ার আগের দিন বাবা মাকে বললেন, 'বাড়ি খালি থাকলে যে কেউ তালা ভেঙে ঢুকতে পারে, তাই যা টাকা পয়সা সোনা দানা আছে ঘরের আলমারিতে না রেখে সাথে করে নিয়ে চলো'। বলে রাখি, যাওয়ার আগের সপ্তাহে পাড়ায় দু জনের বাড়িতে দিনে ডাকাতি হয়েছে। কেউ বাড়ি ছিল না। কেমিকাল দিয়ে তালা ভেঙে, ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে লকার খুলে, টাকা গহনা নিয়ে গেছে ডাকাতের দল, কাক পক্ষীতেও টের পায়নি। ঘটনাটা ঘটেছে ফেরার পথে। কুমারডুবি স্টেশনে। হতে পারে বাড়ির কাজের লোক বা অটোওয়ালার কানে এমন কোনো কথা গেছে যা খাস খবর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহিলা ডাকাত দলের ডেরায়! সব কাজ সেরে মেয়েটা যখন ব্যাগের চেন আটকাচ্ছিলো, মা ওর হাত চেপে ধরেন। ও এক নিমেষে ট্রেন থেকে নেমে যায়, সাথে আরো চারজন। সকলে মাকে ঘিরে ছিল। মাও ট্রেন থেকে নামতে যান। একজন ভদ্রলোক মায়ের হাত চেপে ধরেন, 'এ কী করছেন! ওরা কী সাংঘাতিক জানেন? আপনাকে ছুরি মেরে দেবে'? মা ব্যাগের চেন খুলে দেখেন যে টাকা পয়সা সোনা দানা কিছুই ব্যাগে নেই। হিসাবটা দিতে এখানে আমি অনিচ্ছুক। ব্যাগে জামাকাপড় ছিল, তার নীচে ঘরে পরার চপ্পল গুলো ছিল, তার নীচে দু কেজি তেঁতুল ছিল, তার নীচে ছিল সেই সব মূল্যবান দ্রব্য। বাবা আবিষ্কার করলেন যে তার প্যান্টের পিছনের পকেটে ওয়ালেটটাও নেই। ওরা প্রথমে আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে, তারপরে কামরার ভিতর মাকে ঘিরেছে আর বাবাকে ট্রেনের দরজা দিয়ে উঠতে বাঁধা দিয়েছে। আমরা পরে বুঝলাম। ওদের দলে মোট দশ থেকে বারো জন মহিলা ছিল। বাবার বুক পকেটে কিছু টাকা ছিল। তাই দিয়ে হাওড়া থেকে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরেছি। আমরা ভাগ্যিস ভোর বেলায় ভাত খেয়ে বেরিয়েছিলাম! বাড়ি ফিরে আমরা চা বিস্কুট আর মুড়ি খেয়েছি। ছয় ঘন্টা যে আমাদের কিভাবে কেটেছে কে জানে! বাড়ি এসে মা মাসিকে ফোন করে সব বলেছেন আর হাপুস নয়নে কেঁদেছেন। 'যদি সব কিছু বাড়িতে রেখে যেতাম, তাহলে এতো বড় ক্ষতি কখনোই হতো না'। পুলিশকে জানাবার কোনো সুযোগই আমরা পাইনি।
এই ঘটনাটা ঘটেছে হাইল্যান্ড পার্কের বিগ বাজারে। মা আমাদের ইন্দু এপার্টমেন্টের মহিলা সমিতির সাথে শপিং করতে গেছিলেন। ওনার ঝোলা ব্যাগের মধ্যে পার্সটা ছিল। শপিং করতে করতে হঠাৎ দেখলেন যে পার্সটা নেই। ঝোলা ব্যাগ খালি। সমিতির একজন বললেন, 'রিসেপশন-এ গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজটা দেখলেই জানা যাবে যে কে পার্সটা তুলেছে। এখানে চার দিকে ক্যামেরা'। সকলে মিলে যথা স্থানে হাজির হন। কিন্তু ফুটেজ-এ বারবার একই জায়গার ছবি দেখালো। বোঝাই গেল যে ভিতরের লোকই নিয়েছে। মায়ের আর শপিং করা হল না। চোখের জল মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরে এলেন। টাকার অঙ্কটা আমার জানা নেই।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরিতোষ ভৌমিক ২ ২৯/০৩/২০২৪এক্কেবারে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে, সত্যিই মনে হচ্ছে , তবে সকলের অভিজ্ঞতাতেই এমন গল্প লুকিয়ে রয়েছে, আপনি আপনার দক্ষতায় আমাদের জানাতে পেরেছেন । ধন্যবাদ ।
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ২২/০৭/২০২৩বেশ উপভোগ্য!
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২১/০৭/২০২৩সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ২০/০৭/২০২৩বাহ্! অপূর্ব লেখনী
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২০/০৭/২০২৩বেশ ভালো গল্প