জ্ঞানের কথা
জন্ম থেকে আমরা সকলে জ্ঞানের কথা শুনে থাকি। প্রথমে জ্ঞানের কথা বলেন মা কারণ মা হলেন প্রথম শিক্ষিকা। তারপর শুরু হয় বাবার জ্ঞান। বাবা দ্বিতীয় শিক্ষক। তারপর দাদু ঠাকুমা দিদিমা। তারপর কাকা জ্যাঠা মামা মাসি পিসি। ভাইবোন থাকলে তো কথাই নেই। তারপর শিক্ষক। বন্ধুবান্ধব। কলিগ। অফিসের বস। তারপর প্রেমের জ্ঞান। সব শেষে শুনি আমরা সমাজের জ্ঞান। কে কেমন জ্ঞান দেন ব্যাখ্যা করা যাক।
মা শেখান বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মতো জ্ঞানী হও। কিন্তু জ্ঞানী হতে চাইলেই কেউ জ্ঞানী হতে পারে না। সবার মেধা সমান নয়। সমাজে জ্ঞানী, অজ্ঞানী ও অর্ধ জ্ঞানী- তিন ধরণের মানুষই পাওয়া যায়। চেষ্টা করলেও কেউ বিদ্যাসাগর হতে পারে না।
বাবা শেখান স্বামী বিবেকানন্দের মতো ধার্মিক হও। স্বামীজীকে মেনে চলার মতো শক্তি আমাদের কারো নেই। আমরা চেষ্টা করলে সকলে সৎ হতে পারি, কিন্তু বেশি সৎ হলে আবার মুশকিল। তেমনই বেশি বীর হওয়া বিপদ। এ যুগে প্রতিবাদ করলেই মরবে। যে ভীতু, সে সহ্য করে; যে সহ্য করে, যে বেশি দিন বাঁচে। ধর্মে প্রচুর নিয়ম- নিয়ম মানবো না সিলেবাস পড়বো। মানুষের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচা এখন দায়। প্রাণে বেঁচে থাকা সবথেকে বড় ধর্ম। তাই নিজেকে বাঁচাও, অন্যের ক্ষতি না করে।
এবার আসি বুড়ো বুড়িদের জ্ঞানের কথায়। 'আমাদের আমলে এই ছিল, তোমাদের আমলে এই নেই। আমাদের আমলে সব ভালো, তোমাদের আমলে সব খারাপ'। কে বোঝাবে যে সময়ের সাথে সাথে সমাজ বদলে যায়। বদলে যায় ধারণা। জীবনটাতো আর গরুর রচনার মতো নয়। জীবনটা নদীর স্রোত।
এবার আসি রক্তের সম্পর্কের কথায়। 'ও এগিয়ে গেলো, তুই পিছিয়ে পড়ে রইলি। ও দেখ সব পেয়ে গেলো, তুই কিছু পেলি না। তোর এই কাজটা করা উচিত হয়নি, তোর এটা করা উচিত ছিল। এভাবে চললে তোরা পিছিয়ে থাকবি'। রক্তের সম্পর্ক মানে জ্ঞাতি বলি যাদের, তারা ঠকায়, তাই জ্ঞাতির সাথে চিরকাল আর সম্পর্ক থাকে না- বৌ-এর সাথে থাকে বৈকি।
ভাইবোনদের অন্য জ্ঞান। 'দাদার মত লাল জামা আমার চাই। দিদির মতো আমার কলম চাই। ভাইকে তোমরা একটু বেশি প্রশ্রয় দাও। বোনকে তোমরা একটু বেশি আদর করো'।
শিক্ষকদের মুখে আমি একটাই জ্ঞান শুনেছি, 'দিনে আঠারো ঘন্টা পড়তে হবে'। আমি জীবনে এক দিনে আট ঘন্টার বেশি কখনো পড়িনি, কম পড়েছি। আমি মেধাবী কিনা জানি না, তবে আমি ফাঁকিবাজ নই। আর যে সব কথাগুলো শিক্ষকদের মুখে শুনি, সেগুলো বলি, 'তোমার দ্বারা কিছু হবে না। তুমি আলালের ঘরের দুলাল। তুমি মাথামোটা'। ভালো ফল করলে শুনতাম, 'তোমার আরো নম্বর পাওয়া উচিত ছিল'।
বন্ধু এখন আর বন্ধুর মতো নেই। বন্ধু বন্ধুকে সোজা পথে যেতে দেয় না, বিপদে পাশে দাঁড়ানো বহু দূরের কথা। বন্ধুদের কথা তুলে ধরি। 'চল ক্লাস বাংক করে সিনেমা যাই। এটা নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেট, টেনে দেখ, মুড একেবারে বদলে যাবে। আজকে শীতের আমেজ, একটু গলা ভেজালে হয় না'।
কলিগদের মুখে কেবল একটাই কথা, 'বস আপনাকে একটু বেশি পছন্দ করেন'। কেউ কেউ একটু বেশি ভালোবেসে কখনো বলেন, 'আপনি এখানে কারো সৌর্সএ ঢুকেছেন'।
বসের মুখে যে কথাগুলো বেশি শোভা পায় সেগুলো হল, 'কাজ শেখো। আগের মাসে ছুটি নিয়েছিলে, এ মাসে আর ছুটি নেওয়া যাবে না'। বস ছুটি নেওয়ার কথা মনে রাখেন কিন্তু ওভার টাইম-এর কথা বিলকুল ভুলে যান। 'এতো তাড়াতাড়ি মাইনে বাড়ে না। দশ বছর কাজ করার পরে আমার মাইনে বেড়েছিল'। এই কথাটা সকলকেই শুনতে হয়।
স্ত্রীরা আগে স্বামীদের বলতো, 'তুমি আমাকে একদম সঙ্গ দাও না'। এখন বলে, 'তোমার ওপর আমি নির্ভরশীল নই'। স্বামীরা আগে স্ত্রীদের বলতো, 'মাংসটা বেশ কষিয়ে রান্না করো তো'। এখন বলে, 'আমার পরম সৌভাগ্য, এ মাসে দু বার মাংস পেলাম'। টাকা পেলে সবাই খুশি, তখন কেউ আর মাংস চায় না।
এবার সমাজের জ্ঞানের কথায় আসি। 'তুমি মা বাবার প্রতি ঠিক মতো কর্তব্য পালন করো নি। তুমি বৌ-এর কাছে হাত পাতো। তুমি তোমার বৌ-কে দাবিয়ে রাখো। তুমি সম্পত্তির লোভে বিয়ে করেছো। তুমি সৎ পথে টাকা রোজগার করো না। তুমি তেল মেরে জীবনে বড় হয়েছো। তুমি বাবার টাকা ওড়াও। তুমি স্বার্থপর'। সব শেষে যেটা সমাজ বলে, সেটা হল, 'তুমি চরিত্রহীন'।
তাই নিজের জ্ঞান নিজে শোনো। কারোকে সেটা দিতে যেও না। কারো কাছ থেকে সেটা নিও না।
মা শেখান বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মতো জ্ঞানী হও। কিন্তু জ্ঞানী হতে চাইলেই কেউ জ্ঞানী হতে পারে না। সবার মেধা সমান নয়। সমাজে জ্ঞানী, অজ্ঞানী ও অর্ধ জ্ঞানী- তিন ধরণের মানুষই পাওয়া যায়। চেষ্টা করলেও কেউ বিদ্যাসাগর হতে পারে না।
বাবা শেখান স্বামী বিবেকানন্দের মতো ধার্মিক হও। স্বামীজীকে মেনে চলার মতো শক্তি আমাদের কারো নেই। আমরা চেষ্টা করলে সকলে সৎ হতে পারি, কিন্তু বেশি সৎ হলে আবার মুশকিল। তেমনই বেশি বীর হওয়া বিপদ। এ যুগে প্রতিবাদ করলেই মরবে। যে ভীতু, সে সহ্য করে; যে সহ্য করে, যে বেশি দিন বাঁচে। ধর্মে প্রচুর নিয়ম- নিয়ম মানবো না সিলেবাস পড়বো। মানুষের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচা এখন দায়। প্রাণে বেঁচে থাকা সবথেকে বড় ধর্ম। তাই নিজেকে বাঁচাও, অন্যের ক্ষতি না করে।
এবার আসি বুড়ো বুড়িদের জ্ঞানের কথায়। 'আমাদের আমলে এই ছিল, তোমাদের আমলে এই নেই। আমাদের আমলে সব ভালো, তোমাদের আমলে সব খারাপ'। কে বোঝাবে যে সময়ের সাথে সাথে সমাজ বদলে যায়। বদলে যায় ধারণা। জীবনটাতো আর গরুর রচনার মতো নয়। জীবনটা নদীর স্রোত।
এবার আসি রক্তের সম্পর্কের কথায়। 'ও এগিয়ে গেলো, তুই পিছিয়ে পড়ে রইলি। ও দেখ সব পেয়ে গেলো, তুই কিছু পেলি না। তোর এই কাজটা করা উচিত হয়নি, তোর এটা করা উচিত ছিল। এভাবে চললে তোরা পিছিয়ে থাকবি'। রক্তের সম্পর্ক মানে জ্ঞাতি বলি যাদের, তারা ঠকায়, তাই জ্ঞাতির সাথে চিরকাল আর সম্পর্ক থাকে না- বৌ-এর সাথে থাকে বৈকি।
ভাইবোনদের অন্য জ্ঞান। 'দাদার মত লাল জামা আমার চাই। দিদির মতো আমার কলম চাই। ভাইকে তোমরা একটু বেশি প্রশ্রয় দাও। বোনকে তোমরা একটু বেশি আদর করো'।
শিক্ষকদের মুখে আমি একটাই জ্ঞান শুনেছি, 'দিনে আঠারো ঘন্টা পড়তে হবে'। আমি জীবনে এক দিনে আট ঘন্টার বেশি কখনো পড়িনি, কম পড়েছি। আমি মেধাবী কিনা জানি না, তবে আমি ফাঁকিবাজ নই। আর যে সব কথাগুলো শিক্ষকদের মুখে শুনি, সেগুলো বলি, 'তোমার দ্বারা কিছু হবে না। তুমি আলালের ঘরের দুলাল। তুমি মাথামোটা'। ভালো ফল করলে শুনতাম, 'তোমার আরো নম্বর পাওয়া উচিত ছিল'।
বন্ধু এখন আর বন্ধুর মতো নেই। বন্ধু বন্ধুকে সোজা পথে যেতে দেয় না, বিপদে পাশে দাঁড়ানো বহু দূরের কথা। বন্ধুদের কথা তুলে ধরি। 'চল ক্লাস বাংক করে সিনেমা যাই। এটা নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেট, টেনে দেখ, মুড একেবারে বদলে যাবে। আজকে শীতের আমেজ, একটু গলা ভেজালে হয় না'।
কলিগদের মুখে কেবল একটাই কথা, 'বস আপনাকে একটু বেশি পছন্দ করেন'। কেউ কেউ একটু বেশি ভালোবেসে কখনো বলেন, 'আপনি এখানে কারো সৌর্সএ ঢুকেছেন'।
বসের মুখে যে কথাগুলো বেশি শোভা পায় সেগুলো হল, 'কাজ শেখো। আগের মাসে ছুটি নিয়েছিলে, এ মাসে আর ছুটি নেওয়া যাবে না'। বস ছুটি নেওয়ার কথা মনে রাখেন কিন্তু ওভার টাইম-এর কথা বিলকুল ভুলে যান। 'এতো তাড়াতাড়ি মাইনে বাড়ে না। দশ বছর কাজ করার পরে আমার মাইনে বেড়েছিল'। এই কথাটা সকলকেই শুনতে হয়।
স্ত্রীরা আগে স্বামীদের বলতো, 'তুমি আমাকে একদম সঙ্গ দাও না'। এখন বলে, 'তোমার ওপর আমি নির্ভরশীল নই'। স্বামীরা আগে স্ত্রীদের বলতো, 'মাংসটা বেশ কষিয়ে রান্না করো তো'। এখন বলে, 'আমার পরম সৌভাগ্য, এ মাসে দু বার মাংস পেলাম'। টাকা পেলে সবাই খুশি, তখন কেউ আর মাংস চায় না।
এবার সমাজের জ্ঞানের কথায় আসি। 'তুমি মা বাবার প্রতি ঠিক মতো কর্তব্য পালন করো নি। তুমি বৌ-এর কাছে হাত পাতো। তুমি তোমার বৌ-কে দাবিয়ে রাখো। তুমি সম্পত্তির লোভে বিয়ে করেছো। তুমি সৎ পথে টাকা রোজগার করো না। তুমি তেল মেরে জীবনে বড় হয়েছো। তুমি বাবার টাকা ওড়াও। তুমি স্বার্থপর'। সব শেষে যেটা সমাজ বলে, সেটা হল, 'তুমি চরিত্রহীন'।
তাই নিজের জ্ঞান নিজে শোনো। কারোকে সেটা দিতে যেও না। কারো কাছ থেকে সেটা নিও না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সেলিম রেজা সাগর ০১/০৩/২০২৩অসাধারণ লিখনশৈলী
-
ফয়জুল মহী ০৭/০১/২০২৩সুন্দর
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ০৭/০১/২০২৩সুন্দর বলেছেন!