সময়ের মানুষ
সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলে যায়। এটা কোনও নতুন স্লোগান নয়। সময় মানুষকে রুচি বদলাতে বাধ্য করে। জীবনের আরেক মানে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। যদি মানুষ তালে তাল না মেলায়, তাহলে তার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে উঠবে। বাঁচার তাগিদে মানুষ রাতারাতি বদলে ফেলে জীবনযাত্রা।
আমার ঠাকুরদাদা ও ঠাকুরমা এক রকম জীবনযাপন করতেন। বাবা মা অন্য রকম জীবনযাপন করেছেন। আমি ও আমার বৌ আরো অন্য রকম জীবনযাপন করি।
আগেকার দিনে মানুষ ধুতি, পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরতেন। তারপরে প্যান্ট, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ ও ম্যাক্সির চল এল। এখন জিন্স, থ্রি কোয়াটার, লেগিন্স ও মিনি স্কার্ট-এর চল। কোনও বৌ সিঁদুর পরে ঘোমটা দিয়ে ঘরে বসে থাকে না। আজকালকার বৌ-রা সব খোলা মেলা। কারণ মেয়েরা এখন স্বাবলম্বী। তারা ঘরও সামলায়, বাইরেও সামলায়।
বদলেছে খাওয়া দাওয়া- সময়ের সাথে সাথে খাওয়ারের লিস্ট কীভাবে বদলেছে দেখি। ঠাকুরদাদার আমলে খাবারের লিস্ট করি- মুড়ি, ছাতু, দইয়ের ঘোল, লুচি, ভাত, ডাল,পাঁচমিশালী তরকারি ও মাছের ঝোল। মুরগির মাংস অধিকাংশ বাড়িতেই ঢুকতো না। তিন বার মুরগির ডাক শুনলে তখন গঙ্গা স্নান করতে হতো। বলির পাঁঠা বাড়িতে ঢুকতো। রান্না করা হতো কেবল আদা দিয়ে, পিঁয়াজ রসুন ছাড়া, একেবারে নিরামিষ ভাবে। বাবার আমলে বাড়িতে মুরগি আনা শুরু হল। প্রতি রবিবারে কাঁচের প্লেটে ফ্রায়েড রাইস ও চিল্লি চিকেন খাওয়া হতো। শেষ পাতে রায়তা। জলখাবারে আলুর পরোটা, চাউমিন বা ম্যাগি খাবার চল হল। কড়া দুধ চা ছেড়ে মানুষ হেলথ ড্রিংক খাওয়া ধরলো। বিকেলে কেক পেস্ট্রি খেতে শুরু করলো মানুষ। মুড়ি চিড়া প্রায় উঠেই গেল। এবার আমার যুগের খাবার কথা বলি। এখন 'ব্রেড' বলতে আর হাতে গড়া রুটি বোঝায় না। 'ব্রেড' মানে এখন পাউরুটি। ব্রেকফাস্ট, মানে জলখাবারে ব্রেড ওমলেট। দুপুরের খাবার কেউ আর এখন বলে না। লাঞ্চে মেনু কী ? চিকেন পিৎজা বা চিকেন পাস্তা। বিকেলের খাবারকে টিফিন বলা হয়। কী খাওয়া হয় এখন বিকেলে? হট ডগ, সসেজ, রোল, মোমো ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবাকে দেখতাম ডাবের জল খেতে। আমি কোল্ড ড্রিংক খাই। রাতের খাবারকে কেউ 'সাপার' বলে না, 'ডিনার' বলে। ডিনারে সবাই হালকা খায়- ব্রেড ও ভেজিটেবল সুপ। এখন ওদের থেকে আমরা বেশি বিরিয়ানি খাই। ক্লিওপেট্রাগণ ওটস্ খান।
কথা বলার ঢং বদলে গেছে। আগে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলা হতো। তারপরে ইংরেজি শব্দ ঢুকতে শুরু করলো বাংলা বাক্যের মধ্যে। এখন হিন্দিও ঢুকে গেছে।
ঠাকুরদাদার আমলে ছিল একান্নবর্তী পরিবার, যা এখন আর নেই। বাবাদের আমলে ঠাকুরদাদা ও ঠাকুরমার স্নেহ পেতো নাতি নাতনিরা। এখন তারা দাদু ঠাকুমার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। ডিভোর্স (বিবাহ বিচ্ছেদ) প্রচুর বেড়ে গেছে। কেউ কেউ 'লিভ ইন'- ও করে, নিজেকে কোনও ভাবে বন্ধনীতে আবদ্ধ করবে না বলে। মানিয়ে চলা ব্যাপারটা কারো মধ্যে আর নেই , কেমন যেন একটা গা ছাড়া ভাব। আমাদের ছেলে মেয়েরা আমেরিকানদের মতো জীবনযাপন করবে। যে যার তার তার। স্বামী স্বামীরটা রান্না করে নেবে, বৌ বৌ-এরটা। স্বামীর নারীসঙ্গ ও স্ত্রীর পুরুষসঙ্গ থাকাটা এখনকার রীতি। কিছুদিন পরে 'লিভ ইন' ব্যাপারটা ঢুকে যাবে সমাজের ঘরে ঘরে ব্রেকফাস্ট-এর ব্রেড-এর মতো। এখনই স্বাবলম্বীদের স্বাধীন চেতনা স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়েছে। পরে তা বিকট রূপ নেবে।
হারিয়ে যাবে সমাজ- যেখানে বহু মানুষ নিয়ে সমাজ গঠিত হয়, সেখানে এক একজন মানুষ একাই একটা ফাঁপা সমাজের প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে! আমি তোমার কে, তুমি আমার কে- এই ভাবনাই হারিয়ে দেবে মানুষের কাছে মানুষকে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম, কিন্তু কখনোই একা বাঁচা যায় না। মনে রাখতে হবে, আমরা মানুষ, কোনও জন্তু নই । জন্তুদের মতো মানুষেরা বনে গিয়ে একা একা কখনোই বসবাস করতে পারবে না।
আমার ঠাকুরদাদা ও ঠাকুরমা এক রকম জীবনযাপন করতেন। বাবা মা অন্য রকম জীবনযাপন করেছেন। আমি ও আমার বৌ আরো অন্য রকম জীবনযাপন করি।
আগেকার দিনে মানুষ ধুতি, পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরতেন। তারপরে প্যান্ট, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ ও ম্যাক্সির চল এল। এখন জিন্স, থ্রি কোয়াটার, লেগিন্স ও মিনি স্কার্ট-এর চল। কোনও বৌ সিঁদুর পরে ঘোমটা দিয়ে ঘরে বসে থাকে না। আজকালকার বৌ-রা সব খোলা মেলা। কারণ মেয়েরা এখন স্বাবলম্বী। তারা ঘরও সামলায়, বাইরেও সামলায়।
বদলেছে খাওয়া দাওয়া- সময়ের সাথে সাথে খাওয়ারের লিস্ট কীভাবে বদলেছে দেখি। ঠাকুরদাদার আমলে খাবারের লিস্ট করি- মুড়ি, ছাতু, দইয়ের ঘোল, লুচি, ভাত, ডাল,পাঁচমিশালী তরকারি ও মাছের ঝোল। মুরগির মাংস অধিকাংশ বাড়িতেই ঢুকতো না। তিন বার মুরগির ডাক শুনলে তখন গঙ্গা স্নান করতে হতো। বলির পাঁঠা বাড়িতে ঢুকতো। রান্না করা হতো কেবল আদা দিয়ে, পিঁয়াজ রসুন ছাড়া, একেবারে নিরামিষ ভাবে। বাবার আমলে বাড়িতে মুরগি আনা শুরু হল। প্রতি রবিবারে কাঁচের প্লেটে ফ্রায়েড রাইস ও চিল্লি চিকেন খাওয়া হতো। শেষ পাতে রায়তা। জলখাবারে আলুর পরোটা, চাউমিন বা ম্যাগি খাবার চল হল। কড়া দুধ চা ছেড়ে মানুষ হেলথ ড্রিংক খাওয়া ধরলো। বিকেলে কেক পেস্ট্রি খেতে শুরু করলো মানুষ। মুড়ি চিড়া প্রায় উঠেই গেল। এবার আমার যুগের খাবার কথা বলি। এখন 'ব্রেড' বলতে আর হাতে গড়া রুটি বোঝায় না। 'ব্রেড' মানে এখন পাউরুটি। ব্রেকফাস্ট, মানে জলখাবারে ব্রেড ওমলেট। দুপুরের খাবার কেউ আর এখন বলে না। লাঞ্চে মেনু কী ? চিকেন পিৎজা বা চিকেন পাস্তা। বিকেলের খাবারকে টিফিন বলা হয়। কী খাওয়া হয় এখন বিকেলে? হট ডগ, সসেজ, রোল, মোমো ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবাকে দেখতাম ডাবের জল খেতে। আমি কোল্ড ড্রিংক খাই। রাতের খাবারকে কেউ 'সাপার' বলে না, 'ডিনার' বলে। ডিনারে সবাই হালকা খায়- ব্রেড ও ভেজিটেবল সুপ। এখন ওদের থেকে আমরা বেশি বিরিয়ানি খাই। ক্লিওপেট্রাগণ ওটস্ খান।
কথা বলার ঢং বদলে গেছে। আগে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলা হতো। তারপরে ইংরেজি শব্দ ঢুকতে শুরু করলো বাংলা বাক্যের মধ্যে। এখন হিন্দিও ঢুকে গেছে।
ঠাকুরদাদার আমলে ছিল একান্নবর্তী পরিবার, যা এখন আর নেই। বাবাদের আমলে ঠাকুরদাদা ও ঠাকুরমার স্নেহ পেতো নাতি নাতনিরা। এখন তারা দাদু ঠাকুমার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। ডিভোর্স (বিবাহ বিচ্ছেদ) প্রচুর বেড়ে গেছে। কেউ কেউ 'লিভ ইন'- ও করে, নিজেকে কোনও ভাবে বন্ধনীতে আবদ্ধ করবে না বলে। মানিয়ে চলা ব্যাপারটা কারো মধ্যে আর নেই , কেমন যেন একটা গা ছাড়া ভাব। আমাদের ছেলে মেয়েরা আমেরিকানদের মতো জীবনযাপন করবে। যে যার তার তার। স্বামী স্বামীরটা রান্না করে নেবে, বৌ বৌ-এরটা। স্বামীর নারীসঙ্গ ও স্ত্রীর পুরুষসঙ্গ থাকাটা এখনকার রীতি। কিছুদিন পরে 'লিভ ইন' ব্যাপারটা ঢুকে যাবে সমাজের ঘরে ঘরে ব্রেকফাস্ট-এর ব্রেড-এর মতো। এখনই স্বাবলম্বীদের স্বাধীন চেতনা স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়েছে। পরে তা বিকট রূপ নেবে।
হারিয়ে যাবে সমাজ- যেখানে বহু মানুষ নিয়ে সমাজ গঠিত হয়, সেখানে এক একজন মানুষ একাই একটা ফাঁপা সমাজের প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে! আমি তোমার কে, তুমি আমার কে- এই ভাবনাই হারিয়ে দেবে মানুষের কাছে মানুষকে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম, কিন্তু কখনোই একা বাঁচা যায় না। মনে রাখতে হবে, আমরা মানুষ, কোনও জন্তু নই । জন্তুদের মতো মানুষেরা বনে গিয়ে একা একা কখনোই বসবাস করতে পারবে না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আলমগীর সরকার লিটন ১৬/০৪/২০২২সময়ে অনেক কিছু বদলায় সত্যকথা
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ১৬/০৪/২০২২সময়ের সাথে সাথে সবই বদলায়!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৫/০৪/২০২২ভাল।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৫/০৪/২০২২খুব ভালো