www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বভাব

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল-এর দৃশ্য- একটা বাঘ একটা হরিণের পিছু নিয়েছে। বাঘটা ধরে ফেললো হরিণটাকে। তারপর একা একা বেশ জমিয়ে খেতে লাগলো। যতটা খেতে পারলো না মজুত করে রাখলো।

ধরুন দুটো বাঘ এক সাথে একটা হরিণকে তাড়া করেছে। শিকারের পরে কেউ নিশ্চিন্তে হরিণটাকে খেতে পারবে না। কাড়াকাড়ি করবে। যে বাঘটার গায়ের জোর বেশি, সে বেশি অংশ পাবে। আবার যখন দুটো বাঘ লড়াইয়ে মগ্ন থাকবে, তখন ধূর্ত শিয়াল এসে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে মৃত হরিণের মাংস পিছন থেকে। এভাবেই রাজনীতির উৎস।

মানুষের স্বভাবও ঠিক তাই। সবল মানুষ দুর্বলের খাবার কেড়ে খাবে। ধূর্ত মানুষ সরল মানুষের খাবার কেড়ে খাবে। অথচ পৃথিবীর রসদে সকলের সমান অধিকার। বঞ্চিত মানুষ নানান ভাবে লড়াই করে। নানানা রাজনৈতিক মতবাদের উৎস এসবের থেকেই।

সে কালের কথা বলি। তখন দেশে শিক্ষার অত চল ছিল না। অসহায় ও মূর্খ প্রজা ভাবতো রাজা পরম ঈশ্বর। তিনি যা বলেন সেটা বেদবাক্য। তাই শত যন্ত্রণা পেলেও, রাজা শত যন্ত্রণা দিলেও, রাজার আদেশ সদা মেনে চলা উচিত। প্রজার ইহকাল পরকাল রাজার হাতে। তারপর ব্রিটিশ এল। দেশের মানুষ বিদেশী শিক্ষায় শিক্ষিত হল। চোখ খুললো মানুষের। মানুষের ইহকার পরকাল কেবল তার নিজেরই হাতে। শাসক কে হবে সেটাও মানুষেরই রায় বলে দেবে। ইংরেজকেও তাড়ালো সেই মানুষ। স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হল। ভোট দিল মানুষ। এক এক ফোঁটা মিলে একটা সমুদ্র। এক একটা ভোটের ক্ষমতা মিলে দেশের নেতা। মানুষ চিনলো তার অধিকার। গণতন্ত্র কী জানলো মানুষ। আবার নব্বই শতাংশ মানুষ যা চায়, সব ক্ষেত্রে যদি তা মেনে নেওয়া হয় তাহলে বাকি দশ শতাংশ মানুষ চিরকালই বঞ্চিত থেকে যাবে। তাদের মুখপাত্রের কথাও শোনা উচিত। এবার প্রজাতন্ত্রের সঠিক ব্যাখ্যা শিখলো মানুষ। কিন্তু লোভ মানুষের মধ্যে থেকে কিছুতেই গেল না। মানুষ হয়ে মানুষকে শোষণ না করলে সে কীসের মানুষ! বঞ্চিত হতে হতে মানুষ বুঝলো সমান অধিকারের কথা। সাম্যবাদের জন্ম হল। কিন্তু কোথায় সাম্য! বঞ্চিত মানুষ ধ্বংস করতে লাগলো ভোগীদের। সরকার হবে তাদের। শ্রমের কাছে বুদ্ধি বাঁধা পড়লো। সমতা ধ্বংস করলো বিকাশ।

শুধু চিরস্থায়ী রয়ে গেল গণতন্ত্র। কিন্তু শোষণ কমলো কই? তবে একদিক দিয়ে নিশ্চিন্ত- শোষকের ইহকাল পরকাল এখন মানুষেরই হাতে। তাই বোধহয় গণতন্ত্রকেই মানুষ বেছে নিল। পন্ডিত মানুষের আদর্শ প্রজাতন্ত্র কারণ তার মতে গণতন্ত্রে অধিকাংশের উন্নতি সাধন হয়, কিন্তু প্রজাতন্ত্রে সংখ্যাল্প সম্প্রদায়ের কথাও ভাবা হয়।

প্রজাতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখার জন্য সমাজবাদের একান্ত প্রয়োজন। এখানে বঞ্চিতের অধিকারের কথা বলা হয়। এমন নয় যে বঞ্চিত, সে ভোগীদের সাথে মারপিট লাগিয়ে দেবে নিজের অধিকারের দাবিতে। ভোগী মানুষের ভোগের সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। তাহলে না খেতে পাওয়া মানুষের সংখ্যা নিঃসন্দেহে কমবে।

ভোগবাদ বড়ই খারাপ জিনিস। ভোগবাদ বহু রাজনৈতিক পরিকাঠামোর পতন ঘটিয়েছে অতীতে। বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও ভেসে গেছে ভোগের লিপ্সায়। তা বলে ভোগীদের আমি কখনোই সন্ন্যাসী হতে বলছি না ! তাদের আমি বলছি আরও মানবিক হতে...
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৪০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৫/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast