আর নয় ট্রল
নাফিস ছেলেটা একটু বেশিই চঞ্চল থাকে যখন বন্ধুদের সাথে থাকে। একা যখন তখন খুবই সহজ সরল সে। মায়ের কাছে খুবই লাজুক একটা ছেলে নাফিস।
তিন্নি নামের সুন্দরী একটা মেয়েকে হঠাৎ নাফিসের পছন্দ হয়ে যায়। বন্ধুদের নিয়ে কিছুদিন মেয়েটার পিছু পিছু হেটে ফলো করত। কি যেনো ভেবে এবার সে একাই ফলো করে। বন্ধুদের এখন আর সাথে আনেনা। তবে বন্ধুরা একটু দূর থেকে নাফিসকে ফলো করত।
তিন্নি বিষয়টা খেয়াল করলো এবং বাসায় ও বান্ধবীদের সাথে আলোচনা করলো।সবাই বললো "নেক্সট টাইম ফলো করলে, তুই ইচ্ছেমতো বকা দিয়ে দিবি।"
তিন্নি একবার নয় দুবার নয় অনেকবার নাফিসকে বারণ করেছে, যাতে করে আর ফলো না করে।
বেচারা নাফিস বন্ধুদের বিষয়টা জানালো। বন্ধুরা তাকে পরামর্ষ দিলো "তোকে ওর সামনে আরো সিরিয়াস হতে হবে, আই লাভ ইউ বলতে হবে।"
বন্ধুদের কথা মত নাফিস করলোও তাই। তিন্নি এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। তাই উত্তেজিত হয়ে নাফিসকে জুতা পিটা করলো।
আর তা নাফিসকে ফলো করতে আসা তার বন্ধুরাও দেখে ফেললো। তারা দৌড়ে এসে নাফিসকে উদ্ধার করলো এবং কু পরামর্শ দেয়া শুরু করলো।
নাফিস মন খারাপ করে বসে থাকতো। বন্ধুরা সিগারেট দিয়ে বলত "এই নে এইটা টান, মন ঠিক হয়ে যাবে।"
এভাবে শুরু। এরপর আস্তে আস্তে নাফিস গাজা সেবন শুরু করলো। ওর সাথে মিশতে শুরু করলো এলাকার প্রভাবশালী বখাটেরা। তারা নাফিসকে দিয়ে এলাকায় তাদের মাদক ব্যাবসার বিস্তার শুরু করলো। বখাটে গুলো নাফিসকে সাহস দিত তিন্নিকে উত্ত্যক্ত করার জন্য।
নেশায় আর ভালোবাসায় বিবর নাফিস বখাটেদের উস্কানিতে তিন্নির চলার পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে থাকত। তিন্নি সামনে পা না বাড়িয়ে পিছনে হেটে বাসায় চলে যেত।
নাফিসের সাহস বাড়তে শুরু করলো। সে যখন তখন যারতার সাথে লেগে বসে। তার মা যখন তাকে বুঝাতে আসে, তখন সে তার গর্ভধারিণী মায়ের সাথেও খুব খারাপ ব্যাবহার করে। মায়ের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলত নাফিস। নাফিসের নৈতিক আচরনের চরম অবক্ষয় ঘটেছে।
ধীরে ধীরে সে নাফিস থেকে 'নাফিস দ্যা কিং' এ পরিনত হয়।
এলাকায় ও একটা গ্যাং তৈরি করে, যারা মাদক ও লুটপাটের সাথে সারাসরি জড়িত সবসময়। নাফিস সহ নাফিসের তৈরিকৃত গোটা গ্যাংকে আর্থিক যোগান ও আইনি নিরাপত্তা দিত স্থানীয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা। নেতা সবসময় নাফিসকে বলতো "তুই ভয় পাবিনা। আমি থাকতে তোর কিছু হবেনা।"
নাফিস তার গায়ের জোরে তিন্নিকে বাধ্য করত তার সাথে সেল্ফি তুলতে, রেস্টুরেন্ট এ খেতে যেতে।
তিন্নি প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারছিলোনা। কারন নাফিস জোর করে ওর সাথে যেসব ছবি তুলেছে তা ইডিট করে অনলাইনে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দিয়েছে।
একদিন তিন্নি নাফিসের মায়ের কাছে বিচার নিয়ে গেলো। নাফিসের মা বললো, "মা, আমার ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে। ও এখন আর আমার কথাও শুনেনা। তুমি বরং একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলো। তাহলে নাফিস তখন আর তোমায় বিরক্ত করতে সাহস পাবেনা।"
তার কিছুদিন পরই তিন্নির পরিবার তিন্নির বিয়ের আয়োজন করলো ছোট পরিসরেই। বিয়ে হয়ে গেলো। তিন্নির স্বামীর নাম ফুয়াদ। ফুয়াদ মাত্রই পড়াশুনা শেষ করেছে। আর তিন্নি এখনো পড়াশুনা করছে।
নাফিস তিন্নির বিয়ের খবর শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলোনা। নেতার কাছে গেলো। নেতা বললো, "এত পাগলামি করিসনা নাফিস। ঠান্ডা হ।"
: ভাই কেমনে ঠান্ডা হমু? আমার কলিজা ফাইটা যাইতাছে ভাই। ভাই আমি ওই শালারে তিন্নির সাথে ঘর বাঁধতে দিমুনা।
: কি করবি তুই?
: ওই শালা ফুয়াদের বাচ্চারে মাইরা ফালামু।
: একটু সময় নে। এখনই পাগলামি করার দরকার নাই। নতুন একটা মাল আসছে, নে এটা ট্রাই কর, দেখবি সব ঠান্ডা হয়ে গেছে।
কিছুদিন পর নাফিস তার গ্যাং এর সবাইকে নিয়ে ফুয়াদকে মেরে ফেলার নকশা করলো। এবং তা তার নেতাকে অবহিত করে বললো, "ভাই আপনার কাছে কোনোদিন কিছু চাই নাই। আজ একটা অঘটন ঘটাবো, আপনি শুধু থানা পুলিশ সামাল দিয়েন।"
নেতাঃ আমি আছিতো, তোর কোনো ভয় নেই। আমি থানা পুলিশ দেখছি।
পরিকল্পনানুযায়ী নাফিস তার গ্যাং নিয়ে দুপুর ঠিক ১২টায় জিরো পয়েন্ট এ ফুয়াদের রিকশা থামিয়ে ওকে কলার ধরে নিচে নামালো। সাথে তিন্নিও ছিলো। তিন্নি চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলে "ওকে এভাবে টেনে হেচড়ে নামাচ্ছিস কেনো তোরা?"
তিন্নির চিৎকারে কারো খেয়াল দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ওরা। ওদের টার্গেট ছিলো ফুয়াদ। রিকশা থেকে নামানোর পর ধারালো রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করলো ফুয়াদকে। তিন্নি নিজের জীবন বাজি রেখে নাফিস বাহিনীকে রুখার চেষ্টা করেও পারেনি ফুয়াদকে বাঁচাতে। আর আম জনতা গুলো পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করে ভিডিও করাতে মশগুল হয়ে গেল।
####
ঘটনা ঘটার একটু পরেই ভিডিও গুলো ভাইরাল হয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। সারাদেশের জনতা অনলাইনে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লো "ফুয়াদ হত্যার বিচার চাই, খুনি নাফিসের ফাঁশি চাই, খুনিকেও প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারা হোক ইত্যাদি ইত্যাদি।" স্লোগানে।
তার কিছুপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে কিছু ছবি শেয়ার হতে লাগলো, যে গুলোতে দেখা যাচ্ছিলো খুনির সাথে নিহতের স্ত্রীর ছবি। যা শেয়ার করছিলো খুনি নাফিসের গ্যাং এর বখাটে গুলো।আর এ ছবি গুলো ব্ল্যাকমেইলিং করে জোর পূর্বক তোলা।
ছবি গুলো দেখার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনতারা নতুন পোস্ট দেয়া শুরু করলো, যে গুলোতে তিন্নিকে হেয় করা হয়েছিলো অনেক ভাবে। অথচ পিছনের প্রকৃত ঘটনা এরা কেউই জানেনা।
প্রকৃত তথ্য উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছু সঠিকভাবে না জেনে এইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে শোকাগ্রস্থ একজন মানুষকে নিয়ে বিভ্রান্তমূলক, অপমানজনক, অশালীন মন্তব্য করা এবং পোস্ট দিয়ে হাসাহাসি করা সুস্থ্য মানুষের কাজ হতে পারেনা।
তিন্নি যদি আপনার বোন হত! কি করতেন তখন?
###
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশ জানতে পারলো ফুয়াদ হত্যার প্রাধান আসামী পুলিশ/র্যাবের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।
একজন খুনি আইনের লোকদের হাতেই নিহত হয়েছে খুব অল্প সময়েই। এতে ৮০শতাংশ মানুষ ই সন্তুষ্টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে।
কিছু মানুষের কথা হলো, বন্ধুক যুদ্ধে নিহত এটা একটা আইন বহির্ভূত হত্যাকান্ড। এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে হয়তো উপর মহলের কাউকে বাচানোর জন্যই।
ফুয়াদের খুনি নিহত হয়েছে জেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোয় এখন চলছে নতুন এক খেলা।
কেউ লিখছে "তিন্নি একটা রাক্ষসী মাইয়া। সবেতো ২টারে খাইলো। আল্লাহ জানে আর কয়ডারে খায়?"
"নায়কও মরলো, ভিলেনও মরলো, এখন নায়িকার কি হবে?"
"২ দিনের ব্যাবধানে তিন্নি ২ বার বিধবা হল"
"২টা স্বামীই মইরা গেলো। মাইয়াডার দায়িত্ব নিবে কে এখন? এ চিন্তায় আমার ঘুম আহেনা"
ইত্যাদি ইত্যাদি.... এরকম হাজারো ট্রল পোস্ট এ লাখো লাখো ট্রল কমেন্ট।
জনতা বুঝতে পারছেনা কি নিয়ে ট্রল করছে!
আমাদের নৈতিক মূল্যবোদের চরম অবক্ষয় ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। তা না হলে এ রকম সেন্সেটিভ বিষয়েও কিভাবে আমরা পারি ট্রল করতে??!
নৈতিক মূল্যবোধহীন মানুষ গুলো লাশ নিয়ে ট্রল করে, খুন, ধর্ষণ নিয়ে ট্রল করে, ধর্ম কর্ম নিয়ে ট্রল করে, বিবেক আর মনুষত্ব নিয়েও ট্রল করে।
ভাই প্লিজ নেক্সট ট্রলটা করার আগে ভাবুন, এতে আপনার কি লাভ হচ্ছে??
হয়তো সাময়িক মজা পাচ্ছেন।
কখনো কি ভেবেছেন আপনার সাময়িক মজার জন্য ট্রলের স্বীকার যারা হচ্ছে তাদের মানুষিক এবং সামাজিক স্বাভাবিকতা হারিয়ে তারা কতটা অসহায়ত্ব নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছে???
[বিঃ দ্রঃ কাউকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার এ পোস্ট নয়।
তারপরো কারো চুল্কালে দূরে গিয়ে চুল্কান। পোস্ট এড়িয়ে যান।]
তিন্নি নামের সুন্দরী একটা মেয়েকে হঠাৎ নাফিসের পছন্দ হয়ে যায়। বন্ধুদের নিয়ে কিছুদিন মেয়েটার পিছু পিছু হেটে ফলো করত। কি যেনো ভেবে এবার সে একাই ফলো করে। বন্ধুদের এখন আর সাথে আনেনা। তবে বন্ধুরা একটু দূর থেকে নাফিসকে ফলো করত।
তিন্নি বিষয়টা খেয়াল করলো এবং বাসায় ও বান্ধবীদের সাথে আলোচনা করলো।সবাই বললো "নেক্সট টাইম ফলো করলে, তুই ইচ্ছেমতো বকা দিয়ে দিবি।"
তিন্নি একবার নয় দুবার নয় অনেকবার নাফিসকে বারণ করেছে, যাতে করে আর ফলো না করে।
বেচারা নাফিস বন্ধুদের বিষয়টা জানালো। বন্ধুরা তাকে পরামর্ষ দিলো "তোকে ওর সামনে আরো সিরিয়াস হতে হবে, আই লাভ ইউ বলতে হবে।"
বন্ধুদের কথা মত নাফিস করলোও তাই। তিন্নি এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। তাই উত্তেজিত হয়ে নাফিসকে জুতা পিটা করলো।
আর তা নাফিসকে ফলো করতে আসা তার বন্ধুরাও দেখে ফেললো। তারা দৌড়ে এসে নাফিসকে উদ্ধার করলো এবং কু পরামর্শ দেয়া শুরু করলো।
নাফিস মন খারাপ করে বসে থাকতো। বন্ধুরা সিগারেট দিয়ে বলত "এই নে এইটা টান, মন ঠিক হয়ে যাবে।"
এভাবে শুরু। এরপর আস্তে আস্তে নাফিস গাজা সেবন শুরু করলো। ওর সাথে মিশতে শুরু করলো এলাকার প্রভাবশালী বখাটেরা। তারা নাফিসকে দিয়ে এলাকায় তাদের মাদক ব্যাবসার বিস্তার শুরু করলো। বখাটে গুলো নাফিসকে সাহস দিত তিন্নিকে উত্ত্যক্ত করার জন্য।
নেশায় আর ভালোবাসায় বিবর নাফিস বখাটেদের উস্কানিতে তিন্নির চলার পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে থাকত। তিন্নি সামনে পা না বাড়িয়ে পিছনে হেটে বাসায় চলে যেত।
নাফিসের সাহস বাড়তে শুরু করলো। সে যখন তখন যারতার সাথে লেগে বসে। তার মা যখন তাকে বুঝাতে আসে, তখন সে তার গর্ভধারিণী মায়ের সাথেও খুব খারাপ ব্যাবহার করে। মায়ের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলত নাফিস। নাফিসের নৈতিক আচরনের চরম অবক্ষয় ঘটেছে।
ধীরে ধীরে সে নাফিস থেকে 'নাফিস দ্যা কিং' এ পরিনত হয়।
এলাকায় ও একটা গ্যাং তৈরি করে, যারা মাদক ও লুটপাটের সাথে সারাসরি জড়িত সবসময়। নাফিস সহ নাফিসের তৈরিকৃত গোটা গ্যাংকে আর্থিক যোগান ও আইনি নিরাপত্তা দিত স্থানীয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা। নেতা সবসময় নাফিসকে বলতো "তুই ভয় পাবিনা। আমি থাকতে তোর কিছু হবেনা।"
নাফিস তার গায়ের জোরে তিন্নিকে বাধ্য করত তার সাথে সেল্ফি তুলতে, রেস্টুরেন্ট এ খেতে যেতে।
তিন্নি প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারছিলোনা। কারন নাফিস জোর করে ওর সাথে যেসব ছবি তুলেছে তা ইডিট করে অনলাইনে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দিয়েছে।
একদিন তিন্নি নাফিসের মায়ের কাছে বিচার নিয়ে গেলো। নাফিসের মা বললো, "মা, আমার ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে। ও এখন আর আমার কথাও শুনেনা। তুমি বরং একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলো। তাহলে নাফিস তখন আর তোমায় বিরক্ত করতে সাহস পাবেনা।"
তার কিছুদিন পরই তিন্নির পরিবার তিন্নির বিয়ের আয়োজন করলো ছোট পরিসরেই। বিয়ে হয়ে গেলো। তিন্নির স্বামীর নাম ফুয়াদ। ফুয়াদ মাত্রই পড়াশুনা শেষ করেছে। আর তিন্নি এখনো পড়াশুনা করছে।
নাফিস তিন্নির বিয়ের খবর শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলোনা। নেতার কাছে গেলো। নেতা বললো, "এত পাগলামি করিসনা নাফিস। ঠান্ডা হ।"
: ভাই কেমনে ঠান্ডা হমু? আমার কলিজা ফাইটা যাইতাছে ভাই। ভাই আমি ওই শালারে তিন্নির সাথে ঘর বাঁধতে দিমুনা।
: কি করবি তুই?
: ওই শালা ফুয়াদের বাচ্চারে মাইরা ফালামু।
: একটু সময় নে। এখনই পাগলামি করার দরকার নাই। নতুন একটা মাল আসছে, নে এটা ট্রাই কর, দেখবি সব ঠান্ডা হয়ে গেছে।
কিছুদিন পর নাফিস তার গ্যাং এর সবাইকে নিয়ে ফুয়াদকে মেরে ফেলার নকশা করলো। এবং তা তার নেতাকে অবহিত করে বললো, "ভাই আপনার কাছে কোনোদিন কিছু চাই নাই। আজ একটা অঘটন ঘটাবো, আপনি শুধু থানা পুলিশ সামাল দিয়েন।"
নেতাঃ আমি আছিতো, তোর কোনো ভয় নেই। আমি থানা পুলিশ দেখছি।
পরিকল্পনানুযায়ী নাফিস তার গ্যাং নিয়ে দুপুর ঠিক ১২টায় জিরো পয়েন্ট এ ফুয়াদের রিকশা থামিয়ে ওকে কলার ধরে নিচে নামালো। সাথে তিন্নিও ছিলো। তিন্নি চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলে "ওকে এভাবে টেনে হেচড়ে নামাচ্ছিস কেনো তোরা?"
তিন্নির চিৎকারে কারো খেয়াল দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ওরা। ওদের টার্গেট ছিলো ফুয়াদ। রিকশা থেকে নামানোর পর ধারালো রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করলো ফুয়াদকে। তিন্নি নিজের জীবন বাজি রেখে নাফিস বাহিনীকে রুখার চেষ্টা করেও পারেনি ফুয়াদকে বাঁচাতে। আর আম জনতা গুলো পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করে ভিডিও করাতে মশগুল হয়ে গেল।
####
ঘটনা ঘটার একটু পরেই ভিডিও গুলো ভাইরাল হয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। সারাদেশের জনতা অনলাইনে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লো "ফুয়াদ হত্যার বিচার চাই, খুনি নাফিসের ফাঁশি চাই, খুনিকেও প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারা হোক ইত্যাদি ইত্যাদি।" স্লোগানে।
তার কিছুপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে কিছু ছবি শেয়ার হতে লাগলো, যে গুলোতে দেখা যাচ্ছিলো খুনির সাথে নিহতের স্ত্রীর ছবি। যা শেয়ার করছিলো খুনি নাফিসের গ্যাং এর বখাটে গুলো।আর এ ছবি গুলো ব্ল্যাকমেইলিং করে জোর পূর্বক তোলা।
ছবি গুলো দেখার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনতারা নতুন পোস্ট দেয়া শুরু করলো, যে গুলোতে তিন্নিকে হেয় করা হয়েছিলো অনেক ভাবে। অথচ পিছনের প্রকৃত ঘটনা এরা কেউই জানেনা।
প্রকৃত তথ্য উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছু সঠিকভাবে না জেনে এইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে শোকাগ্রস্থ একজন মানুষকে নিয়ে বিভ্রান্তমূলক, অপমানজনক, অশালীন মন্তব্য করা এবং পোস্ট দিয়ে হাসাহাসি করা সুস্থ্য মানুষের কাজ হতে পারেনা।
তিন্নি যদি আপনার বোন হত! কি করতেন তখন?
###
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশ জানতে পারলো ফুয়াদ হত্যার প্রাধান আসামী পুলিশ/র্যাবের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।
একজন খুনি আইনের লোকদের হাতেই নিহত হয়েছে খুব অল্প সময়েই। এতে ৮০শতাংশ মানুষ ই সন্তুষ্টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে।
কিছু মানুষের কথা হলো, বন্ধুক যুদ্ধে নিহত এটা একটা আইন বহির্ভূত হত্যাকান্ড। এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে হয়তো উপর মহলের কাউকে বাচানোর জন্যই।
ফুয়াদের খুনি নিহত হয়েছে জেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোয় এখন চলছে নতুন এক খেলা।
কেউ লিখছে "তিন্নি একটা রাক্ষসী মাইয়া। সবেতো ২টারে খাইলো। আল্লাহ জানে আর কয়ডারে খায়?"
"নায়কও মরলো, ভিলেনও মরলো, এখন নায়িকার কি হবে?"
"২ দিনের ব্যাবধানে তিন্নি ২ বার বিধবা হল"
"২টা স্বামীই মইরা গেলো। মাইয়াডার দায়িত্ব নিবে কে এখন? এ চিন্তায় আমার ঘুম আহেনা"
ইত্যাদি ইত্যাদি.... এরকম হাজারো ট্রল পোস্ট এ লাখো লাখো ট্রল কমেন্ট।
জনতা বুঝতে পারছেনা কি নিয়ে ট্রল করছে!
আমাদের নৈতিক মূল্যবোদের চরম অবক্ষয় ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। তা না হলে এ রকম সেন্সেটিভ বিষয়েও কিভাবে আমরা পারি ট্রল করতে??!
নৈতিক মূল্যবোধহীন মানুষ গুলো লাশ নিয়ে ট্রল করে, খুন, ধর্ষণ নিয়ে ট্রল করে, ধর্ম কর্ম নিয়ে ট্রল করে, বিবেক আর মনুষত্ব নিয়েও ট্রল করে।
ভাই প্লিজ নেক্সট ট্রলটা করার আগে ভাবুন, এতে আপনার কি লাভ হচ্ছে??
হয়তো সাময়িক মজা পাচ্ছেন।
কখনো কি ভেবেছেন আপনার সাময়িক মজার জন্য ট্রলের স্বীকার যারা হচ্ছে তাদের মানুষিক এবং সামাজিক স্বাভাবিকতা হারিয়ে তারা কতটা অসহায়ত্ব নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছে???
[বিঃ দ্রঃ কাউকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার এ পোস্ট নয়।
তারপরো কারো চুল্কালে দূরে গিয়ে চুল্কান। পোস্ট এড়িয়ে যান।]
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জাহিরুল মিলন ০২/০৯/২০১৯হ্যা
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৪/০৭/২০১৯সমসাময়িক!