যে সব লোকে পদ্য লেখে
ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম, অনেকেই পড়েছেন বোধকরি, তবু আবার বলতে হচ্ছে।
এক রাজসভায় , একজন এসে বললেন , তিনি একটি উত্তম , নতুন কবিতা শোনাবেন।
রাজা অনুমতি দিলেন। কবিতাটি হলো , " হটাত ঢুকে হেসেলে , ক্ষীর খেয়েছে বিড়ালে "
- কবিতার চার চরণ কই ?
: ওই বিড়ালের চার চরণ।
- কবিতায় রস কই ?
: ক্ষীরে রয়েছে রস।
- অর্থ তো থাকবে ?
: মহারাজ যে অর্থ দান করবেন তাই যথেষ্ট হবে।
এখন আর কবিতার চার পংতি থাকতেই হবে , সেটা কেউ মানে না। অন্তমিলটা কোনো শর্তের মধ্যে নেই। বাকি রইলো , অর্থ আর রস। এ দুটো না থাকলে কবিতা না লিখে ব্লগ লেখাই ভালো।
পরশুরামের অঙ্কের অধ্যাপক মহেশ , বন্ধু হরিনাথের ওপর প্রবল রাগে কবিতা লিখতে শুরু করে।
হরিনাথ ওরে, পোড়াবোনা তোরে/
নিয়ে যাব ধাপা, দিব মাটি চাপা /
সার হয়ে যাবি, ঢেড়স ফলাবি।
পরশুরাম মিলিয়ে মিলিয়ে মজা করেছেন। মজা করেছেন সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।
"যারা কবিতা লেখে তারা আবার মনিষ্যি থাকে নাকি? তারা রাস্তায় চলতে গেলেই গাড়ী চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়, নেমন্তন্ন বাড়ীতে তাদের জুতো চুরি হয়, বোশেখ মাসে গরমে যখন লোকের প্রাণ আইঢাই করে – তখন তারা দোর বন্ধ করে পদ্য লেখে- বাদলরাণীর নূপুর বাজে তাল-পিয়ালের বনে। দুদ্দুর।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, বোশেখ মাসের দুপুরে বাদলরাণীর কবিতা লেখে কেন ?
টেনিদা মুখটাকে ডিম ভাজার মতো করে বললে, এটাও বুঝতে পারলি না? বোশেখ মাসে কবিতা না লিখে পাঠালে আষাঢ় মাসে ছাপা হবে কী করে ? " এই মজার মধ্যে একটা অমোঘ সত্য আছে।
কবি কেন অন্য কিছু না করে কবিতা লেখেন তা কবিই বলতে পারবেন। কবি সুনীল গাঙ্গুলী বলেছিলেন , "লিখতে পারি তাই লিখি। " কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত , রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রায় বাজি রেখে মুরগীর ওপর কবিতা লিখে এনেছিলেন (কুক্কুট ) ।
তাই , বিষয় নয় বোধ , কাব্যগুণ , সেটা ছাড়া তো চলবেনা। বেড়ার নিয়ম ভাঙ্গার আগে চলার নিয়ম আয়ত্ব করতে হবে। যে যেই মাধ্যমে কাজ করেন , তাকে সেটা জানতে হবে। যদি বলেন , 'মনের আনন্দে লিখি' , উত্তম , সেটা সবার সামনে প্রকাশ করার আগে , নিজে পড়ুন , বন্ধু সাথীদের পড়ান। বিনীত অনুরোধ শততম , সহস্রতমর পিছনে না ছুটে , সময় নিয়ে লিখুন। অন্যদের পড়ার সময় দিন। সারাদিন নানান কাজ দায়িত্ব সেরে কবিতা পড়তে বসতে হয়। বাইরের পৃথিবী গদ্যময়। কবিতার পাঠক কমে আসছে , কবিরা সংখ্যায় বেড়ে চলেছেন। অনেক ভালো কবিতা হয়ত ভিড়ের চাপে অপঠিত থেকে যাচ্ছে।
বিনয় মজুমদারকে সবাই 'ফিরে এস চাকার জন্য' , অর্ধেন্দু চক্রবর্তীকে 'আলেকজান্ডার বিক্রি করে দাঁতের মাজন' আর নবারুণ ভট্টাচার্যকে ' এ মৃত্যুর উপত্যকার এ আমার দেশ নয় ' এর জন্য মনে রাখবে । আর কিছু না লিখলেও ।
আমি কেন বার বার এই কথা নানা ভাবে বলছি ? যদি এক জন ও শোনেন তাহলেও আমার লেখা সার্থক।
এক রাজসভায় , একজন এসে বললেন , তিনি একটি উত্তম , নতুন কবিতা শোনাবেন।
রাজা অনুমতি দিলেন। কবিতাটি হলো , " হটাত ঢুকে হেসেলে , ক্ষীর খেয়েছে বিড়ালে "
- কবিতার চার চরণ কই ?
: ওই বিড়ালের চার চরণ।
- কবিতায় রস কই ?
: ক্ষীরে রয়েছে রস।
- অর্থ তো থাকবে ?
: মহারাজ যে অর্থ দান করবেন তাই যথেষ্ট হবে।
এখন আর কবিতার চার পংতি থাকতেই হবে , সেটা কেউ মানে না। অন্তমিলটা কোনো শর্তের মধ্যে নেই। বাকি রইলো , অর্থ আর রস। এ দুটো না থাকলে কবিতা না লিখে ব্লগ লেখাই ভালো।
পরশুরামের অঙ্কের অধ্যাপক মহেশ , বন্ধু হরিনাথের ওপর প্রবল রাগে কবিতা লিখতে শুরু করে।
হরিনাথ ওরে, পোড়াবোনা তোরে/
নিয়ে যাব ধাপা, দিব মাটি চাপা /
সার হয়ে যাবি, ঢেড়স ফলাবি।
পরশুরাম মিলিয়ে মিলিয়ে মজা করেছেন। মজা করেছেন সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।
"যারা কবিতা লেখে তারা আবার মনিষ্যি থাকে নাকি? তারা রাস্তায় চলতে গেলেই গাড়ী চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়, নেমন্তন্ন বাড়ীতে তাদের জুতো চুরি হয়, বোশেখ মাসে গরমে যখন লোকের প্রাণ আইঢাই করে – তখন তারা দোর বন্ধ করে পদ্য লেখে- বাদলরাণীর নূপুর বাজে তাল-পিয়ালের বনে। দুদ্দুর।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, বোশেখ মাসের দুপুরে বাদলরাণীর কবিতা লেখে কেন ?
টেনিদা মুখটাকে ডিম ভাজার মতো করে বললে, এটাও বুঝতে পারলি না? বোশেখ মাসে কবিতা না লিখে পাঠালে আষাঢ় মাসে ছাপা হবে কী করে ? " এই মজার মধ্যে একটা অমোঘ সত্য আছে।
কবি কেন অন্য কিছু না করে কবিতা লেখেন তা কবিই বলতে পারবেন। কবি সুনীল গাঙ্গুলী বলেছিলেন , "লিখতে পারি তাই লিখি। " কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত , রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রায় বাজি রেখে মুরগীর ওপর কবিতা লিখে এনেছিলেন (কুক্কুট ) ।
তাই , বিষয় নয় বোধ , কাব্যগুণ , সেটা ছাড়া তো চলবেনা। বেড়ার নিয়ম ভাঙ্গার আগে চলার নিয়ম আয়ত্ব করতে হবে। যে যেই মাধ্যমে কাজ করেন , তাকে সেটা জানতে হবে। যদি বলেন , 'মনের আনন্দে লিখি' , উত্তম , সেটা সবার সামনে প্রকাশ করার আগে , নিজে পড়ুন , বন্ধু সাথীদের পড়ান। বিনীত অনুরোধ শততম , সহস্রতমর পিছনে না ছুটে , সময় নিয়ে লিখুন। অন্যদের পড়ার সময় দিন। সারাদিন নানান কাজ দায়িত্ব সেরে কবিতা পড়তে বসতে হয়। বাইরের পৃথিবী গদ্যময়। কবিতার পাঠক কমে আসছে , কবিরা সংখ্যায় বেড়ে চলেছেন। অনেক ভালো কবিতা হয়ত ভিড়ের চাপে অপঠিত থেকে যাচ্ছে।
বিনয় মজুমদারকে সবাই 'ফিরে এস চাকার জন্য' , অর্ধেন্দু চক্রবর্তীকে 'আলেকজান্ডার বিক্রি করে দাঁতের মাজন' আর নবারুণ ভট্টাচার্যকে ' এ মৃত্যুর উপত্যকার এ আমার দেশ নয় ' এর জন্য মনে রাখবে । আর কিছু না লিখলেও ।
আমি কেন বার বার এই কথা নানা ভাবে বলছি ? যদি এক জন ও শোনেন তাহলেও আমার লেখা সার্থক।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরিতোষ ভৌমিক ২ ২৪/০৩/২০১৯মূল্যবান এই কথামালা পেয়ে ভাবতে হলো অনেকক্ষণ । শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় দাদা ।
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৮/০৮/২০১৭সত্য কথাটি কথা সুন্দরভাবেই না বললেন!
-
কালপুরুষ ২০/০৯/২০১৬খুব ভালো বলেছেন একদম সত্যি কথা।
-
স্বপ্নময় স্বপন ২৮/০৭/২০১৬অনন্য!
-
প্রিয় ১২/০৭/২০১৬খবু সুন্দর লেখা নতুন কবিদের কাজে লাগবে।দয়াকরে যদি আপনি আমার ''প্রেম''কবিতাটি দেখে কবি হিসেবে আমার অবস্থানটি বলে দিতেন তবে খুবেই উপকৃত হতাম।
-
আকাশ চট্টোপাধ্যায় ১৯/০৬/২০১৬খুব ভাল লাগল। "কবিতা পাওয়া" একটি স্বাভাবিক ধর্ম; কিন্তু সেটি কাব্যগুণান্বিত হয়ে উঠল কিনা তা যাচাই করা দরকার, অন্তত অন্যকে পড়ানোর আগে। এই অধম লিখছে খুব ছোটবেলা থেকেই, সেই গোড়ার দিনে একটি মূল্যবান উপদেশ সে পেয়েছিল -- লেখা ফেলে রাখো কিছুদিন, তারপর পড়ে দেখো, দেখবে অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। এ বার সেগুলি পূরণ করে তবে বাইরের জগতে তাকে আনো।
আর একটি ব্যাপারও আছে। নিয়মিত লিখতে লিখতে একটা ধাঁচা করে ফেলা, যার ফলে দ্রত লিখলেও একটা মান ধরে রাখা যায়।
সব মিলিয়ে কবিতা আমার মতে ভাবনা ও চেতনার সংঘবদ্ধ ও ছন্দিত প্রকাশ, সে অন্যকে ভাবাবেই ভাবাবে। ভাল লাগল আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও রসবোধ দেখে -- লেখক অনেক; সে রকম পাঠক কই? -
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৭/০৬/২০১৬D. S দা
কয়েকটা কবিতা লিখুন না, দেখি আপনার রস ... আর আন্ত মিল....
সমালোচক হিসেবে যাই হন না কেন সেটা আর বলছি না::::::;
সবচেয়ে বড় কথা কি? দা- তা জানেন?
ভালো লেখার কদর আমরা না করলে সেটা বের হবে কিভাবে?
একটু কষ্ট দিলাম ::: -
Saurav Goswami ০৯/০৬/২০১৬কবিতা কি প্রশ্ন করা হয়েছিল একটা কবি কে । সে বেচারা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে ছিল । এটাই বোধ করি , কবিতার সেরা ডেফিনেশন ।