জেরা
- ওফ ! অসহ্য ! এর নাম জেরা ? দশঘন্টা ধরে চুপ করে বসিয়ে রাখাটা টর্চার নয় ?
- আর জাস্ট একটু অপেক্ষা ম্যাডাম।
- আরো অপেক্ষা ?
- এই যে আমাদের বড়বাবু এসে গেছেন । এবারে ওনার সাথেই কথা বলুন ।
- আপনি যান সরকারবাবু, সরি মিসেস সেন ফর দ্য ডিলে, আপনাকে অনেক্ষণ বসতে হল। আমি কৌশিক গাঙ্গুলী, ফ্রম স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
- বলুন কী জানতে চান ?
- জল খাবেন ?
- না। আমাকে কেন আটকে রেখেছেন সেটা বলুন ।
- বলবেন তো আপনি, আর আমরা শুনব ।
- আমার যা বলার আগেই বলেছি । এখন আর নতুন কিছু বলার নেই।
- আগেরদিন বলেছিলেন যখন আপনার স্বামী মি: সেনের কিচেনে চা বানাতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয়েছিল, তখন আপনি গরিয়াহাটে শপিং-এ ব্যস্ত ছিলেন ।
- হ্যাঁ। আর কতবার বলব ? ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ।
- সেদিন হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি শপিং করতে গিয়েছিলেন ? কোন বিশেষ কারণ ছিল ?
- আমার ব্যক্তিগত দরকার ছিল ।
- প্রতিদিনই যান ?
- প্রায় রোববারই যাই, গড়িয়াহাটে ।
- তা, কী কী কিনলেন ?
- আপনাকে বলতে বাধ্য নই ।
- জল খান । আপনার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে ।
- ধন্যবাদ, আমি ঠিক আছি ।
- বাড়িতে কটা সিলিন্ডার ?
- দুটো।
- শেষ কবে এসেছে ?
- গত সপ্তাহে।
- আগেরটা খালি ছিল ?
- অবশ্যই ।
- কদিন চলে ?
- দেড়মাস।
- নতুনটা চললো না কেন ?
- কিসব যা-তা বলছেন ? ওটা ফেটেই তো উনি মারা গেলেন ।
- আপনি সিওর ?
- হ্যাঁ । সবাই তো তাই বলছে ।
- বাড়িতে স্টোভ ছিল ?
- ছিল । শুধু জলগরম হত ।
- কেন ?
- গ্যাস বাঁচানোর জন্য।
- বাড়িতে রান্নার লোক ছিল ?
- না, শুধু ঠিকে কাজের লোক ছিল, সকালবেলায় আসত।
- বলেন কি ! আপনাদের মত স্বচ্ছল বাড়িতে এখনকার দিনে রান্নার লোক নেই ?
- না, আমার শাশুড়ির আমল থেকেই কাজের লোকের রান্নাঘরে ধোকা বারণ। একটু অর্থোডক্স টাইপের মহিলা ছিলেন।
- সেই নিয়ম এখনো চলে আসছে ?
- হ্যাঁ, আমার স্বামীর জন্য। উনিও মায়েরই গুণ পেয়েছেন। বড্ড সেন্টিমেন্টাল।
- তাহলে তো আপনার সারাদিন খুব খাটুনি যায় ?
- হ্যাঁ, তা যায় বৈকি !
- তাহলে তো আপনার মিঃ সেনের উপরে বেশ রাগ ছিল।
- মানে ? কী বলতে চাইছেন ?
- কিছু বলতে নয়, বুঝতে চাইছি । আচ্ছা চা এর জল গরম কি'সে করতেন ?
- দুটোতেই, যখন যেরকম ।
- হাজব্যান্ড স্টোভ জ্বালাতে পারতেন ?
- না, পাম্পস্টোভ ছিল।
- তাহলে চা বানাতেন কিসে ?
- উনি গ্যাসে। আমি স্টোভে।
- উনি রোজই বিকেলে চা খেতেন ?
- হ্যাঁ । ওনার অভ্যাস ।
- বদভ্যাস !
- মানে ?
- মানে চা খেতে গিয়েই তো হত্যাটা হল ।
- হত্যা ? না, ভুল । ওটা অ্যাক্সিডেন্ট !
- ফরেন্সিক কিন্তু অন্য কথা বলছে। আপনার স্বামী চা বানাতে পারতেন ?
- না, বললাম তো আগেই । আমিই বানিয়ে দিতাম ।
- এই বললেন যে উনি গ্যাসে বানাতে পারতেন ।
- ভুল বলেছি হয়ত ।
- তাহলে সেদিনকে হঠাৎ চা না বানিয়েই শপিং-এ গেলেন কেন ?
- ঝগড়া হয়েছিল।
- আগে ঝগড়া হয়নি ?
- কোন স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয় না!
- তাহলে তখনও চা বানান নি ?
- না, বানিয়েছি । সেদিনকে অবশ্য রাগ কন্ট্রোল হয় নি ।
- কেন ?
- আমার আর আমার অফিস কলিগের সম্পর্ক নিয়ে নোংরা কথা বলেছিল ।
- পরকীয়া ?
- হ্যাঁ । ওনার সেরকমই অভিযোগ ছিল।
- কিন্তু অভিযোগ তো সত্যই ছিল ।
- বাজে কথা ।
- আমাদের কাছে প্রমাণ আছে ।
- তাতে কী ? আমি খুন করিনি ।
- কখন বললাম সেটা ? শুধু বলতে চাইছি আপনার খুন করার মোটিভ ছিল তাহলে ! মানছেন তো ?
- মানছি! কিন্তু খুন করি নি ।
- বাড়িতে আপনারাই দুজন ?
- হ্যাঁ ।
- ছেলেমেয়ে ? ক'বছর হল বিয়ের ?
- না, হয়নি । দুবছরের বিয়ে আমাদের ।
- আপনার অথবা মিঃ সেন, কারোর কী কোন প্রবলেম ছিল ?
- বাজে কথা রেখে আমাকে ছেড়ে দিন প্লীজ। আর নিতে পারছি না এই যন্ত্রণা ।
- এই নিন জল খান। দেখুন, আমরা জানি ওনাকে হত্যা করা হয়েছে ।
- কেন ? পুলিশ কি এখন জ্যোতিষী হয়ে গেছে ?
- হা হা হা, মাঝে মাঝে হতে হয় বৈকি !
- তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন !
- তাহলে আপনার প্রেমিককে ডাকি ?
- না...না, বিশ্বাস করুন ও কিছু করে নি !
- বেশ ! কে করেছে তাহলে ?
- জানি না ।
- তার মানে মানছেন এটা খুন হলেও হতে পারে !
- যা বাব্বা । তা আমি কখন বললাম ? ওটা তো আপনিই বললেন ।
- সাতদিন আগে নতুন সিলিন্ডার লাগালেও কেন ওইদিনকেই মিঃ সেন গ্যাস ডিলারকে ফোন করে গ্যাস বুকিং করলেন ?
- কী বলতে চাইছেন ?
- ওনার কি মৃত্যুর আগে জানার কথা যে নতুন সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাবে?
- না, তা কী করে জানবেন ? দুপুর অবধি তো ঠিকঠাকই চলেছে সিলিন্ডার।
- ওহ ! তাহলে স্বীকার করছেন যে এটা মিঃ সেনের জানার কথাই নয় যে, যে সিলিন্ডার ফেটে তার মৃত্যু হওয়ার কথা।
- মানে, কিছু বুঝলাম না !
- আপনি শুধু বলুন, বোঝার ভারটা আমাদের উপরে ছেড়ে দিন ।
- কি বলব বলুন ?
- তাহলে তিনি কী করে সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেছে সেটা জানতে পারলেন ?
- জানি না ।
- তাহলে বলুন দেখি, যে সিলিন্ডার দেড়মাস চলে, সাতদিন দুপুর অবধি ঠিক চলে, হঠাৎ করে বিকেলের মধ্যে গ্যাস শেষ হয়ে গেল কী করে ?
- লিক করেছে হয়ত ।
- দুঘন্টায় লিক হয়ে সব শেষ ?
- জানি না
- লিক করানো হয়েছিল কি মিসেস সেন ?
- কে লিক করাবে ? আর যদি তাই হয়, তাহলেও বা মৃত্যু কিভাবে হল ?
- সেটা তো আপনি বলবেন মিসেস সেন । আমরা শুনব ।
- আমি জানি না । আমি তো জানতাম... মানে খবরে, পেপারে , সবাই তাই বলছিল। ওনার সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয় নি ?
- না, স্টোভ ফেটে হয়েছে ।
- যা বাব্বা! স্টোভটা তো ভালোই ছিল ।
- তাহলে মানছেন গ্যাস সিলিন্ডারটা ঠিক ছিল না ?
- না মানে তা বলতে চাই নি! আপনি বুঝছেন না কেন?
- আপনি বোঝাতে পারছেন না যে!
- আমাকে ছেড়ে দিন ! আমি তো খুন করি নি !
- কে বলল? করতেও তো পারেন !
- ওই যে বললেন গ্যাস মৃত্যুর কারণ নয় । আমাকে তো সেইজন্যই ধরে এনেছেন ।
- স্বীকার করে নিন ম্যাডাম... সিলিন্ডারের পাইপটা আপনিই খুলেছিলেন!
- না ...মানে ....কী প্রমাণ আছে ? আচ্ছা জল খেতে পারি ?
- নিশ্চয়ই । এই নিন ।
- ড্রাইভিং জানেন ?
- জানি ।
- সেদিন গাড়ি নিয়ে যান নি শপিং এ ?
- না, তেল ছিল না ।
- সেকি ? কিচেনেই যে একটা পাঁচ লিটার জারে ডিজেল রাখা ছিল। সেটা ভরে নিলেই তো পারতেন ।
- জানি না ।
- স্ট্রেঞ্জ ! তাহলে আগেরদিন সন্ধ্যাবেলায় আপনাকে যে ওই জারটা করে ডিজেল আনতে দেখা গেছে ?
- মিথ্যে কথা ।
- আমাদের কাছে প্রমাণ আছে ।
- কী প্রমাণ আছে শুনি ?
- আপনার প্রতিবেশী দেখেছে আপনাকে । পেট্রোল পাম্পে আপনার ক্রেডিট কার্ডের সোয়াইপ রিসিট আছে । সিসিটিভি ফুটেজ আছে । আরো কিছু ?
- মিথ্যে কথা । আমি ডিজেল আনি নি ।
- তাহলে কি গঙ্গাজল এনেছিলেন ?
- বললাম তো আনিনি ।
- এনেছিলেন ম্যাডাম, এনেছিলেন । এখন মিথ্যে কথা বলছেন ।
- না, না, না আমি ডিজেল আনি নি ।
- মিথ্যে বলে লাভ হবে না । পাম্প বেশী করার জন্য স্টোভের গ্যাস কিচেনে ছড়িয়ে থাকা সিলিন্ডারে গ্যাসের সংস্পর্শে আসতেই স্টোভটা ফেটেছিল। তারপর ডিজেলের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে মিঃ সেনের মৃত্যু হয়।
- কতবার বলব আপনাকে যে আমি ডিজেল আনি নি ।
- শাট আপ অ্যান্ড ডোন্ট টেল লাই ! ওটা আপনিই এনেছিলেন । তারপর বিকেলে জারটা কিচেনে রেখে ঢাকনা খুলে রেখে, সিলিন্ডারের পাইপ খুলে দিয়েছিলেন ।
- তখন থেকে বলছি ওটা ডিজেল নয়, ডিজেল নয় বিশ্বাস করছেন না কেন আপনি ?
- ফরেন্সিক বলছে ওটা ডিজেল ।
- রাখুন তো আপনাদের ফরেন্সিককে । ওরা কি ভগবান ?
- আমাদের কাছে তো বটেই !
- আমি বলছি তো ওটা ডিজেল নয় ।
- ডিজেল না তো কি ? ডিজেলই ছিল ।
- না, না, না, আপনাদের ফরেন্সিক কিচ্ছু জানে না । ওটা পেট্রোল ছিল ! ....গাড়ির জন্য এনেছিলাম ।
- স্ট্রেঞ্জ ! আপনি গাড়ির জন্য পেট্রোল এনেছিলেন ? তাহলে গাড়িতে ঢাললেন না কেন ?
- না মানে ...তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।
- কিচেনে রেখেছিলেন কেন ?
- আমি রাখিনি ।
- স্টপ লাইং ! আপনার কি মনে হয় আমরা মজা করার জন্য ডেকেছি আপনাকে ?
- না, না তা বলিনি !
- তাহলে স্বীকার করছেন আপনিই ডিজেল এনেছিলেন !
- আবার ডিজেল ? বললাম তো পেট্রোল এনেছিলাম গাড়ির জন্য।
- কিন্তু যে গাড়ি ডিজেলে চলে সে গাড়ির জন্য পেট্রোল আনলেন কেন ?
- পেট্রোল ...মানে ...য়ামি ঠিক জানতাম না গাড়িতে কি তেল লাগে । আগে কখনো ভরিনি।
- এতদিন গাড়ি চালিয়ে আর এর আগে অন্তত দশবার একই পাম্প থেকে তেল ভরেও জানতে পারেন নি ? খুব কাঁচা হয়ে গেল না যুক্তিটা ?
- আমি তেল ভরাতাম না কখনো ।
- আপনার ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট কিন্তু অন্য কথা বলছে ।
- কি বলছে ?
- বলছে আপনি ধরা পড়ে গেছেন মিসেস সেন । আর লুকিয়ে লাভ নেই । ফরেন্সিক ওটা পেট্রোলই বলেছিল ।
- তার মানে আপনি ইচ্ছে করে কথা ঘুরিয়ে বলেছিলেন ?
- ওটাই আমাদের কাজ ম্যাডাম । ঢাকনাটা কোথায় ?
- কিসের ?
- পেট্রোলের জারের । বলুন ! বলুন ! আর মিথ্যে বলে লাভ নেই।
- ........................আমার পার্সে ।
- সিলিণ্ডারের পাইপ খুলেছিলেন কেন ?
- সিলিন্ডার বার্স্ট করাবার জন্য ।
- কিন্তু ওটা বার্স্ট করল না কারণ। সব গ্যাস বেরিয়ে গিয়েছিল যতক্ষণে মিঃ সেন চা বানাতে গিয়েছিলেন।
- হ্যাঁ । তাইতো শুনছি এখন।
- তাই উনি গ্যাসের বুকিং করলেন আগে। পেট্রোলের জারটা কেন রাখলেন ?
- পুরো প্রক্রিয়া তরাণ্বিত করার জন্য ।
- কেন হত্যার প্ল্যানিং করলেন ? চুপ করে থাকবেন না, বলুন ! বলুন ! কেন এই প্ল্যানিং ?
- না...মানে আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছিল না ।
- তাহলে স্বীকার করছেন আপনিই মিঃ সেনের খুনের চক্রান্ত করেছিলেন ?
- ইয়েস....ইয়েস ...অফিসার আই অ্যাডমিট । আর না করার উপায় নেই ।
- তেল কিনতে ক্রেডিট কার্ড সোয়াইপ কেন করেছিলেন ? কাঁচা কাজ !
- বুঝিনি, ওটা ওনার নামেই ছিল ।
- কার্ডে নামটা আপনারই ছিল । যদিও ওটা অ্যাডিশনাল গিফ্ট কার্ড মিঃ সেনের অ্যাকাউন্টের ।
- বুঝলাম। আগে ভুল ভেবেছিলাম।
- ওকে । এই নিন জল খান । রাত্রের ডিনার এবার এখানেই করতে হবে ম্যাডাম । সরকার বাবু, ভিডিও করাটা বন্ধ করুন ।
- ওকে স্যর । এই যে বন্ধ করছি ।
- এদিকে এসে এবার এনাকে নিয়ে যান । আর এভিডেন্সগুলো ফাইলের সাথে গুছিয়ে রাখুন । কালকে কোর্টে তুলতে হবে । আর এককাপ চা আর সিগারেটের প্যাকেটটা পাঠিয়ে দিন এই ঘরে । সারাদিন অনেক ধকল গেছে।
- ওকে স্যর ।
================================================================
- আর জাস্ট একটু অপেক্ষা ম্যাডাম।
- আরো অপেক্ষা ?
- এই যে আমাদের বড়বাবু এসে গেছেন । এবারে ওনার সাথেই কথা বলুন ।
- আপনি যান সরকারবাবু, সরি মিসেস সেন ফর দ্য ডিলে, আপনাকে অনেক্ষণ বসতে হল। আমি কৌশিক গাঙ্গুলী, ফ্রম স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
- বলুন কী জানতে চান ?
- জল খাবেন ?
- না। আমাকে কেন আটকে রেখেছেন সেটা বলুন ।
- বলবেন তো আপনি, আর আমরা শুনব ।
- আমার যা বলার আগেই বলেছি । এখন আর নতুন কিছু বলার নেই।
- আগেরদিন বলেছিলেন যখন আপনার স্বামী মি: সেনের কিচেনে চা বানাতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয়েছিল, তখন আপনি গরিয়াহাটে শপিং-এ ব্যস্ত ছিলেন ।
- হ্যাঁ। আর কতবার বলব ? ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ।
- সেদিন হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি শপিং করতে গিয়েছিলেন ? কোন বিশেষ কারণ ছিল ?
- আমার ব্যক্তিগত দরকার ছিল ।
- প্রতিদিনই যান ?
- প্রায় রোববারই যাই, গড়িয়াহাটে ।
- তা, কী কী কিনলেন ?
- আপনাকে বলতে বাধ্য নই ।
- জল খান । আপনার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে ।
- ধন্যবাদ, আমি ঠিক আছি ।
- বাড়িতে কটা সিলিন্ডার ?
- দুটো।
- শেষ কবে এসেছে ?
- গত সপ্তাহে।
- আগেরটা খালি ছিল ?
- অবশ্যই ।
- কদিন চলে ?
- দেড়মাস।
- নতুনটা চললো না কেন ?
- কিসব যা-তা বলছেন ? ওটা ফেটেই তো উনি মারা গেলেন ।
- আপনি সিওর ?
- হ্যাঁ । সবাই তো তাই বলছে ।
- বাড়িতে স্টোভ ছিল ?
- ছিল । শুধু জলগরম হত ।
- কেন ?
- গ্যাস বাঁচানোর জন্য।
- বাড়িতে রান্নার লোক ছিল ?
- না, শুধু ঠিকে কাজের লোক ছিল, সকালবেলায় আসত।
- বলেন কি ! আপনাদের মত স্বচ্ছল বাড়িতে এখনকার দিনে রান্নার লোক নেই ?
- না, আমার শাশুড়ির আমল থেকেই কাজের লোকের রান্নাঘরে ধোকা বারণ। একটু অর্থোডক্স টাইপের মহিলা ছিলেন।
- সেই নিয়ম এখনো চলে আসছে ?
- হ্যাঁ, আমার স্বামীর জন্য। উনিও মায়েরই গুণ পেয়েছেন। বড্ড সেন্টিমেন্টাল।
- তাহলে তো আপনার সারাদিন খুব খাটুনি যায় ?
- হ্যাঁ, তা যায় বৈকি !
- তাহলে তো আপনার মিঃ সেনের উপরে বেশ রাগ ছিল।
- মানে ? কী বলতে চাইছেন ?
- কিছু বলতে নয়, বুঝতে চাইছি । আচ্ছা চা এর জল গরম কি'সে করতেন ?
- দুটোতেই, যখন যেরকম ।
- হাজব্যান্ড স্টোভ জ্বালাতে পারতেন ?
- না, পাম্পস্টোভ ছিল।
- তাহলে চা বানাতেন কিসে ?
- উনি গ্যাসে। আমি স্টোভে।
- উনি রোজই বিকেলে চা খেতেন ?
- হ্যাঁ । ওনার অভ্যাস ।
- বদভ্যাস !
- মানে ?
- মানে চা খেতে গিয়েই তো হত্যাটা হল ।
- হত্যা ? না, ভুল । ওটা অ্যাক্সিডেন্ট !
- ফরেন্সিক কিন্তু অন্য কথা বলছে। আপনার স্বামী চা বানাতে পারতেন ?
- না, বললাম তো আগেই । আমিই বানিয়ে দিতাম ।
- এই বললেন যে উনি গ্যাসে বানাতে পারতেন ।
- ভুল বলেছি হয়ত ।
- তাহলে সেদিনকে হঠাৎ চা না বানিয়েই শপিং-এ গেলেন কেন ?
- ঝগড়া হয়েছিল।
- আগে ঝগড়া হয়নি ?
- কোন স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয় না!
- তাহলে তখনও চা বানান নি ?
- না, বানিয়েছি । সেদিনকে অবশ্য রাগ কন্ট্রোল হয় নি ।
- কেন ?
- আমার আর আমার অফিস কলিগের সম্পর্ক নিয়ে নোংরা কথা বলেছিল ।
- পরকীয়া ?
- হ্যাঁ । ওনার সেরকমই অভিযোগ ছিল।
- কিন্তু অভিযোগ তো সত্যই ছিল ।
- বাজে কথা ।
- আমাদের কাছে প্রমাণ আছে ।
- তাতে কী ? আমি খুন করিনি ।
- কখন বললাম সেটা ? শুধু বলতে চাইছি আপনার খুন করার মোটিভ ছিল তাহলে ! মানছেন তো ?
- মানছি! কিন্তু খুন করি নি ।
- বাড়িতে আপনারাই দুজন ?
- হ্যাঁ ।
- ছেলেমেয়ে ? ক'বছর হল বিয়ের ?
- না, হয়নি । দুবছরের বিয়ে আমাদের ।
- আপনার অথবা মিঃ সেন, কারোর কী কোন প্রবলেম ছিল ?
- বাজে কথা রেখে আমাকে ছেড়ে দিন প্লীজ। আর নিতে পারছি না এই যন্ত্রণা ।
- এই নিন জল খান। দেখুন, আমরা জানি ওনাকে হত্যা করা হয়েছে ।
- কেন ? পুলিশ কি এখন জ্যোতিষী হয়ে গেছে ?
- হা হা হা, মাঝে মাঝে হতে হয় বৈকি !
- তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন !
- তাহলে আপনার প্রেমিককে ডাকি ?
- না...না, বিশ্বাস করুন ও কিছু করে নি !
- বেশ ! কে করেছে তাহলে ?
- জানি না ।
- তার মানে মানছেন এটা খুন হলেও হতে পারে !
- যা বাব্বা । তা আমি কখন বললাম ? ওটা তো আপনিই বললেন ।
- সাতদিন আগে নতুন সিলিন্ডার লাগালেও কেন ওইদিনকেই মিঃ সেন গ্যাস ডিলারকে ফোন করে গ্যাস বুকিং করলেন ?
- কী বলতে চাইছেন ?
- ওনার কি মৃত্যুর আগে জানার কথা যে নতুন সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাবে?
- না, তা কী করে জানবেন ? দুপুর অবধি তো ঠিকঠাকই চলেছে সিলিন্ডার।
- ওহ ! তাহলে স্বীকার করছেন যে এটা মিঃ সেনের জানার কথাই নয় যে, যে সিলিন্ডার ফেটে তার মৃত্যু হওয়ার কথা।
- মানে, কিছু বুঝলাম না !
- আপনি শুধু বলুন, বোঝার ভারটা আমাদের উপরে ছেড়ে দিন ।
- কি বলব বলুন ?
- তাহলে তিনি কী করে সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেছে সেটা জানতে পারলেন ?
- জানি না ।
- তাহলে বলুন দেখি, যে সিলিন্ডার দেড়মাস চলে, সাতদিন দুপুর অবধি ঠিক চলে, হঠাৎ করে বিকেলের মধ্যে গ্যাস শেষ হয়ে গেল কী করে ?
- লিক করেছে হয়ত ।
- দুঘন্টায় লিক হয়ে সব শেষ ?
- জানি না
- লিক করানো হয়েছিল কি মিসেস সেন ?
- কে লিক করাবে ? আর যদি তাই হয়, তাহলেও বা মৃত্যু কিভাবে হল ?
- সেটা তো আপনি বলবেন মিসেস সেন । আমরা শুনব ।
- আমি জানি না । আমি তো জানতাম... মানে খবরে, পেপারে , সবাই তাই বলছিল। ওনার সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয় নি ?
- না, স্টোভ ফেটে হয়েছে ।
- যা বাব্বা! স্টোভটা তো ভালোই ছিল ।
- তাহলে মানছেন গ্যাস সিলিন্ডারটা ঠিক ছিল না ?
- না মানে তা বলতে চাই নি! আপনি বুঝছেন না কেন?
- আপনি বোঝাতে পারছেন না যে!
- আমাকে ছেড়ে দিন ! আমি তো খুন করি নি !
- কে বলল? করতেও তো পারেন !
- ওই যে বললেন গ্যাস মৃত্যুর কারণ নয় । আমাকে তো সেইজন্যই ধরে এনেছেন ।
- স্বীকার করে নিন ম্যাডাম... সিলিন্ডারের পাইপটা আপনিই খুলেছিলেন!
- না ...মানে ....কী প্রমাণ আছে ? আচ্ছা জল খেতে পারি ?
- নিশ্চয়ই । এই নিন ।
- ড্রাইভিং জানেন ?
- জানি ।
- সেদিন গাড়ি নিয়ে যান নি শপিং এ ?
- না, তেল ছিল না ।
- সেকি ? কিচেনেই যে একটা পাঁচ লিটার জারে ডিজেল রাখা ছিল। সেটা ভরে নিলেই তো পারতেন ।
- জানি না ।
- স্ট্রেঞ্জ ! তাহলে আগেরদিন সন্ধ্যাবেলায় আপনাকে যে ওই জারটা করে ডিজেল আনতে দেখা গেছে ?
- মিথ্যে কথা ।
- আমাদের কাছে প্রমাণ আছে ।
- কী প্রমাণ আছে শুনি ?
- আপনার প্রতিবেশী দেখেছে আপনাকে । পেট্রোল পাম্পে আপনার ক্রেডিট কার্ডের সোয়াইপ রিসিট আছে । সিসিটিভি ফুটেজ আছে । আরো কিছু ?
- মিথ্যে কথা । আমি ডিজেল আনি নি ।
- তাহলে কি গঙ্গাজল এনেছিলেন ?
- বললাম তো আনিনি ।
- এনেছিলেন ম্যাডাম, এনেছিলেন । এখন মিথ্যে কথা বলছেন ।
- না, না, না আমি ডিজেল আনি নি ।
- মিথ্যে বলে লাভ হবে না । পাম্প বেশী করার জন্য স্টোভের গ্যাস কিচেনে ছড়িয়ে থাকা সিলিন্ডারে গ্যাসের সংস্পর্শে আসতেই স্টোভটা ফেটেছিল। তারপর ডিজেলের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে মিঃ সেনের মৃত্যু হয়।
- কতবার বলব আপনাকে যে আমি ডিজেল আনি নি ।
- শাট আপ অ্যান্ড ডোন্ট টেল লাই ! ওটা আপনিই এনেছিলেন । তারপর বিকেলে জারটা কিচেনে রেখে ঢাকনা খুলে রেখে, সিলিন্ডারের পাইপ খুলে দিয়েছিলেন ।
- তখন থেকে বলছি ওটা ডিজেল নয়, ডিজেল নয় বিশ্বাস করছেন না কেন আপনি ?
- ফরেন্সিক বলছে ওটা ডিজেল ।
- রাখুন তো আপনাদের ফরেন্সিককে । ওরা কি ভগবান ?
- আমাদের কাছে তো বটেই !
- আমি বলছি তো ওটা ডিজেল নয় ।
- ডিজেল না তো কি ? ডিজেলই ছিল ।
- না, না, না, আপনাদের ফরেন্সিক কিচ্ছু জানে না । ওটা পেট্রোল ছিল ! ....গাড়ির জন্য এনেছিলাম ।
- স্ট্রেঞ্জ ! আপনি গাড়ির জন্য পেট্রোল এনেছিলেন ? তাহলে গাড়িতে ঢাললেন না কেন ?
- না মানে ...তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।
- কিচেনে রেখেছিলেন কেন ?
- আমি রাখিনি ।
- স্টপ লাইং ! আপনার কি মনে হয় আমরা মজা করার জন্য ডেকেছি আপনাকে ?
- না, না তা বলিনি !
- তাহলে স্বীকার করছেন আপনিই ডিজেল এনেছিলেন !
- আবার ডিজেল ? বললাম তো পেট্রোল এনেছিলাম গাড়ির জন্য।
- কিন্তু যে গাড়ি ডিজেলে চলে সে গাড়ির জন্য পেট্রোল আনলেন কেন ?
- পেট্রোল ...মানে ...য়ামি ঠিক জানতাম না গাড়িতে কি তেল লাগে । আগে কখনো ভরিনি।
- এতদিন গাড়ি চালিয়ে আর এর আগে অন্তত দশবার একই পাম্প থেকে তেল ভরেও জানতে পারেন নি ? খুব কাঁচা হয়ে গেল না যুক্তিটা ?
- আমি তেল ভরাতাম না কখনো ।
- আপনার ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট কিন্তু অন্য কথা বলছে ।
- কি বলছে ?
- বলছে আপনি ধরা পড়ে গেছেন মিসেস সেন । আর লুকিয়ে লাভ নেই । ফরেন্সিক ওটা পেট্রোলই বলেছিল ।
- তার মানে আপনি ইচ্ছে করে কথা ঘুরিয়ে বলেছিলেন ?
- ওটাই আমাদের কাজ ম্যাডাম । ঢাকনাটা কোথায় ?
- কিসের ?
- পেট্রোলের জারের । বলুন ! বলুন ! আর মিথ্যে বলে লাভ নেই।
- ........................আমার পার্সে ।
- সিলিণ্ডারের পাইপ খুলেছিলেন কেন ?
- সিলিন্ডার বার্স্ট করাবার জন্য ।
- কিন্তু ওটা বার্স্ট করল না কারণ। সব গ্যাস বেরিয়ে গিয়েছিল যতক্ষণে মিঃ সেন চা বানাতে গিয়েছিলেন।
- হ্যাঁ । তাইতো শুনছি এখন।
- তাই উনি গ্যাসের বুকিং করলেন আগে। পেট্রোলের জারটা কেন রাখলেন ?
- পুরো প্রক্রিয়া তরাণ্বিত করার জন্য ।
- কেন হত্যার প্ল্যানিং করলেন ? চুপ করে থাকবেন না, বলুন ! বলুন ! কেন এই প্ল্যানিং ?
- না...মানে আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছিল না ।
- তাহলে স্বীকার করছেন আপনিই মিঃ সেনের খুনের চক্রান্ত করেছিলেন ?
- ইয়েস....ইয়েস ...অফিসার আই অ্যাডমিট । আর না করার উপায় নেই ।
- তেল কিনতে ক্রেডিট কার্ড সোয়াইপ কেন করেছিলেন ? কাঁচা কাজ !
- বুঝিনি, ওটা ওনার নামেই ছিল ।
- কার্ডে নামটা আপনারই ছিল । যদিও ওটা অ্যাডিশনাল গিফ্ট কার্ড মিঃ সেনের অ্যাকাউন্টের ।
- বুঝলাম। আগে ভুল ভেবেছিলাম।
- ওকে । এই নিন জল খান । রাত্রের ডিনার এবার এখানেই করতে হবে ম্যাডাম । সরকার বাবু, ভিডিও করাটা বন্ধ করুন ।
- ওকে স্যর । এই যে বন্ধ করছি ।
- এদিকে এসে এবার এনাকে নিয়ে যান । আর এভিডেন্সগুলো ফাইলের সাথে গুছিয়ে রাখুন । কালকে কোর্টে তুলতে হবে । আর এককাপ চা আর সিগারেটের প্যাকেটটা পাঠিয়ে দিন এই ঘরে । সারাদিন অনেক ধকল গেছে।
- ওকে স্যর ।
================================================================
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ০৭/১১/২০১৬বাহ বাহ । চালিয়ে যাও ভাই ।
-
গোপেশ দে ০৮/০৭/২০১৬ভাল লাগল
-
অঙ্কুর মজুমদার ০৪/০৭/২০১৬vlo
-
মোনালিসা ২৬/০৬/২০১৬ভালো
-
পরশ ২৫/০৬/২০১৬অতুলনীয়
-
আকাশ চট্টোপাধ্যায় ২৩/০৬/২০১৬তুমি চাইলে (এবং আমার সময় হলে) এই গল্পটা আমি এডিট করতে পারি। সামান্য কিছু টেকনিক্যাল রদবদল আর বানান ফিটিং, ব্যস্ দৌড়বে গল্পটা।
-
আকাশ চট্টোপাধ্যায় ২৩/০৬/২০১৬এত ব্রিলিয়াণ্ট একটা গল্প লিখেছ শান্তনু, বানান-টানান কে গুরুত্ব দাওনি। এটা আমার কাছে একটা অপরাধ বলে মনে হচ্ছে। মিসেস সেন-এর বদলে তোমাকেই কাঠগড়ায় তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে। বানান-ফানান কোনও ইস্যু? সাল্টে দাও এক্ষুনি।
আগে "কী" গুলো বসাও।
কিঃ হ্যাঁ কিংবা না
কীঃ ঘটনা/পরিমাণ/বিষয়
এক্ষুনি ঠিক করো। অনেকে পড়বে এই গল্পটা। তোমার দায়িত্ব, বিরিয়ানিটা যেন পরিষ্কার প্লেটে সার্ভ করা হয়! ভালো থেকো। -
পরশ ২৩/০৬/২০১৬সুন্দর
-
পরশ ২১/০৬/২০১৬অসাধারন