অর্কর গোয়েন্দাগিরি ( ৩য় পর্ব )
অর্কর সাথে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমরা প্রথমে সোজা গেলাম লালবাজারে, কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায়। ওখানে পৌঁছে, প্রিতমদার বন্ধু মিঃ বসাকের খোঁজ করাতেই, একজন কন্সটেবল প্রথমে আমাদের নাম-ঠিকানা একটা রেজিস্টারে লিখে, তারপরে আমাদের দুজনকে নিয়ে লম্বা করিডর পেরিয়ে ভেতরের দিকে একটা ছোট্ট কেবিনের সামনে রাখা দুটো টুলে বসিয়ে রেখে ভিতরে চলে গেল। অর্ক প্রিতমদার রেফারেন্সটা তাকে আগেই বলে দিয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে আমাদের উদ্দেশ্যে তাকিয়ে বলল, আজ্ঞে, আমরা ভেতরে যেতে পারেন, স্যর অপেক্ষা করছেন।
আমরা কেবিনের ভিতরে ঢুকে দেখি, একটা টেবিলকে আড়াআড়ি ভাগ করে দুজন অফিসার বসে আছেন। আমাদের দেখে, একজন দাঁড়িয়ে পরে বললেন, অর্ক কে ? আমি হাত দিয়ে অর্কর দিকে দেখিয়ে দিলাম। অর্ক নমস্কার করে বলল, আমিই অর্ক, অর্কপ্রভ চৌধুরী আর ও হল গিয়ে আমার বন্ধু মৈনাক সেনগুপ্ত। অফিসার হেসে হাত বাড়িয়ে বললেন, হ্যালো, আমিই ইন্সপেক্টর জয়ন্ত বসাক, প্রিতমের ব্যাচমেট। প্রিতম আমাকে তোমার কথা বলেছে। তোমরা তো ওই পিটার ডি’সুজার কেসটা সম্পর্কে জানতে এসেছ, তাই না? হুম, ঠিক আছে, বস তোমরা, আমি দেখছি, ...ফাইলটা কোথায় গেল...এইখানেই তো ছিল, এইবলে নিজের মনেই বিড়বিড় করতে করতে টেবিলের উপরে রাখা ফাইলগুলো ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা ফাইল বার করে নিয়ে বলে উঠলেন, এই যে পেয়েছি !
তারপরে আমাদের দিকে ঘুরে বললেন, আরে একি? তোমরা এখনো বস নি ? আরে বস, বস ।
আমরা সামনে রাখা দুটো চেয়ারে দুজনে বসে পড়লাম। মিঃ জয়ন্ত বসাক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আর তোমার কি করা হয় মৈনাক? আমি উত্তরে আমার প্রফেশন সম্পর্কে সংক্ষেপে জানাতে বুঝলাম উত্তরে ঠিক মন ভরল না জয়ন্তবাবুর। অর্কও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, আমাকে চোখের ইশারাতে চুপ করে যেতে বলে বলল, জয়ন্তবাবু আসলে আমরা জানতে এসেছি, মিঃ ডি’সুজার সাত্থে ব্যাপারটা ঠিক কি ঘটেছিল?
কিন্তু কেন? তোমরা জানতে এসেছ কেন? আমার প্রশ্ন ঠিক এখানেই... বলে উঠলেন মিঃ বসাক। শুনলাম তোমরা গোয়েন্দাগিরি করবে এই কেসে? পারবে তো ? কেসটা কিন্তু মোটেও সোজা নয়। একে তো হাই প্রোফাইল কেস, তারপরে আবার জটিল, দেখে শুনে কাজে লাগো বাপু, এই আমি বলে দিলুম, পরে না নাক কান কাটে আবার!
উত্তরে অর্ক হেসে বলল, আরে না, না, আপনার কোন চিন্তা নেই জয়ন্তবাবু । আসলে কাল রাত্রে প্রিতমদার কাছে ব্যাপারটা শোনার পর খুব ইন্টারেস্টিং লাগল আমার কাছে, আজকে সকালেও পেপারে খবরটা পড়ার পর তাই প্রিতমদাকে জিজ্ঞেস করাতে, প্রিতমদা আপনার কথা বলে বললেন দেখা করতে, আপনি নাকি কেসটা হ্যান্ডেল করছেন। আমাদের একান্ত ইচ্ছা সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেণ্ট কি ভাবে এইসব তদন্ত করে, সেটা স্বচক্ষে দেখা, অবশ্য যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে আমাদের পাশে নিতে।
আরো একটা ব্যাপার, আমরাও নিজেদের মত তদন্ত করে দেখতে চাই, যদিও আমাদের একেবারে হাতেখড়ি বলতে পারেন ব্যাপারটা, তাই আপনার পরামর্শ পেলে খুব সুবিধা হবে। আমরা সিরিয়াসলি, তবে আনঅফিসিয়ালি ভাবে কেসটার তদন্ত করতে চাই। প্রিতমদারও কিন্তু সাপোর্ট আছে, এই ব্যাপারে। উনি অভয় দিয়েছেন যে আপ্নি না করবেন না।
উত্তরে মাথা নাড়তে নাড়তে, ইন্সপেক্টর জয়ন্ত বসাক বলে উঠলেন , না না, আমার মাথা খারাপ নাকি! তোমাদের মত উঠতি বয়সের ছেলেদের নিয়ে আমিই বিপদে পড়ি আর কি! এর চেয়ে ভালো তোমরা বাপু তোমাদের মত কাজ কর, তবে হ্যাঁ, প্রিতমের রেফারেন্স নিয়ে এসেছ, আমি তোমাদেরকে বাইত্রে থেকে চেষ্টা করব সাহায্য করার, কোন কিছু দরকার লাগলে বোল, আমি ব্যাবস্থা করার চেষ্টা করব, ব্যস এটুকুই। এবারে বল কি জানতে চাও?
আমি এর উত্তরে বলে উঠলাম, মিঃ বসাক, আসলে আমরা জানতে চেয়েছি, ব্যাপারটা ঠিক কি করে ঘটল ? আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মিঃ বসাক উত্তর দিলেন, কি ভাবে ঘটল, তা’তো পেপারে বেরিয়েছে অলরেডী। কথা হচ্ছে, কে করল বা আরো বিশদে বলতে গেলে, কি ভাবে এত বড় একটা জালিয়াতি এত কম সময়ে করা হল... সেটা নিয়ে আমরাও ভাবছি। মিঃ পিটার ডি’সুজার সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমরা জানো, ঘটনা যেদিন হয়, তখন তিনি ছিলেন হসপিটালে। আগের দিন ভদ্রলোকের গলব্লাডার অপারেশন হয়েছিল। নেটব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে পুরো ৪৫ লক্ষ টাকা সরিয়ে দেওয়া হয় কেম্যান আইল্যাণ্ডের এক বিদেশী ব্রাঞ্চের অ্যাকাউন্টে।
অর্ক বলে উঠল, আপনাদের কাউকে সন্দেহ হচ্ছে? জবাবে বসাকবাবু মাথা দুদিকে নেড়ে বলে উঠলেন – নো ক্লু। আসলে কিভাবে যে এতবড় কান্ড হয়েছে, তা এখনো বোঝা যায় নি...
আমি বললাম মানে? জবাবে হেসে বলে উঠলেন ইন্সপেক্টর জয়ন্ত বসাক, বললেন – হুম, যাকগে তোমাদের সাথে এসব আলোচনা করার কোন মানে হয় না, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং জানো কিভাবে করতে হয়? আমার দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন তিনি। আমি শান্ত ভাবে বললাম, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংএর মাধ্যমে আমার অ্যাকাউন্টের টাকা আমি অন্য কোন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিতে পারি, তবে তার জন্য আমার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড লাগবে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড কেউ যদি জানে তবে সেও এই কাজটা করে দিতে পারবে। কিন্তু এতবড় একজন ব্যাবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ইউজার আইডি একমাত্র তিনিই জানবেন, এছাড়া আর কে জানবেন ?
মিঃ বসাক ঘাড় নেড়ে, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্যাপারটা যা ভাবছ মৈনাক, অত সোজা নয়, এতে অনেকগুলো সিকিউরিটি লেয়ার মেনটান করা হয় এখন, জানলাম, ভাবলাম আর করে দিলাম এমন নয় ব্যাপারটা মোটেই এখন আর। ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে ফাণ্ড ট্রান্সফার করতে গেলে, ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ছাড়াও, এখন অতিরিক্ত একটা পাসওয়ার্ড লাগে, যা ইউজারের মোবাইলে ব্যাঙ্ক মারফৎ আসে, এটাকে বলে—
ওটিপি – বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড, মিঃ বসাক বলার আগেই অর্ক বলে উঠল। জয়ন্ত বসাক অর্কর দিকে ফিরে বললেন, গুড, এটি একবার মাত্রই ব্যাবহার করা যায়, আর একবার ব্যাবহার হয়ে গেলে সেটা দিয়ে আর কোন কাজ করা যায় না। কিন্তু এখানে প্রশ্নটা অন্য জায়গায়... মিঃ ডি’সুজার মোবাইলটাও তার সাথেই ছিল হসপিটালে, সর্বক্ষণ তার জন্য লোক মজুদ ছিল হসপিটালে, খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অপারেশনের সময়ে ও অপারেশনের পরে মোবাইলটা তার স্ত্রীর ব্যাগেই ছিল, মোবাইল চেক করেও কোন ওটিপি এর এসএমএস দেখতে পাই নি, তারপর মোবাইল নাম্বারের সারভিস প্রোভাইডারদের সাথেও কথা বলে দেখেছি, তারাও বলেছে, অইদিন এরকম কোন এসএমএস মিঃ ডি'সুজার মোবাইলে ডেলিভার্ড করা হয় নি।
অথচ ওই মোবাইল নম্বরটাই তার ব্যাঙ্কে নেট ব্যাঙ্কিংএর জন্য রেজিস্টার্ড করা আছে। যদিও ব্যাঙ্কের তরফে আমাদের তদন্ত এখনও বাকি আছে, শুধু জানা গেছে সেটা কোথায় ট্রান্সফার হয়ে গেছে। আসলে সবে তো দুদিন হল, কেসটা হয়েছে, আমরা সবদিক খতিয়েই দেখছি আস্তে আস্তে। আমাদের তদন্তে অগ্রগতি বলতে আপাতত এটুকুই।
অর্ক বলে উঠল, দুদিন? পেপারে যে বেরিয়েছে গতকাল হয়েছে? জবাবে মিঃ বসাক বলে উঠলেন আরে না, এই সমস্ত কাগজে যত ভুলভাল লেখে। ঘটনাটা ঘটেছে বৃহস্পতিবার, ২১শে জানুয়ারী, আর ওনার গলব্লাডারের অপারেশন হয়েছে তার আগের দিন বুধবার, ২০ শে জানুয়ারী।
হুম, ছোট্ট একটা আওয়াজ করে উঠল অর্ক, তারপর আমার দিকে ফিরে বলে উঠল, চল মৈনাক, এবারে তবে উঠি আমরা। আমরা উঠে পড়লাম, আর অর্ক, মিঃ বসাকের দিকে তাকিয়ে মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি টেনে বলল- ওকে মিঃ বসাক, আজকে তবে আমরা আসছি, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল খুব। আমরা আমাদের মত তদন্ত করে দেখব একবার যদি আপনাদের কোন কিছুতে সাহায্য করতে পারি। আর হ্যাঁ, আপনার কাছে একটাই রিকোয়েস্ট আছে, আমি আমার ফোন নম্বরটা লিখে রেখে গেলাম, যদি তদন্তে অন্যরকম কোন মোড় আসে, তবে আমাকে প্লীজ জানাবেন, এটা কিন্তু শুধুই আমার তরফ থেকে একটা রিকোয়েস্ট, আর আমাদের তদন্ত যদি কখন পুলিশের প্রয়োজন হয়, তবে আমিও আপনাকে জানাব সাহায্যের জন্য। আশা করি নিরাশ হব না।
উত্তরে ভদ্রলোক একগাল হেসে আমাদের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন, শিওর, নো ইস্যু। তোমরা আমারো ভাইয়ের মত, তোমাদেরকে আমি হেল্প করব, তোমরা তোমাদের মত কাজ করে যাও, যদি কিছু ইম্পর্ট্যান্ট জিনিশ জানতে পারো, তবে আমাকেও জানিও। আর হ্যাঁ, প্রিতম বলছিল, তোমরা মিঃ ডি’সুজার সাথেও একবার দেখে করতে চাও, তোমরা যদি যাও, তবে আমি বলে দেব ওনাকে ফোন করে, উনি এখনো হসপিটালেই আছেন।
অর্ক বলে উঠল, খুব উপকার হবে জয়ন্ত বাবু, আমরা এখান থেকে সোজা ওনার ওখানেই দেখা করতে যাব ভাবছিলাম, কাইন্ডলি, যদি আপনি একবার ইনফর্ম করে রাখেন, তাহলে আমাদের একটু সুবিধা হবে কথা বলতে, নাহলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের সাথে যদি কথা বলতে রাজী না হন তবে ?
ইন্সপেক্টর মিঃ জয়ন্ত বসাক ঘাড় নেড়ে ইতিবাচক সায় দেওয়াতে আমরা ওখান থেকে উঠে পড়লাম। বাইরে বেরিয়ে আমি অর্ককে জিজ্ঞাসা করলাম কি’রে কি বুঝছিস?
অর্ক মুখটা গম্ভীর করে বলল, মনে হচ্ছে এর পেছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র আছে। জয়ন্তবাবুর উদ্বেগটা স্বাভাবিক, কান্ডটা কি করে হয়েছে যান্তে পারলে, রহস্যটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা বোঝা যাচ্ছে না,
আমি বললাম, কি বলছিস কি? একেবারে জলের মত পরিষ্কার... পুলিশের লোক, তাই মাথা ঘামাচ্ছে না আর... এ আর কি ব্যাপার? মিঃ ডি’সুজার মোবাইলটা সারাদিন ধরে অন্য হাতে ঘুরে বেরিয়েছে, ওনারই জানা শোনা কেউ এই কাজ করেছে, ইউজার আইডি আর পাসওয়ার্ড চুরি করে দেখ গে...
অর্ক, আমার দিকে ফিরে বলে উঠল, তাহলে ওটিপি সঙ্ক্রান্ত এসএমএসটা নেই কেন ফোনে? যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নিই যে ওনার স্ত্রী, ছেলে বা ওনার অ্যাকাউন্টট্যান্টদের মধ্যে কেউ এইকাজ করেছে, তাহলে তাড়া সেই ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কোথা থেকে পেল? ব্যাঙ্ক তো পাসওয়ার্ড পাঠাবেই, কিন্তু সেটা গেল কোথায়? যাক গে চল, আগে মিঃ ডি’সুজার সাথে কথা বলে আসি চল।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম অর্কের দিকে, ঠিকই তো বলেছে ও, তাহলে সেই এসএমএসটা গেল কোথায়? আচ্ছা কেউ ডিলিট করে দেয় নি তো? কিন্তু ডিলিট করে দিলেও মোবাইলের সারভিস প্রোভাইডারের রেকর্ডে থাকার কথা তা, কিন্তু পুলিশ বলছে, কোন ব্যাঙ্ক থেকে এরকম কোন এসএমএস ওই নাম্বারে নাকি আসে নি সেদিনকে, সারভিস প্রোভাইডার রেকর্ড হিস্ট্রি দেখে বলেছে। তাহলে কি করে হল এত বড় চুরি? এত চতুর ভাবে চুরি এত অল্প সময়ে কি ভাবে করল তারা ? এ কি করে সম্ভব ? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। এটা কি শুধু চুরি ? নাকি এর সাথে আরো অন্য কিছুও আছে ?
( চলবে )
আমরা কেবিনের ভিতরে ঢুকে দেখি, একটা টেবিলকে আড়াআড়ি ভাগ করে দুজন অফিসার বসে আছেন। আমাদের দেখে, একজন দাঁড়িয়ে পরে বললেন, অর্ক কে ? আমি হাত দিয়ে অর্কর দিকে দেখিয়ে দিলাম। অর্ক নমস্কার করে বলল, আমিই অর্ক, অর্কপ্রভ চৌধুরী আর ও হল গিয়ে আমার বন্ধু মৈনাক সেনগুপ্ত। অফিসার হেসে হাত বাড়িয়ে বললেন, হ্যালো, আমিই ইন্সপেক্টর জয়ন্ত বসাক, প্রিতমের ব্যাচমেট। প্রিতম আমাকে তোমার কথা বলেছে। তোমরা তো ওই পিটার ডি’সুজার কেসটা সম্পর্কে জানতে এসেছ, তাই না? হুম, ঠিক আছে, বস তোমরা, আমি দেখছি, ...ফাইলটা কোথায় গেল...এইখানেই তো ছিল, এইবলে নিজের মনেই বিড়বিড় করতে করতে টেবিলের উপরে রাখা ফাইলগুলো ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা ফাইল বার করে নিয়ে বলে উঠলেন, এই যে পেয়েছি !
তারপরে আমাদের দিকে ঘুরে বললেন, আরে একি? তোমরা এখনো বস নি ? আরে বস, বস ।
আমরা সামনে রাখা দুটো চেয়ারে দুজনে বসে পড়লাম। মিঃ জয়ন্ত বসাক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আর তোমার কি করা হয় মৈনাক? আমি উত্তরে আমার প্রফেশন সম্পর্কে সংক্ষেপে জানাতে বুঝলাম উত্তরে ঠিক মন ভরল না জয়ন্তবাবুর। অর্কও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, আমাকে চোখের ইশারাতে চুপ করে যেতে বলে বলল, জয়ন্তবাবু আসলে আমরা জানতে এসেছি, মিঃ ডি’সুজার সাত্থে ব্যাপারটা ঠিক কি ঘটেছিল?
কিন্তু কেন? তোমরা জানতে এসেছ কেন? আমার প্রশ্ন ঠিক এখানেই... বলে উঠলেন মিঃ বসাক। শুনলাম তোমরা গোয়েন্দাগিরি করবে এই কেসে? পারবে তো ? কেসটা কিন্তু মোটেও সোজা নয়। একে তো হাই প্রোফাইল কেস, তারপরে আবার জটিল, দেখে শুনে কাজে লাগো বাপু, এই আমি বলে দিলুম, পরে না নাক কান কাটে আবার!
উত্তরে অর্ক হেসে বলল, আরে না, না, আপনার কোন চিন্তা নেই জয়ন্তবাবু । আসলে কাল রাত্রে প্রিতমদার কাছে ব্যাপারটা শোনার পর খুব ইন্টারেস্টিং লাগল আমার কাছে, আজকে সকালেও পেপারে খবরটা পড়ার পর তাই প্রিতমদাকে জিজ্ঞেস করাতে, প্রিতমদা আপনার কথা বলে বললেন দেখা করতে, আপনি নাকি কেসটা হ্যান্ডেল করছেন। আমাদের একান্ত ইচ্ছা সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেণ্ট কি ভাবে এইসব তদন্ত করে, সেটা স্বচক্ষে দেখা, অবশ্য যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে আমাদের পাশে নিতে।
আরো একটা ব্যাপার, আমরাও নিজেদের মত তদন্ত করে দেখতে চাই, যদিও আমাদের একেবারে হাতেখড়ি বলতে পারেন ব্যাপারটা, তাই আপনার পরামর্শ পেলে খুব সুবিধা হবে। আমরা সিরিয়াসলি, তবে আনঅফিসিয়ালি ভাবে কেসটার তদন্ত করতে চাই। প্রিতমদারও কিন্তু সাপোর্ট আছে, এই ব্যাপারে। উনি অভয় দিয়েছেন যে আপ্নি না করবেন না।
উত্তরে মাথা নাড়তে নাড়তে, ইন্সপেক্টর জয়ন্ত বসাক বলে উঠলেন , না না, আমার মাথা খারাপ নাকি! তোমাদের মত উঠতি বয়সের ছেলেদের নিয়ে আমিই বিপদে পড়ি আর কি! এর চেয়ে ভালো তোমরা বাপু তোমাদের মত কাজ কর, তবে হ্যাঁ, প্রিতমের রেফারেন্স নিয়ে এসেছ, আমি তোমাদেরকে বাইত্রে থেকে চেষ্টা করব সাহায্য করার, কোন কিছু দরকার লাগলে বোল, আমি ব্যাবস্থা করার চেষ্টা করব, ব্যস এটুকুই। এবারে বল কি জানতে চাও?
আমি এর উত্তরে বলে উঠলাম, মিঃ বসাক, আসলে আমরা জানতে চেয়েছি, ব্যাপারটা ঠিক কি করে ঘটল ? আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মিঃ বসাক উত্তর দিলেন, কি ভাবে ঘটল, তা’তো পেপারে বেরিয়েছে অলরেডী। কথা হচ্ছে, কে করল বা আরো বিশদে বলতে গেলে, কি ভাবে এত বড় একটা জালিয়াতি এত কম সময়ে করা হল... সেটা নিয়ে আমরাও ভাবছি। মিঃ পিটার ডি’সুজার সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমরা জানো, ঘটনা যেদিন হয়, তখন তিনি ছিলেন হসপিটালে। আগের দিন ভদ্রলোকের গলব্লাডার অপারেশন হয়েছিল। নেটব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে পুরো ৪৫ লক্ষ টাকা সরিয়ে দেওয়া হয় কেম্যান আইল্যাণ্ডের এক বিদেশী ব্রাঞ্চের অ্যাকাউন্টে।
অর্ক বলে উঠল, আপনাদের কাউকে সন্দেহ হচ্ছে? জবাবে বসাকবাবু মাথা দুদিকে নেড়ে বলে উঠলেন – নো ক্লু। আসলে কিভাবে যে এতবড় কান্ড হয়েছে, তা এখনো বোঝা যায় নি...
আমি বললাম মানে? জবাবে হেসে বলে উঠলেন ইন্সপেক্টর জয়ন্ত বসাক, বললেন – হুম, যাকগে তোমাদের সাথে এসব আলোচনা করার কোন মানে হয় না, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং জানো কিভাবে করতে হয়? আমার দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন তিনি। আমি শান্ত ভাবে বললাম, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংএর মাধ্যমে আমার অ্যাকাউন্টের টাকা আমি অন্য কোন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিতে পারি, তবে তার জন্য আমার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড লাগবে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড কেউ যদি জানে তবে সেও এই কাজটা করে দিতে পারবে। কিন্তু এতবড় একজন ব্যাবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ইউজার আইডি একমাত্র তিনিই জানবেন, এছাড়া আর কে জানবেন ?
মিঃ বসাক ঘাড় নেড়ে, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্যাপারটা যা ভাবছ মৈনাক, অত সোজা নয়, এতে অনেকগুলো সিকিউরিটি লেয়ার মেনটান করা হয় এখন, জানলাম, ভাবলাম আর করে দিলাম এমন নয় ব্যাপারটা মোটেই এখন আর। ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে ফাণ্ড ট্রান্সফার করতে গেলে, ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ছাড়াও, এখন অতিরিক্ত একটা পাসওয়ার্ড লাগে, যা ইউজারের মোবাইলে ব্যাঙ্ক মারফৎ আসে, এটাকে বলে—
ওটিপি – বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড, মিঃ বসাক বলার আগেই অর্ক বলে উঠল। জয়ন্ত বসাক অর্কর দিকে ফিরে বললেন, গুড, এটি একবার মাত্রই ব্যাবহার করা যায়, আর একবার ব্যাবহার হয়ে গেলে সেটা দিয়ে আর কোন কাজ করা যায় না। কিন্তু এখানে প্রশ্নটা অন্য জায়গায়... মিঃ ডি’সুজার মোবাইলটাও তার সাথেই ছিল হসপিটালে, সর্বক্ষণ তার জন্য লোক মজুদ ছিল হসপিটালে, খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অপারেশনের সময়ে ও অপারেশনের পরে মোবাইলটা তার স্ত্রীর ব্যাগেই ছিল, মোবাইল চেক করেও কোন ওটিপি এর এসএমএস দেখতে পাই নি, তারপর মোবাইল নাম্বারের সারভিস প্রোভাইডারদের সাথেও কথা বলে দেখেছি, তারাও বলেছে, অইদিন এরকম কোন এসএমএস মিঃ ডি'সুজার মোবাইলে ডেলিভার্ড করা হয় নি।
অথচ ওই মোবাইল নম্বরটাই তার ব্যাঙ্কে নেট ব্যাঙ্কিংএর জন্য রেজিস্টার্ড করা আছে। যদিও ব্যাঙ্কের তরফে আমাদের তদন্ত এখনও বাকি আছে, শুধু জানা গেছে সেটা কোথায় ট্রান্সফার হয়ে গেছে। আসলে সবে তো দুদিন হল, কেসটা হয়েছে, আমরা সবদিক খতিয়েই দেখছি আস্তে আস্তে। আমাদের তদন্তে অগ্রগতি বলতে আপাতত এটুকুই।
অর্ক বলে উঠল, দুদিন? পেপারে যে বেরিয়েছে গতকাল হয়েছে? জবাবে মিঃ বসাক বলে উঠলেন আরে না, এই সমস্ত কাগজে যত ভুলভাল লেখে। ঘটনাটা ঘটেছে বৃহস্পতিবার, ২১শে জানুয়ারী, আর ওনার গলব্লাডারের অপারেশন হয়েছে তার আগের দিন বুধবার, ২০ শে জানুয়ারী।
হুম, ছোট্ট একটা আওয়াজ করে উঠল অর্ক, তারপর আমার দিকে ফিরে বলে উঠল, চল মৈনাক, এবারে তবে উঠি আমরা। আমরা উঠে পড়লাম, আর অর্ক, মিঃ বসাকের দিকে তাকিয়ে মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি টেনে বলল- ওকে মিঃ বসাক, আজকে তবে আমরা আসছি, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল খুব। আমরা আমাদের মত তদন্ত করে দেখব একবার যদি আপনাদের কোন কিছুতে সাহায্য করতে পারি। আর হ্যাঁ, আপনার কাছে একটাই রিকোয়েস্ট আছে, আমি আমার ফোন নম্বরটা লিখে রেখে গেলাম, যদি তদন্তে অন্যরকম কোন মোড় আসে, তবে আমাকে প্লীজ জানাবেন, এটা কিন্তু শুধুই আমার তরফ থেকে একটা রিকোয়েস্ট, আর আমাদের তদন্ত যদি কখন পুলিশের প্রয়োজন হয়, তবে আমিও আপনাকে জানাব সাহায্যের জন্য। আশা করি নিরাশ হব না।
উত্তরে ভদ্রলোক একগাল হেসে আমাদের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন, শিওর, নো ইস্যু। তোমরা আমারো ভাইয়ের মত, তোমাদেরকে আমি হেল্প করব, তোমরা তোমাদের মত কাজ করে যাও, যদি কিছু ইম্পর্ট্যান্ট জিনিশ জানতে পারো, তবে আমাকেও জানিও। আর হ্যাঁ, প্রিতম বলছিল, তোমরা মিঃ ডি’সুজার সাথেও একবার দেখে করতে চাও, তোমরা যদি যাও, তবে আমি বলে দেব ওনাকে ফোন করে, উনি এখনো হসপিটালেই আছেন।
অর্ক বলে উঠল, খুব উপকার হবে জয়ন্ত বাবু, আমরা এখান থেকে সোজা ওনার ওখানেই দেখা করতে যাব ভাবছিলাম, কাইন্ডলি, যদি আপনি একবার ইনফর্ম করে রাখেন, তাহলে আমাদের একটু সুবিধা হবে কথা বলতে, নাহলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের সাথে যদি কথা বলতে রাজী না হন তবে ?
ইন্সপেক্টর মিঃ জয়ন্ত বসাক ঘাড় নেড়ে ইতিবাচক সায় দেওয়াতে আমরা ওখান থেকে উঠে পড়লাম। বাইরে বেরিয়ে আমি অর্ককে জিজ্ঞাসা করলাম কি’রে কি বুঝছিস?
অর্ক মুখটা গম্ভীর করে বলল, মনে হচ্ছে এর পেছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র আছে। জয়ন্তবাবুর উদ্বেগটা স্বাভাবিক, কান্ডটা কি করে হয়েছে যান্তে পারলে, রহস্যটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা বোঝা যাচ্ছে না,
আমি বললাম, কি বলছিস কি? একেবারে জলের মত পরিষ্কার... পুলিশের লোক, তাই মাথা ঘামাচ্ছে না আর... এ আর কি ব্যাপার? মিঃ ডি’সুজার মোবাইলটা সারাদিন ধরে অন্য হাতে ঘুরে বেরিয়েছে, ওনারই জানা শোনা কেউ এই কাজ করেছে, ইউজার আইডি আর পাসওয়ার্ড চুরি করে দেখ গে...
অর্ক, আমার দিকে ফিরে বলে উঠল, তাহলে ওটিপি সঙ্ক্রান্ত এসএমএসটা নেই কেন ফোনে? যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নিই যে ওনার স্ত্রী, ছেলে বা ওনার অ্যাকাউন্টট্যান্টদের মধ্যে কেউ এইকাজ করেছে, তাহলে তাড়া সেই ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কোথা থেকে পেল? ব্যাঙ্ক তো পাসওয়ার্ড পাঠাবেই, কিন্তু সেটা গেল কোথায়? যাক গে চল, আগে মিঃ ডি’সুজার সাথে কথা বলে আসি চল।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম অর্কের দিকে, ঠিকই তো বলেছে ও, তাহলে সেই এসএমএসটা গেল কোথায়? আচ্ছা কেউ ডিলিট করে দেয় নি তো? কিন্তু ডিলিট করে দিলেও মোবাইলের সারভিস প্রোভাইডারের রেকর্ডে থাকার কথা তা, কিন্তু পুলিশ বলছে, কোন ব্যাঙ্ক থেকে এরকম কোন এসএমএস ওই নাম্বারে নাকি আসে নি সেদিনকে, সারভিস প্রোভাইডার রেকর্ড হিস্ট্রি দেখে বলেছে। তাহলে কি করে হল এত বড় চুরি? এত চতুর ভাবে চুরি এত অল্প সময়ে কি ভাবে করল তারা ? এ কি করে সম্ভব ? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। এটা কি শুধু চুরি ? নাকি এর সাথে আরো অন্য কিছুও আছে ?
( চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২৬/১১/২০১৬খুব ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় বন্ধুকে।
-
আকাশ চট্টোপাধ্যায় ২৩/০৬/২০১৬দেবব্রতর মন্তব্যটি আমিও সমর্থন করি। এটা কোনও ইস্যু নয়। যাস্ট একটা "হুক" রেখে দেওয়া। ইচ্ছে করলেই তুমি পারবে বাপু!
-
আকাশ চট্টোপাধ্যায় ২৩/০৬/২০১৬এই শান্তনু, ১ আর ২ পর্ব কোথায় পাবো? শিগগিরি বলো!!!!
-
পরশ ০২/০৫/২০১৬পরেরটার অপেক্ষায় রইলাম
-
প্রশান্ত মন্ডল ১২/০৪/২০১৬বাহ্। মন্দ নয়। চলুক তবে....
-
পদ্মনীল ০৪/০৪/২০১৬bes
-
তুষার অপু ০১/০৪/২০১৬খুব মজা পাইলাম।
-
নির্ঝর ২৫/০৩/২০১৬মজা পেলাম
-
শূন্য ২৩/০৩/২০১৬আর কত পর্ব??
-
আশরাফুল ইসলাম শিমুল ২৩/০৩/২০১৬অপেক্ষায় রহিলাম
-
আজিজ আহমেদ ২১/০৩/২০১৬আমার ইন্টারেস্ট খুব বাড়ছে শান্তনু।
রহস্য ধীরে ধিরে জমাট বাঁধুক।
কিভাবে হল চুরি? -
দেবব্রত সান্যাল ২১/০৩/২০১৬গল্পটা একটু বেশি টানা হচ্ছে বলে কম জমেছে।ধারাবাহিক লেখার প্রত্যেক পর্বের শেষে একটা মোচড় থাকতে হবে। তোমার ওপর দাবিটা বেশি তাই লিখলাম।
-
মৃণ্ময় আলম ২০/০৩/২০১৬ভাল লাগলো