www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অর্কর গোয়েন্দাগিরি (১ম পর্ব)

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবে সকালের পেপারটা নিয়ে বসেছি, মা দেখি একহাতে চায়ের কাপ ও আর এক হাতে বাজারের থলে নিয়ে হাজির, বলল- যা আজকে বাজারের দায়িত্ত্ব তোর, তোর বাপী সকাল বেলায় চন্দননগর চলে গেছে অফিসের কাজে, চা খেয়ে বাজার করে নিয়ে এসে যত খুশি পেপার পড়, কেউ বারণ করবে না, আমি ততক্ষণে সকালের টিফিনটা করে নিচ্ছি। বাজার করা ব্যাপারটাকে আমি চিরদিনই ঘৃণার চোখে দেখে এসেছি, তাই শুনেই হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল, আজ শনিবার, সেক্টর ফাইভের অফিস ছুটি, ভেবেছিলাম কাগজটাতে চোখ বুলিয়ে, টিফিন করে অর্কর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোব।

আমরা, মানে আমি মৈনাক আর অর্ক দুজনেই  ছোটবেলার বন্ধু। পড়শুনোর পাঠ চুকিয়ে আমি এখন সেক্টর ফাইভ এ একটা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি তে চাকরি করছি, আর অর্ক ওদের ফ্যামিলি বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দুজনেরই ঠিকানা হল, ৭ নং, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, সুর্যোদয় কমপ্লেক্সে। আমাদের থ্রী বেডরুম ফ্ল্যাট, এ ব্লকের থার্ড ফ্লোরে,  আর অর্কদের ডি ব্লকের পাঁচতলায়, দুটো মুখোমুখি থ্রী বেডরুমের ফ্ল্যাট নিয়ে একটাই সাজানো ফ্ল্যাট বানানো ।

অর্কর জ্যেঠু শ্রী. প্রতাপ রঞ্জন চৌধুরী  হলেন একজন এক্স  আইপিএস অফিসার ১৯৭৫ ব্যাচ। উনি খুব রাশভারী লোক। যদিও উনি মানুষ হিসাবে  খুব  ভালো আর খুব সৎ, মাঝে  মাঝেই আমাদের খুব মজার গল্পও  শোনান ওনার  চাকরি  জীবনের। তবে জ্যেঠুর একটা ব্যাপার আমার একদম ভালো লাগত না, কথায় কথায় আমার “মৈনাক” নামটাকে বিকৃত করে “মানিকচাঁদ” বলে ডাকা। অবশ্য রাগ হলেও আমার কিছু করার ছিল না, বাব্বা, পুলিশের লোক ছিলেন বলে কথা। অর্কর বাবার নিজের এক্সপোর্ট আর ইম্পোর্ট এর ব্যবসা আছে। অর্ক এমবিএ  পাস করে ওই ব্যবসা বাড়ানোতেই মন দিয়েছে। আমার পরিবারে আমার বাবা ও মা ছাড়া আর কেউ নেই। অর্করা এখনও প্রায় একান্নবর্তী পরিবারেই থাকে। একটা ফ্ল্যাট অর্কর জ্যেঠুর আর একটা ফ্ল্যাট অর বাবার নামে নেওয়া, জ্যেঠুর স্ত্রী গত হয়েছেন বছর চারেক হল, তাই কাকিমার উপরেই এখন ঘরের দেখাশোনার ভার পুরোপুরি।   

আমরা দুজনে অভিন্নহৃদয় বন্ধু হলেও, আমাদের দুজনের চেহারার ও স্বভাবের অমিলটা দেখেই, পাড়ার সকলে প্রায়ই ব্যঙ্গ করে আমাদের “মানিক-জোড়” বলেই ডাকে। আমি যেখানে উচ্চতায় পাঁচ ফুট পাঁচ, অর্ক সেখানে একদম ছ-ফুট, অর্কর ফিজিকটা আমার থেকে অনেক ভালো, রোজ সকালে নিয়মকরে শরীর-চর্চা করে, সপ্তাহে তিনদিন প্রায় দুঘন্টা করে জিমে কাটায়, বাইসেপ-ট্রাইসেপগুলো দেখার মত। আমার আবার ওই অত সকালে ঘুম ভাঙ্গে না, এরজন্য কম বকা খাই নি বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী, এখনও সকালবেলাতে ঘুম থেকে ওঠা, আর ছুটির দিনে দুপুরে একটু ভাতঘুম না দেওয়া, আমার কুষ্ঠিতে লেখা নেই। গায়ের রঙ অবশ্য অর্কর একটু শ্যামলা, চুল পুরো ব্যাক ব্রাশ করে আঁচড়ানো থাকে সবসময়। যাই হোক, আমার চেহারাটা সেদিক থেকে দেখতে গেলে একটু গোলগাল, অর্কর মত অতটা কাঠকাঠ নয়। অর্কর অসম্ভব গায়ের জোর, বিশেষ করে কব্জির জোর অসাধারণ অর্কর। আমাদের কলেজ লাইফে, পরপর তিনবছর ও পাঞ্জার লড়াইতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। অবশ্য তার সাথে টেবিল টেনিস ও ব্যাডমিন্টনেও ওকে হারানোটা অসাধ্য ছিল প্রায় সকলের কাছেই।

অর্কর জ্যেঠু যেহেতু একজন আইপিএস অফিসার ছিলেন, তাই ওনার সাথে কলকাতার অনেক ইম্পর্টান্ট লোকেদের চেনাশোনা আছে। ওদের বাড়িতেও সবসময় একটা কেমন যেন ডিসিপ্লিন ডিসিপ্লিন ভাব, আবার অন্যদিকে অর্কের রোলমডেলও ছিলেন তিনিই। তাই ওর নিজের হাঁটাচলা, কথা বলা, সব কিছুতেই জ্যেঠুকে কপি করত ছোটবেলা থেকে, আমি মাঝে মাঝে বলতাম, তোর হাঁটাচলা, কথা বলা দেখে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যেন কোন পুলিশের সাথে কথা বলছি। এত কিছু অমিল থাকা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যে তিনটে মিল ছিল, সেগুলো হল, আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোভাবে বুঝতাম, আমাদের দুজনের ওয়েভলেন্থ ম্যাচ করত দুর্ধর্ষভাবে, এছাড়া পছন্দ ছিল কাকিমার হাতে তৈরী করা, আলু-পোস্ত ও বিউলির ডাল। অসম্ভব ভালো খেতে সেগুলো আর আমরা দুজনেই একেবারে চেটে-পুটে খেয়ে নিতাম, যদিও কাকিমার সব রান্নাই আমার খুব ভালো লাগত। আর সবশেষে, আমাদের দুজনেরই পছন্দ ছিল, ক্যাজুয়াল ড্রেস। বাধ্য না হলে আমরা দুজনের কেউই কখনো ফরমাল ড্রেস পরতাম না, তবে আমাদের সবচেয়ে ফেভারিট ছিল, পাঞ্জাবী ও জিন্স।    

তবে আরো তিনটে জায়গায়, যেখানে অর্ক আমাদের সবার থেকে এগিয়ে থাকত, সেই গুলো হল ওর কোন কিছু সল্ভ করার ক্ষমতা বা অ্যানালাইজিং পাওয়ার, উপস্থিত বুদ্ধি বা আই কিউ, ও অসাধারণ অবজারভেশন পাওয়ার। আমি বা আরো অনেকে পড়াশোনাতে ওর থেকে ভালো হওয়া সত্ত্বেও এই তিনটে ব্যাপারে কিন্তু ও আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। যদিও পড়াশোনাতে একেবারে যে খারাপ ছিল তা নয়, তবে ওর বক্তব্য ছিল যে এইসব গতে বাঁধা পড়াশুনো ওর একেবারে ভালো লাগে না, বই ও প্রচুর পড়ত, তবে সিলেবাসের বাইরে প্রায় সবরকম বই, আর যা পড়ত তা একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। কোন কিছু একবার দেখলে সহজে ভুলবার পাত্র ও ছিল না, আমরা বন্ধুরা প্রায় সকলেই ওকে গুরুদেব মানতাম এই ব্যাপারে। ছোটবেলা থেকেই ওর শখ গোয়েন্দাগিরি করার আর সেই জন্য জ্যেঠুর পরামর্শ মতোই সব কিছু করত।  

একবার হয়েছে কি, কলেজে আমাদের এক সহপাঠী, কেমিস্ট্রি পরীক্ষার হলে এসে বসেছে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। পরীক্ষা তখনও শুরু হয়নি, আমরা অল্প অল্প হাসিঠাট্টা করছি এটা-সেটা নিয়ে, অর্ক তার দিকে তাকিয়ে বলল, অমিত কি’রে কাকিমার কিছু হয়েছে? নাকি অন্য কারোর শরীর খারাপ হয়েছে বাড়িতে? কাকিমার শরীর ভালো আছে তো ? আমরা একবার খুব করে হেসে নিলাম ওর কথা শুনে, বললাম, বেচারা পরীক্ষা দিতে এসেছে, আর তুই কিনা এসব জিজ্ঞাসা করছিস এখন...কিন্তু আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে অমিত অর্কের হাত ধরে বলে উঠল, ঠিক বলেছিস, মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে, খুব শ্বাসকষ্টে ভুগছে, এবারে আমাদের অবাক হবার পালা, অর্ক বলল, কিছু হবে না, কাকিমা ভালো হয়ে যাবেন, তুই একদম চিন্তা করিস না এখন, পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরে আমরা সকলে হাসপাতালে দেখতে যাব কাকিমাকে...

আমি আর থাকতে না পেরে, বলে উঠলাম, কিন্তু তুই কি করে জানলি যে অমিতের মায়ের শরীর খারাপ? ও'তো এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে বেশ খোশগল্প করছিল। অর্ক হেসে বলল, হ্যাঁ সবার মাঝে পড়ে হাসাহাসি করছিল ঠিকই, কিন্তু ও যে টেনশন করছিল, তা যদি তোরা ওকে ভালো ভাবে খেয়াল করতিস, তাহলে তোরাও বুঝতে পারতিস। দেখ টেনশনের জন্য অবচেতন মনে হাতের পেন্সিলের মাথাটা খেয়ে খেয়ে, একবারে ছিবড়ে করে দিয়েছে। আর দাগটা দেখে বোঝাই যাচ্ছে, এই মুহুর্তেই করা হয়েছে, টাটকা কামড়ানোর দাগ! আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, অমিতও অবাক হয়ে নিজের হাতের পেনসিলের দিকে তাকিয়ে দেখে জিভ কেটে বলল – সরি বস।

আমি বললাম, কিন্তু সেতো পরীক্ষার জন্যও হতে পারে, কিন্তু ওর মায়ের যে শরীর খারাপ, কি করে বুঝলি ? অর্ক উত্তরে হাতের আঙুলটা অমিতের কপালের ছুঁইয়ে বলল, এই দেখ, আজকে কপালে শুধু চন্দনের ফোঁটা দিয়ে এসেছে অমিত পরীক্ষা দিতে, কিন্তু এর আগে প্রতিদিনই চন্দনের সাথে দইও থাকত, আমরা যা নিয়ে হাসতাম মনে আছে? তাহলে, বোঝ সেই ছেলে যে অত প্যাঁক খাবার পরেও যখন দইয়ের ফোঁটা নিতে ছাড়েনি, তবে আজকে হঠাত এত গুরুত্ত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিনকে শুধু চন্দনের ফোঁটা নিয়ে এল পরীক্ষার হলে, দেখে তাই সন্দেহ হল, বুঝলাম আজকে ফোঁটা অন্য কেউ দিয়েছে, আর যে দিয়েছে, সে দইয়ের ফোঁটা দিতে ভুলে গেছে। শুধু তাই নয় আজকে যে ফোঁটা দিয়েছে, সে বাঁ হাত দিয়ে দিয়েছে, যেখানে কাকিমা প্রতিদিন ডানহাত দিয়ে ফোঁটা দেন। তার মানে কাকিমা আজকে দেয়নি, কিন্তু কেন? এত গুরুত্ত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিনকে এমনি এমনি কাকিমা ফোঁটা দেবে না, তা’তো হয় না, তবে নিশ্চয়ই কোন গুরুত্ত্বপুর্ণ কারণ, হয় বাড়িতে নেই তিনি, আর নয়তো শরীর খারাপ। পরীক্ষার দিনে কোন গুরুত্ত্বপূর্ণ  কারণ ছাড়া বাড়িতে থাকবেন না, কাকিমা এরকম নন, সেটা তার ছেলের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা দেখেই বোঝা যায়। আবার তার বদলে যে কাজটা করেছে, সেও হয়তো সেই গুরুত্ত্বপূর্ণ কারণে দইয়ের ফোঁটা দিতে ভুলে গেছে। তারপরে অমিতকেও দেখলাম এরম ভাবে টেনশন করতে, এর আগের পরীক্ষাতেও ওকে এরকম ভাবে টেনশন করতে দেখি নি, তখন দুইয়ে দুইয়ে চার করতে আর অসুবিধা হল না, বুঝলাম হয় কোন নিকটাত্মীয় বা নয়ত, কাকিমা নিজেই অসুস্থ হয়েছেন, আর তাই ও অত টেনশন করছে ব্যাপারটা নিয়ে।  

আমি আরো আস্চর্য্য হয়ে বললাম, সেতো না হয় বুঝলাম , কিন্তু ডানহাত, বাঁহাতের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না... এতক্ষণে অমিতও বলে উঠল, গ্রেট, তুই ঠিক বলেছিস, আজকে আমার দিদি দিয়েছে, বাঁ হাত দিয়ে। কিন্তু এটা কি করে বুঝলি?

উত্তরে অর্ক, আমার দিকে ফিরে বলল, তোর অ্যানালাইজিং ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে রে, মৈনাক, এই দেখ বলে অর্ক একটা জেল পেন নিয়ে প্রথমে নিজের ডানহাতের মধ্যমাতে লাগিয়ে, একটা কাগজে চোখের সামনে খাড়া করে তা দিয়ে একটা ছাপ দিল, আবার সেই একইজিনিশ আরেকবার নিজের বাঁহাতের মধ্যমা দিয়ে কাগজের আগের ছাপের ঠিক পাশেই আরেকটা ছাপ দিল। এইবারে দুটো ছাপ আমাদেরকে দেখিয়ে বলল, কি বুঝলি ?

আমরা এইবারে পরিষ্কার দেখলাম, ডানহাত দিয়ে কাগজটা খাড়া করে ছাপ দেওয়ার ফলে, সেটার নীচের দিকে একটা হালকা দাগ ডানদিকের নীচের দিকে ঘেঁষে হয়ে গেছে, আর ঠিক উল্টোটা হয়েছে বাঁহাত ব্যাবহার করার ফলে। অর্থাৎ, ডানহাত দিয়ে দেওয়ার ফলে সেটা একটু ডানদিক ঘেঁষা হয়েছে আর বাঁহাত দিয়ে করার ফলে, সেটা বাঁদিক ঘেঁষা হয়েছে। তারপরে অমিতে কপালের ফোঁটার দিকে তাকিয়ে দেখি, হ্যাঁ ঠিক ফোঁটার নীচের দিকটা একটু বাঁ দিক ঘেঁষা হয়ে গেছে।      

বলাবাহুল্য, এর পরে অর্কর অবজারভেশন পাওয়ার বা ওর অ্যানাজালিজিং ক্ষমতার ব্যাপারটা আমরা একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলাম। অর্কর জ্যেঠু ওকে প্রশ্রয় দিতেন এই ব্যাপারে। তবে ঘরে যতই, ডিসিপ্লিন থাক, তাতে  আমাদের  দুজনের  তাতে  কিছু  আসে  যায়  না।  আমাকেও খুব ভলোবাসে অর্কর বাড়ির লোকেরা। প্রতি  রবিবার  সকালে  আমরা দুজনে খেলার মাঠের ধারে, বটগাছের নিচে রকে বসে আড্ডা মারি। সবে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জীবনে ঢুকেছি, তাই এই আড্ডাটা মিস হলে যেন মনে হয় যে, কি একটা হারিয়ে গেল জীবন থেকে। এখন দুজনেরই কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে, তাও আমরা  দুজনেই  এই রবিবারের আড্ডার ব্যাপারে  খুব কমিটেড।

এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মা আরো দুবার তাড়া দিয়ে গেল, কি রে তোর চা খাওয়া হল ? - কি আর করব?  ভাগ্যে পেপারটা পড়া আর না লেখা থাকলে কি করার আছে? কিছু করার নেই, তাই খুব দ্রুত আমি খালি খবরের কাগজের হেডিং গুলোতে চোখ বোলাতে শুরু করে দিলাম, সেটা করতে গিয়েই প্রথম পাতার বাঁদিকের কলমের সবচেয়ে নীচে ছোট খবরটাতে চোখ গেল আটকে। খবরটা ছোট্ট, কিন্তু আমি জানি এর গভীরতা কতটা অর্কের কাছে। অর্কও নিশ্চয়ই পড়েছে। আসলে আমি জানি এধরনের খবরে অর্কর ছোট থেকেই খুব উৎসাহ। খবরটা আর কিছুই নয়, অনেকটা এরকম -  

“ বিশেষ প্রতিবেদন – শনিবার, ২৩শে, জানুয়ারী, কলকাতা -

এক অদ্ভুত প্রতারণার সাক্ষী থাকল আমাদের কলকাতা শহর, গতকাল শহরের নামী ব্যাবসায়ী মিঃ পিটার ডি'সুজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে রহস্যজনক ভাবে খোয়া যায় ৪৫ লক্ষ টাকা। পুলিশ সুত্রে খবর, এটি অত্যাধুনিক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির এক নিদর্শন। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা এই টাকা নেট ব্যাঙ্কিংএর মাধ্যমে মিঃ ডি’সুজার অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তর আমেরিকার ব্রিটিশ অধ্যুষিত অঞ্চল, কেম্যান আইল্যান্ডের এক বিদেশী ব্যাঙ্কে স্থানান্তরিত করে দিয়েছে। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা এই কেসে তদন্তও শুরু করেছে। কিন্তু কি ভাবে এতবড় ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ এখনো অন্ধকারে, যোগাযোগ করা হলে সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চএর স্পেশাল অফিসার জানিয়েছেন, বিষয়টি এখন তদন্তাধীন, তাই এই সবিস্তারে কিছু বলা যাবে না এই ব্যাপারে।

                         মিঃ ডি’সুজার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন তিনি কলকাতার এক নামী বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অস্ত্রপচারের জন্য। হাসপাতালে থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটায় পুলিশ-প্রশাসনও নড়ে চড়ে বসেছে। কারণ, এর আগে এরকম ঘটনার সাক্ষী কলকাতা হয়নি, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মিঃ পিটার ডি’সুজা কলকাতার নামী চা-ব্যাবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম, আসাম ও দার্জিলিং-এ ওনার কোম্পানীর প্রায় পাঁচটা টি-এস্টেট আছে। কলকাতার বো-ব্যারাকের আদি বাসিন্দা হলেও এখন বাইপাসের ধারে পরিবার সমেত ওনার নিজস্ব ফ্লাটেই থাকেন। এই ঘটনায় কলকাতার ব্যাবসায়ী মহলে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব, পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা এই ঘটনার তদন্ত শেষ করবে”।


আরো একবার পড়ার ইচ্ছে ছিল আমার খবরটা, কিন্তু তা কপালে আর সইল কোথায়? মা এসে মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলল- কি হল, তোর কি হল নাকি? অগত্যা, ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে চটজলদি, হাত-মুখ ধুয়ে বাজারের উদ্দ্যেশে বেরিয়ে পড়তে হল।


( ক্রমশ )  
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৮৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/০৩/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • প্রথমে পড়লাম দ্বিতীয় পর্ব, ভাল লাগলো...তাই উত্স এর সন্ধানে এসে প্রথম পর্ব পড়লাম । খুব ডিটেইলসে লেখা, তাই দৃশ্যায়ন সম্পূর্ণ হল...
  • সব প্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দার প্রথম গোয়েন্দাগিরির গল্পটা পরে বের হয়। সেই লাইনে অর্ক।এ গল্প নিয়ে এখন কিছুই বলা উচিত নয় , চুপচাপ পড়ে যাওয়াই উচিত , দেখে মনে হয় ৮-৯ এপিসোড চলবে।কিন্তু স্বভাব দোষে বলি, গায়ের রং নিয়ে মন্তব্য বা মনোভাব পোষণ ঠিক নয়। একটা রিডিং দেওয়া দরকার , কারণ কিছু টাইপো ইত্যাদি নজর এড়িয়ে গিয়েছে। খবরের কাগজের রিপোর্টিং এর ভাষা কিছুটা ম্যাটার অব ফ্যাক্ট হলে ভালো হয়।
    বাকি গল্প ঠিক এগোচ্ছে , পরের কিস্তির আশায় রইলাম।
    • ধন্যবাদ দেবব্রতবাবু, গায়ের রংটা নেহাতই বলা পাঠকচোখে অর্কর একটা কাল্পনিক চেহারা তৈরী করার জন্য। তবে মনোভাবটা মুছে দিলাম । টাইপোগুলোও ঠিক করে নিলাম ও রিপোর্টিংটাও একটু এডিট করে নিলাম। আশা করি এবারে ঠিক-ঠাক আছে।
  • অভিষেক মিত্র ০৬/০৩/২০১৬
    দারুণ শুরু হল শান্তনু দা।
  • দেবাশীষ দিপন ০৬/০৩/২০১৬
    অসাধারণ।
    জমজমাট।
    পরের পর্বের অপেক্ষায়...
  • প্রদীপ চৌধুরী. ০৫/০৩/২০১৬
    বা দারুণ লাগল
  • আজিজ আহমেদ ০৫/০৩/২০১৬
    চলুক অর্কের গোয়েন্দাগিরি।
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম শান্তনু।
  • নির্ঝর ০৫/০৩/২০১৬
    খুব সুন্দর
 
Quantcast