কাঠি
বন্ধুগণ, আজকে আপনাদের জানাব, কাঠি নামক এক বহুল প্রচলিত ও চর্চিত বস্তুর হালহকিকত। আশা করি এর মাধ্যমে কাঠি সম্পর্কে আপনাদের জ্ঞান আরো সমৃদ্ধ হবে, এবং আপনারা নতুন উদ্যমে কাঠির প্রয়োজনীয়তা, উপকার ও অপকার বুঝে একে যথাসাধ্য ব্যাবহার করা শুরু করবেন।
কাঠি হল একটি অত্যন্ত নিরীহ আবার একইসাথে সমগ্র পৃথিবীর বাঙালীজাতির সবচেয়ে ভীতির ও সবচেয়ে প্রীতির বস্তু । কাঠি সাধারণতঃ বহুপ্রকারের হয়ে থাকে । এই আলোচনা শুরু করতে গেলে, প্রথমেই একটি বিধিসম্মত সতর্কীকরণ বলে নেওয়া ভালো, যে একে এর আকারের দিক থেকে বিচার করতে যাবেন না । কাঠির আকার সম্পর্কে সাধারণের যা ধারণা, তা এর প্রভাবের সাথে খাপ খাবে না।
কাঠি বললে প্রথমেই আমাদের যা মনে পড়ে তা হল, ঝাঁটার কাঠি। ঝাঁটার কাঠির একতায় তৈরী ঝাঁটা শুধু ঘর-দোর পরিষ্কারই করে না, দরকারে অপ্রিয় লোক, পাওনাদার, বিশেষ করে বাড়িওয়ালাদের তাড়াতে আঁশবটির ভালো বন্ধু বা বিকল্প হয়ে থাকে। এছাড়া আরো বিভিন্নরকম কাঠি্র র্প্রয়োগ এ জগতে দেখতে পাওয়া যায় যেমন, ঢাকের কাঠি, দেশলাই কাঠি, বাঁশকাঠি, আঁকের কাঠি, কাঠি বিসকুট, কাঠির মতো লোক, আঁড়কাঠি, পিছন-কাঠি, মন-কাঠি ইত্যাদি। এদের মধ্যে অবশ্য শেষোক্ত কাঠিগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে সেই পুরাকাল থেকে। বলা যায়, শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের অকালবোধনের পর থেকেই কাঠির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় । অপরদিকে ভারতবর্ষের প্রথম সফল রাজনীতিবীদ হিসাবে ভারতীয় রাজনীতিতেও তিনি সর্বপ্রথম কাঠির প্রচলন করেন । আজ আমরা তা গর্বের সাথে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে রপ্তানি করে চলেছি ।
তবে উত্তর কলিকালে একমাত্র বাঙালীজাতিই এই কাঠির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে । বাঙালীর কাঠির প্রতি ভালোবাসার শুরু সেই অকালবোধন থেকেই । ঢাকের কাঠির বোল আমাদের মন উদ্বেলিত করে প্রথম । তারপর একে একে, আইসক্রীম, হাওয়াই, ব্যোমচাটনী, আচারের মাধ্যমে এর জয়জয়কার শুরু । এখন বাঙালীর স্থান কাল পাত্র ভেদে এর উপস্থিতি সর্বত্র বিদ্যমান ।
বাঙ্গালী কবিদেরজনপ্রিয়তার পিছনেও আমাদের কাঠির হাত কম নেই, কাঠি নিয়ে প্রচুর কবিতা লেখা হয়েছে। নীচে উদাহরণ দিলে কাঠির কাব্যিক ভাব কিছুটা হলেও বোঝানো যাবে।
কবি সুকান্ত দেশলাই কাঠি নিয়ে লিখেছিলেন -
"আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি এত নগণ্য,
হয়তো চোখেও পড়ি না, তবু জেনো মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ- বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।"
আবার কবি, অমল বাওয়ালীতো কলমের অভাবে পোড়া দেশলাই কাঠি দিয়েই মেঝেতে কবিতা ও গান লিখতেন। বুঝুন, তবে সামান্য দেশলাই কাঠির প্রভাব। কবি তিলোত্তমা মজুমদারও কবিতায় কাঠি দিয়ে অনেক আঁকি-বুঁকি এঁকেছেন।
আবার, অপরদিকে কাঠিকেও জনপ্রিয় করে গেছেন আমাদের কবিরা, একে অপরকে কাঠি দিয়ে, কাঠি করে। তাই বলা যায় আমরা যথার্থ অর্থেই কাঠি দিয়ে লিখেছি, আবার যথাস্থানে দেওয়াও হয়েছে। বলাবাহুল্য কিছুগুলি জায়গায় পড়েছে, কিছু পড়েনি, কিন্তু যেগুলো ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে পড়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় প্রভাব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আধুনিক কাব্যজগতের কাব্য শিরোমণি কবি জীবনানন্দ দাশ কাঠির কাব্যিক রূপ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে।
কথায় বলে যেখানে প্রীতি, সেখানেই ভীতি, এখানেও এর বিরুদ্ধাচরণ নেই। রামচন্দ্র সর্বপ্রথম সুগ্রীব ও বিভীষণকে দিয়ে রাজনীতিতে কঠির সূচনা করেন । এর সুফল ভারতবাসী, বিশেষকরে বাঙালী আজো ভুগে চলেছে । কলিকালে একে মান্যতা দেন জনৈক মীরজাফর নামক এক বাঙালী, যা ইতিহাসের অভিধানে বিশ্বাসঘাতক শব্দটির একটি নতুন প্রতিশব্দ বসাতে সাহায্য করে। তবে উত্তর আধুনিককালে, দৃশ্যমান কাঠির থেকে অদৃশ্যকাঠির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, বাঙালী সংসার থেকে অফিস, অফিস থেকে সমকালীন রাজনীতিতে এর ব্যাবহারে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে । বর্তমানে এ এক শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়ে উঠেছে । এটাই সম্ভবত প্রথম শিল্প, গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকেও বহুচর্চিত এর প্রভাব । এর প্রভাব থেকে কেউ মুক্ত নয়, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলা টেলিসিরিয়ালের জনপ্রিয়তাই। বাংলা টেলিসিরিয়াল দেখলে বোঝা যায় আধুনিক বাঙ্গালী, কতটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এর ব্যাবহার করতে শিখেছে।
তবে এর একটা ভালো দিকও আছে, কাঠির প্রভাব নিজের জীবনে খুব কাছ থেকে দেখার অনুভবে এত কষ্ট করে এই নিয়ে রচনা লিখে ফেললাম । আপনাদের কেমন লাগল জানাবেন এবং আশা করি ভবিষ্যতে এর কুশলী ব্যাবহার করে এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন ।
কাঠি হল একটি অত্যন্ত নিরীহ আবার একইসাথে সমগ্র পৃথিবীর বাঙালীজাতির সবচেয়ে ভীতির ও সবচেয়ে প্রীতির বস্তু । কাঠি সাধারণতঃ বহুপ্রকারের হয়ে থাকে । এই আলোচনা শুরু করতে গেলে, প্রথমেই একটি বিধিসম্মত সতর্কীকরণ বলে নেওয়া ভালো, যে একে এর আকারের দিক থেকে বিচার করতে যাবেন না । কাঠির আকার সম্পর্কে সাধারণের যা ধারণা, তা এর প্রভাবের সাথে খাপ খাবে না।
কাঠি বললে প্রথমেই আমাদের যা মনে পড়ে তা হল, ঝাঁটার কাঠি। ঝাঁটার কাঠির একতায় তৈরী ঝাঁটা শুধু ঘর-দোর পরিষ্কারই করে না, দরকারে অপ্রিয় লোক, পাওনাদার, বিশেষ করে বাড়িওয়ালাদের তাড়াতে আঁশবটির ভালো বন্ধু বা বিকল্প হয়ে থাকে। এছাড়া আরো বিভিন্নরকম কাঠি্র র্প্রয়োগ এ জগতে দেখতে পাওয়া যায় যেমন, ঢাকের কাঠি, দেশলাই কাঠি, বাঁশকাঠি, আঁকের কাঠি, কাঠি বিসকুট, কাঠির মতো লোক, আঁড়কাঠি, পিছন-কাঠি, মন-কাঠি ইত্যাদি। এদের মধ্যে অবশ্য শেষোক্ত কাঠিগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে সেই পুরাকাল থেকে। বলা যায়, শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের অকালবোধনের পর থেকেই কাঠির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় । অপরদিকে ভারতবর্ষের প্রথম সফল রাজনীতিবীদ হিসাবে ভারতীয় রাজনীতিতেও তিনি সর্বপ্রথম কাঠির প্রচলন করেন । আজ আমরা তা গর্বের সাথে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে রপ্তানি করে চলেছি ।
তবে উত্তর কলিকালে একমাত্র বাঙালীজাতিই এই কাঠির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে । বাঙালীর কাঠির প্রতি ভালোবাসার শুরু সেই অকালবোধন থেকেই । ঢাকের কাঠির বোল আমাদের মন উদ্বেলিত করে প্রথম । তারপর একে একে, আইসক্রীম, হাওয়াই, ব্যোমচাটনী, আচারের মাধ্যমে এর জয়জয়কার শুরু । এখন বাঙালীর স্থান কাল পাত্র ভেদে এর উপস্থিতি সর্বত্র বিদ্যমান ।
বাঙ্গালী কবিদেরজনপ্রিয়তার পিছনেও আমাদের কাঠির হাত কম নেই, কাঠি নিয়ে প্রচুর কবিতা লেখা হয়েছে। নীচে উদাহরণ দিলে কাঠির কাব্যিক ভাব কিছুটা হলেও বোঝানো যাবে।
কবি সুকান্ত দেশলাই কাঠি নিয়ে লিখেছিলেন -
"আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি এত নগণ্য,
হয়তো চোখেও পড়ি না, তবু জেনো মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ- বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।"
আবার কবি, অমল বাওয়ালীতো কলমের অভাবে পোড়া দেশলাই কাঠি দিয়েই মেঝেতে কবিতা ও গান লিখতেন। বুঝুন, তবে সামান্য দেশলাই কাঠির প্রভাব। কবি তিলোত্তমা মজুমদারও কবিতায় কাঠি দিয়ে অনেক আঁকি-বুঁকি এঁকেছেন।
আবার, অপরদিকে কাঠিকেও জনপ্রিয় করে গেছেন আমাদের কবিরা, একে অপরকে কাঠি দিয়ে, কাঠি করে। তাই বলা যায় আমরা যথার্থ অর্থেই কাঠি দিয়ে লিখেছি, আবার যথাস্থানে দেওয়াও হয়েছে। বলাবাহুল্য কিছুগুলি জায়গায় পড়েছে, কিছু পড়েনি, কিন্তু যেগুলো ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে পড়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় প্রভাব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আধুনিক কাব্যজগতের কাব্য শিরোমণি কবি জীবনানন্দ দাশ কাঠির কাব্যিক রূপ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে।
কথায় বলে যেখানে প্রীতি, সেখানেই ভীতি, এখানেও এর বিরুদ্ধাচরণ নেই। রামচন্দ্র সর্বপ্রথম সুগ্রীব ও বিভীষণকে দিয়ে রাজনীতিতে কঠির সূচনা করেন । এর সুফল ভারতবাসী, বিশেষকরে বাঙালী আজো ভুগে চলেছে । কলিকালে একে মান্যতা দেন জনৈক মীরজাফর নামক এক বাঙালী, যা ইতিহাসের অভিধানে বিশ্বাসঘাতক শব্দটির একটি নতুন প্রতিশব্দ বসাতে সাহায্য করে। তবে উত্তর আধুনিককালে, দৃশ্যমান কাঠির থেকে অদৃশ্যকাঠির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, বাঙালী সংসার থেকে অফিস, অফিস থেকে সমকালীন রাজনীতিতে এর ব্যাবহারে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে । বর্তমানে এ এক শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়ে উঠেছে । এটাই সম্ভবত প্রথম শিল্প, গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকেও বহুচর্চিত এর প্রভাব । এর প্রভাব থেকে কেউ মুক্ত নয়, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলা টেলিসিরিয়ালের জনপ্রিয়তাই। বাংলা টেলিসিরিয়াল দেখলে বোঝা যায় আধুনিক বাঙ্গালী, কতটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এর ব্যাবহার করতে শিখেছে।
তবে এর একটা ভালো দিকও আছে, কাঠির প্রভাব নিজের জীবনে খুব কাছ থেকে দেখার অনুভবে এত কষ্ট করে এই নিয়ে রচনা লিখে ফেললাম । আপনাদের কেমন লাগল জানাবেন এবং আশা করি ভবিষ্যতে এর কুশলী ব্যাবহার করে এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২২/১২/২০১৫
-
জে এস সাব্বির ২২/১২/২০১৫প্রবন্ধে কবিতার ধাঁচ ।মনের ভাব ফুটে উঠেছে তো তাইই বোধ করি ।
কাঠি নিয়া লেখাটা দারুণ ।ইতিহাস-রাজনীতি-বাস্তবতা সবকিছু মিলিয়ে একবহুত সুন্দর রম্যরচনা লিখেছেন । -
অভিষেক মিত্র ২১/১২/২০১৫ফাটাফাটি লিখেছেন শান্তনু দা।
-
আজিজ আহমেদ ২১/১২/২০১৫শান্তনু খুব ভাল লিখেছো।
তবে লেখাটির tune অনুযায়ী আর একটু বেশি sarcastic হতে পারতো।
শেষের দিক টা সেই দিকেই গেছে।
"কাঠি করা বা কাঠি দেওয়া" একটা নেগেটিভ অভ্যাস বাঙালীর।
সেটা হাসির ছলে ভালই বলেছো। -
মৌলী দাস ২১/১২/২০১৫শান্তনু দার প্রবন্ধ কাঠি ভীষণ ভাল লাগল ।বার্তা বহুল তো বটেই ।
-
দেবব্রত সান্যাল ২১/১২/২০১৫চমত্কার ! কাঠিকে এমন সুন্দর ভাবে পরিবেশন করা ! শুধু একজন অভিজ্ঞ বাঙালী লেখকই পারেন।
তুমি কাঠি বিষয়ে লিখিয়া,
কাঠিকে দিয়েছো মহাশয় বানাইয়া।
হৃদয় যাহা করিতে চাহে,
করিতে দেও তাহে,
বসিয়া কভু থাকিও না চুপ করিয়া।
লিখিতে থাকিও এমনি করিয়া।
অনুরোধ, ওহে মোর প্রিয় শান্তনু ভাইয়া।