www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চোরকাঁটা - ১৬ পর্ব ( শেষ পর্ব )

( আগের সঙ্খ্যার পর )


পরাণদা মুখ কাঁচুমাচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিছুই বলছে না দেখে, অর্ক বলল – আচ্ছা ঠিক আছে, আমিই না হয় বলছি, আসলে সেদিন পরাণদার দোকান থেকে আবার বেড়িয়ে আসার সময়, হঠাৎ এই জিনিশটা দেখতে পেলাম, পরাণদার দোকানের এক কোনায় পড়ে আছে, যেন কেউ পুরো ঘর ঝাড় দিয়ে এক কোনায় রেখে দিয়েছে, বলে অর্ক, পকেট থেকে একটা প্ল্যাস্টিকের পাউচ বার করে মিঃ কুণ্ডু ও কাকলি দেবীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, দেখুন তো মিঃ কুণ্ডু বলতে পারবেন এই জিনিশটা কি ? আমরা সবাই দেখলাম প্যাকেটটাতে কালো রঙের পাউডার জাতীয় কিছু আছে...

মিঃ কুণ্ডু জিনিশটা দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে বললেন, যে এতে আর বোঝার কি আছে, এতো ব্যাকালাইট পাউডার।

হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, আপনার তো নিজের ব্যাকালাইট কারখানা আছে ঘরে, তাই তো আপনাকে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত বোধ করলাম, অর্ক মিষ্টি করে হেসে বলল – আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম এই ভেবে পরাণদার দোকানে এই জিনিশ কোথা থেকে আসবে... তো বুঝতেই পারছেন অনুসন্ধানীর মন তো, আবার ভালো করে চারিদিকে দেখতে লাগলাম, যদি অন্য কিছু পাওয়া যায়... তো খেয়াল করলাম, পায়ের ছাপ গুলো যে বিভিন্ন দিকে গেছে, তার প্রত্যেকটা শেষ হয়েছে, দোকানের তাকে সাজানো ফুচকার কোনও না কোনও জলের হাঁড়ির কাছে। আমিও পদাঙ্ক অনুসরণ করে সব কটা হাঁড়ি চেক করতেই এই লাল ও হলুদ শালুকাপড়ে মোড়া ছোটো ছোটো বাক্স গুলো পেলাম। এই বলে দুটো ছোটো বাক্স অর্ক ভদ্রদাকে দিয়ে বলল – দেখুনতো ভদ্রদা, এর মধ্যে কি আছে, বুঝতে পারছেন কিনা?

লাল কাপড় ছাড়িয়ে, একটা বাক্স খুলতেই প্ল্যাস্টিকের পাঊচে মোড়া কিছু হাজার টাকার নোট ও হলুদ কাপড়ের অপরটা থেকে কিছু পাঁচশো টাকার নোট পাওয়া গেলো। ভদ্রদা গুণতে যেতেই, অর্ক বলল, আমি গুণে নিয়েছি, প্রত্যেক লাল কাপড়ের বাক্সে পঞ্চাশ হাজার টাকা ও হলুদ কাপড়ের বাক্সে পঁচিশ হাজার টাকা আছে। অর্থাৎ, প্রত্যেক বাক্সে পঞ্চাশটা করে নোট রাখা হয়েছে।

এরকম কতোগুলো বাক্স ছিল? আমি জিজ্ঞাসা কোড়টেঈ অর্ক বলল – আমি মোট দশটা লাল বাক্স ও কুড়িটা হলুদ বাক্স পেয়েছি, অর্থাৎ হাজার ও পাঁচশো মিলিয়ে মোট দশ লাখ টাকা ওই ফুচকার জলের হাঁড়িতে চোবানো ছিল।

ওহহহহ... মাই গড... ভদ্রদার চক্ষু চরকগাছ করে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন – আরে একই, এত জাল নোট মনে হচ্ছে অর্ক বাবু...সাথে সাথে অর্ক বলে উঠল, হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আমিও নোট চেকিং মেশিনে টেস্ট করিয়ে দেখে নিয়েছি, আর আমার মনে হয়, এটা প্রতি সপ্তাহের কোটা...কি পরাণ দা ঠিক বলছি তো ?

পরাণদা কোনও উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি আর উত্তেজনা চাপতে না পেরে বললাম, মানে এর থেকে কি বোঝা যায় ? আমার মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে অর্ক বলে উঠল, এর থেকে এটাই বোঝা যায় যে, পরাণদা জাল নোটের কারবারের সাথে যুক্ত বা আরও পরিষ্কার করে বললে জাল নোট বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেবার কাজের দায়িত্ব ছিল পরাণদার উপরে, আর ওর দোকানটা ছিল স্টোর রুম।

কিন্তু তাহলে এর আসল কালপ্রিট কে? ভদ্রদার জিজ্ঞাসু মুখের দিকে তাকিয়ে অর্ক বলে উঠল- আমাদের কি সৌভাগ্য যে জাল নোটের কারবারীও আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত। এই বলে অর্ক সোজা মিঃ কুণ্ডুর মুখের দিকে তাকিয়ে কঠোর ভাবে তাকিয়ে বলল – কি মিঃ কুণ্ডু ... আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ধরা পড়ে গেছেন, আর কিছু লুকিয়ে লাভ হবে না। নিন আর সময় নষ্ট না করে অপরাধ স্বীকার করুন।

কিন্তু তারপর যা হল, তার জন্য আমি অন্তত একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই, দেখি মিঃ কুণ্ডু তড়াক করে এক লাফ মেরে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েই পকেট থেকে একটা রিভলবার বার করে সোজা অর্কর দিকে তাক করে বললেন - অনেকক্ষণ তোমার বক বক শুনেছি ছোকরা, বাজে বকার একটা লিমিট আছে হে, এবারে আমি যাচ্ছি , দেখি কে আটকায় আমাকে? এই বলে কাকলি বউদি কে হাত ধরে এক হ্যাঁচকা টান মেরে উঠিয়ে দিয়ে বললেন – চল, সোজা দেখি কে আটকায়?

আমি এবারে ভদ্রদার দিকে তাকাতেই দেখলাম, ভদ্রদা আপ্রান চেষ্টা করছেন, নিজের পুলিশী পিস্তল বার করতে, কিন্তু তার আগেই হঠাৎ এক বিকট গুলির শব্দ কান ঝালাপালা করে দিল, আর পরমুহূর্তেই দেখলাম, মিঃ কুণ্ডু মাটিতে হাত ধরে বসে পড়েছেন, তার হাত থেকে রক্ত বেরচ্ছে, আর পিস্তল ছিটকে গিয়ে পড়েছে প্রায় দশ ফুট দূরে। আরও অবাক হলাম যখন অর্কর বজ্রকঠিন গলার স্বর শুনলাম, মিসেস কুণ্ডু, স্টপ, আই সে স্টপ, আপনি কিন্তু আমাকে আবার বাধ্য করছেন গুলি চালাতে।

আমি চোখ কচলে দেখলাম, অর্কর হাতে নতুন এক কালো ছোট্ট আগ্নেয়াস্ত্র চকচক করছে, আর কাকলি বউদি, ওই অবস্থাতেও স্বামীকে ছেড়ে হনহন করে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, অর্কর শেষ কথা শুনে ঘুরে মাটিতেই বসে পড়লেন।

ভদ্রদার অনুচরেরা ততক্ষনে হাজির, তারা সাথে সাথে মিঃ তমাল কুণ্ডুকে হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়ে দরজার কাছে দাঁর করিয়ে দিলেন, হাতে গুলি খেয়ে মিঃ কুণ্ডু বাঘরূপ থেকে একেবারে যেন কেঁচো হয়ে গেলেন।

ঘরে যেন পিন পরার শব্দও শোনা যাবে, সেই নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে পাকরাশী জ্যেঠু প্রথম কথা বললেন, কিন্তু অর্ক এত যেন কেঁচো খুরতে কেউটে বেরল...সেব্যাপারে তোমায় পরে জিজ্ঞাসা করছি, কিন্তু কেঁচোর কি হল?
অর্ক হাসতে হাসতে বলে উঠল, ঠিক বলেছেন জ্যেঠু , প্রথম যখন আমি বুঝতে পারি আমিও সেই কথাই ভাবছিলাম, যাই হোক, এবারে আসল অপরাধীর কথায় আ্সছি, তার আগে, ভদ্রদা আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই যে, এই জাল নোটের কারবার গত প্রায় দশ বছর ধরে করে এসেছেন এই আমাদের পাড়ার অতি পরিচিত প্রমোটার মহাশয় মিঃ কুণ্ডু তার নিজের ব্যাকালাইট এর কারখানার আড়ালে। আমি নিজের চোখে কাল রাত্রে দেখে এসেছি, তাই আপনাকে অনুরধ করব, এক্ষুনি, নিজের লোকজন পাঠিয়ে ওখানকার লোকজনদেরকে অ্যারেস্ট করুন, ওই কারখানা সীল করে দিন, আর ওনাদের মোবাইল গুলো এক্ষুনি নিয়ে নিন, যাতে কোনওরকম চালাকি না করতে পারে, এইব্যাপারে আমরা পরে কথা বলব।

অর্কর নির্দেশের দু মিনিটের মধ্যেই ভদ্রদা একবার নিজের উপরতলাকে জানিয়ে, অনুমতি নিয়ে নিলেন আর তারপর থানায় ফোন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে অর্কর দিকে তাকিয়ে বললেন আরও লোক লাগবে নাকি মশাই? আপনি তো কামাল করে দিচ্ছেন। যাই হোক আসল আমাদের মানে অবিনাশবাবুদের অপরাধীর কথা বলুন।

কথাটা বলা মাত্র আমার চোখ ওনাদের দিকে ঘুরে গেলো, দেখলাম এত কিছু ঘটে গেলো, চোখের সামনে, তাও কেমন যেন ওনারা দুজনেই ভাবলেশহীন মুখে অর্কর দিকে তাকিয়ে বসে আছে। অর্করও চোখ এরালো না ব্যাপারটা, অর্ক তমালিকাদেবীর দিকে তাকিয়ে বলল, সরি, তমালিকাদেবী, আমাকে এটা আগে করতে হতো, নাহলে, আমাদের আসল অপরাধীর অপরাধের কানেকশনটা ঠিক বোঝাতে পারতাম না।

তার মানে ? আমাদের অপরাধীর সাথেও কি এই জাল নোট কারবারীদের যোগাযোগ আছে? অবিনাশ বাবু আর কৌতুহল চেপে রাখতে পাড়লেন না। অর্ক শান্ত ভাবে বলল- শুধু খালি যোগাযোগ নয় মশায়, নিবির সম্পর্ক আছে...মানে...? আমি আর ভদ্রদা একসাথে বিস্মিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম।
অর্ক ওর ডান হাতের তর্জনী দিয়ে ঘরের মধ্যে আর একজনের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল – কি ? এবারেও আশা করি ঠিক বলছি আমি? আপনার কিছু বলার আছে ?

আমাদের আবার অবাক হবার পালা, তমালিকাদেবী আর্ত স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বললেন, কি বলছেন যাতা অর্ক বাবু, এ হতে পারে না, এ কি করে সম্ভব? আপনি এ কি বলতে চাইছেন ?

অর্কর হাতের দিকনির্দেশ অবলম্বন করে তাকিয়ে চমকে উঠতে হল, একি অর্ক তো সোজা কাকলি বউদির দিকে আঙুল তুলেছে। আমার মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করে উঠল। সাথে সাথে ভদ্রদার নির্দেশে মহিলা কনস্টেবল এসে ওনাকে হাতকড়া পরিয়ে দিয়ে গেলো। কাকলি বউদি পুরো স্পিকটি নট যাকে বলে। আমার তো ব্যাপারটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। অর্ক বলে উঠল, ক্ষমা করবেন বউদি, আপনার চুপ থাকা এটাই প্রমাণ করে যে আমার ধারনা অভ্রান্ত। এবারে সত্যিটা কি আপনি স্বীকার করবেন নাকি আমি...

অর্ক আরও এগনোর আগেই কাকলি হঠাৎ ডুক ছেড়ে জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন, তারপরই আবার দুমিনিটের মধ্যেই একেবারে ঠাণ্ডা ও শান্ত স্বরে বলে উঠলেন, হ্যাঁ আমি স্বীকার করছি, আমার সমস্ত অপরাধ স্বীকার করছি। আমি ক্লান্ত, অসহায়, আপনারা আমায় যা শাস্তি দেবেন, তা আমি মাথা পেতে নিতে রাজী আছি। আমার কাছে আর কিছু জানতে চাইবেন না, আমি বলতে পারব না, প্লীস... কিছু বুঝে ওঠার আগেই, দেখলাম, তমালিকা দেবী কাছে গিয়ে কাকলি বউদির গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিয়ে ওনার হাত ধরে চিৎকার উঠলেন- মানে, আপনি, আপনিই আমার মেয়েকে খুন করেছেন? কিন্তু কেন কি অপরাধ করেছিল ও? বলুন আমাকে, আপনাকে বলতেই হবে আজ। কাকলি বউদি উত্তরে নিরুত্তর হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মুখ ঢেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।

অর্ক হাত উঠিয়ে বলল-বসুন আপনি তমালিকাদেবী শান্ত হয়ে, আমি বলছি, ওনাকে ছেড়ে দিন। পাকরাশী জ্যেঠিমা আর মিঃ সান্যালের স্ত্রী দুজনে মিলে তমালিকা দেবীকে শান্ত করে ওনাকে নিজের জায়গায় বসিয়ে দিলেন।
পাকরাশী জ্যেঠু এবারে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বললেন, অর্ক আমরা তো সবই জানলাম, কিন্তু এবারে আমাদেরকে বল, কেন বা কিভাবে এই ঘটনা ঘটল...আমি যতদূর জানি ওনারা তো এই দিন দশেক আগেও কেউ কাউকে চিনতেন না। তাহলে এর মধ্যে এমন কি হল যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেলো।

অর্ক হেসে বলল – জ্যেঠু, এ হল চোরকাঁটা , বুঝলে, চোরকাঁটা ...
আমরা সমস্বরে একসাথে চেঁচিয়ে উঠলাম -মানে ? অর্ক মুচকি হেসে বলল – সেদিকে তোকে বলছিলাম না, মৈনাক, আরে বাবা, কেন দেখিস নি মৈনাক, খেলার সময়, চোরের মত আমাদের প্যান্টে, মোজায় যখন এই কাঁটা লেগে যেত, প্রথমে আমরা বুঝতেই পারি না, তারপর আমরা জ্ঞানত একে কে তুচ্ছ বলে, অবজ্ঞা করি, কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে, কখন যে এই তুচ্ছ জিনিশই ক্রমাগত খোঁচা দিয়ে দিয়ে খেলার দফা রফা করে দেয়, বোঝাই যায় না। আরও মজার ব্যাপার, যখন খেলা বন্ধ করে এদেরকে মোজা আর প্যান্ট থেকে বার করতে হতো, সেই সময়টা দেখার মত, এগুলো গায়ে লেগে যায় খুব সহজে, কিন্তু ছাড়াবার সময় আর সহজে ছাড়ানো যায় না।

ভদ্রদা, চোখ গোলগোল করে জিজ্ঞাসা করে উঠলেন, ও মশাই, কি বলছেন কি, এর সাথে কিসের সম্পর্ক? অর্ক মাথা নাড়িয়ে বলল – হুম ঠিক বলেছেন, সম্পর্ক কথাটা যত সহজ, মানেটা ঠিক তত নয়, এই পৃথিবীতে কার সাথে কার কি সম্পর্ক হবে সেসব আমরা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছি, যদি এর অন্ন্যথা হয়, তাহলেই বিপদ।

আমি আর থাকতে না পেরে বলে উঠলাম, কি সব আবোল তাবোল বলছিস ? পরিস্কার করে বল না।

অর্ক এবারে সিরিয়াস গলায় বলে উঠল, ওই যে আমাদের সাথে চোরকাঁটার যা সম্পর্ক, কাকলিবউদির সাথে এই হত্যারও সেই সম্পর্ক। আমরা যেমন চোরকাঁটা লাগলে উপড়ে ফেলে দি, তেমনই কাকলি বউদিও চোরকাঁটা সম মুকুলিকাকে তার জীবন থেকে সরিয়ে উপড়ে ফেলেছে। তমালিকাদেবী এতক্ষন চুপ করে শুনছিলেন, এবারে থাকতে না পেরে, অর্কর দিকে ফিরে বললেন, কি ব্যাপার অর্কবাবু? আমার মেয়ে কি ভাবে ওনার জীবনে চোরকাঁটা হয়ে উঠেছিল, আমরা তো ওনাদেরকে চিনতাম না কোনোদিন।
অর্ক শান্ত গলায় বলল- ঠিক বলেছেন, কিন্তু কাকলি দেবী চিনতে পেরেছিলেন যে, যাই হোক, আমি বলছি তবে তার আগে ভদ্রদা আপনার লোক দিয়ে কাকলি বউদির বাড়ি গিয়ে ওনার বোনের কাছ থেকে পুরনো অ্যালবামটা নিয়ে আসা করান এক্ষুনি, ততক্ষনে আমি একটা গল্প শোনাই আপনাদের।
ভদ্রদা ফোনেই অর্কর নির্দেশ মত কাজ করতে বলে দিয়ে বললেন, পাঁচ মিনিটে হাজির হবে ... এবারে বলুন।

অর্ক গলাটা একবার কেশে শুরু করল, গল্পটা অনেক দিন আগের, সদ্য নতুন বিয়ে হয়ে আসা এক যুবতীর গল্প। স্বামী তার পয়সাওয়ালা, বউকে খুব ভালবাসে, এবং আপাত দৃষ্টিতে তার কোনও অসুবিধা নেই, শ্বশুরবাড়ির চোখের মণি সবার। সুন্দরী যুবতী, কিন্তু একটাই প্রবলেম, স্বামীর ব্যাবসা ও রাজনীতি নিয়ে থাকা। পাড়ার নেতা, তাই ঘরের প্রতি সময় কম। বউএর প্রতি আরও কম। টাকার নেশায় স্বামী বাড়িতেই ব্যাকালাইটের কারখানা খোলে, দিনরাত কাজ হয়। সময় আরও কমে যায়। ঘরে একা বউ বড় আসহায় বোধ করে। যে মেয়ে সারাজীবন স্কুল-কলেজে সমস্ত ছেলের অ্যাটেনশন পেয়ে এসেছে, তার কাছে ব্যাপারটা হজম করা বেশ শক্ত... আর বিশেষ করে সেই মেয়ে যদি, স্বাধীনচেতা, ও একগুঁয়ে হয়। এই অবস্থায়, কোনও একদিন, সে পরিচিত হয় পাড়ার এক বখাটে ছেলের সাথে, সৌজন্য তার স্বামী, সেই ছেলেটি, তার স্বামীর হয়ে বিভিন্ন অপরাধমুলক কাজ করে যা সে পরে জানতে পারে।

স্বামীর অবর্তমানে সেই ছেলেটির সাথেই সে ঘরে সময় কাটায়...তার স্বামীর ব্যাবসার সমস্ত খুঁটিনাটি সে জানতে পারে...এই ভাবে অনেক সময় চলে যায়, কিন্তু স্বামী তাকে ভালবাসলেও, তার নিজের মত করে সে স্বামীকে পায় না।

ধীরে ধীরে তাদের দুজনার মধ্যে এক সম্পর্ক জন্ম নেয় যা আমাদের সমাজের ভাষায়, অবৈধ...এইভাবে অনেক দিন যাবার পরে হঠাৎ সে আবিষ্কার করে যে সে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে, ঘটনাচক্রে সেকথা মেয়েটির স্বামীও জেনে যায়, কিন্তু যতক্ষণে তা সবার নজরে আসে, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাই লোকজন বা সমাজের চাপে মেয়েটির স্বামী বাধ্য হয় স্ত্রীর অবৈধ গর্ভ মেনে নিতে, কারণ সেও যে তার সুন্দরী স্ত্রীকে আসম্ভব ভালো বাসে। কিন্তু একটা শর্ত সে দুজনকেই দেয় যে, সন্তান জন্মাবার সাথে সাথে সেটাকে মেরে ফেলতে হবে বা কোথাও দূরে ফেলে রেখে আসতে হবে। ছেলেটিকে সে প্রথমে মারধর করলেও, ছেলেটির বিধবা মায়ের কাকুতি মিনতিতে সে তাকে ছেড়ে দেয়, কিন্তু তাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে সমস্ত কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়। পরে ছেলেটি ঐ টাকা পয়সা দিয়ে ফুচকার দোকান দেয় বাজারে। পরে কোনও সময় ওদের নিজেদের মধ্যে আবার কোনও রফা হয়, এবং ফুচকার দোকানটাকেই নিজের জাল নোটের কারবারের স্টোর রুম বানিয়ে ছাড়ে যুবতীর স্বামী।

ঘরে যেন তখন আবার নিস্তব্ধতার কালো মেঘ বিরাজ করছে... অর্ক বলে চলেছে- যথা সময়ে সেই যুবতী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়, কিন্তু হায়, কি তার ভাগ্য, তার স্বামী ও প্রেমিক, দুজনে একসাথে গিয়ে ঘন কালো রাতের অন্ধকারে তাকে রেখে আসে, বেলেঘাটার এক অনাথ আশ্রমের সিঁড়িতে, জন্মানোর সাত দিনের মধ্যেই। অপরাধবোধএর তারনায় নাকি, নিজেও মন থেকে কোনওদিন মেয়েকে মেনে নিতে পারেনি মা, তাই তার খোঁজ ও কখনো করেনি সে...পারিবারিক, মানসিক, আত্মিক সুখে সে তখন রোমাঞ্চিত, যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে সে, বিচক্ষনতার সাথে এর পর থেকেই সংসারএর রিমোটকন্ট্রোল নিজের হাতে নিতে আর দেরি করেনি সে, এক দিকে স্বামী, অপরদিকে সংসার, আর আরেকদিকে স্বামীর অপরাধী ব্যাবসা সব নিজের হাতে দেখাশোনা করতে লাগলো সে, আর হয়ে উঠল চুরান্ত ব্যাভিচারিনী... স্বামীর সঙ্গ না পেলেই পুরনো প্রেমিকের সাথেও আদিম রিপুর খেলায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিল, তারপর আস্তে আস্তে বিলাসবহুল জীবনজাপন আরম্ভ করে দেয় সে। ধীরে ধীরে সেই হয়ে ওঠে বাড়ির ও ব্যাবসার হর্তা, কর্তা ও বিধাতা।

সবকিছুই মন মত চলছিল, কিন্তু বাধ সাধল, এগারবছর পড়ে পাড়াতে এক নতুন পরিবার তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকতে আসায়। ঘটনাচক্রে, ওদের সামনের বাড়িতেই...নতুন পরিবার ভাড়া নিয়ে থাকতে এলো... এমনিতে সবই ঠিকঠাক, কিন্তু দশ বছরের ছোট্ট মেয়েকে দেখেই, তার চোখ ছানা বড়া হয়ে গেলো... এ কি করে হয়, এ ও কি সম্ভব, ...
এই বলে অর্ক চুপ করতেই, দেখি, ভদ্রদার লোক এসে অর্কর হাতে অ্যালবামটা দিয়ে গেলো। আমি সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে একবার দেখলাম, এবং বুঝতে পারলাম যে অর্কর গল্প সবাই মুগ্ধ হয়ে মন দিয়ে শুনছে, এবং এতই সহজ ভাবে অর্ক বলছে যে গল্পের কুশীলবদের চিনতে আমাদের কারও কোনও আসুবিধা হচ্ছে বলে মনে হল না।

অর্ক অ্যালবাম থেকে অনেক পুরনো একটা ছবি বার করে তমালিকা দেবী ও অবিনাশ বাবুর দিকে এগিয়ে বলল – দেখুন তো একে চিনতে পারেন কিনা। ফটো দেখে অবিনাশবাবু ও তমালিকা দেবী দুজনেই হাঁ করে অর্কর দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন, তারপর তমালিকাদেবী বলে উঠলেন, এত আমার মুকুলিকার ছবি, কিন্তু এরকম কোনও ছবিতো আমরা তুলি নি, এই ছবি উনি কোথা থেকে তুললেন?

আমরাও এটাই আশা করেছিলাম এতক্ষনে, কিন্ত এরপর অর্ক যা বলল তা শুনে, আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অর্ক হেসে ছবিটা হাত থেকে নিয়ে বলল – আপনাদের অবগতির জন্য জানাই যে, আপনিও ভুল করলেন... তমালিকাদেবী, একটু আগেই আপনি জিজ্ঞাসা করছিলেন না, যে মুকুলিকার সাথে কাকলিবউদির সম্পর্ক কি? তবে শুনুন, কাকলি দেবীই হলেন আপনার মেয়ের জন্মদাত্রী মা...

এই ছবিটা মুকুলিকার নয়, এটা কাকলিদেবীর নিজের ছবি, ওনার দশ বছর বয়সের...। মানে আপনার মেয়ে, মানে কাকলি দেবীর অবৈধ সন্তান আর তার জন্মদাত্রী মা হল যা কে বলে লুক অ্যালাইক, অর্থাৎ একই রকম দেখতে, একরকম বুদ্ধিমতী, একই রকম আচার ব্যাবহার, চাল চলন, কথা বার্তা, এক রকম চোখ, নাক, মুখ, দাঁত, ইভেন চুল পর্যন্ত একই রকম। বোধহয় দুই আইডেণটিক্যাল টুইন অর্থাৎ জমজ বোনেদের থেকেও কিছু বেশি...

আমার মাথায় আর কিছু ঢুকছিল না, বললাম - কিন্তু অর্ক, যদি মেনেও নিই তা, কিন্তু প্রাক্টীক্যালি এও কি সম্ভব? আমি যতদূর জানি এ শুধু সিনেমাতেই সম্ভব।

অর্ক হেসে বলে উঠল, নারে ভাই, বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে প্রচুর রিসার্চ করে দেখেছে, তাদের মতে এটা পুরোপুরি জিনগত ব্যাপার। এরকম প্রচুর উদাহরণ বিদেশেও আছে।

কিন্তু তাই বলে নিজের মেয়েকে উনি এই ভাবে খুন করে দেবেন? প্রশ্নটা ঊড়ে এলো অবিনাশবাবুর কাছ থেকে। অর্ক স্মিত হেসে বলল – অবিনাশ বাবু সবই ওই সম্পর্ক। আপনি কোন সম্পর্ক কি ভাবে নেবেন তা আপনার উপরে নির্ভর করে। মুকুলিকা কাকলিদেবীর ও পরাণদার ঔরসজাত মেয়ে হতে পারে, কিন্তু ওনারা কখনো নিজের মেয়েকে স্বীকার করেন নি নিজের মন থেকে, হয়তো উনি ভেবেছিলেন যে, ওনার এই খ্যাতি, প্রতিপত্তি সব বিফলে চলে যাবে। তাই যখন সমাজের আয়নায় নিজেকেই আবার দেখতে পেলেন, উনি ওনার এই জীবনের চরম ভুলকে অস্বীকার করার চেষ্টা করতে লাগলেন, চোখের সামনে দেখতে পেলেন যে নিজের হারানো সম্মান, প্রতিপত্তি সব ভূলুণ্ঠিত হতে বসেছে। ভাবলেন এখনও কেউ কিছু বুঝছে না, কিন্তু এই মেয়ে বড়ো হলেই সবাই বুঝে যাবে যে এর মা কে ? এই ভয়ে, তাই আবার নিজের প্রেমিক ও স্বামীর সাথে পরামর্শ করে মুকুলিকাকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার প্ল্যান করলেন। এই বলে, অর্ক মিঃ কুণ্ডুর দিকে তাকিয়ে বলল - কি মশায়, ঠিক বললাম তো।?

মিঃ কুণ্ডু অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললেন, ইয়েস আই আডমীট দ্য ক্রাইম। উই হাভ ডান ইট... এই হতচ্ছাড়া মহিলা আর ওই ইডিয়ট পরাণ এর জন্য আজকে আমার এই অবস্থা, বলে কটমট করে কাকলি বৌদির দিকে তাকালেন।

কাকলি বউদি ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন - বিশ্বাস করুন আপনারা, আমি কোনও লোভে নয়, শুধুমাত্র এই সমাজের কথা ভেবে এই অপরাধ করে ফেলেছি। আপনারা মানুন বা না মানুন, কিন্তু সবচেয়ে বেশী কষ্ট আমিই পেয়েছি।

কিন্তু খুনটা কীভাবে করেছিলে ওনারা...? আমার মাথায় এখনও সব পরিষ্কার নয়।

এই প্রথম মুখ খুললেন কাকলি বউদি - আমি প্রথম থেকেই মুকুলিকাকে প্রথম থেকেই চোখে চোখে রেখেছিলাম তাই সৎ প্রতিবেশী সেজে সব সময় ওনাদের কাছেপিঠে থাকার চেষ্টা করতাম, এবং খবর নেওয়ার চেষ্টা করতাম। সেদিনও কোনও এক ফাঁকে ওনাদের বাড়ীতে হাজির হয়েছিলেন, কিন্তু ওখানে মা আর মেয়ের ঝগড়া দেখে মুকুলিকার ওড়না নিয়ে চলে যান, মুকুলিকা এর পরে ফুচকা খেতে গেলে, মুকুলিকার পিছু নিলাম। সময় মত দোকান খালি দেখে, মুকুলিকাকে নিজেই ডেকে নিয়ে এলাম সোজা নিজেদের কারখানায়। সেখানেই আমার সাথে পরাণ ও তমালও ছিল, তারপর রাত্রের অন্ধকারে ওকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং তাও ওই ওড়নার সাহায্যে। মিঃ কুণ্ডু চুপ করে ছিলেন আর মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে ঘাড় নেড়ে নিজের স্ত্রীর কথার সমর্থন করে যাচ্ছিলেন।

ভদ্রদা বলে উঠলেন, মানে, ওই ওড়নাটাই মার্ডার ওয়েপন? কিন্তু অর্ক বাবু খুনটা যে কারখানাতেই হয়েছে তা বুঝতে পারলেন কি করে ? আর ওই স্কার্ফটার ব্যাপারটাই বা কি?

ভদ্রদা দেখুন, আপনারা খেয়াল করেছিলেন কিনা জানি না, কিন্তু যখন আমি প্রথমে লাশ দেখি, তখন তাতে মুকুলিকার পরনের পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে আমি এক ধরণের কালো পাউডারের মতো পদার্থ খেয়াল করি। আমি তা নিজেও কিছুটা নিয়ে এসেছিলাম পরীক্ষার জন্য। যদিও, কিন্তু পরে যখন আপনারা পরাণদার দোকান থেকে মুকুলিকার স্কার্ফটা উদ্ধার করেন, তখন দেখি তাতেও সেই একরকম পদার্থ দেখতে পাই নি। তখন আমার মনে সন্দেহ দানা বাধে যে নিশ্চয়ই এই দুইয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে। আমি নিশ্চিত হলাম তখন, যখন আমি পরাণদার দোকান থেকে জাল টাকার বাণ্ডিল উদ্ধার করলাম, দেখলাম, প্রতিটা টাকায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সেই একই পদার্থর গুঁড়ো লেগে আছে, তখন আমি ওই গুঁড়ো পরীক্ষা করলাম এবং জানতে পারলাম যে ওটি হল ব্যাকালাইট পাউডার যা দিয়ে আগেকার দিনে ইলেকট্রিক সুইচএর পিছনের গোলাকার কালো অংশ বানান হতো। অর্থাৎ, যদি, এবার সব কিছু একসাথে ভাবি, তাহলে কি দাঁড়ায় ?

আমি কনফিডেনটলি বললাম – তার মানে, একটি ব্যাকালাইট সুইচ তৈরির কারখানা, যেখানে, জালনোট ছাপানো হয়, সেখানেই মুকুলিকার নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।ভেরী গুড, মৈনাক, এইত তো তোর মাথাও খুলেছে দেখছি। অর্কর সহাস্য মন্তব্য। আর ওই স্কার্ফটা কোনও সময়ে কাকলি বউদিই চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন অবিনাশবাবুদের ঘর থেকে, তারপর পরাণদাকেই দিয়েছিলেন ওর দোকানে রেখে দিতে, তারপর নিজেই পুলিশকে ফোনে করে ঘটনার অভিযোগ পরাণদার দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তারপর আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বললেন যে আমরা যদি পারি তো পরাণদাকে ছাড়িয়ে নিই। কারণ তিনি জানতেন আমরা পরাণ দাকে ছারিয়ে নেব আবার ।

মিঃ সান্যাল বলে উঠলেন, - ঠিক আছে, তাতো বুঝলাম, কিন্তু এর মধ্যে যে আমাদের এই গুনধর প্রতিবেশীর হাত আছে, তা কি করে বুঝলেন ? আসলে ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে।

অর্ক মিঃ সান্যালএর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল – আসলে, প্রথমে আমাদের ওনার উপরে সন্দেহ হয়নি, ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, অবিনাশ বাবু ও তমালিকা দেবী প্রথমবার আমাদের চেম্বারে আসার আগেই আমাদের চেম্বারে কাকলি বউদি হাজির হন, তিনি আসলে আমাদের কাছে এসেছিলেন জানতে যে আমরা এই কেসটা নিতে রাজী আছি কিনা আর তার সাথে আমাদেরকে জানানো যে তিনিই আমাদের নাম অবিনাশবাবুদের কাছে প্রস্তাব করেছেন, যাতে ওনাকে কেউ সন্দেহ না করে।

কিন্তু আসলে উনি সবার কাছে থেকে সব খবর ও আমাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন, তোর মনে আছে মৈনাক, যাবার আগে উনি একটা কথা বলে গিয়েছিলেন যে, উনিও যে কারোর পেটের ভিতর থেকে খবর এমন ভাবে বার করতে পারেন যে কেউ বুঝতেই পারবে না... আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতেই ও বলে উঠল – কথাটা উনি ঠিক বলেছিলেন, আর তাই সহজ ও সরল মনের মানুষ অবিনাশবাবু ও তমালিকাদেবীর কাছ থেকে খবর বার করতে ওনার কোনও অসুবিধা হয় নি।

আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম যে অবিনাশবাবুদের অতীত ইতিহাস এই ঘটনার সাথে যুক্ত, তাই আমি সবদিক থেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিলাম কিন্তু তখন কোনও আলো দেখতে পাচ্ছিলাম না, তাই বার করে নতুন করে ভাবতে শুরু করলাম, যাই হোক, আমার কিন্তু প্রথমেই কাকলিদেবীর উপর সন্দেহ ছিল না, কিন্তু প্রথম খটকা লাগলো, যখন দেখলাম, যে উনি মুকুলিকার নিরুদ্দেশএর সম্পর্কে যে তথ্য আমাদেরকে দিয়েছিলেন তার মোটা দাগের কথাগুলো সাজানো যেমন মুকুলিকা পালিয়ে গিয়েছে কোনও ছেলের সাথে এবং উনি নাকি দেখেছিলেন যে মুকুলিকাকে সেই ছেলেটির সাথে বেড়িয়ে যেতে। কিন্তু আবার সূক্ষ্ম কথা যা বলেছেন যেমন ওনার দাঁড়ানোর জায়গা থেকে পরানদার ফুচকার দোকানের দুরত্ত্ব বা দেখার অ্যাঙ্গেল সে সব ঠিক বলেছেন। আমি যখন ব্যাপারটা বুঝলাম আমার প্রথমেই মনে হল সাধারনত আমরা সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোর ডিটেলসে ভুল করে বসি, কিন্তু মোটা দাগের ব্যাপারগুলো ঠিক ঠাক বলি, কিন্তু এক্ষেত্রে উল্টো, অর্থাৎ উনি আমাদের সবাই কে অন্য থিওরি শুনিয়ে তদন্তের মোড়টা ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু প্রথম বড় ভুলটা করলেন, একদিকে আমাদেরকে থ্রেট করলেন, অপরদিকে পরাণদাকে ধরিয়ে দিলেন সম্ভাব্য খুনি হিসাবে। আমি যখন ফোন কলটা পেলাম, দেখলাম যে সেটা একটা প্রাইভেট নম্বর থেকে এসেছে, বুঝতে পারলাম, যে প্রাইভেট নম্বর যে কেউ পায় না, অর্থাৎ কোনও বড় মাথা এর পিছনে আসে। ভয়েস পরীক্ষা করতে গিয়ে বুঝলাম যে এটা রেকর্ডিং করা ভয়েস, খুব সূক্ষ্ম করে শুনে বুঝতে পারলাম যে এটা রেকর্ডিং করেছে, সে কোনও কারখানার খুব কাছে থেকে রেকর্ডিং করেছে কারণ সেটাতে অস্পষ্ট হলেও আমি ঘরাং ঘরাং কারখানার মেশিনের শব্দ শুনতে পেলাম। মৈনাক তোকে ওই জন্যই আমি বারে বারে শুনতে বলেছিলাম সেদিন।

আমি নিশ্চিত হলাম যে যে বা যারা একাজ করেছে, তারা এখানেই আছে এবং সবার উপরে নজর রাখছে। তাই আমি সেদিন অবিনাশ বাবুর কাছে কিছু জিনিশ চেয়েছিলাম সবার সামনেই যাতে হত্যাকারীও জানতে পারে যে আমি কি কি জিনিশ দেখতে চলেছি।

যাই হোক, হত্যাকারী চেয়েছিল আমাদের তদন্ত তার নিজের ইচ্ছমত ঘোরাতে, তাই পরাণদাকে ইচ্ছা করে অ্যারেস্ট করিয়েছিল কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে আমরাই পরাণদা কে ছাড়িয়ে নেব, কারণ ওই থ্রেট ফোন কল। পরাণদাকে তো ছাড়িয়ে নিলাম, কিন্তু অবিনাশবাবু কে বললাম যে লুকিয়ে থানাতে যেতে যাতে হত্যাকারীর নজর না পরে, কিন্তু পরাণদার অসংলগ্ন কথাতে বুঝলাম পরাণদা কিছু একটা লোকাচ্ছে,

তারপর সেদিন রাতের অন্ধকারে যেদিন আমাদের উপরে হামলা হয়, আমরা দেখি অবিনাশবাবুর দেওয়া ফাইলে সব কিছু ঠিক আছে, শুধু মুকুলিকার ছবি গুলো নেই আর নেই ওর জন্মের শংসাপত্র, তখন আমি একেবারে শিওর হয়ে যাই হত্যার পিছনে এই ছবি ও জন্মের কোনও হাত আছে, আবার গতকাল রাত্রে যখন কাকলিদেবীরা ফুচকা খাচ্ছিলেন, আমি খেয়াল করলাম, কাকলিদেবীকে পরাণ দা একটা একশ টাকার নোট ফেরত দিতে গিয়ে অনেকগুলো নোট বার করল, কিন্তু উপরের থেকে না দিয়ে নীচের থেকে অনেক খুঁজে একটা নোট দিল। ভালো করে খেয়াল করাতে দেখলাম, যে বাকি নোটগুলো সেই জাল নোট যাতে ব্যাকালাইটের পাউডার লেগে আছে। আমার বুঝতে অসুবিধা হল না যে এই ব্যাপারেও কাকলিবউদি যুক্ত, কারণ অন্য কেউ হলে পরাণদা জাল নোটটাই দিয়ে দিত, নিজেদের লোক বলে আসলটা খুঁজে খুঁজে বার করে দিল।

তবে এই কেসে সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা যিনি পালন করেছেন তিনি হলেন পরাণদার মা, ও কাকলিদেবীর বাবা – মা। পরাণদার মার কাছ থেকেই আমি জানতে পারি ওনাদের অতীত অবৈধ সম্পর্কের কথা, ওনাদের অবৈধ সন্তানের কথা, তখনই আমি ঠিক করি, কাকলিদেবীর অতীত ইতিহাস জানতে হবে, তাই আমি, ওনার বাপের বাড়ি চন্দননগরে গিয়ে পুলিশের ছদ্ম-পরিচয় দিয়ে, ওনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাই, আর সেখানেই আমি ওনাদের ঘরে হঠাৎ মুকুলিকার ছবি দেখতে পাই দেওয়ালে টাঙ্গানো, জিজ্ঞাসা করাতে কাকলি দেবীর মা বলেন যে ওটা কাকলিদেবীর ছোটবেলার ছবি আর আমার চোখের সামনে কিছু জিনিশ পরিষ্কার হয়ে যায়। আমি বেশ কিছু ওনার দুই থেকে দশ এগারো বছরের ছবি নিয়ে আসি নিজের জিম্মায়। তদেরকে আমি সেটাই সেদিন ল্যাপটপে দেখাচ্ছিলাম রে মৈনাক, তোরা ভাবলি আমি পাগল হয়ে গেছি।

তাই একপ্রকার জোর করেই গতকাল রাত্রে কাকলিবউদির বাড়িতে গিয়ে পোঁউছালাম। সেখানেই নিশ্চিত হলাম যে কারখানাটা আসলে মিঃ কুণ্ডুর। ইতিমধ্যে ওখানেই আর একটি ঘটনা ঘটল, যা থেকে আমি আমার সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলাম, যা করার আজকেই করতে হবে, নাহলে পাখি উরে যাবার আশঙ্কা আছে, আসলে হয়েছে কি, কাকলি বউদির ছেলে ও মুকুলিকা একসাথে খেলেছে এই কয়দিন, তাই ছোট্ট ছেলের মনে তার দিদির একটা ছবি তৈরি হয়ে গেছে। ওদিকে আবার ওনার বোন আর বোনের মেয়েও এসেছে ওনাদের বাড়িতে, সাথে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা পুরনো অ্যালবাম। ভাই-বোনে সেই অ্যালবাম নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ কাকলি বউদির ছোটবেলার ছবি বার করে ফেলে, ছোট্ট ছেলে, সে দেখেই চেনে যে এটা তার দিদি মুকুলিকার ছবি, তাই সে দিদি দিদি বলে চিৎকার শুরু করে দেয়, আবার বউদির বোনের মেয়ে দেবশ্রী ভাবে যে ভাই ভুল ভাবছে, সেও চিৎকার করে যে এটা আমি না, তাই ঝগড়া শুরু হলে ওই ঘরে গিয়ে ব্যাপারটা অনুভব করতেই, বউদিও বিচক্ষনতার সাথে সেটিকে সাথে সাথে সরিয়ে দেন।

তাই সেই রাত্রেই, আমি মৈনাক কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন পরে আবার ঘুরে এসে চোরের মত ওনাদের বাড়ির পিছন দিকে গিয়ে কারখানার পিছনে লুকিয়ে কারখানার কাজ-কর্ম দেখে আসি আর ওনাদের কথা বার্তা শুনে আসি যে ওনারা কারখানা সিল করে দিচ্ছেন, কারণ পালাতে হবে, আর তখনই ঠিক করে ফেলি পাখি উরে যাবার আগেই, আজ সকালেই যা করবার করতে হবে, সেইমত আমি মৈনাক , পাকরাশী জ্যেঠু ও ভদ্রদা কে বলি ব্যাবস্থা করার জন্য।

আমার মনে হয়, কাকলিবউদিও বোধহয় ব্যাপারটা আন্দাজ করেছিলেন, তাই এত তাড়াতাড়ি পালিয়ে যেতে চাইছিলেন। কি বউদি?
কাকলি বউদি মাথা নেড়ে বললেন, যখন পরাণ বলল যে তার দোকান থেকে কেউ সব টাকার কৌটো সরিয়ে নিয়েছে, তখনই বুঝতে পারলাম যে এটা হয়ত তোমারই কাজ...তাই পালাবার প্ল্যান করে ফেললাম তাড়াতাড়ি।
হুম, আমি জানতাম, যখন অপরাধী জানতে পারবে, যে তার জিনিশই কেউ চুরি করে নিয়েছে, সে তখন বিভ্রান্ত হয়ে যাবে, আর তাই আমি ভদ্রদা কে বলেছিলাম যে পরাণদার উপরে নজর রাখতে, যে ও কোথায় যায়, কার সাথে কথা বলে...শুধু একটু ঘুরিয়ে, যাতে আমার পরিকল্পনা যেন বৃথা না যায়।

আমি বললাম – কিন্তু ওই প্রাইভেট নম্বর টা কার ?
অর্ক হেসে বলল - ওটা মিঃ কুণ্ডুর , ওনার প্রচুর সোর্স ছিল রাজনৈতিক মহলে, সেটা খাটিয়েই উনি ওটা জোগাড় করেছিলেন। আমাদের কাছে মৃতদেহের ও তার পোশাকের ময়না তদন্ত ও ফরেন্সিক রিপোর্ট এসে গেছে, আপনাদের জানাই যে এতে প্রমাণিত যে আমার ধারনা পুরোপুরি মিলে গেছে, আর মৈনাক ওই যে ছেঁড়া চুল, মুকুলিকার হাতের নখে পাওয়া গিয়েছিলো, সেটাও ওই হতচ্ছারা পরাণের। কি অবস্থা ভাবুন একবার, যে বাবা –মা মিলে একজনকে এই পৃথিবীতে নিয়ে এলো, তারাই কিনা নিজের মেয়েকে নিজের হাতে মেরে ফেলল। আর আমি কিনা একজন অপরাধীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিলাম...এরপর অর্ক পরাণদার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, জ্যেঠিমা, আপনার জন্যই এই কেসের একেবারে গভীরে গিয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি আমি, আপনার মত মা যেন প্রতি ছেলে মেয়ে পায়।

পরাণদা এতক্ষনে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল – না না আমি মারি নি আমার মেয়েকে, ওই মহিলাই মেরেছে, আমি তো শুধু ওকে ধরেছিলাম মাত্র। ততক্ষনে অবশ্য পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে ওরা থানার দিকে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। মা মা আমাকে ক্ষমা কোর মা, আমি তোমার কুলাঙ্গার সন্তান, তবে তার সব দোষ আমারই। তোমার কোনও দোষ নেই, তুমি কষ্ট পেও না, আমি আবার ফিরে আসব মা, আমায় ক্ষমা কর, আমি আবার আগের পরাণ হয়ে যাব......।

পরাণদার বিধবা মা উত্তরে কিছু না বলে উদাস ভাবে আসতে আসতে ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। আমরা পরিষ্কার লক্ষ্য করলাম ভদ্রমহিলার দুচোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে এসেছে, তবুও উনি কাদছেন না, শোকে পাথর হয়ে গেছেন উনি।

ঘরের চাপা গুঞ্জনটা হঠাৎ বেড়ে যাওয়াতে, এতক্ষনে, পাকরাশীজ্যেঠিমা সবাইকে চুপ করতে বলে বললেন - আর দাঁরাও দাঁরাও, এত তাড়াতাড়ি? সবার জন্য জলখাবারের ব্যাবস্থা করেছি, আগে খেয় নেবে তারপর যে যার কাজে যাবে। ঘরের মধ্যে হাসির রোল উঠল। ভদ্রদা নিজের লোকদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আসামীদের থানায় নিয়ে যেতে বললেন। তিনজনকেই ঘর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। এক পুলিশকর্মী মিঃ কুণ্ডুর রিভলবার টা রুমালে জড়িয়ে একটা প্ল্যাসটিকে মুড়ে নিজের জিম্মায় নিয়ে গেলেন।

হঠাৎ দেখি অবিনাশ বাবু ও তমালিকাদেবী উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন, অবিনাশবাবু কাঁদতে কাঁদতে অর্কর হাত ধরতে গেলে, অর্ক ওনাকে আলিঙ্গন করে উঠল, ওই অবস্থাতেই উনি বললেন, অর্ক বাবু কি বলে যে আপনাদের ধন্যবাদ দেব , আমাদের মত গরীবমানুষদের জন্য আপনারা যা করলেন তা আমরা জীবনভর মবে রাখব।

আমি পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ওরকম ভাবে বলবেন না অবিনাশ বাবু, আমরা শুধু সত্যিটা বার করেছি, অপরাধীর সাজা সে ঠিকই পাবে। এখানে গরীব বা বড়লোকের ব্যাপার নেই আমরা শুধু সৎভাবে নিজেদের কাজটা করতে চেয়েছি।

তমালিকাদেবী কোনও কথা বললেন না, শুধু দূরে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে যাচ্ছিলেন। ভদ্রদা ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, তমালিকাদেবী আপনি পারলে আমাদের ক্ষমা করবেন, এখানে অনেক কথাই হয়েছে, যা হয়ত আপনাদের শোনা উচিত ছিল না, কিন্তু আশা করি আমাদের ব্যাপারটাও আপনি বুঝবেন, মন খারাপ করবেন না, অ্যাটলাস্ট অপরাধীতো ধরা পড়েছে, এটাই কি কম বড় পাওনা আমাদের? দেখুন আমার আপনার মত একটি মেয়ে আছে, আমি খুব ভালো ভাবে আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি, এক কাজ করুন, ঘরে গিয়ে জোর গলায় কিছুক্ষন কাঁদুন, দেখবেন অনেক হাল্কা হয়ে গেছেন, আপনাদের জীবনটাতো আর থেমে থাকবে না, দ্য শো মাস্ট গো অন, বুঝলেন জীবন এরকমই, আপনারা কালকে একবার থানাতে আসবেন, অনেক কিছু কাজ এখন বাকি আছে, স্কাউনড্রেল গুলোকে জেলের ঘানি না টানিয়ে আমি ছাড়ছি না।

এরপরে আমাদের দিকে ঘুরে ভদ্রদা আমাদেরকে বললেন একবার থানায় যাওয়ার জন্য, ভদ্রলোককে দেখে যেন মনে হল একাবারে পলাশীর যুদ্ধ জিতে বাড়ি ফিরছেন, একাবারে দু দুটো কেস সল্ভ করে ফেলেছেন, গর্বে মাটিতে যেন পা পড়ছে না... খালি যাওয়ার আগে বলে গেলেন, মশায়, আজকে শুধু চপ , সিঙ্গারা নয়, বিরিয়ানির অর্ডারটা দিয়ে রাখবেন, আমি পেমেন্ট করব, বিকেলে দেখা হচ্ছে।




কিছুক্ষন পরে ঘর ফাকা হয়ে গেলে আমি অর্ককে বললাম, তোর উপরে আমি খুব রেগে গেছি জানিস ...?
অর্ক বলল – কেন, কি হল আবার ? আমি বললাম – তুই যে রিভলবার কিনেছিস সেটা আমায় জানাস নি কেন? কবে কিনলি?
অর্ক হেসে বলল – ও আছা, রাগ করিস না ভাই, আমি বুঝিনি যে আজকেই এটা কাজে লাগাতে হবে। আমি ভেবেছিলাম আগে সব ঠিক হয়ে যাক, তারপরে তোকে দেখাব, কিন্তু সবই ভবিতব্য। আমি যে লাইসেন্স পেয়ে গেছি তাতো তুই জানতিস, তাই সেদিন যখন আমাদের উপরে অ্যাটাক হয়েছিলো, তাই আর রিস্ক নিই নি, পরের দিনই গিয়ে কিনে এনেছি। এসব ছাড়, অবিনাশবাবু জিজ্ঞাসা করছিলেন যে আমাদের কত ফীস দিতে হবে ? বিকালে ওনারা আমাদের চেম্বারে আসবে। কি বলবি ? কত নেব?
আমি বললাম, এই ব্যাপারটাতে আর কিছু ফীস না নেওয়াই ভালো, ছেড়ে দে...

হু হু হু , না না না, ভুলেও এরকমটা করতে যেও না, মানিকচাঁদ – অর্কর জ্যেঠুর গলা পেয়ে চমকে তাকালাম, দেখলাম আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন কখন যেন, বললেন – আরে আমার আজকে দেরি হয়ে গেলো আসতে, কিন্তু এই ভুলটা তোমরা কখনো কোরও না, তোমরা হলে প্রফেশনাল, এরকম করলে তোমরাও আর ইনটারেস্ট পাবে না পরে কোনও কেসে তদন্ত করতে। যা হোক কিছু একটা ,না হয় তোমাদের যা খরচা হয়েছে তাই নিও। পার্সোনাল আর প্রফেশনাল জগতটাকে আলাদা করে রেখ সবসময়, কাজ হল কাজ, তার পারিশ্রমিক নেওয়াও তোমাদের কাজ, নাহলে তোমাদের কাজটার আর কোনও গুরুত্ত্ব থাকবে না। পুরুতরাও নিজের বাড়ি পুজোর পরে একটা টাকা হলেও দক্ষিনা নেয়, কারণ তারা জানে ওটা তাদের প্রফেশন। এই কথাটা মনে রেখ সবসময়। এই বলে জ্যেঠু কাছে এগিয়ে এসে আমাদের দুজনকেই জড়িয়ে ধরে বললেন, বেঁচে থাকো বাবা, তোমাদের অনেক নাম হোক, এই আশীর্বাদ করি।

বাইরে বেড়িয়ে ঝলমলে আকাশ দেখে মনটা অনেকটাই ভালো হয়ে গেলো, অর্ককে বললাম, চল ভাই, আজ একটা দিন ছুটি পেয়েছি, মাথাটাও কেমন খালি খালি লাগছে, আজ দুপুরে একটা ভালো সিনেমা দেখি আসি চল। আর হ্যাঁ আজকে দুপুরের ট্রিট দেবার দায়িত্ত্ব আমার, কোনও কথা শুনব না,
অর্ক একটা সিগারেট দিয়ে হাসতে হাসতে বলল -আচ্ছা ঠিক আছে, তবে এই কেসের আসল হিরো কিন্তু তুই, তুই যদি আমাকে পথ না দেখাতিস, তাহলে এত সহজে কেসটা হয়ত সল্ভ হতো না। ঠিক আছে, চল লেটস সেলিব্রেট... কিন্তু ...

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম আবার কিসের কিন্তু ? ও হাসতে হাসতে বলে উঠল – কিন্তু মুখাগ্নিটা তো আগে কর...
আমি পকেট থেকে লাইটার বার করে জ্বেলে ওর মুখের কাছে ধরে, মন খুলে হো হো করে হেসে উঠলাম।



( সমাপ্ত )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুব ভালো লাগলো অর্কের ব্যাখা করার পদ্ধতিটা। অর্ক জিন্দাবাদ (অবশ্য লেখক শ্রী শান্তনু ব্যানার্জী জিন্দাবাদ), দু-চার পর্ব / পাতা বাড়াতে হবে। এই উপন্যাসটি আগামী বই মেলায় প্রকাশ করলে খুব ভালো চলবে। সুন্দর চিত্রনাট্য তৈরির সব রসদ রয়েছে। সিরিয়াল / চলচিত্র এর উপযোগী লেখা। আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
  • যদিও আগের পর্ব পড়া হয়নি তবুও এ-পর্ব দেখে মনে হচ্ছে বেশ রোমাঞ্চকর । তবে কিছু বানান ঠিক করে নিতে হবে বলে আমার মনে হয় । শুভেচ্ছা রইল ।
  • চোরকাঁটা - ১৬ পর্বে , প্রায় একটি রহস্য উপন্যাস। প্রায় বললাম কারন উপন্যাস হতে গেলে আরও কিছু পাতা পাকাতে হবে। অর্কর শুধু মগজাস্ত্র নয় , হাতে অস্ত্র উঠে এলো। কাহিনীতে visual appeal যথেষ্ট , তাই ভালো চিত্রনাট্য হতে পারে।
  • মোবারক হোসেন ১২/১১/২০১৫
    দাদা ধন্যবাদ সুন্দর খোর জন্য।
 
Quantcast