www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চোরকাঁটা - ১৫ পর্ব

( আগের সঙ্খ্যার পর )

যেটা ভয় পেয়েছিলাম, ঠিক সেটাই হল। আজও ঘুম থেকে উঠতে দেরী করে ফেললাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল পৌনে সাতটা বাজে, তাও মায়ের কাছে মুখঝামটা খেয়ে তবে। যাই হোক হাতে একদম আর সময় বেশী নেই, এখুনি বেড়তে হবে। কোনওরকমে, মুখ, হাত-পা ধুয়ে, জামা কাপড় পড়েই বাড়ী থেকে বেড়িয়ে পড়লাম, রাস্তায় বেড়িয়েই মালুম হল ঠাণ্ডাটা, আর তক্ষুনি বুঝতে পারলাম, যে তারাহুড়োর চোটে, আমি সোয়েটারটা পড়তেই ভূলে গেছি। আরেকটা জিনিস দেখে, আশ্চর্য হয়ে গেলাম, যে প্রতিদিনের মতই বাইরের আকাশ আজও পুরোপুরি মেঘমুক্তো। সোনালী রোদের আলোতে যেন ঝলমল করছে গোটা পাড়া। দৌড়োতে দৌড়োতে আমি যখন পৌছালাম, তখন দেখি, অর্ক পাকড়াশী জ্যেঠুদের বাড়ীর সামনের রকে বসে আছে, সাথে ভদ্রদা ও ওনার সাঙ্গ-পাঙ্গরাও আছেন, তবে সাদা পোশাকে ।আমায় দেখে অর্ক হেসে বলল - আয় বাবা, তোর জন্য বসে বসে আমাদের কোমর ব্যথা হয়ে গেলো। চল, তাড়াতাড়ি চল, নাহলে এবারে দেরি হয়ে যাবে। আমি হাফাতে হাফাতে জিজ্ঞাসা করলাম, কিন্তু কোথায় যাব?

উত্তরটা দিলেন ভদ্রদা, আইডিয়ালী আমাদের যাওয়া উচিত এখন অবিনাশ বাবুদের বাড়ি, কিন্তু ওনাদের ঘরটা সবার বসার পক্ষে উপযুক্ত নয়, তাই আমরা এখন সবাই বসব মিঃ পাকরাশীর বসার ঘরে। আমি, অর্ক ও ভদ্রদা তিনজনে পাকরাশীজ্যেঠুর বসার ঘরের দিকে রওয়ানা দিলাম। ঘরে ঢুকে দেখি, আমরা তিনজন ছাড়া মোটামুটি সবাই উপস্থিত। একদিকের সোফাতে পাকরাশীজ্যেঠু, অবিনাশ বাবু ও তমালিকা দেবী পরপর বসা, পাশের চেয়ারে পরপর সুমিত সান্যাল, মদন ঘোষ ও পরমেশ্বর প্রামানিক ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা। অন্য দিকে, পাকরাশী জ্যেঠুর স্ত্রী ও মহিলা মহল দাঁড়ানো ও নিজেদের মধ্যে পারিবারিক আলাপচারিতায় ব্যস্ত। আমরা তিনজন দরজার দিকে মুখ করা সোফাতে বসলাম, ভদ্রদা আগেই নিজের অনুচরবর্গদের বাইরে দাঁড়াতে বলে এসেছেন। আমাদের ঠিক মুখোমুখি চেয়ারে দেখি, মিঃ তমাল কুণ্ডু বসে একমনে আজকের পেপারটা পরছেন।

আমরা বসাতে, পাকরাশী জ্যেঠু গলাটা বার কয়েক কেশে অর্ককে উদ্দেশ্য করে বললেন- বাপু, তোমার কথামত আমার এই ছোট্ট ঘরে বসার আয়োজন করেছি। নাও বাপু এবার শুরু কর, কি কারণে এই জমায়েত, আমি সবাইকে উত্তর দিতে দিতে থকে গেলাম।

অর্ক একবার ঘরে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে হেসে বলল – আজ্ঞে জ্যেঠু, একদম ঠিক আছে, একটা বিশেষ কথা বা বলা ভালো একটা ঘোষণা করার জন্য আজকে সকাল সকাল আমি আপনাদের বিব্রত করলাম। আমি ও আমার এই বন্ধুরা এই জন্য আপনাদের উপরে কৃতজ্ঞ । যাই হোক আপনাদের অনেক সময় নষ্ট করেছি, আপনাদের সকলেরই কাজ আছে, তাই আর কোনোরকম ভনিতা না করে আসল কথাটা বলে ফেলা যাক। গত কদিন ধরে আমাদের এই পাড়াতে যা হচ্ছিল, তাতে আমরা, আপনারা সবাই মানে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষেরা যার পরনাই বিব্রত বোধ করেছেন, আপাত দৃষ্টিতে আমাদের এই পাড়া শান্ত থাকলেও, কয়েকদিন আগের সেই নৃশংস ঘটনা আজও আমাদেরকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। অন্য পাড়া থেকে আগত অবিনাশবাবুর পরিবারের উপরে হঠাৎ নেমে আসে নিয়তির এক আমোঘ নিষ্ঠুর আঘাত, বাবা-মায়ের কোল ছাড়া হয়ে চিরতরে হারিয়ে যায় এক নিষ্পাপ কিশোরী। আমরা লজ্জিত যে আমরা আমাদের পাড়ায় নতুন আগত এই পরিবারের সুরক্ষার কোনও রকম ব্যাবস্থা করতে না পারাতে। আমরা আহত আমাদের এই পাড়ার এতদিনের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়াতে।

অর্ক বলে যাচ্ছিল, আমি খেয়াল করলাম, অবিনাশ বাবু দু হাতে মুখ ঢাকলেন, আর তমালিকা দেবী আচলের খুঁট দিয়ে চোখের জল মুছতে শুরু করেছেন। আমার মাথাটাও কেমন যেন অবশ হয়ে আসছিল। হঠাৎ দেখি, দরজা দিয়ে কাকলি বউদি হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে মিঃ কুণ্ডুর পাশের চেয়ারে বসে পরে অর্ককে কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলেন, কিন্ত অর্ক হাতের ইশারায় ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলে চলেছিল, আপনারা হয়ত জানেন যে ওই পরিবার তাদের কিশোরী মেয়ের খুনের তদন্তের ভার আমার হাতে সঁপেছিলেন। তাই আমি ও আমার বন্ধু মৈনাক দিন রাত এক করে এই ঘটনার তদন্ত করে উঠতে চেষ্টা করেছি, আবার পুলিশও তাদের নিজেদের মত করে তদন্ত করেছে। আমাদের উপরে ওনারা বিশ্বাস করেছেন, তাই ওনাদের সেই বিশ্বাসের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ। আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি কাকলীদেবীকেও তার সাহায্যের জন্য।

আপনারা সবাই জানলে খুশি হবেন যে আজকে সকালে আপনাদের সকলকে এখানে দাকার একমাত্র কারণ, আমরা আমাদের মত তদন্ত করে তদন্তের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, অর্থাৎ শুধু অপরাধীদের ধরাটাই এখন বাকি, যেটা পুলিশ খুব ভালো মত করতে পারে। আর এটাও খুব খুশির খবর যে আমাদের আর পুলিশের তদন্ত ঠিক এক সময়ে শেষ হয়েছে, এবং আমরা দুপক্ষই এই নিয়ে এক মত পোষণ করি যে খুনি একই লোক।

মানে? পাকরাশীজ্যেঠু খুব জোরে বলে উঠলেন। তোমরা কি বলতে চাইছ যে খুনি কে এখনও ধরা বাকি আছে? আরে বাবা, আগে তো ধর, নাহলে কখন পাখি উরে যাবে বুঝতেও পারবে না।

আমি কটমট করে জ্যেঠুর দিকে তাকালাম, আমার সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছিল। অর্ক হেসে বলল – একদম ঠিক বলেছ জ্যেঠু। আর হ্যাঁ অবিনাশ বাবু, আপনারাও কিন্তু কাকলি বউদিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না, আফটার অল, ওনার জন্যই তো আপনাদের সাথে আমাদের পরিচয়, উনিই তো আপনাদের কে আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

তমালিকা দেবী সোফা থেকে উঠে এসে, কাকলি বউদির হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বললেন – দিদি, আজ আপনার জন্যই এসব সম্ভব হল। আপনি না থাকলে, কি যে হতো... কাকলি বউদি হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছে বললেন, না না এসব বলে আমাকে বিব্রত করবেন না, আমি আর কি করেছি, আমি তো শুধু পথটা বলে দিয়েছি, আমাদের পাড়াতেই এমন গুনধর সত্যান্বেষীরা থাকতে, অন্য কোথাও কেন যাব। তারপর ভদ্রদার দিকে ঘুরে বললেন, যদিও আমার পুলিশের উপরে কোনও আস্থা ছিল না, এই তো এই কেসেই একজনকে একবার ধরে আবার তাকে পরে ছেড়ে দিল। তো এবারে বলতো অর্ক, খুনি কি ওই লোকটাই? কারণ পুলিশতো ওকেই সন্দেহভাজন হিসাবে ধরেছিল।

মিঃ কুণ্ডু হাতের পেপারটা নামিয়ে রেখেছিলেন, এবারে স্ত্রীর কথা শুনে জোরে জোরে মাথাটা নাড়ালেন। অর্ক হাসতে হাসতে বলল – আরে ধীরে ধীরে বউদি, এত ব্যস্ত কেন?

বউদির চোখ মুখ বলছিল তিনি অধৈর্য হয়ে উঠেছেন, তাও নিজেকে কোনওরকমে সামলে নিয়ে বললেন - অর্ক, তোমরা তো জানো, আমার বোন আর বোনের মেয়ে এসেছে, আর তাদের সাথে আমরা মুম্বাই যাচ্ছি আজকে, কালকেই তো বললাম তোমাদের, আজকে রাত্রের ট্রেন। সব কিছু গোছগাছ তো আমাকেই করতে হবে। হঠাৎ করে প্রোগ্রামটা ঠিক হয়ে গেলো। এবারে মিঃ কুণ্ডুর দিকে তাকিয়ে একটা থেলা দিয়ে বললেন - কি গো, কি কারণে, তোমাকে এত তাড়াতাড়ি পাঠালাম, তুমি কিছু ওনাদের বলো নি ? এখানে এসে সেই পেপার নিয়ে বসে গেছ ? কি যে করি না এখন...নাও নাও চল চল আমাদের আর সময় নেই। তারপর সবার দিকে ঘুরে বললেন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের হাতে আজকে আর বেশী সময় নেই, আপনারা জেনে নিন, আমরা ফিরে এসে সব শুনব।

এইবারে ভদ্রদা মৌনভ্রত ভেঙ্গে কাকলি বউদিকে উদ্দেশ্য করে বললেন – আরে দাঁড়ান, মিসেস কুণ্ডু, এত তাড়াহুড়ো কিসের? আপনাদের ট্রেনতো রাত্রে...এসেছেন যখন শুনেই যান, আর অর্কর মুখে শুনেছি যে এই কেসটাতে আপনারো খুব ইন্টারেস্ট ছিল। শুনেই যান।

শুনেই যাও না বউমা – পাকরাশীজ্যেঠুর স্ত্রী কাকলিবউদিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললেন। বউদি হেসে বললেন – না জ্যেঠিমা, আর কিছু না, ঘরে ছোট ছেলে আছে তো, তাই ওদের সব কিছু গোছগাছ করতেই সময় চলে যাবে, তারপর আবার বোন আর বোনের মেয়েকে নিয়ে একটু পার্লার নিয়ে যেতে হবে। তাই আর কি, যাই হোক, আপনারা সবাই তো আছেন নাকি, আমরা আসি...এই বলে মিঃ কুণ্ডুকে কনুই দিয়ে গোঁতা মেরে নিজে উঠে পরলেন।

মিঃ ভদ্র এবারে একটু পুলিশী রাশভারি গলায় বলে উঠলেন - মিসেস ভদ্র, একটা কথা সবাইকে বলা হয়নি, এই ঘরে ঢুকেছেন নিজের ইচ্ছায়। কিন্তু এখান থেকে বেরোতে পারবেন আমাদের ইচ্ছায়। অতএব, চুপ করে বসে পড়ুন,

মানে ? - একসাথে অনেক গুলো গলার কণ্ঠস্বরের কোলাজ পাওয়া গেলো। কি বলতে চাইছেন আপনারা? – এবারে মিঃ সান্যাল বলে উঠলেন। আপনারা আজে বাজে যা বকবেন তাই আমাদেরকে এখানে বসে শুনতে হবে? নিজেদের কোনও আর কাজ নেই। প্রাইভেট অফিসে কাজ করি মশাই, আমাদের অতও টাইম নেই।

এতক্ষন ঘরে মোটামুটি সবাই চুপ করে শুনছিলেন, কিন্তু এবারে ঘরে কোলাহল ও গুঞ্জন হঠাৎ করে বেড়ে গেলো। পাকরাশীজ্যেঠু এবারে হাল ধরার জন্য বলে উঠলেন, ওফ...কি হচ্ছে কি এইসব, চুপ করে শুনলে তো এতক্ষনে বলা হয়ত হয়ে যেত। একটু ধৈর্য ধরে বসতে পারছেন না আপনারা। সবাই কে রিকোয়েস্ট করছি একটু চুপ করে বসে থাকো। ওনারা যা বলতে এসেছেন, বলতে দিন। এটুকুতো আমরা করতেই পারি।
এতক্ষনে, ঘরটা একটু শান্ত হল, তাও একটা চাপা কোলাহল ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মালুম হল, আসলে কেউ ঠিক ভদ্রদার কথাটা ভালো ভাবে নেয় নি।

অর্ক এতক্ষনে চুপ করে মোবাইল কিসব হিজি বিজি কাটছিল, এইবারে সামনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠল, দেখুন আমরা কাউকে বিব্রত করতে চাই নি, কিন্ত আসলে আমাদের এরকম বলার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে।

কি কারণ আছে ? সেটা কি জানতে পারি? আপনারা আমাদের সাথে উপযুক্ত কারণ ছাড়া এইরকম করতে পারেন না, - গম্ভীর ভাবে বলে উঠলেন মিঃ তমাল কুণ্ডু, আমি এতক্ষন চুপ করে ছিলাম, কিন্তু আপনারাও জেনে রাখুন যে আমারও কিন্তু পুলিশের উপর লেভেল অব্ধি জানাশোনা আছে। এইরকম অপমান আমি অন্তত মেনে নেব না।

অর্ক দুহাত জোর করে মিঃ কুণ্ডুর উদ্দেশ্যে বলল – আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রাথী, কিন্তু ওই পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে, এটুকু কি করা যায় না মিঃ কুণ্ডু? আর যদি আপনাদের জানাই যে, মুকুলিকার হত্যাকারী এই ঘরেই আমাদের সাথে এখন উপস্থিত আছে, তবে কি আমরা আপানাদের কাছে সহযোগিতা আশা করতে পারি? কি মিঃ সান্যাল, পাকরাশী জ্যেঠু, এবার তো আমরা কোলাহল থামিয়ে এগুতে পারি?

কি বলছ কি অর্ক? – পাকরাশীজ্যেঠু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন, তুমি বলতে চাইছ যে বাচ্চা মেয়েটার খুনি এই আমাদের মধ্যে, এতদিন ধরে সহমর্মীর ভেক ধরে আমাদের চারপাশেই ঘুরে বেরিয়েছে? আমারো মাথাটা ঘুরে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। কি বলছে কি অর্ক? তাহলে আমি যা ভাবছি সেটাই কি ঠিক, পাকরাশীজ্যেঠুই কি শেষ পর্যন্ত, নাকি প্রামানিকবাবু, ওনারও চাহনিটা আমার ভালো লাগে নি, একটাও কথাও বলেননি ঘরে ঢুকে ...কিন্তু তাহলে তো সান্যাল বাবু কেও সন্দেহ করতে হয়, উফ, আমি ভাবতে পারছি না, সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে...

না না এ হতে পারে না, অর্ক বাবু, আপনাদের নিশ্চয়ই কিছু বুঝতে ভুল হচ্ছে। এতক্ষনে তমালিকা দেবী মুখ খুললেন, আমরা এনাদের কে তো সেভাবে চিনিই না। এনাদের মধ্যে কেউ , না না এ কি করে সম্ভব?
আপনারা সকলে একটু চুপ করুন, অর্ককে বলতে দিন, আশা করি ও আপনাদের সকলের প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবে। আমি সবাই কে কথাটা বলেই অর্কর দিকে ফিরে বললাম- কিন্তু অর্ক তুই কাকে সন্দেহ করছিস এই ব্যাপারে ?
অর্কর ছোট্ট জবাব এলো - সবাইকে। বলেই সবার দিকে ফিরে বলল – দেখুন আপনাদের সবার ভয় পাবার কিছু নেই, এরপরেও যদি কারোর কোথাও যাবার তাড়া থাকে তো যেতে পারেন, আমাদের দিক থেকে কোনও আপত্তি নেই।

কিন্তু কি আশ্চর্য, ঘরে যেন পিন ড্রপ সাইলেন্স। কেউ আর যাবার কথা বলে না। আমি মনে মনে অর্কর বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না, একটা ছোট্ট টোপ দিয়ে সকলকে চুপ করিয়ে দিল। অর্ক বলতে শুরু করলো –
সামনে এগোতে গেলে, আমাদের একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে, মাত্র কিছুদিন আগেই অবিনাশবাবু নিজের পরিবার নিয়ে সুদুর টালিগঞ্জ থেকে আমাদের এই পাড়ায় থাকতে এসেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার থেকে ওনার মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যান, এবং এর পরের ঘটনা সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হল, কি এমন হল এর মধ্যেই যে ছোট্ট মুকুলিকাকে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল...কাকলি বউদি আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন এই ব্যাপারটায়, উনি নিজে দেখেছিলেন যে কোনও এক ছেলে নাকি সেদিন মুকুলিকাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো ফুচকার দোকান থেকে। আমরা তদন্তে নেমে দেখলাম, যে অবিনাশ বাবুদের সাথে মোটের উপরে বাড়িওয়ালা ও অন্যান্য ভাড়াটেদের সাথে সম্পর্ক ভালই, খালি জল নিয়ে দুজনার সাথে বচসা হয়েছিলো, যাদের মধ্যে মিঃ সান্যাল ও মিঃ ঘোষ এখানে বর্তমান।

কিন্তু এখানে কথা হল, শুধু, জল নিয়ে এমন কি কথা কাটাকাটি হল, যা কিনা শেষ পর্যন্ত একটি কিশোরীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে, কি কি মনে হয় আপনাদের মিঃ সান্যাল ও মিঃ প্রামানিক ?

দুজনেই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, মিঃ সান্যাল বললেন, দেখুন, মানছি আমাদের মধ্যে বচসা হয়েছিলো, কিন্তু তা আবার পরে মিটেও গিয়েছিলো, শুধু শুধু কেন আমি বা আমরা এই কাজ করতে যাব... আমাদেরও পরিবার , বাচ্চা আছে। বিশ্বাস করুন আমরা এ কাজ করিনি।

হুম, সেটা আমিও ভেবেছি, মিঃ সান্যাল। অর্ক শান্ত ভাবে বলে উঠল। আমি বলে উঠলাম অর্ক তাহলে কে ?
সেটা বলার জন্যই আমি বসে আছি, অর্ক মিষ্টি করে হেসে আমাকে কথাটা বলে, তারপর ভদ্রদা কে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ দিল – ভদ্রদা আপনি আপনার কালপ্রিটকে নিয়ে আসতে বলুন। বলামাত্রই ভদ্রদা ফোনে নিজের অনুচরদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে সোজা হয়ে বসলেন।

অর্ক আবার শুরু করল - এইবারে হত্যাকারীর প্রসঙ্গে আসি, আমি যতটুকু বুঝেছি, হত্যাকারী খুব ধূর্ত, নিষ্ঠুর, এবং মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত, শুধু তাই নয়, সে নিজের কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র ব্যথিত নয়, বরং সে খুব ভালো ভাবে বিশ্বাস করে যে তাকে কেউ ধরতে পারবে না। তার নিজের উপরে এতই অগাধ বিশ্বাস যে সে আমাদেরকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল। সে যে অসাধারণ বুদ্ধিধর তা বলার অপেক্ষা রাখে না...আমাদেরকে উনি একবার ঠকিয়েও দিয়েছিলেন, কিন্তু আমিই শ্রেষ্ঠ এই ধারনাটাই আমার কাছে তাকে আবার ধরিয়ে দিয়েছে। ওভার কনফিডেন্স অনেক বড় বড় খেলোয়াড়কেও মাঠে ধরাশায়ী করে দেয়, এই প্রবাদটা হয়ত ওনার জানা ছিল না। উনি এতটাই ওভার কনফিডেনট ছিলেন যে, ভেবেছিলেন যে কেউ ওনার নাগাল পাবে না।

ভদ্রদা আর কৌতুহল চাপতে না পেরে বলেই বসলেন, আরে মশাই, একবার বলুন না নামটা, ব্যাটাকে চাবকে এক্ষুনি চিমশে না করে দিয়েছি তো আমার নাম ভদ্র নয়। আমাকে দেখতেই ভদ্র, কিন্তু আমার মত অভদ্র লোক আর নেই এই পুলিশ স্টেশনে...

অর্ক বলে চলেছে, প্রথম যখন আমরা খুনের খবর পেলাম, আর অবিনাশ বাবু ও তমালিকা দেবীর সাথে আমাদের কথা হয়, তক্ষুনি আমার মনে এই সন্দেহ জোরদার হয়, যদি কারোর সাথে, বিশেষ কোনও ঝগড়া না থাকে, তাহলে এর পেছনে অন্য কোনও কারণ বা অন্য কারোর হাত আছে। তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম, আমার ধারনাই ঠিক। এর পিছনে কোনও সাধারন ঝগড়া নেই, বা বলা ভালো, ঝগড়াঝাঁটির জন্য এই খুন হয় নি।
তাহলে... কে খুন করেছে ? মন্তব্যটি এলো মিঃ সান্যালের স্ত্রীর দিক থেকে। বেশ লক্ষ্য করলাম, অর্কর এই কথাতে, ওনারা বেশ রিলাক্স বোধ করছেন। অর্ক ঘাড় ঘুরিয়ে ওনাকে একবার দেখে বলে চলল – আমি অবিনাশ বাবু ও তমালিকা দেবীর লাইফ হিস্ট্রি শোনার পর ভাবলাম হয়ত তার সাথে কোনও ভাবে রিলেটেড হতে পারে, তাই আমি অবিনাশ বাবুদের পুরনো পাড়া, বসত বাড়ী ও ওনাদের জুয়েলারী দোকানেও খোঁজ নিয়ে দেখলাম, কিন্তু কিছু খুঁজে পেলাম না। তাও মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাতে শুরু করলাম, যদি কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

এরই মধ্যে আততায়ী তার প্রথম ভুল করে বসল, সে আমাকে আর মৈনাক কে ভয় দেখাতে শুরু করল, মৈনাককে এস এম এস করে ও আমাকে সরাসরি ফোনে করে থ্রেট করল, যে যদি এই তদন্ত নিয়ে আর এগুই, তাহলে ভালো হবে না। আমার সামনে এক নতুন দরজা খুলে গেলো, কারণ আমি বুঝে গেলাম যে আততায়ী এই এলাকার লোক বা এই এলাকাতেই এখন বর্তমান। হয়ত আমাদের সামনেই সে আছে, কিন্ত ঠিক চিনে উঠতে পারছি না। আমি আবার নতুন করে সব আঙ্গেল থেকে ঘটনাটা সাজাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দুটো ব্যাপারে আমি শিওর হয়ে গেলাম যে, মুকুলিকাকে যে বা যারা হত্যা করেছে, তারা এটা খুব প্ল্যান করেই করেছে আর তারা আমাদের খুব কাছেই রয়েছে, অতএব তাদের ধরা খুব কষ্টকর হবে না, যদি আমরা একটু প্ল্যানমাফিক এগুই।

তার আগেই খবর পেয়েছিলাম যে পুলিশে পরাণদা কে ধরে এনেছে, আততায়ী সন্দেহে, কারণ মুকুলিকার রক্তমাখা গলার স্কার্ফ নাকি পুলিশে পেয়েছে পরাণদার দোকান থেকে। মাথায় খটকাটা তক্ষুনি লাগলো, কেন, মুকুলিকার স্কার্ফ পরাণদার দোকানে কেন? মৈনাক তোর নিশ্চয়ই মনে আছে, যে আমি তক্ষুনি বলেছিলাম যে এটা পরাণদা কে ফাসানোর একটা চক্রান্ত। আমি মাথা নেড়ে সায় দিতেই, অর্ক বলল – পরাণদার দোকানে আততায়ী বা তার কোনও লোক ওই স্কার্ফটা রেখে এসেছিলো পরাণদাকে ফাঁসানোর জন্য। কি ভদ্রদা আপনার ফরেন্সিক রিপোর্ট কি বলে?

ভদ্রদার লোক কখন যে পরাণদা কে এনে দাঁড় করিয়েছে খেয়ালই করিনি, যখন খেয়াল করলাম, ততক্ষনে, দেখি পরাণদা ঘরের দরজার এক কোনে দাঁড়িয়ে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তারপরেই দেখি, ঘরের মহিলা মহলের আর একজন সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন পাঁচ, পরাণদার মা ও কখন যেন চুপি চুপি এসে দাঁড়িয়েছেন , হয়ত বা ছেলের নির্দোষ প্রমাণ হওয়া দেখার জন্য।

ভদ্রদা মাথা নেড়ে বললেন, ঠিক বলেছেন মশাই, কি হরিবল কাণ্ড, অ্যাঁ ? পুলিশকেও ভড়কি দিতে গেছে মশাই... মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে, কিন্তু পরানের দোকানে রেখে গেলো রক্তমাখা স্কার্ফ, মানে গোটা ঘটনার তদন্তমুখ অন্যদিকে করে দেবার অপচেষ্টা। অর্ক বলল – আমি তো সেদিনকেই বলেছিলাম এটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়, কিন্তু, পরাণদার মত একজন নিরিহ, গোবেচারা মানুষকে ফাসিয়ে কার লাভ? তাই আমাকে পরাণদার সম্বন্ধেও একটু খোঁজ খবর নিতে হল। খোঁজ নিতে গিয়ে যা পেলাম তা আপনাদেরকেও বিস্মিত করে দেবে।

পরাণদা ছোটবেলায় ভালোই ছেলে ছিল, কিন্তু বড় হয়ে অসৎ সঙ্গে পরে বখে যায়। কিন্ত পরে মিঃ কুণ্ডুর দয়ায় ওই ফুচকার দোকানটা দেয়, এবং তারপর থেকে ফুচকার দোকান চালিয়ে সংসার চালায়।

যাই হোক, আমরা নিজে ইনিশিয়েটিভ নিয়ে পরাণদাকে পুলিশ স্টেশন থেকে ছাড়ালাম,

মানে ? কি করে বুঝলে হে ছোকরা যে পরাণকে ফাঁসানো হয়েছে ? – পাকরাশীজ্যেঠু উত্তেজনা চাপতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে বসলেন।

অর্ক জ্যেঠুর দিকে তাকিয়ে বলল – আততায়ী যখন আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে, তার মানে সে সব কিছুর উপরে নজর রাখছে, তাই না ...? তো সে যখন সব কিছুর উপরে নজর রাখছে, তাহলে এটা তার নিশ্চয়ই জানার কথা যে পুলিশ আততায়ী সন্দেহে অন্য একজনকে গ্রেফতার করেছে, আমরা যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে, সে এই খবরটা জানে না, তাহলেও পরাণদা নির্দোষ। কারণ যদি সে জানত তার বদলে পুলিশে অন্য কাউকে ধরেছে, সে নিজে চুপ করে যেত বা পালিয়ে যেত, কিন্তু এখানে সে সেটা করে নি, আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে এই কেসটা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। পরাণদা যদি এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতো, তাহলেও তার ওর সঙ্গীরা নিশ্চয়ই জানত যে পরাণদাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ জেনে শুনে অপরাধী আমাদের সাথে খেলা খেলেছে।

হুম... পয়েন্ট আছে কথাটায়। তারপর ? পাকরাশীজ্যেঠু বিস্মিত জিজ্ঞাসা...
হঠাৎ মনে হল, তমালিকাদেবীর সাথে কথা বলা ভালো। কথা বলে জানলাম যে মুকুলিকা আদৌ ওই স্কার্ফটা সেদিনকে পরেই নি, তার পরনে ছিল, চুরিদার ও ওড়না। আমি চমকে উঠলাম, তাহলে কি করে ওই স্কার্ফটা পরাণদার দোকানে গেলো...তার মানে কেউ সেইটা ওখানে রেখে এসেছে... একদিকে সে পরাণদাকে পুলিশে ধরাচ্ছে আবার অপরদিকে আমাদেরকেও ভয় দেখাচ্ছে কিন্তু সে নিজে পালাচ্ছে না। এর মানে কি? আততায়ী কি পাগল ? ... না না নিজের ভালো পাগলেও বোঝে... তাহলে....

যা বাব্বা... ভদ্রদার অস্ফুট স্বর কানে এলো...

অর্ক সামনের টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে একচুমুকে অনেকটা জল খেয়ে নিয়ে আবার শুরু করল – এর মানে সে সব জানা সত্ত্বেও এসব করছে, অর্থাৎ আমাদের কে চ্যালেঞ্জ করছে, এস পারো তো ধরো আমাকে... দেখাও তোমাদের কেরামতি... দেখ তোমাদের সামনে দিয়ে একজনকে পুলিশে ধরিয়ে দিলাম, কিন্তু আবার তোমাদেরকে দিয়েই তাকে পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা করাব...অর্থাৎ তোমরা আমার হাতের পুতুল... আমাকে ধরবে কি ...সেই সাধ্য কি তোমাদের আছে নাকি, আমার কাছে তোমরা বাচ্চা।
ওহহহ...মাই গড...। আমি প্রায় লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম...বলছিস কি অর্ক?

হুম ঠিকই বলছি, শুনে যা, আমরা স্রেফ মুরগী হয়েছি, বলা ভালো, আততায়ীর হাতের পুতুল হয়েই পরাণদাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু ওই যে বলে না শাপে বর...এটাতে ভালই হয়েছে। খটকাটা আমার ছিলই, পরাণদার দোকানে ওই স্কার্ফটা রাখা সত্ত্বেও কেন সেটা পরাণদার নজরে এলো না, পরাণদার দোকানটা মোটেই এতো বড়ো না যে, কিছু নজরে আসবে না। বিশেষ করে রক্ত মাখা স্কার্ফ। তারপর আমার পরাণদার উত্তর ঠিক পছন্দ হয়নি, কারণ পরাণদা আমাদেরকে বলেছিল যে তালা সে বাইরে থেকে দেয় পিছনের দরজায় আর তার কারণও আমরা জানি যে সেদিন রাত্রে নাকি সে তার বন্ধুদের সাথে দোকানের পিছনের মাঠে পার্টি করে। তাই প্রয়োজনে দোকানে আসা যাওয়ার জন্য তালাটা বাইরে থেকে মারা থাকতো। কিন্তু একটা জিনিশ আমার মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো, যা আমাকে মৈনাক মনে করিয়ে দেয়, বৃষ্টি, বুঝলি মৈনাক বৃষ্টি, সেদিনকে তুই যদি আমায় বৃষ্টির কথাটা না মনে করাতিস তাহলে এই ঘটনার কিনারা এত সহজে হতো না, তাই থানা থেকে বেড়িয়ে পরাণদা নিজের বাড়ী ফিরে যেতে আর তুই অফিসে চলে যেতে আমি সোজা পরাণদার দোকানে হাজির হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেলো।

গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছিল, তাই আমি, ভদ্রদা আর কাকলি বউদি তিনজনে একসাথে বলে উঠলাম - কি ?

মৈনাক তোর মনে আছে, যেদিন পরাণদার দোকানের পিছনের দরজার তালা ভেঙ্গে চোর ঢুকেছিল সেদিন কে রাত্রে বৃষ্টি হয়েছিলো? আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিতেই, অর্ক পরাণদার দিকে সোজা তাকিয়ে বলল – বৃষ্টিতো গত কয়েকদিন ধরেই হচ্ছিল আর রাতের বেলায় আরও বেশী, কিন্তু তাও পরাণদারা কি করে ফাঁকা মাঠে বসেছিল, তা আমার বোধগম্য হল না, সেজন্য তুই চলে যাবার পর আমি সোজা পরাণদার দোকানের পিছনদিকে হাজির হলাম। দেখলাম দোকানের পিছনদিকের দরজার তালাটা নতুন, কিন্তু পুরনো তালা ভেঙ্গে ফেলার কোনও দাগ আমি অন্তত দরজায় দেখতে পেলাম না। যদিও পরাণদা ওটাতে আবার নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। জ্যেঠুর শেখানো বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আমি পকেটের থেকে পিন বার করে তালাটা আবার খুলে ফেললাম। দরজা খুলে যা আশা করেছিলাম তাই পেলাম, সিমেন্টের উপরে ঘরের পিছনের দিকের থেকে একই মানুষের অনেকগুলো পায়ের হাওয়াই চটির ছাপ পেলাম যা সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো, ছাপ গুলোকে ভালো করে স্টাডি করতে বুঝলাম ওগুলো শুধু একদিকেই যায় নি, ঘরের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। আরও ভালো করে দেখাতে আমি অবাক হলাম যে, শেষ পর্যন্ত সেগুলো দোকানের সামনের দরজার দিকে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে কিন্তু আর ফিরে আসে নি পিছনের দরজার দিকে ..এর সমস্ত ফটো আমি তুলে এনেছি ভদ্র দা, যা আপনার কাজে লাগবে পরে, এই পর্যন্ত বলে আমায় প্রশ্ন করল অর্ক – কি মৈনাক কিছু বুঝলি?

আমি বিজ্ঞের মত ঘাড় নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, বুঝলাম, যে চোর ঘরে ঢুকেছিল, সে পিছন দিয়ে ঢুকে সামনের দিক দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। এটা বুঝতে অসুবিধা কোথায়?

অর্ক ভদ্রদা কে জিজ্ঞাসা করল – এর কি মানে ভদ্রদা ?
ভদ্রদা মাথা চুলকে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন যে আমি কিছু বুঝলাম কি না...আমি কিছু বোঝার আগেই, অর্ক বলে উঠল, একটাই অসুবিধা, যে চোর পিছনের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকল, সে সামনের দরজা দিয়ে কি করে বেরল? সামনের দরজায় নিশ্চয়ই তালা লাগানো ছিল...আর যদি না থাকে, তাহলে চোর এত কষ্ট করে পিছনের দরজার তালা ভেঙ্গে ঢুকলই বা কেন? সামনের দরজা দিয়েই তো সে ঢুকতে পারত...কি তাই না পরাণদা ? আমি চোরের চটির একই পায়ের ছাপ তোমার দোকানের সামনের দরজার বাইরে যেখানে শেড আছে, সেখানেও দেখেছি, কারণ সেখানে বৃষ্টির জল যায় নি, কিন্ত সেটা পেছনের মাঠে নেই কারণ সেই বৃষ্টি।

আমার মাথা ঝিমঝিম করছিল... বললাম তাহলে তো পরাণদার চেনাশোনা কেউ... আমার কথাটা মুখের কথাটা অর্ক কেড়ে নিয়ে অর্ক বলল – চেনাশোনা না, মৈনাক আমার স্থির বিশ্বাস সেদিন পরাণদাই চোর সেজে নিজের দোকানের তালা খুলে পিছন দিয়ে ঢুকে, তারপর সামনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিলো কিন্তু তাড়াহুড়োর চোটে বা অন্ধকারের জন্য বুঝে উঠতে পারে নি যে বৃষ্টি ভেজা পায়ের ছাপ ওকে বেকায়দায় ফেলে দেবে পরে। যা পরাণদা আর পরিষ্কার করে উঠতে পা্রে নি।

কিন্তু, কথা হচ্ছে কেন? কেনই বা পরাণ নিজের দোকানেই চোরের মত ঢুকবে? – পাকরাশীজ্যেঠুর মুখ হাঁ হয়ে গেছে...

কি পরাণদা আসল কারণটা কি তুমি বলবে নাকি আমি বলব? অর্ক পরাণদাকে কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই, মিঃ কুণ্ডু অত্যন্ত বিরক্তি সহকারে কর্কশ স্বরে বলে উঠলেন, আরে বাবা, আমার মনে হয় আমরা আসল ঘটনা থেকে সরে গেছি, এইসব না করে আসল কথাটা বল বাপু ...কে ওই মেয়েটাকে খুন করেছে? তা না করে তখন থেকে উল্টোপাল্টা ভনিতা করছ...

অর্ক জিব কেটে বলল – সরি মিঃ কুণ্ডু, আর পাঁচ মিনিট সময় দিন, আমি আপনাদেরকে এর মধায়েই জানিয়ে দেব আসল হত্যাকারী কে?


(চলবে )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শান্তনু আজ যা করলে তাতে যদি তুমি পাঠক দ্বারা ঘেরাও হও বলার কিছু নেই। এমন কেউ করে , ক্লাইম্যাক্সে এসে লাইট নেভালে। তিন দিন সময় দিলাম , শেষটা দিয়ে দাও।
 
Quantcast