www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চোরকাঁটা - ১৩ পর্ব

( আগের সঙ্খ্যার পর )


অর্কর ডাকে সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘড়ি দেখে বুঝলাম সাতটা বেজে গেছে। অর্কর দিকে তাকিয়ে দেখি বাবু পুরো রেডি। ভাবলেশহীন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল – যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, মা এক্ষুনি চা – বিস্কিট পাঠাচ্ছে। আমাদের কে এক্ষুনি বেরোতে হবে। মুখ দেখে বুঝলাম, গত রাত্রের না ঘুমানোর ক্লান্তি এখনও চোখে মুখে বিদ্যমান,

চটপট বিছানা ছেড়ে উঠে রেডি হয়ে নিলাম, জামাকাপড় পরতে না পরতেই দেখি, কাকিমা, চা-বিস্কিট, কাজের লোককে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সব শেষ করে সাড়ে সাতটার মধ্যে বেড়িয়ে পড়লাম দুজনে থানার উদ্দেশ্যে। বাইরে বেড়িয়েই শীতল ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝলক, মনটাকে চাঙ্গা করে দিয়ে গেলো। এই সকালের দিকতা দেখছি বৃষ্টিটা থাকে না, আকাশ পুরো সোনালী রোদের আলোয় ঝলমল করছে। যাই হোক কিছুক্ষনের মধ্যেই থানায় ঢুকে পড়লাম। থানার বারান্দায় দেখি এক ভিখিরি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে, আমি অর্কর উদ্দেশ্য বললাম, দেখেছিস দেশের কি হাল, থানাকেও ছারবে না এরা।

অর্ক মুচকি হেসে বলল – আহা বেচারা, শীতের রাত্রে, এই মাথা ঢাকা বারান্দাকেই নিজের বিছানা ভেবে নিয়েছে, তুই ওরকম করে বলছিস কেন? আমি আর কোনও উত্তর না দিয়ে সোজা ভিতরে ঢুকে গেলাম।
থানায় ঢুকেই দেখি ভদ্রদা চেয়ারে আয়েশ করে বসে আছেন, আমাদের দেখে, একগাল হেসে বললেন, আরে আসুন আসুন স্যর, আপনাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম আমরা। করেছেন কি, মশাই, একি সত্যি শুনছি, একজন খুনের সম্ভাব্য আসামীকে আপনারা ছাড়াতে এসেছেন। তারপর চোখ টিপে বললেন, স্যর কাল রাত্রেই বলেছেন যে কাগজপত্র পরে রেডি করতে, কারণ আপনারা আসবেন। আপনাদের কথা শুনেই যেন আমি ডিসিশন নেওয়া হয়, কর্তার হুকুম, বুঝলেন কিনা, ফ্যামিলী নিয়ে পুরী বেরাতে গেছেন, ফালতু ডিস্টার্ব করা যাবে না...হে হে হে...এটুকু প্রিভিলেজ তো আপনাদের প্রাপ্যই নাকি ? কিন্তু কি ভাবে ছাড়বো, তাড়াতাড়ি বলে দিন মশায়, তারপরই বাজখাই গলায় হাঁক ছাড়লেন - ও মশায়, শুনছেন , এবারে এই দিকে আসুন তো দেখি, আপনার লোক এসে গেছে। বলতে বলতেই দেখি, দরজা দিয়ে সেই ভিখিরিটা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। দেখি, তার সমস্ত শরীর কম্বল দিয়ে ঢাকা। আমি অবাক হয়ে অর্কর দিকে তাকাতেই অর্ক চোখটা টিপে আগন্তুককে বলল – এইবারে কম্বল আপনি খুলে ফেলতে পারেন অবিনাশবাবু। বসুন এই চেয়ারে, আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হল আমাদের জন্য।

অবিনাশবাবু কম্বল ছেড়ে পাশের চেয়ারে বসে, আমার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললেন, কেমন মেকআপ দিয়েছি বলুন, আপনিও চিনতে পারলেন না। আমি অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে হাত জোড় করে বললাম – ছি ছি মশায়, আমার আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমি আপনাকে চিনতেই পারলাম না। আমায় ক্ষমা করুন অবিনাশবাবু।

অর্ক হেসে বলল – আসলে দোষটা আমারই। আমার তোকে কালকেই বলে দেওয়া উচিত ছিল, অবশ্য তাহলে আর এই সারপ্রাইজটা দেওয়া যেত না। অবিনাশবাবু বললেন – না আমি কিছু মনে করি নি, মৈণাক বাবু, বরং নিজের উপরে গর্ববোধ হচ্ছিল।

ভদ্রদা এতক্ষন ধরে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিলেন, কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছিল না, এইবারে গলাটা একটু কেশে বললেন, আরে মশাই, আপনারা কি শুরু করেছেন বলুন তো, এমনিতেই আমি এই কেস নিয়ে পুরো অন্ধকারে, তার উপর আবার আপনাদের এই হেঁয়ালি, উফ অসহ্য। যাই হোক কি করতে হবে এবারে বলুন অর্কবাবু। অর্ক ভদ্রদা কে উদ্দেশ্য করে বলল দেখুন এই আমার মক্কেল, অবিনাশবাবু, আপনি নিশ্চয়ই চেনেন...তো উনি এসেছেন এখানে, লিখিত ভাবে দিতে, যে আমার আর এক মক্কেল যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে, তার এই কেসে কোনও হাত নেই। তাই আপনাকে আমার মক্কেল অনুরোধ করছে, যে আপনি মিঃ পরাণ সাহা কে জেল থেকে ছেড়ে দিন।
ভদ্রদা হাত বাড়িয়ে বললেন কই দেখি লিখিত আবেদনটা দিন দেখি, অর্ক সাথে সাথে পকেট থেকে একটা হাতে লেখা আবেদন পত্র অবিনাশবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল – নিন এটাতে সই করে দিন, অবিনাশ বাবু। অবিনাশ বাবু পকেট থেকে পেন বার করে ঘস ঘস করে তাতে সই করে দিয়ে সেটা ভদ্রদার হাতে দিয়ে দিলেন, আর ভদ্রদাও সাথে সাথে, সেটা কেস ডায়েরীর নির্দিষ্ট পাতায় আলপিন দিয়ে গুঁজে রেখে কিছু লিখতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আবার আমাদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, দেখুন, আমার এখানে কিছু করনীয় নেই, আমি আমার কমেন্ট লিখে দেব, কিন্তু আপনারা আর একবার ভেবে দেখতে পারেন যে কাজটা ঠিক করছেন কিনা। পরে না হাত কচলাতে হয়... আমরা কিন্তু আপনাদের আবেদনের উপরে ভিত্তি করে পরাণকে ছেড়ে দেব। তারপরের দায়িত্ত্ব আপনাদের। যদিও আপনাদের উপরে আমার ভরসা আছে, নিশ্চয়ই, আপনারা যা করছেন তা ভেবেই করছেন। উত্তরে অবিনাশবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, দেখুন, আমারও অর্কবাবুর উপরে পুরো ভরসা আছে।

অর্ক শুধু বলল – আশা করি আপনি, আবেদন পত্রটা পড়ে দেখবেন, তাতে সব পরিষ্কার করে লেখা আছে। যাই হোক অবিনাশ বাবু আপনি আগে থানার অফিস ফর্মালিটি গুলো করে বেড়িয়ে যান, আমরা পড়ে আসছি। ভদ্রদা, আপনি একটু তাড়াতাড়ি করুন প্লীস...আমাদের আরও অনেক কিছু জানার আছে। ভদ্রদা ওকে বলে আবার একটা বাজখাই গলায় হাঁক পাড়লেন – এই হারু, এদিকে আয়, ওই পরাণ সাহা কে লকআপ থেকে বার করে নিয়ে আয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই, পরাণ দাকে আমাদের সামনে এনে দাঁড় করান হল। পরাণদা আমাদেরকে দেখে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল... অর্ক, অবিনাশবাবু কে দেখিয়ে বলল – আরে পরাণদা কান্নাকাটি করতে হবে না, এই ভদ্রলোক নিজের ব্যক্তিগত জামিনে তোমায় ছাড়াতে এসেছেন। আমরা কথা দিয়েছিলাম যে তোমায় জেল থেকে বের করে নিয়ে যাব, তোমার কিচ্ছু হবে না, কথার খেলাপ অর্ক কখনো করে না।

পরাণদা এগিয়ে এসে অবিনাশবাবুর হাত ধরে ওনাকে আর আমাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে জিজ্ঞাসা করল যে ও চলে যেতে পারে কিনা। অর্ক পরাণদা কে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে, অবিনাশ বাবুকে চলে যেতে বলল, থানার কাজ মিটিয়ে অবিনাশবাবু যখন চলে গেলেন, অর্ক ভদ্রদাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ভদ্রদা এইবারে একটু চা হলে মন্দ হয় না, আঃ এতক্ষনে মনটা একটু শান্ত হল। সাথে সাথে ভদ্রদা চায়ের অর্ডার দিয়ে বললেন, এইবারে বলুনতো ব্যাপারটা ঠিক কি ?

অর্ক মুখে স্মিত একটা হাসি টেনে, বলল – কিছু না, আসলে আমি প্রথম থেকেই জানতাম যে পরাণদা কিছু করে নি, কিন্তু আসল অপরাধী যারা তারা পরাণদা কে ফাঁসিয়েছে। তাই প্রথমে পরাণদা কে ছাড়াতে চাইছিলাম, আর তাই আসল অপরাধীর পেছনে কম সময় দিতে পেরেছি, আর তাতে আততায়ী ভেবে নিয়েছে যে অর্ক – মৈনাক তার কাছে দশ গোলে হেরে গেছে। এখন কেসটা নিয়ে একটু মনোনিবেশ করতে হবে। আমি পরাণদা কে প্রমাণ দিয়েই ছাড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই অল্প সময়ে তা আর জোগাড় করে উঠতে পারলাম না। তাই এই রাস্তা নিতে হল।

পরাণদা এতক্ষন চুপ করে আমাদের কথা শুনছিল, এইবারে সে জিজ্ঞাসা করে উঠল, তাহলে অর্কবাবু, আমার কি হবে? আমি সত্যি ছাড়া পেলাম তো? আমি উত্তরে বললাম, আরে তোমার কিছু চিন্তা নেই, আমরা প্রমাণ করে ছাড়বো যে তোমার কোনও দোষ নেই এতে। ততক্ষনে চা এসে গিয়েছিলো, আমরা সবাই চা এর গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিলাম। অর্ক একটা গ্লাস পরাণদার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল – এই নাও চা খাও, আর আমি যা জিজ্ঞাসা করব, ভালো করে ভেবে তার উত্তর দিয়ো। বুঝতেই পারছ কেসটা খুব জটিল। পরাণদা ঘাড় নাড়াতে, অর্ক বলল প্রথম প্রশ্ন করল – আচ্ছা, পরাণদা, তোমার শত্রু কেউ আছে নাকি? মানে এমন শত্রু যে বা যারা তোমাকে এইরকম একটা কেসে ফাঁসাতে পর্যন্ত পারে। পরাণদা খুব শান্ত স্বরে উত্তর দিল – আমিও অনেক ভেবেছি এই কদিনে, কিন্ত আমি তো কারোর সেরকম কোনও ক্ষতি করিনি, যে আমার এত বড় ক্ষতি করবে। জানি না। আচ্ছা, আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, যে স্কার্ফটা পুলিশ তোমার দোকান থেকে পেয়েছিল, তা তুমি নাকি দেখতে পাওনি আগে, অর্থাৎ তুমি জানতে না কে বা কারা ওটা তোমার দোকানে রেখেছিল, তো তুমি তো নিজের হাতে দোকান আগের দিন বন্ধ করেছিলে আবার পরের দিন নিজের হাতেই সেটা খুলেছিলে, তো কেন তোমার নজরে সেটা পরল না, আর কোনও বাইরের লোক যদি রেখেও যায়, সে কিভাবেই বা রাখবে সেটা, তোমার কি মনে হয়?

পরাণদা গম্ভীর স্বরে বলল – সেদিন রাত্রে আমার দোকানের পিছনের তালাটা কেউ ভেঙ্গেছিল, সকালে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ চুরি করতে দুকেছিল, কিন্তু পড়ে বুঝলাম যে এই ব্যাপার। প্রথমে আমি ব্যাপারটা আমল দিই নি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ওই জিনিশটা রাখতেই কেউ আমার দোকানে ঢুকেছিল।

মানে? অর্ক চমকে জিজ্ঞাসা করে উঠল- কি বলছ কি তুমি? এটা পুলিশকে জানিয়েছিলে? তোমার দোকানের পিছনের দরজার তালা কেউ ভেঙ্গে দোকানে ঢুকেছিল? কিন্তু তুমি তালা বাইরের দিকে কেন লাগিয়েছিলে? সাধারনতঃ পিছনের দরজার তালা আমরা ভিতর থেকেই লাগাই তাই না ?
উত্তরে পরাণ দা বলল – দেখ অর্ক বাবু, সত্যি কথাই তোমাদের কে বলি, আসলে মাঝে মাঝে আমরা রাত করে পিছনদিকের মাঠে বসে ওই একটু মাল–টাল খাই, তো তখন মাঝে মাঝে জলের দরকার পরে, তাই পিছন দিকের দরজা দিয়ে দোকানে যাতায়াত করি, আর তাই পিছন দিকের দরজায় বাইরে দিয়েই তালা দিয়ে রাখি সবসময়, সামনের দিকটা বন্ধ করা হয়ে যায় অনেক আগেই তাই। আর হ্যাঁ ধরা পরা ইস্তক আমি পুলিশকে এই কথাই বলে আসছি।

হুম, বলে, একটা শ্বাস নিয়ে অর্ক বলল – সকালে আর তুমি জিনিসটা খেয়াল করোনি, তাইতো? পরাণদা ঘাড় কাত করে অর্কর কোথায় সায় জানাল। দেখ পরাণদা, অর্ক বলে উঠল, এই সবই তুমি পুলিশ কে বলেছ, আমরা এমন কিছু জানতে চাইছি, যেটা তোমার মনে কোনও খটকার সুত্রপাত করেছে। পরাণদা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠল – দেখ দাদাবাবু, আমি গরীব মানুষ, আমার মাথায় এসব কিছু ঢোকে না, সেদিন সকাল বেলা আমি নতুন তালা আবার লাগাতে লাগাতে খালি ভাবছিলাম যে হয়ত চোর ঢুকে কিছু পায় নি, তাই সে আবার চলে গেছে। এর বেশি কিছু না।

অর্ক বলল – আচ্ছা ধন্যবাদ তোমাকে , নাও তুমি এবারে যেতে পার। যদি পরে কিছু জানতে পার, তবে আমাকে জানাতে ভুল না কিন্তু। পরাণদা ঘাড় কাত করে হ্যাঁ বলে হন্তদন্ত হয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে গেলো। ভদ্রদা বলে উঠলেন, আহা বেচারা, বিনা দোষে দিন দুই আটকা পড়ে এখন দেখুন কেমন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।

আমি এতক্ষন চুপ করে সব শুনছিলাম, এইবারে ভদ্রদা কে জিজ্ঞাসা করলাম - আচ্ছা, আপনাদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে গেছে? ভদ্রদা হেসে বললেন, দাদা এটা কি আর আপনাদের বেসরকারী অফিসের বাতানুকূল কামরায় বসে কাজ ? স্ক্যান করলাম, আর মেল পাঠিয়ে দিলাম, হয়ে গেলো, আসবে আসবে ঠিক সময়ে আসবে, তবে সময় লাগবে। সকাল থেকে অনেকগুলো খোঁচা সহ্য করতে হয়েছে, এইবার নিতে পারলাম না, বলে উঠলাম - ওই জন্যই তো আপনাদের এই অবস্থা, আসল লোকের জায়গায় সব সময় ভুল লোককে ধরে আনেন, আর আপনাদের তদন্ত ঠিক মত শেষ হয় না কখনো। একবার বেসরকারী অফিসের মত কাজ করে দেখুন, আপনাদেরও পৃথিবী বদলে যাবে।

এই রে মৈনাকবাবু জব্বর রেগে গেছেন, নিন নিন, মশায়, একটা সিগারেট খান, মাথা ঠাণ্ডা করুন, আরে আমি তো ইয়ার্কি মারছিলাম। বাবা রে...আমি হেরে গেছি...তবে চিন্তা করবেন না , দশটা প্রায় বাজে এই এখুনি এসে পরল বলে, আপনারা একটু ঘুরে আস্তে ছাইলে আস্তে পারেন । অর্ক বলল – একটা রিকোয়েস্ট, ময়নাতদন্ত ও ফরেন্সিক দুটোরই একটা করে কপি আমাকে আনঅফিসিয়ালি পাঠিয়ে দেবেন প্লীস, অনেক কাজ আছে, আপনার হেল্পও দরকার। এখন আর বেশী সময় নেই, না করবেন না কিন্তু।ভদ্রদা গদগদ কণ্ঠে বললেন, কি যে বলেন, আপনারা হলেন আমাদের খাস মেহমান, আপনাদের সাহায্য না করে পারি, আমার ঘাড়ে কটা মাথা আছে? বড়বাবু যদি জানতে পারে, রিটায়েরমেনট এর আগেই চাকরিটা যাক আর কি বলে মুচকি হেসে ফেললেন, আমি আর অর্ক দুজনেই, হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে বাইরের দিকে পা বাড়ালাম। বাইরে বেড়িয়ে দেখি, ওমা, এরই এর মধ্যে আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল কখন।

পথে যেতে যেতে অর্ক বলল – জানিস মৈনাক, আমার মন বলছে, যদি ময়নাতদন্তর রিপোর্টটা পাওয়া যেত, তাহলে আমরা মুচলেকা ছাড়াই পরাণদা কে ছাড়াতে পারতাম। আমি উত্তরে শুধু হু বলে ব্যাপারটাকে হাল্কা করে দিতে চেয়ে বললাম – আরে ছাড়, আজ নয় তো কাল, সেতো জানাই যেত, যাই হোক আজ মনটা অনেক হাল্কা লাগছে, অন্তত একটা চাল তো আমরা অপরাধীদের বানচাল করতে পেরেছি, এবারে তুই ভালো ভাবে কাজটায় মন দিতে পারবি,

কিন্তু দেখেছিস এদিকে, কি বিপদ আবার বৃষ্টিটা বেড়েছে, কি যে করি, দাঁড়া ছাতাটা আগে বার করি। নিজের ছাতা বার করতে করতে অর্ক বলল – আচ্ছা মৈনাক, তোর মনে আছে, বৃষ্টিটা ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে? আমি একটু ভেবে বললাম – কেন ওই যে যেদিন, প্রথম ভদ্রদা আমাদের চেম্বারে এসে মুকুলিকার কথা বলছিল... মানে তোর হল গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই অকাল বৃষ্টির শুরু, মাঝে মাঝে থামছে, কিন্তু একেবারে শেষ হচ্ছে না। অর্ক বলল তারপর কবে কবে রাত্রে বৃষ্টি হয়েছে মনে আছে?
আমি বললাম, প্রায় প্রতিদিনই, প্রত্যেক রাত্রেই বৃষ্টি হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টি হয়েছে প্রায় প্রতিদিন মাঝরাতের দিকে ওই দুদিন ছাড়া, প্রতিদিন সকালবেলাটা শুধু ছাড় দিয়েছিল প্রকৃতি, দুপুর বিকেল থেকে ঝিরিঝিরি আবার রাত্রে মুষলধারায় বর্ষণ হচ্ছে, আজকে সকালবেলাও ছাড় দিল না।

অর্ক মনে মনে কি একটা হিসাব করছিল, বেশ বুঝতে পারলাম, আমার পুরো কথা ওর কানে ঢুকল না, বিড়বিড় করে কি যেন নিজের মনে কথা বলে চলেছে...কিছুক্ষন পরে নিজেই আবার বলে উঠল - ঠিক আছে, চল, আমার কিছু কাজ আছে, তুই অফিস বেড়িয়ে যা, পারলে তাড়াতাড়ি আসিস, আশা করছি, তোর জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করবে। আমি অনুযোগের সুরে বললাম – ঠিক আছে, তবে আজ সকালের মত আমাকে যদি বোকা বানাস তাহলে কিন্তু ভালো হবে না, আমার সব জানা উচিত, আমি তোর অ্যাসিস্ট্যান্ট না...অর্ক হেসে বলে উঠল – ওকে, মানিকচাঁদ। তাই হবে, তুই যে আমার কত বড় উপকার করেছিস আমি শিওর যে তুই নিজেও বুঝতে পারবি না। দেখি, এইবার একবার এই অ্যাঙ্গেল থেকে কেসটাকে স্টাডি করে দেখি, যদি কিছু পাওয়া যায়।

অর্ক সামান্য এগিয়ে যেতেই, আমি ওকে পিছন থেকে ডেকে বললাম, আরে তোর জিন্সের নীচে এত চোরকাঁটা লাগলো কি করে ? অর্ক যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পরল, তারপর একটা চোরকাঁটা তুলে ভালো করে দেখে বলল –ওহ এইগুলো এই থানার সামনের রাস্তার পাশ থেকে লেগে গেছে। এরা পরিষ্কার করাবে না আর কি করব, তবে তুই চিন্তা করিস না, তোর প্যান্টেও এনারা বিরাজ করছেন। আমি বললাম, কিন্তু আমরা তো রাস্তার নীচে মাঠে নামিনি, তাও ... ?

আমার কথা শেষ না করতে দিয়েই অর্কর সহাস্য মন্তব্য – এই হচ্ছে চোরকাঁটা, বুঝলি, তুই নিজেও বুঝতে পারবি না, কখন চুপি চুপি চোরের মত তোর প্যান্টে লেগে যাবে, জীন্স বলে বেঁচে যাচ্ছিস, কটন হলে এতক্ষনে খোঁচা মেরে মেরে হালত খারাপ করে দিত।

আমি হাসতে হাসতে বললাম, বাবা, তুইও পারিস নাম বিশ্লেষণ করতে, বলে আমি চোখ টিপে গান ধরলাম – যদি হই, ওই চোরকাঁটা তোমার শাড়ির ভাজে...অর্কর সাথে সাথে রিপ্লাই – দুষ্টু যে হয়, এমন কাজ তো তারই সাজে...। তারপর দুজনে হো হো করে একপ্রস্থ হেসে যে যার নিজের পথ ধরলাম।


(চলবে )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯০০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নির্ঝর ০৭/১১/২০১৫
    অপরুপ।
  • শুভাশিষ আচার্য ০৩/১১/২০১৫
    পাঠকের মন নিয়ে খেলা!!! আর কত অপেক্ষা।
    -------------------------
    কি ব্যাপার চোরকাটা না বেরোন অবধি আমার পাতায় যাবেন না ঠিক করেছেন।
  • মোটেই ভালো হচ্ছেনা ভাই।
    তাড়াতাড়ি চাই।
    আমার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে। থ্রিলারটা বেশ উপভোগ্য আর দারুন!!
  • ধারাবাহিকের নিয়ম মেনে দিব্যি পাঠককে উত্সুক করে রেখেছেন। অবিনাশ বাবু কেন ছদ্মবেশে থানায় শুয়ে ছিলেন বুঝলাম না। অবিনাশ বাবু লিখে দিলেও পুলিশ পরানদাকে ছাড়বে কি করে ? আইন কি বলে ?
    গল্পের নাম চোরকাঁটা আর এপিসোডের শেষ ভাগে চোরকাঁটার প্রবেশ 'হাইলি সাসপিশাস '
    • হা হা হা, বেশ বলেছেন । আসলে অবিনাশ বাবুর উপরে যে অপরাধীদেরও নজর আছে তাই ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন।
      মুচ্লেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে পরাণ দাকে । সব উত্তর পরে পাবেন ।
 
Quantcast