চোরকাঁটা - ১১দশ পর্ব
দুপুরে খাওয়ার পর আমি আর অর্ক যথারীতি মুখোমুখি বসে ছিলাম, অর্ককে এতটা টেন্সড আগে কখনো দেখিনি। নিজের মনে বিরবির করে যাচ্ছে, আর মাথা নাড়াচ্ছে। কিছুক্ষন পরে ল্যাপটপ চালু করে বসে পরল, আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল, কিন্তু সামনের মানুষটাকে দেখে আর ঘুমোতে পাচ্ছিলাম না। ঘুম কাটানোর জন্য একটু ঘুরে এসে বসতেই দেখি, অর্ক একটা অডিও খুব মন দিয়ে শুনছে। আমি কাছে গেলে বুঝতে পেলাম, এটা সেই ফোন কলটা যেটা অর্ক কে ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছিলো। আমিও অর্কর পাশে বসে শুনতে লাগলাম। মোটামুটি দুবার শোনার পর বুঝে গেলাম, যে কেউ একই কথা যা আমাকে মেসেজ করেছে, তাই অর্ককে ফোনে শুনিয়েছে। প্রত্যেকটি শব্দ এক, একই লাইন। মাঝে অর্কর গলা যেমন, কে বলছেন, আপনি কে ইত্যাদি শোনা গেলেও, অপরাধীর কণ্ঠস্বর ওই লাইন গুলো ছাড়া আর কিছু নেই। অর্ক চোখ বন্ধ করে কিছু ভিশুয়ালাইজ করছিল হয়ত, হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করল, কিরে কিছু বুঝতে পারছিস ?
আমি আর কি বুঝব, মুখটা ভাতের হাঁড়ির মত করে বললাম, ভাই কিছুই তো ঘটে ঢুকছে না, কি করা যায় বল তো ?
অর্ক বলল – আমি বুঝেছি, বলে উঠতে গেল, আর তখনই অর্কর ফোনে সেই আনামী নম্বর থেকে আবার একটা ফোন এলো। অর্ক যথারীতি ফোন টা রেকর্ডিং মোডে দিয়ে লাউডস্পিকারে দিয়ে কলটা রিসিভ করল... সেই অপরিচিত কণ্ঠস্বর সেই একই কথা, সেই একই লাইন, নতুনত্ত্ব কিছু নেই।
“স্যর, ঘুমোচ্ছেন বুঝি? ভালো, ছুটির দিনে ঘুমানো ভালো, আরও ভালো, অন্যের কাজে নাক না গলিয়ে, নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে তো নাকি... নাক কেটে গেলে তখন কি হবে? আর নাকের সাথে যদি মাথাটাও......না না , স্যর অপরাধ নেবেন না, উপদেশ ভাবতে পারেন ... আশা করি কথাটা মনে থাকবে।”
উপরের কথাটা দুবার রিপিট হয়ে ফোনটা কেটে গেল, অর্ক সাথে সাথে এই রেকর্ডিংটা ল্যাপটপে সাথে সাথে চালান করে দিল। ও আবার শুনতে লাগলো... আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, কি রে সেই তো একই জিনিস এতে আবার নতুন কি আছে?
বার দশেক এরকম করে অর্ক হঠাৎ মুচকি হেসে বলে উঠল – মানিকচাঁদ, কিছু বুঝলি না তো ? এই দেখ, এবারে শোন, বলে অর্ক নিজের হেডফোনটা আমার কানে লাগিয়ে বলল – এইবারে একেবারে ভালো ছেলের মত কোনও আওয়াজ না করে শোন। আমি অর্কর কথামত কানে হেডফোনে আবার প্রথম কলটা শুনতে লাগলাম। শোনা হয়ে গেলে আবার দ্বিতীয়কলটা শুনলাম, শেষে বললাম, না ভাই এ আমার কর্ম নয়, তুই বল।
আচ্ছা মৈনাক, এখানে আশে পাশে কোনও কারখানা আছে ? অকস্মাৎ এই প্রশ্নে আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললাম, এখানে তো কোনও কারখানা নেই, তবে আমার মনে হয়, মেন রাস্তার ওপারে একটা প্লাস্টিক কারখানা আছে।
অর্ক হুম করে থম মেরে বসে রইল, তবে আমি ওর চোখ দেখে বুঝলাম, নিশ্চয়ই, ও কিছু আলোর কিরণ দেখতে পেয়েছে, যার জন্য ওর চোখদুটো চিকচিক করছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, নে এবারে তুই ঘুমিয়ে পর, আমি একটু বাইরে থেকে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসছি। আমি বললাম কেন আবার কি হল? আমি কি যাব ? অর্ক ঘাড় নেড়ে না বলে জামা পড়তে উঠে চলে গেল। আর কি করা চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম।
কতক্ষন যে ঘুমিয়েছিলাম জানি না, হঠাৎ অর্কর ডাকাডাকিতে ঘুম থেকে ধরফর করে উঠে দেখলাম, ঘড়িতে ছটা কুড়ি বেজে গেছে। অর্ক বলে চলেছে, কি যে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমাস, চোর পালিয়ে গেলেও তো ধরতে পারবি না। তাড়াতাড়ি চল, ওদিকে অবিনাশ বাবুদের আসার সময় হয়ে এলো।
তাড়াতাড়ি চোখ-মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আমাদের চেম্বারের উদ্দেশ্যে। মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমরা। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় সাতটা বাজতে না বাজতেই অবিনাশবাবু হাজির হয়ে গেলেন সাথে একটা পলিথিনের প্যাকেট। ভদ্রলোক হাত জড়ো করে নমস্কার করতেই অর্ক বলে উঠল, আরে বসুন না, বসে বসে কথা বলি। অবিনাশ বাবু হাতের প্যাকেট টা অর্কর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, এই নিন, আপনি যা যা বলেছিলেন ঠিক তাই নিয়ে এসেছি, দেখুন যদি আপনার কোনও কাজে লাগে।
অর্ক হেসে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বলল – দেখি, কতদুর যাওয়া যায়... আচ্ছা, কিছু মনে করবেন না, আপনি তো ট্যাক্সি চালান, অবিনাশ বাবু, এখানে মানে এই আমাদের এলাকায় কাছে পিঠে কোনও ছোট বা মাঝারি কারখানা আছে বলে জানেন কি?
অবিনাশ বাবু অনেক ভেবে বললেন , তাতো ঠিক মনে পরছে না, তবে বড় রাস্তার উপরে একটা প্লাস্টিক কারখানা আছে এতুকু জানি। অর্ক ঘাড় নেড়ে বলল – হ্যাঁ তা আমিও জানি, কিন্তু সেটা অনেক বড়ো কারখানা, আমার একটু ছোট বা মাঝারি কারখানা দরকার।
আমি আড় চোখে অর্কর দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলাম কেন আবার এর মধ্যে কারখানা কোথা থেকে আসছে? অর্ক ভুরূ নাচিয়ে বলল- না কিছু না, আমার এক ক্লায়েনট এখানকার কোনও কারখানার কথা বলছিল। যাই হোক, থ্যাঙ্ক ইউ অবিনাশ বাবু আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য, আচ্ছা, আমরা আপনার বাড়ি থেকে বেরনোর পর, আর কে কে আপনাদের বাড়িতে গিয়েছিলো বলুন তো ? অবিনাশ বাবু মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলেন, ওফ, আর বলবেন না, কে যায়নি সেটাই বলুন, পাকরাশীবাবু, ওনার স্ত্রী, আর সব ভাড়াটিয়া, কাকলিদেবী ও ওনার স্বামী, আর আর সবথেকে ইম্পরট্যান্ট হল পরাণ সাহার বিধবা মার আমাদের বাড়ি যাওয়া, তারপর পুলিশও গিয়েছিলো, পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা , কাকে বাদ দেব বুঝতে পারছি না।
অর্ক সব বাদ দিয়ে বলল - আচ্ছা পরাণদার মা নিশচই আপনাদের অনুরোধ করতে গিয়েছিলেন যাতে ওনার ছেলের জেল না হয়। পরাণদা কে ফাঁসানো হয়েছে, আপনারা যাতে পরাণদার বিপক্ষে কোনও কেস না করেন কি তাই তো? অবশ্য আমার অনুমান এটা।
আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে, অবিনাশবাবু বলে উঠলেন, কি বলব মশাই, আমি ও আমার স্ত্রী আর যারা ছিল সবাই প্রথমে সেটাই ভেবেছিলাম, কিন্তু কি বলব, ভদ্রমহিলাকে দেখে ওনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। উনি আমদেরকে এসে বললেন, দেখ বাবা, আমি পরাণ এর মা ঠিকই, কিন্তু আমি জানি সন্তান হারানোর ব্যথা, বেদনা, আর তোমার তো সন্তান খুব ছোট বয়সেই তোমার কোলছাড়া হল, তাই তোমরা ভেব না যে আমি এখানে পরাণএর ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি, আমি এসেছি, তোমাদের সাথে কথা বলতে। এক সন্তান হারা বিধবা মা আর এক সন্তান হারা মা – বাবার পাশে দাঁড়াতে এসেছে। তোমরা যদি মনে কর, বা পুলিশ যদি মনে করে যে আমার পরাণ দোষী, তবে তার উপযুক্ত শাস্তি হোক। আমি মা হয়ে বলছি, আমি কিছু মনে করব না...এই বলে ভদ্রমহিলা হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমাদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ঘরে তখন পিন ড্রপ সাইলেন্স, অবিনাশ বাবু বলে চলেছেন, কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না, মনের কষ্ট এক ঝটকায় মনে হল যেন অনেকটা কমে গেল, শুধু কাকলি দেবী বললেন, পরাণএর মায়ের মাথা খারাপ আছে। শোকে ভদ্রমহিলা পাগল হয়ে গেছেন মনে হয়। এই বলে অবিনাশ বাবু চুপ করলেন। আমি বলে উঠলাম – ইন্টারেস্টিং ব্যাপার মশাই।
অর্ক বললেন তখন ঘরে আপানারা, কাকলিদেবীরা ছারা আর কেউ ছিলেন নাকি? অবিনাশ বাবু বলে উঠলেন – হ্যাঁ পাকরাশীবাবু ছিলেন শেষ পর্যন্ত। কথা শেষ হলে, একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অর্ক বলল – অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অবিনাশ বাবু, এবারে আপনি আসতে পারেন।
আমি অবিনাশ বাবু কে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলাম, অবিনাশ বাবু, দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গাঢ় শীতের নিকষ কালো কুয়াশার অন্ধকারে মিশে গেলেন, দরজা বন্ধ করে আমি অর্কর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলাম, কি রে ভাই, এসব কি হচ্ছে, কিছু কি বোঝা গেল ? এইসব কি আনতে বলেছিলিস পরাণ দা কে বলে আমি দেখতে যাব, দেখি অর্ক, ততক্ষনে, পলিথিনের ব্যাগ থেকে জিনিশ গুলো বার করে নিয়েছে, দেখলাম, তাতে মুকুলিকার বিভিন্ন বয়সের সাদা কালো আর রঙ্গীন ছবি, জন্মের শংসাপত্র, স্কুলের আই ডি কার্ড, বেলেঘাটার অনাথ আশ্রমের কাগজ পত্র ইতায়দি ইত্যাদি। অর্কর মুখ দেখলাম, গম্ভীর হয়ে আছে, একমনে জিনিশ গুলো পরীক্ষা করছে, তাই আমি কিছু জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেলাম না, কিন্তু মনে মনে বুঝলাম, অর্ক আজ প্রচণ্ড টেনশনে আছে, আর ভাবলাম এগুলো নিয়ে কি হবে? এগুলো কি কোনও কাজে লাগবে ?
অর্ক আমার দিকে তাকিয়ে বলল – কাল তো তোর অফিস, তাই না, কিন্তু কালকে অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে রে মৈনাক। কি করি বলত ? আমি বললাম – কি কি ? অর্ক চোখ বড় বড় করে বলে উঠল – আরে এই জন্যই জ্যেঠু তোকে মানিকচাঁদ বলে ডাকে। তুই জানিস না কি কি কাজ আছে?
আমি থতমত খেয়ে বলে উঠলাম , না মানে আমি,...
থাক, তোকে আর মনে করতে হবে না, প্রথম কাজ - পরাণদা যে করেই হোক ছাড়ানো, কারণ কালকেই ওকে কোর্টে চালান করে দেবে পুলিশ, তাই সকাল সকাল থানা থেকে ছাড়াতে হবে। দ্বিতীয় – থানা থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্টের কপি করে আনতে হবে, আমার মনে হয় এই রিপোর্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই কেসে। তৃতীয় – আরও কিছু বাকি কাজ আছে, যেগুলো, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি করে নিতে হবে, কারণ, পরাণদা ছাড়া পেলে, অপরাধী বুঝে যাবে যে আমরা ওর ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছি, তাই সে সাবধান হয়ে যাবার আগেই আমাদেরকে নিজেদের ঘর গুছিয়ে এমন কিছু করতে হবে, যাতে বিপক্ষ কিছু ভুল পদক্ষেপ নেয় আর যার ফলে আমরা তাকে হাতে নাতে ধরতে পারি...
আমি বেশ লক্ষ্য করছিলাম, যে অর্কর মুখ-চোখে সেই দীপ্ত হাসির রেখাটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আবার যেটা গত দুদিন থেকে আমি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমারও যেন মনে হল বেশ একটা আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি মনটাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। মনে হল আমরা যেন সঠিক পথেই এগোচ্ছি। আমি বললাম, অর্ক সকাল বেলা আমি তোর সাথে থাকতে পারব, কিন্তু কালকে একটা আর্জেন্ট অ্যাসাইনমেনট আছে দুপুরে, সেটা করে বিকেলে তাড়াতাড়ি আমি ফিরে আসতে পারব। খালি দুপুরটুকু একটু ম্যানেজ করতে হবে তোকে। অর্ক বলল – ওকে ডান। কিন্তু পরাণদাকে কি করে ছাড়ানো যায় সে ব্যাপারে কি কিছু ভেবেছিস? আমি ঠোঁট উলটে না বললাম। অর্ক হেসে বলল - ঠিক আছে চল, কাল সকালে দেখব। এখন বেড়িয়ে পড়ি, বাড়িতে গিয়ে আবার ফোনকলটা নিয়ে বসতে হবে।
আমরা দুজনেই একটু পরে চেম্বার বন্ধ করে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সমস্ত রাস্তা নির্জন এই সন্ধ্যে আটটাতেই। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি পরেই চলেছে, অর্ক একটা ওভারকোট পড়েছে, মাথায় টুপি দিয়ে, আর আমার সম্বল সেই ছাতা। দুজনে বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। বড় রাস্তার চার মাথার মোড়ের কাছে এসে অর্ক আমাকে একটা সিগারেট দিয়ে আর একটা নিজে ধরাল। বলল- একটা কিছু আন্দাজ করতে পারছি, বুঝতে পারছিনা সঠিক কিনা, কে জানে কাল সকাল আবার হয়ত অন্য কোনও খেলা দেখাবে, জানিস জ্যেঠু মাঝে মাঝে ঠিক কথাই বলে, বলে, যখন দেখবি, কোনও কিছু কিছুতেই তোর আয়ত্তের মধ্যে আসছে না, তখন স্রেফ চুপ করে যাবি, আর অনুভব করার চেষ্টা করবি শুধু, ঘটনা ঘটার থাকলে ঘটতে দে, শেষে কিছু না কিছু পরে থাকবেই থাকবে। তখন আবার নতুন করে ভাববি, দেখবি জট অনেকটাই কেটে যাবে, হয়ত নতুন কোনও সুত্র পেলেও পেতে পারিস।
আমি চুপ করে শুনছিলাম অর্কর কথা, আর ভাবছিলাম, সত্যি কি বিচিত্র এই পৃথিবী। রাত্রের এই ঠাণ্ডাটা একটু বোধ হয় ভালোও লাগছিল। একে অন্ধকার, তারপর ঠান্ডা ও ঝিরঝিরে বৃষ্টির জন্য যদিও বেশি দূর অব্ধি দেখা যাচ্ছে না, তবুও একটা ফ্রেশনেস আছে পরিবেশের এখন। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সিগারেটটা ফুরিয়ে এসেছিলো, প্রায় হঠাৎ একটা জোরে আওয়াজে সম্বিত ফিরল, দেখলাম, অর্কর হাত থেকে সিগারেটটা মাটিতে পড়ে গেছে, অর্ক বাঁ হাতটা ধরে বসে পড়েছে, আর বাঁ হাতেই ধরা পলিথিনের প্যাকেটটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার পায়ের কাছে একটা প্রায় অর্ধেক আধলা ইটের টুকরো কাগজ দিয়ে মোড়া পরে আছে। কিছু বোঝার আগেই দেখি অর্ক উঠে দাঁড়ালো আর সাথে সাথেই, এক সাদা কাপড়ে ঢাকা ছায়ামূর্তিকে আধো অন্ধকারের মধ্যে সামনের এক গলির মধ্যে অতি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখলাম, অর্ক পড়ি কি মরি করে দৌড়তে লাগলো সেইদিকে, যাবার আগে বলল – মৈনাক, তুই ওই ইট আর প্যাকেটটা নিয়ে দাঁড়া, আমি আসছিইইইইইই......।
আমি প্রায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রায় দুমিনিট দাঁড়িয়ে থাকলাম, কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না, তারপর হঠাৎ দূর থেকে অর্কর গলার আওয়াজ পেলাম – মৈনাক তাড়াতাড়ি আয়, আমি সাথে সাথে সোজা অর্কর দিকে ছুট দিলাম, বেশ কিছুটা দৌড়নোর পর গলির প্রায় মধ্যে চলে গিয়েও অর্ক বা সেই ছায়ামানুষ কারোর দেখা পেলাম না।
কি করব, কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না, কি হল? অর্কর কোনও বিপদ হল কিনা এই সব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অর্কর কথা মনে পরে গেল, আবার রাস্তার চার মাথার মোড়ে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলাম। আবার দৌড়ে ফিরে এলাম সেই জায়গায়।
কিন্তু একি ? প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটটা থেকে কাগজপত্র গুলো সব ছড়ান কেন রাস্তার উপরে? এবার কি হবে ?
আমি আর কি বুঝব, মুখটা ভাতের হাঁড়ির মত করে বললাম, ভাই কিছুই তো ঘটে ঢুকছে না, কি করা যায় বল তো ?
অর্ক বলল – আমি বুঝেছি, বলে উঠতে গেল, আর তখনই অর্কর ফোনে সেই আনামী নম্বর থেকে আবার একটা ফোন এলো। অর্ক যথারীতি ফোন টা রেকর্ডিং মোডে দিয়ে লাউডস্পিকারে দিয়ে কলটা রিসিভ করল... সেই অপরিচিত কণ্ঠস্বর সেই একই কথা, সেই একই লাইন, নতুনত্ত্ব কিছু নেই।
“স্যর, ঘুমোচ্ছেন বুঝি? ভালো, ছুটির দিনে ঘুমানো ভালো, আরও ভালো, অন্যের কাজে নাক না গলিয়ে, নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে তো নাকি... নাক কেটে গেলে তখন কি হবে? আর নাকের সাথে যদি মাথাটাও......না না , স্যর অপরাধ নেবেন না, উপদেশ ভাবতে পারেন ... আশা করি কথাটা মনে থাকবে।”
উপরের কথাটা দুবার রিপিট হয়ে ফোনটা কেটে গেল, অর্ক সাথে সাথে এই রেকর্ডিংটা ল্যাপটপে সাথে সাথে চালান করে দিল। ও আবার শুনতে লাগলো... আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, কি রে সেই তো একই জিনিস এতে আবার নতুন কি আছে?
বার দশেক এরকম করে অর্ক হঠাৎ মুচকি হেসে বলে উঠল – মানিকচাঁদ, কিছু বুঝলি না তো ? এই দেখ, এবারে শোন, বলে অর্ক নিজের হেডফোনটা আমার কানে লাগিয়ে বলল – এইবারে একেবারে ভালো ছেলের মত কোনও আওয়াজ না করে শোন। আমি অর্কর কথামত কানে হেডফোনে আবার প্রথম কলটা শুনতে লাগলাম। শোনা হয়ে গেলে আবার দ্বিতীয়কলটা শুনলাম, শেষে বললাম, না ভাই এ আমার কর্ম নয়, তুই বল।
আচ্ছা মৈনাক, এখানে আশে পাশে কোনও কারখানা আছে ? অকস্মাৎ এই প্রশ্নে আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললাম, এখানে তো কোনও কারখানা নেই, তবে আমার মনে হয়, মেন রাস্তার ওপারে একটা প্লাস্টিক কারখানা আছে।
অর্ক হুম করে থম মেরে বসে রইল, তবে আমি ওর চোখ দেখে বুঝলাম, নিশ্চয়ই, ও কিছু আলোর কিরণ দেখতে পেয়েছে, যার জন্য ওর চোখদুটো চিকচিক করছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, নে এবারে তুই ঘুমিয়ে পর, আমি একটু বাইরে থেকে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসছি। আমি বললাম কেন আবার কি হল? আমি কি যাব ? অর্ক ঘাড় নেড়ে না বলে জামা পড়তে উঠে চলে গেল। আর কি করা চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম।
কতক্ষন যে ঘুমিয়েছিলাম জানি না, হঠাৎ অর্কর ডাকাডাকিতে ঘুম থেকে ধরফর করে উঠে দেখলাম, ঘড়িতে ছটা কুড়ি বেজে গেছে। অর্ক বলে চলেছে, কি যে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমাস, চোর পালিয়ে গেলেও তো ধরতে পারবি না। তাড়াতাড়ি চল, ওদিকে অবিনাশ বাবুদের আসার সময় হয়ে এলো।
তাড়াতাড়ি চোখ-মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আমাদের চেম্বারের উদ্দেশ্যে। মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমরা। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় সাতটা বাজতে না বাজতেই অবিনাশবাবু হাজির হয়ে গেলেন সাথে একটা পলিথিনের প্যাকেট। ভদ্রলোক হাত জড়ো করে নমস্কার করতেই অর্ক বলে উঠল, আরে বসুন না, বসে বসে কথা বলি। অবিনাশ বাবু হাতের প্যাকেট টা অর্কর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, এই নিন, আপনি যা যা বলেছিলেন ঠিক তাই নিয়ে এসেছি, দেখুন যদি আপনার কোনও কাজে লাগে।
অর্ক হেসে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বলল – দেখি, কতদুর যাওয়া যায়... আচ্ছা, কিছু মনে করবেন না, আপনি তো ট্যাক্সি চালান, অবিনাশ বাবু, এখানে মানে এই আমাদের এলাকায় কাছে পিঠে কোনও ছোট বা মাঝারি কারখানা আছে বলে জানেন কি?
অবিনাশ বাবু অনেক ভেবে বললেন , তাতো ঠিক মনে পরছে না, তবে বড় রাস্তার উপরে একটা প্লাস্টিক কারখানা আছে এতুকু জানি। অর্ক ঘাড় নেড়ে বলল – হ্যাঁ তা আমিও জানি, কিন্তু সেটা অনেক বড়ো কারখানা, আমার একটু ছোট বা মাঝারি কারখানা দরকার।
আমি আড় চোখে অর্কর দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলাম কেন আবার এর মধ্যে কারখানা কোথা থেকে আসছে? অর্ক ভুরূ নাচিয়ে বলল- না কিছু না, আমার এক ক্লায়েনট এখানকার কোনও কারখানার কথা বলছিল। যাই হোক, থ্যাঙ্ক ইউ অবিনাশ বাবু আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য, আচ্ছা, আমরা আপনার বাড়ি থেকে বেরনোর পর, আর কে কে আপনাদের বাড়িতে গিয়েছিলো বলুন তো ? অবিনাশ বাবু মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলেন, ওফ, আর বলবেন না, কে যায়নি সেটাই বলুন, পাকরাশীবাবু, ওনার স্ত্রী, আর সব ভাড়াটিয়া, কাকলিদেবী ও ওনার স্বামী, আর আর সবথেকে ইম্পরট্যান্ট হল পরাণ সাহার বিধবা মার আমাদের বাড়ি যাওয়া, তারপর পুলিশও গিয়েছিলো, পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা , কাকে বাদ দেব বুঝতে পারছি না।
অর্ক সব বাদ দিয়ে বলল - আচ্ছা পরাণদার মা নিশচই আপনাদের অনুরোধ করতে গিয়েছিলেন যাতে ওনার ছেলের জেল না হয়। পরাণদা কে ফাঁসানো হয়েছে, আপনারা যাতে পরাণদার বিপক্ষে কোনও কেস না করেন কি তাই তো? অবশ্য আমার অনুমান এটা।
আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে, অবিনাশবাবু বলে উঠলেন, কি বলব মশাই, আমি ও আমার স্ত্রী আর যারা ছিল সবাই প্রথমে সেটাই ভেবেছিলাম, কিন্তু কি বলব, ভদ্রমহিলাকে দেখে ওনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। উনি আমদেরকে এসে বললেন, দেখ বাবা, আমি পরাণ এর মা ঠিকই, কিন্তু আমি জানি সন্তান হারানোর ব্যথা, বেদনা, আর তোমার তো সন্তান খুব ছোট বয়সেই তোমার কোলছাড়া হল, তাই তোমরা ভেব না যে আমি এখানে পরাণএর ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি, আমি এসেছি, তোমাদের সাথে কথা বলতে। এক সন্তান হারা বিধবা মা আর এক সন্তান হারা মা – বাবার পাশে দাঁড়াতে এসেছে। তোমরা যদি মনে কর, বা পুলিশ যদি মনে করে যে আমার পরাণ দোষী, তবে তার উপযুক্ত শাস্তি হোক। আমি মা হয়ে বলছি, আমি কিছু মনে করব না...এই বলে ভদ্রমহিলা হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমাদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ঘরে তখন পিন ড্রপ সাইলেন্স, অবিনাশ বাবু বলে চলেছেন, কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না, মনের কষ্ট এক ঝটকায় মনে হল যেন অনেকটা কমে গেল, শুধু কাকলি দেবী বললেন, পরাণএর মায়ের মাথা খারাপ আছে। শোকে ভদ্রমহিলা পাগল হয়ে গেছেন মনে হয়। এই বলে অবিনাশ বাবু চুপ করলেন। আমি বলে উঠলাম – ইন্টারেস্টিং ব্যাপার মশাই।
অর্ক বললেন তখন ঘরে আপানারা, কাকলিদেবীরা ছারা আর কেউ ছিলেন নাকি? অবিনাশ বাবু বলে উঠলেন – হ্যাঁ পাকরাশীবাবু ছিলেন শেষ পর্যন্ত। কথা শেষ হলে, একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অর্ক বলল – অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অবিনাশ বাবু, এবারে আপনি আসতে পারেন।
আমি অবিনাশ বাবু কে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলাম, অবিনাশ বাবু, দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গাঢ় শীতের নিকষ কালো কুয়াশার অন্ধকারে মিশে গেলেন, দরজা বন্ধ করে আমি অর্কর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলাম, কি রে ভাই, এসব কি হচ্ছে, কিছু কি বোঝা গেল ? এইসব কি আনতে বলেছিলিস পরাণ দা কে বলে আমি দেখতে যাব, দেখি অর্ক, ততক্ষনে, পলিথিনের ব্যাগ থেকে জিনিশ গুলো বার করে নিয়েছে, দেখলাম, তাতে মুকুলিকার বিভিন্ন বয়সের সাদা কালো আর রঙ্গীন ছবি, জন্মের শংসাপত্র, স্কুলের আই ডি কার্ড, বেলেঘাটার অনাথ আশ্রমের কাগজ পত্র ইতায়দি ইত্যাদি। অর্কর মুখ দেখলাম, গম্ভীর হয়ে আছে, একমনে জিনিশ গুলো পরীক্ষা করছে, তাই আমি কিছু জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেলাম না, কিন্তু মনে মনে বুঝলাম, অর্ক আজ প্রচণ্ড টেনশনে আছে, আর ভাবলাম এগুলো নিয়ে কি হবে? এগুলো কি কোনও কাজে লাগবে ?
অর্ক আমার দিকে তাকিয়ে বলল – কাল তো তোর অফিস, তাই না, কিন্তু কালকে অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে রে মৈনাক। কি করি বলত ? আমি বললাম – কি কি ? অর্ক চোখ বড় বড় করে বলে উঠল – আরে এই জন্যই জ্যেঠু তোকে মানিকচাঁদ বলে ডাকে। তুই জানিস না কি কি কাজ আছে?
আমি থতমত খেয়ে বলে উঠলাম , না মানে আমি,...
থাক, তোকে আর মনে করতে হবে না, প্রথম কাজ - পরাণদা যে করেই হোক ছাড়ানো, কারণ কালকেই ওকে কোর্টে চালান করে দেবে পুলিশ, তাই সকাল সকাল থানা থেকে ছাড়াতে হবে। দ্বিতীয় – থানা থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্টের কপি করে আনতে হবে, আমার মনে হয় এই রিপোর্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই কেসে। তৃতীয় – আরও কিছু বাকি কাজ আছে, যেগুলো, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি করে নিতে হবে, কারণ, পরাণদা ছাড়া পেলে, অপরাধী বুঝে যাবে যে আমরা ওর ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছি, তাই সে সাবধান হয়ে যাবার আগেই আমাদেরকে নিজেদের ঘর গুছিয়ে এমন কিছু করতে হবে, যাতে বিপক্ষ কিছু ভুল পদক্ষেপ নেয় আর যার ফলে আমরা তাকে হাতে নাতে ধরতে পারি...
আমি বেশ লক্ষ্য করছিলাম, যে অর্কর মুখ-চোখে সেই দীপ্ত হাসির রেখাটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আবার যেটা গত দুদিন থেকে আমি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমারও যেন মনে হল বেশ একটা আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি মনটাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। মনে হল আমরা যেন সঠিক পথেই এগোচ্ছি। আমি বললাম, অর্ক সকাল বেলা আমি তোর সাথে থাকতে পারব, কিন্তু কালকে একটা আর্জেন্ট অ্যাসাইনমেনট আছে দুপুরে, সেটা করে বিকেলে তাড়াতাড়ি আমি ফিরে আসতে পারব। খালি দুপুরটুকু একটু ম্যানেজ করতে হবে তোকে। অর্ক বলল – ওকে ডান। কিন্তু পরাণদাকে কি করে ছাড়ানো যায় সে ব্যাপারে কি কিছু ভেবেছিস? আমি ঠোঁট উলটে না বললাম। অর্ক হেসে বলল - ঠিক আছে চল, কাল সকালে দেখব। এখন বেড়িয়ে পড়ি, বাড়িতে গিয়ে আবার ফোনকলটা নিয়ে বসতে হবে।
আমরা দুজনেই একটু পরে চেম্বার বন্ধ করে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সমস্ত রাস্তা নির্জন এই সন্ধ্যে আটটাতেই। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি পরেই চলেছে, অর্ক একটা ওভারকোট পড়েছে, মাথায় টুপি দিয়ে, আর আমার সম্বল সেই ছাতা। দুজনে বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। বড় রাস্তার চার মাথার মোড়ের কাছে এসে অর্ক আমাকে একটা সিগারেট দিয়ে আর একটা নিজে ধরাল। বলল- একটা কিছু আন্দাজ করতে পারছি, বুঝতে পারছিনা সঠিক কিনা, কে জানে কাল সকাল আবার হয়ত অন্য কোনও খেলা দেখাবে, জানিস জ্যেঠু মাঝে মাঝে ঠিক কথাই বলে, বলে, যখন দেখবি, কোনও কিছু কিছুতেই তোর আয়ত্তের মধ্যে আসছে না, তখন স্রেফ চুপ করে যাবি, আর অনুভব করার চেষ্টা করবি শুধু, ঘটনা ঘটার থাকলে ঘটতে দে, শেষে কিছু না কিছু পরে থাকবেই থাকবে। তখন আবার নতুন করে ভাববি, দেখবি জট অনেকটাই কেটে যাবে, হয়ত নতুন কোনও সুত্র পেলেও পেতে পারিস।
আমি চুপ করে শুনছিলাম অর্কর কথা, আর ভাবছিলাম, সত্যি কি বিচিত্র এই পৃথিবী। রাত্রের এই ঠাণ্ডাটা একটু বোধ হয় ভালোও লাগছিল। একে অন্ধকার, তারপর ঠান্ডা ও ঝিরঝিরে বৃষ্টির জন্য যদিও বেশি দূর অব্ধি দেখা যাচ্ছে না, তবুও একটা ফ্রেশনেস আছে পরিবেশের এখন। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সিগারেটটা ফুরিয়ে এসেছিলো, প্রায় হঠাৎ একটা জোরে আওয়াজে সম্বিত ফিরল, দেখলাম, অর্কর হাত থেকে সিগারেটটা মাটিতে পড়ে গেছে, অর্ক বাঁ হাতটা ধরে বসে পড়েছে, আর বাঁ হাতেই ধরা পলিথিনের প্যাকেটটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার পায়ের কাছে একটা প্রায় অর্ধেক আধলা ইটের টুকরো কাগজ দিয়ে মোড়া পরে আছে। কিছু বোঝার আগেই দেখি অর্ক উঠে দাঁড়ালো আর সাথে সাথেই, এক সাদা কাপড়ে ঢাকা ছায়ামূর্তিকে আধো অন্ধকারের মধ্যে সামনের এক গলির মধ্যে অতি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখলাম, অর্ক পড়ি কি মরি করে দৌড়তে লাগলো সেইদিকে, যাবার আগে বলল – মৈনাক, তুই ওই ইট আর প্যাকেটটা নিয়ে দাঁড়া, আমি আসছিইইইইইই......।
আমি প্রায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রায় দুমিনিট দাঁড়িয়ে থাকলাম, কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না, তারপর হঠাৎ দূর থেকে অর্কর গলার আওয়াজ পেলাম – মৈনাক তাড়াতাড়ি আয়, আমি সাথে সাথে সোজা অর্কর দিকে ছুট দিলাম, বেশ কিছুটা দৌড়নোর পর গলির প্রায় মধ্যে চলে গিয়েও অর্ক বা সেই ছায়ামানুষ কারোর দেখা পেলাম না।
কি করব, কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না, কি হল? অর্কর কোনও বিপদ হল কিনা এই সব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অর্কর কথা মনে পরে গেল, আবার রাস্তার চার মাথার মোড়ে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলাম। আবার দৌড়ে ফিরে এলাম সেই জায়গায়।
কিন্তু একি ? প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটটা থেকে কাগজপত্র গুলো সব ছড়ান কেন রাস্তার উপরে? এবার কি হবে ?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দেবব্রত সান্যাল ২৭/১০/২০১৫অ্যাকশন , খুব দরকার ছিল। মৈনাক কে এতটা সাদামাটা দেখানোর কি দরকার আছে ? মানে যদি ও অর্কর সমবয়েসী হয়েও , ওর সঙ্গে থাকা ছাড়া কোনো কাজে না লাগে , তবে জুটি টা বাঁধছে কি করে। Traditionally গোয়েন্দার সহকারী একটু কম বোঝে। Tradition থেকে বাইরে এলে ক্ষতি কি ?
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২৪/১০/২০১৫দাদা এবার আর দেরি করবেন না pliz.
-
মৃণ্ময় আলম ২০/১০/২০১৫অনেক ভাল লাগলো দাদা
-
প্রশান্ত মন্ডল ১৯/১০/২০১৫আচ্ছা, তারপর আরও আছে নাকি?
-
নির্ঝর ১৮/১০/২০১৫খুব ভাল লাগল
-
মোবারক হোসেন ১৮/১০/২০১৫ভাল লাগলো পড়ে।