চোরকাঁটা - ১০ম পর্ব
( আগের সংখ্যার পর )
অবিনাশ বাবু থতমত খেয়ে বললেন, বলুন আর কি জানতে চান। অর্ক বলল – বলছি, তমালিকা দেবীকে আসতে দিন, আমরা অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন চুপ করে আবার অর্ক প্রশ্ন করল – আচ্ছা আপনার মেয়েকে আপনি সেদিন কে শেষবার কখন দেখেছিলেন মনে করে বলতে পারবেন ?
অবিনাশ বাবু বললেন, বেশ ভালো ভাবে মনে আছে, সেদিন দুপুরবেলা আমি খাওয়া শেষ করে ট্যাক্সি নিয়ে বেরোতে যাব, দেখি মেয়ে আমার এই খাটের কোনায় বসে ছবি আঁকছে। আমি কাছে এসে বসাতে আমকে ছবি দেখিয়ে বলল – বাবা, তুমি রাত্রে ঘরে আসার আগে আমার এই আঁকাটা শেষ হয়ে যাবে, তাখন তোমায় দেখাব, এই বলে, একটি অর্ধসমাপ্ত আঁকা ছবির খাতাটা আমাদের কে বার করে দেখালেন অবিনাশ বাবু।
অর্ক ছবিটা ও তারপর খাতাটার পৃষ্ঠাগুলো ভালো করে দেখে বলল – আপনার মেয়ের প্রিয় রঙ কি নীল ছিল? হ্যাঁ, ঠিক তাই, কিন্তু আপনারা জানলেন কি করে? – কথাটা বললেন তমালিকা দেবী, ঘুরে দেখি হাতে চাএর ট্রে নিয়ে তিনি আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখি, একটি সাধারন কাঁচা হাতের আঁকা ছবি, যাতে আকাশ, পুকুর নিয়ে তৈরি করা একটা ল্যান্ডস্কেপ, একটা ঘর, একটি মেয়ে আর একটি ছেলে মাঠে খেলা করছে। ছবিটির বিশেষত্ব হল, এর রঙ, শুধু এই ছবিটাই নয়, বাকী ছবিগুলোতেও দেখি নীল রঙের বিভিন্ন শেড। এইবার বুঝলাম কেন অর্ক কথাটা জিজ্ঞাসা করেছে? অর্ক শুধু বলল – রঙের উপরে খুব ভাল দখল ছিল আপনার মেয়ের।
অর্ক তমালিকাদেবীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, আচ্ছা, বলুনতো যেদিন আপনার মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় সেদিনকে কি আপনি ওকে বকা-ঝকা করেছিলেন? তমালিকা দেবী আস্তে করে বলে উঠলেন, হ্যাঁ, আসলে সেদিন কে মুকুলিকা জেদ করতে শুরু করে যে ও কোনওদিন কোথাও ঘুরতে যায় নি, তাই ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। আমি প্রথমে না করি, বলি, দেখ মা, তোর বাবার কাছে এখন সেরকম পয়সাকড়ি নেই, তাই এখন ওরকম জিদ করিস না, আগে স্কুল শুরু হোক, তারপর কোথাও থেকে ঘুরে আসব। কিন্তু মেয়ে আমার এতে রেগে গিয়ে বলে, সবাই তো ঘুরতে যায়, তোমরাই আমাকে কোথাও নিয়ে যাও না কখনো। আমি জানি না, আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে। তো সেই নিয়েই ওকে একটু বকা ঝকা করলাম। কিন্তু তারপর মেয়ে আমার জলের মত ঠাণ্ডাও হয়ে গেল। তারপর মেয়েকে ফুচকা খেতেও পাঠালাম।
অর্ক বলল - আচ্ছা, যখন আপনি বকেছিলেন, তখন কি আপনারা দুজনেই ছিলেন ঘরে না অন্য কেউ ছিল ঘরে? উত্তরে তমালিকা দেবী একটু ভেবে বললেন, না তখন আর কেউ ছিল না , তবে এর কিছুক্ষন পরেই কাকলিদেবী ওর ছোট্ট ছেলেটিকে নিয়ে আমাদের ঘরে এসেছিলেন, আমার মেয়ের মুখ গোমড়া দেখে ওকে বলেছিলেন যে চল আমাদের বাড়ি চল, ভাইএর সাথে খেলা করবি... তো মেয়ে আমার যায়নি,
হুম... অর্ক একটা ছোট্ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল – আচ্ছা সেদিন কে আপনার মেয়ের পরনে কি পোশাক ছিল বলতে পারবেন? মুকুলিকা দেবী বললেন, আমার মেয়ে সেদিনকে একটি সাদা ও হলুদ চুরিদার পরেছিল, সাথে ম্যাচিং ওড়না।
আমি বললাম – আপনি ঠিক মনে করে বলতে পারবেন যে আপনার মেয়ের সাথে কোনও স্কার্ফ ছিল কি না ? মুকুলিকা দেবী বললেন, দেখুন আমি বুঝতে পারছি, পুলিশ যে স্কার্ফটা পেয়েছে, তার কথা জিজ্ঞাসা করছেন তো ? আমরা শনাক্ত করেছি, কিন্তু সেদিন তো ও স্কার্ফটা পরেনি, তবে হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলো কিনা বুঝতে পারছি না। তবে স্কার্ফটা আমার মেয়ে মুকুলিকারই। অর্ক আবার জিজ্ঞাসা করল, পরাণদা কে আপনারা কি আগে থেকে চিনতেন? তমালিকা দেবী মাথা নাড়িয়ে না বলে বললেন, আমরা তো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না যে, এতে ওনার কি মতলব ছিল। জানি না তবে হতেও পারে, কারণ আমার মেয়ে নাকি ফুচকা খেয়ে পয়সা দেয় নি ওই লোকটিকে, কিন্তু শুধুমাত্র সেই কারণে কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে ?
অর্ক হেসে বলল – না তমালিকা দেবী, আমরা পরাণদার কাছ থেকে অনেক এরকম ফুচকা খেয়েছি, কিন্তু তার জন্য পরাণ দা আমাদেরকে কখনো বকেনি, কারণ পরাণদা সবসময় বলত, আজ দিবি না তো কাল দিবি, খেয়ে যা, যবে পয়সা হবে তবে দিবি, হিসাব করে রাখিস শুধু। আমি আর থাকতে না পেরে বললাম, সে তো শুধু চেনাশোনাদের জন্য, সবাই কে নিশ্চয়ই বলত না।
অর্ক একবার তমালিকা দেবীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল – আচ্ছা, আপনাদের এখানে কাকলি দেবীরা ছাড়া সবার সাথে পরিচয় হয়েছে ? তমালিকা দেবী ঘাড় কাত করে মেয়ে হারিয়ে যাবার আগে শুধু আমাদের পাশের ঘরের ভাড়াটেদের সাথে, বাড়িওয়ালা আর ওই কাকলিদেবীদের সাথেই পরিচয় হয়েছিলো। ওনারা সবাই খুব ভালো মানুষ, মেয়ে নিখোঁজ হবার পর থেকে বাকিদের সাথেও পরিচয় হয়ে যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা, আপনারা এখানে কতজন ভাড়াটিয়া আছেন?
অবিনাশ বাবু বললেন, আমাদের কে নিয়ে প্রায় চার ঘর ভাড়াটিয়া আছে এই বাড়িতে। অর্ক মাথা নেড়ে তমালিকা দেবীদের দিকে তাকিয়ে বলল – আচ্ছা, আপনাদের কারওর উপরে সন্দেহ হয়? অবিনাশবাবু ও তমালিকাদেবী নিজেদের পরস্পরের দিকে তাকিয়ে বললেন না, তবে এখানে আসার তিন-চার দিনের মধ্যেই আমাদের সাথে এখানকার ভাড়াটে মিঃ সান্যাল ও তার প্রতিবেশী মিঃ ঘোষের পরিবারের সাথে একটু কথাকাটাকাটি হয়, কিন্তু তা সামান্যই। তবে মিঃ সান্যাল লোকটাকে খুব একটা সুবিধের মনে হয় না আমাদের।
কথা বলতে বলতেই দেখি দরজা দিয়ে পাকরাশীজ্যেঠু ও কাকলি বউদি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। পাকরাশীজ্যেঠু ঘরে ঢুকেই খাটের একদিকে নিজের স্থান দখল করে বসলেন। কাকলিবউদিকে দেখেই বোঝা গেলো বুঝতে পেরেছেন যে অসময়ে ঢুকে পড়েছেন, তাই একটু ইতিস্তত করে বলেই বসলেন, আমি মনে হয় ভুল সময়ে এসে পরেছি, তোমাদেরকে দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না, ভাবলাম দেখি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ কেমন হয়? তবে তোমাদের যদি অসুবিধা হয় তো আমি তাহলে এখন আসি? পরে না হয় আসব আবার। অর্ক হেসে শ্লেষযুক্ত স্বরে বলল, না না এসে যখন পড়েইছেন, তখন আর যাবার দরকার নেই আপনিও বসতে পারেন। বসুন।
এইবারে অবিনাশ বাবু অর্কর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, দেখুন, ওই পরাণ বলে লোকটা যাকে পুলিশ ধরেছে, তার সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই, তবে ও আমার মেয়ের স্কার্ফটা কোথা থেকে পেল, সেটা অবশ্য ধোঁয়াশা। তাও আমাদের মনে হয়, যে ও গরীব মানুষ, নিরপরাধ, তবে আপনিই ভালো বলতে পারবেন। আপনি কাউকে সন্দেহ করছেন নাকি? অর্ক বলল - সন্দেহ তো অনেককেই করছি, তবে আপনার সাথে আমরাও একমত, পরাণদা কে ফাঁসানো হয়েছে, কিন্তু কারা তারা? তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি, এর পিছনে এক গভীর চক্রান্ত আছে। আর তাতে আপনাদের অতীতের কোনও গুরুত্ত্ব নেই, কারণ এখানকার কেউ বা কারা এর পিছনে যুক্ত আছে।
কাকলিবউদি জিজ্ঞাসা করে বসলেন - হুম আমার মনে হচ্ছে যে পরাণ কে ফাঁসানো হয়েছে, কিন্তু আমি যে ছেলেটার কথা বলেছিলাম, তার কোনও খবর পাওয়া গেছে?
অর্ক বিরক্তিভরা গলাতে উত্তর দিল – না, তাকে এখন ট্রেস কড়া যায়নি। সেটা পুলিশের কাজ আমাদের কাজ না।
তমালিকা দেবী আঁতকে উঠে বললেন, কি বলছেন, অনেকে এর পিছনে আছে? ওহ বাবা, কি বলছেন কি আমার তো মাথা ঘুরছে...
অর্ক বলল - শান্ত হন তমালিকা দেবী, আশা করি আমরা নিশ্চয়ই সফল হব, তবে আগে আমার কিছু জিনিশ দরকার আপনাদের কাছে, যা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ, আমি এই কাগজে লিখে এনেছি, এই নিন, আজ বিকেলের মধ্যে এই জিনিশগুলো আমাদের অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসবেন, এই বলে অর্ক কাগজটা অবিনাশবাবুর দিকে এগিয়ে দিল, আর একটা কথা, এর কথা যেন কেউ না জানতে পারে।
ওনারা দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে, আমরা, উঠে দাঁড়ালাম, অর্ক বলল - আজকে আসি, বিকেলে অফিসএ কথা হবে, এই বলে অর্ক, ঘরের বাইরে চলে গেল, আমিও তার পিছু নিলাম...।
তারপর আমরা একে একে সকল ভাড়াটিয়ার বাড়িতে গিয়ে রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করে পাকরাশীজ্যেঠুদের বাড়ি থেকে বেরলাম। ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসা করে যা বুঝলাম যে কলের জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে মিঃ সান্যাল আর মিঃ ঘোষের পরিবারদের সাথে একদিন শুধু তুমুল কথা কাটাকাটি হয়েছে তমালিকাদেবীদের সাথে, এবং সেখানে নামি মুকুলিকাও উপস্থিত ছিল। এর থেকে কি এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে, সেটাই অর্ক জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে দেখি, ও গম্ভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে। ওদিকে আবার হাত ঘড়ির সময় বলছে, দুপুর দেড়টা।
অর্ক বলল – মৈনাক, আজ আর তোর বাড়ি গিয়ে কাজ নেই, চল , আমাদের বাড়িতেই যাবি, ওখানে খেয়ে নিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আমরা আবার বেরব। আমারও বাড়ি যেতে ইচ্ছা করছিল না, তাই প্রায় এককথায় রাজী হয়ে গেলাম।
( চলবে )
অবিনাশ বাবু থতমত খেয়ে বললেন, বলুন আর কি জানতে চান। অর্ক বলল – বলছি, তমালিকা দেবীকে আসতে দিন, আমরা অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন চুপ করে আবার অর্ক প্রশ্ন করল – আচ্ছা আপনার মেয়েকে আপনি সেদিন কে শেষবার কখন দেখেছিলেন মনে করে বলতে পারবেন ?
অবিনাশ বাবু বললেন, বেশ ভালো ভাবে মনে আছে, সেদিন দুপুরবেলা আমি খাওয়া শেষ করে ট্যাক্সি নিয়ে বেরোতে যাব, দেখি মেয়ে আমার এই খাটের কোনায় বসে ছবি আঁকছে। আমি কাছে এসে বসাতে আমকে ছবি দেখিয়ে বলল – বাবা, তুমি রাত্রে ঘরে আসার আগে আমার এই আঁকাটা শেষ হয়ে যাবে, তাখন তোমায় দেখাব, এই বলে, একটি অর্ধসমাপ্ত আঁকা ছবির খাতাটা আমাদের কে বার করে দেখালেন অবিনাশ বাবু।
অর্ক ছবিটা ও তারপর খাতাটার পৃষ্ঠাগুলো ভালো করে দেখে বলল – আপনার মেয়ের প্রিয় রঙ কি নীল ছিল? হ্যাঁ, ঠিক তাই, কিন্তু আপনারা জানলেন কি করে? – কথাটা বললেন তমালিকা দেবী, ঘুরে দেখি হাতে চাএর ট্রে নিয়ে তিনি আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখি, একটি সাধারন কাঁচা হাতের আঁকা ছবি, যাতে আকাশ, পুকুর নিয়ে তৈরি করা একটা ল্যান্ডস্কেপ, একটা ঘর, একটি মেয়ে আর একটি ছেলে মাঠে খেলা করছে। ছবিটির বিশেষত্ব হল, এর রঙ, শুধু এই ছবিটাই নয়, বাকী ছবিগুলোতেও দেখি নীল রঙের বিভিন্ন শেড। এইবার বুঝলাম কেন অর্ক কথাটা জিজ্ঞাসা করেছে? অর্ক শুধু বলল – রঙের উপরে খুব ভাল দখল ছিল আপনার মেয়ের।
অর্ক তমালিকাদেবীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, আচ্ছা, বলুনতো যেদিন আপনার মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় সেদিনকে কি আপনি ওকে বকা-ঝকা করেছিলেন? তমালিকা দেবী আস্তে করে বলে উঠলেন, হ্যাঁ, আসলে সেদিন কে মুকুলিকা জেদ করতে শুরু করে যে ও কোনওদিন কোথাও ঘুরতে যায় নি, তাই ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। আমি প্রথমে না করি, বলি, দেখ মা, তোর বাবার কাছে এখন সেরকম পয়সাকড়ি নেই, তাই এখন ওরকম জিদ করিস না, আগে স্কুল শুরু হোক, তারপর কোথাও থেকে ঘুরে আসব। কিন্তু মেয়ে আমার এতে রেগে গিয়ে বলে, সবাই তো ঘুরতে যায়, তোমরাই আমাকে কোথাও নিয়ে যাও না কখনো। আমি জানি না, আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে। তো সেই নিয়েই ওকে একটু বকা ঝকা করলাম। কিন্তু তারপর মেয়ে আমার জলের মত ঠাণ্ডাও হয়ে গেল। তারপর মেয়েকে ফুচকা খেতেও পাঠালাম।
অর্ক বলল - আচ্ছা, যখন আপনি বকেছিলেন, তখন কি আপনারা দুজনেই ছিলেন ঘরে না অন্য কেউ ছিল ঘরে? উত্তরে তমালিকা দেবী একটু ভেবে বললেন, না তখন আর কেউ ছিল না , তবে এর কিছুক্ষন পরেই কাকলিদেবী ওর ছোট্ট ছেলেটিকে নিয়ে আমাদের ঘরে এসেছিলেন, আমার মেয়ের মুখ গোমড়া দেখে ওকে বলেছিলেন যে চল আমাদের বাড়ি চল, ভাইএর সাথে খেলা করবি... তো মেয়ে আমার যায়নি,
হুম... অর্ক একটা ছোট্ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল – আচ্ছা সেদিন কে আপনার মেয়ের পরনে কি পোশাক ছিল বলতে পারবেন? মুকুলিকা দেবী বললেন, আমার মেয়ে সেদিনকে একটি সাদা ও হলুদ চুরিদার পরেছিল, সাথে ম্যাচিং ওড়না।
আমি বললাম – আপনি ঠিক মনে করে বলতে পারবেন যে আপনার মেয়ের সাথে কোনও স্কার্ফ ছিল কি না ? মুকুলিকা দেবী বললেন, দেখুন আমি বুঝতে পারছি, পুলিশ যে স্কার্ফটা পেয়েছে, তার কথা জিজ্ঞাসা করছেন তো ? আমরা শনাক্ত করেছি, কিন্তু সেদিন তো ও স্কার্ফটা পরেনি, তবে হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলো কিনা বুঝতে পারছি না। তবে স্কার্ফটা আমার মেয়ে মুকুলিকারই। অর্ক আবার জিজ্ঞাসা করল, পরাণদা কে আপনারা কি আগে থেকে চিনতেন? তমালিকা দেবী মাথা নাড়িয়ে না বলে বললেন, আমরা তো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না যে, এতে ওনার কি মতলব ছিল। জানি না তবে হতেও পারে, কারণ আমার মেয়ে নাকি ফুচকা খেয়ে পয়সা দেয় নি ওই লোকটিকে, কিন্তু শুধুমাত্র সেই কারণে কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে ?
অর্ক হেসে বলল – না তমালিকা দেবী, আমরা পরাণদার কাছ থেকে অনেক এরকম ফুচকা খেয়েছি, কিন্তু তার জন্য পরাণ দা আমাদেরকে কখনো বকেনি, কারণ পরাণদা সবসময় বলত, আজ দিবি না তো কাল দিবি, খেয়ে যা, যবে পয়সা হবে তবে দিবি, হিসাব করে রাখিস শুধু। আমি আর থাকতে না পেরে বললাম, সে তো শুধু চেনাশোনাদের জন্য, সবাই কে নিশ্চয়ই বলত না।
অর্ক একবার তমালিকা দেবীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল – আচ্ছা, আপনাদের এখানে কাকলি দেবীরা ছাড়া সবার সাথে পরিচয় হয়েছে ? তমালিকা দেবী ঘাড় কাত করে মেয়ে হারিয়ে যাবার আগে শুধু আমাদের পাশের ঘরের ভাড়াটেদের সাথে, বাড়িওয়ালা আর ওই কাকলিদেবীদের সাথেই পরিচয় হয়েছিলো। ওনারা সবাই খুব ভালো মানুষ, মেয়ে নিখোঁজ হবার পর থেকে বাকিদের সাথেও পরিচয় হয়ে যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা, আপনারা এখানে কতজন ভাড়াটিয়া আছেন?
অবিনাশ বাবু বললেন, আমাদের কে নিয়ে প্রায় চার ঘর ভাড়াটিয়া আছে এই বাড়িতে। অর্ক মাথা নেড়ে তমালিকা দেবীদের দিকে তাকিয়ে বলল – আচ্ছা, আপনাদের কারওর উপরে সন্দেহ হয়? অবিনাশবাবু ও তমালিকাদেবী নিজেদের পরস্পরের দিকে তাকিয়ে বললেন না, তবে এখানে আসার তিন-চার দিনের মধ্যেই আমাদের সাথে এখানকার ভাড়াটে মিঃ সান্যাল ও তার প্রতিবেশী মিঃ ঘোষের পরিবারের সাথে একটু কথাকাটাকাটি হয়, কিন্তু তা সামান্যই। তবে মিঃ সান্যাল লোকটাকে খুব একটা সুবিধের মনে হয় না আমাদের।
কথা বলতে বলতেই দেখি দরজা দিয়ে পাকরাশীজ্যেঠু ও কাকলি বউদি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। পাকরাশীজ্যেঠু ঘরে ঢুকেই খাটের একদিকে নিজের স্থান দখল করে বসলেন। কাকলিবউদিকে দেখেই বোঝা গেলো বুঝতে পেরেছেন যে অসময়ে ঢুকে পড়েছেন, তাই একটু ইতিস্তত করে বলেই বসলেন, আমি মনে হয় ভুল সময়ে এসে পরেছি, তোমাদেরকে দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না, ভাবলাম দেখি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ কেমন হয়? তবে তোমাদের যদি অসুবিধা হয় তো আমি তাহলে এখন আসি? পরে না হয় আসব আবার। অর্ক হেসে শ্লেষযুক্ত স্বরে বলল, না না এসে যখন পড়েইছেন, তখন আর যাবার দরকার নেই আপনিও বসতে পারেন। বসুন।
এইবারে অবিনাশ বাবু অর্কর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, দেখুন, ওই পরাণ বলে লোকটা যাকে পুলিশ ধরেছে, তার সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই, তবে ও আমার মেয়ের স্কার্ফটা কোথা থেকে পেল, সেটা অবশ্য ধোঁয়াশা। তাও আমাদের মনে হয়, যে ও গরীব মানুষ, নিরপরাধ, তবে আপনিই ভালো বলতে পারবেন। আপনি কাউকে সন্দেহ করছেন নাকি? অর্ক বলল - সন্দেহ তো অনেককেই করছি, তবে আপনার সাথে আমরাও একমত, পরাণদা কে ফাঁসানো হয়েছে, কিন্তু কারা তারা? তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি, এর পিছনে এক গভীর চক্রান্ত আছে। আর তাতে আপনাদের অতীতের কোনও গুরুত্ত্ব নেই, কারণ এখানকার কেউ বা কারা এর পিছনে যুক্ত আছে।
কাকলিবউদি জিজ্ঞাসা করে বসলেন - হুম আমার মনে হচ্ছে যে পরাণ কে ফাঁসানো হয়েছে, কিন্তু আমি যে ছেলেটার কথা বলেছিলাম, তার কোনও খবর পাওয়া গেছে?
অর্ক বিরক্তিভরা গলাতে উত্তর দিল – না, তাকে এখন ট্রেস কড়া যায়নি। সেটা পুলিশের কাজ আমাদের কাজ না।
তমালিকা দেবী আঁতকে উঠে বললেন, কি বলছেন, অনেকে এর পিছনে আছে? ওহ বাবা, কি বলছেন কি আমার তো মাথা ঘুরছে...
অর্ক বলল - শান্ত হন তমালিকা দেবী, আশা করি আমরা নিশ্চয়ই সফল হব, তবে আগে আমার কিছু জিনিশ দরকার আপনাদের কাছে, যা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ, আমি এই কাগজে লিখে এনেছি, এই নিন, আজ বিকেলের মধ্যে এই জিনিশগুলো আমাদের অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসবেন, এই বলে অর্ক কাগজটা অবিনাশবাবুর দিকে এগিয়ে দিল, আর একটা কথা, এর কথা যেন কেউ না জানতে পারে।
ওনারা দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে, আমরা, উঠে দাঁড়ালাম, অর্ক বলল - আজকে আসি, বিকেলে অফিসএ কথা হবে, এই বলে অর্ক, ঘরের বাইরে চলে গেল, আমিও তার পিছু নিলাম...।
তারপর আমরা একে একে সকল ভাড়াটিয়ার বাড়িতে গিয়ে রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করে পাকরাশীজ্যেঠুদের বাড়ি থেকে বেরলাম। ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসা করে যা বুঝলাম যে কলের জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে মিঃ সান্যাল আর মিঃ ঘোষের পরিবারদের সাথে একদিন শুধু তুমুল কথা কাটাকাটি হয়েছে তমালিকাদেবীদের সাথে, এবং সেখানে নামি মুকুলিকাও উপস্থিত ছিল। এর থেকে কি এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে, সেটাই অর্ক জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে দেখি, ও গম্ভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে। ওদিকে আবার হাত ঘড়ির সময় বলছে, দুপুর দেড়টা।
অর্ক বলল – মৈনাক, আজ আর তোর বাড়ি গিয়ে কাজ নেই, চল , আমাদের বাড়িতেই যাবি, ওখানে খেয়ে নিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আমরা আবার বেরব। আমারও বাড়ি যেতে ইচ্ছা করছিল না, তাই প্রায় এককথায় রাজী হয়ে গেলাম।
( চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
তপন দাস ১৫/১০/২০১৫পড়তে পড়তে বারবার ফেলুদা , ব্যোমকেশের কথা মনে পড়ছে।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ১৩/১০/২০১৫বুকটা ধুক ধুক করছে, ভয় করছে - কি হয় কি হয় , কে ধরা পড়ে! সাসপেন্স !! শান্তনু ভায়াকে অভিনন্দন!!! অর্ক ও মৈনাক স্যারকে শুভেচ্ছা জানাই।
তাড়াতাড়ি খুনিকে ধরে ফেলুন স্যার............
ব্লাড প্রেসার ৪০০........................ -
পরশ ১৩/১০/২০১৫মজা পেলাম
-
দেবব্রত সান্যাল ১৩/১০/২০১৫তোমাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। টেনে যাচ্ছ আর পাঠকের ব্লাড প্রেসার বাড়ছে।