চোরকাঁটা - ৩য় পর্ব
( আগের সংখ্যার পর )
অর্কর গলার স্বর ভেসে এলো, এখনও খবরের কাগজটা ভাল করে পড়িস না, না হলে এরকম অনুমান তুই ও করতে পারতিস। আমি নীচু স্বরে বলে উঠলাম – সরি বস। আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না যে ঠিক আসল সময়ে কি করে আমি এগুলো মিস করে যাই।
আমরা মিনিট দশেকের মধ্যেই বেড়িয়ে পড়লাম, থানায় পৌঁছে দেখি লাশ ততক্ষনে ময়না তদন্তের জন্য চলে গেছে। আমরা যাওয়াতে, ভদ্রদা আমাদেরকে বসতে বললেন, অর্ক উত্তরে ভদ্রদাকে মুকুলিকার পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করল।
ভদ্রদা হাঁক মেরে এক কনস্টেবলকে বললেন যে যে মেয়েটির লাশ পাওয়া গেছে তার যা যা জিনিশপত্র পুলিশ সীজ করেছে, সেগুলো এক্ষুনি টেবিলে নিয়ে আসতে। মিনিট দুইয়ের মধ্যে একটা পলিথিনে মোড়া সব জিনিশপত্র হাজির হল আমাদের সামনে। ভদ্রদা একটা একটা করে জিনিস বার করে আমাদের দেখাতে লাগলেন আর অর্ক তার নিজের নোটবুকে লিখে রাখল।
আমি দেখলাম, যে এর মধ্যে মুকুলিকার পরনের পোষাক ছাড়া আর ছিল একটা আংটি যা নিতান্তই বাজার থেকে কেনা বলে মনে হল। অর্ক সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল, হঠাৎ ওর চোখ এক জায়গায় আটকে গেল। অর্ক ওর পোষাক থেকে একধরণের কালো দলাকরা পদার্থ বার করে আনল, যা অনেকটা প্ল্যাস্টিকএর মতো দেখতে। আমি ভাল করে লক্ষ্য করলাম, একই ধরণের পদার্থ সারা পোষাকের খাঁজে খাঁজে লেগে আছে। পদার্থটা নিয়ে হাতে দিতেই সেটা আবার গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে নীচে পরে গেল। আমরা দুজনেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভদ্রদার দিকে তাকালাম। ভদ্রদাও মুখটা ব্যাজার করে বললেন এটা কি জিনিস মশায় ? এটা কি হতে পারে যে পুকুরপাঁকে এতক্ষণ ধরে পরে ছিল বডিটা তাই হয়তো ওখান থেকেই কিছু লেগেছে?
উত্তরে অর্ক বলল – হতে পারে আপনি ঠিক, কিন্তু এটা কোনও কেমিক্যাল পাউডার বলেই মনে হচ্ছে, যাই হোক, আপনি এটাকেও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠীয়ে দিন। আমি একটু নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি, যদি কোনও কাজে লাগে। এই বলে অর্ক আর একটু পদার্থ, একটা প্ল্যাস্টিকের পাউচে ভরে নিয়ে নিজের প্যান্টের পকেটে চালান করে দিল।
তারপর আর মিনিট পনেরো ছিলাম আমরা থানাতে, অন্য আরো কিছু কথা বলে, আমরা বাড়ীর পথ ধরলাম। যাবার সময়ে আমি বলে গেলাম আমি বিকেলে চেম্বারে চলে যাবো সোজাসুজি। অর্ক ঘাড় নেড়ে নিজের বাড়ীর রাস্তা ধরল।
ঘড়িতে ঠিক তখন সন্ধ্যা ছটা দশ, আমি আর অর্ক আমাদের চেম্বারে বসে কেসটা নিয়ে যে যার নিজের মত করে ভাবছিলাম, হঠাৎ দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, আমাদের পাড়ার কাকলি বউদি। আমরা উঠে দাঁড়াতেই ঘরের ভিতরে ঢুকে এসে একগাল হেসে বললেন, নমস্কার, তোমরা হয়ত আমাকে চেন, তবুও আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে দি তোমাদের। আমার নাম কাকলি কুণ্ডু, আমার স্বামীকে নিশ্চয়ই তোমরা চিনবে, মিঃ তমাল কুণ্ডু। আমার হাসব্যান্ড এই এলাকার...
একজন বড় প্রোমোটার ও এলাকার একজন নেতা ... আমরা চিনি ওনাকে, অর্ক আমার দিকে চোখ টিপে হেসে বলে উঠল । কাকলি বউদির গালের হাসিটা আরও একটু চওড়া হয়েই মিলিয়ে গেল। আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম, আরে বউদি বসুন না, বলুন আমরা আপনার কোন কাজে লাগতে পারি।
কাকলি বউদি সামনের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লেন। দেখে মনে হল যেন উনি খানিকটা টেনশনের মধ্যে রয়েছেন। আমি ওনার ভাবনাটা বোঝার চেষ্টা করতে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা বউদি, এবারে বলুনতো ঠিক কি হয়েছে ?
কথা বলতে বলতে কাকলি বউদির পরিচয়টা একবার মনে মনে ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম। বউদির বয়স প্রায় ৩৬ বছর, এখন ও সুন্দরী ও স্লিম, ফিগার সিনেমার নায়িকাদেরও হার মানাবে, কিন্তু বিয়ে হয়েছে, বছর পনেরো হল, ওনার স্বামী মিঃ তমাল কুণ্ডু এলাকার বার প্রোমোটার, সেই সুবাদে, এলাকার সবার তিনি তমালদা ও কাকলি দেবী সবার বউদি। তমালদার সাথে বয়সের পার্থক্য প্রায় ১০ বছর, অর্থাৎ তমালদা বেশি বয়সে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের আট বছর পরে ওনাদের প্রথম ও একমাত্র সন্তান একটি ছেলে হয়। যদিও এব্যাপারে নাকি শোনা যায় যে বউদির কোনও বিশেষ শারীরিক প্রবলেম ছিল, অনেক ডাক্তার দেখিয়ে অনেক কিছু করে তবে এই সন্তানের জন্ম। তাই সে এখন বাবা – মায়ের চোখের মণি। কানাঘুষায় শোনা যায়, এমনিতে স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্ক খুব একটা ভাল না, যদিও উপরে উপরে তা বোঝা যায় না, নিজের রূপচর্চার ব্যাপারে কখনো নাকি কোনও আপোষ করেন নি, এখন এত বয়স হয়েও, কম বয়সী ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেন অনায়াসে।
ওনার কথা ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম, হঠাৎ জোর আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল। কাকলি দেবী চোখদুটো বড়ো বড়ো করে জোরে হেসে বলে উঠলেন, আরে বাব্বা, এ তো একদম কিরীটী রায়ের মতো প্রশ্ন করছে দেখছি। তারপর সোজা হয়ে বসে বললেন, দেখো অর্ক – মৈনাক, আমাদের কাছে তোমরা এখনও ছোটো, আমাদের সাথে আর নাই বা প্রফেশনাল হলে। যাই হোক, আসল কথাতে আসি। আমার কিছু বলার আছে। বুঝতে পারছি না যে এ ব্যাপারে আমার পুলিশের কাছে যাওয়া উচিত নাকি তোমরা আমায় সাহায্য করতে পারবে।
(চলবে )
অর্কর গলার স্বর ভেসে এলো, এখনও খবরের কাগজটা ভাল করে পড়িস না, না হলে এরকম অনুমান তুই ও করতে পারতিস। আমি নীচু স্বরে বলে উঠলাম – সরি বস। আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না যে ঠিক আসল সময়ে কি করে আমি এগুলো মিস করে যাই।
আমরা মিনিট দশেকের মধ্যেই বেড়িয়ে পড়লাম, থানায় পৌঁছে দেখি লাশ ততক্ষনে ময়না তদন্তের জন্য চলে গেছে। আমরা যাওয়াতে, ভদ্রদা আমাদেরকে বসতে বললেন, অর্ক উত্তরে ভদ্রদাকে মুকুলিকার পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করল।
ভদ্রদা হাঁক মেরে এক কনস্টেবলকে বললেন যে যে মেয়েটির লাশ পাওয়া গেছে তার যা যা জিনিশপত্র পুলিশ সীজ করেছে, সেগুলো এক্ষুনি টেবিলে নিয়ে আসতে। মিনিট দুইয়ের মধ্যে একটা পলিথিনে মোড়া সব জিনিশপত্র হাজির হল আমাদের সামনে। ভদ্রদা একটা একটা করে জিনিস বার করে আমাদের দেখাতে লাগলেন আর অর্ক তার নিজের নোটবুকে লিখে রাখল।
আমি দেখলাম, যে এর মধ্যে মুকুলিকার পরনের পোষাক ছাড়া আর ছিল একটা আংটি যা নিতান্তই বাজার থেকে কেনা বলে মনে হল। অর্ক সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল, হঠাৎ ওর চোখ এক জায়গায় আটকে গেল। অর্ক ওর পোষাক থেকে একধরণের কালো দলাকরা পদার্থ বার করে আনল, যা অনেকটা প্ল্যাস্টিকএর মতো দেখতে। আমি ভাল করে লক্ষ্য করলাম, একই ধরণের পদার্থ সারা পোষাকের খাঁজে খাঁজে লেগে আছে। পদার্থটা নিয়ে হাতে দিতেই সেটা আবার গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে নীচে পরে গেল। আমরা দুজনেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভদ্রদার দিকে তাকালাম। ভদ্রদাও মুখটা ব্যাজার করে বললেন এটা কি জিনিস মশায় ? এটা কি হতে পারে যে পুকুরপাঁকে এতক্ষণ ধরে পরে ছিল বডিটা তাই হয়তো ওখান থেকেই কিছু লেগেছে?
উত্তরে অর্ক বলল – হতে পারে আপনি ঠিক, কিন্তু এটা কোনও কেমিক্যাল পাউডার বলেই মনে হচ্ছে, যাই হোক, আপনি এটাকেও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠীয়ে দিন। আমি একটু নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি, যদি কোনও কাজে লাগে। এই বলে অর্ক আর একটু পদার্থ, একটা প্ল্যাস্টিকের পাউচে ভরে নিয়ে নিজের প্যান্টের পকেটে চালান করে দিল।
তারপর আর মিনিট পনেরো ছিলাম আমরা থানাতে, অন্য আরো কিছু কথা বলে, আমরা বাড়ীর পথ ধরলাম। যাবার সময়ে আমি বলে গেলাম আমি বিকেলে চেম্বারে চলে যাবো সোজাসুজি। অর্ক ঘাড় নেড়ে নিজের বাড়ীর রাস্তা ধরল।
ঘড়িতে ঠিক তখন সন্ধ্যা ছটা দশ, আমি আর অর্ক আমাদের চেম্বারে বসে কেসটা নিয়ে যে যার নিজের মত করে ভাবছিলাম, হঠাৎ দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, আমাদের পাড়ার কাকলি বউদি। আমরা উঠে দাঁড়াতেই ঘরের ভিতরে ঢুকে এসে একগাল হেসে বললেন, নমস্কার, তোমরা হয়ত আমাকে চেন, তবুও আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে দি তোমাদের। আমার নাম কাকলি কুণ্ডু, আমার স্বামীকে নিশ্চয়ই তোমরা চিনবে, মিঃ তমাল কুণ্ডু। আমার হাসব্যান্ড এই এলাকার...
একজন বড় প্রোমোটার ও এলাকার একজন নেতা ... আমরা চিনি ওনাকে, অর্ক আমার দিকে চোখ টিপে হেসে বলে উঠল । কাকলি বউদির গালের হাসিটা আরও একটু চওড়া হয়েই মিলিয়ে গেল। আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম, আরে বউদি বসুন না, বলুন আমরা আপনার কোন কাজে লাগতে পারি।
কাকলি বউদি সামনের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লেন। দেখে মনে হল যেন উনি খানিকটা টেনশনের মধ্যে রয়েছেন। আমি ওনার ভাবনাটা বোঝার চেষ্টা করতে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা বউদি, এবারে বলুনতো ঠিক কি হয়েছে ?
কথা বলতে বলতে কাকলি বউদির পরিচয়টা একবার মনে মনে ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম। বউদির বয়স প্রায় ৩৬ বছর, এখন ও সুন্দরী ও স্লিম, ফিগার সিনেমার নায়িকাদেরও হার মানাবে, কিন্তু বিয়ে হয়েছে, বছর পনেরো হল, ওনার স্বামী মিঃ তমাল কুণ্ডু এলাকার বার প্রোমোটার, সেই সুবাদে, এলাকার সবার তিনি তমালদা ও কাকলি দেবী সবার বউদি। তমালদার সাথে বয়সের পার্থক্য প্রায় ১০ বছর, অর্থাৎ তমালদা বেশি বয়সে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের আট বছর পরে ওনাদের প্রথম ও একমাত্র সন্তান একটি ছেলে হয়। যদিও এব্যাপারে নাকি শোনা যায় যে বউদির কোনও বিশেষ শারীরিক প্রবলেম ছিল, অনেক ডাক্তার দেখিয়ে অনেক কিছু করে তবে এই সন্তানের জন্ম। তাই সে এখন বাবা – মায়ের চোখের মণি। কানাঘুষায় শোনা যায়, এমনিতে স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্ক খুব একটা ভাল না, যদিও উপরে উপরে তা বোঝা যায় না, নিজের রূপচর্চার ব্যাপারে কখনো নাকি কোনও আপোষ করেন নি, এখন এত বয়স হয়েও, কম বয়সী ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেন অনায়াসে।
ওনার কথা ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম, হঠাৎ জোর আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল। কাকলি দেবী চোখদুটো বড়ো বড়ো করে জোরে হেসে বলে উঠলেন, আরে বাব্বা, এ তো একদম কিরীটী রায়ের মতো প্রশ্ন করছে দেখছি। তারপর সোজা হয়ে বসে বললেন, দেখো অর্ক – মৈনাক, আমাদের কাছে তোমরা এখনও ছোটো, আমাদের সাথে আর নাই বা প্রফেশনাল হলে। যাই হোক, আসল কথাতে আসি। আমার কিছু বলার আছে। বুঝতে পারছি না যে এ ব্যাপারে আমার পুলিশের কাছে যাওয়া উচিত নাকি তোমরা আমায় সাহায্য করতে পারবে।
(চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দেবব্রত সান্যাল ২৯/০৯/২০১৫জমে কুলফি। পরেরটায় চললাম।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২২/০৯/২০১৫দারুন চলছে !
-
প্রশান্ত মন্ডল ১৭/০৯/২০১৫খারাপ নয়।
-
অভিষেক মিত্র ১৬/০৯/২০১৫সাবাস শান্তনুদা। দারুণ গতিতে এগোচ্ছে গল্প।
-
কিশোর কারুণিক ১৬/০৯/২০১৫ভাল লাগল
-
মোহাম্মদ আয়নাল হক ১৪/০৯/২০১৫আমার অনেক ভালো লাগা রইলো
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১৪/০৯/২০১৫ফাইন