চোরকাঁটা - ২য় পর্ব
( আগের সংখ্যার পর ) --------
রাস্তায় বেরিয়েই মালুম হল, ঠাণ্ডাটা কেমন জাঁকিয়ে পড়েছে শহরে, বৃষ্টিটাও দেখি এখন টিপ টিপ করে পড়ছে। আমরা দুজনে, ছাতা মাথায় তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাজারে পরাণদার দোকানে এসে হাজির হয়ে দেখি, দোকান প্রায় ফাঁকা, শুধু দুটি কলেজের মেয়ে ফুচকা খাচ্ছে, ওদিকে ফুচকা এখনো অর্ধেকের বেশী রয়েছে, এমনিতে পরাণদার দোকানের ফুচকা এলাকা বিখ্যাত, কারণ, এখানে শুধু, টকজল নয়, মিষ্টিজল, দই, লেবুজল ও আরও কি কি সব যেন পাওয়া যায়। এই শীতেও পরাণদার ফুচকা পরে থাকে না একদম, তাই একটু বিস্মিত হয়েই, অর্কর দিকে তাকালাম, অর্ক নীচু গলায় আমায় জিজ্ঞাসা করল – বাঘে ছুলে আঠারো আর পুলিশে ছুলে কত ঘা ?
আমি অবাক হয়ে তাকাতে, অর্ক কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই পরাণদা বলল- আরে অর্ক, মৈনাক বাবু যে, অনেকদিন পরে এলে, যাক কি খাবে বল ... ফুচকা না চাট?
অর্ক, হেসে হাতের ইশারায় আমরা একটু পরে খাচ্ছি, বলে একটা সিগারেট আমাকে দিয়ে, আর নিজে একটা ধরিয়ে চার দিকে চোখ বুলিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা কোনায় ইশারা করে বলল এই জন্যই পরাণদার দোকানে আজকে এত ভিড় কম, আমি সেদিকে তাকাতেই, দেখলাম দুই উর্দিধারী কন্সটেবল একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে পরাণদার দোকানের দিকে, দেখে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো – পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা অর্ক, বেশ বুঝতে পারছি।
সিগারেট শেষ হলে আমরা দুজনেই ২০-২০ টাকার ফুচকা দিতে বললাম পরানদা কে। ফুচকা খেতে খেতে বেশ লক্ষ করলাম অর্কর চোখদুটো চারদিকে খালি ঘুরে চলেছে। পরাণদাকে আমি বাচ্চা মেয়েটির সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করাতে ও বেশি কিছু জানাতে পারলো না, খালি বলল মুকুলিকা নামের মেয়েটি নাকি ফুচকা খেতে এসেছিল সন্ধ্যা পৌনে ০৭ টা নাগাদ, পরাণদা সবে তখন দোকান খুলেছে, আর প্রথম কাস্টমার অন্য একটি ছেলে তখন চুরমুর খাচ্ছিল, কিন্তু তারপর ও দোকান থেকে চলে গিয়েছিল হঠাৎ পয়সা না দিয়েই, পরাণদা কিছু সময় অবধি অপেক্ষা করে তারপর ভুলেও গিয়েছিল তার কথা। এরকম কতই না হয়, কেউ পরে পয়সা দিয়ে যায়, কেউ আবার দেয়ই না। তবে, আজকে সকাল থেকে পুলিশি জাঁতাকলে পরে পরাণদাও ঘটনাটা বুঝতে পেরেছে। আশেপাশে সতর্ক ভাবে চেয়ে কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলল - বুঝলে মৈনাক বাবু, আমি যদি বুঝতে পারতাম যে ওই মেয়ের মনে এই মতলব আছে, তাহলে আমি ওকে কখনও দোকান থেকে যেতেই দিতাম না। বুঝতে পারছ আমার অবস্থা, দিন আনি দিন খাই, আমার উপরে পুলিশি খাঁড়া ঝুলছে, দোকানটাই বন্ধ করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। কালকে হাটে যেতে হত একবার, কিন্তু তাও যেতে পারব না, খাকি উর্দির আদেশ। কি করে ব্যাবসা করব বলতে পার ?
না, তুমি দোকান বন্ধ কর না, যেভাবেই হোক এখন কিছুদিন চালিয়ে যাও। বন্ধ করলে বরং বেশি বিপদে পরবে। লোকের আর সাথে সাথে পুলিশের তোমার উপরে সন্দেহ জোরদার হবে, বুঝেছ? অর্কর গলার স্বর পেয়ে ঘুরে তাকালাম। ও কিছুক্ষণের জন্য গায়েব হয়েছিল মাঝখানে, কিন্তু আবার ফিরে এলো মিনিট দশের মধ্যে। যাই হোক, আমরা ফুচকা খেয়ে আমরা যে যার বাড়ির পথ ধরলাম। ফেরার আগে, অর্ক পরাণদার হাত ধরে বলে এলো যে চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।
গত কাল থেকেই মনটা কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে আছে, কিছু যেন ঠিক ভাল লাগছে না, এমন ভাবে একটা বাচ্চা মেয়ে পাড়া থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলো, অথচ কেউ কিছু জানতে পারলো না , এটা ঠিক যেন মনটা মেনে নিতে পারছে না। - অর্কর দিকে চেয়ে কথাটা বললাম। কাল থেকে আজ দুপুর অবধি এখনও কোনো খবর পাওয়া যায় নি। কি রে কিছু বলছিস না কেন? অর্ক একদৃষ্টে খবরের কাগজটা দেখছিল। আমার কথা শুনে, আমার দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত খবরের পাতাটা পড়ে দেখ, মেয়েটার ছবি দেওয়া হয়েছে। আমি কাগজটা নিয়ে খবরটা একঝলক দেখে আবার টেবিলে রেখে দিলাম। অর্ক আনমনা হয়ে কাগজের শব্দছক বার করে সমাধান করতে লাগলো।
আজ শনিবার, তাই অফিস ছুটি, দুপুরবেলা খাওয়ার পরে অর্কদের ফ্ল্যাটে এসে বসেছি, মনটা ভাল লাগছিলো না বলে। কিন্তু এসে শুনলাম যে পুলিশ এখনও কোনও খবর বার করতে পারে নি। কি যে হল, মেয়েটার কে জানে, হঠাৎ অর্ক বলে উঠলো, দেখ ভাই, আমরা এই কেসটাতে কিছু করতে পারবো না, মন খারাপ করিস না, নিখোঁজ মানুষদের খুঁজে বার করতে পারবে ওই পুলিশই। ওটা ওদেরই কাজ, ওদেরকেই করতে দে, আমাদের কাজও না সেটা। আমি অর্কর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, আচ্ছা বলতো, এটা সত্যি কি কিডন্যাপের কেস, নাকি মেয়েটি কোথাও চলে গেছে নিজে থেকেই।
এ ব্যাপারে আমি ভদ্রদার সাথেই যাবো, কিডন্যাপের কেস হলে এতোক্ষ্ণণে মুক্তিপণের ফোন বা চিঠি চলে আসত, আর তা আমরা জানতে পারতাম। তাই মনে হয়, কিডন্যাপের কেস এটা না, তবে মেয়েটি নিজে থেকে কোথাও চলে গেলেও যেতে পারে। তুই বরং এক কাজ কর, এই শব্দছক গুলো সমাধান করা শিখে নে, টাইম পাস হবে ভাল।
আমি অর্কর দিকে কপট রাগ দেখিয়ে উঠে পরলাম একটা সিগারেট ধরাবার জন্য। সবে সিগারেটটা ধরিয়ে একটা সুখটান দিয়েছি, একদিকে ঝনঝন করে অর্কদের ল্যান্ডলাইন ফোনটা, আবার আর এক দিকে, আমার মোবাইলটা সুরেলা স্বরে বেজে উঠল। আমি মোবাইলটা তুলে দেখলাম এক অপরিচিত নাম্বার। গলাটা এক ভদ্রমহিলার, আমরা বিকেলে চেম্বারে থাকব কিনা জিজ্ঞেস করে উঠলেন। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করাতে, বলে উঠলেন যে ওনার নাকি আমাদের কে বিশেষ প্রয়োজন, আজ সন্ধ্যা ০৭ টার সময়ে তিনি আসবেন আমাদের সাথে কথা বলতে। নাম জিজ্ঞাসা করাতে শুধু বললেন ওনার নাম তমালিকা, তারপর আর কিছু না বলেই হঠাৎ ফোনটা কেটে দিলেন। মনে হল, খুব তাড়াহুরোর মধ্যে কল করেছিলেন। যাই হোক, অর্ক কে বলতে গিয়ে দেখি, অর্ক ফোন রেখে, চোখ বন্ধ করে বসে আছে, আর ডান হাতের তর্জনী কপালের উপরে আড়াআড়ি ভাবে সঞ্চালনা করছে, অর্থাৎ কিছু চিন্তা করছে নিশ্চয়ই।
আমি সামনের চেয়ারে বসে অর্ককে বিস্তারিত ভাবে বলতে লাগলাম ফোনের কথাটা। অর্ক সব শুনে, মিষ্টি হেসে বলল যাক ভালই হল, এবারে তাহলে তোর মন খারাপটা কাটল। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই বলল – শোন কাজের কথাটা শোন, ভদ্রদা ফোন করেছিলেন, খুব বেদনাদায়ক খবর দিলেন একটা। মুকুলিকার ডেডবডি পাওয়া গেছে পাড়ার পুকুরের পাঁকে। কে বা কারা ওকে খুন করে বস্তায় ভরে পুকুরের জলে পাথর বেঁধে ফেলে দিয়েছিল, আজ দুপুরে বস্তা সমেত ডেডবডি ভেসে ওঠে পুকুরের পাঁকের পাশে। লাশ সনাক্তকরন হয়ে গেছে, মেয়েটির মা-বাবা থানায় গিয়ে লাশ সনাক্ত করে এসেছেন। ভদ্রদা জিজ্ঞেস করছিলেন যে আমরা একবার যাব কিনা? নাহলে উনি লাশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে দেবেন। এক কাজ করি চল তাড়াতাড়ি একবার লাশটা নিজের চোখে দেখে আসি। আবার বরং কাল একবার একবার থানা থেকে ঘুরে আসব, কিরে যাবি তো ? মন খারাপ করিস না।
আমি তো শুনে থ হয়ে গেলাম। শুধু বললাম, আর তুই বলছিস আমায় মন খারাপ না করতে? ও হেসে বলল হ্যাঁ, কারণ মুকুলিকার মা আসছেন বিকেলে আমাদের সাথে কথা বলতে, এই কেসটার জন্য, তাই আর মন খারাপ না করে কাজে লেগে পরতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম তিনি আবার তোকে ফোন করেছিলেন নাকি? আরও অবাক করে ও বলে উঠল, না আমাকে নয়, তোকে, মানিক চাঁদ। আমি অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাব তার আগেই আবার বলে উঠল - আরে তুই তো বললি, যে ভদ্রমহিলার নাম তমালিকা দেবী যিনি আমাদের সাথে কথা বলতে আসছেন, তো তমালিকা দেবীর মেয়ের নাম তো মুকুলিকা হতেই পারে। যিনি সদ্দ্য মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন, তার পক্ষে কি আর ভাল ভাবে ফোন কথা বলা সম্ভব ?
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম তা নাও তো হতে পারে, - না পারে না, কারণ বলে অর্ক কাগজটা আবার আমায় দিয়ে বলল – ভাল করে পড় খবরটা, আমি খবরটার দিকে তাকিয়েই আমার ভুলটা আবার বুঝতে পারলাম। ওখানে পরিষ্কার মুকুলিকার বাবা ও মা এর নাম লেখা ছিল, যা আমি পড়তেই ভুলে গিয়েছিলাম, মুকুলিকার বাবার নাম – শ্রী অবিনাশ সিনহা ও মায়ের নাম – শ্রীমতী তমালিকা...
( চলবে )
রাস্তায় বেরিয়েই মালুম হল, ঠাণ্ডাটা কেমন জাঁকিয়ে পড়েছে শহরে, বৃষ্টিটাও দেখি এখন টিপ টিপ করে পড়ছে। আমরা দুজনে, ছাতা মাথায় তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাজারে পরাণদার দোকানে এসে হাজির হয়ে দেখি, দোকান প্রায় ফাঁকা, শুধু দুটি কলেজের মেয়ে ফুচকা খাচ্ছে, ওদিকে ফুচকা এখনো অর্ধেকের বেশী রয়েছে, এমনিতে পরাণদার দোকানের ফুচকা এলাকা বিখ্যাত, কারণ, এখানে শুধু, টকজল নয়, মিষ্টিজল, দই, লেবুজল ও আরও কি কি সব যেন পাওয়া যায়। এই শীতেও পরাণদার ফুচকা পরে থাকে না একদম, তাই একটু বিস্মিত হয়েই, অর্কর দিকে তাকালাম, অর্ক নীচু গলায় আমায় জিজ্ঞাসা করল – বাঘে ছুলে আঠারো আর পুলিশে ছুলে কত ঘা ?
আমি অবাক হয়ে তাকাতে, অর্ক কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই পরাণদা বলল- আরে অর্ক, মৈনাক বাবু যে, অনেকদিন পরে এলে, যাক কি খাবে বল ... ফুচকা না চাট?
অর্ক, হেসে হাতের ইশারায় আমরা একটু পরে খাচ্ছি, বলে একটা সিগারেট আমাকে দিয়ে, আর নিজে একটা ধরিয়ে চার দিকে চোখ বুলিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা কোনায় ইশারা করে বলল এই জন্যই পরাণদার দোকানে আজকে এত ভিড় কম, আমি সেদিকে তাকাতেই, দেখলাম দুই উর্দিধারী কন্সটেবল একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে পরাণদার দোকানের দিকে, দেখে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো – পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা অর্ক, বেশ বুঝতে পারছি।
সিগারেট শেষ হলে আমরা দুজনেই ২০-২০ টাকার ফুচকা দিতে বললাম পরানদা কে। ফুচকা খেতে খেতে বেশ লক্ষ করলাম অর্কর চোখদুটো চারদিকে খালি ঘুরে চলেছে। পরাণদাকে আমি বাচ্চা মেয়েটির সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করাতে ও বেশি কিছু জানাতে পারলো না, খালি বলল মুকুলিকা নামের মেয়েটি নাকি ফুচকা খেতে এসেছিল সন্ধ্যা পৌনে ০৭ টা নাগাদ, পরাণদা সবে তখন দোকান খুলেছে, আর প্রথম কাস্টমার অন্য একটি ছেলে তখন চুরমুর খাচ্ছিল, কিন্তু তারপর ও দোকান থেকে চলে গিয়েছিল হঠাৎ পয়সা না দিয়েই, পরাণদা কিছু সময় অবধি অপেক্ষা করে তারপর ভুলেও গিয়েছিল তার কথা। এরকম কতই না হয়, কেউ পরে পয়সা দিয়ে যায়, কেউ আবার দেয়ই না। তবে, আজকে সকাল থেকে পুলিশি জাঁতাকলে পরে পরাণদাও ঘটনাটা বুঝতে পেরেছে। আশেপাশে সতর্ক ভাবে চেয়ে কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলল - বুঝলে মৈনাক বাবু, আমি যদি বুঝতে পারতাম যে ওই মেয়ের মনে এই মতলব আছে, তাহলে আমি ওকে কখনও দোকান থেকে যেতেই দিতাম না। বুঝতে পারছ আমার অবস্থা, দিন আনি দিন খাই, আমার উপরে পুলিশি খাঁড়া ঝুলছে, দোকানটাই বন্ধ করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। কালকে হাটে যেতে হত একবার, কিন্তু তাও যেতে পারব না, খাকি উর্দির আদেশ। কি করে ব্যাবসা করব বলতে পার ?
না, তুমি দোকান বন্ধ কর না, যেভাবেই হোক এখন কিছুদিন চালিয়ে যাও। বন্ধ করলে বরং বেশি বিপদে পরবে। লোকের আর সাথে সাথে পুলিশের তোমার উপরে সন্দেহ জোরদার হবে, বুঝেছ? অর্কর গলার স্বর পেয়ে ঘুরে তাকালাম। ও কিছুক্ষণের জন্য গায়েব হয়েছিল মাঝখানে, কিন্তু আবার ফিরে এলো মিনিট দশের মধ্যে। যাই হোক, আমরা ফুচকা খেয়ে আমরা যে যার বাড়ির পথ ধরলাম। ফেরার আগে, অর্ক পরাণদার হাত ধরে বলে এলো যে চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।
গত কাল থেকেই মনটা কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে আছে, কিছু যেন ঠিক ভাল লাগছে না, এমন ভাবে একটা বাচ্চা মেয়ে পাড়া থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলো, অথচ কেউ কিছু জানতে পারলো না , এটা ঠিক যেন মনটা মেনে নিতে পারছে না। - অর্কর দিকে চেয়ে কথাটা বললাম। কাল থেকে আজ দুপুর অবধি এখনও কোনো খবর পাওয়া যায় নি। কি রে কিছু বলছিস না কেন? অর্ক একদৃষ্টে খবরের কাগজটা দেখছিল। আমার কথা শুনে, আমার দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত খবরের পাতাটা পড়ে দেখ, মেয়েটার ছবি দেওয়া হয়েছে। আমি কাগজটা নিয়ে খবরটা একঝলক দেখে আবার টেবিলে রেখে দিলাম। অর্ক আনমনা হয়ে কাগজের শব্দছক বার করে সমাধান করতে লাগলো।
আজ শনিবার, তাই অফিস ছুটি, দুপুরবেলা খাওয়ার পরে অর্কদের ফ্ল্যাটে এসে বসেছি, মনটা ভাল লাগছিলো না বলে। কিন্তু এসে শুনলাম যে পুলিশ এখনও কোনও খবর বার করতে পারে নি। কি যে হল, মেয়েটার কে জানে, হঠাৎ অর্ক বলে উঠলো, দেখ ভাই, আমরা এই কেসটাতে কিছু করতে পারবো না, মন খারাপ করিস না, নিখোঁজ মানুষদের খুঁজে বার করতে পারবে ওই পুলিশই। ওটা ওদেরই কাজ, ওদেরকেই করতে দে, আমাদের কাজও না সেটা। আমি অর্কর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, আচ্ছা বলতো, এটা সত্যি কি কিডন্যাপের কেস, নাকি মেয়েটি কোথাও চলে গেছে নিজে থেকেই।
এ ব্যাপারে আমি ভদ্রদার সাথেই যাবো, কিডন্যাপের কেস হলে এতোক্ষ্ণণে মুক্তিপণের ফোন বা চিঠি চলে আসত, আর তা আমরা জানতে পারতাম। তাই মনে হয়, কিডন্যাপের কেস এটা না, তবে মেয়েটি নিজে থেকে কোথাও চলে গেলেও যেতে পারে। তুই বরং এক কাজ কর, এই শব্দছক গুলো সমাধান করা শিখে নে, টাইম পাস হবে ভাল।
আমি অর্কর দিকে কপট রাগ দেখিয়ে উঠে পরলাম একটা সিগারেট ধরাবার জন্য। সবে সিগারেটটা ধরিয়ে একটা সুখটান দিয়েছি, একদিকে ঝনঝন করে অর্কদের ল্যান্ডলাইন ফোনটা, আবার আর এক দিকে, আমার মোবাইলটা সুরেলা স্বরে বেজে উঠল। আমি মোবাইলটা তুলে দেখলাম এক অপরিচিত নাম্বার। গলাটা এক ভদ্রমহিলার, আমরা বিকেলে চেম্বারে থাকব কিনা জিজ্ঞেস করে উঠলেন। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করাতে, বলে উঠলেন যে ওনার নাকি আমাদের কে বিশেষ প্রয়োজন, আজ সন্ধ্যা ০৭ টার সময়ে তিনি আসবেন আমাদের সাথে কথা বলতে। নাম জিজ্ঞাসা করাতে শুধু বললেন ওনার নাম তমালিকা, তারপর আর কিছু না বলেই হঠাৎ ফোনটা কেটে দিলেন। মনে হল, খুব তাড়াহুরোর মধ্যে কল করেছিলেন। যাই হোক, অর্ক কে বলতে গিয়ে দেখি, অর্ক ফোন রেখে, চোখ বন্ধ করে বসে আছে, আর ডান হাতের তর্জনী কপালের উপরে আড়াআড়ি ভাবে সঞ্চালনা করছে, অর্থাৎ কিছু চিন্তা করছে নিশ্চয়ই।
আমি সামনের চেয়ারে বসে অর্ককে বিস্তারিত ভাবে বলতে লাগলাম ফোনের কথাটা। অর্ক সব শুনে, মিষ্টি হেসে বলল যাক ভালই হল, এবারে তাহলে তোর মন খারাপটা কাটল। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই বলল – শোন কাজের কথাটা শোন, ভদ্রদা ফোন করেছিলেন, খুব বেদনাদায়ক খবর দিলেন একটা। মুকুলিকার ডেডবডি পাওয়া গেছে পাড়ার পুকুরের পাঁকে। কে বা কারা ওকে খুন করে বস্তায় ভরে পুকুরের জলে পাথর বেঁধে ফেলে দিয়েছিল, আজ দুপুরে বস্তা সমেত ডেডবডি ভেসে ওঠে পুকুরের পাঁকের পাশে। লাশ সনাক্তকরন হয়ে গেছে, মেয়েটির মা-বাবা থানায় গিয়ে লাশ সনাক্ত করে এসেছেন। ভদ্রদা জিজ্ঞেস করছিলেন যে আমরা একবার যাব কিনা? নাহলে উনি লাশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে দেবেন। এক কাজ করি চল তাড়াতাড়ি একবার লাশটা নিজের চোখে দেখে আসি। আবার বরং কাল একবার একবার থানা থেকে ঘুরে আসব, কিরে যাবি তো ? মন খারাপ করিস না।
আমি তো শুনে থ হয়ে গেলাম। শুধু বললাম, আর তুই বলছিস আমায় মন খারাপ না করতে? ও হেসে বলল হ্যাঁ, কারণ মুকুলিকার মা আসছেন বিকেলে আমাদের সাথে কথা বলতে, এই কেসটার জন্য, তাই আর মন খারাপ না করে কাজে লেগে পরতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম তিনি আবার তোকে ফোন করেছিলেন নাকি? আরও অবাক করে ও বলে উঠল, না আমাকে নয়, তোকে, মানিক চাঁদ। আমি অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাব তার আগেই আবার বলে উঠল - আরে তুই তো বললি, যে ভদ্রমহিলার নাম তমালিকা দেবী যিনি আমাদের সাথে কথা বলতে আসছেন, তো তমালিকা দেবীর মেয়ের নাম তো মুকুলিকা হতেই পারে। যিনি সদ্দ্য মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন, তার পক্ষে কি আর ভাল ভাবে ফোন কথা বলা সম্ভব ?
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম তা নাও তো হতে পারে, - না পারে না, কারণ বলে অর্ক কাগজটা আবার আমায় দিয়ে বলল – ভাল করে পড় খবরটা, আমি খবরটার দিকে তাকিয়েই আমার ভুলটা আবার বুঝতে পারলাম। ওখানে পরিষ্কার মুকুলিকার বাবা ও মা এর নাম লেখা ছিল, যা আমি পড়তেই ভুলে গিয়েছিলাম, মুকুলিকার বাবার নাম – শ্রী অবিনাশ সিনহা ও মায়ের নাম – শ্রীমতী তমালিকা...
( চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মৃণ্ময় আলম ২০/১০/২০১৫সুন্দর
-
শমসের শেখ ১৩/১০/২০১৫লেখায় অসলেই আলাদা একটা ভাব আছে
-
আহমাদ আবদুল কাইয়ুম ০৯/১০/২০১৫হুম
-
পরশ ০৯/১০/২০১৫দারুন!
-
শুভাশিষ আচার্য ০৭/১০/২০১৫ওরেব্বাবা। আমার মনে হচ্ছে গদ্য টা বেশী ছুট্ছে শান্তনু। অসাধারন। পরের টা কবে আসছে। অনেক শুভেচ্ছা।
-
নির্ঝর ০৬/১০/২০১৫ভালো হচ্ছে আরও ভালো লেখা আশা করি
-
নির্ঝর ০৪/১০/২০১৫ভালো
-
নির্ঝর ৩০/০৯/২০১৫ভাল হয়েছে অনেক
-
তপন দাস ২৯/০৯/২০১৫বেশ ভালো লাগছে। পরবর্তী সংখ্যার আশায় রইলাম।
-
পরশ ২৯/০৯/২০১৫লেখাটি ভাল মনে হচ্ছে।
-
নির্ঝর ২৯/০৯/২০১৫খুব ভালো লেগেছে, চালিয়ে যান।
-
দেবব্রত সান্যাল ২৯/০৯/২০১৫লেখার মধ্যে চুম্বক আছে। টেনে নিয়ে যায়।
-
মোহাম্মদ আব্দুল ওয়ারেশ (কাব্য) ২৭/০৯/২০১৫বেশ ভালো
-
কষ্টের ফেরিওলা ২৭/০৯/২০১৫বেশ,
-
রাশেদ খাঁন ২৪/০৯/২০১৫ভালো লেগেছে
-
নির্ঝর ১৭/০৯/২০১৫ধন্যবাদ দাদা, এভাবে চালিয়ে যান।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ১০/০৯/২০১৫ভীষণ ভালো লাগলো।
-
শান্ত ১০/০৯/২০১৫খুব খুব ভাল লেগেছে
-
কিশোর কারুণিক ০৯/০৯/২০১৫বেশ
-
অভিষেক মিত্র ০৯/০৯/২০১৫দারুণ এগোচ্ছে।