www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চোরকাঁটা - ১ম পর্ব

গত কয়েকদিন ধরেই ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে শহরে, আমি যদিও একটু ঠাণ্ডাতেই কাবু হয়ে যাই, তারপর আবার তাপমাত্রার পারদ এখন প্রায় ১২ এর নীচে নেমে যাওয়াতে আমার তো রাত্রে নাভি:শ্বাস উঠছে, কিন্তু কি করব, অর্কর নির্দেশ, যাই হয়ে যাক, অফিস ফেরত একবার আমাদের এ এম – প্রাইভেট কন্সালটেন্সীর চেম্বারে ঘুরে যেতে হবে, মোটামুটি সপ্তাহে প্রতিদিন অর্কই সন্ধ্যা ৭ টাতেই চেম্বার খুলে বসে পরে, আমি আরও পরে অফিস থেকে এসে জয়েন করি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১০ টা হয়েই যায়।

তাই সেদিন মুখ ফুটে বলেই ফেললাম – অর্ক, দেখ, আমরা এমনিতে তো এই চেম্বার খোলার পর থেকে তিন মাস হয়ে গেলো, মশা মারা, আর চা, পকোরা খাওয়া ছাড়া কিছু করছি না, এত ঠাণ্ডা পড়েছে, যে হাত পা গুলো সব জমে যাচ্ছে, তার মধ্যে গতকাল থেকে বৃষ্টিও এরসাথে যোগ হয়েছে, কখনো হালকা , অ্যবার কখনো ভারী, আর জাস্ট পারা যাচ্ছে না। একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে হয় না ? উত্তরে অর্ক, ল্যাপটপ থেকে চোখ না তুলেই বলল- এক কাজ কর, তোকে আর এই ঠাণ্ডাতে আসতে হবে না, তুই সোজা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে যাস, আর আমি এই অফিসের নামটা অফিসিয়ালি এ এম থেকে বদলে শুধু এ - প্রাইভেট কন্সালটেন্সী করে নেব। শুনে আমার হাত দুটো নিশপিশ করে উঠেছিল, কিন্তু মুখে আর বলার মত কিছু ছিল না।

আর কি করা, ইচ্ছে না হলেও রোজ হাজিরা দিতে হচ্ছে নিয়মিত, গত তিন মাসে শুধু দুটো জিনিস বদলেছে, প্রথমটা এখন আর আমরা খেলার মাঠে গিয়ে রবিবারে আড্ডা দিই না, যা আড্ডা সব এই চার দেওয়ালের মধ্যে, আর দ্বিতীয়টা, মাঝেমাঝে, ভদ্র মশাই আমাদের সাথে এখানে একটু ওনার জীবনের সব সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করে যান । ভদ্রবাবুকে নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যান নি, সেই যে গন্ধ রহস্যের সময় আমাদেরকে খুব সাহায্য করেছিলেন ।  ভদ্রলোক রসিক মানুষ, খেতে ও খাওয়াতে খুব ভালবাসেন, এখানে আড্ডা মারতে এলে পকোরা, কাটলেটএর আসরও বসিয়ে দেন। তবে আমরাও পিছপা হই না, রোজ রোজ আর বিনে পয়সায় খেতে কারই বা ভালো লাগে। তবে আর মশাই টশাই নয়, আমরা এখন ওনাকে ভদ্রদা বলেই ডাকি।

আজকেও মানে এই শুক্রবারের ভর সন্ধ্যেতেও তিনি এসেছিলেন, তবে আজকে যেন ওনার মনটা একটু বেশী খারাপ বলে মনে হল, জিজ্ঞেস করাতে বললেন মনটা একদম ভালো না, গত কয়েকদিন থেকেই উপরতলা থেকে খবর এসেছে যে এই এলাকায় নাকি জাল নোটের কারবার শুরু হয়েছে, একজন নাকি ধরাও পড়েছিলো কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশেষ কিছুই পাওয়া যায় নি, শুধু জানা গেছে যে এই এলাকা থেকেই জালনোট নাকি ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই চাপ এসেছে যে যেভাবেই হোক এই ব্যাপারটার একটা ব্যাবস্থা করতে হবে, আবার অন্যদিকে, প্রিতমদাও অফিসে নেই, তাই মেজবাবু হিসাবে চাপটা পুরোটাই ওনার উপরে, কিছু একটা হেস্ত নেস্ত না করতে পারলে রিটায়ারমেনটের আগে শেষ প্রমোশনটার আশা এবারে ত্যাগ করতে হবে।

তার উপরে আজকে আবার একটি নতুন কেস এসেছে, একেবারে গোদের উপর বিষফোঁড়া যাকে বলে আর কি... তাই নিয়েই উনি একটু চিন্তিত। শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। আসলে ঘটনাটা হল -একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে, বয়স প্রায় ১০ -১১ বছর, গতকাল রাত থেকে নিখোঁজ। মেয়েটির নাম মুকুলিকা সিনহা, ক্লাস ফাইভে পরে, গতকাল শেষ দেখা গেছে এলাকার বাজারের পরানের ফুচকার দোকানে, তা সেখান থেকে আর নাকি সে বাড়ি ফেরেনি। ভদ্রদার নিজের মেয়েরও বয়স প্রায় এক, তাই ওনার মনটা বিষণ্ণ হয়ে আছে। মুকুলিকার বাবা, মা আজকে সকালে এসে নিখোঁজ ডায়েরি করে গেছেন, কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে বলে ভদ্রদার নিজেরই মনে হয় না, কারণ এরকম কেস রোজ রোজ কত হচ্ছে।

অর্ক শুনে জিজ্ঞাসা করল, আপনাদের কি মনে হচ্ছে? এটা কি কিডন্যাপিং না অন্য কিছু ... ভদ্রদা উত্তরে মাথা দুদিকে নেড়ে বললেন, দেখুন, আমার মনে হয় না এটা কিডন্যাপিং এর কেস, কারণ, তাহলে এতক্ষণে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এসে যেত। আবার মেয়েটির বাড়ির অবস্থাও এত ভাল নয় যে, মুক্তিপনের টাকা চাইলেও দিতে পারবে। আমরা মোটামুটি খবর যা সংগ্রহ করেছি, তাতে, মেয়েটি নিজেও বাড়ি থেকে পালাতে পারে। গতকাল দুপুরেই, মুকুলিকার মা, ওকে নাকি খুব বকাঝকা করেছিলেন, এখনকার সময়ের ছেলেমেয়ে তো বুঝতেই পারছেন, রাগ করেও কোথাও চলে যেতে পারে, কোনও আত্মীয় বা বন্ধুদের বাড়িতে। তবে জানি না কতদুর কি হবে, সব দিক ভেবেই পা ফেলছি আমরা, আশেপাশের সমস্ত থানাতে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে, আবার আমাদের ইনফরমারদেরকেও কাজে লাগাতে বলেছেন স্যর।

এতদুর বলে ভদ্রদা উঠে দাঁড়িয়ে, আচ্ছা আজ চলি, বলে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে আবার পিছন ফিরে বললেন, কি মশাই, আপনারা কি এই কেসটা নিয়ে একটু দেখবেন নাকি ?মন্দ হয় না যদি আপনাদের থেকে একটু হেল্প পাওয়া যায়।

অর্ক হেসে বলল, না ভদ্রদা, এই নিয়ে গত তিনমাসে পাঁচটা নিখোঁজের কেস পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছি, কারণ, এতে প্রাকটিক্যালি আমাদের কিছু করার নেই, পুরোটাই আপনাদের কাজ। তবে এবারে আপনি বলছেন বলে, একটু চোখ কান খোলা রাখব, যদি কিছু বুঝতে পারি, নিশ্চই জানাব আপনাকে। ভদ্রদা হাতজোড় করে বিদায় নিতেই, অর্ক আমার উদ্দেশ্য করে বলল-চল, মৈনাক, অনেকদিন, বাজারের, পরাণদার দোকান থেকে ফুচকা খাওয়া হয়নি, আজকে ফুচকা খেয়ে তবে বাড়ি যাব।

আমি মুচকি হেসে বললাম, তাহলে ভদ্রদার কথা তুই আর ফেলতে পারলি না। অর্ক ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে গুন গুন করে জনপ্রিয় একটা বাংলা গানের দুকলি গেয়ে উঠল – যখন আমি অনেক দূরে, থাকব না আর মাটির ঘরে..... তখন কি আর পরবে মনে, আমায় আগের মতন করে .........।


( চলবে )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৩৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৯/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আজিজ আহমেদ ১৫/০২/২০১৬
    শুরু থেকে শুরু করার চেষ্টা করছি।
  • সহিদুল হক ১৩/১১/২০১৫
    শুরুটা পড়লাম।আগ্রহ তৈরি হল।সময়-সুযোগ বুঝে পরের গুলো পড়ার ইচ্ছা রইলো।
  • শুভাশিষ আচার্য ০৮/১০/২০১৫
    শুরুটা ত ভালোই হল। অনেক পরব আছে দেখছি। পড়ি। অনেক শুভেচ্ছা।
  • A.M এর চেম্বার ? ফেলুদা , কিরিটি , ব্যোমকেশ , হোমস সবাই তো বাড়ী থেকে চালায়। খরচ সামলাতে পারবে তো ? তাছাড়া , বোর্ড লাগিয়ে গোয়েন্দাগিরি করতে কিন্তু , লাইসেন্স ইত্যাদি অনেক ঝামেলা।
    গল্প কিন্তু প্রথম কিস্তিতেতে জমে যাচ্ছে।
    • হা হা হা , আসলে গন্ধ রহস্যভেদ করে অর্ক ও মৈনাক ভারত ও জাপান দুই দেশের সরকারের কাছ থেকেই বেশ কিছু টাকা - পয়সা পেয়েছিল, তারা সেইদিয়ে আর এছাড়া নিজের নিজের জমানো টাকা পয়সা দিয়ে এই চেম্বারটা খুলে ফেলে।

      শুধু তাই নয়, অর্ক ও মৈনাক দুজনে পার্টনারশিপ ডিড করে, ট্রেড লাইসেন্স করে চেম্বার করেছে। আর একটা জিনিশও করেছে অর্ক, তা ক্রমশ প্রকাশ্য।
      • আমি আপনার চরিত্রদের সত্যি ভেবে নিয়ে তাদের বৈষয়িক সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। কৃতিত্ব আপনার , চরিত্র গুলো বিশ্বাস যোগ্য হয়ে উঠছে।
  • তপন দাস ২৬/০৯/২০১৫
    ভালো লাগছে...
  • শ্রীতরুণ গিরি ০৭/০৯/২০১৫
    শুরুটা খুব ভালো লাগল। রহস্য ঘোরালো হোক। পড়ব।
  • দারুন!
  • অভিষেক মিত্র ০৭/০৯/২০১৫
    শুরুটা হেবি হয়েছে।
    • ধন্যবাদ অভিষেক, আজকে দ্বিতীয় পর্ব দিচ্ছি।
 
Quantcast