গন্ধ - ৮ম পর্ব
(আগের সংখ্যার পর )
ওফ, কিযে আনন্দ হচ্ছে এখন আমার বলে বোঝাতে পারব না। এখন বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমরা দুজনে...থুরি, অর্ক একা, এই কেসটা সলভ করে ফেলেছে। ওর বুদ্ধির তারিফ না করে পারা যায় না। কি করে যে ও পারলো, তা শুধু ওই বলতে পারবে। আপাতত ও এখন খুব মন দিয়ে ডাবল ডিমের ওমলেট খাচ্ছে। যদিও আমি অনেক আগেই আমারটা শেষ করে দিয়েছি, কারণ ও তখন ফোনে কারোর সাথে কথা বলছিল, মনে হচ্ছে, মিঃ ভদ্রমশাইের সাথে কথা বলছিল, এটুকু অন্তত বুঝতে শিখেছি অর্কর সাথে থাকতে থাকতে।
যাই হোক, খুনি কে বা কারা আমরা এখন সবাই জানি, কিন্তু এখনো আমাদের কাছে সবকিছু পরিষ্কার নয়, অর্ক, ঠিক আমার মনের কথা কেড়ে নিয়ে প্রিতমদা অর্কর দিকে ঘুরে বলে উঠলেন- তাই আমাদের জানতে ইচ্ছা করছে এই রহস্যের সমাধান কি করে করলে?
আরে প্রিতম, এটাকে শুধু রহস্য না বলে গন্ধরহস্য বলাই বেটার – জ্যেঠুর সহাস্য মন্তব্য। আমি অর্ক কে বললাম, ভাই প্লীস বল না কি করে তুই এতকিছু বুঝতে পারলি...
অর্কর অমলেট খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, কফির কাপটা হাতে নিয়ে বলল – তাহলে শুনুন, আমার সর্বপ্রথম সন্দেহ হয় যখন, খবরের কাগজের খবরটার সাথে আই কার্ডের ছবিটা দেখি, ছবিটায়, ওয়াকাহামা বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের লোগো ছিল। তখনই বুঝেছিলাম যে এর মধ্যে কিছু রহস্য আছে। যাই হোক এরপর তো তোমরা সবাই জানো যে আমরা লাশটা শনাক্ত করেছিলাম যে সঞ্জয় বাবুর নামে। আসলে সঞ্জয়বাবু এত চালাকি করে পুরো ব্যাপারটা সাজিয়েছিলেন, যে আমরা তখনও বুঝতে পারিনি যে ওটা সঞ্জয়বাবুর লাশই নয়, মিঃ সুযুকি তিচেরোর লাশ।
আমি থানা থেকে লাশের ছবি নিয়ে এসেছিলাম এবং ভাল করে লক্ষ করে দেখলাম যে, লাশের বাঁ হাতের কব্জির নীচে ওনার নামের আদ্দ্যক্ষর “এস•টি•” উল্কি দিয়ে লেখা আছে, তাতে আমরা আরও নিশ্চিন্ত হলাম যে লাশটি মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসির। ওনারাও লাশকে দেখে সঞ্জয়বাবুর বলেই শনাক্ত করলেন। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।
গণ্ডগোলটা বাধল তখনই, যখন আমরা হোটেলে ওনাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখলাম, গবেষণা সংক্রান্ত সব কিছু মিঃ তাকাহাসি আমাদের বলছেন, আর উনি কেমন যেন অন্যমনস্ক হবার ভান করে চুপ করে ছিলেন। উনি দুবার উঠে চলে গিয়েছিলেন, প্রথম বার লবি থেকে রুমের ওয়াশরুমে, আর পরেরবার উনি রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন একবার। দ্বিতীয়বারে ওনার যাওয়ার আর আসার সময়ে হাঁটাটা অন্যরকম লাগল। হয়ত উনি ভুলে গিয়েছিলেন বাঁ খেয়াল করেননি যে আমি ওনাকে লক্ষ করেছিলাম দুবারই, যা আমার সন্দেহ আরও গভীর করে তুলেছিল। আমি ইচ্ছে করেই সঞ্জয়বাবুর রুমের ওআশরুমে ঢুকেছিলাম, অখানেও সেই একই গন্ধ পেয়ে বুঝতে পারলাম ওই বিশেষ সলিউশনটাতে নিশ্চয়ই কিছু আছে। ওটার কথা উঠতেই সঞ্জয়বাবুর উদাস মন হঠাৎ ঠিক হয়ে গেলো, এবং ইচ্ছে করেই উনি কাঁচের বয়মটা ভেঙ্গে ফেললেন, কিন্তু এমনভাবে করলেন, যাতে মনে হয় যে আচমকা, হাত থেকে পরে গেছে, কাড়াকাড়িতে। এটা আমি আর সঞ্জয়বাবু দুজনেই কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম, তাই উনি হঠাৎ অসুস্থ হবার ভান করা শুরু করে দিলেন এবং আমাদেরকে ওনাদের রুম থেকে তাড়াতে চাইলেন।
তবু এগুলোতো গেলো মানসিক উপলব্ধির ব্যাপার, কোনও কিছু প্রমান এতে করা যেত না। তাই ভাবছিলাম যে কি করা যায়, তখনই, সঞ্জয়বাবু মুখ মুছতে গিয়ে পকেট থেকে রুমাল খুঁজে না পেয়ে, সামনের ওয়ার্ডরোব থেকে একটা রুমাল বার করে নিলেন, কিন্তু তার মধ্যেই ওনার পকেট থেকে, দুটো কাগজের টুকরো পরে যায়, যা আমি সবার অলক্ষে নীচে আমি কুড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে নি। তখনই আমি শিওর হয়ে গেলাম যে ইনি আর যে কেউ হন, মিঃ সুযুকি নন, কারণ, মিঃ সুযুকি, যদিও বা কোনও কারণে, ওনার কাজের জিনিসপত্র সঞ্জয়বাবুর রুমে রাখেন, তাও ওনার ব্যবহার করার রুমাল উনি সঞ্জয়বাবুর রুমের ওয়ার্ডরোবে কেন রাখবেন?
এ ব্যাপারে আরও কিছু জিনিসের কথা এখানে বলতে চাই। মৈনাক তোর নিশ্চই মনে আছে যে ঘটনাটার সময়ে আমরা সঞ্জয়বাবুর রুমেই ছিলাম। আমি বিস্ময়ে ঘাড় নাড়াতেও ভুলে গিয়েছিলাম, অর্ক ওর বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিল – ও বলে চলল – হঠাৎ আমার জাপানীদের নিয়ে নেটে পড়াশুনো করা একটা আর্টিকেলের কথা মনে পরে গেলো, আমরা মিঃ সুযুকির রুমে ওনার নাম লেখা একটা নেম প্লেট দেখেছিলাম, যাতে ভুলবশঃত হোটেলের স্টাফ ওনার নামটা উল্টো লিখেছিলেন যা উনি কেটে আবার সোজা করে দিয়েছিলেন, আপনারা হয়ত জানেন না, যে জাপানীরা তাদের সারনেমকে খুব গুরুত্ত্ব দেয়, সবসময়ে, আগে তারা সারনেমটা ব্যবহার করে তারপরে তারা প্রথম নাম ব্যবহার করেন। মিঃ সুযুকি তাই ওনার নামটা “তিচেরো সুযুকি” থেকে কেটে “সুযুকি তিচেরো” করে দিয়েছিলেন। এই কথাটা মনে হওয়াতেই আমি সঞ্জয়বাবুকে মিঃ সুযুকি বলে ডাকতে আরম্ভ করি, দেখলাম, তাতে ওনার কোনও ভাবান্তর হল না, আর তারপরই আমি আবিষ্কার করি ওনারও বাঁ হাতের কব্জিতে লেখা আছে দুটো শব্দ – “টি•এস•”। তারপর সঞ্জয়বাবুর পকেট থেকে পরে যাওয়া কাগজগুলো কুড়োতে গিয়ে আমি খাটের তলায় ওই কাদামাখা জুতোজোড়া দেখতে পারলাম, আর তখনই আমার মনে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উঁকি মারল, কিন্তু তাও মনে মনে অংকটা ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। আমরা আর কিছু না বলে ফিরে চলে এলাম।
আমি মৈনাকদের ডিনারের অরদের দিতে বলে হোটেলের সিকিউরিটি স্টাফদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম, ওখানে একজন আমায় বলল সেই রাত্রে উনি দুজন কে বেরোতে দেখেছিলেন, কিন্তু ফেরার সময়ে শুধু একজনকেই ফিরতে দেখেছিলেন, উনি পরিচয় জিজ্ঞাসা করাতে জানতে পেরেছিলেন যে উনি মিঃ তিচেরো। ওনার স্টেটমেন্টটাও তোমরা নিয়ে নিও প্রিতমদা।
রাত্রে, থানাতে, যখন, সুকুমার বাবুর সাথে কথা হল, উনি সঞ্জয়বাবুর আগেরবার এখানে এসে দুটো জায়গায় ঘোরার কথা বলেছিলেন, এবং কাকতালীয় ভাবে ওনার লাশটা টার মধ্যে একটা জায়গায় পাওয়া যায়, এটা থেকে আমি অনুমান করে ভদ্রমশাইকে বলেছিলাম যে গাড়ির খোঁজটা হোটেলের পিছনের সেই পরিতক্ত্য জায়গায় একবার খোঁজার জন্য। রাত্রে, মিঃ ভদ্র আমার অনুমান সঠিক করে আমার ধারনাকে আরও পোক্ত করে দিলেন। কিন্তু তাও কেন যেন আমার মনের খটকাটা যাচ্ছিল না। রাত্রে, অনেক কিছু চিন্তা করেও যখন কোনও কিছু মাথায় আসছিল না, আমি আবার লাশের আর আমার সাথে, তোলা ওনাদের ছবি গুলো দেখতে শুরু করি, তখনই আমার মনে পরে যায়, আর একটি ছোট ঘটনার কথা, মৈনাক তোর মনে আছে কিনা জানি না, আমরা যেখানে, সুযুকি বাবুর নেমপ্লেটটা দেখেছিলাম, সেখানেই আমি ওনার আইডি কার্ডটা দেখেছিলাম, আর সাথে সাথে ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হওয়া শুরু হল। পুলিশ ফাইলে যে কার্ডটা আমরা মিঃ সঞ্জয়বাবুর নামে পেয়েছিলাম, সেটা একটা জাল কার্ড, কারণ সঞ্জয়বাবু কোনোভাবেই ওই বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন না, যেটা আমরা মিঃ তাকাহাসির আর নকল মিঃ তিচেরোর মুখেও শুনেছি। তাহলে, ডেডবডীর কাছে আই কার্ড কোথা থেকে এলো? আসলে এসবই সঞ্জয়বাবুর মাস্টারপ্ল্যান। উনি ডেডবডীটার একটা নকল পরিচয় তৈরি করে আমাদের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তুই কি করে বুঝলি যে আই কার্ডটা জাল?-আমার চোখে মুখে, অপার বিস্ময় ফুটে উঠল।
(চলবে )
ওফ, কিযে আনন্দ হচ্ছে এখন আমার বলে বোঝাতে পারব না। এখন বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমরা দুজনে...থুরি, অর্ক একা, এই কেসটা সলভ করে ফেলেছে। ওর বুদ্ধির তারিফ না করে পারা যায় না। কি করে যে ও পারলো, তা শুধু ওই বলতে পারবে। আপাতত ও এখন খুব মন দিয়ে ডাবল ডিমের ওমলেট খাচ্ছে। যদিও আমি অনেক আগেই আমারটা শেষ করে দিয়েছি, কারণ ও তখন ফোনে কারোর সাথে কথা বলছিল, মনে হচ্ছে, মিঃ ভদ্রমশাইের সাথে কথা বলছিল, এটুকু অন্তত বুঝতে শিখেছি অর্কর সাথে থাকতে থাকতে।
যাই হোক, খুনি কে বা কারা আমরা এখন সবাই জানি, কিন্তু এখনো আমাদের কাছে সবকিছু পরিষ্কার নয়, অর্ক, ঠিক আমার মনের কথা কেড়ে নিয়ে প্রিতমদা অর্কর দিকে ঘুরে বলে উঠলেন- তাই আমাদের জানতে ইচ্ছা করছে এই রহস্যের সমাধান কি করে করলে?
আরে প্রিতম, এটাকে শুধু রহস্য না বলে গন্ধরহস্য বলাই বেটার – জ্যেঠুর সহাস্য মন্তব্য। আমি অর্ক কে বললাম, ভাই প্লীস বল না কি করে তুই এতকিছু বুঝতে পারলি...
অর্কর অমলেট খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, কফির কাপটা হাতে নিয়ে বলল – তাহলে শুনুন, আমার সর্বপ্রথম সন্দেহ হয় যখন, খবরের কাগজের খবরটার সাথে আই কার্ডের ছবিটা দেখি, ছবিটায়, ওয়াকাহামা বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের লোগো ছিল। তখনই বুঝেছিলাম যে এর মধ্যে কিছু রহস্য আছে। যাই হোক এরপর তো তোমরা সবাই জানো যে আমরা লাশটা শনাক্ত করেছিলাম যে সঞ্জয় বাবুর নামে। আসলে সঞ্জয়বাবু এত চালাকি করে পুরো ব্যাপারটা সাজিয়েছিলেন, যে আমরা তখনও বুঝতে পারিনি যে ওটা সঞ্জয়বাবুর লাশই নয়, মিঃ সুযুকি তিচেরোর লাশ।
আমি থানা থেকে লাশের ছবি নিয়ে এসেছিলাম এবং ভাল করে লক্ষ করে দেখলাম যে, লাশের বাঁ হাতের কব্জির নীচে ওনার নামের আদ্দ্যক্ষর “এস•টি•” উল্কি দিয়ে লেখা আছে, তাতে আমরা আরও নিশ্চিন্ত হলাম যে লাশটি মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসির। ওনারাও লাশকে দেখে সঞ্জয়বাবুর বলেই শনাক্ত করলেন। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।
গণ্ডগোলটা বাধল তখনই, যখন আমরা হোটেলে ওনাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখলাম, গবেষণা সংক্রান্ত সব কিছু মিঃ তাকাহাসি আমাদের বলছেন, আর উনি কেমন যেন অন্যমনস্ক হবার ভান করে চুপ করে ছিলেন। উনি দুবার উঠে চলে গিয়েছিলেন, প্রথম বার লবি থেকে রুমের ওয়াশরুমে, আর পরেরবার উনি রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন একবার। দ্বিতীয়বারে ওনার যাওয়ার আর আসার সময়ে হাঁটাটা অন্যরকম লাগল। হয়ত উনি ভুলে গিয়েছিলেন বাঁ খেয়াল করেননি যে আমি ওনাকে লক্ষ করেছিলাম দুবারই, যা আমার সন্দেহ আরও গভীর করে তুলেছিল। আমি ইচ্ছে করেই সঞ্জয়বাবুর রুমের ওআশরুমে ঢুকেছিলাম, অখানেও সেই একই গন্ধ পেয়ে বুঝতে পারলাম ওই বিশেষ সলিউশনটাতে নিশ্চয়ই কিছু আছে। ওটার কথা উঠতেই সঞ্জয়বাবুর উদাস মন হঠাৎ ঠিক হয়ে গেলো, এবং ইচ্ছে করেই উনি কাঁচের বয়মটা ভেঙ্গে ফেললেন, কিন্তু এমনভাবে করলেন, যাতে মনে হয় যে আচমকা, হাত থেকে পরে গেছে, কাড়াকাড়িতে। এটা আমি আর সঞ্জয়বাবু দুজনেই কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম, তাই উনি হঠাৎ অসুস্থ হবার ভান করা শুরু করে দিলেন এবং আমাদেরকে ওনাদের রুম থেকে তাড়াতে চাইলেন।
তবু এগুলোতো গেলো মানসিক উপলব্ধির ব্যাপার, কোনও কিছু প্রমান এতে করা যেত না। তাই ভাবছিলাম যে কি করা যায়, তখনই, সঞ্জয়বাবু মুখ মুছতে গিয়ে পকেট থেকে রুমাল খুঁজে না পেয়ে, সামনের ওয়ার্ডরোব থেকে একটা রুমাল বার করে নিলেন, কিন্তু তার মধ্যেই ওনার পকেট থেকে, দুটো কাগজের টুকরো পরে যায়, যা আমি সবার অলক্ষে নীচে আমি কুড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে নি। তখনই আমি শিওর হয়ে গেলাম যে ইনি আর যে কেউ হন, মিঃ সুযুকি নন, কারণ, মিঃ সুযুকি, যদিও বা কোনও কারণে, ওনার কাজের জিনিসপত্র সঞ্জয়বাবুর রুমে রাখেন, তাও ওনার ব্যবহার করার রুমাল উনি সঞ্জয়বাবুর রুমের ওয়ার্ডরোবে কেন রাখবেন?
এ ব্যাপারে আরও কিছু জিনিসের কথা এখানে বলতে চাই। মৈনাক তোর নিশ্চই মনে আছে যে ঘটনাটার সময়ে আমরা সঞ্জয়বাবুর রুমেই ছিলাম। আমি বিস্ময়ে ঘাড় নাড়াতেও ভুলে গিয়েছিলাম, অর্ক ওর বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিল – ও বলে চলল – হঠাৎ আমার জাপানীদের নিয়ে নেটে পড়াশুনো করা একটা আর্টিকেলের কথা মনে পরে গেলো, আমরা মিঃ সুযুকির রুমে ওনার নাম লেখা একটা নেম প্লেট দেখেছিলাম, যাতে ভুলবশঃত হোটেলের স্টাফ ওনার নামটা উল্টো লিখেছিলেন যা উনি কেটে আবার সোজা করে দিয়েছিলেন, আপনারা হয়ত জানেন না, যে জাপানীরা তাদের সারনেমকে খুব গুরুত্ত্ব দেয়, সবসময়ে, আগে তারা সারনেমটা ব্যবহার করে তারপরে তারা প্রথম নাম ব্যবহার করেন। মিঃ সুযুকি তাই ওনার নামটা “তিচেরো সুযুকি” থেকে কেটে “সুযুকি তিচেরো” করে দিয়েছিলেন। এই কথাটা মনে হওয়াতেই আমি সঞ্জয়বাবুকে মিঃ সুযুকি বলে ডাকতে আরম্ভ করি, দেখলাম, তাতে ওনার কোনও ভাবান্তর হল না, আর তারপরই আমি আবিষ্কার করি ওনারও বাঁ হাতের কব্জিতে লেখা আছে দুটো শব্দ – “টি•এস•”। তারপর সঞ্জয়বাবুর পকেট থেকে পরে যাওয়া কাগজগুলো কুড়োতে গিয়ে আমি খাটের তলায় ওই কাদামাখা জুতোজোড়া দেখতে পারলাম, আর তখনই আমার মনে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উঁকি মারল, কিন্তু তাও মনে মনে অংকটা ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। আমরা আর কিছু না বলে ফিরে চলে এলাম।
আমি মৈনাকদের ডিনারের অরদের দিতে বলে হোটেলের সিকিউরিটি স্টাফদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম, ওখানে একজন আমায় বলল সেই রাত্রে উনি দুজন কে বেরোতে দেখেছিলেন, কিন্তু ফেরার সময়ে শুধু একজনকেই ফিরতে দেখেছিলেন, উনি পরিচয় জিজ্ঞাসা করাতে জানতে পেরেছিলেন যে উনি মিঃ তিচেরো। ওনার স্টেটমেন্টটাও তোমরা নিয়ে নিও প্রিতমদা।
রাত্রে, থানাতে, যখন, সুকুমার বাবুর সাথে কথা হল, উনি সঞ্জয়বাবুর আগেরবার এখানে এসে দুটো জায়গায় ঘোরার কথা বলেছিলেন, এবং কাকতালীয় ভাবে ওনার লাশটা টার মধ্যে একটা জায়গায় পাওয়া যায়, এটা থেকে আমি অনুমান করে ভদ্রমশাইকে বলেছিলাম যে গাড়ির খোঁজটা হোটেলের পিছনের সেই পরিতক্ত্য জায়গায় একবার খোঁজার জন্য। রাত্রে, মিঃ ভদ্র আমার অনুমান সঠিক করে আমার ধারনাকে আরও পোক্ত করে দিলেন। কিন্তু তাও কেন যেন আমার মনের খটকাটা যাচ্ছিল না। রাত্রে, অনেক কিছু চিন্তা করেও যখন কোনও কিছু মাথায় আসছিল না, আমি আবার লাশের আর আমার সাথে, তোলা ওনাদের ছবি গুলো দেখতে শুরু করি, তখনই আমার মনে পরে যায়, আর একটি ছোট ঘটনার কথা, মৈনাক তোর মনে আছে কিনা জানি না, আমরা যেখানে, সুযুকি বাবুর নেমপ্লেটটা দেখেছিলাম, সেখানেই আমি ওনার আইডি কার্ডটা দেখেছিলাম, আর সাথে সাথে ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হওয়া শুরু হল। পুলিশ ফাইলে যে কার্ডটা আমরা মিঃ সঞ্জয়বাবুর নামে পেয়েছিলাম, সেটা একটা জাল কার্ড, কারণ সঞ্জয়বাবু কোনোভাবেই ওই বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন না, যেটা আমরা মিঃ তাকাহাসির আর নকল মিঃ তিচেরোর মুখেও শুনেছি। তাহলে, ডেডবডীর কাছে আই কার্ড কোথা থেকে এলো? আসলে এসবই সঞ্জয়বাবুর মাস্টারপ্ল্যান। উনি ডেডবডীটার একটা নকল পরিচয় তৈরি করে আমাদের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তুই কি করে বুঝলি যে আই কার্ডটা জাল?-আমার চোখে মুখে, অপার বিস্ময় ফুটে উঠল।
(চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২৫/০৮/২০১৫ভীষণ, ভীষণ ভালো লাগলো।
-
অভিষেক মিত্র ২৪/০৮/২০১৫দারুন। কিন্তু আবার অপেক্ষা করতে হবে? :-(