www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গন্ধ - ৭ম পর্ব

( আগের সংখ্যার পর )



কিন্তু কি করে, মিঃ সুযুকি কে মারা হল - যদি একটু বলেন – অর্ক কথাটা বলে সঞ্জয়বাবুর দিকে তাকাল।

সঞ্জয় বাবু, এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন, এইবার বলে উঠলেন – আমি খুন করেছি ওনাকে, আমি সেদিন, ডিনার করতে করতে উঠে চলে যাই সোজা, সুকুমারের কাছে, ওখান থেকে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে হোটেলের কাছে রেখে নিজের নকল চুল আর গোঁফ গাড়িতে রেখে আমি হোটেলে ঢুকে যাই, হোটেলের লোক আমায় যাতে চিনতে না পারে, তারপর ওখান থেকে মিঃ সুযুকি কে রাতের কলকাতার নৈশপার্টী দেখাবার নাম করে নিয়ে চলে যাই বাইরে, আর সুযোগ বুঝে ওনার সাথের খাবারে পটাশিয়াম সায়ানাইডের ইঞ্জেকশান পুশ করে দি।

তারপর ওনার লাশের মুখের উপরে আপনাদের গবেষণার সলিউশনের সাথে, আরও কিছু যেমন কাঁচা চিকেন ও রক্তর একটা পেস্ট মিশিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের এলাকার একটি ভ্যাটের পাশে ফেলে চলে আসেন আবার হোটেলে, তবে এইবারে, মিঃ সুকুকির বেশে, কি তাইতো ? –অর্কর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর।

সঞ্জয়বাবু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন। আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে, হঠাৎ জ্যেঠুর গলা পেলাম – আচ্ছা মিঃ তাকাহাসি, আপনাদের এই গবেষণার বিষয়টা ঠিক কি নিয়ে যদি একটু বলেন, যার জন্য, একজনকে খুন পর্যন্ত হতে হল।
মিঃ তাকাহাসি দৃপ্ত স্বরে বললেন- আসলে আমরা কৃত্তিমভাবে তিন ধরনের কোষ আবিষ্কার করেছি। যাদের একসাথে আমরা নাম দিয়েছি – অলফ্যাকটরি ইউনিভারসাল রিসেপটরস বা OUR. এর মধ্যে আছে অলফ্যাকটরি ক্যারিশমাটিক কোষ, অলফ্যাকটরি ইনসেপটর কোষ ও অলফ্যাকটরি রিসেপটর কোষ। এই তিন ধরনের কোষগুলো যদি কোনও মানুষের নাসারন্ধ্রের এপিথেলিয়াল কোষপর্দার অভ্যন্তরে অবস্থিত প্লাসমাপর্দায়, ও মস্তিস্কের নাসাল নার্ভাস সিস্টেমের প্লাসমাপর্দায় কৃত্তিমভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাহলে সেই মানুষটির গন্ধ চেনার ক্ষমতা অত্যধিক হারে বেড়ে যাবে। একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিস্কার হবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে একটি ব্লাড হাউনড কুকুরের গন্ধ চেনার ক্ষমতা একটি মানুষের চেয়ে প্রায় ১০০০০ গুন বেশী। কিন্তু আমাদের ওই কোষগুলো, দিয়ে সেই মানুষটিরও গন্ধ চেনার ক্ষমতা ওই ব্লাড হাউনড কুকুরের থেকেও বেশী হয়ে যাবে, এর মানে বুঝলেন? বলে মিঃ তাকাহাসি আমাদের দিকে তাকালেন।

আবার নিজেই বলতে শুরু করলেন – এর মানে, ধরুন, সাধারন ভাবে আপনারা এখন, খুব বড়জোর একটা পচা মাছ এক ঝুরি, মাছের থেকে গন্ধ দিয়ে চিনে নিতে পারেন, কিন্তু আমার তৈরি করা কোষগুলো দিয়ে আপনারা একটি পচা মাছ কয়েক হাজার ঝুরি থেকেও অনায়াসে বার করে দিতে পারবেন আপনারা। এটাই ওই কোষগুলোর বিশেষত্ব। আমার তৈরি করা “আওয়ার” কোষগুলো ঠিক সারমেয়দের ঘ্রানশক্তির মত কাজ করবে। একটি সারমেয় যখন শ্বাস নেয়, তখন গন্ধ আর বাতাস দুটো আলাদা হয়ে যায়, ওদের নাসারন্ধ্রে অবস্থিত কয়েক লাখ অলফ্যাকটরি রিসেপটর কোষের জন্য এবং গন্ধটা ওদের মস্তিস্কের হার্ড ডিস্কে চিরকালের মত সেভ হয়ে যায়। এই একই কাজ করবে আমার তৈরি করা কৃত্তিম কোষগুলো একটি মানুষের দেহে। বুঝতেই পারছেন এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। হয়ত এর জন্য আমার নোবেল প্রাইজটা বাঁধা ছিল। কিন্তু বলুন আমি কেন এর শ্রেয় অন্য কাউকে দেব? আমি কাউকে এর ভাগিদার হতে দেব না। এর সিক্রেট ফরমুলা শুধু আমি জানি আর কেউ নয়।

আমরা সবাই চুপ করে ওনার কথা শুনছিলাম, অর্কর কথাতে সম্বিত ফিরে পেলাম - কিন্তু এখন তো আপনার সব গেলো তাই না মিঃ তাকাহাসি ?
বৃদ্ধ চুপ করে উপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন, হয়ত মৃত স্ত্রীকে স্মরন করছিলেন।

যাই হোক, এবারে পরের কোথায় আসি। মৈনাক তুই আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলিস না যে ওই চালের মত বস্তুটা কি? ওটা হল জাপানের এক বিশেষ ধরনের ভাত। ওটাকে ওনারা সুশি রাইস বলে থাকেন। ওনারা নিজেদের কাছে, রেখেও দেন অনেক সময়ে, মিঃ তিচেরোর সেই স্বভাব ছিল, আর সঞ্জয়বাবুরা সেটা ভাল করে জানতেন। আচ্ছা, সঞ্জয়বাবু আপনি কি বলবেন, মার্ডার উইপনটা কোথায় ফেলেছেন?

ইঞ্জেকশান সিরিঞ্জটা ওই গাড়িতেই কোথাও পড়ে আছে, - সঞ্জয়বাবু বলে উঠলেন।
হুম ... প্রিতমদা শুধু একটা শব্দ করে মিঃ ভদ্রর দিকে তাকালেন। ভদ্র মশাই ঘাড় নেড়ে তৎক্ষণাৎ কানে ফোন দিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।
অর্ক বলে উঠল – আমার লাশের ছবিটা দেখেই সন্দেহটা হয়েছিলো, শুধু মুখটা অমন ক্ষতবিক্ষত কেন? নিশ্চয়ই খুনি চায় না লাশের আসল পরিচয় কেউ পাক। তারপর ওই সলিউশনটা সেদিন আমার হাতে লেগে যাওয়াতে, আমি খেয়াল করেছিলাম যে আমাদের পাড়ার অতি নিরীহ কুকুরটাও আমারদিকে তাকিয়ে কেমন চিৎকার শুরু করে দিয়েছিল, তখনি বুঝেছিলাম যে ওই সলিউশনটাতে এমন কিছু আছে, যা ভয়ঙ্কর। তারপর আমি সেদিনকে হাতে নাতে তার প্রমান পেয়ে গেলাম। সঞ্জয়বাবু অভিনয় অনেক নিখুত করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা উনি পরে গেলেন, ওই যে কথায় আছে না - ক্রাইম নেভার পেইয়ড।

ওনারা সব ধরনের প্রেজেনটেশন বাতিল করে পরের দিনের টিকিট কেটেছিলেন, কিন্তু তাও সময় ওনাদের সাথ দিল না। এরপরের ঘটনাতো এখন আপনাদের সবার জানা, এই বলে অর্ক প্রিতমদার দিকে তাকাতেই, প্রিতমদা এক গাল হেসে বলে উঠলেন- গুড জব ডান অর্ক ও মৈনাক। তোমরা যা করেছ, আমাদের পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তা করে দেখাতে পারেনি। কিন্তু এখন ভোর হয়ে গেছে, চল আমরা সবাই মিলে একবার থানাতে যাই, ওখানে কিছু কাজ আছে। তোমাদের জন্য স্পেশাল জলখাবারের আয়োজন করা হয়েছে ওখানে। কোনও চিন্তা নেই, আমি আর জাপানী কনস্যুলেটের মিঃ কাতসুমি সব স্টেটমেন্ট রেকর্ড করে নিয়েছি। এরিমধ্যে, ভদ্র মশাই ফিরে এসেছিলেন, প্রিতমদা ওনাকে বললেন, - ভদ্রদা, কালপ্রিটদুটোকে নিয়ে আপাতত থানার লকআপে রেখে দিন আর এই রুম গুলো ভাল করে সার্চ করিয়ে সীল করে দিন। আমরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে হোটেলের বাইরে বেরিয়ে এলাম, অর্ক দেখি, ভদ্রমশাইকে কে নীচু গলায় কিছু একটা বলে তাড়াতাড়ি নীচে চলে এলো, বুঝলাম কিছু একটা রিকোয়েস্ট ও মিঃ ভদ্র কে করে এলো।

আঃ হোটেলের বাইরে বেরিয়ে, এই ভোরবেলায় পৃথিবীটা কি সুন্দর লাগছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলাম গাড়ির দিকে আমরা।


(চলবে)...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৫৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৮/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • গল্পটা খুব ভালো লাগলো।
  • অভিষেক মিত্র ২২/০৮/২০১৫
    ভালো। তবে CHARACTER গুলোর একটু ভালো করে বর্ণনা দিতে পারতেন। VISUALIZE করতে সুবিধে হত। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
    আমার লেখা গুলো পড়ার অনুরোধ রেখে গেলাম।
    • ক্যারেক্টার গুলোর সব পরিচয় ভালোভাবেই দেওয়া হয়েছে, তোমায় অনুরোধ করব আরো একবার পড়তে।

      তোমার লেখা আমি আজকেই পড়ছি, আর পরের পর্ব আজ দেব।
      • অভিষেক মিত্র ২৪/০৮/২০১৫
        পরিচয় না, চেহারার বর্ণনার কথা বলছি।
  • সাইদুর রহমান ১৭/০৮/২০১৫
    ভালো লাগলো গল্পটি।
  • নাবিক ১৭/০৮/২০১৫
    এটাকি থ্রিলার? আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক এড করে দিলে ভালো হতো।
    • ধন্যবাদ বন্ধু, হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন এটা একটা থ্রিলার। আপনি এর আগের গুলো আমার পাতায় এসে পড়ে যেতে পারেন। আপনাকে আমন্ত্রণ জানালাম ।
 
Quantcast