www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গন্ধ - ৩য় পর্ব

( আগের সংখ্যার পর ) -

এখন যে কি আনন্দ হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। থানাতে পৌছাতেই দেখি, মিঃ ভদ্র, হন্তদন্ত হয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন –উফফ, বাবা আপনারা এসে গেছেন, স্যার আপনাদেরই জন্য ওয়েট করছেন, তারাতারি ওনার কেবিনে চলুন। আমরা স্যার অর্থাৎ, প্রিতমদার কেবিনে, ঢুকে দেখি, প্রিতমদা একমনে একটা ফাইল পরছেন, আমাদের কে দেখে, বলে উঠলেন, আরে, তোমরা চলে এসেছ, আমি তোমাদের জন্যই ওয়েট করছিলাম। আমরা দুজনে দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসে পরলাম। প্রিতমদা ভদ্রমশাই কে তিনটে চা কেবিনে পাঠাবার জন্য বলে আমাদের দিকে ঘুরে বললেন – থাঙ্ক ইউ অর্ক, আজ তোমাদের জন্যই এত তাড়াতাড়ি  ডেডবডিটা আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারা যায় না। লেগে থাকো, তোমার হবে।

অর্ক সব শুনে একটু মুচকি হাসল। কিন্তু ওর ভেতরের কষ্টটা হাসির মধ্যেও লুকোনো থাকল না, প্রিতমদার চোখে ঠিক ধরা পরে গেলো, পুলিশের লোক বলেই বোধ হয়। ওনার পরের কথাতেই তা পরিষ্কার হয়ে গেলো।
দেখ অর্ক, আর মৈনাক, একটা বিশেষ কারণে তোমাদেরকে আমি ডেকেছি, তোমরা তো বুঝতেই পারছ যে, এই কেসটা এখন আলাদা গুরুত্ত্ব পেয়ে গেছে। ওপর মহল থেকে চাপ আছে, যে করেই হোক, এটা তাড়াতাড়ি মেটাতে হবে। ওদিকে আবার, জাপান এমব্যাসি দিল্লীতে এর পুরো রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। সাঁড়াশির চাপ, বুঝেছ? এটাকে সলভ না করতে পারলে মাথা কাটা যাবে। আমি চাই তোমরাও এই কেসটাতে পুলিশ কে বাইরে থেকে সাহায্য কর, পুলিশ যেমন তদন্ত করছে করুক, কিন্তু তোমরাও প্যারালালী তদন্ত করে আমাদেরকে হেল্প কর। তোমাদের উপরে আমার পুরো ভরসা আছে। কোনও চিন্তা কোর না, আমি তোমাদের বাড়িতে আর আমার উপরমহলেও কথা বলে নিয়েছি। তোমাদের কোনও কাজে কেউ বাধা দেবে না। কী রাজী তো? যদি তোমরা সফল হও তাহলে, তোমাদের গোয়েন্দাগিরির মাথায় একটা পালকও জুড়বে।

আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম যে আমার হার্টবিট লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাছে। অর্কর মুখের দিকে একবার তাকালাম, দেখলাম ওরও চোখের কোনা চিকচিক করছে। আমি আর অর্ক দুজনেই ঘাড় একেবারে ৯০⁰ অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে নিজেদের সম্মতি জানালাম।

আচ্ছা, এবারে কজের কথায় আসি, বলে প্রিতমদা আমাদের দিকে ঘুরে তাকালেন। সব মিলিয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত যা যা পেয়েছি সেগুলো একবার ঝালিয়ে নিই এসো।

১। মিঃ তিচেরো সুযুকি, বয়স প্রায় ৫০-৫৫ বছর, মিঃ একেরো তাকাহাসি, বয়স প্রায় ৭০-৭৫ বছর এবং ওনার পুত্র মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসি, বয়স প্রায় ৪৮-৫২ বছর, একসাথে কলকাতায় আসেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। ওনাদের প্রেজেন্টেশান ছিল পরের দিন অর্থাৎ শনিবার কলকাতার সায়েন্স কংগ্রেসএ।

২। কিন্তু শুক্রবার রাতে ডিনার এর মাঝপথ থেকে, সঞ্জয়বাবু বেপাত্তা ছিলেন, এবং আমরা ওনার লাশ পাই আমাদের এই এলাকায় একটি ভ্যাট এর পাশ থেকে। যার ফলে, ওনাদের প্রেজেন্টেশানটাও বাতিল করে দিতে হয়।

৩। ময়নাতদন্তে জানা যায় যে, ওনার সাথের খাবারে কেউ পটাশিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে দেয়, যার ফলে ওনার পাকস্থলীটা নীল হয়ে যায়। পুলিশি তদন্তে জানা গেছে যে, সঞ্জয়বাবু কলকাতা সম্বন্ধে জানতেন এবং তার কিছু বন্ধুও আছে এখানে। ওনার ফোনের কললিস্ট দেখে দুজনকে ডেকে পাঠান হয়েছে। এরমধ্যে একজন নাম সুকুমার বাবু, গরিয়ার বাসিন্দা, এবং অপরজন থাকেন ভিআইপি রোডে। সুকুমার বাবুর সাথে রাত্রিবেলা সঞ্জয়বাবুর শেষ দেখা হয়। ওনাকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাছে না। তবে একটা কথা, সঞ্জয়বাবু নিজে উইগ পরতেন, এবং নকল গোঁফও লাগাতেন।

এইখানেই খটকাটা, প্রিতমদা...কথাটা বলে অর্ক মুখ তুলে চাইল, এতক্ষণ মুখ নিছু করে ও মন দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। প্রিতমদা তাকাতেই, বলল, - একটা লোক উইগ পরতে পারে, কিন্তু নকল গোঁফ কেন লাগাতে যাবে বলতো? সচরাচর, এটা দেখা যায় না।

প্রিতমদা হেসে বলল - আরে না না, আসলে, উনি নকল গোঁফ পড়তেন ভারতীয়দের সাথে নিজেকে রিলেট করার জন্য, যদিও এটা ওনার বাবার কথা। ওনার পাসপোর্টটাও পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।

আর কিছু? – এবারে প্রিতমদা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন। অর্ক বলে উঠলো – না আর কিছু পাওয়া যায় নি এখনো। তোমরা কি কিছু সন্দেহ করছ? প্রিতমদা বললেন- মনে হয়, ওনার কেউ পরিচিত ব্যক্তিই এই কাজ করেছে, নাহলে এই বিদেশ বিভূঁইতে ওনার এতো বড়ো শত্রু কে হবেন?
অর্ক একটু চিন্তা করে নিয়ে বলল- হুমমম...আচ্ছা আমি কি এই ফাইলের একটা কপি পেতে পারি? যদি পাওয়া যায়, তাহলে, আমি একটু ভালোকরে কেসটার স্টেটমেন্টগুলো ও ছবিগুলো দেখতে পারি। তবে হ্যাঁ, ওবেলা একবার ওনাদের সাথে কথা বলতে যাবো হোটেলে। তুমি একটু বলে দিয়ো।

ঠিক আছে, তাই হোক, আর এই ফাইলটা আমি কপি করে রেখেছিলাম, তুমি নিয়ে যাও, আমি বিকেলে, তোমাদের বাড়ী থেকে নিয়ে নেবো। আমি ভদ্রকে বলে দিচ্ছি তোমাদেরকে এই ব্যাপারে সবসময় সাহায্য করতে। তোমাদের কে ওই ওখানে নিয়ে যাবে। অল দ্য বেষ্ট – প্রিতমদা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন।

আমরা ওনার সাথে হাত মিলিয়ে উঠে পড়লাম আর বাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম। পথে যেতে যেতে অর্ক আমাকে বলল – বুঝলি, মৈনাক, আজকে দুপুরে তুই আমাদের বাড়িতেই থেকে যা। আমি আপত্তি করছিলাম, কিন্তু, তখনি অর্ক বলল – বাবাকে আজ দেখলাম, বাজার থেকে, ইলিশ মাছ আর নবদ্বীপের দইয়ের ভাঁড় নিয়ে  ঢুকতে। আমি আর না করতে পারলাম না।
ওদের বাড়িতে ঢুকে, প্রথমে, নিজের বাড়িতে খবরটা দিয়ে দিলাম। তারপর সবাই মিলে জম্পেশ করে ভূরিভোজন হল। দুপুরে খাটে শুয়ে শুয়ে হাল্কা করে টিভি চালিয়ে দিয়ে, নিদ্রাদেবীর শরনাপন্ন হব, দেখি, কলকাতার এক জনপ্রিয় খবরের চ্যানেলে দেখাচ্ছে, - “ব্রেকিং নিউজ- জাপানী বৈজ্ঞানিক মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসি কে বা কারা খুন করেছেন, তা পুলিশ এখনও জানতে পারে নি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এখনও এব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ, গোপন সুত্রে খবর, এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতের সাথে এর যোগাযোগ আছে, যার ফলে, পুলিশ খুব ধীরে ধীরে এগোতে চাইছে।“ আমি অর্কর মুখের দিকে তাকাতেই, দেখি, ও ফাইলটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল, মুখটা না তুলেই আমার উদ্দেশ্যে বলল – কি কাণ্ড। সঞ্জয়বাবুকেও বৈজ্ঞানিক বানিয়ে ছাড়ল এরা। আমি টিভি বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। অর্ক, ফাইল ছেড়ে, এবারে ল্যাপটপটা নিয়ে পরল, এবং আমি, নিদ্রাদেবীর ডাক উপেক্ষা করতে না পেরে ঘুমের দেশে যাওয়াই বাঞ্ছনীয় মনে করলাম।



কিরে? ওরকম গোমড়ামুখো হয়ে বসে আছিস কেন? আমি আর বিরক্তি চেপে রাখতে না পেরে বললাম, থানা থেকে ফিরে আসা ইস্তক দেখছি, তুই এরকম ভাতের হাঁড়ির মত করে বসে আছিস। কি হয়েছে আমি কি কিছু জানতে পারি? এনিথিং সিরিয়াস?

বুঝতে পারছি না, অংকগুলো ঠিক ঠিক যেন মিলছে না – অর্কর গলায়, হতাশার সুর। আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম – মানে? কিসের অংক? কোথায় মিলছে না ? উত্তরের আশায় জল ঢেলে, আবার ও চুপ করে নোটবুকে পেন্সিল দিয়ে হিজিবিজি কাটতে শুরু করল।

ওহহ বলতে ভুলে গেছি, যে আমরা বিকেলে, বাইপাস সংলগ্ন পাঁচতারা হোটেলে গিয়েছিলাম, মিঃ তিচেরো ও মিঃ তাকাহাসির সাথে দেখা করতে। আমাদের সাথে ভদ্রমশাইও ছিলেন, আমাদের সাহায্য করার জন্য। লোকটাকে প্রথমে যত খারাপ ভেবেছিলাম, তাতো খারাপ নন উনি, এইকদিনেই তা পরিষ্কার হয়ে গেছে আমাদের কাছে। আসলে, পুলিশের চাকরীতে যা হয়, আর কি? এমনিতে ভদ্রলোক খুবই ছাপোষা মানুষ।

আমরা হোটেলে পৌঁছে লবি তে প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে দেখি, ওনারা দুজনে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, সরি, আমাদের একটু দেরি হয়ে গেলো। বলুন আপনারা কি জানতে চান? অর্ক ওনাদেরকে সামনের সোফাতে বসতে বলে, কথা শুরু করল। পুরো কথাবার্তাই ইংরাজীতে হল, আমি তার সারাংশটা তুলে দিচ্ছি এখানে বাংলায় –

মিঃ তিচেরো ভদ্রলোক খুব আমায়িক ভাবে কথা শুরু করলেন, ছোট্ট করে হেসে, আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। অর্ক বলল যে আমরা প্রাইভেট ইনভেসটিগেটর, কিন্তু এখানে পুলিশের সাথে একসাথে কাজ করছি।
অর্ক হেসে বলল -  আমরা আপনাদের বেসি সময় নষ্ট করব না, সোজা কাজের কথায় আসি, এই বলে ও প্রশ্ন করল মিঃ তিচেরোকে, -আচ্ছা আপনাদের সাথে সঞ্জয়বাবুর শেষ দেখা কখন হয়? মিঃ তাকাহাসি এর উত্তরে বলে উঠলেন, আচ্ছা এটাতো আমরা কবে থেকে বলে এসেছি যে, আমরা সঞ্জয় কে শেষবার ডিনার করার সময় দেখি। সেই যে উঠে চলে গেলো, একটা ফোন এসে যাওয়াতে, আর ফিরল না। মিঃ তিচেরো একটি দীর্ঘনিশ্বাঃস ফেলে, বলে উঠলেন - সত্যি কেন যে সঞ্জয় সেদিন বেরতে গেলো। অর্ক জিজ্ঞেস করে উঠল-আপনাদের কি মনে হয়, এখানে কোনও শত্রু ছিল সঞ্জয়বাবুর? কাউকে কি আপনাদের সন্দেহ হয়? এর উত্তরে মিঃ তাকাহাসি বলে উঠলেন,-না আমাদের তা মনে হয় না, শুধু মনে হচ্ছে, হয়ত কোনও গুন্দা-বদমাস দের গ্যাংএর পাল্লায় পরে গিয়েছিল রাত্রে।

এর মাঝে, মিঃ তিচেরো একবার উঠে গেলেন আবার কিছুক্ষণ পরে ফিরে চলে এলেন নিজের জায়গায়। উনি ফিরে আসতেই একটা অদ্ভুত উগ্র আঁশটে গন্ধ ছরিয়ে পরল আমাদের নাকে। ভদ্রমসশাই এতক্ষণ চুপ করে দেখছিলেন, এবার আমার কাছে এসে কানে কানে বললেন,-অ মশাই, এটা কি জাপানী পারফিউমএর গন্ধ? এরকম, নোংরা ...... ওনার কথা শেষ হতে না হতে, অর্ক আমাদেরকে চুপ করার ইশারা করে মিঃ তিচেরোর উদ্দেশ্যে বলল -আচ্ছা, স্যর, আমরা আপনাদের রিসার্চটা সম্বন্ধেও একটু জানতে চাই, আর আপনাদের ঘর গুলো একটু দেখব। তবে, তার আগে বলুনতো আপনারও কি তাই মনে হয় যে এর পিছনে কি গুন্ডা-বদমাসদের হাতই আছে, নাকি অন্য কিছু? মিঃ তিচেরো কেমন যেনো অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন, অর্কর প্রশ্নটা শুনে। অর্ক আরেকবার জিজ্ঞাসা করতেই, মিঃ তাকাহাসি বলে উঠলেন – আপনারা প্লীস, ওনাকে ছেড়ে দিন, উনি কিছু ভাবতে পারছেন না। উনি শোকাহত। বুঝলাম, যে এক ধরনের প্রশ্নবানে ওনারা জর্জরিত হয়ে আছেন এবং তাতে যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করছেন।

অর্ক এবার জিজ্ঞেস করল, আপনাদের ফেরার টিকিট কি কাটা হয়েছে? শুনে, মিঃ তিচেরো শুষ্ক হেসে বললেন, হ্যাঁ, অনেক কষ্টে আমরা কালকের রাতের ফ্লাইটের টিকিট পেয়েছি, দিল্লী থেকে জাপান এয়ারলাইন্সের, এখান থেকে দিল্লীর ফ্লাইটের সময় সকাল ১০:০০ টা। বডিটাও তো আমাদেরকে নিয়ে যেতে হবে।

অর্ক এবারে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে আর ভদ্র মশাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি ওনাদের মাঝখানে দাঁড়াচ্ছি। তোরা একটু আমার কটা ফটো তুলে রাখ, জানি না, এই সৌভাগ্য আবার কোনদিন হবে কিনা জানি না – এই বলে ও সোজা ওনাদের মাখখানে গিয়ে দাঁড়ালো, আর সাথে সাথে ওনারাও উঠে দাঁড়ালেন। আমরাও প্রস্তুত ছিলাম, নির্দেশের অন্যথা হল না। গোটা দশেক ছবি, বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়ার পর ও বলল-চলুন, এবার আপনাদের রুমগুলো একবার দেখে আসি। আমরা, পাঁচজনেই লিফটের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আটতলা তে এসে লিফট দাঁরাতেই, আমরা, নেমে এলাম, আর ভদ্রমশাই আগে আগে গিয়ে সোজা আমাদেরকে নিয়ে দাঁড় করালেন রুম নং – ৮৭৫ তে, জানলাম এটা মিঃ তিচেরোর ঘর। আমরা ঘরে ঢুকে চারদিকে চোখ বোলাতে শুরু করলাম। অর্ক মিঃ তিচেরোর দিকে ফিরে বলল – স্যর, এবারে যদি আপনাদের রিসার্চের ব্যাপারে কিছু বলেন। মিঃ তিচেরো বোধহয় তখনো শক থেকে বেরোতে পারেন নি পুরোপুরি, তাই মিঃ তাকাহাসি উত্তর দিলেন-ওকে, মাই বয়, শোন তবে, আমরা আমাদের বহু বছরের গবেষণার সাহায্যে কিছু গ্রুপ অফ সেল বা কোষ আবিষ্কার করেছি, যা মানুষের গন্ধ চেনার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। আমরা সফল ভাবে প্রমান করেছি যে, এই কোষগুলো, মানুষের শরীরে কৃত্তিম ভাবে প্রতিস্থাপন করলে, মানুষের গন্ধ চেনার ক্ষমতা অত্যধিক হারে বেড়ে যায়। আমরা কুকুর আর মানুষের মধ্যে তুলনা করে দেখেছি যে এই কোষগুলো কুকুরের শরীরে সাধারণত জন্মগত ভাবেই বিদ্যমান, এবং ওদের গন্ধ চেনার খমতাও আনেক বেশি। আমাদের রিসার্চ টা এখানেই মানুষ আর কুকুরদের গন্ধবিচার ক্ষমতাকে এক করে দেয়। এই দেখ, আমাদের রিসার্চ পেপারের একটা নমুনা।

অর্ক কাগজের পাতাগুলো নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলো। আমি পরিষ্কার লক্ষ করলাম, যে বলতে, বলতে মিঃ তাকাহাসির চোখের তারা উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম, অর্ক আড় চোখে মিঃ তিচেরো কে দেখছিল, কারণ, মিঃ তিচেরো কিছুক্ষণ আগে একবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন আবার দ্রুত ফিরে এলেন এরিমধ্যে। কি জানি, ও কি ভাবছে ?
অর্ক ঘরের চারদিকে একটা নজর বুলিয়ে, রাইটিং ডেস্কের কাছে গিয়ে, ওখান থেকে একটা নেম প্লেট তুলে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল, আমার নজর পরতে দেখলাম, ওটাতে “মিঃ তিচেরো সুযুকি” নাম প্রিন্ট করা ছিল, কিন্তু আবার সেটাকে কেউ পেন দিয়ে কেটে “মিঃ সুযুকি তিচেরো” করে রেখেছে। অর্ক প্লেটটা জথাস্থানে রেখে দিয়ে, ওখানে রাখা একটা রাইটিং প্যাডের থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নিয়ে নিজের পকেটে ধুকিয়ে রাখল। আমি খেয়াল করলাম, যে অর্ক একদৃষ্টিতে ডেস্কের উপরে রাখা মিঃ তিচেরোর আই ডি কার্ড টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে আবার যথাস্থানে রেখে দিল। আমরা আর একবার ঘরটা দেখে নিয়ে, ওনার রুম থেকে বেরিয়ে ওনার পাশের রুমে অর্থাৎ সোজা মিঃ তাকাহাসির রুমে ঢুকলাম। ওনার ঘরের নম্বর হল ৮৭৪ আর সঞ্জয়বাবুর ঘর হল ওনাদের ঠিক বিপরীতে , নম্বর - ৮৭৬। মিঃ তাকাহাসির ঘরটাও একইরকম, সেরকম কিছু বিশেষত্ব খুঁজে পেলাম না। ওনার ঘরটাও ভাল করে দেখে, অর্ক বলল-চলুন একবার সঞ্জয়বাবুর রুমটাও দেখে নি। আমরা সঞ্জয়বাবুর ঘরে ঢুকেই, সেই বিটকেল গন্ধটা আবার পেলাম। আমার খুব জোরে প্রকৃতির ডাক পেয়েছিল, কিন্তু গন্ধটার জন্য আর ইচ্ছে করল না যেতে।

ওদিকে অর্ক বোধহয় আমার মনের কথা টের পেয়ে গিয়েছিল, আমার দিকে ফিরে, বলল – তোরা দেখ, আমি একটু ওয়াশ রুম হয়ে আসছি। আমি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রুমটা দেখছিলাম, ভদ্র মশাই হঠাৎ আমার কানের কাছে মুখটা এনে বললেন- অ মশাই, বলছি, এনারা কি কাঁচা মাংস খান নাকি? আমি ঘুরে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন-দেখুন, এখন, আমি একশ ভাগ নিশিত যে, এটা কাঁচা মাংসর গন্ধ। এমনি এমনি এতদিন পুলিশের চাকরী করছি না বুঝলেন? জাপানীদের সম্বন্ধে আমি একেবারেই যে অজ্ঞ্ব, সেটা বোঝাবার জন্য কিছু বলতে যাব, তখনি, শুনি, আপনি হয়ত ঠিকই বলেছেন, ভদ্র মশাই, আমারও তাই মনে হচ্ছে। - কখন যে অর্ক আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়ালই করিনি আমরা। আমাদেরকে কথাটা বলেই, অর্ক এই রুমের ডেস্কের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা কাঁচের বয়ম হাতে তুলে, মিঃ তিচেরোকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করল –স্যর, এটা কি আপনাদের গবেষণার কোনও কাজে লাগে? আমরা তাকিয়ে দেখি, একটা কাঁচের বয়মের ভিতরে, কিছু ছোট ছোট কাঁচের গোলাকার বাক্স একটি তরলের মধ্যে ডোবানো অবস্থায় আছে।

কথাটা বলা মাত্রই, মিঃ তিচেরো হঠাৎ লাফিয়ে উঠে এসে অর্কর হাত থেকে বয়মটা কেড়ে নিতে গেলেন। কিন্তু টানাহ্যাঁচড়াতে বয়মটা মিঃ তিচেরোর হাত থেকে পরে ভেঙ্গে গেল, আর, তরলটা ছরিয়ে পরল মেঝেতে পাতা কার্পেটে। মিঃ তাকাহাসি দৌড়ে এসে ছোট কাঁচের বাক্সগুলো হাতে নিয়ে ধপ করে সোফাতে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলেন - কে হে ছোকরা তোমরা, আমাদের সব গবেষণার সিক্রেট তোমাদেরকে জানাতে যাব? দিলেতো সব পন্ড করে? এটাতে এক বিশেষ ধরনের সলিউশন ছিল, আর ওই কাঁচের বাক্সগুলোতে আমাদের আবিষ্কার করা কোষগুলোর স্যাম্পেল রাখা ছিল। কিন্তু হায় এবারে এই সলিউশনটা কোথা থেকে পাব? এইটা অনেক কষ্ট করে, আমরা বানিয়েছিলাম, আবার দেশে গিয়ে ল্যাবে নতুন করে বানাতে হবে। কিন্তু এই কোষগুলোকে তো আর বাঁচানো যাবে না ততদিন, এগুলো সব নষ্ট হয়ে গেলো।

অর্কর দিকে চোখ ফেরাতে দেখি, বোধহয়, তরলটা একটু ওর হাতেও লেগে গিয়েছিল, ও হাতটা নাকে শুঁকেই চোখ কুঁচকে রুমালে মুছে রাখল, আর যতক্ষণে মিঃ তাকাহাসি বিলাপ করছিলেন, ও ভাঙ্গা বয়মের একটা টুকরো নিজের পকেটে চালান করে দিয়ে বলে উঠল - আই অ্যাম ভেরি সরি স্যর, আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি ভেরি সরি স্যর কিন্তু আমি তো কিছু করতে চাই নি, আমি তো শুধু জিজ্ঞাসা করছিলাম। এটা একটা নিছকই দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু না। আমায় ক্ষমা করে দিন প্লীস, কিন্তু স্যর, আমরা কি এবারে জানতে পারি, কি ছিল ওই সলিউশনটাতে?

অর্কর এই কাকুতি – মিনতিতে, ওনারা নিজেদেরকে অনেকটা সামলে নিয়ে ম্লান চোখে একটা ছোট্ট হাসি দিলেন, বোধহয়, আমাদের বাঙ্গালী ভদ্রতার মত জাপানী ভদ্রতা বলেও কিছু আছে ওনাদের ওখানে, যাই হোক, এরপর  মিঃ তাকাহাসি শান্ত স্বরে বললেন, ওটা একটা স্পেশাল সলিউশন, যা শুয়োরের চরবি নৃঃসিত তেল, কর্ডলিভার তেল, টেটরা ডাই ইউরেটিক অ্যাসিড, ও আরও কিছু ভেজ ও নন ভেজ রাসায়নিক এক বিশেষ অনুপাতে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, কারণ আমরা দেখেছিলাম যে, এই সলিউশনটাতেই কোষগুলোকে অনেকদিন ধরে সংরক্ষন করে রাখা যায়, কিন্তু এখন আমাদের আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে।

এতক্ষনে মিঃ তিচেরো উঠে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজিতে বললেন যে, ওনার শরীর ভাল লাগছে না, আমরা যদি, ওনাদের একটু রেস্ট করতে দিই, তাহলে, ওনারা বাধিত থাকবেন। এই বলে উনি পকেট থেকে একটা রুমাল বার করতে গিয়ে না পেয়ে, সামনের ওয়ার্ডরোব থেকে একটা পরিষ্কার রুমাল বার করে তাতে মুখ মুছলেন, আর তাতেই, ওনার পকেট থেকে একটা কাগজের টুকরো মাটিতে পরে গেলো যা আমার চোখ এরাল না। অর্ক সাথে সাথে, পা চুলকাবার অভিনয় করে নীচু হয়ে সেটি নিজের পকেটস্থ করল, আমি কটমট করে অর্কর দিকে তাকালাম, কিন্তু ও আমায় দেখেও না দেখার ভান করে খাটের তলায় কিছুক্ষনের জন্য চোখ বুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল – আছা, মিঃ তাকাহাসি, আপনি কি আপনাদের কালকের টিকিটের একটা কপি দিতে পারবেন?

মিঃ তিচেরো রাইটিং ডেস্কের ড্রয়ার থেকে একটা ই টিকিট বার করে অর্কর হাতে দিয়ে বললেন -  না আমাদের কাছে, কোনও কপি নেই, আপনি এটা দেখতে পারেন। অর্ক, টিকিটটা নেড়ে চেড়ে দেখে মোবাইল থেকে একটা ফটো তুলে ওটা আবার ওনাকে ফেরত দিয়ে বলল - ঠিক আছে একদম। মিঃ তিচেরো হাত তুলে নমস্কার করে বললেন – এবার কি আমরা যেতে পারি? আপনাদের জেরা দেখে মনে হচ্ছে যেন আমরাই অপরাধী।

অর্ক নিজের জীভ কেটে বলল – কি বলছেন স্যর?, আমরা খুবই আনন্দিত যে আপনার পায়ের ধুলো এই কলকাতায় প্রথম পড়েছে। আমাদের সহ্য করার জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। আজ আমরা আসি, বলে অর্ক আমার আর ভদ্রমশাইএর দিকে চোখের ইশারা করে কেটে পরার জন্য বলল।  

আমরা তিনজনেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। অর্ক আমাদের উদ্দেশ্যে - তোরা যা হোটেলের রেস্টোরেনটে ডিনারের অর্ডারটা দে, আমি এখুনি আসছি বলে দ্রুতপায়ে চলে গেলো। মিনিট পনেরো পরে ও ফিরে এসে বলল - কি রে অর্ডার দিয়েছিস? আমার খুব জোরে খিদে পেয়েছে বলে চুপ করে খেতে বসে গেলো। ভদ্রমশাই অর্ককে একটা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আমি ওনাকে চুপ করে খেতে বললাম, কারণ আমি খুব ভাল করে বুঝেছি, যে ও নিশ্চই কিছু একটা গভীর চিন্তায় মগ্ন।

হোটেল থেকে আমরা এরপর আমরা থানাতে গিয়েছিলাম, ওখানে সঞ্জয় বাবুর দুই বন্ধুর সাথে, বিশেষ করে ওই সুকুমার বাবুর সাথে কিছুক্ষন অর্ক ও প্রিতমদার কথা হল। যতটুকু বুঝলাম, সুকুমারবাবুর বাড়ি গড়িয়াতে, ওনার সাথে, সঞ্জয়বাবুর ভালই আলাপ আছে, কারণ সঞ্জয়বাবুর মামাবাড়িও ওনাদের পাড়াতেই। সুকুমার বাবুর গাড়ির ব্যবসা আছে, তাই, সঞ্জয়বাবু ওনাকে আগেই ফোন করে একটা গাড়ি নিজের জন্য বুক করে রেখেছিলেন, তাই শুক্রবার, উনি ফোন করে বলেছিলেন যে গাড়িটা ওনার রাত্রি বারোটার সময় লাগবে। সুকুমার বাবুর কথায়-আমি সঞ্জয়কে বললাম যে দেখ, অত রাত্রে আমি গাড়ি তো দিতে পারব, কিন্তু ড্রাইভার দিতে পারব না, সঞ্জয় তখন আমাকে বলল যে নো প্রবলেম, আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে নেব, তো তাতে আমি রাজী হয়ে যাই, কারণ মাস দুই আগেই, সঞ্জয় যখন কলকাতায় এসেছিল, তখন ও নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করত, ওর কাছে, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। তো সেদিন ও সঞ্জয় রাত্রি ১০ টার মধ্যে এসে আমার কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে গেলো, কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমার, পরেরদিন ওর লাশ পাওয়া যায় এমন এক জায়গায়, যেখানে আমরা দুজনে মাস দুয়েক আগেই আড্ডা মেরেছিলাম।

মানে?- অর্ক বলে উঠল। মানে আর কিছুই নয়, ও একটু খামখেয়ালী লোক ছিল, বুঝলেন তো, ইচ্ছে হল, উইগ আর নকল গোঁফ পরার, তা আমি সেই নিউ মার্কেট থেকে গিয়ে কিনে দিলাম, তো আগেরবার যখন এসেছিল, আমায় বলল- সুকুমার, আমায় এখানকার এমন জায়গায় নিয়ে চল, যা খুব নিরিবিলি হবে, আমার একটু নিরিবিলি জায়গায় আড্ডা দিতে ভালো লাগে, তা আমি ওকে এই এলাকাতে নিয়ে আসি, এখানে ওই বটগাছের তলায় আম্ররা অনেকক্ষণ দুজনে আড্ডা মেরে তবে হোটেলে ফিরেছিলাম, তবে আর আর একটা জায়গাতেও নিয়ে গিয়েছিলাম, এখন যে হোটেলে ওনারা আছেন, তার পিছনে একটা জলা জঙ্গল রয়েছে, একটা ডোবাও রয়েছে, তো সেখানেও আমরা আড্ডা মেরেছি। মোটের উপরে পরিষ্কার, ছিমছাম, ঠাণ্ডা জায়গা, এবং সোজা গাড়ি নিয়ে ওই জঙ্গলের ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া যায়।  

হুমমম... অর্ক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল - আচ্ছা, গাড়িটা কি পাওয়া গেছে?
প্রিতমদা মাথা দুদিকে নেড়ে বললেন, না এখনও পাওয়া যায় নি, তবে চেষ্টা চলছ, জোরকদমে।

অর্ক হঠাৎ বলে উঠল – মিঃ ভদ্র, আপনি এখুনি, সুকুমার বাবু কে নিয়ে ওই হোটেলের পিছনের জায়গাটায় যান তো, দেখুন তো গাড়িটা ওখানে পাওয়া যায় কিনা, যদি আমার ধারনা সত্যি হয়, তবে, গাড়িটা ওখানেই পাওয়া যাবে। ঠিক আছে, প্রিতমদা, আমরা এখন উঠি, অনেক রাত হল,
মিঃ ভদ্র আমাদের কে অর্কদের বাড়িতে ড্রপ করে গাড়ির খোজে চলে গেলেন, আর অর্ককে বলে গেলেন -  কি জ্বালায় ফেললেন বলুন তো অর্ক বাবু আমায়? তারপর হেসে বললেন- পেলে জানাব।

সেই যে অর্ক চুপ করল, আর কোনও কথা ওর মুখে নেই, বাড়ি এসে গেছি আধাঘণ্টা হয়ে গেলো। আমার আর বাড়িতে যাওয়া হল না, মনে ভীষণ উত্তেজনা টের পাচ্ছি। আমি আর থাকতে না পেরে বলে উঠলাম- কি রে কি হল? হাতে আর তো টাইম নেই, কাল তো ওনারা চলে যাচ্ছেন, শুনলি তো।
হঠাৎ পিছন থেকে জ্যেঠুর গলার আওয়াজ পেলাম - কি গোয়েন্দাগণ? তোমাদের তদন্তের কতদূর এগোল?

এবারে অর্ক নিজের মৌনব্রত ত্যাগ করে বলে উঠল – কয়েকটা অংক ঠিক মিলছে না। আমি আর চেপে না থাকতে পেরে বললাম- কিন্তু গন্ধটা কি মিঃ ভদ্র যা বলল তাই? সত্যি ওনারা কাঁচা মাংস খান নাকি?

জ্যেঠু চোখ বড় করে তাকাল আমার দিকে, আর অর্ক কিছু না বলে, শুধু মুখ দিয়ে একটাই শব্দ বার করল – হুমমম...। তারপর জ্যেঠুর দিকে তাকিয়ে বলল – আমিও ওই গন্ধটা পেয়েছিলাম সঞ্জয় বাবুর ঘরে ঢুকেই। আমার মনে হচ্ছে, ওটা ওই সলিউশনটার গন্ধ, কাঁচের বয়মটা ভেঙ্গে যাওয়াতে, আমার গায়েও ওই সলিউশনটা একটু লেগে গিয়েছিল, এমন বিটকেল গন্ধ কি বলব, যার ফলে, আসার সময়ে লক্ষ করছিলাম যে, আমাদের পারার নেড়ি কুকুরটাও আমাদের দেখে কেমন চিৎকার জুড়েছিল।
জ্যেঠু আমাদের দিকে স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে -আমি জানি তোমরা পারবে, আর একটু চেষ্টা কর, ঠিক পারবে, তোমাদের উপরে আমার ভরসা আছে, বলে আবার চলে গেলেন। জ্যেঠু চলে যেতেই, অর্ক বলে উঠল, বুঝলি, মৈনাক, মনে হচ্ছে, কেসটা, প্রায় ধরে ফেলেছি, শুধু কয়েকটা অংক মেলান বাকি, এক কাজ কর, তুই শুয়ে পর, আমি একটু বুদ্ধির গোঁড়ায় ধোঁয়া দিয়ে আসি, এই বলে আমার সিগারেটের প্যাকেট থেকে, দুটো বার করে নিয়ে, ঘর সংলগ্ন ব্যালকনীতে চলে গেলো।  

আমি আর কি করি, ওর পদাঙ্ক অনুসরণ, করে ব্যালকনীতে হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কটা অংক রে? আমায় কি বলা যাবে?
অর্ক মুচকি হেসে বলে উঠল – অনেকগুলো, তার মধ্যে, অবশ্যই, “এস টি” আর “টি এস”। আমার মাথায় কিছু ঢুকল না, আমি হাঁ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অর্ক বলল – যা আর দেরি করিস না, তুই শুয়ে পর, আমার একটু দেরি হবে।

আমি, আর কি করব, হাল্কা করে গান চালিয়ে, শুয়ে পরলাম, কিছুক্ষণ পরে দেখি, অর্ক ঘরে ঢুকে, আবার ল্যাপটপটা অন করে কি যেন কাজ করা শুরু করল আর আমি আপ্রান চেষ্টা করে জেগে থাকার জন্য যুদ্ধ করছিলাম। মাঝখানে, অর্ক দুবার ফোন নিয়ে কার সাথে কথা বলছিল, তা ঠিকমত ঠাউর করে উঠতে পারিনি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৭/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রেনেসাঁ সাহা ১৪/১০/২০১৫
    জম্পেশ লাগছে। আপনার গল্পের হাত অনেক বেটার।
  • অভিষেক মিত্র ২২/০৮/২০১৫
    শান্তনুদা একটু টাইপিং-এর ভুল আছে। গল্পটা জমছে। তবে, একটু যেন ফ্ল থেকে যাচ্ছে। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
    • আরে ভুলটা বলবে তো, তাহলে তো শুধরে নেব। হতে পারে এত বড় একবারে টাইপ করা। আশায় থাকলাম।
      • অভিষেক মিত্র ২৪/০৮/২০১৫
        ৩ লাইনে- তাড়াতাড়ি
        ৪ লাইনে- পড়ছেন
        ৬ লাইনে- পড়লাম
        ১২ লাঈণে-পড়ে
        এই রকম টুকটাক আর কি।
 
Quantcast