গন্ধ - ২য় পর্ব
( আগের সংখ্যার পর ) -
উফ, গত দুদিন যা ধকল গেল, যাক বাবা আজ থেকে আমি মোটামুটি সাত দিনের জন্য ফ্রী, যদি না কোনও আর্জেন্ট কল এসে যায়। আনেক কষ্ট করে ডেলিভারি ম্যানেজার কে রাজী করিয়েছি, এই পেইড লীভটার জন্য। প্রোজেক্ট পুরো রেডি, টেস্টিং এর জন্য কালকেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম কাস্টোমার কে, ওরা টেস্ট করে বলেছে, যে সুপার্ব রান করছে প্রোজেক্ট টা, তবে এখনো ওরা এটা নিয়ে আরও R & D করবে কারণ আরও কিছু স্ক্রিপ্ট রান করাতে হবে ওতে, সেটাতে মোটামুটি সাত দিন লেগে যাবে। এই সুযোগটাই আমি চাইছিলাম, কাল রাত্রে অর্কর সাথে কথা হয়েছে।
রবিবারের ঘটনা মনে মনে একবার সাজিয়ে নিলাম –
আমরা প্রথমে, লোকাল থানা তে গেলাম, থানার ডিউটি অফিসার মিঃ ভদ্র আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে, অর্ক বলল – আমি অর্কপ্রভ চৌধুরী, আর এ আমার বন্ধু মৈনাক সেনগুপ্ত। আসলে, আমরা গতকালের একটা খবরের ব্যাপারে এসেছি খোঁজ নিতে ... বলে অর্ক পুরোটা বলে গেল। থানার অফিসার ভুরু কুঁচকে আমাদের কে এতক্ষণ আমাদের মাপছিলেন, হঠাৎ বলে উঠলেন, যে তোমাদের কে আমরা এই ব্যাপারে কিছু জানাব কেন? তোমরা কি সাংবাদিক?
এর উত্তরে অর্ক বলল- না আমরা ব্যাপারটা একটু ইনভেসটিগেট করে দেখতে চাই। অফিসার ভদ্র বড় অভদ্রর মত অট্টহাস্য করে, সিশ দিয়ে, এক কনস্টেবলকে ডেকে বললেন –দেখ রে ছেলেদের কাণ্ড দেখ, গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছে। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন – যাও বাবারা, পড়াশোনা কর মন দিয়ে, ঘরের খেয়ে, বনের মোষ তাড়িয়ে কি লাভ? উহহহ...। গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছে।
রাগে আমার গা হাত-পা জ্বলে যাচ্ছিল, অর্ক অদ্ভুত শান্ত ভাবে বলে উঠল – ও কে, মিঃ ভদ্র, থাঙ্ক ইউ সো মাচ, ফর ইওর কাইন্ড হেল্প। আপনার উপকারের কথা প্রিতমদাকে অবশ্যই বলব, আপনি মনে হয় জানেন না যে মিঃ প্রিতম সরকার আমাদের পারিবারিক বন্ধু হন, ওনার বাবা আর আমার জ্যেঠু একই ব্যাচের IPS পাস আউট ছিলেন কিনা।
কথাটা শোনা মাত্র মিঃ অভদ্র মশাই উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি কার কথা... কথাটা পুরো শেষ করতে না দিয়েই, অর্ক বলে উঠল – হ্যাঁ ঠিকই বুঝেছেন, যে আমি আপনাদের এই থানার অফিসার ইন চার্জ মিঃ প্রিতাম সরকারের কথাই বলছি। আমার জ্যেঠুর নাম – প্রতাপ রঞ্জন চৌধুরী, এক্স আইপিএস, ১৯৭৫ ব্যাচ। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মত কাজ হল। ভদ্র মশাই আমাদের কে অনুরোধ করে বললেন – প্লিস স্যার, আপনারা বসুন না, আমি এখুনি সব ডীটেলস আনাচ্ছি। আর কিছু দরকার হলে আমাকে জানাবেন, আমিই এই কেসটা লুক আউট করছি।
এরপর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সব কিছু দেখলাম, পুলিশ এর তোলা ডেডবডির ফটোগুলো অর্ক ভাল করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল অর্ক। আমি অন্ততঃ ওতে কোনও নতুন বিশেষত্ত্ব খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ অর্ক জিজ্ঞাসা করল, আপনারা যে আই ডি কার্ড টা পেয়েছেন, সেটা কি একটু দেখতে পারি? অফিসার ভদ্র ওটা আনতে পাঠিয়ে বললেন, দেখুন, যা বুঝছি, মনে হয় কেসটা সেরকম কিছু নয়, হয়ত কোনও পাগল রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে, স্ট্রিট অ্যাক্সিডেনটের শিকার হয়েছে। আমরাও দেখছি, আপনারাও দেখুন।
ততক্ষনে, থানার উর্দিধারী, মৃতদেহের জিনিসপত্র নিয়ে হাজির। একটা প্লাসটিকের প্যাকেটে আই কার্ড, জামা, প্যান্টের ছেঁড়া টুকরো, একটা উইগ, একটা নকল গোঁফ, একটা নীল কাপড়ের পুটুলি, আর কিছু কাগাজপত্র রাখা ছিল, অর্ক খুব ভাল ভাবে, খুঁটিয়ে দেখে, ওর নোটবুকে লিখে রেখে দিল। আমি জানি, এটা ওর বহুদিনের অভ্যাস। অর্ক জিজ্ঞাসা করল –এই উইগ আর নকল গোঁফটা কি উনি পরতেন? ভদ্র মশাই, কিছু ভেবে না পেয়ে, বললেন - পাগলের আবার উইগ আর গোঁফ পরার সখ বুঝলেন কিনা?
ও কে, মিঃ ভদ্র, থাঙ্কস, বলে অর্ক ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো ওনার দিকে, আপনি, আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করলেন, মিঃ ভদ্র জুলজুল চোখে বললেন, ঠিক আছে, যদি তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়, আমি আপনাকে জানিয়ে দেব, শুধু, আপনার কার্ড টা একটু দিয়ে যান। অর্ক পকেট থেকে কার্ডটা বের করে ওনাকে দিয়ে বলল – নিশ্চই, আবার আমরা যদি কিছু জানতে পারি, আপনাকে অবশ্যই জানাব।
আমরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পা বাড়ালাম বাড়ির দিকে, অর্ক পিছন ফিরে ভদ্র মশাইকে বলল- কোনও খবর থাকলে আমায় জানাবেন কিন্তু, ভুলে জাবেন না যেন। ভদ্র মশাই ঘাড় কাত করতেই, আমরা বেরিয়ে পরলাম ওখান থেকে। আমার পেটটা গুড়গুড় করছিলো। কিন্তু, অর্কর দিকে তাকিয়ে আর সাহস পেলাম না কিছু জিজ্ঞেস করার। শুধু অর্ক আমায় শুকনো মুখে জিজ্ঞেস করল –হ্যাঁরে মৈনাক, কলকাতায় কতজন ইন্দো-এশিয়ান পাগল আছে, তুই জানিস? আমি বিষম খেয়ে উঠলাম, নিজেকে সামলাতে সামলাতে শুনলাম, অর্ক বলছে – এক কাজ কর, একটু, নেট এ সার্চ করে খোঁজ নিয়ে আমায় জানাস তো। কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না, কিন্তু তাও পুরো রাস্তাটা ওই চিন্তাটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
আজ বুধবার, অলরেডি সকাল এগারোটা বেজে গেছে, তাও অর্কর কোনও পাত্তা নেই। দুটো সিগারেট শেষ হয়ে গেলো, এদিকে কি হল, গত দুদিনে, কিছুই জানি না, সত্যি, কিযে করে না ছেলেটা, সকালেই বলল এখানে সাড়ে দশটার সময়ে অপেক্ষা করতে। তিননম্বরটা ধরাতে যাব, দেখি বাবু হাতে নোটবইটা নিয়ে আসছেন।
মৈনাক, তোকে যেটা বলেছিলাম সেটা নিশ্চই করিস নি, কোনোরকম ক্ষমা চাওয়ার ধার দিয়ে না গিয়ে, হঠাৎ করে একটা নেতিবাচক বাক্যবান আমার দিকে ছুরে দিলো। আমি উত্তর দেওয়ার আগেই আবার বলে উঠল – থাক, আর তোকে কষ্ট করতে হবে না, আমি খোঁজ নিয়ে নিয়েছি। এদিকে খবর পেয়েছিস? অনেক কিছু ঘটে গেছে।
আমি বললাম- না, আমি গত দুদিন একটুও সময় পাই নি, টিভিটাও দেখার সময় হয়নিরে। কেন কি হয়েছে? আবার নতুন কিছু নাকি এই কেস রিলেটেড? অর্ক এর উত্তরে যা বলল তাতে এই সকালবেলাতেও আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা শিহরণ বেয়ে নেমে গেলো। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে কি জানি কি হবে?
মোটামুটি সারাংশ করে যা বোঝা গেলো, সেই জাপানী বৈজ্ঞানিক মিঃ সুযুকি, আমাদের কলকাতার সায়েন্স কংগ্রেসের আমন্ত্রনে তার রিসার্চের প্রেজেনটেশন দিতে এসেছিলেন, সাথে তার একান্ত বিশ্বঃস্ত সহকারী মিঃ তাকাহাসি ও তার ছেলে মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসি। কলকাতার হোটেলে পৌঁছে ওনারা রাত্রে ডিনার করতে হোটেলের রেস্টুরেন্টে যান, কিন্তু মাঝপথে, একটা ফোন এসে যাওয়াতে, সঞ্জয়বাবু এই বলে বেরিয়ে যান যে, তিনি আবার রুমে গিয়ে দেখা করবেন রাত্রে। কিন্তু সারা রাত কেটে যাওয়ার পরেও তিনি না ফেরাতে, ওনারা লোকাল পুলিশের শরনাপন্ন হন। কলকাতা পুলিশ একটা মিসিং ডায়েরী করে, জাপানী কনস্যুলেট কে খবর দিয়ে দিয়েছে। পুলিশি তদন্তে যতটুকু জানা গেছে যে, সঞ্জয়বাবু হলেন, মিঃ তাকাহাসির ভারতীয় বা আরও বিশদে বললে, কলকাতার বাঙ্গালী স্ত্রীর এর পুত্র। এই কলকাতায় মামাবাড়ি হবার জন্য এখানকার অনেকের সাথেই, ওনার পরিচয় ছিল এবং কলকাতাতেই প্রথম প্রেজেনটেশন দেওয়ার পিছনে আইডিইয়াটাও সঞ্জয়বাবুরই ছিল। তা এহেন সঞ্জয়বাবুর অন্তর্ধানে স্বাভাবিক ভাবে মিঃ সুযুকি খুব মুষড়ে পরেছেন, কিন্তু হাতেও আর বেশি সময় নেই, এরই মধ্যে কিছু একটা উপায় না হলে ওনারা আবার দেশে ফিরে জাবেন। মিঃ তাকাহাসির অবস্থা আরও খারাপ, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধ এখন প্রায় বিছানা নিয়ে নিয়েছেন।
অর্কর মুখে এতটা শোনার পর, আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে এতে আমাদের সাথে সম্পর্ক কি? কিন্তু এরপরেই অর্ক যে বোমাটা ফাটাল তার কোনও উত্তর আমার কাছে ছিল না। তোকে সেদিন কথাটা বলার পর আমি নিজেই একবার নেটএ সার্চ করে দেখলাম, কিন্তু কোনও লাভ হল না, তাই পরের দিন আমি কলকাতার দু তিনটে পাগলখানায় গিয়ে একটু খোঁজ নিলাম, এবং তাতে যা তথ্য হাতে পেলাম, তাতেই আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম।– অর্ক দীপ্ত গলায় বলল। আমি উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম – কতোগুলো পাগল আছে রে? অর্ক হেসে বলল – অনেকগুলো। আমি আবার কিছু বলতে যাব, এর আগেই ও বলে উঠল – ইন্দো-এশিয়ান পাগল তাও অনেকগুলো আছে, কিন্তু জাপানী পাগলের সংখ্যা একেবারেই নেই। আমি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলাম। অর্ক বলে উঠল – আচ্ছা বাবা, আমরা যে ডেডবডিটার কথা বলছি এখানে, বলত তার সম্বন্ধে আমরা কি কি জানি এখনো? আমি খবরের কাগজের খবরটার প্রথম থেকে শেষ অব্ধি বলে গেলাম গড়গড় করে। আই ডি কার্ড টার কথাও বললাম মনে করে, আর ভুললাম না এবারে।
তা কি বুঝেছিস তুই এই ব্যাপারটায়? অর্ক মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল। আমি ঠোঁট উলটে বললাম- ভাই সবই তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাছে, কিছু বুঝতে পারলাম না এখনও।
অর্ক সামনে এগিয়ে এসে বলল - মানিকচাঁদ তোর অবজারভেশন আর অ্যানালাইজিং পাওয়ারটা বাড়া আরও। আর কিছু খেয়াল করিস নি তখন? আমি ক্যাবলার মত তাকিয়ে থাকাতে, অর্ক বলল – যে আই ডি কার্ড তা পুলিশে পেয়েছিল, সেটাতে, জাপানের ওয়াকয়াহামা বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের লোগো দেওয়া ছিল, আমি পেপার এর ছবিতেই দেখেছিলাম, আর তখনি সন্দেহটা দানা বেধেছিল আমার মনে, তাই পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলাম, আসল কার্ডটা দেখেই বুঝেছিলাম যে এর মধ্যে কিছু রহস্য আছে। এবার বল, সেই ওয়াকয়াহামা বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের লোগো দেওয়া আই কার্ড কলকাতার পাগল কোথা থেকে পাবে? তারপর ওখানে, ছবিতে দেখলাম, লাশের বাঁ হাতের কব্জির নীচে দুটো অক্ষর উল্কি দিয়ে ট্যাঁরছা করে লেখা রয়েছে –“এস•টি•”।
মানে? – আমি থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে উঠলাম।
মর্কট, ওই ডেডবডিটাই হোলো গিয়ে, “ R. Taka… S Sanjoy“ বা তোর আর ভদ্র মশাইয়ের ইন্দো-এশিয়ান পাগল।
অ্যাঁ, কি বলছিস কি? কি করে নিশ্চিত হলি তুই?-আমার গলাতে ঘোর বিস্ময়!!
অর্ক খুব শান্ত ভাবে বলল – আসলে তুইও পারতিস যদি একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতিস। প্রথমে মিঃ এর – R টা অবশিষ্ট ছিল, তাকা- হল তাকাহাসি আর প্রথমটা নিয়ে পুরো নামটা হল – মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসি। ওনার হাতেও উল্কি দিয়ে তাই লেখা ছিল। তারপর আমি খোঁজ নিলাম, যে ভদ্রলোক উইগ পরতেন, নকল গোঁফ লাগাতেন, তো আর কি কি মিল চাই বোঝার জন্য। আমি কথাটা মিঃ ভদ্রকে আর প্রিতমদাকে জানালাম, আর পুলিশ যা করে তারপর, সোজা দুই বৈজ্ঞানিককে এখানে মর্গে নিয়ে এসে শনাক্ত করাল। ওনারা জামাকাপড় দিয়ে শনাক্ত করেছেন যে আমার ধারনাই ঠিক। পুলিশে ওনার বডি নিয়ে গেছে জাপানী কনস্যুলেটে।
আমার মাথাটা ঘুরে যাচ্ছিল, অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে জিজ্ঞাসা করলাম - ভাই, তা তোর ওই মিঃ তাকাহাসি না বাঁকাহাসি হঠাৎ এখানে এসে মরতে গেলো কেন? কিন্তু চমক আরও বাকি ছিল,
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে গেছে বন্ধু, ওটা পরিষ্কার মার্ডার, কেউ ওনাকে খুন করেছে, পটাশিয়াম সায়ানাইড এর ইঞ্জেকশন ওনার খাবারে মিশিয়ে। আমি একশভাগ নিশ্চিত যে, ওনার ওই কাপরের পুটুলিতেই বিষ মেশানো হয়েছিলো, কারণ ওই পুটুলিটা বিষের জন্য নীল হয়ে গিয়েছিল, দেখিস নি?- অর্কর গলায় বিঃশ্বাসের ছাপ।
ওহহহহ... আমি তো ভেবেছিলাম, কাপড়টা বুঝি নীল রঙেরই ছিল, বলে জীভ কাটলাম। কিছুটা সময় ওভাবেই কেটে গেলো, হঠাৎ আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম - হুর র রে...হিপ হিপ হুর র রে... আমরা, থুরি, তুই পেরেছিস অর্ক, আমাদের গোয়েন্দাগিরি সফল হল। ওফ, আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে আজ কি বলব! তোর জন্যই আমরা রহস্য সমাধান করতে পারলাম যে ওটা কোনও পাগল নয়, জাপানের বৈজ্ঞানিকের ছেলে।
আরে থাম থাম, আগে চল থানা থেকে একটু ঘুরে আসি, প্রিতমদা ডেকেছেন, কিছু কাজ আছে মনে হয়।
আমি বলে উঠলাম, কিন্তু অর্ক, তাহলে খুনটা কে করলো? পুলিশ কি ধরতে পেরেছে? অর্ক বলে উঠল - না এখনও পারেনি। তবে সার্চ চলছে, কিন্তু এখনও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় নি। আমরা কি একবার চেষ্টা করে দেখব নাকি রে? আমরাই তো উদ্ধার করলাম ওনার পরিচয় - আমি উৎসাহ নিয়ে বলে ফেললাম কথাটা। অর্ক হতাশার সুরে বলল- এখন কেসটা একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম এর পর্যায়ে চলে গেছে, যা আমাদের হাতের বাইরে, এবার ওদিকে বাড়িতে সবাই জেনে গেছে, তাই আর মনে হচ্ছে এগোনো যাবে না, কিন্তু, মনে ঠিক শান্তিও পাচ্ছি না।
সত্যি, কি যে হবে কেসটার?, আমি ভেবে কিছু পাচ্ছি না, অর্ক এত খেটেছে এর পিছনে, ওর করুণ মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দেখা যাক, কি হয়? তবে এটা ঠিক যাই হোক, কাল থেকে এই কেসটার উপরে আমাদের দুজনেরই নজর থাকবে।
উফ, গত দুদিন যা ধকল গেল, যাক বাবা আজ থেকে আমি মোটামুটি সাত দিনের জন্য ফ্রী, যদি না কোনও আর্জেন্ট কল এসে যায়। আনেক কষ্ট করে ডেলিভারি ম্যানেজার কে রাজী করিয়েছি, এই পেইড লীভটার জন্য। প্রোজেক্ট পুরো রেডি, টেস্টিং এর জন্য কালকেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম কাস্টোমার কে, ওরা টেস্ট করে বলেছে, যে সুপার্ব রান করছে প্রোজেক্ট টা, তবে এখনো ওরা এটা নিয়ে আরও R & D করবে কারণ আরও কিছু স্ক্রিপ্ট রান করাতে হবে ওতে, সেটাতে মোটামুটি সাত দিন লেগে যাবে। এই সুযোগটাই আমি চাইছিলাম, কাল রাত্রে অর্কর সাথে কথা হয়েছে।
রবিবারের ঘটনা মনে মনে একবার সাজিয়ে নিলাম –
আমরা প্রথমে, লোকাল থানা তে গেলাম, থানার ডিউটি অফিসার মিঃ ভদ্র আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে, অর্ক বলল – আমি অর্কপ্রভ চৌধুরী, আর এ আমার বন্ধু মৈনাক সেনগুপ্ত। আসলে, আমরা গতকালের একটা খবরের ব্যাপারে এসেছি খোঁজ নিতে ... বলে অর্ক পুরোটা বলে গেল। থানার অফিসার ভুরু কুঁচকে আমাদের কে এতক্ষণ আমাদের মাপছিলেন, হঠাৎ বলে উঠলেন, যে তোমাদের কে আমরা এই ব্যাপারে কিছু জানাব কেন? তোমরা কি সাংবাদিক?
এর উত্তরে অর্ক বলল- না আমরা ব্যাপারটা একটু ইনভেসটিগেট করে দেখতে চাই। অফিসার ভদ্র বড় অভদ্রর মত অট্টহাস্য করে, সিশ দিয়ে, এক কনস্টেবলকে ডেকে বললেন –দেখ রে ছেলেদের কাণ্ড দেখ, গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছে। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন – যাও বাবারা, পড়াশোনা কর মন দিয়ে, ঘরের খেয়ে, বনের মোষ তাড়িয়ে কি লাভ? উহহহ...। গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছে।
রাগে আমার গা হাত-পা জ্বলে যাচ্ছিল, অর্ক অদ্ভুত শান্ত ভাবে বলে উঠল – ও কে, মিঃ ভদ্র, থাঙ্ক ইউ সো মাচ, ফর ইওর কাইন্ড হেল্প। আপনার উপকারের কথা প্রিতমদাকে অবশ্যই বলব, আপনি মনে হয় জানেন না যে মিঃ প্রিতম সরকার আমাদের পারিবারিক বন্ধু হন, ওনার বাবা আর আমার জ্যেঠু একই ব্যাচের IPS পাস আউট ছিলেন কিনা।
কথাটা শোনা মাত্র মিঃ অভদ্র মশাই উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি কার কথা... কথাটা পুরো শেষ করতে না দিয়েই, অর্ক বলে উঠল – হ্যাঁ ঠিকই বুঝেছেন, যে আমি আপনাদের এই থানার অফিসার ইন চার্জ মিঃ প্রিতাম সরকারের কথাই বলছি। আমার জ্যেঠুর নাম – প্রতাপ রঞ্জন চৌধুরী, এক্স আইপিএস, ১৯৭৫ ব্যাচ। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মত কাজ হল। ভদ্র মশাই আমাদের কে অনুরোধ করে বললেন – প্লিস স্যার, আপনারা বসুন না, আমি এখুনি সব ডীটেলস আনাচ্ছি। আর কিছু দরকার হলে আমাকে জানাবেন, আমিই এই কেসটা লুক আউট করছি।
এরপর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সব কিছু দেখলাম, পুলিশ এর তোলা ডেডবডির ফটোগুলো অর্ক ভাল করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল অর্ক। আমি অন্ততঃ ওতে কোনও নতুন বিশেষত্ত্ব খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ অর্ক জিজ্ঞাসা করল, আপনারা যে আই ডি কার্ড টা পেয়েছেন, সেটা কি একটু দেখতে পারি? অফিসার ভদ্র ওটা আনতে পাঠিয়ে বললেন, দেখুন, যা বুঝছি, মনে হয় কেসটা সেরকম কিছু নয়, হয়ত কোনও পাগল রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে, স্ট্রিট অ্যাক্সিডেনটের শিকার হয়েছে। আমরাও দেখছি, আপনারাও দেখুন।
ততক্ষনে, থানার উর্দিধারী, মৃতদেহের জিনিসপত্র নিয়ে হাজির। একটা প্লাসটিকের প্যাকেটে আই কার্ড, জামা, প্যান্টের ছেঁড়া টুকরো, একটা উইগ, একটা নকল গোঁফ, একটা নীল কাপড়ের পুটুলি, আর কিছু কাগাজপত্র রাখা ছিল, অর্ক খুব ভাল ভাবে, খুঁটিয়ে দেখে, ওর নোটবুকে লিখে রেখে দিল। আমি জানি, এটা ওর বহুদিনের অভ্যাস। অর্ক জিজ্ঞাসা করল –এই উইগ আর নকল গোঁফটা কি উনি পরতেন? ভদ্র মশাই, কিছু ভেবে না পেয়ে, বললেন - পাগলের আবার উইগ আর গোঁফ পরার সখ বুঝলেন কিনা?
ও কে, মিঃ ভদ্র, থাঙ্কস, বলে অর্ক ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো ওনার দিকে, আপনি, আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করলেন, মিঃ ভদ্র জুলজুল চোখে বললেন, ঠিক আছে, যদি তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়, আমি আপনাকে জানিয়ে দেব, শুধু, আপনার কার্ড টা একটু দিয়ে যান। অর্ক পকেট থেকে কার্ডটা বের করে ওনাকে দিয়ে বলল – নিশ্চই, আবার আমরা যদি কিছু জানতে পারি, আপনাকে অবশ্যই জানাব।
আমরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পা বাড়ালাম বাড়ির দিকে, অর্ক পিছন ফিরে ভদ্র মশাইকে বলল- কোনও খবর থাকলে আমায় জানাবেন কিন্তু, ভুলে জাবেন না যেন। ভদ্র মশাই ঘাড় কাত করতেই, আমরা বেরিয়ে পরলাম ওখান থেকে। আমার পেটটা গুড়গুড় করছিলো। কিন্তু, অর্কর দিকে তাকিয়ে আর সাহস পেলাম না কিছু জিজ্ঞেস করার। শুধু অর্ক আমায় শুকনো মুখে জিজ্ঞেস করল –হ্যাঁরে মৈনাক, কলকাতায় কতজন ইন্দো-এশিয়ান পাগল আছে, তুই জানিস? আমি বিষম খেয়ে উঠলাম, নিজেকে সামলাতে সামলাতে শুনলাম, অর্ক বলছে – এক কাজ কর, একটু, নেট এ সার্চ করে খোঁজ নিয়ে আমায় জানাস তো। কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না, কিন্তু তাও পুরো রাস্তাটা ওই চিন্তাটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
আজ বুধবার, অলরেডি সকাল এগারোটা বেজে গেছে, তাও অর্কর কোনও পাত্তা নেই। দুটো সিগারেট শেষ হয়ে গেলো, এদিকে কি হল, গত দুদিনে, কিছুই জানি না, সত্যি, কিযে করে না ছেলেটা, সকালেই বলল এখানে সাড়ে দশটার সময়ে অপেক্ষা করতে। তিননম্বরটা ধরাতে যাব, দেখি বাবু হাতে নোটবইটা নিয়ে আসছেন।
মৈনাক, তোকে যেটা বলেছিলাম সেটা নিশ্চই করিস নি, কোনোরকম ক্ষমা চাওয়ার ধার দিয়ে না গিয়ে, হঠাৎ করে একটা নেতিবাচক বাক্যবান আমার দিকে ছুরে দিলো। আমি উত্তর দেওয়ার আগেই আবার বলে উঠল – থাক, আর তোকে কষ্ট করতে হবে না, আমি খোঁজ নিয়ে নিয়েছি। এদিকে খবর পেয়েছিস? অনেক কিছু ঘটে গেছে।
আমি বললাম- না, আমি গত দুদিন একটুও সময় পাই নি, টিভিটাও দেখার সময় হয়নিরে। কেন কি হয়েছে? আবার নতুন কিছু নাকি এই কেস রিলেটেড? অর্ক এর উত্তরে যা বলল তাতে এই সকালবেলাতেও আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা শিহরণ বেয়ে নেমে গেলো। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে কি জানি কি হবে?
মোটামুটি সারাংশ করে যা বোঝা গেলো, সেই জাপানী বৈজ্ঞানিক মিঃ সুযুকি, আমাদের কলকাতার সায়েন্স কংগ্রেসের আমন্ত্রনে তার রিসার্চের প্রেজেনটেশন দিতে এসেছিলেন, সাথে তার একান্ত বিশ্বঃস্ত সহকারী মিঃ তাকাহাসি ও তার ছেলে মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসি। কলকাতার হোটেলে পৌঁছে ওনারা রাত্রে ডিনার করতে হোটেলের রেস্টুরেন্টে যান, কিন্তু মাঝপথে, একটা ফোন এসে যাওয়াতে, সঞ্জয়বাবু এই বলে বেরিয়ে যান যে, তিনি আবার রুমে গিয়ে দেখা করবেন রাত্রে। কিন্তু সারা রাত কেটে যাওয়ার পরেও তিনি না ফেরাতে, ওনারা লোকাল পুলিশের শরনাপন্ন হন। কলকাতা পুলিশ একটা মিসিং ডায়েরী করে, জাপানী কনস্যুলেট কে খবর দিয়ে দিয়েছে। পুলিশি তদন্তে যতটুকু জানা গেছে যে, সঞ্জয়বাবু হলেন, মিঃ তাকাহাসির ভারতীয় বা আরও বিশদে বললে, কলকাতার বাঙ্গালী স্ত্রীর এর পুত্র। এই কলকাতায় মামাবাড়ি হবার জন্য এখানকার অনেকের সাথেই, ওনার পরিচয় ছিল এবং কলকাতাতেই প্রথম প্রেজেনটেশন দেওয়ার পিছনে আইডিইয়াটাও সঞ্জয়বাবুরই ছিল। তা এহেন সঞ্জয়বাবুর অন্তর্ধানে স্বাভাবিক ভাবে মিঃ সুযুকি খুব মুষড়ে পরেছেন, কিন্তু হাতেও আর বেশি সময় নেই, এরই মধ্যে কিছু একটা উপায় না হলে ওনারা আবার দেশে ফিরে জাবেন। মিঃ তাকাহাসির অবস্থা আরও খারাপ, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধ এখন প্রায় বিছানা নিয়ে নিয়েছেন।
অর্কর মুখে এতটা শোনার পর, আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে এতে আমাদের সাথে সম্পর্ক কি? কিন্তু এরপরেই অর্ক যে বোমাটা ফাটাল তার কোনও উত্তর আমার কাছে ছিল না। তোকে সেদিন কথাটা বলার পর আমি নিজেই একবার নেটএ সার্চ করে দেখলাম, কিন্তু কোনও লাভ হল না, তাই পরের দিন আমি কলকাতার দু তিনটে পাগলখানায় গিয়ে একটু খোঁজ নিলাম, এবং তাতে যা তথ্য হাতে পেলাম, তাতেই আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম।– অর্ক দীপ্ত গলায় বলল। আমি উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম – কতোগুলো পাগল আছে রে? অর্ক হেসে বলল – অনেকগুলো। আমি আবার কিছু বলতে যাব, এর আগেই ও বলে উঠল – ইন্দো-এশিয়ান পাগল তাও অনেকগুলো আছে, কিন্তু জাপানী পাগলের সংখ্যা একেবারেই নেই। আমি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলাম। অর্ক বলে উঠল – আচ্ছা বাবা, আমরা যে ডেডবডিটার কথা বলছি এখানে, বলত তার সম্বন্ধে আমরা কি কি জানি এখনো? আমি খবরের কাগজের খবরটার প্রথম থেকে শেষ অব্ধি বলে গেলাম গড়গড় করে। আই ডি কার্ড টার কথাও বললাম মনে করে, আর ভুললাম না এবারে।
তা কি বুঝেছিস তুই এই ব্যাপারটায়? অর্ক মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল। আমি ঠোঁট উলটে বললাম- ভাই সবই তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাছে, কিছু বুঝতে পারলাম না এখনও।
অর্ক সামনে এগিয়ে এসে বলল - মানিকচাঁদ তোর অবজারভেশন আর অ্যানালাইজিং পাওয়ারটা বাড়া আরও। আর কিছু খেয়াল করিস নি তখন? আমি ক্যাবলার মত তাকিয়ে থাকাতে, অর্ক বলল – যে আই ডি কার্ড তা পুলিশে পেয়েছিল, সেটাতে, জাপানের ওয়াকয়াহামা বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের লোগো দেওয়া ছিল, আমি পেপার এর ছবিতেই দেখেছিলাম, আর তখনি সন্দেহটা দানা বেধেছিল আমার মনে, তাই পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলাম, আসল কার্ডটা দেখেই বুঝেছিলাম যে এর মধ্যে কিছু রহস্য আছে। এবার বল, সেই ওয়াকয়াহামা বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের লোগো দেওয়া আই কার্ড কলকাতার পাগল কোথা থেকে পাবে? তারপর ওখানে, ছবিতে দেখলাম, লাশের বাঁ হাতের কব্জির নীচে দুটো অক্ষর উল্কি দিয়ে ট্যাঁরছা করে লেখা রয়েছে –“এস•টি•”।
মানে? – আমি থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে উঠলাম।
মর্কট, ওই ডেডবডিটাই হোলো গিয়ে, “ R. Taka… S Sanjoy“ বা তোর আর ভদ্র মশাইয়ের ইন্দো-এশিয়ান পাগল।
অ্যাঁ, কি বলছিস কি? কি করে নিশ্চিত হলি তুই?-আমার গলাতে ঘোর বিস্ময়!!
অর্ক খুব শান্ত ভাবে বলল – আসলে তুইও পারতিস যদি একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতিস। প্রথমে মিঃ এর – R টা অবশিষ্ট ছিল, তাকা- হল তাকাহাসি আর প্রথমটা নিয়ে পুরো নামটা হল – মিঃ সঞ্জয় তাকাহাসি। ওনার হাতেও উল্কি দিয়ে তাই লেখা ছিল। তারপর আমি খোঁজ নিলাম, যে ভদ্রলোক উইগ পরতেন, নকল গোঁফ লাগাতেন, তো আর কি কি মিল চাই বোঝার জন্য। আমি কথাটা মিঃ ভদ্রকে আর প্রিতমদাকে জানালাম, আর পুলিশ যা করে তারপর, সোজা দুই বৈজ্ঞানিককে এখানে মর্গে নিয়ে এসে শনাক্ত করাল। ওনারা জামাকাপড় দিয়ে শনাক্ত করেছেন যে আমার ধারনাই ঠিক। পুলিশে ওনার বডি নিয়ে গেছে জাপানী কনস্যুলেটে।
আমার মাথাটা ঘুরে যাচ্ছিল, অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে জিজ্ঞাসা করলাম - ভাই, তা তোর ওই মিঃ তাকাহাসি না বাঁকাহাসি হঠাৎ এখানে এসে মরতে গেলো কেন? কিন্তু চমক আরও বাকি ছিল,
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে গেছে বন্ধু, ওটা পরিষ্কার মার্ডার, কেউ ওনাকে খুন করেছে, পটাশিয়াম সায়ানাইড এর ইঞ্জেকশন ওনার খাবারে মিশিয়ে। আমি একশভাগ নিশ্চিত যে, ওনার ওই কাপরের পুটুলিতেই বিষ মেশানো হয়েছিলো, কারণ ওই পুটুলিটা বিষের জন্য নীল হয়ে গিয়েছিল, দেখিস নি?- অর্কর গলায় বিঃশ্বাসের ছাপ।
ওহহহহ... আমি তো ভেবেছিলাম, কাপড়টা বুঝি নীল রঙেরই ছিল, বলে জীভ কাটলাম। কিছুটা সময় ওভাবেই কেটে গেলো, হঠাৎ আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম - হুর র রে...হিপ হিপ হুর র রে... আমরা, থুরি, তুই পেরেছিস অর্ক, আমাদের গোয়েন্দাগিরি সফল হল। ওফ, আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে আজ কি বলব! তোর জন্যই আমরা রহস্য সমাধান করতে পারলাম যে ওটা কোনও পাগল নয়, জাপানের বৈজ্ঞানিকের ছেলে।
আরে থাম থাম, আগে চল থানা থেকে একটু ঘুরে আসি, প্রিতমদা ডেকেছেন, কিছু কাজ আছে মনে হয়।
আমি বলে উঠলাম, কিন্তু অর্ক, তাহলে খুনটা কে করলো? পুলিশ কি ধরতে পেরেছে? অর্ক বলে উঠল - না এখনও পারেনি। তবে সার্চ চলছে, কিন্তু এখনও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় নি। আমরা কি একবার চেষ্টা করে দেখব নাকি রে? আমরাই তো উদ্ধার করলাম ওনার পরিচয় - আমি উৎসাহ নিয়ে বলে ফেললাম কথাটা। অর্ক হতাশার সুরে বলল- এখন কেসটা একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম এর পর্যায়ে চলে গেছে, যা আমাদের হাতের বাইরে, এবার ওদিকে বাড়িতে সবাই জেনে গেছে, তাই আর মনে হচ্ছে এগোনো যাবে না, কিন্তু, মনে ঠিক শান্তিও পাচ্ছি না।
সত্যি, কি যে হবে কেসটার?, আমি ভেবে কিছু পাচ্ছি না, অর্ক এত খেটেছে এর পিছনে, ওর করুণ মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দেখা যাক, কি হয়? তবে এটা ঠিক যাই হোক, কাল থেকে এই কেসটার উপরে আমাদের দুজনেরই নজর থাকবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রেনেসাঁ সাহা ১৪/১০/২০১৫গল্পের প্রথম বাঁক, ভালো লাগছে। আরো পড়ে দেখি।
-
তপন দাস ৩০/০৯/২০১৫মজা শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারেস্টিং...
-
অভিষেক মিত্র ২২/০৮/২০১৫কিন্তু একটা কথা, বিষের জন্য কাপড়ের পুটলি নীল হবে কেন?
-
অভিষেক মিত্র ২২/০৮/২০১৫ভালো।
-
স্বপ্নীল মিহান ১৪/০৭/২০১৫ভালো
-
নাসিফ আমের চৌধুরী ১২/০৭/২০১৫টিক আছে
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১১/০৭/২০১৫ধন্যবাদ বন্ধু......... পড়তে থাকুন।
-
মোবারক হোসেন ১১/০৭/২০১৫ভাল লাগার মত গল্প।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১০/০৭/২০১৫ধন্যবাদ পাঠক বন্ধু, পড়তে থাকুন ভালো লাগবে ।
-
মায়নুল হক ০৯/০৭/২০১৫অপরন্ত ভালো লাগলো শুভেচ্ছা নিবেন কবি