গন্ধ -১ম পর্ব
আমি তারুণ্যের একজন নতুন সদস্য। আমি এখানে স্বরচিত একটি গল্প প্রকাশ করছি, আশা করছি এটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। গল্পটি কয়েকটি পর্বে প্রকাশ করছি, আমার পাঠক বন্ধুদের সময়াভাব ও গল্পটির বিশালতার কথা স্বীকার করে। আপনাদের মূল্যবান মতামতের আশায় রইলাম ---
“হ্যাঁরে, অর্ক, গতকালের খবরের কাগজটা কোথায় রেখেছিস ? - জ্যেঠু প্রশ্নটা করে সামনের চেয়ারে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলতে, আমি একবার অর্কর আর একবার জ্যেঠুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম । অর্ক তখনো চোখ বন্ধ করে বসে ছিল. জ্যেঠু কোনো উত্তর না পেয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
আমি জানি না - কোনো প্রশ্ন করার আগে নিজেই উত্তরটা দিয়ে ফেললাম । অর্ক কে নিরুত্তর দেখে জ্যেঠু উঠতেই যাচ্ছিল , তখনি নিজের আধ ঘন্টার মৌন ব্রত ভেঙ্গে অর্ক বলে উঠলো - ওটা টেবিল এর তলায় আছে . যত্ন করে রেখে দিয়েছি তোমার জন্য , তাতে আমি অবাক হয়ে বললাম - বাবা !! ওতে স্পেশাল কিছু আছে নাকি , রোজ খুললেই তো খুন , জখম , পার্টি পলিটিক্স এর গল্পের ছড়াছড়ি। সেটা শুনে অর্কর জ্যেঠু হাসতে হাসতে বলল – নারে মানিকচাঁদ , খবরের কাগজ মানে শুধু তাই নয় , তুই বুঝবি না , যারা ভালবাসে তারা বোঝে খবরের কাগজ কি জিনিস।
মানিক চাঁদ নাম টা শুনেই আমার গা পিত্তি জ্বলে গেল। আমার বাবা – মায়ের দেওয়া মৈনাক নামটা কি ভাবে বিকৃত করে ডাকে জ্যেঠু । আমি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে শুষ্ক একটা হাসি হেসে বললাম – আচ্ছা আমি ওসব বুঝি না আর বুঝতেও চাই না , কিন্তু গতকালের কাগজটা এত ইম্পর্টান্ট কেন ? জ্যেঠু কিছু বলার আগেই অর্ক গুরুগম্ভীর স্বরে বলে উঠলো – ওটা তে একটা আর্টিকেল বেরিয়েছে , যাতে লিখেছে যে, জাপান এর এক গবেষক
মিঃ তিচেরো সান সুযুকি, এবং ওনার এক সহকারী মিঃ একেরা তাকাহাসি নাকি অনেক রিসার্চ করে এক আশ্চর্য তথ্য পেয়েছেন গন্ধ বিচার নিয়ে, মানুষ আর কুকুরদের গন্ধ চেনার ক্ষমতা নিয়ে । আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম আর ভাবলাম এইরে রবিবারটা বোধ হয় কুকুর আর গন্ধ নিয়ে চর্চা চলবে , আর তখুনি , অর্কর জ্ঞান শুরু - উনি এটা নিয়ে রিসার্চ করেছেন এবং তাতে নাকি কিছুটা সফল ও হয়েছেন , ওনারা কিছু বাঁদরের উপরে এক্সপেরিমেনট করে দেখেছেন যে ওনাদের এই রিসার্চ এর ফলে ওদের গন্ধ চেনার ক্ষমতাও নাকি অনেক বেড়েছে।
আমি আনন্দিত হয়ে বললাম -বা তাহলে তো এবার অফিস ক্যান্টিন এর বিরিয়ানির গন্ধ, আট তলা থেকেও পেয়ে যাব, এই অর্ক , বাবা দেখ না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে কিনা , এখুনি কিনে নিজের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেব, আমার কথা শুনে জ্যেঠু হাসতে হাসতে উঠে গেল আর বলে গেল -অর্ক , তোর এই মানিক চাঁদ বন্ধুটিকে নিয়ে আর পারা গেল না .
অর্ক আমার দিকে কটমট করে তাকালো – তোকে নিয়ে সত্যি আর পারা গেল না . আমি হেসে বললাম –ওহঃ , এবারে বুঝেছি তুই কেন সকাল থেকে চুপ মেরে আছিস …গন্ধ চিনছিলিস না .. হু হু ভাই , আমি কিন্তু পেয়েছি কাকিমার লুচি , আলুর দম এর গন্ধ - হা হা হা …উপপপ...
অর্ক আজকের পেপার টা আমার মুখের উপরে ছুঁড়ে দিয়ে বলল – মেলা ফ্যাচ্কাস না , তিন নং পাতার বাদিকের খবরটা পর, তাহলে বুঝবি .. আমি লুচিটা হাতে নিয়ে খবরটা পরেই সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে চেঁচিয়ে বলে ফেললাম - কি বলছিস কি , আমাদের এখানে ? এও কি সম্ভব ?
অর্ক আমার মুখটা চেপে ধরে বলল , তাড়াতাড়ি খাও, আর আমার সাথে খেলার মাঠে চল, ওখানেই কথা হবে |
এখানে নিজেদের পরিচয়টা একটু দিয়ে রাখি , নাহলে পাঠককুলের প্রতি অবিচার করা হবে । আমরা , মানে আমি , মৈনাক আর অর্ক দুজনেই ছোটবেলার বন্ধু। আমি এখন সেক্টর ফাইভ এ একটা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি তে চাকরি করছি , আর অর্ক ওদের ফ্যামিলি বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত । অর্কর জ্যেঠু শ্রী . প্রতাপ রঞ্জন চৌধুরী হলেন একজন এক্স আইপিএস অফিসার ১৯৭৫ ব্যাচ । ওই জন্য তো আমার নামের বিকৃতি করা সত্ত্বেও আমি কিছু বলতে পারি না জ্যেঠুকে , কারণ উনি খুব রাশভারী লোক । যদিও উনি মানুষ হিসাবে খুব ভালো আর খুব সৎ লোক, মাঝে মাঝে আমাদের খুব মজার গল্পও শোনান ওনার চাকরি জীবনের।
অর্কর বাবার নিজের এক্সপোর্ট আর ইম্পোর্ট এর ব্যবসা আছে। অর্ক এমবিএ পাস করে ওই ব্যবসা বাড়ানোতেই মন দিয়েছে। আমরা একই সাথে একই কমপ্লেক্স এ থাকি ।
অর্কর জ্যেঠু যেহেতু একজন আইপিএস অফিসার ছিলেন , তাই ওনার সাথে কলকাতার অনেক ইম্পর্টান্ট লোকেদের চেনাশোনা আছে। ওদের বাড়িতেও সব সময় একটা কেমন যেন ডিসিপ্লিন ডিসিপ্লিন ভাব , যদিও আমাদের দুজনের তাতে কিছু আসে যায় না। প্রতি রবিবার সকালে আমরা দুজনে খেলার মাঠের ধারে , বটগাছের নিচে রকে বসে আড্ডা মারি। সবে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জীবনে ঢুকেছি , তাই এই আড্ডা টা মিস হলে যেন মনে হয় যে , কি একটা হারিয়ে গেল জীবন থেকে। এখন দুজনেরই কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে , তাও আমরা দুজনেই এই রবিবারের আড্ডার ব্যাপারে খুব কমিটেড।
আমি প্রতি রবিবার সকালে অর্ককে ডাকতে আসি ওদের ফ্ল্যাটে , যদিও এর আর একটা আলাদা কারণ ও আছে, কাকিমার হাতের লুচি , পরোটা আর আলুর দমটা জাস্ট মিস করা যায় না, ভাগ্য ভালো থাকলে মাঝে মাঝে কিমার ঘুগনিও জুটে যায়।
কিন্তু আজকে, আমার মুখে চিন্তার রেশ কাটে নি দেখে অর্ক জিগ্গেস করল - কি রে এবার বল কি বুঝলি খবরটা পড়ে ?? আমি বলে উঠলাম - কি আর বলব, আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না , আমাদের এলাকার মতো শান্ত জায়গা আমার মনে হয় কোথাও নেই। সেই এলাকাতেও চুরি টুরি নয় , একেবারে লাশ ? আমারতো মাথাতে কিছুই আসছে না।
অর্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল আর কিছু ? এবারে আমার অবাক হবার পালা - আবার কি বুঝব ? খবরের কাগজ অনুযায়ী , এক অপরিচিত ইন্দো –এশিয়ান ব্যক্তি এর ডেডবডি পাওয়া গাছে আমাদের এই নিরিবিলি শান্ত জায়গায় আর তার মুখটা কুকুরে, বেড়ালে, নাকি শিয়ালে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন এক দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে. পুলিশ এর মতে এটা স্ট্রিট এক্সিডেন্ট এর কেস হতে পারে, তবে আত্মহত্যা বা খুন ও হতে পারে, ময়নাতদন্ত না হলে জানা যাবে না - এতে আবার আলাদা কি বোঝার আছে ?
মৈনাক তুই একটা গাধা , সিম্পলি গাধা - অর্ক রুক্ষ স্বরে বলে উঠলো - সাধে তোকে জ্যেঠু মানিক চাঁদ বলে ডাকে না .. আর কিছু দেখিস নি তুই খবরটায় ? আমি শত চেষ্টাতেও মনে করে উঠতে পারলাম না আর কিছু ছিল কিনা , শেষে হতাশ হয়ে ঠোট উল্টে বললাম , না রে ভাই , তুই কি জানতে চাইছিস বুঝতেই পারছি না .
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই ব্যক্তি টি কে ? পুলিশ ওর পকেট থেকে একটা আই ডি কার্ড এর অংশবিশেষ পেয়েছে যাতে ওনার নাম টা লেখা ছিল, খবরের সাথের ছবিটা তুই দেখিস নি ? অর্ক খানিকটা উদাস আর বিরক্তি মিলিয়ে কথাটা বলল |
এবারে মনে পড়েছে, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস, “R.Taka ..S Sanjoy” এটাই তো ছেপেছে ওর সাথের ছবিটায়। কিন্তু তাতে কি? কোনও একজন মারা গেছেন, সেটাই বড় কথা। কিন্তু এতে কি করে বোঝা যাবে যে, লোকটি কে? আমি উৎসাহ নিয়ে বললাম। অর্ক হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলে উঠল – ভদ্র না অভদ্র সেতো পরে বোঝা যাবে, তবে এটা ঠিক যে, যদি আমার ইনটুইশন ঠিক হয়, তবে আগামী দিনে, আমাদের এই এলাকা ওয়ার্ল্ড ফেমাস হয়ে যাবে।
আমি, অর্কর হেঁয়ালি বুঝে উঠতে না পেরে ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। ও আলতো হেসে বলল, বন্ধু, আমি এর মধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। ভাবছি, একটু এটা নিয়ে নাড়াচারা করব। কিন্তু মানিকচাঁদ, তোকে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বানানো যাবে কিনা, সেটাই ভাবছি। আমার প্রচন্ড রাগ হোল অর্কর কথায়, বললাম – কেন, তুই কি এমন বেশি বুঝেছিস আমার চেয়ে?
যথাসময়ে সকলি পারিবে জানিতে – আবার হেঁয়ালি অর্কর গলায়। তবে এবারে আমি, নিচু গলায় বললাম –সত্যি বলছিস ভাই, এরমধ্যে, কিছু রহস্য আছে নাকি? আমিও যে ভাবিনি তা নয়, কিন্তু সেতো পুলিশেও ভেবেছে, হয়ত কেউ লোকটাকে খুন করে ফেলে গেছে। কিন্তু এতে রহস্যর কি আছে? অবশ্য তোর IQ লেভেলটা যে আমাদের চেয়ে বেশি, তাতো আমরা সবাই জানি।
সে দেখা যাবে খন, তুই আগে বল, আমাকে অ্যাসিষ্ট করতে পারবি কিনা? অর্কর গলায় আবেগের সুর ঝরে পরল।
হ্যাঁ আমি তো রাজি, কিন্তু আমার এই প্রোজেক্টটা শেষ হতে আর দিনদুই লাগবে, তারপর আমি ফ্রী যতক্ষন না আর নেক্সট কোনও প্রোজেক্ট হাতে পাচ্ছি। আই টি সেক্টরের সফটওয়্যার ডেভেলপার কোম্পানীতে কাজ করার এই একটা সুবিধা আছে, দুটো প্রোজেক্ট এর মধ্যে হাতে কিছুটা সময় পাওয়া যায়, ফ্রী বসে থাকলেও অ্যাটলিস্ট স্যালারিটা পাওয়া যায়।
ঠিক আছে, তবে চল, একবার, লোকাল থানা থেকে ঘুরে আসি, খোঁজ নিয়ে আসি তোর ওই ভদ্রলোকের – অর্ক বলল। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম – দেখ অর্ক, ভাল হবে না কিন্তু, সবসময়ে আমাকে টোকা দিয়ে কথা বলবি না, তাহলে, তোর বাড়িতে বলে দেব এই ব্যাপারটার কথা। অর্ক হেসে বলল – ও কে মাই বস, যেমন আপনার ইছে।
( চলবে )
!! গন্ধ !! - পর্ব - ১
=====================================
“হ্যাঁরে, অর্ক, গতকালের খবরের কাগজটা কোথায় রেখেছিস ? - জ্যেঠু প্রশ্নটা করে সামনের চেয়ারে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলতে, আমি একবার অর্কর আর একবার জ্যেঠুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম । অর্ক তখনো চোখ বন্ধ করে বসে ছিল. জ্যেঠু কোনো উত্তর না পেয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
আমি জানি না - কোনো প্রশ্ন করার আগে নিজেই উত্তরটা দিয়ে ফেললাম । অর্ক কে নিরুত্তর দেখে জ্যেঠু উঠতেই যাচ্ছিল , তখনি নিজের আধ ঘন্টার মৌন ব্রত ভেঙ্গে অর্ক বলে উঠলো - ওটা টেবিল এর তলায় আছে . যত্ন করে রেখে দিয়েছি তোমার জন্য , তাতে আমি অবাক হয়ে বললাম - বাবা !! ওতে স্পেশাল কিছু আছে নাকি , রোজ খুললেই তো খুন , জখম , পার্টি পলিটিক্স এর গল্পের ছড়াছড়ি। সেটা শুনে অর্কর জ্যেঠু হাসতে হাসতে বলল – নারে মানিকচাঁদ , খবরের কাগজ মানে শুধু তাই নয় , তুই বুঝবি না , যারা ভালবাসে তারা বোঝে খবরের কাগজ কি জিনিস।
মানিক চাঁদ নাম টা শুনেই আমার গা পিত্তি জ্বলে গেল। আমার বাবা – মায়ের দেওয়া মৈনাক নামটা কি ভাবে বিকৃত করে ডাকে জ্যেঠু । আমি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে শুষ্ক একটা হাসি হেসে বললাম – আচ্ছা আমি ওসব বুঝি না আর বুঝতেও চাই না , কিন্তু গতকালের কাগজটা এত ইম্পর্টান্ট কেন ? জ্যেঠু কিছু বলার আগেই অর্ক গুরুগম্ভীর স্বরে বলে উঠলো – ওটা তে একটা আর্টিকেল বেরিয়েছে , যাতে লিখেছে যে, জাপান এর এক গবেষক
মিঃ তিচেরো সান সুযুকি, এবং ওনার এক সহকারী মিঃ একেরা তাকাহাসি নাকি অনেক রিসার্চ করে এক আশ্চর্য তথ্য পেয়েছেন গন্ধ বিচার নিয়ে, মানুষ আর কুকুরদের গন্ধ চেনার ক্ষমতা নিয়ে । আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম আর ভাবলাম এইরে রবিবারটা বোধ হয় কুকুর আর গন্ধ নিয়ে চর্চা চলবে , আর তখুনি , অর্কর জ্ঞান শুরু - উনি এটা নিয়ে রিসার্চ করেছেন এবং তাতে নাকি কিছুটা সফল ও হয়েছেন , ওনারা কিছু বাঁদরের উপরে এক্সপেরিমেনট করে দেখেছেন যে ওনাদের এই রিসার্চ এর ফলে ওদের গন্ধ চেনার ক্ষমতাও নাকি অনেক বেড়েছে।
আমি আনন্দিত হয়ে বললাম -বা তাহলে তো এবার অফিস ক্যান্টিন এর বিরিয়ানির গন্ধ, আট তলা থেকেও পেয়ে যাব, এই অর্ক , বাবা দেখ না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে কিনা , এখুনি কিনে নিজের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেব, আমার কথা শুনে জ্যেঠু হাসতে হাসতে উঠে গেল আর বলে গেল -অর্ক , তোর এই মানিক চাঁদ বন্ধুটিকে নিয়ে আর পারা গেল না .
অর্ক আমার দিকে কটমট করে তাকালো – তোকে নিয়ে সত্যি আর পারা গেল না . আমি হেসে বললাম –ওহঃ , এবারে বুঝেছি তুই কেন সকাল থেকে চুপ মেরে আছিস …গন্ধ চিনছিলিস না .. হু হু ভাই , আমি কিন্তু পেয়েছি কাকিমার লুচি , আলুর দম এর গন্ধ - হা হা হা …উপপপ...
অর্ক আজকের পেপার টা আমার মুখের উপরে ছুঁড়ে দিয়ে বলল – মেলা ফ্যাচ্কাস না , তিন নং পাতার বাদিকের খবরটা পর, তাহলে বুঝবি .. আমি লুচিটা হাতে নিয়ে খবরটা পরেই সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে চেঁচিয়ে বলে ফেললাম - কি বলছিস কি , আমাদের এখানে ? এও কি সম্ভব ?
অর্ক আমার মুখটা চেপে ধরে বলল , তাড়াতাড়ি খাও, আর আমার সাথে খেলার মাঠে চল, ওখানেই কথা হবে |
এখানে নিজেদের পরিচয়টা একটু দিয়ে রাখি , নাহলে পাঠককুলের প্রতি অবিচার করা হবে । আমরা , মানে আমি , মৈনাক আর অর্ক দুজনেই ছোটবেলার বন্ধু। আমি এখন সেক্টর ফাইভ এ একটা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি তে চাকরি করছি , আর অর্ক ওদের ফ্যামিলি বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত । অর্কর জ্যেঠু শ্রী . প্রতাপ রঞ্জন চৌধুরী হলেন একজন এক্স আইপিএস অফিসার ১৯৭৫ ব্যাচ । ওই জন্য তো আমার নামের বিকৃতি করা সত্ত্বেও আমি কিছু বলতে পারি না জ্যেঠুকে , কারণ উনি খুব রাশভারী লোক । যদিও উনি মানুষ হিসাবে খুব ভালো আর খুব সৎ লোক, মাঝে মাঝে আমাদের খুব মজার গল্পও শোনান ওনার চাকরি জীবনের।
অর্কর বাবার নিজের এক্সপোর্ট আর ইম্পোর্ট এর ব্যবসা আছে। অর্ক এমবিএ পাস করে ওই ব্যবসা বাড়ানোতেই মন দিয়েছে। আমরা একই সাথে একই কমপ্লেক্স এ থাকি ।
অর্কর জ্যেঠু যেহেতু একজন আইপিএস অফিসার ছিলেন , তাই ওনার সাথে কলকাতার অনেক ইম্পর্টান্ট লোকেদের চেনাশোনা আছে। ওদের বাড়িতেও সব সময় একটা কেমন যেন ডিসিপ্লিন ডিসিপ্লিন ভাব , যদিও আমাদের দুজনের তাতে কিছু আসে যায় না। প্রতি রবিবার সকালে আমরা দুজনে খেলার মাঠের ধারে , বটগাছের নিচে রকে বসে আড্ডা মারি। সবে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জীবনে ঢুকেছি , তাই এই আড্ডা টা মিস হলে যেন মনে হয় যে , কি একটা হারিয়ে গেল জীবন থেকে। এখন দুজনেরই কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে , তাও আমরা দুজনেই এই রবিবারের আড্ডার ব্যাপারে খুব কমিটেড।
আমি প্রতি রবিবার সকালে অর্ককে ডাকতে আসি ওদের ফ্ল্যাটে , যদিও এর আর একটা আলাদা কারণ ও আছে, কাকিমার হাতের লুচি , পরোটা আর আলুর দমটা জাস্ট মিস করা যায় না, ভাগ্য ভালো থাকলে মাঝে মাঝে কিমার ঘুগনিও জুটে যায়।
কিন্তু আজকে, আমার মুখে চিন্তার রেশ কাটে নি দেখে অর্ক জিগ্গেস করল - কি রে এবার বল কি বুঝলি খবরটা পড়ে ?? আমি বলে উঠলাম - কি আর বলব, আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না , আমাদের এলাকার মতো শান্ত জায়গা আমার মনে হয় কোথাও নেই। সেই এলাকাতেও চুরি টুরি নয় , একেবারে লাশ ? আমারতো মাথাতে কিছুই আসছে না।
অর্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল আর কিছু ? এবারে আমার অবাক হবার পালা - আবার কি বুঝব ? খবরের কাগজ অনুযায়ী , এক অপরিচিত ইন্দো –এশিয়ান ব্যক্তি এর ডেডবডি পাওয়া গাছে আমাদের এই নিরিবিলি শান্ত জায়গায় আর তার মুখটা কুকুরে, বেড়ালে, নাকি শিয়ালে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন এক দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে. পুলিশ এর মতে এটা স্ট্রিট এক্সিডেন্ট এর কেস হতে পারে, তবে আত্মহত্যা বা খুন ও হতে পারে, ময়নাতদন্ত না হলে জানা যাবে না - এতে আবার আলাদা কি বোঝার আছে ?
মৈনাক তুই একটা গাধা , সিম্পলি গাধা - অর্ক রুক্ষ স্বরে বলে উঠলো - সাধে তোকে জ্যেঠু মানিক চাঁদ বলে ডাকে না .. আর কিছু দেখিস নি তুই খবরটায় ? আমি শত চেষ্টাতেও মনে করে উঠতে পারলাম না আর কিছু ছিল কিনা , শেষে হতাশ হয়ে ঠোট উল্টে বললাম , না রে ভাই , তুই কি জানতে চাইছিস বুঝতেই পারছি না .
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই ব্যক্তি টি কে ? পুলিশ ওর পকেট থেকে একটা আই ডি কার্ড এর অংশবিশেষ পেয়েছে যাতে ওনার নাম টা লেখা ছিল, খবরের সাথের ছবিটা তুই দেখিস নি ? অর্ক খানিকটা উদাস আর বিরক্তি মিলিয়ে কথাটা বলল |
এবারে মনে পড়েছে, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস, “R.Taka ..S Sanjoy” এটাই তো ছেপেছে ওর সাথের ছবিটায়। কিন্তু তাতে কি? কোনও একজন মারা গেছেন, সেটাই বড় কথা। কিন্তু এতে কি করে বোঝা যাবে যে, লোকটি কে? আমি উৎসাহ নিয়ে বললাম। অর্ক হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলে উঠল – ভদ্র না অভদ্র সেতো পরে বোঝা যাবে, তবে এটা ঠিক যে, যদি আমার ইনটুইশন ঠিক হয়, তবে আগামী দিনে, আমাদের এই এলাকা ওয়ার্ল্ড ফেমাস হয়ে যাবে।
আমি, অর্কর হেঁয়ালি বুঝে উঠতে না পেরে ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। ও আলতো হেসে বলল, বন্ধু, আমি এর মধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। ভাবছি, একটু এটা নিয়ে নাড়াচারা করব। কিন্তু মানিকচাঁদ, তোকে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বানানো যাবে কিনা, সেটাই ভাবছি। আমার প্রচন্ড রাগ হোল অর্কর কথায়, বললাম – কেন, তুই কি এমন বেশি বুঝেছিস আমার চেয়ে?
যথাসময়ে সকলি পারিবে জানিতে – আবার হেঁয়ালি অর্কর গলায়। তবে এবারে আমি, নিচু গলায় বললাম –সত্যি বলছিস ভাই, এরমধ্যে, কিছু রহস্য আছে নাকি? আমিও যে ভাবিনি তা নয়, কিন্তু সেতো পুলিশেও ভেবেছে, হয়ত কেউ লোকটাকে খুন করে ফেলে গেছে। কিন্তু এতে রহস্যর কি আছে? অবশ্য তোর IQ লেভেলটা যে আমাদের চেয়ে বেশি, তাতো আমরা সবাই জানি।
সে দেখা যাবে খন, তুই আগে বল, আমাকে অ্যাসিষ্ট করতে পারবি কিনা? অর্কর গলায় আবেগের সুর ঝরে পরল।
হ্যাঁ আমি তো রাজি, কিন্তু আমার এই প্রোজেক্টটা শেষ হতে আর দিনদুই লাগবে, তারপর আমি ফ্রী যতক্ষন না আর নেক্সট কোনও প্রোজেক্ট হাতে পাচ্ছি। আই টি সেক্টরের সফটওয়্যার ডেভেলপার কোম্পানীতে কাজ করার এই একটা সুবিধা আছে, দুটো প্রোজেক্ট এর মধ্যে হাতে কিছুটা সময় পাওয়া যায়, ফ্রী বসে থাকলেও অ্যাটলিস্ট স্যালারিটা পাওয়া যায়।
ঠিক আছে, তবে চল, একবার, লোকাল থানা থেকে ঘুরে আসি, খোঁজ নিয়ে আসি তোর ওই ভদ্রলোকের – অর্ক বলল। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম – দেখ অর্ক, ভাল হবে না কিন্তু, সবসময়ে আমাকে টোকা দিয়ে কথা বলবি না, তাহলে, তোর বাড়িতে বলে দেব এই ব্যাপারটার কথা। অর্ক হেসে বলল – ও কে মাই বস, যেমন আপনার ইছে।
( চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রেনেসাঁ সাহা ১৪/১০/২০১৫সূচনা পর্ব সুন্দর। ভালো লাগল। আরো পড়ব পরেরগুলো।
-
তপন দাস ৩০/০৯/২০১৫সূচনা পর্ব তো বেশ ভালোই লাগলো।
-
অভিষেক মিত্র ২২/০৮/২০১৫একটা কথা বলছি শান্তনুদা, কিছু মনে করবেন না। আরেকটু ভূমিকা করলে মনে হয় ভালো হত। খুব তাড়াতাড়ি যেন মূল গল্পে ঢুকে যাওয়া হল।
-
দ্বীপ সরকার ১১/০৭/২০১৫সুন্দর।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১০/০৭/২০১৫ধন্যবাদ পাঠক বন্ধু, পড়তে থাকুন ভালো লাগবে ।
-
মায়নুল হক ০৯/০৭/২০১৫খুব ভালো লাগলো গল্পটি আশা করি দ্বিতীয় পরবে অপেক্ষায় রইলাম