ব্যর্থ কামনা
নানি বেড়াতে এসেছে। সন্ধ্যে বেলায় বাড়ির সবাই নানিকে ঘিরে গল্প করছে। শুধু রবিন নেই। রবিন বিকেলে ঘুরতে বের হয়েছ, এখনো ফেরেনি। রবিনের বয়স দশ বছর। সে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ছাত্র ভাল, ক্লাসের সেকেন্ড বয় হওয়া সত্বেও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারার খুব অভ্যেস। অল্প বয়সে একটু বেশি পেকে গেছে আর কি। বাবা স্বাধীনচেতা মানুষ। তিনি বলেন, "আমার ছেলেতো কোনদিন কারো অন্যায় করেনি। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে একটু মজা পায়। ক্লাসের রেজাল্ট তো খারাপ করে না কখনও। ঘুরে বেড়াক না, এই বয়সে একটু আনন্দ ফুর্তি করবেই।" মা অবশ্য এর বিপরীত। তিনি বলতেন, "ছেলেকে আস্কারা দিয়ে মাথায় উঠাচ্ছে।" এ নিয়ে বাবা-মা মাঝে মাঝে ঝগড়া করতো।
হঠাৎ হাসির রোল পড়ে গেল। রবিন ঘরে ডুকেই দেখে সবাই হাসছে। রবিন বলল, "রিনা আপু তোমরা হাসছো কেন?" নানির দিকে চোখ পড়তেই, "আরে নানি, তুমি কখন এলে?" এর মধ্য বিনা বলে উঠলো,"নেও, তোমার নাতিন জামাই এসেছে। একটু আদর যত্ন কর।" রবিন হতবম্বের মত তাকিয়ে আছে। বাকি সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। রবিন বলল, "মানে কি? এসব কি হচ্ছে নানু? সবাই আমাকে দেখে হাসছে কেন? আর কি বলছে, নাতিন জামাই এসেছে।"
নানি রবিনের হাত ধরে কাছে টেনে বলল, "আয় নানু, আমার কাছে বস, আমি তোকে আমার নাতিন জামাই বানাব। আমার আদমের শেষমেশ একটা মেয়ে জন্ম হয়েছে । তাকে আমি তোর সাথে বিয়ে দিব।" রবিন সাথে সাথে বলে উঠলো,"ও!এই কথা, তোমার নাতিনের জন্ম হতে না হতেই বিয়ে?" মা এতক্ষণ কাজে ব্যস্ত ছিল৷ তার মা এসেছে, তাই একটু ভাল মন্দ রান্না করবে। তাই ওদের কথা কিছু শোনেনি। বিয়ের কথা শুনে এগিয় এসে বলল, "কি? মা, কি হয়েছে? কার বিয়ের কথা বলছ?" নানি বলল, "আমার আদমের ছোট মেয়েটাকে আমি রবিনের সাথে বিয়ে দিব।"
মা বলল, "ও কথা আর মুখে এন না মা। মিঞা ভাইয়ের মেয়ের কেবল জন্ম হল, আর এখনি তুমি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ। হায়াত মঊতের কথা বলা যায় না। দোয়া করো আল্লাহ ওদেরকে যেন বাঁচিয়ে রাখে।"
প্রায় চার বছর পর।
রবিন এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে কোনমতে কয়েক মুঠো ভাত মুখে দিয়েই বাহিরে বের হয়। ফুটবল মাঠে তাদের আড্ডা। তাদের গল্পের বিষয় একটাই, তা হচ্ছে, এলাকার কোন মেয়ে সুন্দর। কে মিষ্টিমুখে কথা বলে, কাকে দেখলে, কার মনে ভাল লাগার অনুভূতির জন্ম দেয়। যদিও রবিন কাউকে সেভাবে পছন্দ করে না। কিন্তু সবার সাথে এ নিয়ে গল্প করতে খুব পছন্দ করে।
রবিনের বাবা চাকরি করতো। এছাড়াও নিজেদের জমিজমা চাষ আবাদ করতো।
রবিন বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতো। সেদিন সকালে জারিকেনে ডিজেল নিয়ে ইরি ক্ষেতে পানি দিতে গেছে। পাম্প চালু করে নিজেদের জমিতে পানি লাইন করে, ড্রেনের কোথাও দিয়ে পানি চুয়ে যাচ্ছে কিনা দেখিতেছে। হঠাৎ জমির পাশের একটি বাড়ি থেকে একটি মেয়ে বেড়িয়ে পাম্পের জলে মুখ ধুইতে আসলো। রবিন দেখেতো হতবাক। "এ মেয়েটা কেরে ভাই, একেতো আগে কখনও দেখিনি।" এত সুন্দর মানুষ হয় সে কখনও কল্পনায়ও ভাবেনি। মেয়েটির বয়স আনুমানিক দশ বছর। এখনও যৌবনের ছোয়া লাগেনি। সম্ভবতঃ ক্লাস ফাইভে পড়ে। রবিন আস্তে আস্তে মেয়েটির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "তোমার নাম কি?"
মেয়েটি তাকাল, "জি, ভাইয়া কিছু বললেন?"
"বলছি, তোমার নাম কি?"
"আমার নাম মাধুরি", বলেই সে এক দৌড়ে চলে গেল। রবিন আনমনে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।
সেদিন থেকে রবিন মেয়েটিকে নিয়ে মনে মনে কল্পনায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো।
এরপর রবিন মাঝে মাঝেই সেই জমিতে পানি দিতে যেত, শধু একটা আশায়, মেয়েটিকে যদি একবার দেখতে পায়। কিন্তু মেয়েটিকে আর দেখা যায় না।
রবিন এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে একদিন সেই জমির পাশ দিয়ে হাটিতেছে, হটাৎ কে যেন পিছন থেকে ডাকছে, "এই রবিন, তুই এখানে কি করিস?"
রবিন বলল,"আরে দোস্ত, তুই! তুই কোথা থেকে আসলি।"
"আমি কোথা থেকে আসলাম মানে," আলিম সামনে একটা বাড়ি দেখিয়ে বলল,"এটাই তো আমাদের বাড়ি।"
রবিন বলল,"তাই নাকি, আসলে তুই কখনো নিয়ে আসিসনিতো তাই জানতাম না।"
"আসলে আব্বা মা বাহিরের কেউ আমাদের বাড়ি আসুক, এটা পছন্দ করেনা। এজন্য আমি কখনো বন্ধুদের আমাদের বাড়ি নিয়ে আসিনি। বাড়ির পাশে যখন এসেই পড়েছিস। চল আমাদের বাড়ি চল।" বলে আলিম জোড় করে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল।
রবিন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। হঠাৎ মাধুরি এসে রুবিনকে দেখে থমকে গেল।
আলিম বলল, "কিরে মাধুরি, কিছু বলবি?"
"না ভাইয়া, আম্মু তোমাকে ডেকেছে" বলেই মাধুরি চলে গেল। রবিনের মনটা একেবারে দমে গেল। আলিম তার খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু। আর বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম, কিভাবে সম্ভব ভাবতেই নিশ্বাস ভারি হয়ে আসলো।
কয়েক বছর পর।
রবিনের নতুন চাকরি হয়েছে। সে ঢাকায় থাকে। কিন্তু মন পড়ে থাকে মাধুরির কাছে। মাধুরি এখন এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কিন্তু এখনও রবিন তার মনের কথা তাকে বলতে পারেনি। কারণ একটাই সে তার বন্ধুর বোন। মাধুরি অবশ্য কিছুটা বুঝতে পেরেছে, কিন্তু ওর মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। রবিন মাধুরিকে কল্পনায় আপন করে নিয়েছে। সে ভাবছে, " সে তো আর বেকার না। এখন পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা বলে এনগেজমেন্ট করে রাখবে।"
রবিন সাতদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। বিকালে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। দুলাভাই রবিনের পাশে এসে বসে বলল, "কখন এসেছ? মন খারাপ কেন?"
"এইমাত্র এসেছি দুলা ভাই। না, মন খারাপ কেন হবে? এমনি।"
"না, তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।"
"না, দুলাভাই, কিছু হয়নি। আপনাকে একটা কথা বলার জন্য আসছিলাম। কিন্তু কিভাবে যে বলি।"
"ও! তাই তো বলি। তা কথাটা কি? বলে ফেল।"
"না, দুলাভাই, কথাটা একটু অন্যরকম, বলতে ও লজ্জা লাগছে।"
"আরে, কোন লজ্জা নাই। শ্যালক দুলাভাই এর কাছে কথা বলবে তাতে লজ্জা কিসের। বলে ফেল।"
"দুলাভাই, আমি ছোটবেলা থেকে একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতাম। যদিও আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু আমি ওকে খুব ভালবাশি।"
"ও এই কথা, তা ওকি তোমাকে ভালভাসে?”
"জানিনা, তবে আমি কখনো আমার মনের কথা ওকে বলিনি।"
"তাহলে কেমন হলো? আচ্ছা, তোমাদের বাড়ির সবার সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়।"
সেদিন সন্ধ্যায় দুলাভাই বাড়ির সবার সাথে কথা বলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মাধুরিদের বাসায় যায়। ফিরে এসে বলে, "এ বিয়ে হবে না। ওর বাবা বিয়েতে রাজি না।"
রবিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
রবিন সেদিন সারারাত আরর ঘুমাতে পারলো না। সকাল হতে না হতেই সে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হল।
এর পর রবিন এক বছর বাড়ির দিকে ফিরে তাকায়নি।
ছয় মাস পর রবিনের চাচাতো ভাইয়ের একটা চিঠি পেল রবিন। তাতে একটা কথাই লেখা ছিল,
"ভাইয়া, আগামী শুক্রবার মাধুরির বিয়ে।"
রবিন চিঠিটি পড়ে ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দিল।
রবিন নতুন মোবাইল কিনেছে নকিয়া ১১০০ মডেলের। কিন্তু কথা বলার মতো কেউ নেই। চিন্তা করল, এলাকার বাজারে মোবাইলের দোকানে নাম্বারটা দিয়ে রাখি। সেদিন বিকেলে বন্দুদের নিয়ে রমনা পার্কে ঘুরতে বের হয়েছে, হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল, গ্রামের মোবাইল দোকানের নাম্বার।
মোবাইল, রিসিভ করতেই বাবার কন্ঠ, রবিনের কন্ঠরোধ হয়ে গেল। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
ওদিকে বাবা কথা বলে যাচ্ছে, "হ্যালো, বাবা রবিন, কথা বল বাবা, রাগ করে থাকিস না। আমি কি দোষ করেছি বল, তুই কতদিন বাড়ি আসিস না, তোকে বড় দেখতে ইচ্ছা করে। গত সোমবার আজিজ ভাই মারা গেল। জানিনা আমি আর কতদিন বাঁঁচব, তুই যদি এভাবে রাগ করে বাড়ি না আসিস আমার খুব কষ্ট লাগেরে বাবা। কথা বল, বাবা।"
এবার রবিন ফুঁফিয়ে কেদে উঠল, কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল, "বাবা আমি কালই অফিসে গিয়ে ছুটি চাইব, আমি বাড়ি আসব বাবা। আমি আর তোমাদের কষ্ট দিতে চাই না, বাবা।"
কয়েক দিন পর রবিন ছুটি নিয়ে বাড়ি আসলো।
সেই ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে তার বাবা হার্ট স্টোক করে তার কোলে মাথা রেখে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিল। বাবাকে হারিয়ে রবিন বিহ্বল হয়ে গেল। বারবার অতীতের স্মৃতি মনে পড়তে লাগল। "একটা মেয়েকে না পেয়ে সেই দুঃখে বাবার মনে কতইনা কষ্ট দিয়েছি। কত কষ্ট পেয়েই না বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল," ভাবতেই বুকের ভিতর থেকে কান্না উথলে উঠতে লাগলো।
একদিন রবিনের নানির বলা সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। নানি আজ নেই। সেদিন নানি মামাতো বোন আদৃতার সাথে আমার বিয়ে দিবার কথা বলেছিল। হয়তো সে কারণেই আমার ভাগ্যে মাধুরি আসেনি।
অনেক দিন হলো আদৃতাকে দেখি না। ও যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে তখন একবার মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। ও তখন আমার কোলে এসে বসে থাকতো আর কত কথা যে বলতো, "ভাইয়া, আমার বিড়াল আছে না, চারটি বাচ্চা দিয়েছে। দেখবে ভাইয়া, চল না।"
"আচ্ছা চল।"
তারপর নিয়ে যেত পুকুর ঘাটে পুকুরে সদ্য ছাড়া মাছের পোনা ঝাঁকে ঝাঁকে ভাসিতেছে তা দেখার জন্য। পুতুল খেলার সময় মিছামিছি পায়েস রান্না করে আমাকে খেতে দিত।
আদৃতা আজ ক্লাস নাইনে পড়ে। কেমন হয়েছে ওর চেহারা। একবার গিয়ে দেখে আসলে কেমন হয়?
এই ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিল ছুটি থেকে ফেরার সময় বগুড়া মামার বাড়ি যাবে।
কাউকে না বলে সে একদিন মামার বাড়ি চলে গেল। মামাতো ভাইয়ের বউ রবিনকে ছোট বেলায় খুব আদর করতো। প্রায় আট বছর পর রবিনকে বাড়ি ভিতর ডুকতে দেখে বলল, "আরে রবিন না? কত বছর পর আমাদের কথা মনে পড়ল তোমার।"
"আসসালামু আলাইকুম ভাবি, কেমন আছেন?"
"ভাবি আর কেমন থাকবে। আমার সেই ছোট্ট দেবরটা আমাকে ভুলেই গেছে। সেই কবে এসেছিল এরপর আর কোন পাত্তাই নেই।"
"আসলে ভাবি চাকরি করিতো, ছুটি তেমন একটা পাইনা, তাই আর আসা হয়না।"
আম্মা...আম্মা.., বলে ভাবি মামানি ডেকে বলল, "দেখেন কে এসেছে?"
ভাবির ডাক শুনে মামানি বেরিয়ে আসলো, পিছন পিছন আদৃতা।
"আরে, বাবা রবিন না? কত বছর পর তোমার আমাদের কথা মনে পড়ল? বড় বু, দুলাভাই কেমন আছে? তা বাবা ঘরে এস।"
"ঠিক আছে মামানি, আপনি এত ব্যস্ত হবেন না। পিছনে কে, আদৃতা না, আরে কত বড় হয়ে গেছ তুমি।"
ভাবি বলল, "আমার ননদ তো এখন বিয়ে উপযুক্ত। এখন শুধু পাত্রের অপেক্ষায়।"
রবিন বলল, "তো ভাল একটা পাত্র দেখে বিয়ে দিলেই তো হয়।"
"বিয়ে দিলে তো দিতেই পারি। যার জন্য আমরা এত দিন অপেক্ষা করে আছি তাকে না পেলে কিভাবে বিয়ে দিব? বল।"
"ও! বিয়ের পাত্র তাহলে ঠিক হয়েই আছে।
তা কোন রাজপুত্র ঠিক করে রেখেছেন, শুনি।"
"আছে, আছে, সময় হলেই জানতে পারবে।"
আদৃতা রবিনকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে। তাই কোন কথা বলছে না। ভাবি বলল, "আদৃতা,ভাইয়াকে খেতে দাও।"
রবিন খেতে বসেছে। পাশে আদৃতা বসে আছে। রবিন বলল, "কিরে আদৃতা, ভাবি কি বলে, তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।"
আদৃতা লাজুক লাজুক কন্ঠে বলল, "আমি জানি না ভাইয়া।"
"কিরে আদৃতা ,আমাকে তোমার পছন্দ হয় না?"
কি সব বলেন, ভাইয়া, এই বলে লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
বিকালের দিকে রবিন চলে গেল।
পরের দিন রবিনের মামাতো বোন রবিনের বড় ভাইয়ের কাছে ফোন করলো। কিন্তু ভাই বাসায় না থাকায় ভাবি ফোন রিসিভ করলো।
"হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।"
"ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভাবি কেমন আছ?"
"আপনি কে বলছেন, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।"
"ভাবি আমি আকলিমা, আপনার মামাতো ননদ।
"তা কি চাই?" ভাবির মাথায় একটু সমস্যার কারণে এলোমেলো ভাবে কথা বলে।
"আমি একটু ভাইয়ার সাথে কথা বলব।"
"ভাইয়া বাসায় নেই। যা বলার আমাকেই বলুন।"
"ভাইয়ার সাথে একটু জরুরী আলাপ ছিল।"
"হ্যাঁ তাতো বুঝতেই পারছি, তা না হলে এতদিন কোন খোঁজখবর নেই, হঠাৎ ভাইয়ের খোজ। যা বলার আমাকেই বলুন।"
"ভাবি আপনি যখন জানতে চাচ্ছেন, তাহলে বলি,
দাদী মারা যাবার আগে বলে গিয়েছিল, রবিনের সাথে আমাদের আদৃতার বিয়ের কথা। তা আদৃতার তো ভাল ভাল বিয়ের সম্মন্ধ আসতেছে। তাই ভাইয়া এ ব্যাপারে কি মত দেন। আমরা কি অপেক্ষা করবো? তাই ফোন করা আরকি।
"কি বললেন? বিয়ে! আমার দেবরের সাথে! আপনারা আমার দেবরকে প্রতিষ্ঠিত দেখে নজর পড়েছে। এসব চিন্তাভাবনা বাদ দেন।"
"তাহলে কি আমার বোনকে অন্য কোথাও বিয়ের ব্যবস্থা করব?"
"সেটা আপনাদের ব্যপার। রাখি, এই বলে ফোন কেটে দিল।"
এদিকে রবিন আদৃতাকে দেখে আসার পর থেকে মাধুরিকে ভুলে নতুন করে আদৃতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। প্রায় তিন মাস পর রবিন বাড়ি এসেছে। এনগেজমেন্ট করবে বলে আদৃতার জন্য একটি আংটিও নিয়ে এসেছে।
রবিন ভাত খাচ্ছে। মা ভাত বেড়ে দিচ্ছে। পাশে রিনা আপু ও বিনা আপু বসে আছে।
রবিন বলল, "মা আমি এবার অনেক দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। ভাবছি তোমাকে নিয়ে এবার বগুড়া মামার বাড়ি যাব। কতদিন মামা বাড়ি যাইনা। নানিতো আদৃতার সাথে বিয়ের কথা বলছিল। ওকে একবার দেখা দরকার না? কি বল, মা?"
কেউ কোন কথা বলছে না।
" কি ব্যপার কেউ কথা বলছনা কেন?" বলেই রবিন মায়ের দিকে তাকাল। দেখে মায়ের চোখে পানি। বিনা ও রিনার দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের চোখেও পানি।
"কি হয়েছে, মা? তোমাদের চোখে পানি কেন?
রিনা বলল, রবিন, আদৃতার বিয়ে হয়ে গেছে।
রবিন আচমকা শব্দ করে বলল, কি!
সমাপ্ত
হঠাৎ হাসির রোল পড়ে গেল। রবিন ঘরে ডুকেই দেখে সবাই হাসছে। রবিন বলল, "রিনা আপু তোমরা হাসছো কেন?" নানির দিকে চোখ পড়তেই, "আরে নানি, তুমি কখন এলে?" এর মধ্য বিনা বলে উঠলো,"নেও, তোমার নাতিন জামাই এসেছে। একটু আদর যত্ন কর।" রবিন হতবম্বের মত তাকিয়ে আছে। বাকি সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। রবিন বলল, "মানে কি? এসব কি হচ্ছে নানু? সবাই আমাকে দেখে হাসছে কেন? আর কি বলছে, নাতিন জামাই এসেছে।"
নানি রবিনের হাত ধরে কাছে টেনে বলল, "আয় নানু, আমার কাছে বস, আমি তোকে আমার নাতিন জামাই বানাব। আমার আদমের শেষমেশ একটা মেয়ে জন্ম হয়েছে । তাকে আমি তোর সাথে বিয়ে দিব।" রবিন সাথে সাথে বলে উঠলো,"ও!এই কথা, তোমার নাতিনের জন্ম হতে না হতেই বিয়ে?" মা এতক্ষণ কাজে ব্যস্ত ছিল৷ তার মা এসেছে, তাই একটু ভাল মন্দ রান্না করবে। তাই ওদের কথা কিছু শোনেনি। বিয়ের কথা শুনে এগিয় এসে বলল, "কি? মা, কি হয়েছে? কার বিয়ের কথা বলছ?" নানি বলল, "আমার আদমের ছোট মেয়েটাকে আমি রবিনের সাথে বিয়ে দিব।"
মা বলল, "ও কথা আর মুখে এন না মা। মিঞা ভাইয়ের মেয়ের কেবল জন্ম হল, আর এখনি তুমি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ। হায়াত মঊতের কথা বলা যায় না। দোয়া করো আল্লাহ ওদেরকে যেন বাঁচিয়ে রাখে।"
প্রায় চার বছর পর।
রবিন এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে কোনমতে কয়েক মুঠো ভাত মুখে দিয়েই বাহিরে বের হয়। ফুটবল মাঠে তাদের আড্ডা। তাদের গল্পের বিষয় একটাই, তা হচ্ছে, এলাকার কোন মেয়ে সুন্দর। কে মিষ্টিমুখে কথা বলে, কাকে দেখলে, কার মনে ভাল লাগার অনুভূতির জন্ম দেয়। যদিও রবিন কাউকে সেভাবে পছন্দ করে না। কিন্তু সবার সাথে এ নিয়ে গল্প করতে খুব পছন্দ করে।
রবিনের বাবা চাকরি করতো। এছাড়াও নিজেদের জমিজমা চাষ আবাদ করতো।
রবিন বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতো। সেদিন সকালে জারিকেনে ডিজেল নিয়ে ইরি ক্ষেতে পানি দিতে গেছে। পাম্প চালু করে নিজেদের জমিতে পানি লাইন করে, ড্রেনের কোথাও দিয়ে পানি চুয়ে যাচ্ছে কিনা দেখিতেছে। হঠাৎ জমির পাশের একটি বাড়ি থেকে একটি মেয়ে বেড়িয়ে পাম্পের জলে মুখ ধুইতে আসলো। রবিন দেখেতো হতবাক। "এ মেয়েটা কেরে ভাই, একেতো আগে কখনও দেখিনি।" এত সুন্দর মানুষ হয় সে কখনও কল্পনায়ও ভাবেনি। মেয়েটির বয়স আনুমানিক দশ বছর। এখনও যৌবনের ছোয়া লাগেনি। সম্ভবতঃ ক্লাস ফাইভে পড়ে। রবিন আস্তে আস্তে মেয়েটির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "তোমার নাম কি?"
মেয়েটি তাকাল, "জি, ভাইয়া কিছু বললেন?"
"বলছি, তোমার নাম কি?"
"আমার নাম মাধুরি", বলেই সে এক দৌড়ে চলে গেল। রবিন আনমনে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।
সেদিন থেকে রবিন মেয়েটিকে নিয়ে মনে মনে কল্পনায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো।
এরপর রবিন মাঝে মাঝেই সেই জমিতে পানি দিতে যেত, শধু একটা আশায়, মেয়েটিকে যদি একবার দেখতে পায়। কিন্তু মেয়েটিকে আর দেখা যায় না।
রবিন এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে একদিন সেই জমির পাশ দিয়ে হাটিতেছে, হটাৎ কে যেন পিছন থেকে ডাকছে, "এই রবিন, তুই এখানে কি করিস?"
রবিন বলল,"আরে দোস্ত, তুই! তুই কোথা থেকে আসলি।"
"আমি কোথা থেকে আসলাম মানে," আলিম সামনে একটা বাড়ি দেখিয়ে বলল,"এটাই তো আমাদের বাড়ি।"
রবিন বলল,"তাই নাকি, আসলে তুই কখনো নিয়ে আসিসনিতো তাই জানতাম না।"
"আসলে আব্বা মা বাহিরের কেউ আমাদের বাড়ি আসুক, এটা পছন্দ করেনা। এজন্য আমি কখনো বন্ধুদের আমাদের বাড়ি নিয়ে আসিনি। বাড়ির পাশে যখন এসেই পড়েছিস। চল আমাদের বাড়ি চল।" বলে আলিম জোড় করে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল।
রবিন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। হঠাৎ মাধুরি এসে রুবিনকে দেখে থমকে গেল।
আলিম বলল, "কিরে মাধুরি, কিছু বলবি?"
"না ভাইয়া, আম্মু তোমাকে ডেকেছে" বলেই মাধুরি চলে গেল। রবিনের মনটা একেবারে দমে গেল। আলিম তার খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু। আর বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম, কিভাবে সম্ভব ভাবতেই নিশ্বাস ভারি হয়ে আসলো।
কয়েক বছর পর।
রবিনের নতুন চাকরি হয়েছে। সে ঢাকায় থাকে। কিন্তু মন পড়ে থাকে মাধুরির কাছে। মাধুরি এখন এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কিন্তু এখনও রবিন তার মনের কথা তাকে বলতে পারেনি। কারণ একটাই সে তার বন্ধুর বোন। মাধুরি অবশ্য কিছুটা বুঝতে পেরেছে, কিন্তু ওর মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। রবিন মাধুরিকে কল্পনায় আপন করে নিয়েছে। সে ভাবছে, " সে তো আর বেকার না। এখন পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা বলে এনগেজমেন্ট করে রাখবে।"
রবিন সাতদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। বিকালে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। দুলাভাই রবিনের পাশে এসে বসে বলল, "কখন এসেছ? মন খারাপ কেন?"
"এইমাত্র এসেছি দুলা ভাই। না, মন খারাপ কেন হবে? এমনি।"
"না, তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।"
"না, দুলাভাই, কিছু হয়নি। আপনাকে একটা কথা বলার জন্য আসছিলাম। কিন্তু কিভাবে যে বলি।"
"ও! তাই তো বলি। তা কথাটা কি? বলে ফেল।"
"না, দুলাভাই, কথাটা একটু অন্যরকম, বলতে ও লজ্জা লাগছে।"
"আরে, কোন লজ্জা নাই। শ্যালক দুলাভাই এর কাছে কথা বলবে তাতে লজ্জা কিসের। বলে ফেল।"
"দুলাভাই, আমি ছোটবেলা থেকে একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতাম। যদিও আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু আমি ওকে খুব ভালবাশি।"
"ও এই কথা, তা ওকি তোমাকে ভালভাসে?”
"জানিনা, তবে আমি কখনো আমার মনের কথা ওকে বলিনি।"
"তাহলে কেমন হলো? আচ্ছা, তোমাদের বাড়ির সবার সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়।"
সেদিন সন্ধ্যায় দুলাভাই বাড়ির সবার সাথে কথা বলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মাধুরিদের বাসায় যায়। ফিরে এসে বলে, "এ বিয়ে হবে না। ওর বাবা বিয়েতে রাজি না।"
রবিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
রবিন সেদিন সারারাত আরর ঘুমাতে পারলো না। সকাল হতে না হতেই সে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হল।
এর পর রবিন এক বছর বাড়ির দিকে ফিরে তাকায়নি।
ছয় মাস পর রবিনের চাচাতো ভাইয়ের একটা চিঠি পেল রবিন। তাতে একটা কথাই লেখা ছিল,
"ভাইয়া, আগামী শুক্রবার মাধুরির বিয়ে।"
রবিন চিঠিটি পড়ে ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দিল।
রবিন নতুন মোবাইল কিনেছে নকিয়া ১১০০ মডেলের। কিন্তু কথা বলার মতো কেউ নেই। চিন্তা করল, এলাকার বাজারে মোবাইলের দোকানে নাম্বারটা দিয়ে রাখি। সেদিন বিকেলে বন্দুদের নিয়ে রমনা পার্কে ঘুরতে বের হয়েছে, হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল, গ্রামের মোবাইল দোকানের নাম্বার।
মোবাইল, রিসিভ করতেই বাবার কন্ঠ, রবিনের কন্ঠরোধ হয়ে গেল। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
ওদিকে বাবা কথা বলে যাচ্ছে, "হ্যালো, বাবা রবিন, কথা বল বাবা, রাগ করে থাকিস না। আমি কি দোষ করেছি বল, তুই কতদিন বাড়ি আসিস না, তোকে বড় দেখতে ইচ্ছা করে। গত সোমবার আজিজ ভাই মারা গেল। জানিনা আমি আর কতদিন বাঁঁচব, তুই যদি এভাবে রাগ করে বাড়ি না আসিস আমার খুব কষ্ট লাগেরে বাবা। কথা বল, বাবা।"
এবার রবিন ফুঁফিয়ে কেদে উঠল, কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল, "বাবা আমি কালই অফিসে গিয়ে ছুটি চাইব, আমি বাড়ি আসব বাবা। আমি আর তোমাদের কষ্ট দিতে চাই না, বাবা।"
কয়েক দিন পর রবিন ছুটি নিয়ে বাড়ি আসলো।
সেই ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে তার বাবা হার্ট স্টোক করে তার কোলে মাথা রেখে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিল। বাবাকে হারিয়ে রবিন বিহ্বল হয়ে গেল। বারবার অতীতের স্মৃতি মনে পড়তে লাগল। "একটা মেয়েকে না পেয়ে সেই দুঃখে বাবার মনে কতইনা কষ্ট দিয়েছি। কত কষ্ট পেয়েই না বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল," ভাবতেই বুকের ভিতর থেকে কান্না উথলে উঠতে লাগলো।
একদিন রবিনের নানির বলা সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। নানি আজ নেই। সেদিন নানি মামাতো বোন আদৃতার সাথে আমার বিয়ে দিবার কথা বলেছিল। হয়তো সে কারণেই আমার ভাগ্যে মাধুরি আসেনি।
অনেক দিন হলো আদৃতাকে দেখি না। ও যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে তখন একবার মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। ও তখন আমার কোলে এসে বসে থাকতো আর কত কথা যে বলতো, "ভাইয়া, আমার বিড়াল আছে না, চারটি বাচ্চা দিয়েছে। দেখবে ভাইয়া, চল না।"
"আচ্ছা চল।"
তারপর নিয়ে যেত পুকুর ঘাটে পুকুরে সদ্য ছাড়া মাছের পোনা ঝাঁকে ঝাঁকে ভাসিতেছে তা দেখার জন্য। পুতুল খেলার সময় মিছামিছি পায়েস রান্না করে আমাকে খেতে দিত।
আদৃতা আজ ক্লাস নাইনে পড়ে। কেমন হয়েছে ওর চেহারা। একবার গিয়ে দেখে আসলে কেমন হয়?
এই ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিল ছুটি থেকে ফেরার সময় বগুড়া মামার বাড়ি যাবে।
কাউকে না বলে সে একদিন মামার বাড়ি চলে গেল। মামাতো ভাইয়ের বউ রবিনকে ছোট বেলায় খুব আদর করতো। প্রায় আট বছর পর রবিনকে বাড়ি ভিতর ডুকতে দেখে বলল, "আরে রবিন না? কত বছর পর আমাদের কথা মনে পড়ল তোমার।"
"আসসালামু আলাইকুম ভাবি, কেমন আছেন?"
"ভাবি আর কেমন থাকবে। আমার সেই ছোট্ট দেবরটা আমাকে ভুলেই গেছে। সেই কবে এসেছিল এরপর আর কোন পাত্তাই নেই।"
"আসলে ভাবি চাকরি করিতো, ছুটি তেমন একটা পাইনা, তাই আর আসা হয়না।"
আম্মা...আম্মা.., বলে ভাবি মামানি ডেকে বলল, "দেখেন কে এসেছে?"
ভাবির ডাক শুনে মামানি বেরিয়ে আসলো, পিছন পিছন আদৃতা।
"আরে, বাবা রবিন না? কত বছর পর তোমার আমাদের কথা মনে পড়ল? বড় বু, দুলাভাই কেমন আছে? তা বাবা ঘরে এস।"
"ঠিক আছে মামানি, আপনি এত ব্যস্ত হবেন না। পিছনে কে, আদৃতা না, আরে কত বড় হয়ে গেছ তুমি।"
ভাবি বলল, "আমার ননদ তো এখন বিয়ে উপযুক্ত। এখন শুধু পাত্রের অপেক্ষায়।"
রবিন বলল, "তো ভাল একটা পাত্র দেখে বিয়ে দিলেই তো হয়।"
"বিয়ে দিলে তো দিতেই পারি। যার জন্য আমরা এত দিন অপেক্ষা করে আছি তাকে না পেলে কিভাবে বিয়ে দিব? বল।"
"ও! বিয়ের পাত্র তাহলে ঠিক হয়েই আছে।
তা কোন রাজপুত্র ঠিক করে রেখেছেন, শুনি।"
"আছে, আছে, সময় হলেই জানতে পারবে।"
আদৃতা রবিনকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে। তাই কোন কথা বলছে না। ভাবি বলল, "আদৃতা,ভাইয়াকে খেতে দাও।"
রবিন খেতে বসেছে। পাশে আদৃতা বসে আছে। রবিন বলল, "কিরে আদৃতা, ভাবি কি বলে, তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।"
আদৃতা লাজুক লাজুক কন্ঠে বলল, "আমি জানি না ভাইয়া।"
"কিরে আদৃতা ,আমাকে তোমার পছন্দ হয় না?"
কি সব বলেন, ভাইয়া, এই বলে লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
বিকালের দিকে রবিন চলে গেল।
পরের দিন রবিনের মামাতো বোন রবিনের বড় ভাইয়ের কাছে ফোন করলো। কিন্তু ভাই বাসায় না থাকায় ভাবি ফোন রিসিভ করলো।
"হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।"
"ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভাবি কেমন আছ?"
"আপনি কে বলছেন, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।"
"ভাবি আমি আকলিমা, আপনার মামাতো ননদ।
"তা কি চাই?" ভাবির মাথায় একটু সমস্যার কারণে এলোমেলো ভাবে কথা বলে।
"আমি একটু ভাইয়ার সাথে কথা বলব।"
"ভাইয়া বাসায় নেই। যা বলার আমাকেই বলুন।"
"ভাইয়ার সাথে একটু জরুরী আলাপ ছিল।"
"হ্যাঁ তাতো বুঝতেই পারছি, তা না হলে এতদিন কোন খোঁজখবর নেই, হঠাৎ ভাইয়ের খোজ। যা বলার আমাকেই বলুন।"
"ভাবি আপনি যখন জানতে চাচ্ছেন, তাহলে বলি,
দাদী মারা যাবার আগে বলে গিয়েছিল, রবিনের সাথে আমাদের আদৃতার বিয়ের কথা। তা আদৃতার তো ভাল ভাল বিয়ের সম্মন্ধ আসতেছে। তাই ভাইয়া এ ব্যাপারে কি মত দেন। আমরা কি অপেক্ষা করবো? তাই ফোন করা আরকি।
"কি বললেন? বিয়ে! আমার দেবরের সাথে! আপনারা আমার দেবরকে প্রতিষ্ঠিত দেখে নজর পড়েছে। এসব চিন্তাভাবনা বাদ দেন।"
"তাহলে কি আমার বোনকে অন্য কোথাও বিয়ের ব্যবস্থা করব?"
"সেটা আপনাদের ব্যপার। রাখি, এই বলে ফোন কেটে দিল।"
এদিকে রবিন আদৃতাকে দেখে আসার পর থেকে মাধুরিকে ভুলে নতুন করে আদৃতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। প্রায় তিন মাস পর রবিন বাড়ি এসেছে। এনগেজমেন্ট করবে বলে আদৃতার জন্য একটি আংটিও নিয়ে এসেছে।
রবিন ভাত খাচ্ছে। মা ভাত বেড়ে দিচ্ছে। পাশে রিনা আপু ও বিনা আপু বসে আছে।
রবিন বলল, "মা আমি এবার অনেক দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। ভাবছি তোমাকে নিয়ে এবার বগুড়া মামার বাড়ি যাব। কতদিন মামা বাড়ি যাইনা। নানিতো আদৃতার সাথে বিয়ের কথা বলছিল। ওকে একবার দেখা দরকার না? কি বল, মা?"
কেউ কোন কথা বলছে না।
" কি ব্যপার কেউ কথা বলছনা কেন?" বলেই রবিন মায়ের দিকে তাকাল। দেখে মায়ের চোখে পানি। বিনা ও রিনার দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের চোখেও পানি।
"কি হয়েছে, মা? তোমাদের চোখে পানি কেন?
রিনা বলল, রবিন, আদৃতার বিয়ে হয়ে গেছে।
রবিন আচমকা শব্দ করে বলল, কি!
সমাপ্ত
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৯/০৭/২০২৩অনুপম