মিস প্রিয়মবদা দেবী
পর্ব ১
"গরমটা সত্যি খুব পড়েছে এ বছর , কি বলিস "?
শুধু একবার মাথা নেড়ে চুপ করে গেল প্রিয় , মুখে সেই সিগারেট টেনে চলেছে আর খাতায় কি সব লিখে চলেছে । মনে হচ্ছে কোন ফর্দ হবে ।। বেশি এনকোয়ারী আবার করা যায় না ওকে ।। তাই চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিলাম ।। গরমের সকালে বেচারির মাথা খারাপ হয়ে গেছে ভেবে খুব খারাপ লাগছিল ।। হঠাৎ মুখটা আমার দিকে তুলে জিজ্ঞাসা করল , দার্জিলিং যাবি ? আমি অবাক হয়ে বললাম , কবে ? প্রিয় সিগারেটের গোড়ায় দুটো টান দিয়ে বলে উঠল , " চল , আজকেই বেরোনো যাক "।
এত জলদি , বেশ অবাক হয়েই আমি বলে উঠলাম , " কিন্তু জোগাড় যানতি ; কিছু তো সময় লাগবে " ।। প্রিয় আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল , " তা চিন্তা করিস না , সৌমিক মুখুরজে আমার পুরনো বন্ধু ।। উত্তরবঙ্গে থাকা কালীন পরিচয় ।। উনাকে কল করেছিলাম , ওখানেই উঠব " ।। এতক্ষনে ব্যাপারটা পরিষ্কার হল আমার কাছে , সকালের পাগলামিটা আসলে একটা বড় পরিকল্পনা ছিল ।।
তা আমি রাজি না হয়ে যাই কোথা ? পুরোনো প্রেম জেদে মারে , তাই রাজি হয়ে গেলাম ।। রাতে নিউ জলপাইগুড়ির বাসে দুটো টিকিট কাটা হল ।। এসি ভলভো বাস , আরামে যাওয়া যাবে এটা নিঃসন্দেহে ঠিক ।। তা সন্ধ্যায় ধর্মতলার মোড়ে মিট করব ঠিক করা হল এবং আমি পৌঁছে গেলাম যথা সময়ে ।। এদিকে প্রিয় এসেই এক নতুন নাটক জুড়ে বসল , বেশ আবদারের সুরে বলে উঠল , " বোতল নিসনি , এভাবে শুকনো যাত্রা কি ভাল লাগে "!! ওর আবদার কিছুক্ষনেই অধিকারে বদলে গেল ।। অবশেষে এল বিয়ারের ক্যান , চিপস প্রভৃতি ।। নেশার ঘোরে এসির ঠান্ডা হাওয়ায় রাতের অন্ধকারে কাঁধের ওপর মাথা আর মাথার ওপর মুখ ভালবাসার এক নতুন অধ্যায় তৈরি করল ।। বুঝতেই পারিনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দুজনে তবে সকালে এটুকু বুঝেছি হালকা প্রেম আদান প্রদান সকলের ঘুমের আড়ালে চলেছিল এবং তার চিন্হ মুখে ভালোই লেগে আছে ।।
সকাল বেলা প্রিয়র আওয়াজে ঘুম ভাঙল আমার ।। " ওঠ শালা কুম্ভকর্ণের নাতি , নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে গেছি " ।। কোন রকমে ঘুম সরিয়ে নামলাম কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলাম , " কাল রাতে কি হয়েছে ? এত দাগ কেন " ?
" আহা , ন্যাকা ষষ্ঠী !! ভোগ বুঝিস , কাল রাতে ভোগ করেছি আমরা , প্রিয় বলে উঠল , আর এখন যাও মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও , সৌমিক আঙ্কল গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাদের জন্য "।।
গাড়ি ছুটে চললো পাহাড়ের গা বেয়ে রাস্তা ধরে , হঠাৎ এক পাশে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার বলে উঠল , " সাহাব জি ঊ দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা " ।। আমি শুধু তাকিয়ে আছি , চোখের সামনে লাল টুপি পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা দাঁড়িয়ে ।। প্রিয় ওদিকে নতুন একটা সিগারেট ধরাল ।।
দুপুর দুটো কি তিনটে হবে ।। আমাদের গাড়ি পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে এসে হাজির হল সৌমিক মুখুরজের বাগান বাড়িতে ।। দুটি ঘর দেওয়া হয়েছে এবং দুটিই ইন্টারলিংকড ।। বেশ সুন্দর চারপাশের দৃশ্য , আমার কিন্তু কাল রাতের ঘটনাটাই মাথায় ঘুরছে ।। পুরোন প্রেম আবার জাগছে মনে হচ্ছে ।। প্রিয়কে বেশ চাঙ্গা মনে হচ্ছে ।। বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছে আর সিগারেট টেনে চলেছে অবিরাম ।। এই প্রথম ওকে গান করতে শুনলাম , ভারি মিষ্টি গলাটা ওর ।। এর আগে তো শুধুই ওর গালাগাল দেওয়া একটা কর্কশ রূপ দেখেছি , এই প্রথম বার দেখে মনে ধরে গেল ।। মনে হল সত্যি তুমি প্রিয়মবদা , স্বার্থক এক নারী চরিত্র , এক সম্পূর্ণা ।।
এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও আমার দিকে ঘুরে তাকাল , এক অদ্ভুত দৃষ্টি ওর চাউনি তে ।। বলল , " দেখ কি সুন্দর প্রকৃতি , এই পরিবেশে ভালোবেসেও শান্তি আবার মরেও শান্তি " ।। আমি আর কি বলব বুঝতে না পেরে শুধু বললাম , " মরার কথাটা না বললে নয় "।। এবার কিছু না বলে হেঁসে চলে গেল পাগলি , ছেড়ে গেল একটা না বলা রহস্য বরাবরের মতই ।।
পর্ব ২
রাতের বেলায় চাঁদের আলো এসে পড়ছে বারান্দার ওপর ।। সত্যি অপরূপ লাগছে এই পৃথিবী ।। আগামী দশ দিনে কি কি হবে তা জানি না কিন্তু আজ যে একটা রোম্যান্টিক রূপ রয়েছে প্রকৃতির বুক জুড়ে সে খুব বুঝছি ।। বাড়ির চাকর কালুয়া এসে বলল , " ভিতরের ডাইনিংএ আপনাদের খাবার দেওয়া হয়েছে , চলুন "।। এই রূপ ছেড়ে না আমার না প্রিয়র কারুর ইচ্ছে নেই , তবু যেতে হবে ।।
খাওয়ার খেতে বসেছি সবে ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ ।। " কালুয়া , ও কালুয়া , শিগগির আয় এদিকে " কেউ ডাক দিল ।। কালুয়া গেল ও কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা চিৎকার এল , 'কি ' !! ব্যাস সব খামোস ।।
প্রিয় বলল , " কালুয়ার গলা না ,চল দেখি একবার " ।। ও দৌড়ে গেল , গিয়ে দেখে কালুয়া কাঁদছে দরজার সামনে বসে ।। আমি কালুয়ার কাছে গিয়ে বসলাম ও জিজ্ঞাসা করলাম , " কি হয়েছে ? কাঁদছিস কেন " ? কিছুই বলতে পারল না , শুধু আঙ্গুল দেখাল সোজা আর বলে উঠল , " বাবু ... নেই ....." ।। প্রিয় সিগারেট টানছিল , ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে এল , " মানে .... কি হয়েছে " ।।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বলল , " চাষের ক্ষেতে , পড়ে আছেন ।। লোকে বলছে সাপে কেটেছে , কিন্তু এ অঞ্চলে তো সাপ নেই বড় সর " ।।
" পুলিশে খবর দিয়েছেন " , প্রিয় কিছু বলতে না বলতেই , নিজেই ফোন ঘুরিয়ে বসল দার্জিলিং থানায় ।।
" হ্যালো , দার্জিলিং থানা , প্রিয় বলে উঠল , মার্গারেট রোডের পাশে ক্ষেতের মধ্যে একটি লাশ পড়ে আছে , আপনারা জানেন কি " ?
" ম্যাডাম আমরা ওখানেই আছি , আপনি কে বলছেন " ? ইন্সপেক্টর গুনবাড়িলাল পটবর্ধান বললেন ।।
" আমি প্রিয়মবদা ধর .... "
" আরে আপনি , আপনাকে কে না চেনে । তা আপনি দার্জিলিং এ কি করছেন ? "
" একটু ঘুরতে এসেছিলাম ।। যিনি মারা গেছেন উনি আমার পুরনো বন্ধু , উনার বাড়িতেই .... ওকে আমরা আসছি , আপনারাও থাকুন " ।। এই বলে ফোনটা কেটে দিল প্রিয়মবদা ।। ওকে আজ বেশ টেন্সড লাগছে , যতই হোক চেনা লোক তো ... আমারই কত খারাপ লাগছে তো প্রিয়র তো ভাল বন্ধু ও ।।
" ড্রাইভার গাড়ি বার কর " , চেঁচিয়ে বললাম কিন্তু প্রিয় বাঁধা দিয়ে বললো , " না , হেটেই যাব "।।
ফাঁকা মাঠ , বেশ গর্ত আছে অনেক ।। রাস্তার ধারের জমিটার পরের টায় নিথর শরীর পড়ে আছে ।। দেখলাম পটবর্ধান ওখানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে ।। প্রিয় ওকে জ্বালাতে চাইল না , একটা সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বললো , " চল মাঠের ওপাশ থেকে ঘুরে আসি " ।।
মাঠটা বেশ বড় , আল ধরে হেঁটে চলেছি আমরা দুজনে ।। প্রায় ঘন্টা খানেক প্রকৃতি উপভোগ করে প্রিয় এসে দাঁড়াল ভিড়ের মাঝখানে , সিগারেট টা ফেলে দিয়ে এগিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর এর দিকে , হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন , " মিস প্রিয়মবদা ... যদি অনুমতি দেন নিজের মত করে সত্যটা খুঁজে দেখতে পারি " ?
" দেখুন , কিছুই নেই ।। সাপের কামড়ে মৃত্যু ", ইন্সপেক্টর পাত্তা না দিয়েই বলে চলে গেলেন ।। প্রায় আধ ঘন্টা ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয় আর তারপর এগিয়ে গেল নিথর শরীরটার দিকে ।। চোখে জল নেই , যেন একটা রহস্য --- " কি করে হল , বল না" , প্রিয় চিৎকার করে উঠল ।।
বডির কাছ থেকে চলে আসছিল হটাৎ কি যেন হল , একটা চিৎকার ' আহ ' আর প্রিয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল ।। সবাই দৌড়ে এল , পুলিশ তখনও দাঁড়িয়ে ; তারাও দৌড়ে এল ।। ভিড় সরিয়ে দিলেন ।। অজ্ঞান পড়ে আছে প্রিয় , স্বাস চলছে ।। " আর দেরি করা ঠিক নয় , ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন , এখুনি একে নিয়ে যাও সদর হাসপাতালে আর সৌমিক বাবুর দেহটি পোস্ট মর্টেম এ পাঠাও , ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায় " .... মাথায় টুপিটি গলিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন পটবর্ধান , পিছনে একজন পুলিশ , প্রিয় ও আমি ।।
পর্ব ৩
সদর হাসপাতালে যেতে প্রায় কুড়ি মিনিট সময় লাগে , গাড়িটা একটু জোরে চালিয়ে পনেরো মিনিটে ঢোকা গেল হাসপাতালে ।। ঘুরতে এসে এত কান্ড ঘটে যাবে ভাবতেও পারি নি , প্রেমিকের মনের অবস্থা এখন খুব করুন ।। " প্রিয় সুস্থ হয়ে উঠবে তো " ? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম ।। ইন্সপেক্টর এসে কাঁধে একটা চাপরা মেরে চলে গেল ।। হাসপাতালে আমি এখন একা ।। আই সি ইউ তে ভর্তি করা হয়েছে প্রিয়কে আর বাইরে ফাঁকা বেঞ্চে একা বসে আছি ।। খিদে , ঘুম সব চলে গেছে , এখন শুধু একটাই কথা মনের ; প্রিয় , তুই জলদি সুস্থ হয়ে ওঠ ।।
প্রায় ঘন্টা খানেক বসে আছি , হঠাৎ ডাক্তারবাবুকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে বললাম , " প্রিয় কেমন আছে , ভাল হয়ে যাবে তো " ? সেরাম বিশেষ কিছু না বললেও ডাক্তারবাবু শুধু বলে গেলেন , " ভয়ানক সাপের বিষ , এট লিস্ট ৭২ ঘন্টা .... " ।।
দিন পার হয়ে রাত হল , প্রায় তিন দিন ওখানেই বসে আছি ।। খিদে নেই , চোখে ঘুম নেই আমার ।। তিন দিনের এই অপেক্ষা বেশ কঠিন হচ্ছিল , দেখি তৃতীয় দিন কালুয়া উপস্থিত ।। আমায় দেখতে পেয়েই বললো , " বাবু , দিদি ... "
" দেখ , আগে ডান দিকে কাঁচের একটা ঘর আছে , ওখানেই ঘুমাচ্ছে চুপচাপ " , আমি বললাম আর বলতে গিয়ে চোখে জল এসে গেল ।।
" দিদি কখন উঠবে "?
" জানিনা রে .... ওদিকের খবর কি "।।
" ওদিকে ... ফাঁকা ঘর হা করে তাকিয়ে আছে ।। ইন্সপেক্টর স্যার দুদিন ঘুরে গেছে , আজ সকালে আমাকে আসতে দেখে বলল বলে দিতে যে তুমি যেন উনার সাথে একবার অবশ্যই দেখা কর " ।।
যেতে ইচ্ছে করছে না ; তবু আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম আমি ।। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়ছে , সেখানে বাস থামে ।। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালাম ।। টানতেও ইচ্ছে করছে না আর , ঠিক সেইসময় দেখি পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল আমার সামনে ।। ইন্সপেক্টর সাহেব ডেকে নিলেন এবং আমি গাড়ির পিছনে উঠে পড়লাম ।।
" আপনার কাছেই আসছিলাম , পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসে গেছে ।। চলুন আগে একটু চা খাওয়া যাক তারপর সব বলছি " ।। সামনেই হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা ; গাড়িটা সেখানেই দাঁড়াল ।।
" এই দুটো করে গরম কচুরি ও চা নিয়ে আয় " , ইন্সপেক্টর চেঁচিয়ে বলল ।।
" আবার কচুড়ির কি দরকার " , আমি বললাম ।।
" আরে খান না , কিছুই তো খাওয়া হয় নি তিনদিন " ।।
আর কিছু বলার নেই , যতই হোক আমরা অথিতি ।। একজনের সেবা করছে হাসপাতাল ও আরেক জন এই পুলিশের হাতে ।।
" মিস প্রিয়মবদার খবর আমরা রাখছি , ঠিক হয়ে যাবে , চিন্তা করবেন না " , ইন্সপেক্টর বললেন ।।
" সে আপনারা আছেন যখন ...."
" আরে কি বলছেন , এটা আমাদের দায়িত্ব , পটবর্ধান বলে চললেন , যাই হোক একবার থানায় চলুন , একটা চমকে দেওয়া রিপোর্ট শোনাব " ।।
" কি রিপোর্ট " ? বেশ ভয় পেয়ে বলে উঠলাম ।।
" আগে থানায় চলুন , বলছি .... "
জিপ স্টার্ট দিল আর আমরা তাতে চেপে বসলাম ।। " দেখুন আপনার বান্ধবী প্রিয়মবদা বেশ ভাল বোঝেন , হয়ত উনি অজ্ঞান না হলে আমরা কেসটা নিতাম না কিন্তু যা এল রিপোর্টে চমকে যাবেন ...." পটবর্ধান বললেন ।।
বেশ অবাক হয়েই বললাম , " কিরকম "?
" কস অফ ডেথ সাপের বিষ , কিন্তু আজ নয় তিনদিন আগে .... কিছু বুঝলেন " , ইন্সপেক্টর বলেই হাঁসতে লাগলেন আর আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে রয়ে গেলাম ।।
পর্ব ৪
" তিন দিন আগে !! তিন দিন আগের সাপ তিন দিন পড়ে কামড়াল কি করে ?? উনি তো বুধবার মারা গেছেন , তা সাপটা রবিবার কামড়াল কি করে "?
এদিকে ইন্সপেক্টর তো হেঁসেই চলেছেন ।। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফাইলটা খুললেন ।। " দেখ এখানে তাই লেখা আছে , আর হ্যাঁ সাপের একটি দাঁত ভাঙা " ।।
আমার তো মাথা ঘুরছে , " কি ভুলভাল বকছেন " , বেশ রেগে বলেই দিলাম ।।
" আরে রাগছ কেন , দাঁত ভাঙা না থাকলে ক্ষতস্থানে দুটো ফুটো থাকত ।। কিন্তু একটিই গর্ত পাওয়া গেছে "....
" হোয়াট ! কি বলছেন , আমি বলে উঠলাম , একটি ফুটো , বাপের চোদ্দ জন্মেও শুনিনি মশাই " ।।
এবার বেশ হাঁসিমুখে ইন্সপেক্টর বললো , " আমিও কি শুনেছি কোনোদিন , তবে এইটাই তো উঠে আসছে , দেখলেন তো ।। এটা এত সহজ ব্যাপার নয় ।। ইতিহাসের পথে বর্তমানে ফিরতে হবে ।। এ তো চলতেই থাকবে , চলুন হাসপাতালে দেখি কি অবস্থা " , বলেই তিনি গাড়ি দিকে চলে গেলেন ।।
এদিকে সারাটা পথ আমার মাথায় ঘুরছে কোন সাপের একটি দাঁত আর তিনদিন পড়ে মরল কিকরে সৌমিক বাবু ? ওদিকে প্রিয়র অবস্থা নিয়ে একটা চিন্তা থেকেই যায় ।। গাড়িটি হঠাৎ ব্রেক কসায় হোসে ফিরলাম ।।
" চলুন , ভিতরে যাই " , গাড়ি থেকে নেমে ইন্সপেক্টর বললেন ।।
" হ্যাঁ , চলুন ..." ।।
ভিতরে কেমন একটা চুপচাপ ভাব ।। পুলিশের যে পাহারা ছিল সেও ঘুমাচ্ছে ।। নার্স , ডাক্তার সবাই চুপ ।।
" কি ব্যাপার বলুন তো ? এত চুপচাপ কেন ? কয়েকঘন্টা আগেও তো এরাম দেখে যায় নি ।। এই কিছুক্ষনে কি বিশাল ঝড় বয়ে গেল হাসপাতালে "?
"কিছুই তো বুঝতে পারছি না , আমি বললাম , চলুন তো প্রিয়র ওদিকটায় দেখি " ।।
" হ্যাঁ চলুন ", ইন্সপেক্টর বললেন ।।
দু পা এগিয়েছি একজন সিস্টার কে দেখলাম পড়ে আছে , পায়ে গুলি লেগেছে ।। আমি বললাম , " কি হয়েছে " ? কোন রকমে বললো , "দিদি .... হারিয়ে গেছে , কালো কাপড় বাঁধা কিছু লোক ...."।।
আমরা দৌড়ালাম আইসিইউর দিকে ।। আমার তো শরীর কাঁপছে ।। প্রচুর নিরীহ ডাক্তার , পেশেন্ট ও সিস্টার পড়ে আছে ।। কেউ আহত , কারুর গুলি লেগেছে আবার কেউ মারা গেছে ।। ডান দিকের বাঁক ঘুরেই থমকে দাঁড়ালাম ।। অন্ধকার আইসিইউ , বোমা ফেটেছে মনে হচ্ছে ।। দরজা উড়ে গেছে ।। কিন্তু এরাম অবস্থা আর বাইরের দিকটা পুরো স্বাভাবিক কেন ? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম কিন্তু মাথা খাটলো না ।।
কোন রকমে ভিতরে ঢুকলাম ।। আলো বলতে টর্চ আর সেই আলোতে দেখতে পেলাম প্রিয়র হাতের ঘড়ি ও চটি টা পড়ে আছে ।।
" হে ভগবান , প্রিয় ঠিক আছে তো ।। এত সাহসী মেয়ে , ওর যেন কিছু না হয় " , মাটি আঁকড়ে তখন আমার এই একটাই প্রার্থনা ।। পুলিশ কোন রকমে জায়গাটা খালি করল ।।
পর্ব ৫
কেমন যেন লাগছে ।। বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটাও দেখার ছিল ।। আর সবথেকে বড় প্রশ্ন হল প্রিয় র কি হয়েছে ? ও কিছুই টের পেল না ।। অত চালাক একটা মেয়ে এভাবে মুছে যেতে দিল নিজেকে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ।। নিজেই নিজেকে অনবরত বলে চলেছি , ওরে প্রিয় ফিরে আয় একবার , ফিরে আয় ।।
ইন্সপেক্টর কাছে এগিয়ে এলেন ।। তিনিও খুব আঘাত পেয়েছেন ব্যাপারটায় ।। কাঁধে হাত রেখে বললেন , " কথা দিচ্ছি এই কাজ যে বা যারা করেছে তাদের ছাড়ব না " ।। আমি তখন ওসব শোনার অবস্থায় নেই ।।
আমার ভেঙে পড়া অবস্থা দেখে ঠিক করা হল এখন থেকে আমি ইন্সপেক্টর এর সহযোগী হয়েই উনার বাড়িতে থাকব ।। যেখানেই থাকি , ভালবাসার টান , মন থেকে কি মুছে যাবে এত সহজে !!
" তোমার রাতের খাবার দেওয়া হয়েছে , খেয়ে নেবে চল ", ইন্সপেক্টর বললেন ।।
" না , ক্ষিদে নেই "--
"বুঝতে পারছি তোমার অবস্থা , কিন্তু না খেলে কি করে চলবে আর তাছাড়া আমরা তো আছি ...."
পটবর্ধান সাহেবের জেদাজেদিতে আর মানা করতে পারলাম না ।।
পরের দিন সকালে চোখ খুলতেই দেখি ইন্সপেক্টর দাঁড়িয়ে , মুখ ভরা হাঁসি , বললেন , " একটা ভাল খবর আছে , চলুন একবার বেড়াতে হবে " ।
" কোথায় আর কি খবর " , বেশ অবাক হয়ে আমি বললাম ।।
" চলুন না , যেতে যেতে বলছি " ---
ইন্সপেক্টর এর তাড়া খেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলাম ।। মুখ ধুয়ে , স্নান সেরে রেডি হয়ে নিলাম ।। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পটবর্ধান সাহেব বললেন , " চলুন কান ছেন দান গা একবার ঘুরে আসি " ।।
শুনে মুখটা লটকে গেল , এইজন্য এত তাড়া দিলেন বুঝি ; মনে মনে ভাবলেও একগাল হাসি নিয়ে গাড়িতে বসে রইলাম ।। গাড়ি এসে দাঁড়াল একটা ক্যাম্পের সামনে ।। মুখে মাফলার জড়ানো , জিন্স প্যান্ট ও লাল কোট পড়া এক ভদ্রলোক বসে সিগারেট টানছেন ।। মুখ সেরাম দেখতে পায়নি তবে ইন্সপেক্টর বললেন , " ইনি প্রিয়মবদাকে চেনেন ও জানেন কোথায় আছেন তাও জানেন .... তবে উনি বোবা তাই ইশারাই ভরসা " ।।
আমার কাছে এটাই বড় খবর যে আমার প্রিয় বেঁচে আছে ।। ও যে এত সহজে হার মেনে নেবে না এটা জানতাম ।।
আমি বললাম , " ও কোথায় এখন ? "
" এখুনি দেখা করবে না বলেছে , ইন্সপেক্টর বললেন , তবে সময় মত ঠিক সামনে আসবেন , আপাতত এই ববির কাছ থেকেই খবর আদান প্রদান চলবে , আর হ্যাঁ একটা চিঠি পাঠিয়েছে , লেখা আছে যে ও ভাল আছে আর কাজ যেন থেমে না থাকে ।। কাল ওই মাঠের চারপাশটা দেখে ববি কে রিপোর্ট করতে " .....
সান্ত্বনাময় ভাল খবর নিয়ে আজকের মত ফিরে এলাম দুজনে , সরি আর একটা প্রিয়র চিঠি ।।
পর্ব - ৬
সারা রাত ঠিক করে ঘুম হয়নি অনাদির ।। এটা ভেবে ভেবেই রাত কেটে যাচ্ছিল যে প্রিয়র কি হল ? কোথায় গেল হঠাৎ ? ববি কে ? বোমা বিস্ফোরণের সময় প্রিয় কোথায় ছিল ? হাজার হাজার প্রশ্ন , মাথায় ঘুরে চলেছে তার ।। ঘড়ির কাঁটা কখন যে ছয়ের ঘর ছুল বোঝাই গেল না ।। সকাল সকাল উঠে তৈরি হয়ে নিল সে ।। এবার বাকি দায়িত্ব তার ওপর , প্রিয় অনেক করেছে , তারও দায়িত্ব হয় কিছু করার ।।
ঠিক সাতটায় ইন্সপেক্টর এসে হাজির ।। নাইট ডিউটি সেরে ফিরেছেন সবে ।। তবে অনাদির অস্থিরতা দেখে বেশিক্ষন অপেক্ষা করলেন না ।। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন অনাদিবাবু কে নিয়ে নতুন এক মিশনের খোঁজে ।।
" আজ প্রথমে সৌমিক বাবুর বাড়িতে যাব , ওখান থেকে পুলিশ ল্যাবরেটরি আর সেখান থেকে বিকেল বেলা ..." ইন্সপেক্টর বাকিটা বলতেন , তার আগেই অনাদিবাবু পাস থেকে বলে উঠল , স্কর্পিও ....
"মাকড়সা , কোথায় !! " বলেই গাড়ির ব্রেক কষযেন ইন্সপেক্টর সাহেব ।।
" গাড়ি থামালেন কেন ? ওই কালো স্কর্পিও টার পিছু নিন , সেই নম্বর ... ৫৪দ১২৩৪ ।।"
"কোন গাড়ি ? কি ব্যাপার খুলে বলুন তো আমাকে ..." ইন্সপেক্টর অনাদিবাবু কে জিজ্ঞাসা করলেন ।।
অনাদিবাবু বেশ নার্ভাস লাগছিলেন ।। একটু থেমে বলতে শুরু করলেন ।।
" সেদিন যখন লাশ দেখতে আপনারা ব্যস্ত ছিলেন , আমি আর প্রিয় মাঠের পশ্চিম দিকে ঘুরছিলাম ।। সেই সময় এই কালো স্কর্পিও গাড়িটি রাস্তায় এসে দাঁড়ায় , দূর থেকে কিছু ছবি তোলে , গাড়ি থেকে একটা কালো কাপড় ফেলে চলে যায় ।। প্রিয় আমাকে ইশারা করে গাড়িটির নম্বর নোট করতে বলায় আমার কেমন সন্দেহ হয়েছিল বিষয় টায় ।। তারপর যখন হাসপাতালে সেদিন আপনার সাথে ফিরি এই গাড়িটি ওখানেও দাঁড়িয়ে ছিল ।।"
" এগুলো আরো আগে বলা উচিত ছিল ।। আজ কানছেন দান গা যাওয়া যাবে না ।। ওরা প্রিয় কে খুঁজছে আর তাই আমাকে ফলো করছে ।। চলুন , সোজা ল্যাবরেটরি যাওয়া যাক ।। আর গাড়ির নম্বরটা আমাকে দিন , খোঁজ নিয়ে দেখি সন্দেহটা ঠিক কি না "...
অনাদিবাবু হা করে থেকে বলে উঠল , আর ববি !!
ইন্সপেক্টর একটু মুচকি হেসে জবাব দিল , " প্রিয় যখন সঙ্গে আছে , ওর কিছু হবে না ।। বরং দুদিন মিশন টা বন্ধ থাকুক "।।
পর্ব - ৭
গাড়ি ঘুরিয়ে ওখান থেকে দুজনে হাজির হলেন পুলিশ ল্যাবরেটরি তে ।। শান্ত সুন্দর একটা জায়গা ।। দরজার সামনে একটা ফোন রাখা , সেটিতে ইন্সপেক্টর কি একটা নম্বর ডায়েল করে বলল হ্যালো পুলিশ ।। কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলে গেল ।। দুজনে হাজির হলেন কাঁচের রুমের ভিতরে ।। সামনে এনকোয়েরী , সেখানে একটি মেয়ে ( ২৫ / ২৬ বয়স হবে ) বসে রয়েছে ।। ইন্সপেক্টর পটবার্ধান বেশ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন , ডক্টর মিত্র কোথায় ? মহিলাটি একটি ঘরের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন আর দুইজন সেই পথে এগিয়ে চললেন ।।
ভিতরে ডাক্তার বাবু বসে কিছু লিখে চলেছেন সমানে ।। মনে হল একটা অংক কষছেন যেন ।। পটবার্ধান কে দেখেও যেন তাই দেখতে পেলেন না ।। তার সামনে চেয়ার টেনে দুজনে বসলাম ।। তারপর বেশ জোরে গলা খেখিয়ে ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন , আর ভাবতে হবে না ।। এবার মুখ খোল দেখি ।।
মাথা না তুলেই জবাব এল , কোন বিষয়ে ?
সাপ , ইন্সপেক্টর বললেন ।।
সে ল্যাবে থাকে , সেটা নিয়ে কি বলব ;মিত্র স্যার উত্তর দিলেন ; কিন্তু চোখ তখনও খাতার দিকে ।।
এবার বেশ রেগে গিয়ে ইন্সপেক্টর পটবার্ধান চিৎকার করে বলে উঠল , " চোখ ওপরে , মুখ ওপরে , আমার চোখে চোখ মিলিয়ে কথা বলুন ।। " এত জোর চিৎকার শুনে ডাক্তার খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল , " এত চ্যাচাস কেন ? কোন সাপ কামরায়নি ওকে ।। সরু কিছু শরীরে সজোরে মারা হয়েছে আর তাতে বিষ ছিল ।। সেই একই উপায়ে প্রিয়কেও মারার চেষ্টা করা হয় কিন্তু ওই যে বলেছিলাম বিষটা তিনদিন নিষ্ক্রিয় থাকে ।। তাই প্রিয়র কিছু হয় নি ।।"
এত কিছু শুনে বাড়ি ফিরছে যখন , তখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল , প্রিয়কে যদি সত্যি কিডন্যাপ করা হয় তাহলে তো তিনদিন ... এই প্রচন্ড ঠাণ্ডাতেও শরীরটা ঘামে ভিজে গেল মুহূর্তের মধ্যে ।।
আগামী তিনটে দিন ঘরে বসে বসেই কাটাতে হল ।। ইন্সপেক্টর সাহেবের হুকুম যতক্ষন না পরবর্তী নির্দেশ আসছে তার তরফ থেকে উনি যেন ঘর ছেড়ে কোথাও না বেরোই ।। তবু মন কিছুতেই মানছে না যে ।। অবশেষে কাউকে কিছু না বলেই কানছেন দান গা র দিকে রওনা দিল অনাদি বাবু ।। সামনের বাজার থেকে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় ।। সেখান থেকেই একটি গাড়ি নিয়ে সোজা রওনা দিলেন তিনি ।। ঘন্টা খানেকের পথ কিন্তু ড্রাইভার যা আস্তে ড্রাইভ করছে তিনি বেশ বুঝতে পারলেন যেতে অনেক সময় লাগবে ।। কিছু কিলোমিটার যাওয়ার পর গাড়িটি হঠাৎ ব্রেক কোষল এক জঙ্গলের মাঝে , সামনে রাস্তা বন্ধ ।। একটা বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা হয়েছে ।। গাড়ি থেকে নেমে গাছের গুঁড়িটি সরাতে যাবেন ড্রাইভার একটা গুলি চলার শব্দ হল ।। কিছু বোঝার আগেই গাড়িটি কিছু কালো মুখোশ পড়া লোক ঘিরে ধরল ও চেপে বসল ।। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঘুরিয়ে নিলেন ও চলতে শুরু করল ।। অনাদি বাবু যাতে উৎপাত না করেন তাই তাকে পিছনে সিটে বেঁধে ফেলে রাখা হল ।।
ওদিকে ইন্সপেক্টর অনাদি বাবুর ফোন না পেয়ে তার ঘরে উপস্থিত হল ।। সেখানেও তাকে দেখতে না পেয়ে কালুয়াকে তলব করা হয় ।।
" আমি জানি না , বাবু ।। কালুয়া বলল ,সকালে আমি আসি দশটার সময় , এসে দেখি বাবু নেই ।। ভাবলাম কোথাও বেরিয়েছে ।।"
" বেরিয়েছে !! বেশ অবাক হয়ে পটবার্ধান বলে উঠলেন , এতবার বারণ করা সত্বেও উনি কোথায় গেলেন যে আমাকেও বললেন না !! ওদিকে রাত থেকে শহরে ঝামেলা শুরু হয়েছে নতুন রাজ্য গঠনের দাবিতে ।। এদিকে অনাদি বাবু... উফ !! কি জ্বালা " ...
কালুয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন , বাবু ফিরে এলে আমাকে ফোন করতে বলিস ।। এটুকু বলে ইন্সপেক্টর বেরিয়ে গেলেন ।। একটি অন্ধকার বাড়ির সামনে ট্যাক্সিটা এসে দাঁড়াল ।। বাইরে থেকে মুখোশ পড়া একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এসে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করল , এনেছেন ? ড্রাইভার মাথা নেড়ে উত্তর দিতেই সামনের দরজা খুলে গেল ।। অজ্ঞান অনাদিবাবুর দেহটা দুজনে ভিতরে নিয়ে চলে গেল ।।
এদিকে দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে এল ।। বাবু বাড়ি ফিরছে না দেখে কালুয়া ইন্সপেক্টর কে ফোন করল ।।
" স্যার , কালুয়া বলছি ।। বাবু এখনো বাড়ি ফেরেন নি , খুব চিন্তা হচ্ছে ।। আপনি একটু দেখুন না ।। "
" হোয়াট !! " , ইন্সপেক্টর অবাক হয়ে রিসিভারটা নামিয়ে দিলেন ।।
পর্ব -৮
তখন রাত দুটো হবে ।। ইন্সপেক্টর তখনও থানায় বসে ।। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ।। ইন্সপেক্টর ফোনটা তুলতেই সেই চেনা গলায় ইন্সট্রাকশন ছুটে এল এপাশে ।। " আপনি যা ভাবছেন সেটাই ঠিক ।। কাল ভোর পাঁচটায় কান ছেন দান গা চলে আসুন ।। সঙ্গে একটা ড্রেস ।। ওদের আর বাড়তে দেওয়া চলে না ।।
" কিন্তু সারা দার্জিলিং জুড়ে যা পরিস্থিতি তাতে এখন .... " , ইন্সপেক্টর বেশ ভয়ে ভয়েই বলে উঠলেন ।।"
" চিন্তা করবেন না ।। আমার কাছে সব রিপোর্ট আছে ।। সৌমিক মুখুরজে হত্যা থেকে শুরু করে এখনও অবধি যা যা ঘটেছে সব একে অপরের সাথে ইন্টারলিংকড ।। তাই বলছি , কিছু ফোর্স , সিভিল ড্রেস এ আর আমার জন্য একটা ড্রেস নিয়ে চলে আসুন , ঠিক পাঁচটা ।। আর্মস আনবেন যথেষ্ট , বুঝেছেন ।। " ফোনের ওপাশ থেকে সেই চেনা কন্ঠস্বর বলে চললেন , " কালই এর যবনিকা পতন হয়ে যাক ।। এদের মাফ করা চলে না ।। "
ইন্সপেক্টর সম্মতি জানিয়ে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন ।। তার মুখ দেখে মনে হল মুখ জুড়ে একটা আনন্দের ছাপ আবার উৎকণ্ঠাও প্রবল ।। কিন্তু এসবের মাঝেও একটাই প্রশ্ন , প্রিয় সব জানলো কি করে !! কোথায় ছিল সে এতদিন তাহলে !! ববি তাহলে কে !!
কথা মত পরের দিন ভোর পাঁচটায় ইন্সপেক্টর পটবার্ধান সিভিল ড্রেসে কিছু ফোর্স , একটা ড্রেস নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় হাজির হলেন ।। কিন্ত অবাক কান্ড !! সেখানে তো কেউ নেই !! প্রায় মিনিট পনেরো অপেক্ষার পর একটা চেনা মুখ হাজির হল ।। " আরে প্রিয়মবদা যে !! " , ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন , " কোথায় ছিলেন এতদিন ? ঠিক আছেন তো ?
" ঠিক আছি কি না দেখতেই পাচ্ছেন ।। এখন কথা না বাড়িয়ে গাড়ি ঘোড়ান , ওরা ডুয়ার্সের দিকে রওনা দিয়েছে ।। আমার কাছে সব খবর আছে ।। " , প্রিয় বলে উঠল ।।
ইন্সপেক্টর বেশ চমকে উঠকে , ভ্রু কুচকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ।।
" ফাস্ট , ফাস্ট " , চেঁচিয়ে উঠল প্রিয় ।। " শুয়োর গুলো কে পালাতে দিলে চলবে না " .... এদিকে সমগ্র পাহাড় জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে ।। গুলি , বারুদে মোড়া শহরের মধ্যে দিয়েই গাড়ি ছুটছে ।। হটাৎ পাহাড়ের একটা বাঁক ঘুরে প্রিয়র নির্দেশ , " সামনে দেখুন , সেই কালো গাড়িটা ।। " হঠাৎ সামনে থেকে গুলি ছুটে এল , জবাবে এপাশ থেকেও গুলি চলতে শুরু করল ।। প্রায় ঘন্টা খানেক এই ভাবে লড়াই চলার পর কালো গাড়িটা একটা পাহাড়ের গা ঘেষে হঠাৎ থেমে গেল ।। সবাই অবাক !! পুলিশের গাড়িটি যখন তাদের ঘেরাও করেছে তখন গাড়িতে শুধু ড্রাইভার আর অনাদিবাবু বেঁচে ।। বাকি সবাই মৃত ।।
" কি , চিনতে পারলেন ড্রাইভার কে ? " প্রিয়র প্রশ্ন ইন্সপেক্টর পটবার্ধান এর উদ্দেশ্যে ....
ইন্সপেক্টর অবাক চোখে তাকিয়ে , শুধু কয়েকটি শব্দ বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে , " আপনি ধন্য মিস প্রিয়মবদা ।। ও যে আপনার লোক বুঝতেই পারি নি আমরা কেউ " ।। এরই মধ্যে কালুয়া আর অনাদিবাবু গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে ।। প্রিয়মবদা তেমন কিছুই বলল না আর শুধু একটা কথা , " সবাই তাই তো প্রিয় হয় না ইন্সপেক্টর " ।।
"গরমটা সত্যি খুব পড়েছে এ বছর , কি বলিস "?
শুধু একবার মাথা নেড়ে চুপ করে গেল প্রিয় , মুখে সেই সিগারেট টেনে চলেছে আর খাতায় কি সব লিখে চলেছে । মনে হচ্ছে কোন ফর্দ হবে ।। বেশি এনকোয়ারী আবার করা যায় না ওকে ।। তাই চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিলাম ।। গরমের সকালে বেচারির মাথা খারাপ হয়ে গেছে ভেবে খুব খারাপ লাগছিল ।। হঠাৎ মুখটা আমার দিকে তুলে জিজ্ঞাসা করল , দার্জিলিং যাবি ? আমি অবাক হয়ে বললাম , কবে ? প্রিয় সিগারেটের গোড়ায় দুটো টান দিয়ে বলে উঠল , " চল , আজকেই বেরোনো যাক "।
এত জলদি , বেশ অবাক হয়েই আমি বলে উঠলাম , " কিন্তু জোগাড় যানতি ; কিছু তো সময় লাগবে " ।। প্রিয় আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল , " তা চিন্তা করিস না , সৌমিক মুখুরজে আমার পুরনো বন্ধু ।। উত্তরবঙ্গে থাকা কালীন পরিচয় ।। উনাকে কল করেছিলাম , ওখানেই উঠব " ।। এতক্ষনে ব্যাপারটা পরিষ্কার হল আমার কাছে , সকালের পাগলামিটা আসলে একটা বড় পরিকল্পনা ছিল ।।
তা আমি রাজি না হয়ে যাই কোথা ? পুরোনো প্রেম জেদে মারে , তাই রাজি হয়ে গেলাম ।। রাতে নিউ জলপাইগুড়ির বাসে দুটো টিকিট কাটা হল ।। এসি ভলভো বাস , আরামে যাওয়া যাবে এটা নিঃসন্দেহে ঠিক ।। তা সন্ধ্যায় ধর্মতলার মোড়ে মিট করব ঠিক করা হল এবং আমি পৌঁছে গেলাম যথা সময়ে ।। এদিকে প্রিয় এসেই এক নতুন নাটক জুড়ে বসল , বেশ আবদারের সুরে বলে উঠল , " বোতল নিসনি , এভাবে শুকনো যাত্রা কি ভাল লাগে "!! ওর আবদার কিছুক্ষনেই অধিকারে বদলে গেল ।। অবশেষে এল বিয়ারের ক্যান , চিপস প্রভৃতি ।। নেশার ঘোরে এসির ঠান্ডা হাওয়ায় রাতের অন্ধকারে কাঁধের ওপর মাথা আর মাথার ওপর মুখ ভালবাসার এক নতুন অধ্যায় তৈরি করল ।। বুঝতেই পারিনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দুজনে তবে সকালে এটুকু বুঝেছি হালকা প্রেম আদান প্রদান সকলের ঘুমের আড়ালে চলেছিল এবং তার চিন্হ মুখে ভালোই লেগে আছে ।।
সকাল বেলা প্রিয়র আওয়াজে ঘুম ভাঙল আমার ।। " ওঠ শালা কুম্ভকর্ণের নাতি , নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে গেছি " ।। কোন রকমে ঘুম সরিয়ে নামলাম কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলাম , " কাল রাতে কি হয়েছে ? এত দাগ কেন " ?
" আহা , ন্যাকা ষষ্ঠী !! ভোগ বুঝিস , কাল রাতে ভোগ করেছি আমরা , প্রিয় বলে উঠল , আর এখন যাও মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও , সৌমিক আঙ্কল গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাদের জন্য "।।
গাড়ি ছুটে চললো পাহাড়ের গা বেয়ে রাস্তা ধরে , হঠাৎ এক পাশে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার বলে উঠল , " সাহাব জি ঊ দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা " ।। আমি শুধু তাকিয়ে আছি , চোখের সামনে লাল টুপি পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা দাঁড়িয়ে ।। প্রিয় ওদিকে নতুন একটা সিগারেট ধরাল ।।
দুপুর দুটো কি তিনটে হবে ।। আমাদের গাড়ি পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে এসে হাজির হল সৌমিক মুখুরজের বাগান বাড়িতে ।। দুটি ঘর দেওয়া হয়েছে এবং দুটিই ইন্টারলিংকড ।। বেশ সুন্দর চারপাশের দৃশ্য , আমার কিন্তু কাল রাতের ঘটনাটাই মাথায় ঘুরছে ।। পুরোন প্রেম আবার জাগছে মনে হচ্ছে ।। প্রিয়কে বেশ চাঙ্গা মনে হচ্ছে ।। বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছে আর সিগারেট টেনে চলেছে অবিরাম ।। এই প্রথম ওকে গান করতে শুনলাম , ভারি মিষ্টি গলাটা ওর ।। এর আগে তো শুধুই ওর গালাগাল দেওয়া একটা কর্কশ রূপ দেখেছি , এই প্রথম বার দেখে মনে ধরে গেল ।। মনে হল সত্যি তুমি প্রিয়মবদা , স্বার্থক এক নারী চরিত্র , এক সম্পূর্ণা ।।
এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও আমার দিকে ঘুরে তাকাল , এক অদ্ভুত দৃষ্টি ওর চাউনি তে ।। বলল , " দেখ কি সুন্দর প্রকৃতি , এই পরিবেশে ভালোবেসেও শান্তি আবার মরেও শান্তি " ।। আমি আর কি বলব বুঝতে না পেরে শুধু বললাম , " মরার কথাটা না বললে নয় "।। এবার কিছু না বলে হেঁসে চলে গেল পাগলি , ছেড়ে গেল একটা না বলা রহস্য বরাবরের মতই ।।
পর্ব ২
রাতের বেলায় চাঁদের আলো এসে পড়ছে বারান্দার ওপর ।। সত্যি অপরূপ লাগছে এই পৃথিবী ।। আগামী দশ দিনে কি কি হবে তা জানি না কিন্তু আজ যে একটা রোম্যান্টিক রূপ রয়েছে প্রকৃতির বুক জুড়ে সে খুব বুঝছি ।। বাড়ির চাকর কালুয়া এসে বলল , " ভিতরের ডাইনিংএ আপনাদের খাবার দেওয়া হয়েছে , চলুন "।। এই রূপ ছেড়ে না আমার না প্রিয়র কারুর ইচ্ছে নেই , তবু যেতে হবে ।।
খাওয়ার খেতে বসেছি সবে ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ ।। " কালুয়া , ও কালুয়া , শিগগির আয় এদিকে " কেউ ডাক দিল ।। কালুয়া গেল ও কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা চিৎকার এল , 'কি ' !! ব্যাস সব খামোস ।।
প্রিয় বলল , " কালুয়ার গলা না ,চল দেখি একবার " ।। ও দৌড়ে গেল , গিয়ে দেখে কালুয়া কাঁদছে দরজার সামনে বসে ।। আমি কালুয়ার কাছে গিয়ে বসলাম ও জিজ্ঞাসা করলাম , " কি হয়েছে ? কাঁদছিস কেন " ? কিছুই বলতে পারল না , শুধু আঙ্গুল দেখাল সোজা আর বলে উঠল , " বাবু ... নেই ....." ।। প্রিয় সিগারেট টানছিল , ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে এল , " মানে .... কি হয়েছে " ।।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বলল , " চাষের ক্ষেতে , পড়ে আছেন ।। লোকে বলছে সাপে কেটেছে , কিন্তু এ অঞ্চলে তো সাপ নেই বড় সর " ।।
" পুলিশে খবর দিয়েছেন " , প্রিয় কিছু বলতে না বলতেই , নিজেই ফোন ঘুরিয়ে বসল দার্জিলিং থানায় ।।
" হ্যালো , দার্জিলিং থানা , প্রিয় বলে উঠল , মার্গারেট রোডের পাশে ক্ষেতের মধ্যে একটি লাশ পড়ে আছে , আপনারা জানেন কি " ?
" ম্যাডাম আমরা ওখানেই আছি , আপনি কে বলছেন " ? ইন্সপেক্টর গুনবাড়িলাল পটবর্ধান বললেন ।।
" আমি প্রিয়মবদা ধর .... "
" আরে আপনি , আপনাকে কে না চেনে । তা আপনি দার্জিলিং এ কি করছেন ? "
" একটু ঘুরতে এসেছিলাম ।। যিনি মারা গেছেন উনি আমার পুরনো বন্ধু , উনার বাড়িতেই .... ওকে আমরা আসছি , আপনারাও থাকুন " ।। এই বলে ফোনটা কেটে দিল প্রিয়মবদা ।। ওকে আজ বেশ টেন্সড লাগছে , যতই হোক চেনা লোক তো ... আমারই কত খারাপ লাগছে তো প্রিয়র তো ভাল বন্ধু ও ।।
" ড্রাইভার গাড়ি বার কর " , চেঁচিয়ে বললাম কিন্তু প্রিয় বাঁধা দিয়ে বললো , " না , হেটেই যাব "।।
ফাঁকা মাঠ , বেশ গর্ত আছে অনেক ।। রাস্তার ধারের জমিটার পরের টায় নিথর শরীর পড়ে আছে ।। দেখলাম পটবর্ধান ওখানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে ।। প্রিয় ওকে জ্বালাতে চাইল না , একটা সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বললো , " চল মাঠের ওপাশ থেকে ঘুরে আসি " ।।
মাঠটা বেশ বড় , আল ধরে হেঁটে চলেছি আমরা দুজনে ।। প্রায় ঘন্টা খানেক প্রকৃতি উপভোগ করে প্রিয় এসে দাঁড়াল ভিড়ের মাঝখানে , সিগারেট টা ফেলে দিয়ে এগিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর এর দিকে , হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন , " মিস প্রিয়মবদা ... যদি অনুমতি দেন নিজের মত করে সত্যটা খুঁজে দেখতে পারি " ?
" দেখুন , কিছুই নেই ।। সাপের কামড়ে মৃত্যু ", ইন্সপেক্টর পাত্তা না দিয়েই বলে চলে গেলেন ।। প্রায় আধ ঘন্টা ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয় আর তারপর এগিয়ে গেল নিথর শরীরটার দিকে ।। চোখে জল নেই , যেন একটা রহস্য --- " কি করে হল , বল না" , প্রিয় চিৎকার করে উঠল ।।
বডির কাছ থেকে চলে আসছিল হটাৎ কি যেন হল , একটা চিৎকার ' আহ ' আর প্রিয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল ।। সবাই দৌড়ে এল , পুলিশ তখনও দাঁড়িয়ে ; তারাও দৌড়ে এল ।। ভিড় সরিয়ে দিলেন ।। অজ্ঞান পড়ে আছে প্রিয় , স্বাস চলছে ।। " আর দেরি করা ঠিক নয় , ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন , এখুনি একে নিয়ে যাও সদর হাসপাতালে আর সৌমিক বাবুর দেহটি পোস্ট মর্টেম এ পাঠাও , ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায় " .... মাথায় টুপিটি গলিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন পটবর্ধান , পিছনে একজন পুলিশ , প্রিয় ও আমি ।।
পর্ব ৩
সদর হাসপাতালে যেতে প্রায় কুড়ি মিনিট সময় লাগে , গাড়িটা একটু জোরে চালিয়ে পনেরো মিনিটে ঢোকা গেল হাসপাতালে ।। ঘুরতে এসে এত কান্ড ঘটে যাবে ভাবতেও পারি নি , প্রেমিকের মনের অবস্থা এখন খুব করুন ।। " প্রিয় সুস্থ হয়ে উঠবে তো " ? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম ।। ইন্সপেক্টর এসে কাঁধে একটা চাপরা মেরে চলে গেল ।। হাসপাতালে আমি এখন একা ।। আই সি ইউ তে ভর্তি করা হয়েছে প্রিয়কে আর বাইরে ফাঁকা বেঞ্চে একা বসে আছি ।। খিদে , ঘুম সব চলে গেছে , এখন শুধু একটাই কথা মনের ; প্রিয় , তুই জলদি সুস্থ হয়ে ওঠ ।।
প্রায় ঘন্টা খানেক বসে আছি , হঠাৎ ডাক্তারবাবুকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে বললাম , " প্রিয় কেমন আছে , ভাল হয়ে যাবে তো " ? সেরাম বিশেষ কিছু না বললেও ডাক্তারবাবু শুধু বলে গেলেন , " ভয়ানক সাপের বিষ , এট লিস্ট ৭২ ঘন্টা .... " ।।
দিন পার হয়ে রাত হল , প্রায় তিন দিন ওখানেই বসে আছি ।। খিদে নেই , চোখে ঘুম নেই আমার ।। তিন দিনের এই অপেক্ষা বেশ কঠিন হচ্ছিল , দেখি তৃতীয় দিন কালুয়া উপস্থিত ।। আমায় দেখতে পেয়েই বললো , " বাবু , দিদি ... "
" দেখ , আগে ডান দিকে কাঁচের একটা ঘর আছে , ওখানেই ঘুমাচ্ছে চুপচাপ " , আমি বললাম আর বলতে গিয়ে চোখে জল এসে গেল ।।
" দিদি কখন উঠবে "?
" জানিনা রে .... ওদিকের খবর কি "।।
" ওদিকে ... ফাঁকা ঘর হা করে তাকিয়ে আছে ।। ইন্সপেক্টর স্যার দুদিন ঘুরে গেছে , আজ সকালে আমাকে আসতে দেখে বলল বলে দিতে যে তুমি যেন উনার সাথে একবার অবশ্যই দেখা কর " ।।
যেতে ইচ্ছে করছে না ; তবু আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম আমি ।। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়ছে , সেখানে বাস থামে ।। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালাম ।। টানতেও ইচ্ছে করছে না আর , ঠিক সেইসময় দেখি পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল আমার সামনে ।। ইন্সপেক্টর সাহেব ডেকে নিলেন এবং আমি গাড়ির পিছনে উঠে পড়লাম ।।
" আপনার কাছেই আসছিলাম , পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসে গেছে ।। চলুন আগে একটু চা খাওয়া যাক তারপর সব বলছি " ।। সামনেই হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা ; গাড়িটা সেখানেই দাঁড়াল ।।
" এই দুটো করে গরম কচুরি ও চা নিয়ে আয় " , ইন্সপেক্টর চেঁচিয়ে বলল ।।
" আবার কচুড়ির কি দরকার " , আমি বললাম ।।
" আরে খান না , কিছুই তো খাওয়া হয় নি তিনদিন " ।।
আর কিছু বলার নেই , যতই হোক আমরা অথিতি ।। একজনের সেবা করছে হাসপাতাল ও আরেক জন এই পুলিশের হাতে ।।
" মিস প্রিয়মবদার খবর আমরা রাখছি , ঠিক হয়ে যাবে , চিন্তা করবেন না " , ইন্সপেক্টর বললেন ।।
" সে আপনারা আছেন যখন ...."
" আরে কি বলছেন , এটা আমাদের দায়িত্ব , পটবর্ধান বলে চললেন , যাই হোক একবার থানায় চলুন , একটা চমকে দেওয়া রিপোর্ট শোনাব " ।।
" কি রিপোর্ট " ? বেশ ভয় পেয়ে বলে উঠলাম ।।
" আগে থানায় চলুন , বলছি .... "
জিপ স্টার্ট দিল আর আমরা তাতে চেপে বসলাম ।। " দেখুন আপনার বান্ধবী প্রিয়মবদা বেশ ভাল বোঝেন , হয়ত উনি অজ্ঞান না হলে আমরা কেসটা নিতাম না কিন্তু যা এল রিপোর্টে চমকে যাবেন ...." পটবর্ধান বললেন ।।
বেশ অবাক হয়েই বললাম , " কিরকম "?
" কস অফ ডেথ সাপের বিষ , কিন্তু আজ নয় তিনদিন আগে .... কিছু বুঝলেন " , ইন্সপেক্টর বলেই হাঁসতে লাগলেন আর আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে রয়ে গেলাম ।।
পর্ব ৪
" তিন দিন আগে !! তিন দিন আগের সাপ তিন দিন পড়ে কামড়াল কি করে ?? উনি তো বুধবার মারা গেছেন , তা সাপটা রবিবার কামড়াল কি করে "?
এদিকে ইন্সপেক্টর তো হেঁসেই চলেছেন ।। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফাইলটা খুললেন ।। " দেখ এখানে তাই লেখা আছে , আর হ্যাঁ সাপের একটি দাঁত ভাঙা " ।।
আমার তো মাথা ঘুরছে , " কি ভুলভাল বকছেন " , বেশ রেগে বলেই দিলাম ।।
" আরে রাগছ কেন , দাঁত ভাঙা না থাকলে ক্ষতস্থানে দুটো ফুটো থাকত ।। কিন্তু একটিই গর্ত পাওয়া গেছে "....
" হোয়াট ! কি বলছেন , আমি বলে উঠলাম , একটি ফুটো , বাপের চোদ্দ জন্মেও শুনিনি মশাই " ।।
এবার বেশ হাঁসিমুখে ইন্সপেক্টর বললো , " আমিও কি শুনেছি কোনোদিন , তবে এইটাই তো উঠে আসছে , দেখলেন তো ।। এটা এত সহজ ব্যাপার নয় ।। ইতিহাসের পথে বর্তমানে ফিরতে হবে ।। এ তো চলতেই থাকবে , চলুন হাসপাতালে দেখি কি অবস্থা " , বলেই তিনি গাড়ি দিকে চলে গেলেন ।।
এদিকে সারাটা পথ আমার মাথায় ঘুরছে কোন সাপের একটি দাঁত আর তিনদিন পড়ে মরল কিকরে সৌমিক বাবু ? ওদিকে প্রিয়র অবস্থা নিয়ে একটা চিন্তা থেকেই যায় ।। গাড়িটি হঠাৎ ব্রেক কসায় হোসে ফিরলাম ।।
" চলুন , ভিতরে যাই " , গাড়ি থেকে নেমে ইন্সপেক্টর বললেন ।।
" হ্যাঁ , চলুন ..." ।।
ভিতরে কেমন একটা চুপচাপ ভাব ।। পুলিশের যে পাহারা ছিল সেও ঘুমাচ্ছে ।। নার্স , ডাক্তার সবাই চুপ ।।
" কি ব্যাপার বলুন তো ? এত চুপচাপ কেন ? কয়েকঘন্টা আগেও তো এরাম দেখে যায় নি ।। এই কিছুক্ষনে কি বিশাল ঝড় বয়ে গেল হাসপাতালে "?
"কিছুই তো বুঝতে পারছি না , আমি বললাম , চলুন তো প্রিয়র ওদিকটায় দেখি " ।।
" হ্যাঁ চলুন ", ইন্সপেক্টর বললেন ।।
দু পা এগিয়েছি একজন সিস্টার কে দেখলাম পড়ে আছে , পায়ে গুলি লেগেছে ।। আমি বললাম , " কি হয়েছে " ? কোন রকমে বললো , "দিদি .... হারিয়ে গেছে , কালো কাপড় বাঁধা কিছু লোক ...."।।
আমরা দৌড়ালাম আইসিইউর দিকে ।। আমার তো শরীর কাঁপছে ।। প্রচুর নিরীহ ডাক্তার , পেশেন্ট ও সিস্টার পড়ে আছে ।। কেউ আহত , কারুর গুলি লেগেছে আবার কেউ মারা গেছে ।। ডান দিকের বাঁক ঘুরেই থমকে দাঁড়ালাম ।। অন্ধকার আইসিইউ , বোমা ফেটেছে মনে হচ্ছে ।। দরজা উড়ে গেছে ।। কিন্তু এরাম অবস্থা আর বাইরের দিকটা পুরো স্বাভাবিক কেন ? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম কিন্তু মাথা খাটলো না ।।
কোন রকমে ভিতরে ঢুকলাম ।। আলো বলতে টর্চ আর সেই আলোতে দেখতে পেলাম প্রিয়র হাতের ঘড়ি ও চটি টা পড়ে আছে ।।
" হে ভগবান , প্রিয় ঠিক আছে তো ।। এত সাহসী মেয়ে , ওর যেন কিছু না হয় " , মাটি আঁকড়ে তখন আমার এই একটাই প্রার্থনা ।। পুলিশ কোন রকমে জায়গাটা খালি করল ।।
পর্ব ৫
কেমন যেন লাগছে ।। বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটাও দেখার ছিল ।। আর সবথেকে বড় প্রশ্ন হল প্রিয় র কি হয়েছে ? ও কিছুই টের পেল না ।। অত চালাক একটা মেয়ে এভাবে মুছে যেতে দিল নিজেকে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ।। নিজেই নিজেকে অনবরত বলে চলেছি , ওরে প্রিয় ফিরে আয় একবার , ফিরে আয় ।।
ইন্সপেক্টর কাছে এগিয়ে এলেন ।। তিনিও খুব আঘাত পেয়েছেন ব্যাপারটায় ।। কাঁধে হাত রেখে বললেন , " কথা দিচ্ছি এই কাজ যে বা যারা করেছে তাদের ছাড়ব না " ।। আমি তখন ওসব শোনার অবস্থায় নেই ।।
আমার ভেঙে পড়া অবস্থা দেখে ঠিক করা হল এখন থেকে আমি ইন্সপেক্টর এর সহযোগী হয়েই উনার বাড়িতে থাকব ।। যেখানেই থাকি , ভালবাসার টান , মন থেকে কি মুছে যাবে এত সহজে !!
" তোমার রাতের খাবার দেওয়া হয়েছে , খেয়ে নেবে চল ", ইন্সপেক্টর বললেন ।।
" না , ক্ষিদে নেই "--
"বুঝতে পারছি তোমার অবস্থা , কিন্তু না খেলে কি করে চলবে আর তাছাড়া আমরা তো আছি ...."
পটবর্ধান সাহেবের জেদাজেদিতে আর মানা করতে পারলাম না ।।
পরের দিন সকালে চোখ খুলতেই দেখি ইন্সপেক্টর দাঁড়িয়ে , মুখ ভরা হাঁসি , বললেন , " একটা ভাল খবর আছে , চলুন একবার বেড়াতে হবে " ।
" কোথায় আর কি খবর " , বেশ অবাক হয়ে আমি বললাম ।।
" চলুন না , যেতে যেতে বলছি " ---
ইন্সপেক্টর এর তাড়া খেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলাম ।। মুখ ধুয়ে , স্নান সেরে রেডি হয়ে নিলাম ।। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পটবর্ধান সাহেব বললেন , " চলুন কান ছেন দান গা একবার ঘুরে আসি " ।।
শুনে মুখটা লটকে গেল , এইজন্য এত তাড়া দিলেন বুঝি ; মনে মনে ভাবলেও একগাল হাসি নিয়ে গাড়িতে বসে রইলাম ।। গাড়ি এসে দাঁড়াল একটা ক্যাম্পের সামনে ।। মুখে মাফলার জড়ানো , জিন্স প্যান্ট ও লাল কোট পড়া এক ভদ্রলোক বসে সিগারেট টানছেন ।। মুখ সেরাম দেখতে পায়নি তবে ইন্সপেক্টর বললেন , " ইনি প্রিয়মবদাকে চেনেন ও জানেন কোথায় আছেন তাও জানেন .... তবে উনি বোবা তাই ইশারাই ভরসা " ।।
আমার কাছে এটাই বড় খবর যে আমার প্রিয় বেঁচে আছে ।। ও যে এত সহজে হার মেনে নেবে না এটা জানতাম ।।
আমি বললাম , " ও কোথায় এখন ? "
" এখুনি দেখা করবে না বলেছে , ইন্সপেক্টর বললেন , তবে সময় মত ঠিক সামনে আসবেন , আপাতত এই ববির কাছ থেকেই খবর আদান প্রদান চলবে , আর হ্যাঁ একটা চিঠি পাঠিয়েছে , লেখা আছে যে ও ভাল আছে আর কাজ যেন থেমে না থাকে ।। কাল ওই মাঠের চারপাশটা দেখে ববি কে রিপোর্ট করতে " .....
সান্ত্বনাময় ভাল খবর নিয়ে আজকের মত ফিরে এলাম দুজনে , সরি আর একটা প্রিয়র চিঠি ।।
পর্ব - ৬
সারা রাত ঠিক করে ঘুম হয়নি অনাদির ।। এটা ভেবে ভেবেই রাত কেটে যাচ্ছিল যে প্রিয়র কি হল ? কোথায় গেল হঠাৎ ? ববি কে ? বোমা বিস্ফোরণের সময় প্রিয় কোথায় ছিল ? হাজার হাজার প্রশ্ন , মাথায় ঘুরে চলেছে তার ।। ঘড়ির কাঁটা কখন যে ছয়ের ঘর ছুল বোঝাই গেল না ।। সকাল সকাল উঠে তৈরি হয়ে নিল সে ।। এবার বাকি দায়িত্ব তার ওপর , প্রিয় অনেক করেছে , তারও দায়িত্ব হয় কিছু করার ।।
ঠিক সাতটায় ইন্সপেক্টর এসে হাজির ।। নাইট ডিউটি সেরে ফিরেছেন সবে ।। তবে অনাদির অস্থিরতা দেখে বেশিক্ষন অপেক্ষা করলেন না ।। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন অনাদিবাবু কে নিয়ে নতুন এক মিশনের খোঁজে ।।
" আজ প্রথমে সৌমিক বাবুর বাড়িতে যাব , ওখান থেকে পুলিশ ল্যাবরেটরি আর সেখান থেকে বিকেল বেলা ..." ইন্সপেক্টর বাকিটা বলতেন , তার আগেই অনাদিবাবু পাস থেকে বলে উঠল , স্কর্পিও ....
"মাকড়সা , কোথায় !! " বলেই গাড়ির ব্রেক কষযেন ইন্সপেক্টর সাহেব ।।
" গাড়ি থামালেন কেন ? ওই কালো স্কর্পিও টার পিছু নিন , সেই নম্বর ... ৫৪দ১২৩৪ ।।"
"কোন গাড়ি ? কি ব্যাপার খুলে বলুন তো আমাকে ..." ইন্সপেক্টর অনাদিবাবু কে জিজ্ঞাসা করলেন ।।
অনাদিবাবু বেশ নার্ভাস লাগছিলেন ।। একটু থেমে বলতে শুরু করলেন ।।
" সেদিন যখন লাশ দেখতে আপনারা ব্যস্ত ছিলেন , আমি আর প্রিয় মাঠের পশ্চিম দিকে ঘুরছিলাম ।। সেই সময় এই কালো স্কর্পিও গাড়িটি রাস্তায় এসে দাঁড়ায় , দূর থেকে কিছু ছবি তোলে , গাড়ি থেকে একটা কালো কাপড় ফেলে চলে যায় ।। প্রিয় আমাকে ইশারা করে গাড়িটির নম্বর নোট করতে বলায় আমার কেমন সন্দেহ হয়েছিল বিষয় টায় ।। তারপর যখন হাসপাতালে সেদিন আপনার সাথে ফিরি এই গাড়িটি ওখানেও দাঁড়িয়ে ছিল ।।"
" এগুলো আরো আগে বলা উচিত ছিল ।। আজ কানছেন দান গা যাওয়া যাবে না ।। ওরা প্রিয় কে খুঁজছে আর তাই আমাকে ফলো করছে ।। চলুন , সোজা ল্যাবরেটরি যাওয়া যাক ।। আর গাড়ির নম্বরটা আমাকে দিন , খোঁজ নিয়ে দেখি সন্দেহটা ঠিক কি না "...
অনাদিবাবু হা করে থেকে বলে উঠল , আর ববি !!
ইন্সপেক্টর একটু মুচকি হেসে জবাব দিল , " প্রিয় যখন সঙ্গে আছে , ওর কিছু হবে না ।। বরং দুদিন মিশন টা বন্ধ থাকুক "।।
পর্ব - ৭
গাড়ি ঘুরিয়ে ওখান থেকে দুজনে হাজির হলেন পুলিশ ল্যাবরেটরি তে ।। শান্ত সুন্দর একটা জায়গা ।। দরজার সামনে একটা ফোন রাখা , সেটিতে ইন্সপেক্টর কি একটা নম্বর ডায়েল করে বলল হ্যালো পুলিশ ।। কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলে গেল ।। দুজনে হাজির হলেন কাঁচের রুমের ভিতরে ।। সামনে এনকোয়েরী , সেখানে একটি মেয়ে ( ২৫ / ২৬ বয়স হবে ) বসে রয়েছে ।। ইন্সপেক্টর পটবার্ধান বেশ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন , ডক্টর মিত্র কোথায় ? মহিলাটি একটি ঘরের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন আর দুইজন সেই পথে এগিয়ে চললেন ।।
ভিতরে ডাক্তার বাবু বসে কিছু লিখে চলেছেন সমানে ।। মনে হল একটা অংক কষছেন যেন ।। পটবার্ধান কে দেখেও যেন তাই দেখতে পেলেন না ।। তার সামনে চেয়ার টেনে দুজনে বসলাম ।। তারপর বেশ জোরে গলা খেখিয়ে ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন , আর ভাবতে হবে না ।। এবার মুখ খোল দেখি ।।
মাথা না তুলেই জবাব এল , কোন বিষয়ে ?
সাপ , ইন্সপেক্টর বললেন ।।
সে ল্যাবে থাকে , সেটা নিয়ে কি বলব ;মিত্র স্যার উত্তর দিলেন ; কিন্তু চোখ তখনও খাতার দিকে ।।
এবার বেশ রেগে গিয়ে ইন্সপেক্টর পটবার্ধান চিৎকার করে বলে উঠল , " চোখ ওপরে , মুখ ওপরে , আমার চোখে চোখ মিলিয়ে কথা বলুন ।। " এত জোর চিৎকার শুনে ডাক্তার খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল , " এত চ্যাচাস কেন ? কোন সাপ কামরায়নি ওকে ।। সরু কিছু শরীরে সজোরে মারা হয়েছে আর তাতে বিষ ছিল ।। সেই একই উপায়ে প্রিয়কেও মারার চেষ্টা করা হয় কিন্তু ওই যে বলেছিলাম বিষটা তিনদিন নিষ্ক্রিয় থাকে ।। তাই প্রিয়র কিছু হয় নি ।।"
এত কিছু শুনে বাড়ি ফিরছে যখন , তখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল , প্রিয়কে যদি সত্যি কিডন্যাপ করা হয় তাহলে তো তিনদিন ... এই প্রচন্ড ঠাণ্ডাতেও শরীরটা ঘামে ভিজে গেল মুহূর্তের মধ্যে ।।
আগামী তিনটে দিন ঘরে বসে বসেই কাটাতে হল ।। ইন্সপেক্টর সাহেবের হুকুম যতক্ষন না পরবর্তী নির্দেশ আসছে তার তরফ থেকে উনি যেন ঘর ছেড়ে কোথাও না বেরোই ।। তবু মন কিছুতেই মানছে না যে ।। অবশেষে কাউকে কিছু না বলেই কানছেন দান গা র দিকে রওনা দিল অনাদি বাবু ।। সামনের বাজার থেকে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় ।। সেখান থেকেই একটি গাড়ি নিয়ে সোজা রওনা দিলেন তিনি ।। ঘন্টা খানেকের পথ কিন্তু ড্রাইভার যা আস্তে ড্রাইভ করছে তিনি বেশ বুঝতে পারলেন যেতে অনেক সময় লাগবে ।। কিছু কিলোমিটার যাওয়ার পর গাড়িটি হঠাৎ ব্রেক কোষল এক জঙ্গলের মাঝে , সামনে রাস্তা বন্ধ ।। একটা বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা হয়েছে ।। গাড়ি থেকে নেমে গাছের গুঁড়িটি সরাতে যাবেন ড্রাইভার একটা গুলি চলার শব্দ হল ।। কিছু বোঝার আগেই গাড়িটি কিছু কালো মুখোশ পড়া লোক ঘিরে ধরল ও চেপে বসল ।। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঘুরিয়ে নিলেন ও চলতে শুরু করল ।। অনাদি বাবু যাতে উৎপাত না করেন তাই তাকে পিছনে সিটে বেঁধে ফেলে রাখা হল ।।
ওদিকে ইন্সপেক্টর অনাদি বাবুর ফোন না পেয়ে তার ঘরে উপস্থিত হল ।। সেখানেও তাকে দেখতে না পেয়ে কালুয়াকে তলব করা হয় ।।
" আমি জানি না , বাবু ।। কালুয়া বলল ,সকালে আমি আসি দশটার সময় , এসে দেখি বাবু নেই ।। ভাবলাম কোথাও বেরিয়েছে ।।"
" বেরিয়েছে !! বেশ অবাক হয়ে পটবার্ধান বলে উঠলেন , এতবার বারণ করা সত্বেও উনি কোথায় গেলেন যে আমাকেও বললেন না !! ওদিকে রাত থেকে শহরে ঝামেলা শুরু হয়েছে নতুন রাজ্য গঠনের দাবিতে ।। এদিকে অনাদি বাবু... উফ !! কি জ্বালা " ...
কালুয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন , বাবু ফিরে এলে আমাকে ফোন করতে বলিস ।। এটুকু বলে ইন্সপেক্টর বেরিয়ে গেলেন ।। একটি অন্ধকার বাড়ির সামনে ট্যাক্সিটা এসে দাঁড়াল ।। বাইরে থেকে মুখোশ পড়া একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এসে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করল , এনেছেন ? ড্রাইভার মাথা নেড়ে উত্তর দিতেই সামনের দরজা খুলে গেল ।। অজ্ঞান অনাদিবাবুর দেহটা দুজনে ভিতরে নিয়ে চলে গেল ।।
এদিকে দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে এল ।। বাবু বাড়ি ফিরছে না দেখে কালুয়া ইন্সপেক্টর কে ফোন করল ।।
" স্যার , কালুয়া বলছি ।। বাবু এখনো বাড়ি ফেরেন নি , খুব চিন্তা হচ্ছে ।। আপনি একটু দেখুন না ।। "
" হোয়াট !! " , ইন্সপেক্টর অবাক হয়ে রিসিভারটা নামিয়ে দিলেন ।।
পর্ব -৮
তখন রাত দুটো হবে ।। ইন্সপেক্টর তখনও থানায় বসে ।। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ।। ইন্সপেক্টর ফোনটা তুলতেই সেই চেনা গলায় ইন্সট্রাকশন ছুটে এল এপাশে ।। " আপনি যা ভাবছেন সেটাই ঠিক ।। কাল ভোর পাঁচটায় কান ছেন দান গা চলে আসুন ।। সঙ্গে একটা ড্রেস ।। ওদের আর বাড়তে দেওয়া চলে না ।।
" কিন্তু সারা দার্জিলিং জুড়ে যা পরিস্থিতি তাতে এখন .... " , ইন্সপেক্টর বেশ ভয়ে ভয়েই বলে উঠলেন ।।"
" চিন্তা করবেন না ।। আমার কাছে সব রিপোর্ট আছে ।। সৌমিক মুখুরজে হত্যা থেকে শুরু করে এখনও অবধি যা যা ঘটেছে সব একে অপরের সাথে ইন্টারলিংকড ।। তাই বলছি , কিছু ফোর্স , সিভিল ড্রেস এ আর আমার জন্য একটা ড্রেস নিয়ে চলে আসুন , ঠিক পাঁচটা ।। আর্মস আনবেন যথেষ্ট , বুঝেছেন ।। " ফোনের ওপাশ থেকে সেই চেনা কন্ঠস্বর বলে চললেন , " কালই এর যবনিকা পতন হয়ে যাক ।। এদের মাফ করা চলে না ।। "
ইন্সপেক্টর সম্মতি জানিয়ে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন ।। তার মুখ দেখে মনে হল মুখ জুড়ে একটা আনন্দের ছাপ আবার উৎকণ্ঠাও প্রবল ।। কিন্তু এসবের মাঝেও একটাই প্রশ্ন , প্রিয় সব জানলো কি করে !! কোথায় ছিল সে এতদিন তাহলে !! ববি তাহলে কে !!
কথা মত পরের দিন ভোর পাঁচটায় ইন্সপেক্টর পটবার্ধান সিভিল ড্রেসে কিছু ফোর্স , একটা ড্রেস নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় হাজির হলেন ।। কিন্ত অবাক কান্ড !! সেখানে তো কেউ নেই !! প্রায় মিনিট পনেরো অপেক্ষার পর একটা চেনা মুখ হাজির হল ।। " আরে প্রিয়মবদা যে !! " , ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন , " কোথায় ছিলেন এতদিন ? ঠিক আছেন তো ?
" ঠিক আছি কি না দেখতেই পাচ্ছেন ।। এখন কথা না বাড়িয়ে গাড়ি ঘোড়ান , ওরা ডুয়ার্সের দিকে রওনা দিয়েছে ।। আমার কাছে সব খবর আছে ।। " , প্রিয় বলে উঠল ।।
ইন্সপেক্টর বেশ চমকে উঠকে , ভ্রু কুচকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ।।
" ফাস্ট , ফাস্ট " , চেঁচিয়ে উঠল প্রিয় ।। " শুয়োর গুলো কে পালাতে দিলে চলবে না " .... এদিকে সমগ্র পাহাড় জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে ।। গুলি , বারুদে মোড়া শহরের মধ্যে দিয়েই গাড়ি ছুটছে ।। হটাৎ পাহাড়ের একটা বাঁক ঘুরে প্রিয়র নির্দেশ , " সামনে দেখুন , সেই কালো গাড়িটা ।। " হঠাৎ সামনে থেকে গুলি ছুটে এল , জবাবে এপাশ থেকেও গুলি চলতে শুরু করল ।। প্রায় ঘন্টা খানেক এই ভাবে লড়াই চলার পর কালো গাড়িটা একটা পাহাড়ের গা ঘেষে হঠাৎ থেমে গেল ।। সবাই অবাক !! পুলিশের গাড়িটি যখন তাদের ঘেরাও করেছে তখন গাড়িতে শুধু ড্রাইভার আর অনাদিবাবু বেঁচে ।। বাকি সবাই মৃত ।।
" কি , চিনতে পারলেন ড্রাইভার কে ? " প্রিয়র প্রশ্ন ইন্সপেক্টর পটবার্ধান এর উদ্দেশ্যে ....
ইন্সপেক্টর অবাক চোখে তাকিয়ে , শুধু কয়েকটি শব্দ বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে , " আপনি ধন্য মিস প্রিয়মবদা ।। ও যে আপনার লোক বুঝতেই পারি নি আমরা কেউ " ।। এরই মধ্যে কালুয়া আর অনাদিবাবু গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে ।। প্রিয়মবদা তেমন কিছুই বলল না আর শুধু একটা কথা , " সবাই তাই তো প্রিয় হয় না ইন্সপেক্টর " ।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পবিত্র চক্রবর্তী ১৬/০৪/২০১৮অসাধারন হয়েছে
-
লিখন মাহমুদ ১৪/০৪/২০১৮অসাধারণ!!!
শুভ নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ!
বাংলা নববর্ষ আমাদের জন্য বয়ে আনুক সুখ−শান্তি−সমৃদ্ধি।