www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিসর্জন

আজ সকাল থেকে মনটা বড্ড খারাপ। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। না, শরীর আমার ঠিকই আছে। আরে বাবা, বলছি তো, কারোর সঙ্গে ঝগড়া হয় নি। তাও মনটা খারাপ কেন? কেন আবার? আজ যে বিজয়া। মায়ের বিসর্জন। মা, আজ চারদিনের আনন্দ উদযাপনের পর ফিরে যাবেন নীলকণ্ঠের কাছে। নীলকণ্ঠ পাখী! সে তো উড়ে যাচ্ছে দূত হয়ে মায়ের প্রত্যাবর্তনের খবর নিয়ে।
পাশের বাড়ীতে একটা ফুটফুটে মেয়ে। বয়েস বছর দুয়েক। আধো আধো কথা বলতে শিখেছে। ছোটো বলে, দূরের ঠাকুর দেখা হয় নি তার। পাড়ার ঠাকুরটাকেই সকাল-দুপুর-সন্ধ্যেয় দিদার সঙ্গে গিয়ে দেখে। দিদা, তাকে ঠাকুর দেখিয়ে বলেন,নমো কর। চিকন হাত দুটো জোড়ো করে সে বলে, “নমো।”
আজ দুটো শব্দ একসঙ্গে বলতে শিখেছে-“ থুভ বিদয়া।” প্যান্ডেলে যার সঙ্গেই দেখা হয় তাকেই বলে, “নমো, থুভ বিদয়া।”
সিঁদুর খেলা চলছে। চলছে ঢাক আর মাইকের বাজনা সঙ্গে উদ্দাম নাচ। সাঙ্গ হলে প্রতিবারের মতো এবারো পাড়াটা ঘুরিয়ে বিসর্জনে যাবো - গঙ্গায়।তাই বললুম তার দিদাকে, “ চলুন, নাতনিটাকে নিয়ে বিসর্জন দেখে আসি।”
তিনি বললেন, “ যেতে তো ইচ্ছে হয়ই। কিন্তু, নাতনিটা যে বড্ড দুষ্টু। আর তাছাড়া, মায়ের যখন নদীতে ভাসান দেওয়া হয়-তখন ডুবন্ত মায়ের মুখটা- একদম দেখতে পারি না।”
বললুম, “ অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে নেবেন।দেখবেন না। আর তাছাড়া মা তো কৈলাসে যাবেন।”
- “তা ঠিক, কৈ – লাশই বটে! ওই দেখুন না! লরিতে ওঠার আগেই সব অস্ত্রশস্ত্র উধাও। মায়ের অমন সুন্দর মুখটা সন্দেশের কারখানা হয়ে গেছে। সিঁদুরের ঠেলায় মাথাটা মনে হয় রক্তে ভাসছে। রাস্তায় যেতে যেতে মা, আস্ত থাকলে হয়! যাই হোক, আপনি বলছেন যখন, আপনার ভরসাতেই নাতনিটাকে নিয়ে যাব।”
অবশেষে, বাবুঘাটে যখন পৌঁছুলুম, তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। আমি, দিদা আর নাতনি নিরাপদ দূরত্বে একটা উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। কুলীরা ও আমাদের পাড়ার কয়েকজন মিলে সাতবার ঘোরালো মাকে। তারপর, গঙ্গার ঘাটের দিকে মাকে নিয়ে সবাই চলল বিসর্জনের জন্য। আস্তে আস্তে সবাই মিলে মাকে ফেলল জলে। যথারীতি, দিদার চোখ বন্ধ। দেখলুম, চোখের সামনেই একটু একটু করে মায়ের গঙ্গাপ্রাপ্তি। সত্যিই বড় কষ্টের। এ যেন নশ্বর দেহটা পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেল। হঠাৎ শুনলুম, নাতনি বলছে, “ ঠাকুল, আমাল ঠাকুল।”
চোখ বন্ধ করেই দিদার উত্তর, “ওরে ঠাকুর চলে গেছেন, কৈলাসে- শ্বশুরবাড়িতে।”
- “না দিদুন, ও, ঠাকুল নিল।”
- “আরে সব শেষ। কে, আর কিই বা নেবে?”
- “আমাল ঠাকুল, তুই দেখ।”
দেখলাম, একটা ছেলে নদী থেকে ঠাকুরের কাঠামোটা নিয়ে উঠে আসছে।
আর তখনই কানে এলো, “আসছে বছর, আবার হবে।”
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১২৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৯/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সাঁঝের তারা ০১/১০/২০১৭
    চমৎকার ...
  • ন্যান্সি দেওয়ান ০১/১০/২০১৭
    Darun...
  • কে বলেছে বিসর্জন?
    একটি বার বলো
    দেবীতো আসবে পরের বছর
    প্রতিশ্রুতি দিলো।
  • আজাদ আলী ৩০/০৯/২০১৭
    Very nice writing sir. Suv bijaya
  • মধু মঙ্গল সিনহা ৩০/০৯/২০১৭
    ভালো লাগল।।
  • Tanju H ৩০/০৯/২০১৭
    সুন্দর লিখেছেন লেখক।।
 
Quantcast