মডেল
পরীক্ষার দিন সকাল। মুখুজ্জে বাড়ীতে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। ক্লাস নাইনে পড়া একমাত্র মেয়ে মেঘার ক্লাস টেস্ট বলে কথা- তায় আবার অংক পরীক্ষা। আটটা বাজে, এখনো সে ঘুমুচ্ছে। মুখুজ্জে গিন্নী রান্নাঘরে ব্যস্ত এবং একই সঙ্গে তারস্বরে হেঁকে চলেছেন ‘মেঘা’ ‘মেঘা’ বলে। হাঁক ডাকে কাজ না হওয়ায়, এইবার এই বলে হুমকি দিলেন-এবার যদি সে ঘুম থেকে না ওঠে তাহলে খুন্তির ব্যবহার আর কড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। মুখুজ্জেবাবু দাড়ি কাটার জন্য একগাল সাবান লাগিয়েছেন। অগত্যা তাঁকেই আসরে নামতে হল।
‘মেঘা’ ও ‘মেঘা’- ওঠ মা এবার!
-‘উঠছি বাবা- আর দু মিনিট’- বলেই আবার লেপের ভেতর। যেমন করে একটা খরগোশ তার গুহায় সেঁধিয়ে যায় - ঠিক তেমন করে।
‘না এক্ষুনি উঠতে হবে’- বলে লেপ সরিয়ে, সাবান সমেত দাড়িটা বুলিয়ে দিলেন মেঘার মুখে- সে এই গন্ধটা বড্ড ভালবাসে- বাবাকে জড়িয়ে ধরে তৎক্ষণাৎ উঠে পড়ল।
-‘চল, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, রিক্সায় যেতে যেতে একটা গল্প বলব’।
গল্প শোনার নামে সে এক পায়ে খাড়া। রিক্সায় উঠেই গল্পের জন্য ফরমায়েশ- এবং বাবার গল্প শুরু।
‘এই যে তুই পড়াশোনা করতে চাস না- মায়ের কাছে নিত্যি নিত্যি মার খাস- জানিস মেয়েদের শিক্ষা পাওয়ার- এই স্বাধীনতা সবাই পায় না’।
-‘জানি এবার তুমি লেকচার দেবে – রামমোহন- বিদ্যাসাগর…’।
-‘না রে, আমি আজ বলব তোর মতো একটা মেয়ের অসীম সাহসের কথা- জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের কথা। পাহাড়ি এক দেশ- যেখানে পাহাড়ের চুড়ো সাদা বরফে ঢাকা- নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে নীল জলের নদী। আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ গালিচায় মোড়া ক্ষেত-তার পসরা সাজিয়ে রেখেছে। এরকম এক নদী উপত্যকায়- বেগবতী নদীর মতো কলকল করে ইস্কুলের পথে চলেছে তোর মত এক মেয়ে। যদিও ইস্কুল বাড়ী থেকে মোটে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ- তবু, তাকে অন্য মেয়েদের সঙ্গে স্কুল বাসে যেতে হয় একদল দুষ্টু লোকের ভয়ে। তারা চায় না মেয়েরা পড়াশোনা করে স্বাধীন হোক। মেয়েরা খালি সন্তান উৎপাদন করুক- ঘরকন্না সামলাক- এটাই তারা চায়। – বড় হয়ে কি হবি?-
-‘কেন? মডেল- র্যাম্পে হাঁটব’।
-‘আরে বাবা আমি তোর কথা বলছি না। তাদেরকে এই একই প্রশ্ন করলে মনে মনে তারা তোর মত মডেল হওয়ার কথা ভাবত। কিন্তু,মুখ ফুটে সে কথা বলার জো নেই। তাই তাদের মুখে বলতে হত ডাক্তার অথবা শিক্ষিকা হব। এই রকম আতঙ্কের পরিবেশে নারীশিক্ষার প্রচার নিয়ে লিখতে বলার জন্য যখন কেউ ভয়ে এগিয়ে এল না, তখন সে এগিয়ে এল লেখার জন্য। তার বাবাও অসীম সাহস নিয়ে মেয়ের এই কাজে সর্বতোভাবে সাহায্য করলেন। Gul Makai- এই ছদ্মনামে সে প্রচার চালাতে লাগলো। তবুও শেষ রক্ষা হল না। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে বাস থামিয়ে একটা লোক সেই মেয়েটার মাথায় পরপর তিন তিনটে গুলি করলো। কিন্তু, আশ্চর্যজনক ভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পর সে বেঁচে ফিরল এবং মাত্র ষোলো বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার লাভ করলো। মেয়েটার নাম হোলো-
-‘বাবা আমি বলি, আমি কিন্তু মডেল হব, আর আমার রোল মডেল- নোবেল লরিয়েট Malala Yousafzai নয়- ছোট্ট জেদি মেয়ে-Gul Makai’।
‘মেঘা’ ও ‘মেঘা’- ওঠ মা এবার!
-‘উঠছি বাবা- আর দু মিনিট’- বলেই আবার লেপের ভেতর। যেমন করে একটা খরগোশ তার গুহায় সেঁধিয়ে যায় - ঠিক তেমন করে।
‘না এক্ষুনি উঠতে হবে’- বলে লেপ সরিয়ে, সাবান সমেত দাড়িটা বুলিয়ে দিলেন মেঘার মুখে- সে এই গন্ধটা বড্ড ভালবাসে- বাবাকে জড়িয়ে ধরে তৎক্ষণাৎ উঠে পড়ল।
-‘চল, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, রিক্সায় যেতে যেতে একটা গল্প বলব’।
গল্প শোনার নামে সে এক পায়ে খাড়া। রিক্সায় উঠেই গল্পের জন্য ফরমায়েশ- এবং বাবার গল্প শুরু।
‘এই যে তুই পড়াশোনা করতে চাস না- মায়ের কাছে নিত্যি নিত্যি মার খাস- জানিস মেয়েদের শিক্ষা পাওয়ার- এই স্বাধীনতা সবাই পায় না’।
-‘জানি এবার তুমি লেকচার দেবে – রামমোহন- বিদ্যাসাগর…’।
-‘না রে, আমি আজ বলব তোর মতো একটা মেয়ের অসীম সাহসের কথা- জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের কথা। পাহাড়ি এক দেশ- যেখানে পাহাড়ের চুড়ো সাদা বরফে ঢাকা- নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে নীল জলের নদী। আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ গালিচায় মোড়া ক্ষেত-তার পসরা সাজিয়ে রেখেছে। এরকম এক নদী উপত্যকায়- বেগবতী নদীর মতো কলকল করে ইস্কুলের পথে চলেছে তোর মত এক মেয়ে। যদিও ইস্কুল বাড়ী থেকে মোটে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ- তবু, তাকে অন্য মেয়েদের সঙ্গে স্কুল বাসে যেতে হয় একদল দুষ্টু লোকের ভয়ে। তারা চায় না মেয়েরা পড়াশোনা করে স্বাধীন হোক। মেয়েরা খালি সন্তান উৎপাদন করুক- ঘরকন্না সামলাক- এটাই তারা চায়। – বড় হয়ে কি হবি?-
-‘কেন? মডেল- র্যাম্পে হাঁটব’।
-‘আরে বাবা আমি তোর কথা বলছি না। তাদেরকে এই একই প্রশ্ন করলে মনে মনে তারা তোর মত মডেল হওয়ার কথা ভাবত। কিন্তু,মুখ ফুটে সে কথা বলার জো নেই। তাই তাদের মুখে বলতে হত ডাক্তার অথবা শিক্ষিকা হব। এই রকম আতঙ্কের পরিবেশে নারীশিক্ষার প্রচার নিয়ে লিখতে বলার জন্য যখন কেউ ভয়ে এগিয়ে এল না, তখন সে এগিয়ে এল লেখার জন্য। তার বাবাও অসীম সাহস নিয়ে মেয়ের এই কাজে সর্বতোভাবে সাহায্য করলেন। Gul Makai- এই ছদ্মনামে সে প্রচার চালাতে লাগলো। তবুও শেষ রক্ষা হল না। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে বাস থামিয়ে একটা লোক সেই মেয়েটার মাথায় পরপর তিন তিনটে গুলি করলো। কিন্তু, আশ্চর্যজনক ভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পর সে বেঁচে ফিরল এবং মাত্র ষোলো বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার লাভ করলো। মেয়েটার নাম হোলো-
-‘বাবা আমি বলি, আমি কিন্তু মডেল হব, আর আমার রোল মডেল- নোবেল লরিয়েট Malala Yousafzai নয়- ছোট্ট জেদি মেয়ে-Gul Makai’।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আসাদুজ্জামান নূর ১২/০৮/২০১৭valoi
-
ধ্রুবক ০৯/০৮/২০১৭ভালো লেখা।
-
আবু সাইদ লিপু ০৮/০৮/২০১৭ভাল
-
সাঁঝের তারা ০৫/০৮/২০১৭ভাল