কুন্তী-নিবারণ (সংবাদ)
এক জন অন্ধ, অন্য জন মানসিক ভারসাম্যহীন। এক জন অসমের একটি শহরের বস্তির বাসিন্দা। অন্য জনের সাকিন ছিল অরুণাচলপ্রদেশের পাহাড়ি গ্রাম। কিন্তু, দৈব ফেরে তাঁরা এখন সুখী দম্পতি। আট বছর ধরে কুন্তী-নিবারণকে কেউ কখনও আলাদা দেখেননি। দাম্পত্য কলহ বা বধু নির্যাতনের ঘটনা শুনে ক্লান্ত মনাছড়ার বাসিন্দার কাছে বড় আপন ওই দম্পতি।বিয়ে যে দৈব-বন্ধন ওঁরা দু’জন তার নজির!
মনাছড়া এলাকার পুরনো বাসিন্দা রবিদাস পরিবার।মুন্সা রবিদাস ও তাঁর স্ত্রী পার্বতীর ছেলে নিবারণ ছোটবেলা থেকেই ভবঘুরে। বড় হতেই তাঁর চোখে সমস্যা দেখা দেয়। ছেলের উন্নত চিকিৎসার সাধ্য গরিব বাবা-মায়ের ছিল না। ক্রমে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে নিবারণ। প্রতিবেশী অভিমুন্য নুনিয়া জানান, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পথে-পথে ঘুরে ভিক্ষা করে দিন কাটাতেন নিবারণবাবু। সাত পুরুষের বাসিন্দা হওয়ায় এলাকার সকলেই তাঁকে চেনেন। বিয়ের শখ ষোলো আনা থাকলেও ভবঘুরে অন্ধ পাত্রের জন্য পাত্রী বাছাইয়ের মানুষ মেলেনি। সকলের সহানুভূতিতে দু’বেলা খাওয়া জুটে যাচ্ছিল।
একঘেয়ে, অন্ধকার জীবনে আচমকাই রোশনাই আসে আট বছর আগে!
পথ ভুলে কোনও ভাবে মনাছড়া স্টেশনে চলে এসেছিলেন এক তরুণী। স্থানীয় সূত্রে খবর, জড়বুদ্ধি কুন্তীদেবী কোনও মতে নিজের নামটুকু বলতে পেরেছিলেন। বাড়ির ঠিকানা তিনি ঠিকমতো দিতে পারেননি। গ্রামবাসীরা শুধু জেনেছিলেন, কুন্তীদেবী অরুণাচলের বাসিন্দা। এলাকাবাসীই তাঁর আশ্রয় খুঁজে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন। কুন্তীকে দেখার পরই, নিবারণের পড়শি মনাছড়া বাগানের পদ্মামাসির ঘটকালি করার ইচ্ছা হয়। তিনিই গ্রামের কয়েক জনের সঙ্গে আলোচনা করে কুন্তী-নিবারণের সম্বন্ধ পাকা করে ফেলেন। ২০০৭ সালে, স্থানীয় মন্দিরে অগ্নিসাক্ষী করে দু’জনের বিয়ে হয়ে যায়।
তার পর কেটে গিয়েছে আট বছর। গ্রামবাসীরা মনেই করতে পারেন না কুন্তী-নিবারণকে কখনও আলাদা দেখেছেন কি না। একটি দিনের জন্যও কেউ কাউকে ছেড়ে থাকেনি। একে অন্যের হাত ধরে জাতীয় সড়ক বরাবর হেঁটে যাওয়া কুন্তী-নিবারণ মনাছড়ার চেনা ছবি। ভিক্ষে চাওয়ার ফাঁকে, চেনা দোকানে খানিক জিরিয়ে নেন ওই দম্পতি। ফের হাঁটা শুরু।
কুন্তিদেবী বলেন, ‘‘বর চোখে দেখে না। কখন কী হয়ে যায়। তাই কখনও ওকে চোখের আড়াল করি না। হাত ধরে থাকি।’’ অমলিন গলায় কুন্তি জানান, তাঁদের নামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের অধীনে ঘর বরাদ্দ করা হলেও তা এখনও হাতে পাননি তাঁরা। তবু দুঃখ নেই। মনাছড়ার বস্তিতে নিশ্চিন্ত জীবন কাটছে। নিবারণবাবুর কথায়, ‘‘প্রতি দিন সকালে আমরা হাতে হাত ধরে বেরিয়ে পড়ি। দিনশেষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা রোজগার হয়েই যায়। আর কী চাই?’’ আট বছরের দাম্পত্যে ঝগড়া বা মন কষাকষির কোনও ঘটনা মনেই করতে পারলেন না তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা কুটি মিঞা লস্কর বলেন, ‘‘চার দিকে কেবল ঝগড়া, বিচ্ছেদ, মারামারির ঘটনা কানে আসে। কোনও সংসারে শান্তি নেই। টাকা দিয়ে বিলাস কেনা গেলেও সংসারে শান্তি কেনা সম্ভব নয়। সেই অবস্থায় এই রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে, দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটিয়েও কী ভাবে নির্ঝঞ্ধাট জীবন কাটাতে পারে কোনও দম্পতি তা কুন্তী-নিবারণকে দেখে শিখতে হয়। সব সময় হাসি-খুশি থাকে ওঁরা।’’
কিন্তু, দাবিহীন জীবনে নেই-নেই করেও একটি ইচ্ছে পুষে রেখেছেন নিবারণবাবু। তাঁর স্বপ্ন একটি সন্তানের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনের জীবনে অসম্পূর্ণতা অনেক। বড় সাধ হয়, নিজেদের ফুটফুটে, স্বাভাবিক একটি সন্তান হবে। তার মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকবে, পূর্ণতা পাবে আমাদের এই ভালবাসার গল্পটা।’’ কেবল কুন্তী-নিবারণ নন, আজ গোটা মনাছড়াই তাঁদের সেই সাধের শরিক।
News @ Manchhara / Hailakandi / Assam / Anandabazar Patrika
মনাছড়া এলাকার পুরনো বাসিন্দা রবিদাস পরিবার।মুন্সা রবিদাস ও তাঁর স্ত্রী পার্বতীর ছেলে নিবারণ ছোটবেলা থেকেই ভবঘুরে। বড় হতেই তাঁর চোখে সমস্যা দেখা দেয়। ছেলের উন্নত চিকিৎসার সাধ্য গরিব বাবা-মায়ের ছিল না। ক্রমে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে নিবারণ। প্রতিবেশী অভিমুন্য নুনিয়া জানান, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পথে-পথে ঘুরে ভিক্ষা করে দিন কাটাতেন নিবারণবাবু। সাত পুরুষের বাসিন্দা হওয়ায় এলাকার সকলেই তাঁকে চেনেন। বিয়ের শখ ষোলো আনা থাকলেও ভবঘুরে অন্ধ পাত্রের জন্য পাত্রী বাছাইয়ের মানুষ মেলেনি। সকলের সহানুভূতিতে দু’বেলা খাওয়া জুটে যাচ্ছিল।
একঘেয়ে, অন্ধকার জীবনে আচমকাই রোশনাই আসে আট বছর আগে!
পথ ভুলে কোনও ভাবে মনাছড়া স্টেশনে চলে এসেছিলেন এক তরুণী। স্থানীয় সূত্রে খবর, জড়বুদ্ধি কুন্তীদেবী কোনও মতে নিজের নামটুকু বলতে পেরেছিলেন। বাড়ির ঠিকানা তিনি ঠিকমতো দিতে পারেননি। গ্রামবাসীরা শুধু জেনেছিলেন, কুন্তীদেবী অরুণাচলের বাসিন্দা। এলাকাবাসীই তাঁর আশ্রয় খুঁজে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন। কুন্তীকে দেখার পরই, নিবারণের পড়শি মনাছড়া বাগানের পদ্মামাসির ঘটকালি করার ইচ্ছা হয়। তিনিই গ্রামের কয়েক জনের সঙ্গে আলোচনা করে কুন্তী-নিবারণের সম্বন্ধ পাকা করে ফেলেন। ২০০৭ সালে, স্থানীয় মন্দিরে অগ্নিসাক্ষী করে দু’জনের বিয়ে হয়ে যায়।
তার পর কেটে গিয়েছে আট বছর। গ্রামবাসীরা মনেই করতে পারেন না কুন্তী-নিবারণকে কখনও আলাদা দেখেছেন কি না। একটি দিনের জন্যও কেউ কাউকে ছেড়ে থাকেনি। একে অন্যের হাত ধরে জাতীয় সড়ক বরাবর হেঁটে যাওয়া কুন্তী-নিবারণ মনাছড়ার চেনা ছবি। ভিক্ষে চাওয়ার ফাঁকে, চেনা দোকানে খানিক জিরিয়ে নেন ওই দম্পতি। ফের হাঁটা শুরু।
কুন্তিদেবী বলেন, ‘‘বর চোখে দেখে না। কখন কী হয়ে যায়। তাই কখনও ওকে চোখের আড়াল করি না। হাত ধরে থাকি।’’ অমলিন গলায় কুন্তি জানান, তাঁদের নামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের অধীনে ঘর বরাদ্দ করা হলেও তা এখনও হাতে পাননি তাঁরা। তবু দুঃখ নেই। মনাছড়ার বস্তিতে নিশ্চিন্ত জীবন কাটছে। নিবারণবাবুর কথায়, ‘‘প্রতি দিন সকালে আমরা হাতে হাত ধরে বেরিয়ে পড়ি। দিনশেষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা রোজগার হয়েই যায়। আর কী চাই?’’ আট বছরের দাম্পত্যে ঝগড়া বা মন কষাকষির কোনও ঘটনা মনেই করতে পারলেন না তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা কুটি মিঞা লস্কর বলেন, ‘‘চার দিকে কেবল ঝগড়া, বিচ্ছেদ, মারামারির ঘটনা কানে আসে। কোনও সংসারে শান্তি নেই। টাকা দিয়ে বিলাস কেনা গেলেও সংসারে শান্তি কেনা সম্ভব নয়। সেই অবস্থায় এই রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে, দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটিয়েও কী ভাবে নির্ঝঞ্ধাট জীবন কাটাতে পারে কোনও দম্পতি তা কুন্তী-নিবারণকে দেখে শিখতে হয়। সব সময় হাসি-খুশি থাকে ওঁরা।’’
কিন্তু, দাবিহীন জীবনে নেই-নেই করেও একটি ইচ্ছে পুষে রেখেছেন নিবারণবাবু। তাঁর স্বপ্ন একটি সন্তানের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনের জীবনে অসম্পূর্ণতা অনেক। বড় সাধ হয়, নিজেদের ফুটফুটে, স্বাভাবিক একটি সন্তান হবে। তার মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকবে, পূর্ণতা পাবে আমাদের এই ভালবাসার গল্পটা।’’ কেবল কুন্তী-নিবারণ নন, আজ গোটা মনাছড়াই তাঁদের সেই সাধের শরিক।
News @ Manchhara / Hailakandi / Assam / Anandabazar Patrika
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরিতোষ ভৌমিক ২ ২৫/১১/২০১৫এ সংবাদ সভ্য সমাজের কাছে দুঃসংবাদ হবে কেননা তারা সুখ কাকে বলে চেনেই না !
-
দীপঙ্কর বেরা ০৪/১১/২০১৫বাহ
বেশ -
মোঃনাজমুল হাসান ২৯/১০/২০১৫বিয়ে মানে সন্ধি
দুজনাতে যুগলবন্দি,
বিয়ে মানে হাতে রেখে হাত;
কেটে যাক জীবনের বাকিটা প্রভাত।
ভালো লাগলো। কবিকে আমার ব্লগে আমন্ত্রণ জানাই।