কমলার শেষ আশা (২য় খন্ড)
প্রথম অংশের পর ....
ইতিমধ্যে রুমেলার শাশুড়ি দেশ থেকে এসেছে প্রায় একমাস হতে চলল । মাসের শেষদিন যত এগিয়ে আসছে রুমেলার মন খারাপ হয়ে আসছে। কারণ মাসের শেষে জমানো টাকার পরিমান কমে আসছে । একদিন অফিস থেকে ফেরার পর সুশোভনকে রুমেলা বলল মা তো একমাস হতে চলল এসেছে এবার বাড়ি পাঠিয়ে দাও, আমি সব শিখে নিয়েছি - বাবুসোনাকে সামলে নেব । সুশোভন বলল মাতো এই এসেছে ক'দিন হলো মাত্র, থাকুক এবছর । বললো; বাবুসোনা একবছর হলে চন্দনেশ্বরে গিয়ে মুন্ডন করে আসবো আর মাকে দেশে রেখে আসবো । সেদিনের রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু রুমেলার আর ঘুম হয়নি । মাকে ফোন করা হয়নি শাশুড়িমা সব সময় কাছে কাছে থাকে । ছোট্ট ফ্লাট । কি করবে ভেবে ভেবে সারারাত ঘুম হলো না । এতে রুমেলার মুখটা একটু শুকনো দেখালো । সকালে সুশোভন অফিসে চলে গেল । রুমেলা কিছু না খেয়ে তার শোয়ার রুমে শুয়ে থাকল । কমলাদেবী সারাদিন বৌমাকে খাওয়ার জন্য ডেকে ডেকে একাও খেতে পারেনি, তাই কিছু খায়নি । সন্ধ্যায় সুশোভন অফিস থেকে ফিরতে মা সব জানায় । এতে বৌমারানী আরো রেগে যায় মনে মনে, ভাবে আমার আগে আমার স্বামীকে কেন জানালো আমার না খাওয়ার কথা । রাগে ফুলতে থাকে ভেতরে ভেতরে । কাউকে কিছু বলে না । সুশোভন অনেক অনুরোধ করলো কিছু মুখে দিতে, কিন্তু রুমেলা পালঙ্কের খুঁটি ধরে যেইরকম বসে ছিল ঠিক তেমনি ভাবে বসে রইলো । শেষে মা আর ছেলে দুজনে সামান্য খাওয়ার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল । রাতে শুধু সুশোভনকে রুমেলা বলল মাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দাও । সুশোভন বলল সে আমি পারব না । আমার মা আমার কাছে থাকবে নাতো কোথায় থাকবে । সে আমি পাঠাতে পারব না । পরের দিন সুশোভন রুমেলাকে খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করে অফিসে চলে গেল । রুমেলা ও সারাদিন না খেয়ে থাকে আর কমলাদেবী ও দিনের বেলা না খেয়ে থাকে । রাতেও গত রাতের মত অনেক অনুরোধ বিরোধ চলল । কেউ কারুর কথা শুনলো না ।
ঠিক একই ভাবে তিন দিন চলতে থাকলো । রুমেলা সারাদিন তার শোয়ারঘর বন্ধ রাখে শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে না । তিনদিন পরে সুশোভনকে তার মা বলল; বাবু - বৌমা কেন এমন করছে । তিনদিন না খেয়ে কার উপর রাগ করে আছে । সুশোভন প্রথমে বলতে চাইছিল না, পরে মায়ের অনেক অনুরোধে সে বলল সব । কথাটা শোনার পর তার মা কোনো দেরী না করে বলল; বাবা আমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা কর । আমি আর এখানে একটা দিনও থাকব না । আমি থাকলে বৌমা না খেয়ে মরে যাবে । সকলে বলবে আমি বৌমাকে নিয়ে ঘর করতে পারিনি । তুমি তাড়াতাড়ি আমার টিকিট কেটে দাও আমি চলে যাব ।
তত্কালের টিকিট পাওয়া গেল । ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে শুনে রুমেলা ও দরজা খুলে দিব্যি খোশ মেজাজে শাশুড়ির সাথে রান্না চড়াল । বড় বড় মাছ আনতে সকালে সুশোভনকে বাজারে পাঠালো । ভালো ভালো রান্না করে তার শাশুড়িমাকে খাওয়াল এবং নিজেও খেল । ট্রেনে উঠানোর সময় সুশোভন স্টেশনে এসেছিল । মা ও ছেলে বেশ কান্নাকাটি করলো স্টেশনে । ট্রেন ছাড়ার সময় টাটা বাই বাই হলো । চোখের জলে রুমালগুলো সবার ভিজে গেছে । ট্রেনে খাওয়ার জন্য বৌমা অনেক খাবার প্যাক করে দিয়েছিল । পরোটা, কষা মুরগি মাংস, ডিম সেদ্ধ, শসা, এবং কাতলা মাছের পেটি ভাজা কয়েকটা । ট্রেনের সফরটা শুধু চিন্তা করতে করতে কেটে গেল খাওয়ার সময় হয়নি কমলাদেবীর । সবসময় ওদের কথা মনে পড়ত। খড়গপুরে ট্রেন থেকে নামার সময় সব খাবার গুলো ভিখারীদের দিয়ে দিল। তারপর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর আর বৌমা আর নাতির সাথে দেখা হয়নি কমলাদেবীর ।
প্রতি দু বছর অন্তর রুমেলারা কলকাতায় তার মায়ের কাছে বেড়াতে আসে কিন্তু গ্রামের বাড়িতে আর আসেনা । রুমেলা বলে গ্রামে আলো নেই, স্নান করার ভালো জল নেই আর ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বাবু সোনা কষ্ট পাবে । তাই ওখানে গিয়ে কষ্ট করে সময় নষ্ট করার সময় নেই । সুশোভন বিদেশে ট্রেনিং এ গিয়েছিল তিন বছর । তখন রুমেলারা কলকাতায় ছিল । বিদেশ থেকে আসায় কোম্পানি প্রমোশন দিয়েছে । একেবারে জেনারেল ম্যানেজার । ছুটিতে ওরা বিদেশে ভ্রমন করে । কেননা গ্রামে বেড়ালে খরচ কোম্পানি দেবেনা । তাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, কানাডা সব ঘুরে এসেছে । কিন্তু গ্রামে ঘোরা হয়ে উঠেনি তাদের ।
মা কেঁদে কেঁদে অনেক আশা করে আছে এ বছর আমার খোকা আসবে । প্রতি বছর দূর্গাপুজোয় সবাইকে বলে বেড়ায় এবছর আমার খোকা দেশে আসবে । গত চার বছর আগে শেষ দেখেছিল সুশোভনকে । দূর্গাপুজোয় শাড়ি ফল মিষ্টি নিয়ে এসেছিল । আর লুকিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল । আর বলেছিল এর আগে টাকা পাঠাতে পারেনি কেন । জয়েন্ট একাউন্টে বেতনের টাকা জমা হয় । পরের দিন বেতনের পুরো টাকাটাই রুমেলা উঠিয়ে নিত । তারপর রুমেলাই সব খরচ করত । মাকে টাকা পাঠানোর কথা বললে রুমেলা বলতো; মায়ের কাছে অনেক টাকা আছে । তোমাকে অত পড়িয়েছে সব তো রোজগার করে । তাহলে কি এখন টাকা নেই ভাবছ ? অনেক টাকা জমা আছে । বরং আমি জমা করছি আমাদের খোকার জন্য । সুশোভন আর কিছু বলতে পারেনি রুমেলাকে । যদি তার মাকে টাকা পাঠায় আর রুমেলা কিছু একটা করে বসে । সুশোভন গতবারে এসে অনুরোধ করেছিল কলকাতার কোনো এক নামী বৃদ্ধাশ্রমে থাকার জন্য । সেখানে এককালীন কিছু টাকা জমা দিলে তারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সারা জীবন রাখবে তাদের কাছে । কিন্তু তার মা তাতে রাজি হয়নি । তার মা বলেছিল; এই ঘর, এই গাছ, এই মাটি, এই গ্রাম আমার । এখানে আমার সব রয়েছে । এদের ছেড়ে আমি কোথাও থাকত পারবনা । সেই দেখাই শেষ দেখা । তার পর আর সুশোভন আসেনি দেশে, মায়ের উপর রাগ করে ।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অসুখে পড়াই হলো কাল । কমলাদেবী আশায় বুক বেঁধেছিল তার খোকা একদিন আসবে আর মা বলে ডাকবে । মনে মনে বিড়বিড় করে একা একা কথা বলত । আর একাই থাকত । একাকিত্ব কাটল, যখন সে অসুখে পড়ল প্রথমে । মাস্টার মশায় প্রথমে চেপে রেখেছিল কথাটা, শেষে বলল সুশোভন আর আসবে না । জ্বরের সঙ্গে ১৫ দিনের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নিরাশ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো । সকলে বললো; ওর মত ছেলে না হওয়াই ভালো ছিল । বুকে অতো কষ্ট তো হত না । পাড়ার সবাই কাঁদছে আর রাস্তার পানে চেয়ে আছে ওই বুঝি কমলার খোকা এলো । সে আশা আর পূর্ণ হলনা । ওর সব আশা কি পূর্ণ হয়েছিল ? কিইবা এমন আশা করেছিল । শুধু ছেলেকে শেষ দেখা দেখবে একবার । মুখে আগুন তো দুরের কথা একটু জল ও পেলনা ছেলের কাছ থেকে । ছেলেকে না দেখে চলে গেল কমলা । সকলে বলল একজন সতীসাধ্বী মহিলা চলে গেল । পাড়ার প্রত্যেকে সেখানে রয়েছে । সবার চোখে জল । সবাই কাঁদছে । কমলার চোখ স্থির হয়ে রয়েছে আকাশের পানে, যেন দেখছে - আসবে তার সুশোভন আর দাদুভাই ।
সমাপ্ত।
ইতিমধ্যে রুমেলার শাশুড়ি দেশ থেকে এসেছে প্রায় একমাস হতে চলল । মাসের শেষদিন যত এগিয়ে আসছে রুমেলার মন খারাপ হয়ে আসছে। কারণ মাসের শেষে জমানো টাকার পরিমান কমে আসছে । একদিন অফিস থেকে ফেরার পর সুশোভনকে রুমেলা বলল মা তো একমাস হতে চলল এসেছে এবার বাড়ি পাঠিয়ে দাও, আমি সব শিখে নিয়েছি - বাবুসোনাকে সামলে নেব । সুশোভন বলল মাতো এই এসেছে ক'দিন হলো মাত্র, থাকুক এবছর । বললো; বাবুসোনা একবছর হলে চন্দনেশ্বরে গিয়ে মুন্ডন করে আসবো আর মাকে দেশে রেখে আসবো । সেদিনের রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু রুমেলার আর ঘুম হয়নি । মাকে ফোন করা হয়নি শাশুড়িমা সব সময় কাছে কাছে থাকে । ছোট্ট ফ্লাট । কি করবে ভেবে ভেবে সারারাত ঘুম হলো না । এতে রুমেলার মুখটা একটু শুকনো দেখালো । সকালে সুশোভন অফিসে চলে গেল । রুমেলা কিছু না খেয়ে তার শোয়ার রুমে শুয়ে থাকল । কমলাদেবী সারাদিন বৌমাকে খাওয়ার জন্য ডেকে ডেকে একাও খেতে পারেনি, তাই কিছু খায়নি । সন্ধ্যায় সুশোভন অফিস থেকে ফিরতে মা সব জানায় । এতে বৌমারানী আরো রেগে যায় মনে মনে, ভাবে আমার আগে আমার স্বামীকে কেন জানালো আমার না খাওয়ার কথা । রাগে ফুলতে থাকে ভেতরে ভেতরে । কাউকে কিছু বলে না । সুশোভন অনেক অনুরোধ করলো কিছু মুখে দিতে, কিন্তু রুমেলা পালঙ্কের খুঁটি ধরে যেইরকম বসে ছিল ঠিক তেমনি ভাবে বসে রইলো । শেষে মা আর ছেলে দুজনে সামান্য খাওয়ার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল । রাতে শুধু সুশোভনকে রুমেলা বলল মাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দাও । সুশোভন বলল সে আমি পারব না । আমার মা আমার কাছে থাকবে নাতো কোথায় থাকবে । সে আমি পাঠাতে পারব না । পরের দিন সুশোভন রুমেলাকে খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করে অফিসে চলে গেল । রুমেলা ও সারাদিন না খেয়ে থাকে আর কমলাদেবী ও দিনের বেলা না খেয়ে থাকে । রাতেও গত রাতের মত অনেক অনুরোধ বিরোধ চলল । কেউ কারুর কথা শুনলো না ।
ঠিক একই ভাবে তিন দিন চলতে থাকলো । রুমেলা সারাদিন তার শোয়ারঘর বন্ধ রাখে শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে না । তিনদিন পরে সুশোভনকে তার মা বলল; বাবু - বৌমা কেন এমন করছে । তিনদিন না খেয়ে কার উপর রাগ করে আছে । সুশোভন প্রথমে বলতে চাইছিল না, পরে মায়ের অনেক অনুরোধে সে বলল সব । কথাটা শোনার পর তার মা কোনো দেরী না করে বলল; বাবা আমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা কর । আমি আর এখানে একটা দিনও থাকব না । আমি থাকলে বৌমা না খেয়ে মরে যাবে । সকলে বলবে আমি বৌমাকে নিয়ে ঘর করতে পারিনি । তুমি তাড়াতাড়ি আমার টিকিট কেটে দাও আমি চলে যাব ।
তত্কালের টিকিট পাওয়া গেল । ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে শুনে রুমেলা ও দরজা খুলে দিব্যি খোশ মেজাজে শাশুড়ির সাথে রান্না চড়াল । বড় বড় মাছ আনতে সকালে সুশোভনকে বাজারে পাঠালো । ভালো ভালো রান্না করে তার শাশুড়িমাকে খাওয়াল এবং নিজেও খেল । ট্রেনে উঠানোর সময় সুশোভন স্টেশনে এসেছিল । মা ও ছেলে বেশ কান্নাকাটি করলো স্টেশনে । ট্রেন ছাড়ার সময় টাটা বাই বাই হলো । চোখের জলে রুমালগুলো সবার ভিজে গেছে । ট্রেনে খাওয়ার জন্য বৌমা অনেক খাবার প্যাক করে দিয়েছিল । পরোটা, কষা মুরগি মাংস, ডিম সেদ্ধ, শসা, এবং কাতলা মাছের পেটি ভাজা কয়েকটা । ট্রেনের সফরটা শুধু চিন্তা করতে করতে কেটে গেল খাওয়ার সময় হয়নি কমলাদেবীর । সবসময় ওদের কথা মনে পড়ত। খড়গপুরে ট্রেন থেকে নামার সময় সব খাবার গুলো ভিখারীদের দিয়ে দিল। তারপর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর আর বৌমা আর নাতির সাথে দেখা হয়নি কমলাদেবীর ।
প্রতি দু বছর অন্তর রুমেলারা কলকাতায় তার মায়ের কাছে বেড়াতে আসে কিন্তু গ্রামের বাড়িতে আর আসেনা । রুমেলা বলে গ্রামে আলো নেই, স্নান করার ভালো জল নেই আর ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বাবু সোনা কষ্ট পাবে । তাই ওখানে গিয়ে কষ্ট করে সময় নষ্ট করার সময় নেই । সুশোভন বিদেশে ট্রেনিং এ গিয়েছিল তিন বছর । তখন রুমেলারা কলকাতায় ছিল । বিদেশ থেকে আসায় কোম্পানি প্রমোশন দিয়েছে । একেবারে জেনারেল ম্যানেজার । ছুটিতে ওরা বিদেশে ভ্রমন করে । কেননা গ্রামে বেড়ালে খরচ কোম্পানি দেবেনা । তাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, কানাডা সব ঘুরে এসেছে । কিন্তু গ্রামে ঘোরা হয়ে উঠেনি তাদের ।
মা কেঁদে কেঁদে অনেক আশা করে আছে এ বছর আমার খোকা আসবে । প্রতি বছর দূর্গাপুজোয় সবাইকে বলে বেড়ায় এবছর আমার খোকা দেশে আসবে । গত চার বছর আগে শেষ দেখেছিল সুশোভনকে । দূর্গাপুজোয় শাড়ি ফল মিষ্টি নিয়ে এসেছিল । আর লুকিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল । আর বলেছিল এর আগে টাকা পাঠাতে পারেনি কেন । জয়েন্ট একাউন্টে বেতনের টাকা জমা হয় । পরের দিন বেতনের পুরো টাকাটাই রুমেলা উঠিয়ে নিত । তারপর রুমেলাই সব খরচ করত । মাকে টাকা পাঠানোর কথা বললে রুমেলা বলতো; মায়ের কাছে অনেক টাকা আছে । তোমাকে অত পড়িয়েছে সব তো রোজগার করে । তাহলে কি এখন টাকা নেই ভাবছ ? অনেক টাকা জমা আছে । বরং আমি জমা করছি আমাদের খোকার জন্য । সুশোভন আর কিছু বলতে পারেনি রুমেলাকে । যদি তার মাকে টাকা পাঠায় আর রুমেলা কিছু একটা করে বসে । সুশোভন গতবারে এসে অনুরোধ করেছিল কলকাতার কোনো এক নামী বৃদ্ধাশ্রমে থাকার জন্য । সেখানে এককালীন কিছু টাকা জমা দিলে তারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সারা জীবন রাখবে তাদের কাছে । কিন্তু তার মা তাতে রাজি হয়নি । তার মা বলেছিল; এই ঘর, এই গাছ, এই মাটি, এই গ্রাম আমার । এখানে আমার সব রয়েছে । এদের ছেড়ে আমি কোথাও থাকত পারবনা । সেই দেখাই শেষ দেখা । তার পর আর সুশোভন আসেনি দেশে, মায়ের উপর রাগ করে ।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অসুখে পড়াই হলো কাল । কমলাদেবী আশায় বুক বেঁধেছিল তার খোকা একদিন আসবে আর মা বলে ডাকবে । মনে মনে বিড়বিড় করে একা একা কথা বলত । আর একাই থাকত । একাকিত্ব কাটল, যখন সে অসুখে পড়ল প্রথমে । মাস্টার মশায় প্রথমে চেপে রেখেছিল কথাটা, শেষে বলল সুশোভন আর আসবে না । জ্বরের সঙ্গে ১৫ দিনের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নিরাশ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো । সকলে বললো; ওর মত ছেলে না হওয়াই ভালো ছিল । বুকে অতো কষ্ট তো হত না । পাড়ার সবাই কাঁদছে আর রাস্তার পানে চেয়ে আছে ওই বুঝি কমলার খোকা এলো । সে আশা আর পূর্ণ হলনা । ওর সব আশা কি পূর্ণ হয়েছিল ? কিইবা এমন আশা করেছিল । শুধু ছেলেকে শেষ দেখা দেখবে একবার । মুখে আগুন তো দুরের কথা একটু জল ও পেলনা ছেলের কাছ থেকে । ছেলেকে না দেখে চলে গেল কমলা । সকলে বলল একজন সতীসাধ্বী মহিলা চলে গেল । পাড়ার প্রত্যেকে সেখানে রয়েছে । সবার চোখে জল । সবাই কাঁদছে । কমলার চোখ স্থির হয়ে রয়েছে আকাশের পানে, যেন দেখছে - আসবে তার সুশোভন আর দাদুভাই ।
সমাপ্ত।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রিয়েল আবদুল্লাহ ২২/০৯/২০১৫হৃদয় কেড়ে নিল
-
কষ্টের ফেরিওলা ১৩/০৯/২০১৫অনেক ভালো লাগলো
-
কিশোর কারুণিক ০৯/০৯/২০১৫ভাল
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ০৯/০৯/২০১৫দুর্দান্ত । অসাধারণ । এটাই পরিণতি, বা নিয়তি অথবা ভভিতব্য যাই বলুন না কেন।
-
ইমরান কবির রুপম ০৮/০৯/২০১৫এটাই আমাদের সমাজের নিত্যদিনের ঘটনা।অনেক অনেক ভাল হয়েছে।চোখঁ দুটি টলমল করছে আর কিছু বলতে পারবো না