স্মরণীয় বরণীয় পূর্ণেন্দুকুমার (প্রথম খন্ড)
জরারনগর দক্ষিনপল্লী বালক সংঘের আয়োজিত শ্রীশ্রীশ্যামাপূজা উপলক্ষ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সেরে ফিরেছি, বড্ড ঘুম পাচ্ছে । ঘড়িতে সময় রাত্রি ১১:৫৬ মি । বুধবার, ১৪ই নভেম্বর ২০১২ । তখন মোবাইলে ফোনটা এলো শুক্রাভাইর কাছ থেকে – “বাবা আর নেই” । ... কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম কিছুক্ষণ । ধাতস্থ হয়ে পরে রিংব্যাক করলাম । ফোনটা ধরল বাঘাভাই (রুদ্রশংকর দাস)। বলল - গাড়ি পাঠাচ্ছি তোমরা চলে এসো । তিরিশ মিনিটের মধ্যে শ্যামাপদ জানা তার মারুতিগাড়ি নিয়ে এলো আমার বাড়িতে । সোনু এবং সাগরকে বললাম - মামাবাড়ি যেতে হবে এখুনি । দাদূর শরীর খারাপ । তখন সত্যি কথাটা বলতে পারিনি । মনে হলো যেন ...... ঘুমের ঘোরে হয়ত ভালো করে শুনতে পাইনি । সেইরাতে আমার দাদা আর বৌদিকে ডাকলাম । তারাও বেরিয়ে পড়লো আমাদের সঙ্গে । এক্তারপুরে এসে শুনলাম, গত দেড় ঘন্টার মুহুর্মুহু ঘটনার কথা । সত্যি সত্যি দেখলাম শ্বশুর মহাশয় আর নেই.......শুয়ে আছেন বিছানায়, অনন্তলোকের যাত্রী শ্রী পূর্ণেন্দুশেখর জানা ।
গতদিন (১৩/১১/২০১২) আমরা অনেকে উপস্থিত ছিলাম এক্তারপুরে । বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া হয়েছিল, উনার বাড়িতে । দই-মাছ আমার খুব পছন্দ । উনি দই-মাছ রান্নার পদটি যত্নকরে বানাতেন । অনেক রকমের ব্যঞ্জন ছিল । ভেজ-ফ্রায়েডরাইস, চিকেন কষা, মাছের কয়েকটি পদ ছাড়াও স্যালাড ও বিভিন্ন সবজির তরকারী ছিল । অমলেশবাবু আমন্ত্রিত ছিলেন । উনি ফার্মার্সক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সিসিও ওমপ্রকাশ মাইতি মহাশয়ের বাবা । অমলেশবাবু বললেন; বেশি ঘি-ভাত খাওয়া ভালো নয়, আমার সাদাভাতই চাই, হৃত্পিন্ডের চারিদিকে ফ্যাট জমা হয় তাতে হার্টের অসুবিধা হতে পারে । তখন সচ্চিদানন্দ বলল আমন্ত্রকের দেওয়া সকল খাদ্য আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের খাওয়া উচিত । পূর্ণেন্দুবাবু সচ্চিদার ভুল শুধরে দিয়েছিলেন, বললেন; আমন্ত্রিতদের কি উচিত আরকি অনুচিত, শেখানো ঠিক নয় । এইভাবে সবাইকে সুন্দর ও মিষ্টিবাক্যে আপন করে নিতেন । বিভিন্নক্ষেত্রে তাঁর বাগ্মিতার পরিচয় রয়েছে । উনি যখন কোনো বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেন সেটা স্মরণে থাকত সকলের । উনি সিদ্ধান্তে অটল থাকতেন । নিজের কোনো কাজই হোক বা গ্রামের কোনো কাজে কিংবা স্কুলের কোনো কাজই হোক বা সমাজের কোনো কাজে, সকল ক্ষেত্রেই তাঁর ছিল একটা আদর্শ মতবাদ । সেখানে না ছিল কোনো ধর্ম না ছিল কোনো জাত বা সম্প্রদায়, না ছিল কোনো স্বজনপোষণ, না নিজের স্বার্থ । মদ্যপান বা অন্য যেকোন সর্বনাশা নেশার বিরুদ্ধে লড়তেন । ঘুষের বিরুদ্ধে তিনি লড়তেন । অকাজ ও কুকাজকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না । তাঁর ছিল আদর্শ দিনলিপি । আপনজনের কোনো ত্রুটি কিংবা অন্যায়কে কোনদিন সমর্থন জানাননি । সমাজের অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন । এটাই ছিল তাঁর জীবনযাপন । এই প্রসঙ্গে, উনার সম্পর্কে বিশিষ্ঠ কয়েকজনের মন্তব্য তুলে ধরলাম -
''সব সময় তিনি সমাজের ইতিবাচক দিকটা দেখেছেন । হতাশা তাঁকে কখনই গ্রাস করেনি । 'এ দেশে কিছু হবেনা' বা ' এইসব ছেলেমেয়েদের দিয়ে কি হবে' - এ রকম মানসিকতা তিনি কখনই পোষন করতেন না । বরং অন্ধকারে আলো খোঁজার চেষ্টা করতেন । কোনো পক্ষকে না চটিয়ে প্রয়োজন মতো সুযোগ নেওয়া বা নিরপেক্ষতার আড়ালে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা আমি কখনই তাঁর চরিত্রে লক্ষ্য করিনি” - সর্বানী দাস (শিক্ষিকা, ভূপতিনগর কন্যা বিদ্যালয়)।
“পূর্ণেন্দুকাকু এক্তারপুর গ্রাম কমিটি আবার সারস্বত সংঘের ও সভাপতি । অনেকটা বরের ঘরে মাসি ও কনের ঘরে পিসির মতো । কাকুর মেয়ের বিয়ে । প্রচলিত নিয়ম - বিয়ের বাবের টাকা গ্রামকে বেশি, ক্লাবকে কম দেওয়া হয় । কিন্তু তিনি গ্রামকে যে বাব দিয়েছিলেন তার থেকে বেশি দিয়েছিলেন আমাদের ক্লাবকে । বলেছিলেন একটি গ্রামের কর্মসূচী একটি গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর একটি ক্লাবের কর্মসূচী দেশ দেশান্তর ব্যাপী । এতই ক্লাব অন্ত:প্রাণ ছিলেন - ছিলেন আপোষহীন চিরবিদ্রোহী । যা তিনি সত্য বলে জেনেছেন, ন্যায় বলে অনুভব করেছেন, তা থেকে তাঁকে বিন্দুমাত্র টলানো যায়নি ।” - গৌরচাঁদ পাত্র, প্রধান শিক্ষক,বজরপুর রামকৃষ্ণ হাইস্কুল ।
সমাজে দুই শ্রেনীর মানুষ খুবই শ্রদ্ধাস্পদ হন । উদার শ্রেনীর বিনয়ী মানুষ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রতিবাদী মানুষ । তিনি দুই ধরনের মানুষ ছিলেন । নিজের ভুল বুঝতে পেরে যিনি শুধরাতে চান তাকে তিনি ভালো হওয়ার সুযোগ দিতেন আর যিনি অন্যায় করতেন বা প্রশ্রয় দিতেন তাকে অন্যায় করার জমি সহজে ছেড়ে দিতেন না । এমনি মিষ্টি আর কঠোর ব্যবহার ছিল তাঁর ।
চলবে...........
গতদিন (১৩/১১/২০১২) আমরা অনেকে উপস্থিত ছিলাম এক্তারপুরে । বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া হয়েছিল, উনার বাড়িতে । দই-মাছ আমার খুব পছন্দ । উনি দই-মাছ রান্নার পদটি যত্নকরে বানাতেন । অনেক রকমের ব্যঞ্জন ছিল । ভেজ-ফ্রায়েডরাইস, চিকেন কষা, মাছের কয়েকটি পদ ছাড়াও স্যালাড ও বিভিন্ন সবজির তরকারী ছিল । অমলেশবাবু আমন্ত্রিত ছিলেন । উনি ফার্মার্সক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সিসিও ওমপ্রকাশ মাইতি মহাশয়ের বাবা । অমলেশবাবু বললেন; বেশি ঘি-ভাত খাওয়া ভালো নয়, আমার সাদাভাতই চাই, হৃত্পিন্ডের চারিদিকে ফ্যাট জমা হয় তাতে হার্টের অসুবিধা হতে পারে । তখন সচ্চিদানন্দ বলল আমন্ত্রকের দেওয়া সকল খাদ্য আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের খাওয়া উচিত । পূর্ণেন্দুবাবু সচ্চিদার ভুল শুধরে দিয়েছিলেন, বললেন; আমন্ত্রিতদের কি উচিত আরকি অনুচিত, শেখানো ঠিক নয় । এইভাবে সবাইকে সুন্দর ও মিষ্টিবাক্যে আপন করে নিতেন । বিভিন্নক্ষেত্রে তাঁর বাগ্মিতার পরিচয় রয়েছে । উনি যখন কোনো বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেন সেটা স্মরণে থাকত সকলের । উনি সিদ্ধান্তে অটল থাকতেন । নিজের কোনো কাজই হোক বা গ্রামের কোনো কাজে কিংবা স্কুলের কোনো কাজই হোক বা সমাজের কোনো কাজে, সকল ক্ষেত্রেই তাঁর ছিল একটা আদর্শ মতবাদ । সেখানে না ছিল কোনো ধর্ম না ছিল কোনো জাত বা সম্প্রদায়, না ছিল কোনো স্বজনপোষণ, না নিজের স্বার্থ । মদ্যপান বা অন্য যেকোন সর্বনাশা নেশার বিরুদ্ধে লড়তেন । ঘুষের বিরুদ্ধে তিনি লড়তেন । অকাজ ও কুকাজকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না । তাঁর ছিল আদর্শ দিনলিপি । আপনজনের কোনো ত্রুটি কিংবা অন্যায়কে কোনদিন সমর্থন জানাননি । সমাজের অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন । এটাই ছিল তাঁর জীবনযাপন । এই প্রসঙ্গে, উনার সম্পর্কে বিশিষ্ঠ কয়েকজনের মন্তব্য তুলে ধরলাম -
''সব সময় তিনি সমাজের ইতিবাচক দিকটা দেখেছেন । হতাশা তাঁকে কখনই গ্রাস করেনি । 'এ দেশে কিছু হবেনা' বা ' এইসব ছেলেমেয়েদের দিয়ে কি হবে' - এ রকম মানসিকতা তিনি কখনই পোষন করতেন না । বরং অন্ধকারে আলো খোঁজার চেষ্টা করতেন । কোনো পক্ষকে না চটিয়ে প্রয়োজন মতো সুযোগ নেওয়া বা নিরপেক্ষতার আড়ালে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা আমি কখনই তাঁর চরিত্রে লক্ষ্য করিনি” - সর্বানী দাস (শিক্ষিকা, ভূপতিনগর কন্যা বিদ্যালয়)।
“পূর্ণেন্দুকাকু এক্তারপুর গ্রাম কমিটি আবার সারস্বত সংঘের ও সভাপতি । অনেকটা বরের ঘরে মাসি ও কনের ঘরে পিসির মতো । কাকুর মেয়ের বিয়ে । প্রচলিত নিয়ম - বিয়ের বাবের টাকা গ্রামকে বেশি, ক্লাবকে কম দেওয়া হয় । কিন্তু তিনি গ্রামকে যে বাব দিয়েছিলেন তার থেকে বেশি দিয়েছিলেন আমাদের ক্লাবকে । বলেছিলেন একটি গ্রামের কর্মসূচী একটি গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর একটি ক্লাবের কর্মসূচী দেশ দেশান্তর ব্যাপী । এতই ক্লাব অন্ত:প্রাণ ছিলেন - ছিলেন আপোষহীন চিরবিদ্রোহী । যা তিনি সত্য বলে জেনেছেন, ন্যায় বলে অনুভব করেছেন, তা থেকে তাঁকে বিন্দুমাত্র টলানো যায়নি ।” - গৌরচাঁদ পাত্র, প্রধান শিক্ষক,বজরপুর রামকৃষ্ণ হাইস্কুল ।
সমাজে দুই শ্রেনীর মানুষ খুবই শ্রদ্ধাস্পদ হন । উদার শ্রেনীর বিনয়ী মানুষ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রতিবাদী মানুষ । তিনি দুই ধরনের মানুষ ছিলেন । নিজের ভুল বুঝতে পেরে যিনি শুধরাতে চান তাকে তিনি ভালো হওয়ার সুযোগ দিতেন আর যিনি অন্যায় করতেন বা প্রশ্রয় দিতেন তাকে অন্যায় করার জমি সহজে ছেড়ে দিতেন না । এমনি মিষ্টি আর কঠোর ব্যবহার ছিল তাঁর ।
চলবে...........
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ০৭/০৯/২০১৫ধন্যবাদ প্রিয় অভিষেক ভাইকে ।
-
অভিষেক মিত্র ০৫/০৯/২০১৫Bah. Darun.
Darun, porer part ta pori -
শ্রীতরুণ গিরি ০৩/০৯/২০১৫গল্প নয়, স্মৃতি কথা মনে হল।