কালবৈশাখী
প্রতি বছরের মতো এবারেও বৈশাখ এল। খুকির চুলের বেণী দুলিয়ে, রঙিন ফিতার ফুল সাজিয়ে, খোকার হাতে একতারা হয়ে বৈশাখ এল। ভুল-ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে, হাজার রঙে রঙিন হয়ে, সবাই মিশে গেল এক রঙে।
তবুও কোথায় যেন ফাঁক থেকে যায়! থাকে অদৃশ্য দেয়াল! থাকে মনের ভিতরেই। যেটাকে সযতনে লালন করি। দিনে দিনে গাঁথুনিটা মজবুত হয় । ভেঙে ফেলতে পারি না।
বৈশাখ যখন এসেই গেল,আয়োজনের তো শেষ নেই। আয়োজন সবখানে। পোশাকে,মেকআপে,গেটআপে, ইলিশ আর পান্তা ভাতে।
যে বড়লোক রমণী পান্তাকে সবসময় ছোটলোকের খাবার মনে করে সেও আজ পান্তা খাচ্ছে। খাচ্ছে বললে ভুল হবে।আসলে খাওয়ার অভিনয় করছে। চোখে-মুখে কেমন একটা তৃপ্তি তৃপ্তি ভাব। যেন এ রকম মজার খাবার আর কোনদিন সে খায় নি। আজ একদিনের জন্য সে গর্বিত বাঙালি। তাই বলে কিন্তু তার বড়লোকি ভাবটা চলে যায় নি। প্লেট, গ্লাস পরিষ্কার করে ধোয়া চাই। বসার জায়গায় ময়লা থাকলে চলবে না। টিসু পেপার থাকতে হবে। গরম ভাতের পান্তা হতে হবে,তাজা ইলিশের ভাজা টুকরাটা হতে হবে বড়।
মোটকথা সবকিছুই টিপটপ হতে হবে।অন্যদিকে কোন খেয়াল নেই। কিংবা খেয়াল করতে নেই।অথচ কাছেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে। বলা উচিৎ অপেক্ষা করে আছে। প্রতিবছর সেও সবার মতো এ দিনটার জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করে পান্তা-ইলিশের জন্য। কিনে তো খেতে পারবে না কোনদিন। এত টাকা কোথায় পাবে। বড়লোকের বিলাসিতা তো তাকে মানায় না। জন্মের পর থেকে যে কখনও দুবেলা পেট পুরে খেতে পারে নি—যার কাছে এক মুঠো পান্তা, একটু লবণকে বেহেশতি-খানা মনে হয়—অথচ এ খাবারটুকুর নিশ্চয়তাও প্রতিদিন যার মেলে না—সবসময় না খেয়ে থাকাটা যখন অভ্যাস করতে হয়,তাকে তো এভাবে অপেক্ষা না করলে চলে না।
অপেক্ষা: কখন ঐ বড়লোক রমণীটার খাওয়া শেষ হবে। হয়তো দু-তিন গ্রাস খাবে। এরা তো আবার চামচ ছাড়া ঠিকমতো খেতেও পারে না। হাত দিয়ে তো খায় ছোটলোকেরা।
ইশ কত্তোকতা কয়!
মেয়েটা আর ধৈর্য ধরতে পারে না। জিভ দিয়ে একবার ঠোঁট দুটো চেটে নেয়। জিভ বারবার জলে ভরে আসছে। অজান্তেই সেঢোক গেলে বারবার। মেয়েটার ছটফটানি শুধু বেড়েই চলছে।
মেয়েটার বয়স কিন্তু বেশি নয়। বড়জোর আট বছর হতে পারে। কাপড় চোপড়ে বৈশাখী কোন ভাব নেই।নেই কোন একতারা বা ঢোলের ছবি।ভাঙাবেড়ার ফাঁকের মতোই সহজেই অভাব চোখে পড়ে। গায়ের যে রঙ অনায়াসে সে রবি ঠাকুরের কৃষ্ণকলি হতে পারত। তার শীর্ণ দেহের তুলনায় মাথাটা একটু বড়ই দেখায়।সেখানে ঝুলে আছে একঝাক কালবৈশাখী-মেঘ। চকচক করা গভীর চোখ দুটোতে যেন সে মেঘেরই রঙ লেগে আছে । তারচেয়েও বড় ,তারচেয়েও ভয়ঙ্কর কালবৈশাখী তার পেটে! যার জন্য ইলিশ-পান্তা থেকে সে চোখ দুটো কিছুতেই ফেরাতে পারছে না।
14.04.2014
তবুও কোথায় যেন ফাঁক থেকে যায়! থাকে অদৃশ্য দেয়াল! থাকে মনের ভিতরেই। যেটাকে সযতনে লালন করি। দিনে দিনে গাঁথুনিটা মজবুত হয় । ভেঙে ফেলতে পারি না।
বৈশাখ যখন এসেই গেল,আয়োজনের তো শেষ নেই। আয়োজন সবখানে। পোশাকে,মেকআপে,গেটআপে, ইলিশ আর পান্তা ভাতে।
যে বড়লোক রমণী পান্তাকে সবসময় ছোটলোকের খাবার মনে করে সেও আজ পান্তা খাচ্ছে। খাচ্ছে বললে ভুল হবে।আসলে খাওয়ার অভিনয় করছে। চোখে-মুখে কেমন একটা তৃপ্তি তৃপ্তি ভাব। যেন এ রকম মজার খাবার আর কোনদিন সে খায় নি। আজ একদিনের জন্য সে গর্বিত বাঙালি। তাই বলে কিন্তু তার বড়লোকি ভাবটা চলে যায় নি। প্লেট, গ্লাস পরিষ্কার করে ধোয়া চাই। বসার জায়গায় ময়লা থাকলে চলবে না। টিসু পেপার থাকতে হবে। গরম ভাতের পান্তা হতে হবে,তাজা ইলিশের ভাজা টুকরাটা হতে হবে বড়।
মোটকথা সবকিছুই টিপটপ হতে হবে।অন্যদিকে কোন খেয়াল নেই। কিংবা খেয়াল করতে নেই।অথচ কাছেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে। বলা উচিৎ অপেক্ষা করে আছে। প্রতিবছর সেও সবার মতো এ দিনটার জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করে পান্তা-ইলিশের জন্য। কিনে তো খেতে পারবে না কোনদিন। এত টাকা কোথায় পাবে। বড়লোকের বিলাসিতা তো তাকে মানায় না। জন্মের পর থেকে যে কখনও দুবেলা পেট পুরে খেতে পারে নি—যার কাছে এক মুঠো পান্তা, একটু লবণকে বেহেশতি-খানা মনে হয়—অথচ এ খাবারটুকুর নিশ্চয়তাও প্রতিদিন যার মেলে না—সবসময় না খেয়ে থাকাটা যখন অভ্যাস করতে হয়,তাকে তো এভাবে অপেক্ষা না করলে চলে না।
অপেক্ষা: কখন ঐ বড়লোক রমণীটার খাওয়া শেষ হবে। হয়তো দু-তিন গ্রাস খাবে। এরা তো আবার চামচ ছাড়া ঠিকমতো খেতেও পারে না। হাত দিয়ে তো খায় ছোটলোকেরা।
ইশ কত্তোকতা কয়!
মেয়েটা আর ধৈর্য ধরতে পারে না। জিভ দিয়ে একবার ঠোঁট দুটো চেটে নেয়। জিভ বারবার জলে ভরে আসছে। অজান্তেই সেঢোক গেলে বারবার। মেয়েটার ছটফটানি শুধু বেড়েই চলছে।
মেয়েটার বয়স কিন্তু বেশি নয়। বড়জোর আট বছর হতে পারে। কাপড় চোপড়ে বৈশাখী কোন ভাব নেই।নেই কোন একতারা বা ঢোলের ছবি।ভাঙাবেড়ার ফাঁকের মতোই সহজেই অভাব চোখে পড়ে। গায়ের যে রঙ অনায়াসে সে রবি ঠাকুরের কৃষ্ণকলি হতে পারত। তার শীর্ণ দেহের তুলনায় মাথাটা একটু বড়ই দেখায়।সেখানে ঝুলে আছে একঝাক কালবৈশাখী-মেঘ। চকচক করা গভীর চোখ দুটোতে যেন সে মেঘেরই রঙ লেগে আছে । তারচেয়েও বড় ,তারচেয়েও ভয়ঙ্কর কালবৈশাখী তার পেটে! যার জন্য ইলিশ-পান্তা থেকে সে চোখ দুটো কিছুতেই ফেরাতে পারছে না।
14.04.2014
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শূন্য ০৭/০৭/২০১৪
-
কবি মোঃ ইকবাল ০৭/০৭/২০১৪গল্পটি বেশ ভালো লাগলো ভাই।
-
যুবরাজ নন্দন ০৭/০৭/২০১৪চমৎকার।
অনেক ভাল লাগলো।