www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ম্যারী নিবাস

🌿🌹ম্যারী নিবাস 🌹🌿
পর্ব -৫

তোমার নাম কি? কোথা থেকে এসেছো? আমার নাম রাগীব, আমি ঢাকায় মা বাবার সাথে থাকি। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। বাবা সরকারী চাকরী করেন। মা গৃহিণী। আমার একটা ছোট্ট বোন আছে। ঢাকায় বড় হয়েছি। আমাদের গ্রামের বাড়ি নেই। আত্মীয় স্বজন সবাই ঢাকায়। আমার বন্ধু রুহিদ, ওর সাথে ওদের বাড়ী এসেছি। ওখানেই আপনার সম্পর্কে জানলাম।

ম্যাডাম আমারও রাগীবকে প্রশ্ন করলো। তুমি কি শুধু আমার সাথে দেখা করতে এসেছো? জী ম্যাডাম। তাহলে
তো তোমাকে ভালো করে আপায়ন করতে হবে। কি দিয়ে আপায়ন করবো! হাসি এদিকে আয়। হাসি এসে হাজির। বুঝতে পারলো রাগীব, ঐ গ্রাম্য মেয়েটির নাম হাসি। কিছু খেতে দাও। হাসি দৌড়ে গিয়ে প্লেট ভর্তি করে আম কেটে এনে দিল। কিছুক্ষণ পর বিস্কুট চা দিল।

বৃষ্টিতে ভিজে চা খেতে ভালোই লাগছিল। পেটে খুদা ছিল। খেতে খেতে রাগীব ম্যাডামকে বললো আপনাকে কি ভাবে যে সম্ভাধন করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমাকে কিছু বলতে হবে না। ম্যাডাম বললেই হবে। ঠিক আছে তাই হবে। ম্যাডাম আপনার বাড়ীটি এতো সুন্দর ঠিক ছবির মতো। যা মুখে বর্ণনা করা যায় না। বাড়ীর চারপাশ সবুজের সমুদ্র করে রেখেছেন। সারি সারি করে গাছ লাগিয়েছেন,দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে মনে ভাবছি এখানে না এলে জীবনটাকে বড় কিছু থেকে বঞ্চিত করা হতো।

গল্প করতে করতে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো। এতোক্ষনে হাসি খাবারের আয়োজন করে ফেলেছে। খাবারের ডাক আসলো। ম্যাডাম বললো হাত মুখ ধুয়ে আস। পশ্চিম পাশে টিউবয়েল আছে। টিউবয়েল চাপ দিতেই পানি গড় গড়িয়ে পড়তে লাগলো। পরিষ্কার পানি। যতই হাত মুখে পানি দিচ্ছে, তৃপ্তি মিটছেনা রাগীবের। ঠাণ্ডা শীতল পানি। কিন্তু পানিটা লোহা লোহা গন্ধ। তবু খুব ভালো লাগছে। খেতে বসলো। এতো তাড়াতাড়ি করে কয়েক প্রকারের তরকারি করেছে।খাবারের মান অত্যান্ত রুচি সম্মত সুস্বাদু। সুরভিত নরম তুলতুলে ভাত। যার প্রতিদানা ছিল শুভ্র তুষারের মতো। রাগীব আর ম্যাডাম এক সাথে বসে অনেক তৃপ্তি করে খেল।

অনেক আপন প্রিয় জনের সাথে বসে খাবার খেল। ভুলেই গেল আজই তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছে। এ যেন যুগ যুগ ধরে দু'জন দুজনকে চিনে। খাবার শেষে বাইরে এসে উঠানে দুইটি চেয়ারে এসে বসলো। ম্যাডাম রাগীবের হাতে খাবারের মশলা তুলে দিল। মশলা চিবাতে চিবাতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে না তুলতেই উজ্জ্বল পরিষ্কার আবহাওয়া হঠাৎ বদলে গেল। ঝির ঝির বৃষ্টি প্রবল বর্ষণের রুপ নিল। প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো। দেবদারু গাছের ঘন পত্র পল্লবের মাঝে আছড়ে পরতে লাগলো।

রাগীব চিন্তায় পড়ে গেল। এখন ফিরবে কি করে।ম্যাডাম বুঝতে পেরে বললো, চিন্তা করো না। হাসি আমার সাথেই থাকে। তুমিও পাশের রুমে থাকতে পারবে। রাগীব নিশ্চিত হলো।

এতোক্ষনে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। সূর্য সবে মাত্র দেবদারু গাছের আড়ালে অস্ত গেছে। সন্ধ্যা আকাশে প্রস্থ ও গভীর গোধূলির মিষ্টি আভা ছড়িয়ে দিয়েছে আকাশময়।

নামাজ পরার কথা বলতে বলতে রুম দেখিয়ে দিয়ে একটা জায়নামাজ হাতে দিয়ে বললো নামাজ পরে বিশ্রাম নাও। নামাজ পরে রুহিদের বাড়ীর কথা চিন্তা করতে লাগলো। ওরা না জানি কত চিন্তা করছে। কি করবে! কোন উপায় নাই যে,ওদের একটা খবর দিবে। যাক যা হবার হবে। সকালে তো চলেই যাবো ।

শুয়ে পড়লো রাগীব। সারাদিনের ক্লান্তির অবসান ঘটল। বিছানায় গা নূয়াতেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে গেল।অঘোর ঘোরে ঘুমিয়ে পড়লো। রাত ২টার দিকে আবার এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। টিনের চালের বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। ঠাণ্ডা হাওয়ায় জানিয়ে দিল আমি গরম কার হীন। চারটা গায়ে জরিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

কখন যে সকাল হয়ে তার রুপালী রোদ্দুর গাছের পাতার উপর খেলা করছে। জানালার ফাক দিয়ে বিছানায় ও যায়গা করে নিয়েছে।

নাস্তা সেরে ফিরে আসার অনুমতি চাইলো রাগীব।ম্যাডাম বললো, তোমার কি খুব তারা আছে? তারা না থাকলে আজ বেরিয়ে যাও। তোমাকে নিয়ে এলাকাটা ঘুরে দেখতাম। ভীষণ খুশি হলো রাগীব।মনে মনে এটাই চেয়েছিল রাগীব। বাড়ীর পুর্ব প্রান্তে চোখে পরলো কিম্বা গাছের ফল। দেখতে অনেকটা গোলাপ জানের মতো। ম্যাডামের সাথে ঘুরতে বের হলো। মেঘ শূন্য আকাশ দেখে বের হলো। চারদিক ঘুমোট ভাব। হাটতে হাটতে ম্যাডামের বাড়ী থেকে বেশ খানিকটা দূরে চলে গেল।ম্যাডামের হাতে ক্যামেরা। মাঝে মাঝে ক্যামেরাই বন্দী করছে প্রকৃতির দৃশ্য। এতে রাগিও বাদ পরছে না। ম্যাডামের হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে রাগীব ও ম্যাডামের কিছু ছবি তুললো। ম্যাডামের সাথে ঘুরতে রাগীবের খুব ভালো লাগছে। এ ভালো লাগার মধ্যে নাই কোন লোভ, নাই কোন লালসা । আছে সহজ সরল ভালোবাসা।

চারদিক সুনসান নিরবতা, নেই কোন যান্ত্রিক কোলাহল। মাঝে মধ্যে অবাধ্য পাখির চিৎকারে সব নীরবতা শৃঙ্খল ভেঙে প্রকৃতিকে মুখর করে তুলছে।

গ্রামের ভিতর হাটতেই কাঁচা রাস্তার কাদা মাটি পা জড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে। রাগীব মাঝে মাঝে ম্যাডামকে বলছে আপনার কষ্ট হচ্ছে নাতো! না না কষ্ট হবে কেন! তুমি না থাকলে হয়তো কষ্ট হতো।

রাগীব দেখতো দুই পাশের কাঁশফুলের দল গুলো মনে হচ্ছে আমাদেরকে গার্ড অব অনার দিচ্ছে। আর ঐ দেখ জলাশয়ে রাশি রাশি শাপলা ফুল গুলো যেন আমাদেরকে শুপ্রভাত বলছে। ইচ্ছে করছে শাপলা তুলি। ডুবে ডুবে জলজ খেলি। হাঁস দুটি একই তালে ডুব দিচ্ছে। বাতাসের তালে তালে জল রাশি বার বার ঢেউ তুলে দীঘির কিনারে আছরে পড়ছে। পঁচা পাট আর কাঁদা মাটির গন্ধে গ্রামটি মৌ মৌ করছে।

ম্যাডাম হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে পরেছে। তাই আজকের মতো এখানেই সমাপ্তি দিয়ে ম্যাডামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রাগীবকে সংগে নিয়ে এলেন মূল বাড়ীর দরজার সামনে। তালা খুলে ঢুকলেন ভিতরে একের পর এক জানালা খুলে দিতে লাগলো। এক রাশ আলো হুরমুর করে ঘরে ঢুকে উদ্ভাসিত করে দিল। ম্যারী নিবাস এখন ঝলমল করছে। গত কাল মেঘলা আলোই যাকে মনে হচ্ছিল বিষন্ন। এখন তা দিব্যি হাসি খুশি। পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যটা উদ্ভূত আলো দিয়ে বাড়ীটাকে লাল হলুদ রঙে রাঙিয়েছে।

কৃষ্ণচূড়ার চুড়ার আগুনরঙা ফুল দেখে রাগীবের হৃৎপিন্ড খানি আরেকবার নাড়া খেল। ম্যাডাম হাসিকে বললো রাগীবকে আমার ঘরে ডেকে নিয়ে আয়। হাসি রাগীবকে ম্যাডামের রুমে নিয়ে গেল। বিছানার চাদর, জানালার পর্দা ঘরটিকে সজীব করে রেখেছে। এক চিলতে ঘর। ধব ধবে সাদা বিছানাটি যেন এক কিশোরির। মনেই হয়না ম্যাডামের এতো বয়স। রাগীব একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ম্যাডামের পাশে গিয়ে বসলো। ম্যাডাম আপনার শৈশবের কিছু স্মৃতি আমায় কি বলা যাবে? ম্যাডাম রাগীবের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,আজ নয়,আরেকদিন সময় নিয়ে বলবো।রাগীব ম্যারী নিবাস থেকে বিদায় নিয়ে রুহিদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast