www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বেগম সেলিনা খাতুন

🌹ম্যারী নিবাস 🌹🌿
পর্ব -৪
রাগীব ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। কে যেন ম্যারী নিবাস থেকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। ঘুম ভেঙে গেল দুর মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি শুনে। নামাজ পরলো। এতক্ষণে সূর্য উঠছে তার সোনা রং ছড়িয়ে দিয়ে। যেন সোনালী সুর্যদয়ের প্রদীপ্ত অপেক্ষায় ছিল রাগিব।

রাগীব নাস্তা খাওয়ার অপেক্ষা না করে, বেড়িয়ে পরলো। রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়লো টংয়ের দোকান, সেখানে ভীর জমিয়েছে নাস্তার জন্য। রাগীবও দাড়িয়ে পরলো। দুইটা পরোটা একটা ডিম নিয়ে খেয়ে নিল। আর দুইটা ব্যাগে পুরে নিল। বলাতো যায় না,কতক্ষনে খাবার জোটে।

আবার হাটতে শুরু করলো রাগীব। আকাশ জুড়ে ভাসমান মেঘ, বেপরোয়া বাতাসে তা এক কোন থেকে অন্য কোনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ছম ছম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিল। বৃষ্টি আসার আগেই পৌছাতে হবে। বাড়ীর কাছে পৌঁছতেই ফুলের গন্ধ ভেসে আসতে লাগলো । বাড়ীর দক্ষিণ পাশের বাগানে ফুলের সমাহার। নানা জাতের ফুল। ঝির ঝির হাওয়া নিয়ে দাড়িয়ে আছে কয়েক প্রকারের গোলাপ গাছ। গোলাপ ফুলের রানী। তবু তার গায়ে কাঁটা। গোলাপ সৌন্দর্য্য বিলিয়ে, সুভাষ ছড়িয়ে মানুষের মনকে আনন্দের উষন্তায় ভরিয়ে দেয়। গোলাপের কাঁটার কাছে মানুষ হার মানে। তাই প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা বলতে, গোলাপ হাতে নিয়ে দু'হাত প্রসারিত করে মনের আকুলতা, চোখের পলকহীন ব্যাকুলতা নিয়ে বলে আমি তোমায় ভালবাসি। গোলাপ ছাড়া কি এমন কথা শোভা পায় ? জানিনা যুগ যুগ ধরে গোলাপ মানুষের মনকে জয় করে রেখেছে। যখন গোলাপ গন্ধ অনুভব করছি।, তখনই মিষ্টি গলায় গেয়ে উঠলো।

যতই দেখি তোমায় বাড়ে শুধু তৃষা
এ যেন চলার মাঝে অচেনার নেশা
মনের খাতায় তোমায় নিয়ে লিখেছি কত গান
যদি গো সে গান তুমি গাইতে।

স্বপন দেখেছি তোমায় ফুল ফোটা রাতে
কিছুটা সময় ছিলে আমারই পাশেতে।
আবার আসবে বলে গেঁথেছি মালা
যদিগো সে মালা তুমি পড়তে।

রাগীব মুগ্ধ হয়ে আনমনে গান শুনে যাচ্ছে। হতবাক হয়ে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াতে লাগলো। এতো মিষ্টি সুরলো গলায় কে তার মনের গান গাইছে। চেয়ে দেখে বাগানে একজন মালি বাগানের পরিচর্যা করছে। রাগীব এগিয়ে গেল। মালিকে দেখে ভাবতে লাগলো , এতো সুন্দর গলা, তাও আবার মালির। মালিও রাগীবকে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো । বললো আমি এই বাগানের দেখা শুনা ও পরিচর্যা করি। রাগীব একটু আশস্থ হলো, এই ভেবে তবু একজন মানুষ পাওয়া গেল। আস্তে আস্তে মালির সাথে কুশল বিনিময় হলো। তোমার গলাতো ভীষন সুন্দর ,এতো সুন্দর গাইতে পারো তুমি। তুমি কি আমাকে আরেকটি গান শুনাতে পারবে? আপনার আমার গান ভালো লেগেছে? রাগীব মাথা নেরে সম্মতি জানালো। মালি আরেকটি গান শুনাতে শুরু করলো।

হৃদয়ের চোখ দিয়ে তোমাকে দেখেছি
বুকের ঐ নিঝুম দ্বীপে তোমাকে চেয়েছি।

কভু তুমি শুনলেন, মনের ঐ গুঞ্জনা
কত যে আপন তুমি আজ বুঝেছি।

জানিনা কি সুখ পেলে, ভালোবাসা কেরে নিলে।
এতোটা কঠিন তুমি আজ জেনেছি।

রাগীব যতই শুনছে ততই অবাক হচ্ছে। তুমি থাকো কোথায়? তোমার নাম কি?আমার গ্রামের নাম নয়ন পাড়া। আমার নাম কাঙ্গাল। আমার বউ এই বাড়ীতে কাজ করে। আমি কৃষি কাজ করি। মাঝে মাঝে এই বাগানের পরিচর্যা করি। মালি উপরে ফেলা আগাছা গুলো বস্তায় ভরে নিল। আকাশের বুকে বিশাল মেঘ রাশির দিকে তাকিয়ে ,মালি তার অভিমানী গান গাইতে গাইতে বিদায় নিল।

তোমায় কত ভালোবাসি ,হৃদয় আমার জানে
তোমায় পেলে রাখবো আমার বুকের সিংহাসনে।।

ক্ষণিকের দুনিয়াতে না পাই যদি তোমায়
পর জনমে খুঁজবো আমি
রইলাম এই আশায়
সেই আশাতে খুঁজে নিবো
আমার প্রেমের টানে।।

কত আশা কত স্বপ্ন মনটা আমার জানে
জীবনে মরণে তুমি আছো জাগরণে
দিবা রাত্রি সে যে স্বপ্ন
জাগে ক্ষণে ক্ষণে।।

দীর্ঘ অপেক্ষা আর প্রহর গুনতে গুনতে রাগীব মানষীক ভাবে ঝিমিয়ে পড়লো। হয়তোবা ম্যারী নিবাসের অজানা তথ্য জানা হবেনা। বুকের মধ্যে দুরু দুরু করতে লাগলো। অনন্ত পিপাসা যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে লাগলো। প্রেমিকার জন্য অন্তর বিদীর্ণ করে রক্ত ক্ষরণ ঘটায় যেমন ঠিক তেমনি রাগীবের অন্তরে রক্ত ক্ষরণ হতে লাগলো।

একি কার যেন পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। পরনের পোষাক দেখে মনে হলো ইনি বুঝি এখানে কাজ করে। মালির বউ হবে। সে রাগীবকে দেখে অবাক ভংগিতে বললো। আপনি কে? এখানে বসে কি করছেন? কাকে চান? কি চান? বাড়ীতে তো কেউ নাই ।ম্যাডামের বাড়ী ফিরতে রাত হবে।

গ্রাম্য মেয়েটি তার গ্রাম্য সরলতায় এক সাথে অনেক গুলো প্রশ্ন করে ফেললো। কোনটার উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো কত রাত হবে? তা কেমন করে বলবো। উত্তরে বললো।

আবার অপেক্ষার পালা। এতোক্ষনে মালি তার হাতের কাজ সেরে চলে গেছে। মহিলা বাড়ীতে ঝাড়পোচ শুরু করেছে। দৌড়ে দৌড়ে কাজ করছে। রান্নার আয়োজন করেছে। রাগীব ঘুরে ঘুরে আশপাশ দেখছে। আর সুর বিহীন দুই একটা গানের কথা আনমনে বলে যাচ্ছে।

কতকাল দেখিনি তোমায়
কোথায় ছিলে তুমি, বলনি আমায়।
আমি তো তোমারই আছি, হৃদয়ের কাছাকাছি,
তোমাকে এঁকেছি আমি দু'চোখের পাতায়।
জানিনা বুজবে কি তুমি, কতযে খুঁজেছি আমি।
কতযে লিখেছি তোমায় মনেরই খাতায়।

অনেক দুর থেকে গাড়ীর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। মহিলাটি ঘড় থেকে বের হয়ে বলতে লাগলো, ম্যাডাম এসে গেছে। রাগীব কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বাঁশের মাচাংয়ে বসে পড়লো।
আস্তে আস্তে গাড়ী বাড়ীর মধ্যে ঢুকে পড়লো। মনে হচ্ছে গাড়ী নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। গাড়ী থেকে ম্যাডাম বের হয়ে এলো।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পরিপাটির ছোঁয়া লেগে আছে, সর্ব অঙ্গে। বয়স আনুমানিক ৪০/৪৫ হবে হয়তো। জামদানী পিংক কালারের শাড়ীতে অপরূপ সুন্দর লাগছে দেখতে। লম্বা এক হারা গড়ন।গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা ।সুন্দরী নয়, কিন্তু অসম্ভব সুন্দর। রাগীব পা থেকে মাথা অবদি পর্যন্ত ভাল করে দেখছে। আর মনে মনে ভাবছে। না জানি আমাকে কত বকা বকি করবে। বকুক আমি কিছু বলবোনা । গাড়ী থেকে জিনিস পত্র নামিয়ে মহিলাটির হাতে দিল। ও গুলো হাতে নিতে নিতেই ম্যাডামকে বললো। কে যেন আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে। অনক্ষণ বসে আছে। কোথায় ঐ যে গাছের নিচে বসে আছে। বসে থাক পরে কথা বলবো, এই বলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো।

রাগীব ম্যাডামের ডাকার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কখন যে মাথার উপর বৃষ্টি শুরু হয়েছে বুঝতেই পারে নাই। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে কালো মেঘেরা যেন ঝাপিয়ে পড়ছে। রাগীব ভিজে চুপসে গেল। গায়ের জামা শরীরের সাথে লেপ্টে গেল। টপ টপ করে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে সারা গা থেকে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় শীত শীত লাগছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

হঠাৎ ম্যাডাম ঘর থেকে ডাকতে শুরু করলো। এই ছেলে এদিকে আসো। বৃষ্টিতে তো ভিজে যাচ্ছো! শরীর খারাপ করবে তো! রাগীব আসার সঞ্চার দেখতে পেলো। দৌড়ে ম্যাডামের ঘরের দিকে ছুটলো। ম্যাডাম তাড়া তাড়ি একটা গামছা এগিয়ে দিয়ে বললো। আমি তোমাকে কি দিব পড়তে। তুমি তো ভিজে চুপসে গেছো। ঘর থেকে একটা গায়ের চাদর এনে দিয়ে বললো এটা পড়ে নাও।
সার্ট প্যান্ট খুলে বাতাসে দাও। কতক্ষণ পরে একটা সার্ট এনে দিলো। আমার ছেলে রেখে গেছে,আমি ভুলেই গিয়েছিলাম পরে নাও।

রাগীব নিজেকে অপরাধী ভেবে বলছে, ম্যাডাম আপনাকে আমি বিপদে ফেলে দিলাম। আপনার সাথে একটু কথা বলেই চলে যাবো। তুমি কি আমাকে চেন? না ম্যাডাম। তা হলে! আপনার অনেক গল্প শুনেছি। তাই গল্পের মানুষ এর সাথে দেখা করার লোভ সামলাতে না পেরে অনেক কষ্ট মাথায় নিয়ে এ অভিযানে বেড়িয়েছি।
শুধু আমাকেই দেখতে এসেছো? জী ম্যাডাম। আমার নাম রাগীব গ্রীষ্মের অবকাশ যাপন করতে বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে এসে আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা শুনে, আমার আপনাকে দেখার খুব কৌতুহল হয়। এই কৌতূহলের কারণে অজানা অচেনা জায়গায় ছুটে আসি। জানিনা কেন আপনাকে দেখতে এতো ইচ্ছে হলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast