www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বেগম সেলিনা খাতুন

🌿🌹ম্যারী নিবাস 🌹🌿
পর্ব-৩
দুলাভাই রুহিদকে ডেকে বললো , পাহাড়ের পশ্চিম দিকে সুন্দর একটা বাড়ী হয়েছে, তুমি কি জানো? শুনেছি সে তো বছর হয়ে গেল। ঐ নির্জন এলাকায় কি করে বাড়ী করলো! কেউ থাকে নাকি ওখানে? শুনেছি মাঝে মাঝে গাড়ী নিয়ে আসে। ভয় লাগে না? মানুষের এতো সাহস কি করে হয়। এই জংগলে কেমন করে থাকে। কতো বিপদই না হতে পারে।

রাগীব আনমনে ওদের কথা শুনে যাচ্ছে। হঠাৎ বলে ফেললো ,কে কোথায় থাকে। কার কথা বলছেন। রুহিদ বললো তোর শুনে কাজ নেই। কেন? আমি শুনবো না কেন। এতো বড় ঘটনা, তোমরা সবাই তাকে নিয়ে আলোচনা করছো। আর আমি জানবোনা ?আমাকে বলতেই হবে।

রুহিদ বাধ্য হয়ে আস্তে আস্তে সব কথা বলতে লাগলো। রাগিব সব ঘটনা মনোযোগ সহকারে শুনছে।
মুহূর্তের মধ্যে আকাশ কাটিয়ে ঝড় উঠে এলো। সেই সংগে মেঘের মুহুর্মুহু গর্জন। ঝাপিয়ে বৃষ্টি। টিনের চালের বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরছে।

সূর্য যখন উঠি উঠি করছে। তখন পাখির কিচিরমিচির শব্দে রাগীবের ঘুম ভাঙলো।জানালার ফাক দিয়ে তাকিয়ে দেখে সূর্য উঠছে তার গোলাপি আভা ছড়িয়ে।

রাগীবকে সংগে নিয়ে রুহিদ গ্রামে হাটতে বেরুলে। রাতে বৃষ্টি হওয়াতে গ্রামটি সোনালী আকার ধারণ করেছে। চমৎকার দৃশ্য। কোথাও একটু মলিনতার ছাপ নেই। তবে গ্রামটা একেবারেই অবহেলিত। এককালে এই গ্রামের জমিদারের পদবী ছিল তালুকদার। সেই জমিদারদের বংশধর এখন আর কেউ নেই। অবশ্য তারা বেঁচে থাকতে যে গ্রামটার বিশেষ উন্নতি হয়েছিল, তার কোন প্রমাণও নেই। গ্রামে এখনো রিকশা ভ্যান চালু হয়নি। দুরের রাস্তা গরুর গাড়ী করে যাতায়াত করে। এলেকট্রিসিটি আসেনি। কুপি জ্বালিয়ে রাতের কাজ সারে। বর্ষার সময় নৌকা করে যাতায়াত করতে হয়।

জংগল বাড়ী নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছিল। তা নিয়ে রাগিব খুব চিন্তিত। তাই রুহিদকে বললো চল আমরা জংগল বাড়ী থেকে ঘুরে আসি। রুহিদ বলে উঠলো, তুই কি পাগল হয়েছিস। সেতো অনেক দুরে। গাড়ী ঘোড়া কিছুই নেই। পায়ে হেঁটে যেতে হয়। যেতে লাগবে ২থেকে ৩ ঘন্টা। তাও কারো সাথে দেখা নাও হতে পারে। আমি ভাই যেতে পারবো না। রুহিদের এ হেন মন্তব্য শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলো। অনেক অনুরোধ করে কোন লাভ হলোনা। চিন্তায় পড়ে গেল রাগিব। বেড়াতে এসে অন্য রকম কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারায় ক্ষতি কি। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র। আমি এখন আর ছোট নই । আমার কাউকে লাগবে কেন? মনস্থির করে ফেললো, আগামী কাল একাই যাবো ইনশাল্লাহ।

রুহিদের বাড়ীর পাশে খেলার মাঠ আছে। বিকেল হলে সবাই মাঠে খেলতে যায়। রাগিব ও খেলা দেখতে মাঠে চলে গেল। খেলার মাঠে রাগিব মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখতে পারছেনা। তার মাথায় এখন শুধু জংগল বাড়ীর ভাবনা। ভাবনার অবসান খুজে পাচ্ছে না। সন্ধ্যা হয় হয়। কতক্ষন যে বসে আছে খেয়ালই নেই। পাখির ঝাঁক নীড়ে ফিরছে। মাথার উপর দিয়ে সাই সাই করে উঠে যেতে দেখে রাগীবের অবচেতন মন ফিরে এলো। সূর্য কখন যে রং ছড়িয়ে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু তার আলোর রেশটুকু এখনো লেগে আছে,পৃথীবির শরীর লেপ্টে।
রাগীবের সারারাত ঘুম হলোনা। এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ভোর হয়ে গেল,তা জানতে পারলো ভোরের পাখির কিচিরমিচির শব্দে। মনের আনন্দে ওরা যেন বিভিন্ন সুরে সুরে গান করছে। পৃথিবীর চিন্তা ওদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ভোর।এ যেন অন্য আনন্দে।
নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে পাখিদের সাথে কথা বলতে লাগলো রাগিব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল রাগিব। যেন কোন হারানো বস্তু ফিরে পেয়েছে। বুকের মধ্যে মহাসমুদ্ররের ঢেউ উত্তাল পাতাল করতে লাগলো।

উঠানে পায়চারি করতে লাগলো। ভোরের ঠান্ডা হাওয়ায়
পান পাঠার মিষ্টি সকাল ভেসে আসছে। খুজতে লাগলো কাছে কোথাও হবে হয়তো। ভেসে আসলো মা জাতির কন্ঠ। বাবা রাগিব এদিকে এসো, গরম গরম পিঠা খাও। রাগিব এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে পিঠা তুলে নিয়ে বলতে লাগলো আমার পছন্দের পিঠা। খাও বাবা খাও তোমার পছন্দের পিঠা বানাতে পেরে আমার ভালো লাগছে।ছেলের জন্য জাগিয়ে রাখা, খেজুর গুরের তৈরী পিঠা। গরম গরম খেতে খুব ভালো লাগছে। মনে মনে ভাবতে লাগলো, ভালোই হলো। খালাম্মা কাছ থেকে দুই টা পিঠা, এক বোতল পানি চেয়ে নেব।

রাগিব কোন গড়িমসি না করে, বলেই ফেললো। আমাকে দুটা পিঠা এক বোতল পানি দেন। গ্রাম গুলো একটু ভালো করে ঘুরে দেখবো। আর কবে কখন আসা হয়, নাহয় বলতো যায়না।কোথায় যাচ্ছো বাবা? বিদেশ বিভূয়ে তুমি তো ভালো করে কিছু চিনিনা। পথ ভুলে কষ্ট পাবে তো। রুহিদ উঠুক তারপর যেও। না খালাআম্ম ভয় নেই। আমি ঠিক সময়ে ফিরে আসবো। খালাআম্ম তারাতারি কিছু পিঠা এক বোতল পানি রাগীবের হাতে ধরিয়ে দিল। বাড়ীর অন্য কারো এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি।

রাগিব বেড়িয়ে পরলো অজানার উদ্দেশ্যে। রাস্তায় একা একা। হাজার অভ্যাস নাই। তবু আজ হাটতে ভালোই লাগছে। মানুষের মন কখন যে, কোন রুপ ধারণ করে, তা পাক পরোয়ার দেগার ছাড়া কারো বলার সাধ্য নাই।

ভোর বেলা, চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ, চি চি শব্দ হতেই আকাশের দিকে তাকায়। এক ঝাঁক পাখি রাগীবের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। এক সাথে এতো পাখি আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য কবে দেখেছে মনে পড়েনা। ঢাকা শহরে নাগরিক ব্যস্ততার মাঝে বড় হয়েছে রাগিব। ঘাসফুল ,নদী,আগুনরঙা কৃষ্ণচূড়া ,পাখির বাসা, নদীর জলে ডুবে থাকা এগুলো রাগীবের স্বপ্নের মতো।

অজানা অচেনা মানুষকে নিয়ে রাগিব আকাশ কুসুম চিন্তা করে হেটেই চলছে। রুহিদের দেওয়া দিক নির্দেশনা অনুযায়ী। পাহাড় ঘেরা গহিন অরন্যভূমির চড়াই উৎরাই ভেঙে ক্রমাগত এগিয়ে চলছে। কখনো ধসনামা পাহাড়ের গা বেয়ে, কখনো সরু ফিতার মতো এক একটা রাস্তা ধরে একটানা হেটেই চলছে। ভাঙ্গা দুর্গের মতো এলো পাথারি পাহাড়।নীরব অন্ধকার ঘেরা গভীর খাদ। সব কিছুই ঘন অরন্য ঘেরা।
প্রকৃতি কতো রকমের খেয়ালই যে গোপনে গোপনে চার পাশে ছড়িয়ে রেখেছেন, কার সাধ্য তা বোঝে।

পথে তেমন কোন লোক জনের দেখা পেলোনা। অচেনা অজানা মানুষটিকে নিয়ে ভেবেই যাচ্ছে। এতো কথা শোনার পর ও ঐ মানুষটি ছেলে না মেয়ে তা জানাই হয়নি। রাগিব ভাবছে যাকে নিয়ে এতো জল্পনা কল্পনা সে যদি মহিলা হয় কার মতো হবে? কি রকম বয়স হবে। আমার সাথে কি কথা বলবে! নাকি আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিবে। আমার কি ওনাকে ভালো লাগব? মনের লুকানো দু একটা ভালো লাগার বাক্য বলতে পারবো।
যেমন, আমার মনের সাজানো বাগান সে বাগানের গোলাপ তুমি, দুঃখ দাও তবু ভালো, হারিয়ে কেন যাবে তুমি। নাহ একি ভাবছি। সে তো পুরুষ ও হতে পারে।

গ্রামের ভিতরের পথ এড়িয়ে নিজের পছন্দ মতো রাস্তা ধরে ছুটে চলছে রাগিব। অনেক দুরে দুরে দু একজন মানুষ দেখা যাচ্ছে। প্রচন্ড জোরে বাতাস বইতে লাগলো। হঠাৎ আকাশকে কালো মেঘে ঢেকে ফেললো। প্রবল বেগে বাতাস ছেড়ে ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। রাগিব দ্রুত ছুটতে লাগলো ।ছুটতে ছুটতে চলে এলো বিশাল এক বাগানে। একি বাতাসের ঝাপটায় গাছের তলায় পরে আছে শত শত কাঁচা আম। যে যেমন পারছে কুড়িয়ে নিচ্ছে। রাগিব এ দৃশ্য কখনো দেখেনি। দাড়িয়ে দাড়িয়ে চুপচাপ দেখছে। নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। নিজের অজান্তেই দু একটা আম কুড়িয়ে নিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কালো মেঘ কোথায় হারিয়ে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। রাগিব আবার হাটতে শুরু করলো। দিন ভর একা চলা, গা যেন জম জম করছে। নিস্তব্ধতা,একাকিত্ব নিজেকে অসহায় লাগছে। কি করা যেতেই হবে। অজানাকে জানার প্রবল ইচ্ছাই রাগীবের পথ চলা সাহায্য করলো।

পাহাড়ের গায়ে লতানো ঘাস ছেয়ে গিয়েছে। মাটির ধস নামায় কোথাও ঝুলছে কালো কুচকুচে রাশি রাশি ঘাসের শিকড়। বৃষ্টি শেষে আকাশ খিলখিলিয়ে হাসির মতো রোদ নানা রঙে খেলা করছে।

পথের গতি দেখে বুঝতে পারলো, গন্তব্যে পৌছাতে আর বেশী বাকি নাই। যতদুর চোখ যায়, সবুজ আর সবুজ। খানিক দুরে সবুজের সংগে আকাশের মিতালি ঘটছে।

অপরূপ সৌন্দর্য্য ঘেরা বৃক্ষলতা বেষ্টিত ছোট একটা বাংলো বাড়ী। বাড়ীটির চারপাশ দোলায়িত বৃক্ষগুলো যে আলোড়িত হয়ে খেলা করছে ফলে ফুলে ঘেরা বাড়ীটি। এ যেন স্বপ্ন পুরি। জন শূন্যহীন নীরব নিঃশব্দ কোলাহল মুক্ত। আশে পাশে বাড়ী ঘর নাই বললেই চলে।

বিরামহীন বৃক্ষের ছায়া তলে রাজপ্রাসাদ না হলেও নিজের বাড়ী নিজের প্রাসাদ। কবি রজনীকান্ত সেনের সেই অমর কবিতাটির কথা মনে পরে গেল। বাবুই পাখিরে ডাকি বলেছে ছড়াই, কুড়ে ঘরে
থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।

বাড়ীটি ভুতুড়ে ভাব, কোন সারা শব্দ নাই। যে কোন অজানা মানুষ এ জায়গায় আসলে ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু রাগিব এ্যাডভেন্চারের গন্ধ পাচ্ছে। গা জম জম করছে। ঝির ঝির বাতাসে গাছের ডাল পালা গুলো রাগীবের গায়ে মাঝে মাঝে মৃদু আঘাত করছে। রাগিব ক্রমাগত ঢুকে পরছে সবুজের রাজ্যে।

বাড়ীটির চারপাশের সারি সারি গাছ গুলো দাঁড়িয়ে তাদের শোভা বিলিয়ে দিচ্ছে।পূর্ব পাশে নানান ধরনের আম গাছ। পশ্চিম পাশে লিচু গাছ। উত্তর পাশে কালো জাম গাছ গুলো কাজল একে দিয়েছে। বাড়ীর দক্ষিণ পাশ অর্থাৎ সম্মুখ দিক। বাহারী ফুলের গাছে বানানটি সাজানো। এ যেন ফুল দানিতে ফুলের সমারোহ নিয়ে বসে আছে। সু দক্ষ মালির হাতে যাদুর স্পর্শ দিয়ে বানানটি সাজিয়েছে।

থোকায় থোকায় আম জাম লিচু মৃদু মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে। মনে হচ্ছে ফল গুলোকে গাছেরাই পাহারা দিচ্ছে। এখানে হাত দেওয়ার কারো সাধ্য নাই। রাগিব ঘুরে ঘুরে চারদিক যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। বাড়ীটি দেখার পর বুঝতে পারলো। এখানেও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। গাছের নিচে আম জাম পড়ে আছে। বাড়ীটি দেখার পর রাগীবের ভাবনা আরো বেড়ে গেল। কেন এই নির্জনে তৈরী করা হলো ছোট নীড়। আমাকে জানতেই হবে। দেখতে হবে সে মানব নাকি মানবী।

বাড়ীটি আনুমানিক ৩ বিঘা জমির উপর হবে। বাড়ীর কর্তা চারপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য কোন সীমানা প্রাচীর করেনি। ফলে বাড়ীর সংগে চারপাশের প্রকৃতির একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিচিত্র বন্য প্রানীদের অবাধ যাতায়াত এখানে। প্রায় সারা দিনই আশ পাশের পথ মারিয়ে শিয়ালের দল রাজসিক ভঙ্গিতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। মাত্র ৫০ গজ দূরেই একটি শিয়ালকে নির্ভয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কারণ ওদের কেউ বিরক্ত করে না।

বাড়ীতে ঢুকার রাস্তাটা ইট বিছানো। ঐ রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো রাগিব। বসার একটা জায়গা খুঁজতে লাগলো। এখান থেকে এতো সহজেই বের হওয়া যাবে না ।বাড়ীর মালিক যেই হোকনা কেন ওনার সাথে দেখা করে যেতে হবে। হয়তো আর কোনদিন আসা হবে না।

বাগানের এক প্রান্তে দেখা যাচ্ছে বসার একটা ব্যাবস্থা আছে। এগুতে লাগলো রাগিব।গাছের নিচে বসে প্রকৃতির বাতাস খাওয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে মাচাং করে রেখেছে। আরাম করে বসে পরলো রাগিব। এতক্ষণে ক্লান্ত হয়ে পরেছ। পানির বোতলটা ব্যাগ থেকে বের করে এক ঢোক খেয়ে নিল।আপনা থেকে মাচাংয়ে গা ঢেলে দিয়ে প্রকৃতির সুন্দর বন ভূমি মুগ্ধ হয়ে দেখছে। রাগীবের স্বপ্নীল দু'চোখ কখন যে হারিয়ে গেছে ঐ আকাশ নীলে মেঘের ভেলায়। রাগীবের কৌতুহলী চোখ ঘুরছে। আর অবাক হয়ে দেখছে অপরূপ দৃশ্য। সবুজে সবুজে ভরপুর। যার হাতের স্পর্শে মনোরম দৃশ্য তৈরি হয়েছে যে কত সুন্দর তা ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তেই গুন গুন করে গাইতে লাগলো।

কত যে ভালো আমি বাসি তোমায়
সে কথা তুমি যদি জানতে,
আমার এ জীবন ধন্য হতো
যদি গো আমায় ভালো বাসতে।

বাড়ীর মুল ফটকের দিকে চোখ পড়তেই রাগীবের খেয়ালী ভাবনার ভীত নরে উঠলো। এ কী? মুক্ত খচিত খোদাই করা লেখা """ম্যারী নিবাস"""এটা কী বাড়ীটির নাম? হয়তোবা। ফটকের দিকে এগোতেই দেখতে পেল ফটকটি তালাবদ্ধ। এখন কী করে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় ২টা বেজে গেছে।

যাক বাড়ীর দেখাতো মিললো। বাড়ীর মানুষের দেখা কি ভাবে মিলানো যাবে সেই চিন্তা এখন। মনের তৃষ্ণা না মিটুক, চোখের তৃষ্ণানা তো আপাতত মিটলো। আগামী কাল আবার আশার চিন্তা মাথায় নিয়ে রাগিব বাড়ী থেকে বের হবার সিদ্ধান্ত নিলো।

সময় গড়িয়ে কখন যে মন ভোলানো সোনা ঝরানো বিকেল হয়ে গেছে, তা টের পেলো পেটের খুদা জানান দেওয়ার কারণে। খালাম্মা দেওয়া পিঠা গুলো খেয়ে নিলো। বোতলের পানি শেষ পর্যায়ে।কাক পক্ষীরও কোন সন্ধান মিললো না। চিন্তায় পড়ে গেল রাগীব। সন্ধ্যার আগেই এখান থেকে বের হতে হবে। এই জংগল বাড়ীতে রাত হলে বিপদও হতে পারে। এই ভেবে রুহিদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।

পথে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো। বাড়ী ফিরে কাওকে কিছু বলবোনা।অভিযানটা সফল করে তার পর সবাইকে বলবো। বাড়ী ফিরতে খানিকটা রাতই হয়ে গেল। রুহিদ রাগীবকে দেখেই বলতে শুরু করল, কোথায় গিয়েছিলে? বলে যাবেনা! আমরা তোর জন্য কতটা দুশ্চিন্তা করছি।আর কখনো যেন এ রকম না দেখি। যেখানেই যাবি আমাকে সংগে নিয়ে যাবি। রাগীব রুহিদের কোন কথারই উত্তর দিলা। খেয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast