www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রণয় -২

পর্ব -২
রনবীর ম্যারীর বড় ভাইয়ের বন্ধু। একই নামে নাম,ম্যারীর ভাইয়ের নাম ও রণবীর। এক সাথে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এক গ্রামে বাড়ী। প্রায়ই ম্যারীদের বাড়ীতে আসতো। বাড়ীর সবাই রনবীরকে অনেক সমাদর করতো। নানান ধরনের নাস্তা তার জন্য তৈরী হতো।ম্যারীদের বাড়ীতে গভীর আথিথীয়তার ভাগীদার ছিল সে। অকারনেই ম্যারীর কাছে এটা সেটা চাইতো। বড় ভাইয়ের বন্ধু বলে অর্ডারের যোগান দিতে হতো ম্যারীকে।

হঠাৎ একদিন রনবীর ম্যারীর দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছে। অবাক হয়ে ভাবছে! মেয়েটা কখন যে নাম না জানা বনো ফুলের মতো লকলকিয়ে বড় হয়ে গিয়েছে।
বুঝতেই পারলাম না। আচার আচরণ ব্যাবহার আমায় মুগ্ধ করে তুলছে। আমি তো এখন এই বাড়ীতে শুধু বন্ধুর জন্য আসিনা। ম্যারীকে এক নজর দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে থাকে। কখন ম্যারীর দেখা পাবো বুকের মধ্যে হাহাকার করে। একটি কথাও তো বলিনা, তবু ছটফট করি কেন?

এক সকালে ম্যারীকে স্কুলে যেতে দেখে, রণবীরের বুকের ভিতর এক অজানা পাখি চিড়িক দিয়ে ডেকে উঠলো।
রণবীর দৌড়ে গিয়ে বলে বসলো, চল তোমাকে স্কুলে পৌছে দিয়ে আসি। ম্যারী কোন কথার উত্তর না দিয়ে হাটতে লাগলো। কথা বলার ভাষা নেই। এই মুহুর্তে স্নেহের পরশ, ভালোবাসার ব্যাকুলতা,শব্দহীন আবেগের উল্লাস মনের ভিতরে শ্রাবণের বর্ষণের মতো বইতে লাগলো।

ম্যারী স্বপ্নের রাজ্যে কল্পনার জগতে ভাসতে লাগলো। রনবীরকে এক নজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো। কত অপেক্ষার প্রহর কেটেছে। বহু বিকেল,বহু সন্ধ্যা কেটেছে ইঙ্গিতের ভাষায়। দৃষ্টির বিনিময়, আর অপ্রকাশ্য অনুভূতির ইশারায় ।

ম্যারী পড়ার টেবিলে বসে বসে রনবীরকে মনের ক্যানভাসে নানান রঙে আঁকতো। আর মনের দর্শনে দেখতে পেতো। যেন রনবীর ঘরে ঢুকে পাশে এসে দাঁড়িয়ে, কায়দা করে পড়া শোনার কথা জিজ্ঞাসা করছে। তোমাদের স্কুলে কি কি সাবজেক্ট পড়া শোনা হয়। তুমি কোন সাবজেক্ট বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করো। এই সব মামুলী কথার ফাঁকে কখন যে ম্যারীর হাতের উপর নিজের হাত খানা রেখে বলতে লাগলো, সারা জীবন কি আমরা এ ভাবে হাতে হাত রেখে না পেরনো বছর গুলো কাটিয়ে দিতে পারি না। জবাব বিহীন অবস্থায় ম্যারী এক পলক রনবীরের দিকে তাকিয়ে ওর হাতের উপর আর একটি হাত রেখে দিল। ম্যারীর হাতের স্পর্শে সারা শরীর তিরতির করে কেপে উঠলো। বুকের ভিতরের আলোড়ন প্রায় সশব্দে হয়ে উঠলো। সন্ধ্যার সেই আবছা আলোয় ওদের কাছে মনে হয় পূর্ণিমা রাতের থৈ থৈ জোসনা যেন দুজনকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেল স্বপ্নলোকে।

একদিন রাতের খাবারের সময় বড় ভাই, মাকে বলছে। মা তোমাদের রনবীরকে কেমন লাগে? মা জানতে চাইলো। কেন এ কথা বলছো? রনবীর ম্যারীকে পছন্দ করে। আমার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলো। আমারও ইচ্ছা রনবীরের সাথে আমার বোনটা ভালোই থাকবে। তোমাদের পছন্দ অপছন্দের কথা জানতে চাচ্ছি। বড় ভাইয়ের এই প্রস্তাবে মায়ের মুখে এক ঝলক পূর্ণিমার আলো এসে পড়লো। ঘরময় সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

ধীরে ধীরে ম্যারীর হৃদয়ে রনবীরের নামটা খোদাই করে লেখা হয়ে গেল।রনবীরের মুখশ্রী সর্বত্রই দেখতে লাগলো।
তার ধ্বনি ম্যারীর হৃদয়ে বাজতে লাগলো। ম্যারীর সাদা কালো পৃথিবীটা রঙ্গিন হয়ে উঠলো।
কেবলই মনে হতো, ভালোবাসা বড় মধুর অনুভূতি। ম্যারী ভালো বাসতে শুরু করলো। আর রনবীর যেন আরো বেশী ভালোবাসতে লাগলো। ম্যারীকে এক নজর দেখার জন্যে বাড়ীর দারের কাছে, ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতো। যখন ম্যারীর সাথে দেখা হতো, হালকা মুচকি হাসি দিয়ে রনবীর বন্ধুর ঘরে ঢুকে পড়তো। ম্যারী মাথা নিচু করে আড়ালে চলে যেত।

ভাইয়ার সাথে গল্প আড্ডা হাসা হাসি করতো। ম্যারী তার ধ্বনি গুলো আড়াল থেকে শ্রবণ করতো। ম্যারী নিজেকে প্রশ্নে প্রশ্নে বির্দীন্য করতে লাগলো। ভালোবাসা কাকে বলে। প্রতি উত্তরে ম্যারীর মনের গভীরে বাজতো।ভালোবাসা মানে শান্তি।ভালোবাসা মানে হৃদয় নিংড়ানো এক বিন্দু রক্ত।ভালোবাসা মানে সর্গ। ভালোবাসা মানে পৃথিবী। ভালোবাসা মানে পূর্ণিমার চাঁদের আলো। ভালোবাসা মানে সবুজের অরণ্য।

দিন গেলো, মাস গেলো ইউনিভার্সিটি খুলে গেল। দুই বন্ধু ঢাকায় চলে গেলো। ম্যারীর বড় ভাইয়ের স্কলারশিপ হলো।বিদেশে পড়াশোনা করারজন্য। ভাইয়া চলে গেল দেশের বাইরে। রণবীরের ম্যারীদের বাড়ীতে আসার সূযোগ কমে গেল। ম্যারীর সাথে যোগাযোগ করার কোন রাস্তা রইলো না।

এদিকে ম্যারীর চোট চাচা ম্যারীকে বিয়ে দিতে ব্যতি ব্যাস্ত
হয়ে উঠলো। চাচা এখন ম্যারীর বড় অভিভাবক। চাচা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে এলো। চাচা বিভিন্ন ছেলের খোঁজ খবর নিতে শুরু করলো। ম্যারীর মা চাচাকে ডেকে রণবীরের কথা বলতেই চাচা আনন্দে উৎফুল্ল হলো। বললো তাহলে আর ছেলে দেখার দরকার নাই। চাচা রণবীরের বাড়ীতে লোক পাঠালো।রণবীরের বাড়ীর লোক ও ভীষন আনন্দিত। কিন্তু রণবীর কোথায়! তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গিয়েছে, কাওকে বলেও যায়নি। এক এক করে দুইদিন পার হয়ে গেল। কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। ম্যারীর চাচার ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই সে দেরী করতে রাজি নন। রনবীরের উপর খারাপ মন্তব্য করে বলতে লাগলো। ঐ ছেলে কোনদিনই ভালো হতে পারে না। ওর সাথে আমার ভাতিজিকে বিয়া দিতে পারি না। তাই আর অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করার কোন দরকার নাই।

ম্যারী ছাদে উঠে ফ্যাল ফ্যালিয়া তাকিয়ে আছে, তার প্রিয় বৃক্ষ গুলোর দিকে। তার নিজ হাতে বাগানের গাছ গুলোও
যেন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। ম্যরীর প্রতিটি মুহূর্ত যেন, প্রতিটি বছরের মতো কাটতে লাগলো। মনের কথা গুলো কারো কাছে প্রকাশ করতে পারছেনা। শুধু মনের সাগরে কল্পনার জগত গড়ে তুলছে।

আমি তো মনের কথা কোনদিন সোজাসুজি বলতে পারিনি। বলা হয়নি ।চোখে চোখ রেখেও কোনদিন বলা হয়নি। এখন কি হতে চলছে! আমার এখন কি করা উচিত। জানি না কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমরা যে একজন আরেকজনকে ছাড়া অপূর্ণ। তা হলে আমাদের জীবনটা ধংস হয়ে যাবে?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৯৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ইসমাইল জসীম ১৩/০৫/২০২০
    সুখপাঠ্য গল্প। বেশ ভালো লাগলো।
  • ফয়জুল মহী ১২/০৫/২০২০
    ভীষণ ভালো লাগলো লেখা ।।
 
Quantcast