পাঁচ পয়সার কবি
।। পাঁচ পয়সার কবি ।।
সেই মেসবাড়িটা সবার জানা। কল্যাণী এ -৮ খেলার মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম কোনে, ইট-বালি-সিনেন্ট দিয়ে কোনো রকমে দাঁড় করানো একটা দোতালা বাড়ি। একদল ছেলেদের মাথা গোঁজার আস্তানা। কেউ বা সদ্য ফার্মাসি পাশ করে চাকরির দিন গুনছে আর কেউ বা অন্য কিছু একটা পড়ছে। কল্যাণী উনিভার্সিটিতে পড়া দু এক জন ও মাঝে মধ্যে থাকত। প্রায় সবাই দু একটা টিউশন পড়ায়। কেউ কেউ অবশ্য এই টিউশন করেই নিজের পেট খরচ আর হাত খরচ সবই চালায়। মজার বিষয় এই যে সবার মধ্যে বন্ধত্বের একটা অটুট বন্ধন আছে। সে জন্যই এই মেসের নাম সোনার সংসার। হ্যাঁ, হ্যাঁ সেই সোনার সংসারে কেটেছিল আমার জীবনের তিন বছর।
ছোট বেলা থেকেই আমি ছিলাম কল্পনা প্রবন। ভেবে ভেবেই গড়তাম ভাবের ইমারত। মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসত দু- একটা লাইন। মোটেই তা কবিতা হতো না। কিন্ত আমি ভাবতাম আমার সৃষ্টি, আনন্দেই পাঠ করে শুনাতাম বন্ধুদের। যা হবার তাই হত। একটা কবিতা লিখলে বন্ধুরা দিত পাঁচ পয়সা উপহার। পাঠ করে শোনালে আরও পাঁচ।তবে শোনানোর জন্য নয়- পরের বার না শোনানোর জন্য। ওদের উপহাস আমি ভালই বুঝতাম কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা আমার ছিল না। প্রথম প্ৰথম অবশ্য কিছু মনের করতাম না, বরং মজাই পেতাম। নতুন কবিতা লেখা হলেই ওদের কাছে হাজির হতাম। আর একই ঘটনা ঘটতো বার বার।
বেশ কয়েক মাস পর ঘটল একটা ঘটনা। দিনটা ছিল খুব ব্যস্ততার। সকালে চাকরির ইন্টারভিউ, বিকেলে পর পর তিনটে টিউশন। ফিরেছি অনেক রাতে। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ব্যস্ত নিজের মতো করে। কেউ পড়ছে এমপ্লয়মেন্ট নিউজ, আবার কেউ অনার্সের পরীক্ষার প্রস্তুতি, কেউ বা গান শুনছে ওয়াকমেনে । বাইরে টিপ টিপ বৃস্টি পড়ছে। অন্যান্য দিনের মতো লোডশেডিং হতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। আমি গোগ্রাসে গিললাম ডাল ভাত আর সবজি। মনের মধ্যে অনেক ভাব জল ছবির মতো ভাসছে- কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সুতরাং আমাকে কলম ধরতেই হবে। বসলাম বিছানার উপর, শুরু করলাম। সবে লিখছে দু-তিন লাইন। মন দিয়ে অংকে ব্যাস্ত থাকা বন্ধুটি হটাৎ এসে হাতে পাঁচ পয়সা ধরিয়ে বললো অনেক লিখেছিস আর লিখিস না। কিছু বলার আগেই আবার পাঁচ পয়সা হাতে দিয়ে বললো প্লিজ পড়ে শুনাস না! রাগ-অভিমান আর বেদনায় ফেটে গেল আমার বুক। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ।
মাঝে অবশ্য কয়েকটা কবিতা পাঠিয়েছিলাম প্রকাশকের কাছে। একটাও চাপা হয়নি। আজকাল আর আমার কবিতা আসে না। সময়ের কারাগারে আজও বন্দি আমি , তবু ব্যস্ত সময়ের সাথেই।
আজ আমার ছেলেবেলার গল্প বলছিলাম আমার ছেলেকে। পুরোনো বই খাতা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে পড়ল সেই পাঁচ পয়সা গুলো, নোংরা আর কোনটা বা ক্ষয়ে গেছে যেগুলো আজকের বাজারে একদম অচল ঠিক আমার কবিতার মতো। আমি সযত্নে রেখে দিলাম আমার বিছানার একপাশে। ওরা যেন স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আর যেন ক্ষীন কণ্ঠে বলছে - ' এই পাঁচ পয়সার কবি, আর কবিতা লিখবি না?'
#শক্তিপদ মাইতি
সেই মেসবাড়িটা সবার জানা। কল্যাণী এ -৮ খেলার মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম কোনে, ইট-বালি-সিনেন্ট দিয়ে কোনো রকমে দাঁড় করানো একটা দোতালা বাড়ি। একদল ছেলেদের মাথা গোঁজার আস্তানা। কেউ বা সদ্য ফার্মাসি পাশ করে চাকরির দিন গুনছে আর কেউ বা অন্য কিছু একটা পড়ছে। কল্যাণী উনিভার্সিটিতে পড়া দু এক জন ও মাঝে মধ্যে থাকত। প্রায় সবাই দু একটা টিউশন পড়ায়। কেউ কেউ অবশ্য এই টিউশন করেই নিজের পেট খরচ আর হাত খরচ সবই চালায়। মজার বিষয় এই যে সবার মধ্যে বন্ধত্বের একটা অটুট বন্ধন আছে। সে জন্যই এই মেসের নাম সোনার সংসার। হ্যাঁ, হ্যাঁ সেই সোনার সংসারে কেটেছিল আমার জীবনের তিন বছর।
ছোট বেলা থেকেই আমি ছিলাম কল্পনা প্রবন। ভেবে ভেবেই গড়তাম ভাবের ইমারত। মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসত দু- একটা লাইন। মোটেই তা কবিতা হতো না। কিন্ত আমি ভাবতাম আমার সৃষ্টি, আনন্দেই পাঠ করে শুনাতাম বন্ধুদের। যা হবার তাই হত। একটা কবিতা লিখলে বন্ধুরা দিত পাঁচ পয়সা উপহার। পাঠ করে শোনালে আরও পাঁচ।তবে শোনানোর জন্য নয়- পরের বার না শোনানোর জন্য। ওদের উপহাস আমি ভালই বুঝতাম কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা আমার ছিল না। প্রথম প্ৰথম অবশ্য কিছু মনের করতাম না, বরং মজাই পেতাম। নতুন কবিতা লেখা হলেই ওদের কাছে হাজির হতাম। আর একই ঘটনা ঘটতো বার বার।
বেশ কয়েক মাস পর ঘটল একটা ঘটনা। দিনটা ছিল খুব ব্যস্ততার। সকালে চাকরির ইন্টারভিউ, বিকেলে পর পর তিনটে টিউশন। ফিরেছি অনেক রাতে। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ব্যস্ত নিজের মতো করে। কেউ পড়ছে এমপ্লয়মেন্ট নিউজ, আবার কেউ অনার্সের পরীক্ষার প্রস্তুতি, কেউ বা গান শুনছে ওয়াকমেনে । বাইরে টিপ টিপ বৃস্টি পড়ছে। অন্যান্য দিনের মতো লোডশেডিং হতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। আমি গোগ্রাসে গিললাম ডাল ভাত আর সবজি। মনের মধ্যে অনেক ভাব জল ছবির মতো ভাসছে- কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সুতরাং আমাকে কলম ধরতেই হবে। বসলাম বিছানার উপর, শুরু করলাম। সবে লিখছে দু-তিন লাইন। মন দিয়ে অংকে ব্যাস্ত থাকা বন্ধুটি হটাৎ এসে হাতে পাঁচ পয়সা ধরিয়ে বললো অনেক লিখেছিস আর লিখিস না। কিছু বলার আগেই আবার পাঁচ পয়সা হাতে দিয়ে বললো প্লিজ পড়ে শুনাস না! রাগ-অভিমান আর বেদনায় ফেটে গেল আমার বুক। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ।
মাঝে অবশ্য কয়েকটা কবিতা পাঠিয়েছিলাম প্রকাশকের কাছে। একটাও চাপা হয়নি। আজকাল আর আমার কবিতা আসে না। সময়ের কারাগারে আজও বন্দি আমি , তবু ব্যস্ত সময়ের সাথেই।
আজ আমার ছেলেবেলার গল্প বলছিলাম আমার ছেলেকে। পুরোনো বই খাতা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে পড়ল সেই পাঁচ পয়সা গুলো, নোংরা আর কোনটা বা ক্ষয়ে গেছে যেগুলো আজকের বাজারে একদম অচল ঠিক আমার কবিতার মতো। আমি সযত্নে রেখে দিলাম আমার বিছানার একপাশে। ওরা যেন স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আর যেন ক্ষীন কণ্ঠে বলছে - ' এই পাঁচ পয়সার কবি, আর কবিতা লিখবি না?'
#শক্তিপদ মাইতি
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নাজিবুল হাসান মোল্লা ১৯/১০/২০১৭দারুন।'দিলকো ছু লিয়া'।আমাকেও university life এ এরকম situation র সম্মুখীন হতে হয়েছে।
-
আফরিনা নাজনীন মিলি ১৭/০৯/২০১৭দারুণ কনসেপ্ট! কিন্তু বানান আর শব্দ বিন্যাসে আরো যত্নশীল হলে লেখা আরো সুখপাঠ্য হবে। এগিয়ে যান, শুভকামনায়।
-
মোনালিসা ২৮/০৮/২০১৭ভাল গল্প
-
মোনালিসা ২৮/০৮/২০১৭ভাল
-
মুক্তপুরুষ ২৮/০৮/২০১৭ভেতরে যেন একটা মোচড়ানো ব্যথা অনুভব করছি ; ঠিক বোঝানো যাবে না! ভালোবাসা রইলো। 💜
-
সুলতান মাহমুদ ২৮/০৮/২০১৭Hurt touching.
-
অধীতি ২৮/০৮/২০১৭অনেকদিন পরে একটা গল্প পড়লাম,যেটা মনে মনে চেয়েছিলাম।আমার যে পাঁচ পয়সা ও জোটেনা।।
-
মিজান নকীব ২৮/০৮/২০১৭অসাধারন
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৮/০৮/২০১৭পাঁচ পয়সার কবি কম মূল্যের নয়।ছাপা বানানটি ভুল আছে ঠিক করে নিন।
-
সাঁঝের তারা ২৭/০৮/২০১৭চমৎকার