www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পরিবর্তন

ছোটবেলার কথা। কাকুর সাথে বাসে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। কাকু তো মারাত্মক অস্থির। সেই সময় যে লোকটা সর্বপ্রথম সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিল সে সেই বাসটির কন্টাক্টর। যথাসাধ্য সহায়তা করেছিল আমায়। এরকম ঘটনা আরো অনেক শোনা যেত। ঘর থেকে বাইরে যাওয়া লোকটার অন্তত এটুকু নিশ্চয়তা ছিল যে তার বিপদে তার আশেপাশের মানুষগুলো এগিয়ে আসবেই। এটাই বাঙালি সমাজের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আজ সেই সত্য ঘটনাগুলোকেই কেমন যেন কল্পকাহিনী মনে হয়। অসুস্থকে সহায়তা তো বহু দূরের ব্যাপার, তাকে হত্যা করে ফেলা হচ্ছে। জনবহুল রাজপথে মানুষের সামনে খুন হচ্ছে মানুষ। মানুষকে বাঁচানোর পরিবর্তে মানুষ মারার ভিডিও করাটাই এখন ট্রেন্ড। ষোলকোটি মানুষের দেশে এখন প্রত্যেকেই ভীষণ একা। আজ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে পথে তার কোন বিপদ ঘটবে না। তার থেকেও বড় ভয়ের বিষয় হচ্ছে তার বিপদে কেউ এগিয়ে আসবে না। কেন এমন হলো? আবেগী সহমর্মী মানুষগুলি এরকম ভয়ংকর দানবীয় হলো কী করে? আমরা তো অনেক এগিয়েছি। আজ নিম্নবিত্তদের হাতেও স্মার্টফোন অর্থাৎ প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট সেবা তারও হাতের মুঠোয়। বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের হওয়া উচিত ছিল আরও ভাল মানুষ কিন্তু আমরা হয়ে উঠছি মূর্তিমান দানব। কেন? সমস্যাটা কোথায়? যারা অপরাধ করেছে, তাঁদের অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। কিন্তু তার থেকেও বড় বিষয় অপরাধটা কেন হচ্ছে তা ভাবা দরকার। কারণ এর পুনরাবৃত্তি আমরা কেউই চাই না। আমাদের এই তথাকথিত এগিয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের মধ্যে একটা বিশ্রী এবং ভয়ংকর অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আজ আমরা কেউই কারো সহযোগী নই, প্রতিযোগী। তাই যেখানে কোন স্বার্থ নেই, সেখানে আমরা কেউ নেই। নিজের হীনাতিহীন স্বার্থের জন্য অপরের চরম ক্ষতি করতেও হাত কাঁপছে না। আমাদের রাষ্ট্র, রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে, কিন্তু সবার আগে আমাদের পূর্বতন বাঙালি সমাজের মূল্যবোধগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে । তা না হলে সব বিফলে যাবে, সব।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০৭/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast