সম্পর্ক
সেদিন ছিল পয়লা বৈশাখ। ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ করে ধেয়ে এল ঝড়। তারপর বৃষ্টি। সবাই পালাতে শুরু করল। আমি মাঝপথে বসে পড়লাম। মাঝরাস্তায় আমি পদ্মাসনে বসে আছি। আমার পড়নে একটা লাল ফতুয়া আর সাদা পাঞ্জাবী। মুখে একটা পেঁচার মুখোশ। আমার চারপাশ দিয়ে পথচারীরা ছুটতে ছুটতে যাচ্ছে। তীব্রগতিতে বেল বাজাতে বাজাতে চলছে সাইকেল রিকশাগুলি। মোটরগাড়ি এ পথে তেমন একটা আসে না। পাশেই বেশ প্রশস্ত একটা সড়ক। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক সব ঐ পথেই যাতায়াত করে। আমি ঠায় বসে আছি। বৃষ্টিতে আমার শরীর ভিজে চুপচুপে হয়ে যাচ্ছে। আমার চারপাশে সব ছুটে চলেছে। শুধু আমি বসে আছি। নিজেকে মহাকাল মনে হচ্ছে। কালপ্রবাহের মাঝে আমি এক নির্লিপ্ত দর্শক মাত্র।
এমন সময়ে ছাতা মাথায় সে এল। অঙ্গে তার কমলা রঙের শাড়ি। ভিজে সেই শাড়ি উড়ছে বাতাসে। সেই সাথে উড়ছে তার বন্ধনহীন এলোকেশ। ওহ্, বাতাস এত সৌভাগ্যবান কেন?
আমার চারপাশে সবাই শুধু ছুটছে। আমাকে নিয়ে কিছু বলার অবকাশ কারো হচ্ছে না। সেই প্রথম বলল,
“পাগল নাকি?”
“হলে ক্ষতি কি?”
মেয়েটা প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেছে। বিরবির করে কি সব বলে দ্রুত হেঁটে চলে যাবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ভেজা শাড়ি পায়ে জড়িয়ে গিয়ে হাঁটার গতি কমে যাচ্ছে। আমি মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখছি। রায়গুণাকর বলেছিলেন, ‘‘কে বলে শারদশশী সে মুখের তুলা, পদনখে পরে তার আছে কতগুলা।” এ মেয়ের কাছে রায়গুণাকর বর্ণিত সেই রূপসীও হার মানতে বাধ্য।
মেয়েটি কিছুদূর গিয়ে আবার আমার দিকে ফিরে চাইল। আমি একইভাবে বসে আছি। সে কিছুটা অবাক হল, মুখে ‘থাক বাবা, আমার কি?’ টাইপের একটা ভঙ্গি করল এবং চলে গেল। আমি বসা থেকে শুয়ে পড়লাম। রাস্তার মধ্যে আমি শুয়ে আছি। বারিধারা আমার বুকে আঘাত করছে। আহ্, পৃথিবীর সকল আঘাতই যদি এত মিষ্টি হত!
এভাবেই কাটল বেশকিছুক্ষণ। আমার চারদিকে এখন শুধুই বৃষ্টি আর বৃষ্টি। ভেজা কানে বৃষ্টির সুরই বাজছে, সিক্ত আঁখি দেখছে অপরূপ বর্ষণদৃশ্য, সারা শরীর জুড়ে আছড়ে পড়ছে বৃষ্টি। মুখোশটিতে বৃষ্টিপতনের শব্দ শুনতে ভালই লাগছিল। কিন্তু তারপরও ওটিকে খুলে ফেললাম। মুখে সরাসরি বৃষ্টিধারার অনুভূতি নেবার জন্য। আহ্, কি শান্তি !!!!
চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। আমি এখন আনন্দে লীন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। চোখ বন্ধ থাকলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছি। এ এক অনন্য অনুভূতি। কিছুক্ষণ পর পর বাজ পড়ছে। বিকট বিকট শব্দ হচ্ছে। শুনতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। আশেপাশেই কোথাও বোধহয় একটা পড়েছে, বেশ বড় রকমের শব্দ শুনলাম। আবারও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আবারও বাজ পড়তে পারে। যেকোন জায়গায় পড়তে পারে। এমনকি আমার উপরেও পড়তে পারে। আমি মরে যেতে পারি। তবে এই মৃত্যুটা বেশ অদ্ভুত ধরণের হবে। কোনকিছু বোঝার আগেই পুড়ে শেষ হয়ে যাব। এক সেকেণ্ডেরও কম সময়ে ঝামেলা শেষ। খুব একটা খারাপ কিছু হবে না। কতভাবেই তো মরতে পারি। ডায়রিয়ার চোটে বিছানার কালার চেঞ্জ করেও মরতে পারি অথবা অন্যকোনভাবে শয্যাশায়ী হয়ে নিজের মলমূত্রে গড়াগড়ি করে খুব বিশ্রীভাবেও মরতে পারি। মরতে পারি কোন অ্যাকসিডেন্টেও। আমার মাথাটা ফেটে ঘিলুটা বেরিয়ে এসে রাজপথে পড়ে থাকবে, পথের কুকুররা তা চেটে চেটে খাবে। এরকম আরো অনেক বিশ্রীরকমভাবে মৃত্যুটা এসে হাজির হতে পারে আমার সামনে। এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর অধিকাংশ মৃত্যুই বিশ্রীভাবে আসে। মৃত্যু জিনিসটাকে অনেক সাহিত্যিক দার্শনিক খুব লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন। এমিলি ডিকিন্সনের কবিতা পড়লেতো মৃত্যুকে খুব উপভোগ্য একটা বিষয় বলে মনে হয়। কিন্তু মৃত্যু জিনিসটা নিজেকে এত লঘু করে দেখাতে চায় না। সে নিজেকে খুব ভয়ংকরভাবে হাজির করে। এটাতেই তার স্বার্থকতা। তাই আমি যদি আজ এখানে এত সহজে মরে যাই, তাতে ক্ষতি কিছু হবে না। কারণ ঐসব বিশ্রী মৃত্যুর চেয়ে এই সুন্দর বৃষ্টিস্নাত বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে টুপ করে মরে যাওয়া অনেক ভাল।
‘‘যা ভেবেছিলাম তাই। তুমিই তবে...” বিকট মধুর এক চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি ছাতা হাতে সেই মেয়েটি দাাঁড়িয়ে আছে। এখন তার পরনে আর কমলা রঙের শাড়ি নেই। একটা নীল সালোয়ার কামিজ পরে আছে। তবে একটা জিনিস ঠিকই আছে। এখনও তাকে সেরকমই অপূর্ব লাগছে। আমি কিছু বলার আগেই আমাকে কলার ধরে টেনে মাটি থেকে তুলে মাথাটাকে ছাতার নিচে টেনে নিল।
বাড়ি গিয়েই ডিভোর্সের কাগজটা ছিঁড়ে ফেলব।
এমন সময়ে ছাতা মাথায় সে এল। অঙ্গে তার কমলা রঙের শাড়ি। ভিজে সেই শাড়ি উড়ছে বাতাসে। সেই সাথে উড়ছে তার বন্ধনহীন এলোকেশ। ওহ্, বাতাস এত সৌভাগ্যবান কেন?
আমার চারপাশে সবাই শুধু ছুটছে। আমাকে নিয়ে কিছু বলার অবকাশ কারো হচ্ছে না। সেই প্রথম বলল,
“পাগল নাকি?”
“হলে ক্ষতি কি?”
মেয়েটা প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেছে। বিরবির করে কি সব বলে দ্রুত হেঁটে চলে যাবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ভেজা শাড়ি পায়ে জড়িয়ে গিয়ে হাঁটার গতি কমে যাচ্ছে। আমি মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখছি। রায়গুণাকর বলেছিলেন, ‘‘কে বলে শারদশশী সে মুখের তুলা, পদনখে পরে তার আছে কতগুলা।” এ মেয়ের কাছে রায়গুণাকর বর্ণিত সেই রূপসীও হার মানতে বাধ্য।
মেয়েটি কিছুদূর গিয়ে আবার আমার দিকে ফিরে চাইল। আমি একইভাবে বসে আছি। সে কিছুটা অবাক হল, মুখে ‘থাক বাবা, আমার কি?’ টাইপের একটা ভঙ্গি করল এবং চলে গেল। আমি বসা থেকে শুয়ে পড়লাম। রাস্তার মধ্যে আমি শুয়ে আছি। বারিধারা আমার বুকে আঘাত করছে। আহ্, পৃথিবীর সকল আঘাতই যদি এত মিষ্টি হত!
এভাবেই কাটল বেশকিছুক্ষণ। আমার চারদিকে এখন শুধুই বৃষ্টি আর বৃষ্টি। ভেজা কানে বৃষ্টির সুরই বাজছে, সিক্ত আঁখি দেখছে অপরূপ বর্ষণদৃশ্য, সারা শরীর জুড়ে আছড়ে পড়ছে বৃষ্টি। মুখোশটিতে বৃষ্টিপতনের শব্দ শুনতে ভালই লাগছিল। কিন্তু তারপরও ওটিকে খুলে ফেললাম। মুখে সরাসরি বৃষ্টিধারার অনুভূতি নেবার জন্য। আহ্, কি শান্তি !!!!
চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। আমি এখন আনন্দে লীন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। চোখ বন্ধ থাকলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছি। এ এক অনন্য অনুভূতি। কিছুক্ষণ পর পর বাজ পড়ছে। বিকট বিকট শব্দ হচ্ছে। শুনতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। আশেপাশেই কোথাও বোধহয় একটা পড়েছে, বেশ বড় রকমের শব্দ শুনলাম। আবারও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আবারও বাজ পড়তে পারে। যেকোন জায়গায় পড়তে পারে। এমনকি আমার উপরেও পড়তে পারে। আমি মরে যেতে পারি। তবে এই মৃত্যুটা বেশ অদ্ভুত ধরণের হবে। কোনকিছু বোঝার আগেই পুড়ে শেষ হয়ে যাব। এক সেকেণ্ডেরও কম সময়ে ঝামেলা শেষ। খুব একটা খারাপ কিছু হবে না। কতভাবেই তো মরতে পারি। ডায়রিয়ার চোটে বিছানার কালার চেঞ্জ করেও মরতে পারি অথবা অন্যকোনভাবে শয্যাশায়ী হয়ে নিজের মলমূত্রে গড়াগড়ি করে খুব বিশ্রীভাবেও মরতে পারি। মরতে পারি কোন অ্যাকসিডেন্টেও। আমার মাথাটা ফেটে ঘিলুটা বেরিয়ে এসে রাজপথে পড়ে থাকবে, পথের কুকুররা তা চেটে চেটে খাবে। এরকম আরো অনেক বিশ্রীরকমভাবে মৃত্যুটা এসে হাজির হতে পারে আমার সামনে। এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর অধিকাংশ মৃত্যুই বিশ্রীভাবে আসে। মৃত্যু জিনিসটাকে অনেক সাহিত্যিক দার্শনিক খুব লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন। এমিলি ডিকিন্সনের কবিতা পড়লেতো মৃত্যুকে খুব উপভোগ্য একটা বিষয় বলে মনে হয়। কিন্তু মৃত্যু জিনিসটা নিজেকে এত লঘু করে দেখাতে চায় না। সে নিজেকে খুব ভয়ংকরভাবে হাজির করে। এটাতেই তার স্বার্থকতা। তাই আমি যদি আজ এখানে এত সহজে মরে যাই, তাতে ক্ষতি কিছু হবে না। কারণ ঐসব বিশ্রী মৃত্যুর চেয়ে এই সুন্দর বৃষ্টিস্নাত বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে টুপ করে মরে যাওয়া অনেক ভাল।
‘‘যা ভেবেছিলাম তাই। তুমিই তবে...” বিকট মধুর এক চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি ছাতা হাতে সেই মেয়েটি দাাঁড়িয়ে আছে। এখন তার পরনে আর কমলা রঙের শাড়ি নেই। একটা নীল সালোয়ার কামিজ পরে আছে। তবে একটা জিনিস ঠিকই আছে। এখনও তাকে সেরকমই অপূর্ব লাগছে। আমি কিছু বলার আগেই আমাকে কলার ধরে টেনে মাটি থেকে তুলে মাথাটাকে ছাতার নিচে টেনে নিল।
বাড়ি গিয়েই ডিভোর্সের কাগজটা ছিঁড়ে ফেলব।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
... ৩০/০৭/২০১৮শুভ কামনা।
-
... ৩০/০৭/২০১৮বাড়িতে গিয়ে ডিভোর্সের কাগজ ছেঁড়ার মাহাত্ম্য কি?
ভালো চলছিলো, শেষ লাইনটি এলোমেলো করে দিলো !! -
জহির রহমান ২৭/০৭/২০১৮তারুণ্যে স্বাগতম...
তারুণ্যে থাকুন, ভালো লিখুন।
শুভ প্রত্যাশা... -
জহির রহমান ২৭/০৭/২০১৮গল্পটি সুন্দর ছিল। ভালো লেগেছে...
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৭/০৭/২০১৮চমৎকার লিখেছেন।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ২৭/০৭/২০১৮অনেক ভাল।
-
সুশান্ত সরকার ২৬/০৭/২০১৮অনেক সুন্দর একটি লেখা
-
ইবনে মিজান ২৫/০৭/২০১৮ছিঁড়ুক