www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি দুঃস্বপ্ন

রাকিবের ফোন এলো
--ভাই খবর পাইছেন?
কি খবর আমি বুঝতে পারলাম না। আবার দু-বছর পূর্বের মেস মেম্বার রাকিবের সাথে তো আমার অনেক দিন কোন যোগাযোগও নাই সে কিভাবে আমার নাম্বার এ্যারেঞ্জ করল। চট করে সে চিন্তাও মাথায় বিজলির মত চমকিত হল। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম
--রাকিব ভাই কি খবর?
--এমপি সাব তো মারা গেছে।

আমাদের একসময়কার মেস মেম্বার। ওনার নাম হুমায়ুন আমরা মজা করে এমপি ডাকতাম। হঠাৎ এমন একটা খবর শুনে আমি বেশ হকচিয়ে গেলাম। জলজ্যান্ত একটা সুস্থ মানুষ। দুই বছর আগেও কত মজা করেছি। কত ঠাট্টা করেছি। কিভাবে মারা গেল। বিশ্বাস হচ্ছে না। মানুষের জিবন এতই ছোট। এতই ঠুনকো। রাকিবকে প্রশ্ন করলাম।

--কি হয়েছিল?
-- বাসে করে অফিসে যাচ্ছিল। কারা যেন পেট্রল বোমা মেরেছে।
শুনে আমি থ লেগে গেলাম। কয়েকদিন ধরে কি সব বাজে স্বপ্ন দেখছি। লোকে বলে নিজের উপর দেখলে পরের উপরে যায়। তাই হল।

কয়েকদিন আগে আনিস ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। শুনেছি উনার সাথে নাকি হুমায়ুন ভাইয়ের দেখা হয়েছিল। উনি আমাকে বলেছিলে --জানেন, এমপি তো বড় একটা কম্পানিতে স্টোরে চাকরি পাইছে। এখন আর দারোয়ানের চাকুরিটা করে না। খবরটা শুনে খুব ভাল লেগেছিল। ইন্টার পাশ করা একটা ছেলে দারোয়ানের চাকুরি করা মানায়ও না। আর একটা ছেলেও হওয়ার খবর আরও আনন্দ দায়ক ছিল।

বোমা হামলাকারী জাহান্নামের কিট, তুই কি জানিস হুমায়ুন ভাইয়ের অভাবে ঘেরা ছোট সুখের একটা সংসার আছে। কে দিবে তোদের এই অপকর্মের শাস্তি। ঐ ফুটফুটে বাচ্চাটা কাকে বাবা ডাকবে এই প্রশ্নগুলো নিজেই নিজেকে করি। যারা মানুষের কল্যাণের কথা বলে রাজনীতি করে তারাই নাকি মানুষ মারার জন্য বোমারুদের ভাড়া করে। বড় দুঃখজনক।

রাজনীতি বলতে দেশে যখন তখন পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারা। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপারের প্রতি দোষাদোষি করে তো দায় সারছে কিন্তু সাধারণ নাগরিকেরা কোথায় যাবে। আবার বিরোধীরা বলছে সরকার নাশকতা বন্ধের নামে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা এনকাউন্টার করে তাদের নেতাদের মারা হচ্ছে। মহা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকতে হয় সারাক্ষণ। কারও কথা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বিশ্বাস কি করে করি রাজনীতিবিদদের বক্তব্যর শেষ কথা বলে নাকি কিছু নাই।

হুমায়ুন ভাই কোন রাজনীতি করে না তা হলে তার মুত্যুর হল কেন। এই প্রশ্ন করার জায়গা কই। কে দিবে সাধারণের নিরাপত্তা। বছরে বিভিন্নভাবে সরকারকে তো হাজার হাজার টাকা ট্যাক্স দেই। বিনিময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিচয়পত্র ছাড়া তো কখনো কিছু দাবি করি না।

হুমায়ুন ভাইয়ের আচারণ মেয়েলি টাইপের ছিল। তার একটা কথা এখনও আমার কানে বাজছে। আমাকে বলেছিল ‘ভাই সীট ভাড়া নিতেও ইন্টাভিউ দিতে হবে?’ আমাকে মেসে সীট দিবেন না চাকুরি? তার কথা শুনে আমি আনন্দ পেয়েছিলাম। আমি মজা করার জন্য বলেছিলাম ভাই শুধু ইন্টারভিউ না, রাকিব ভাই মেস ম্যানেজার উনি প্রয়োজনবোধ করলে আপনার রিটেন পরীক্ষাও নিতে পারেন। তবে প্রশ্ন কঠিন হবে না। কাগজপত্র নিয়ে শুক্রবার দশটার মধ্যে আসবেন। হুমায়ুন ভাই মেনে নিলেন। মেনে না নিয়ে কি করবেন। কলেজ ভার্সিটি এরিয়া ছাড়া এই শহরে ব্যাচেলরদের জন্য সীট ম্যানেজ করা দুরহ কাজ।
শুক্রবার সকালে হাজির হলেন ঠিকই কিন্তু রাকিব ভাই ওনাকে মেসে নিবেন না। আমরা স্টুডেন্টদের মেসে থাকতাম। হুমায়ুন ভাই কর্মজীবি। তারপর বয়সে আমাদের সবার সিনিয়র। হুমায়ুন ভাইয়ের বয়স আমাদের চেয়ে বেশি এটা উনি মানতে নারাজ। তার যুক্তি মাথার চুল কিছুটা পাতলা ঠিকই তবে বয়স বেশি না। হুমায়ুন ভাই কি সব মেয়েলি টাইপের অভিমান কারত কারণ ওনার সব ব্যাপারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতাম। আবার গায়ে পরে খ্যাপাতাম। কখনো রেগে যেত। আবার কখনো বলতো বলো আরো বেশি করে বলো।
মেয়েরা যেমন নিজেদের সম্পদ, সম্মান, সৌন্দর্য্য এবং বয়সের ব্যাপারে নেতিবাচক সমালোচনা সহ্য করতে পারে না তিনিও ঠিক তাই। বাড়ীয়ালার মেয়ে সোহেলীর আপাকে ম্যানেজ করে সে একপ্রকার জোর করেই আমাদের সাথে উঠে গেল। সোহেলী আপাও হুমায়ুন ভাইকে নিয়ে খুব মজা করতেন।
হঠাৎ করে হুমায়ুন ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা শুনে কেমন যেন হাটুর শক্তি কমে গেছে। শুনেছি মানুষ মরার আগে হাঁটুর শক্তি কমে। আমারও হাঁটু শক্তিহীন মনে হচ্ছে। তবে কি আমার আয়ু শেষ। আয়ু শেষ হলে মরতে হবে কিন্তু পেট্রল বোমায় মরতে চাই না। এটা অনেক কষ্টের। আল্লাহ আমাকে স্বাভাবিক মৃত্যু দিও। পেট্রল বোমার আতঙ্কে এমনিতেই তো বাইরে বের হই না। তারপর আবার কি সব উদ্ভট চিন্তা করছি। আমি এত তারাতারি মরতে চাই না। আমার অনেক স্বপ্ন এখনও অপূরনীয় রয়ে গেছে।
টিভি খুলে বসলাম। টিভির স্করবারে ব্রেকিং নিউজ দেখলাম রাজধানীতে পেট্রলবোমায় এমপি নামের একজন মারা গেছে। একটা জিনি খুব খটকা লাগল। টিভি রিপোটারগণ হুমায়ুন না বলে এমপি বলছে কেন। না-কি উনি যেখানেই যায়, সবাই ওনাকে এমপি নামে ডাকে? হয়তো বা নামটায় হুমায়ুন ভাইয়ের ভাল লাগত। রাকিব ভাইকে হুমায়ুন ভাই একদিন ঝগড়ার সময় বলেছিল আপনি আমার অনেক ক্ষতি করেছেন। আপনার কারণে আমার বাপ-দাদার রাখা নামটা মাটিচাপা পরতে বসেছে।
হয়তো হুমায়ুন ভাই’র সেই গল্পটা বর্তমান সহকার্মীদের কাছেও বলেছে। হুমায়ুন ভাইয়ের বলা একটি লম্বা শুনার পর হুমায়ুন ভাইকে এমপি নামটা রাকিব ভাই দিয়েছিল। গল্পের সারমর্ম ছিল, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর হুমায়ুন ভাই প্রথম ঢাকায় আসে। সংসদ ভবন দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। ঢাকায় আসার দ্বিতীয় দিনই সংসদ ভবন দেখতে গেলেন। সংসদ ভবনের আশপাশে ঘুরতে ঘুরতে এমপি হোস্টেলের মধ্যে ঢুকে পরেছিল। হুমায়ুন ভাইকে এমপি ভেবে ওখানকার দারোয়ান, কর্মচারী যারা ছিল তারা তাকে অনেক খাতির যতœ করেছিল। ইত্যাদি টাইপের লম্বা গল্প। ব্যাস। রাকিব ভাই বলল, হুমায়ুন অনেক বড় নাম ওটা আর চলবে না। আমি এখন থেকে তোমাকে এমপি ডাকব। আমরাও রাকিব ভাইকে সাপোর্ট করলাম। প্রথম প্রথম অনেক ক্ষিপ্ত হতো। কিন্তু ওনার রাগ কেউ আমলে নিতো না কারণ হুমায়ুন ভাই রাগলেভয়ের চেয়ে হাসি পেত বেশি।
হুমায়ুন নামে না ডাকায় আক্ষেপ করে একদিন সবার সামনে বলল এখন তার চেহারা কালো থাকলে কি হবে, সে যখন জম্ম নিয়েছিল। তখন তাকে দেখতে নাকি বাদশা হুমায়ুনের মত লাগত তাই তার দাদা তার নাম হুমায়ুন রেখেছিল। এমন কি সেটা প্রমাণের জন্য পরের ঈদে যখন বাড়ীতে যাবে তখন ছোট বেলা কিছু ছবি এনে দেখানোর কথা ছিল।

সকাল ৯টার সংবাদে দেখলাম। পুলিশ বিষয়টা তদন্ত করবে। বিরোধী জোটের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে। ময়না তদন্ত সম্পন্ন হলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

হুমায়ুন ভাইকেও প্রথম প্রথম আমরা পুলিশের লোক মনে করতাম। পাড়ায় শার্টের বুতাম খুলে হাঁটতাম। পুলিশের লোক আমাদের সাথে থাকে কিন্তু কোন পাত্তা দেই না এই টাইপের ভাব।

একদিন আমরা একটা কনসার্ট দেখে রাত করে বাসায় ফিরছিলাম। পথে টহলরত তিন জন পুলিশ আমাদের গতিরোধ করল। এত রাতে কেন এসেছি? কোথায় যাচ্ছি? ইত্যাদি সব পুলিশি জেরা করছে কিন্তু উত্তর দেওয়ার সময় দিলে তো কিছু বলতে পারা যেত। একজন কনস্টেবল বলল তোরা চুরি করার জন্য বের হয়েছিস, চল থানায় নিয়ে ডান্ডা দিলে সব বলে দিবি। আমি আবার সব সময় অল্পতে গাবরাই। তারপর আবার পুলিশে ডান্ডা। কখনো খাইনি তবে আমার দুসম্পর্কের এক চাচা খেয়েছে। তিনি আমাকে বলেছিল ও অনেক মজার ব্যপার। প্রথমে একটু কষ্ট হয় পরে গা সয়ে যায়। রাকিব ভাইকে অনুরোধ করলাম কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলতে।

বাধ সাধলেন আনিস ভাই। আমাদেরকে নিজের এলাকার অনেক গল্প বলতেন। তার গল্পমতে আমাদের চেয়ে সে অনেক সাহসী। সে সাহস প্রমাণের জন্য টাকা ছাড়া পুলিশ ম্যানেজ করার দায়িত্বটা নিজের কাধে নিলেন। সে পুলিশকে উল্টো ফাপর দিয়ে বসল। আমাদেরকে চোর বলাতে সে খুব মাইন্ড করছে। এমনকি সে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ দিল। আমাদের গতিরোধকারীরাই যে আসল পুলিশ তার প্রমাণ কি। বরং পুলিশের পোষাক পরেও আজকাল চোরেরা চুরি করে। এমপিকে দেখিয়ে আনিস ভাই বুক উঁচু করে বলল দেখে রাখুন আসল পুলিশ চেহারা কেমন হয়।

যা হওয়ার তাই হল। তিন জনকেই আটক করা হল। আমার তো বাথরুম হওয়ার জোগাড়। কোনমতে পশ্চাদ দিকের নরমাংশটা আমাকে বেইজ্জাতির হাতথেকে বাঁচাল।

পুলিশে ওদের দুইজনকে আলাদা রুমে জেরা করল। হুমায়ুন ভাই সোজা সাপটা উত্তর দিল। সে পোশাক কারখানায় সিকিউরিটির কাজ করে। যাইহোক সে যাত্রা পকেটের কারুকাচের জোরে বেঁচে গেলাম কিন্তু আনিস ভাইয়ের পাচায় পুলিশের পাহাড়ি বেতের দু-চার ঘা জমা পরেছিল।

আমরা প্রথমে হুমায়ুন ভাইকে পুলিশের লোক ভাবার কারণ ছিল, প্রথম দিন রাকিব ভাই হুমায়ুন ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিল আপনি কি চাকুরি করেন, সে বলেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেন। কিন্তু পোশাক কারখানায় কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডরাও যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেন। ওনার এমন উদ্ভট যুক্তি শুনে আমার চরম হাসি পেল। কিন্তু বেচারা আনিস সাহেব খুব রাগ করল। হুমায়ুন ভাইকে শালা সিটিংবাজ বলে গালিও দিল। কিন্তু সে আমার সাথে হাসল।
রাকিব ভাইকে আবার ফোন দিলাম।
--ভাই আপনি কি গিয়েছিলেন না-কি?
--হ্যাঁ।
--লাশটা এখন কই আছে?
--ঢাকা মেডিকেলের মর্গে।
--ওদের আত্মীয় স্বজন কেউ আসে নাই?
--দেখলাম একটা শ্যামলা মেয়ে। লম্বাটে মুখ। খুব কান্না করছে। আর বোরকা পরা একজন বৃদ্ধ মহিলা বারবার মুর্ছা যাচ্ছে সম্ভবত উনি ওঁর মা হবেন।
--লম্বা মেয়েটা এমপির বউ হবে। ওঁর নাম পলি।
--হ্যাঁ মেয়েটা খুব ভেঙ্গে পড়েছে। অন্তসত্তা তাই প্রাঁণ খুলে কাঁদতেও পারছে না।
ফোনটা রেখে দিলাম। খুব অস্থির লাগছে। অতিরিক্ত গরম। কপাল বেঁয়ে ঘাম পড়ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। জানালাটা খোলা দরকার কিন্তু উঠতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করেও পা আগাচ্ছে না। পায়ের শক্তি কমে গেছে হয়তো। পায়ের নিচের অংশটা হয়তো অসাড় হয়ে গেল। তাও ভাল। চলাফেরা করতে হবে না। ঘরে বসে থাকব। বিনাদোষে পেট্রলবোমায় শিককাবাব হয়ে মরতে হবে। স্বাভাবিক ভাবে মরতে পারব। স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিত হলো। হঠাৎ দেখি মা আমার মাথার পাশে বসা। আমি চোখ খুলতে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে বাপ অমন ছটফট করছিলি কেন? আমি আশ্চার্যনিত হলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম মা এখানে কি করে এলো। আমি থাকি ঢাকা আর মা থাকে দক্ষিণবঙ্গের কোন এক অজপাড়া গায়ে। মা কিভাবে ঢাকায় আসল, আর সে তো বাসে উঠতেও ভয় পায়। একটু পরে মনে পড়ল আমি গতরাতে বাসে করে গ্রামের বাড়ী এসেছি। আর এতক্ষন যা হইছে তা দুঃস্বপ্ন। পেট্রোলবোমার দুঃস্বপ্ন এখন নিরীহ নাগরিককে তারা করে ফেরে। এর অবসান হওয়া চাই। চিরতরে। যেই কারণে দেশের শান্তি বিঘ্নিত হয় সেইসব জিনিসগুলোকে আগে ঠিক করা হোক, ক্ষমতাওয়ালা বা ক্ষমতা লোভীদের কারণে দুঃস্বপ্ন আমাদের তাড়া না করে। দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি চাই আমরা। মুক্তি চায় বাংলাদেশ।
==০==
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৫৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ২৮/০২/২০১৫
    ভালো লেখা...।
  • স্বপ্নীল মিহান ২৫/০২/২০১৫
    মুক্তি চাই। দারুণ।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২৫/০২/২০১৫
    দারুন গল্প .....................।ভাল
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২৫/০২/২০১৫
    দারুন ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,কবিতা
  • প্রত্যেকটি মানুষ দু:স্বপ্নের মধ্যে জীবন যাপন করছে। মুক্তি চাই আমরা।
 
Quantcast